শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩৪,৩৫

0
340

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩৪,৩৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
৩৪

অভিমান পাহাড় সম হয়ে গেছে আলো’র তাই ফয়জান পণ করেছে আজকে আলো’র রাগ ভাঙ্গিয়েই ছাড়বে।

ফয়জান যখন আলোর উপর ঝুঁকে তখন আলো আঁখিপল্লব দুটো বন্ধ করে নেয়। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা পানি।
ফয়জান এর ভিতরটা মুচড়ে উঠে।

আলো সত্যকে লুকিয়ে রেখেছিল কিন্তু সবকিছু না জেনে কাউকে কটুক্তি করে কথা বলা মুমিন ব্যক্তির কাম্য নয়। লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক।ফাহমিদা প্রথমে আলোর থেকে সবটা জেনে তবেই যা করার প্রয়োজন ছিল।যাই হোক
আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগার দের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীল দিগকেই ভালোবাসেন।[১]

ফয়জান শেষার্ধ কথাটুকু বলে ক্ষমা চেয়ে সরে যেতে নিলে আলো বাধা দেয় ফয়জান কে। তারপর নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে হুরহুর করে কেঁদে ওঠে।
তারপর হেঁচকি দিতে দিতে বলে,
-” আমাকেও মাফ করুন আপনাদের থেকে সত্য লুকিয়ে রেখেছিলাম যার ফলে আমাকে শা’স্তি পেতে হয়েছে। আসলে আমি ভয় পেতাম আমার অতিতের কারণে যদি আপনাদের কে হারিয়ে ফেলতে হয়, তাহলে আমার এ দুনিয়ার বেঁচে থাকা দায় হয়ে উঠতো।

ফয়জান আলোর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
-” এতো ভালোবাসো আমাদের?
-” হুম নিজের থেকেও বেশি। আপনি বাসেন না বুঝি?
-” আমিও আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি ভালোবাসি এবং ভালোবাসি।

অতঃপর,
দুটো পবিত্র বন্ধনের মিল বন্ধন আরও গভীর ভাবে জোড়ালো হয়ে উঠলো।যে জোড়া মৃত্যু ব্যাতিত আলাদা হবে না ইনশা আল্লাহ।
.
.
ফাইজা এগারোটা বেজে তেরো মিনিটে অফিস থেকে বাসায় ফিরে এসেছে। আজকে তেমন কাজ ছিল না তাই এই সময়ে আসা। কলিং বেল চাপতে মনি দরজা খুলে দিল।ফাইজা নিজের রুমে যাওয়া ধরলে ফাহমিদা খাতুন ডেকে বললেন,
-” ফাইজা মা এদিকে শুন তো?

ফাইজা ঘুরে দাঁড়াতে দেখতে পায় তিনজন অপরিচিত মানুষজন! দুজন মহিলা একজন পুরুষ লোক!ফাইজা নিজ স্থানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। অচেনা মানুষদের সামনে যেতে ইতস্তত বোধ করছে। তখন ফাহমিদা খাতুন আবারো চোখে ইশারা করে বললেন,
-” এদিকে আয়?

ফাইজা ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিল। একজন মহিলা আগ বাড়িয়ে বললেন,
-” আমি দু- তলায় এপার্টমেন্ট এ থাকি। দেখনি হয়তো কোন দিন তাই না?

ফাইজা বললো,
-” জ্বি আন্টি।

ভদ্রমহিলা হেঁসে বললেন,
-” কিন্তু আমি তোমাকে দেখেছি বেশ কয়েকবার, তাইতো চলে এসেছি তোমাদের বাসায়!

ফাইজা সৌজন্য মূলক হাঁসি দিয়ে বললো -“আচ্ছা আন্টি খুব ভালো করেছেন এসে।

যদি নেকাবের আড়ালে বলে কেউ দেখতে পায়নি সেই হাসি। তবে হাসলে চোখেও তা ফুটে ওঠে।যাই হোক ভদ্রমহিলা বললেন,
-” বাহির থেকে এসেছো তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে এসো।আমরা অপেক্ষা করছি তোমার জন্য!

