শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩০,৩১

0
303

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩০,৩১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
৩০

আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, হয়তো বৃষ্টি হবে।সাথে কারেন্ট চলে গেল।রামিসা অন্ধকার রুমে হাতরে দেশলাই এবং মোমবাতি খুঁজে চলেছে জ্বালানোর জন্য। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না কিছুতেই।

এর মধ্যে মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে, বেলকনির গ্রিল গলিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে রামিসা অরুনলোচন আঁখি মেলে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না অন্ধকারের দৌলতে!
রামিসা এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-” কে এখানে?

কোন সাড়া শব্দ নেই!তাই আবার বললো,
-” কে এখানে? কথা বলছেন না কেন?

এবারো নিশ্চুপ নিরবতা। তবে পায়ের শব্দ আর গারো হতে লাগলো! ধীরে ধীরে খুব নিকটে এসে রামিসার অধরপল্লব দুটো আঁকড়ে ধরে! সেই শব্দ যুক্ত মানব।
রামিসা প্রথমে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যায়। পরে বুঝতে পারে এ আর কেউ নয় তার ছায়া সঙ্গিনী।তার সবটুকু জুড়ে যার অস্তিত্ব।

কায়েস রামিসা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ধীর পায়ে বেলকনিতে এগিয়ে যায়। সেখানে কিছুটা আলোর দেখা মিলল।রামিসা নত মুখে বললো,
-” এভাবে কেউ এরকম করে? জানেন কতোটা ভয় পেয়েছি আমি?

কায়েস রামিসা কে আরো গারো ভাবে আলিঙ্গন বদ্ধ করে বললো,
-” মাঝে মাঝে স্ত্রীর সাথে হাসি ঠাট্টা করা প্রিয় নবীর সুন্নাত।তাই তো সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটা সুন্নাত কামিয়ে নিলাম হা হা হা।

রামিসা কায়েস এর পেটে কনুই দিয়ে খুচা মেরে বললো,
-” তাই না?

কায়েস রামিসার গলায় অধর ছুঁয়ে বললো,
-” তাই তো মিসেস রামিসা।

রামিসা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।এই অন্ধকারচ্ছন্ন মুহূর্তটা উপভোগ করতে সেও তার স্বামীর সাথে যুক্ত হয়।
.
পুরো বাসায় অন্ধকার বিরাজ করছে।এক সপ্তাহ হবে সৌর বিদ্যুৎ নষ্ট হয়ে আছে। আয়েশা কতোবার শফিক মাহমুদ কে বলেছেন লোক এনে ঠিক করানোর জন্য। কিন্তু তিনি আলসেমি করে লোক আনান নাই তাই ঠিক করানো হয়নি।
দুই ছেলে অফিসার কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকে তাই তাদের বলে নাই আয়েশা।

এখন বসে বসে ইচ্ছামতো ব‌উয়ের কাছে বকাঝকা হজম করছেন শফিক মাহমুদ।
শফিক মাহমুদ ব‌উয়ের জারি কমানোর জন্য মোবাইল এর ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে দেয়।এতে আঁধার কিছু টা কাটলেও আয়েশা আরো রেগে বললেন,
-” তোমার এই বন্ধ করবে নাকি আমি আছাড় মেরে বন্ধ করবো!যখন একটা কাজ দিয়েছি তখন করলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হত আজকে? আজকে যদি কারেন্ট না আসে তখন কি হবে? কিভাবে খাওয়া দাওয়া সব কিছু হবে?

শফিক মাহমুদ বুঝলেন আজকে তার স্ত্রী ভিশন ক্ষেপেছে। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। না হয় আগুন ঘি ঢালার মতো হবে। সাথে কানে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন!ভাগ্যিস অন্ধকার তা নয় তো সব কিছু শুনতে হতো।

পরক্ষনেই আবার ভাবলেন, অন্ধকার বলেই তো তার স্ত্রী ভিশন ক্ষেপেছে তা নয় তো কী আর এতো কথা শুনাতো?
.
.
রিসোর্ট থেকে তায়েস আর নূর চলে গিয়েছে নূরের বাসায়।আলিফ অনেক খুশি তায়েস কে পেয়ে।তার খেলার পার্টনার হিসেবে তায়েস কে খুবই পছন্দ তার।