ফাইজা একটু ঘাবড়ে গেল!তার জন্য অপেক্ষা করার কারণ বুঝতে পারলো না। মায়ের দিকে তাকালে, ফাহমিদা খাতুন ও বললেন দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য।
ফাইজা নিজের রুমে ফিরে ধীরে ধীরে বোরকা খুলছে আর ভাবছে বাসায় মেহমান কেন এসেছেন? তখন ফাহমিদা খাতুন এসে বললেন,
-” এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?দেখলি তো মেহমান এসেছে,কি ভাববেন তারা? এমন পাত্র লাখে একটা পাওয়া যায়!আমাদের ভাগ্য ভালো যে তারা নিজ থেকেই প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন!

ফাইজা চমকে উঠে বললো,
-” কি বলছো এসব! তোমাদের আমি বলেছিলাম না যে আমি বিয়ে করবো না? এরপরেও মানুষজন আসে কিভাবে বিয়ের কথা বলতে?

ফাহমিদা খাতুন রেগে বললেন,
-” সারাজীবন কি এভাবেই থাকবি নাকি? এভাবে একা বাঁচা যায় না কখনো। আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টির শুরু থেকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন একা থাকার জন্য নয়।
-” আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছি মা? তাহলে কেন এরকম করছ? আমাকে আমার মত থাকতে দাও প্লিজ?

ফাহমিদা খাতুন চোখের পানি মুছে বললেন,
-” তুই কি চাস মানুষজনের সামনে আমরা অপমানিত হই? আজকে যদি তুই তাদের সামনে না যাস তাহলে কতটা অসম্মানিত হতে হবে ভেবে দেখেছিস একবার? লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক। আশেপাশে মানুষদের কাছ থেকে তোর বাবার নামে সুনাম শুনেই তারা আমার বাসায় এসেছেন। সেই সুনাম কি তুই ধোলাই মিশিয়ে দিতে চাচ্ছিস? যদি তুই তোর বাবার মেয়ে হয়ে থাকিস তাহলে তুই তাদের সামনে আসবি।

এই বলে ফাহমিদা খাতুন এখান থেকে প্রস্তান করলেন। ফাইজা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। উপরে চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল এই কোন ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো আল্লাহ? আমি সত্যি আর পারছি না আর পারছিনা ধৈর্য ধারণ করে থাকতে। কেন এত কষ্ট আমার আল্লাহ? আমি যে শান্তি ছিলাম, সেই শান্তি কেন আমার রইল না? আজ অন্য আর দশটা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের মতো আমিও তো সুখি হতে পারতাম তবে কেন সেই সুখ আমার কপালে লিখে রাখলে না? আমি সত্যিই আর পারছি না আল্লাহ আমাকে এসব থেকে মুক্তি দাও। দয়া কর আমাকে আল্লাহ।
.
নিজেকে শক্ত করে ফ্রেশ হয়ে এসে মেরুন রঙের একটা সুতি থ্রি পিস পড়ে নেয় ফাইজা। হাত দিয়ে চুল গুলোকে কোনরকম ঠিক করে, সাজগোজহীন রুম থেকে বের হয়।
ড্রয়িং রুমে গিয়ে দাঁড়ালে ভদ্রমহিলা তার পাশে বসান ফাইজা কে। তারপর সাথে আসা আরেকজন মহিলাকে বললেন আপা দেখে নে ভালো করে, পরে যেন আবার কিছু বলতে না পারিস। যে তোর পছন্দে বউ নিয়ে আসলাম এখন আমার পছন্দ হয়নি!
এই বলে হাসলেন ভদ্রমহিলা সাথে পাশের ভদ্রমহিলা ও হাসলেন।
পাশের ভদ্র মহিলা তার ছেলেকে বললেন মিরাজ দেখ বাবা, তোর পছন্দের ওপরেই তো ডিপেন্ড করবে সবকিছু! মায়ের কথায় মাথা তুলে তাকায় ছেলেটি, মুচকি হেসে ফাইজার দিকে তাকায়।
ফাইজা সেই প্রথম থেকেই মাথা নিচু করে বসে আছে আজকে বোধ হয় মাথা আর উপরে উঠবে না।

তারপর,
ফাইজাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।যেমন ফাইজা কি করে?পড়াশোনা চলছে, নাকি শেষ? এরকম কিছু।
ফাইজা বললো,পড়াশোনা,গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট।এখন মাস্টার্স প্রায় শেষের দিকে।
এনজিওর কথাটা আর বললো না। তারপর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে মিরাজ ছেলেটি কে তার খালামণি জিজ্ঞাসা করল ফাইজার সাথে আলাদাভাবে কথা বলবে কিনা? মিরাজ না করলো বলবে না। তারপর ফাইজার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