নূর অনেক দিন পর বাবার বাড়ি এসে ভিশন খুশি।তার ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের ইনবাইট করা হলে তারা সবাই চলে আসে নূর এর বাসায়। এখন নাস্তার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তাদের সাথে নূর।কেউ কেউ তায়েস কে নিয়ে এটা ওটা বলে ঠাট্টা করছে আর নূর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
.
.
আলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” গতকাল আমাকে যে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে তিনি আমার জন্মদাত্রী মামনি!ডাক্তার মিথিলা পাল!

ফাইজা এবং ফয়জান এবার বুঝতে পারে গতকাল আলো এই কারণেই ডাক্তার মিথিলা পাল কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।
অথচ ডাক্তার মিথিলা পাল কে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে আলো তার জন্মদাত্রী।

আসলে যার যার ধর্ম তার তার কাছে প্রিয়।
তাই কে কি ধর্ম গ্রহণ করবে এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতা।কেউ কারো উপর ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
আর তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! সাবধান, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’ (ইবনে মাজা, কিতাবুল মানাসিক)
.
আলো চোখের পানি মুছে নাক টেনে বললো,
-” বাবা ও হয়তো ঐ হসপিটালে ছিল। মামনি নিশ্চ‌ই আমার কথা বলেছে। কিন্তু আমি তো আর এখন তাদের মেয়ে ঐশী ন‌ই তাই আমার সামনে আসতেও এখন তাদের বিবেকে বাধে।

আলো মুখ চেপে ধরে কাঁদে।
ফয়জান উঠে গিয়ে গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে আলোর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
-” পানিটা পান করো?

আলো পানি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে ছিল তাই ফয়জান এর থেকে গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করলো।

তারপর কেউ কিছু বলার আগেই আলো উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-” আমাকে একটু একা থাকতে দিবেন প্লিজ?

এ কথা শুনে সবাই ব্যথাতোর দৃষ্টিতে তাকায় আলোর পানে।আলো উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে দ্রত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল!

ফয়জান দুঃখে নিজের চুল টেনে ধরে।ফাইজা বলে,
-” সবটা না জেনে তোমাদের উচিৎ হয়নি ভাবী মণি কে এভাবে বলার। মেয়েটার ক্ষত স্থানে নতুন করে আঘাত করলে তোমরা। কি দরকার ছিল এভাবে বলার?

এই বলে ফাইজা চলে গেল তার রুমে।
ধীরে ধীরে রুহুল আমিন এবং ফাহমিদা খাতুন ও চলে গেল।তারা ভিশন অনুতপ্ত হয়ে আছে।সেটা প্রকাশ করার সময় তো দিল না আলো।

এখন একা বসে আছে ফয়জান।
বার বার এ কথা মনে করে ভিতর পুড়ছে তার যে সে আলোকে কিভাবে অবিশ্বাস করলো?সে তো আলোকে চিনে তার শিক্ষকতার শুরু থেকেই। তবুও এমন ভুল করতে পারলো?
মুখ চেপে ধরে বসে আছে সে।চোখ মুখ লাল রঙা হয়ে ফুলে আছে।

ঘন্টা খানেক পর মনে পড়লো আলো সেই দুপুরে খেয়েছে এর পর আর কিছু খায়নি।এই সময় তার ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। এভাবে খালি পেটে থাখলে সমস্যা হবে তাছাড়া মেডিসিন আছে কিছু।
দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল, দরজায় কড়াঘাত করে বললো,
-” আলো দরজাটা খুলো প্লিজ তোমাকে খাবার খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে?

ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই। ফয়জান বার বার কড়াঘাত করেই যাচ্ছে।

এদিকে আলো রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছে। কষ্টে তার বুক ফেটে কান্না আসছে। গতকাল মামনি কে দেখে খুব কষ্টে নিজেকে সামলাতে পারলেও আজকে আর সম্ভব হচ্ছে না। বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে আলো।
গতকাল হসপিটালে এদিক ওদিক খুঁজেও তার বাবার দেখা মিলেনি।চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত কাকের মত খুঁজে বেড়িয়েছে এদিক সেদিক কিন্তু দেখা মিলেনি। হয়তো ইচ্ছে করেই আড়াল হয়ে ছিলেন।

ফয়জান বেশ কিছুদিন আলোকে ডেকে তার দেখা না পেয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে। কি করবে ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করে। শেষে তিন সিটের সোফায় শুয়ে পড়ল ঠিকই কিন্তু রাতটা তার নির্ঘুম কাটলো।
.
কায়েস প্রতিদিনের মত আজকেও মসজিদ থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে।
রুমে আসতেই রামিসা ঝাপটে ধরে কায়েস কে। কায়েস হেসে বলে,
-” ব্যাপার কি আজকে কি কোন স্পেশাল দিন নাকি? না হয় ম্যাডাম না ঘুমিয়ে জেগে আছে তার‌উপর নিজ থেকে এভাবে..

রামিসা কথার মাঝে বলে,
-“একটা জিনিস দেখাবো আপনাকে। কিন্তু কিভাবে দেখাই, আমার ভিশন লজ্জা লাগছে।

কায়েস হেসে বলে,
-” ভাবনার বিষয় তো! কি এমন জিনিস যেটা দেখাতে লজ্জা লাগছে? আমি তো ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারছি না।দেখাও দেখি?.…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। আকাশের লক্ষন দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
ফয়জান নামায পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অবলোকন করলো।বুঝলো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। তাই দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করলো।

বাসা থেকে মসজিদ একটু দূরে হওয়ায় ফয়জান আসতে আসতেই কাক ভেজা হয়ে গেল। বাসায় এসে দেখলো মেইন দরজা ভিরিয়ে রেখে দেওয়া।
ফয়জান ভিজে থাকা পোশাক পরিবর্তন করার জন্য দ্রুত রুমের দিকে গেল। দরজায় হাত রাখতেই খুলে গেল। এবারো অবাক হয়ে ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে আলো কে কোথায় দেখতে পেল না ফয়জান।
বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে কয়েকটি রুমে খুঁজে না পেয়ে মায়ের রুমের দরজায় কড়াঘাত করলো।

ফাহমিদা খাতুন নামায শেষে জায়নামাজে বসে তাসবিহ পড়ছিলেন। দরজায় কড়াঘাত শুনে বললো,
-” দরজা খোলা আছে ভেতরে আস।

ফয়জান দ্রত ভিতরে ঢুকে বললো,
-” মা আলো কে দেখেছো?

ফাহমিদা খাতুন চমকে উঠে বললেন,
-” ব‌উ যে গতকাল রাতে রুমে ঢুকলো আর তো বের হলো না!
-” না মা ও রুমে নেই!

ফাহমিদা খাতুন বসা থেকে দাঁড়িয়ে জায়নামাজ হাতে নিয়ে বললেন,
-” দেখ না ফাইজার রুমে বা অন্য কোন রুমে আছে কিনা?

ফয়জান কিছু না বলে দ্রত ফাইজার রুমে গিয়ে দরজায় কড়াঘাত করলো। মিনিট কয়েকের মধ্যে ফাইজা দরজা খুলে দিলে ফয়জান ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
-” আলো কোথায়? এখানে এসেছে?

ফাইজা ভাইয়ের অস্থিরতা দেখে বললো,
-” না ভাইয়া ভাবীমণি তো এখানে আসেনি।

ফয়জান বললো,
-” তাহলে নিশ্চয়ই ছাদে এক্সারসাইজ করতে গিয়েছে! আমি বরং ছাদে যাই।

এই বলে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল।ফাইজা হাঁ করে তাকিয়ে আছে!কি বললো তার ভাইয়া?এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে ভাবীমণি এক্সারসাইজ করবে কেন?
.
.
রামিসা পূর্বের ন্যায় জড়িয়ে ধরে আছে কায়েস কে। কায়েস কতো বলছে কি দেখানো কথা বলছে রামিসা,তা দেখানোর জন্য। কিন্তু রামিসা পড়েছে মহাবিপদে।যদি কায়েস তাকে বকাঝকা করে তবে? সেই ভয়ে টটস্থ হয়ে কায়েসের ই বুকে মুখ লোকায় সে।
রামিসা চিন্তায় পড়ে গেল,
ডাক্তার মিথিলা পাল তো বলেছিলেন,অল্প বয়সে গর্ভধারণ বা টিএন‌এজ প্রেগনেন্সি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।এটি মা ও শিশু দুজনের শরীরের ওপরই বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।আর তাই কায়েস যদি এগুলো নিয়ে ঝামেলা করে তাহলে?

আবার বিষয়টি লুকিয়ে রাখার ও নয়।যে না বললেই হবে।স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন হবে পরম বিশ্বাসের। বন্ধুত্বপূর্ণ, শেয়ারিং ও কেয়ারিং টাইপের। একসঙ্গে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। এ জন্য নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, লুকোচুরি খেলা কোন কিছুতেই ঠিক নয়।
.
রামিসা চোখ বন্ধ করে কায়েসের পাঞ্জাবি শক্ত করে মুঠোয় বন্ধ করে বললো,
-” আমি প্রেগন্যান্ট!

কথাটা কানে আসতেই কায়েসের হাত দুটো আলগা হয়ে গেল। এতেই রামিসা যা বোঝার বুঝে গেল।
কায়েস জোর করে রামিসা কে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে বাহু চেপে ধরে বললো,
-” তুমি জানো কি বলছো? সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে?

কায়েস দ্রুত গিয়ে ড্রয়ার খুলে মেডিসিনের পাতা হাতে নিয়ে দেখে রামিসা মেডিসিন একটাও খায়নি। পুরো পাতা ফুলফিল রয়ে গেছে। কায়েস দুশ্চিন্তায় খাটে বসে পড়লো।

রামিসা ভয়ে ভয়ে গিয়ে পাশে বসে কায়েসের কাদে মাথা রেখে বললো,
-” ভাবুন তো একটা প্রাণ আমার মাঝে একটু একটু করে বড় হচ্ছে। ভাবতেই শরীর শিহরিত হয়ে উঠে তাই না?যে একদিন পৃথিবীর আলো দেখবে, আমাদের চোখের সামনে হাসবে, খেলবে।
একটা ছোট্ট প্রাণ যার শরীরটা তুলার মতো নরম, মখমলে হবে। ছোট ছোট হাত পা ছোড়াছুড়ি করে খেলবে।আদো আদো ভাষায় কথা বলবে। ভাবতেই আনন্দে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে জানেন?

কায়েস দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ রেখেই বললো,
-” টিএন‌এজ প্রেগনেন্সি কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে? আমার কথা শুনলে না কেন?জানো না স্বামীর আদেশ অমান্য করার পরিণতি হবে ভয়াবহ? তবুও কেন এমন করলে তুমি?

রামিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে বললো,
-” বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এরকম কিছু করিনি। আমি মেডিসিন নিতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। কিছুদিন থেকে অন্য রকম ফিল করছিলাম তাই প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ এনে টেষ্ট করেছি আজ।আর তার পরেই শিউর হলাম।
.
.
ফয়জান দৌড়ে ছাদে ছুটে আসে। দরজা খুলে যখন বৃষ্টির উপস্থিত দেখলো তখন মনে পড়লো এই বৃষ্টির মাঝে আলো এক্সারসাইজ করবে কেন?তাই ফিরে যেতে নিলে কি মনে করে আবার ফিরে ছাদে চলে এলো।

ছাদের মাঝখানে আলোকে বসে থাকতে দেখে ফয়জান এর ভিতরটা ধক করে উঠল।মেয়েটা এই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে। সকাল বেলা এমনিতেই শীতের প্রকোপ থাকে কিছুটা।তার‌উপর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে তো ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে যাবে আল্লাহ না করুক। তাছাড়া আলো তো এখন একা নয় ওর মধ্যে একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।তাও এতোটা অবুঝ হয় কিভাবে?