এর দুই দিন পর,
ভদ্রমহিলা জানালেন ফাইজা কে তার বোন এবং বোনের ছেলের পছন্দ হয়েছে!এ কথা শুনে ফাইজা বিয়ে করবে না বলে রমের দরজা লাগিয়ে বসে রইলো।
.
.
সাত মাস পর,
আজকে রামিসা’র সিজারিয়ানের ডেইট দিয়েছেন ডাক্তার। সবাই ভিশন চিন্তিত মুখে বসে আছে হসপিটালের রিসিভশনে।ডাক্তার বলেছেন রক্ত লাগতে পারে,তাই রক্ত যেন আগে থেকে ব্যাবস্থা করে রাখা হয়।
কায়েস তার অফিস কলিগ দুজন কে ঠিক করে নিয়ে এসেছে।
এই কয়টা মাস কায়েস নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে রামিসার কেয়ার নেওয়ার। এবং কি পরিবারের প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে যেভাবে থাকলে রামিসা ভালো থাকবে, আনন্দে থাকবে।
কায়েস যেন ধৈর্য হারা হয়ে পড়ছে এখনি। মিনিট খানেক আগে রামিসা কে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এর মধ্যেই এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি শুরু হয়ে গেছে কায়েস এর। পরিবারের প্রত্যেকটি লোক হসপিটালে চলে এসেছে।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”। বাসায় থাকা তাদের জন্য দুস্কর হয়ে গেছে। সবাই মনে মনে আল্লাহ তা’আলা কে স্মরন করছে, সবকিছু যেন ঠিক ঠাক হয়।ফাইজা মাঝে মাঝে কায়েক কে লক্ষ্য করছে।আর ভাবছে একজন স্বামী বুঝি এরকম ই হয়! কতোটা মায়া, মহব্বত ভালোবাসা হলে এরকম ছটপট করতে পারে স্বামী তার স্ত্রীর জন্য।

আলো বেচারি বাসায় থেকে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে,একটু পর পর ফয়জান কে কল করে জিজ্ঞাসা করছে এখন কি খবর?রামিসা কে অটি থেকে বের করা হয়েছে কিনা?বেবি কেমন আছে ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফয়জান মাঝে মধ্যে রেগে গেলেও প্রকাশ করছে না। আলোর ও তো শরীর ভালো না এই ভেবে।

রামিসা’কে টেষ্ট করানোর পর জানা যায় রামিসা সাড়ে নয় সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।এর থেকে বোঝা যায় আলোর আগে রামিসা প্রেগন্যান্ট হয়েছিল, কিন্তু সময় মতো জানা যায়নি।
যাই হোক,
অবশেষে ঘন্টা খানেক পর বেবির চিৎকার শুনা গেল! সবাই উৎসুক হয়ে তাকালো সেদিকে। কায়েস দৌড়ে গেল দরজার সামনে।…
_____
রেফারেন্স:
[১]সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪
______

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

একজন নার্স দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। কোলে নবজাতক শিশুকে নিয়ে এলেন। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল বেবি কে দেখার জন্য, কোলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু নার্স বললেন তিনি বকশিশ ছাড়া বেবি কে দিবেন না।
মেয়েরা দুশ্চিন্তার কারণে হাতে করে টাকা পয়সা কিছুই নিয়ে আসে নাই।তাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নার্সের দিকে।নূর বলেই বসলো টাকা তো নেই! আপনি এখন বেবি কে দিন,আমরা পরে দিয়ে দিব।
নার্স বললেন,
-” উঁহু তা তো হবে না!বাকির নাম ফাঁকি! এখন আমি বাচ্চা আপনাদের হাতে তুলে দেই পরে আপনারা আমার বকশিশ দিতে ভুলে যাবেন,তা আর হচ্ছে না।

তারপর,
তায়েস আর ফয়জান দু’জনেই টাকা বের করে দিল নার্স’কে।নার্সের টাকা দেখে তার চক্ষু চকচক করছে। বেবি কে ফাইজার হাতে দিয়ে তিনি টাকা নিয়ে চলে গেলেন।
ফাইজা খুব সাবধানতা অবলম্বন করে বেবি কে কোলে তুলে নিয়েছে। বেবির ছোট্ট তুলতুলে নরম হাতটা খুব সন্তর্পণে ধরে ফাইজা।যেন তার শক্ত হাতের ছোঁয়ায় বেবি ব্যথা না পায়।ফাইজা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,পর্যবেক্ষন করে মনে মনে সুধালো বেবির ঘ্রাণেন্দ্রিয় তার বাবার মতো হয়েছে। কপালের দিকটায় মায়ের মতো।

নূর বললো,
-” আপু এবার আমার কাছে দিন না?
-” আচ্ছা নাও?
-” দারাও আমি বসে নেই, না হয় ভয় করে আমার এত্ত ছোট্ট শরীর।

নূর বসলে ফাইজা তার কোলে তুলে দেয় বেবি কে।নূর বেবির হাত সরিয়ে বললো,
-” ওলে বাবা রে তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন?ব্যথা পাবে তো নাকি?