ফয়জান আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
-” আমাকে অন্যভাবে‌ও তো শাস্তি দেওয়া যেত। এভাবে নিজেকে শাস্তি দিয়ে কেন আমাকে শাস্তি দিচ্ছ? আমার সাথে আমার অনাগত সন্তানকে ও দিচ্ছ! কেন আলো?

ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে আলোর শরীর ঠান্ডা বরফের মতো শিথিল হয়ে গেছে। আধখোলা চোখে তাকিয়ে আছে ফয়জান এর দিকে।অধর দুটো বিরতিহীন ভাবে কাঁপছে তার। মুখে কোন টু-শব্দ করছে না। ফয়জান আর অপেক্ষা না করে আলোর হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু আলো বসেই আছে তার মতো।
ফয়জান আরো কিছু বলতে নিলে আলো জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল! ফয়জান দ্রুত মাথার দিকটায় হাত রাখার কারণে আঘা’ত থেকে বেঁচে গেল আলো।

ফয়জান আর সময় নষ্ট না করে আলোকে পাঁজা কোলে তুলে নিল।

বাসায় ঢুকতেই ফাহমিদা খাতুন এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে আলোর? ফয়জান শুধু বললো,
-” বৃষ্টিতে ভিজছে,যার ফলে জ্ঞান হারিয়েছে।ওর কাপড় গুলো দ্রত চেঞ্জ করতে হবে মা।

তারপর রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাবার্ড খুলে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই ফিরে আসে আলোর পোশাক পরিবর্তন করার জন্য।
দরজার কথা খেয়াল হতে দৌড়ে গিয়ে বন্ধ করে নিল।
.
.
ঘন্টা খানেক পর,
আলো ঘুমের মাঝে কি যেন বলছে অস্পষ্ট বলে বোঝা যাচ্ছে না। ফয়জান পাশে বসে তেল মালিশ করে দিচ্ছিল।আলো কিছু বলছে শুনতে পেয়ে আলোর উপর ঝুঁকে পরে বললো,
-” কি বলছো আলো? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

কপালে হাত রেখে বুঝল জ্বর চলে এসেছে আলোর। ফয়জান এর নিজেরো ঠান্ডা লেগে গেছে। তবুও সে তার প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত।

কিছুক্ষণের মধ্যে কাঁপিয়ে জ্বর দ্বিগুণ বেড়ে গেল আলোর। একটা কাঁথার উপর আরেকটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে ফয়জান।
ফাহমিদা খাতুন নাস্তা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন।মেয়েটা গতকাল দুপুরের পর কিচ্ছুটি খায়নি।এই ভেবে আহত স্বরে বললেন,
-” বাবা ওরে কোন রকম ভাবে খাইয়ে দে না? এভাবে না খেয়ে থাকলে শরীর আরো বেশি খারাপ হবে।

ফয়জান আলো কে ডাকলো কিন্তু আলোর কোন সাড়া শব্দ নেই।মাঝে মাঝে জ্বরে কাঁপছে, কাতরাচ্ছে এই যা।

রুহুল আমিন ও ছেলে ব‌উকে এসে দেখে গেলেন।আর আফসোস করলেন কেন যে কথা গুলো তুলতে গেলেন তারা? না হয় তো এরকম কিছুই হতো না।মেয়েটা এতো কষ্ট পেত না। নিজের আপনজন হারিয়ে একটু সুখের সন্ধান পেয়েছিল মেয়েটা। তারপর কি থেকে কি হয়ে গেল আহ্ আফসোস।

ফাহমিদা খাতুন চিন্তিত মুখে বসে র‌ইলেন।ফাইজা বললো,
-” দো’আ করো মা তোমার দো’আ বিফলে যাবে না। তবে এই সময়ে এতোটা টেন্স ভালো নয় জানো তো?
-” এই সময় মানে?
-” হায়রে ঝামেলার কারণে তোমাদের বলাই হয়নি সরি সরি সরি!

ফাহমিদা খাতুন এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মনের মাঝে যেন চাঁদ হাতে পাওয়ার খবর পেলেন!…

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here