বেবি তার হাত দিয়ে নাক, মুখে খামচে দিচ্ছে যার ফলে লাল রঙা হয়ে যাচ্ছে মুখশ্রী।
আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আচ্ছা ছেলে নাকি মেয়ে হলো সেটাই তো জানা হলো না।

এই বলে ফাহমিদা খাতুন বেবির শরীরে জরিয়ে রাখা তা‌ওয়েল সরিয়ে দেখতে নিলে নূর বললো,
-” ছোট মা আপনি তো বেবির সম্মান নিয়ে টানাটানি করছেন হা হা হা…

ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আরে বউ জানতে হবে তো আমাদের নাতি নাকি নাতনি হলো?

আয়েশা বললেন,
-” তাই তো নার্স কে জিজ্ঞাসা করলাম সেও কিছু বললো না। ফাহমিদা দেখ তুমি?

তারপর,
দুই নানু,দাদু দেখে বললেন,
-” আমাদের নাতি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
.
কায়েস দাঁড়িয়ে আছে ওটির দরজার কাছে, তার মনে খুব দুশ্চিন্তা। এখনো রামিসা কে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে না কেন?সে জন্য।
ওটির সামনে কোন নার্স নেই যে জিজ্ঞাসা করবে।
এদিকে সবাই বেবি কে নিয়েই ব্যস্ত কারো রামিসার কথা মনে নেই।তায়েস নূরের পাশে বসে বেবি কে আদর করছে তখন ফাহমিদা খাতুন বললেন, বেবির কানে আযান দিতে। তারপর তায়েস আযান দেয়।
ফয়জান কলে আলোর সাথে কথা বলছে।আলো খবর শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে জিজ্ঞাসা করলো রামিসা কেমন আছে?
এ কথা শুনে ফয়জান এর টনক নড়ে,যে রামিসার কথা তো জানা হলো না এখনো।কল কেটে দ্রত ওটির সামনে এসে দেখলো কায়েস চিন্তিত মুখে ওটির দিকে তাকিয়ে আছে। ফয়জান তেজ’হীন কন্ঠে বললো,
-” রামিসার কোন খবর পাওয়া যায় নাই কায়েস?

কায়েস মনমরা হয়ে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো “না”। তখন ফয়জান ও চিন্তায় পড়ে গেল।
আয়েশা এসে বললেন,
-” কিরে কায়েস ছেলের মুখ দেখলি না যে এখন পর্যন্ত?আয় দেখে যা একদম তোর মতো হয়েছে দেখতে!
-” মা রামিসা কে এখনো কেবিনে আনা হচ্ছে না কেন?আর কতো সময় লাগবে?

এখন আয়েশার ও রামিসার কথা স্মরণ হলো, সচকিত হয়ে উঠলেন তিনি।এর মধ্যে ওটির দরজা খুলে একজন নার্স বেরিয়ে বললেন,
-” সবাই সরে দাঁড়ান রোগীকে কেবিনে নেওয়া হবে।

কায়েস দ্রত এসে জিজ্ঞাসা করলো,রামিসা কেমন আছে? নার্স জবাবে বললেন, ভালো আছে এখনি দেখতে পাবেন। কায়েসের স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলে আলহামদুলিল্লাহ।
.
রামিসা কে কেবিনে নিয়ে আসা হলে কায়েস পাশে টুল টেনে বসে রামিসার মাথায় বুলিয়ে বলে,
-” অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না?

রামিসা শরীর নাড়াচাড়া করতে পারে না। তবুও ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-” একটু একটু।

কায়েস রামিসার হাত টেনে নিয়ে চু’মু খায়।রামিসা অস্পষ্ট স্বরে বললো,
-” বেবি কার মতো হয়েছে দেখতে?
-” মা বললো, আমার মতো।
-” আপনি দেখেননি?
-” না!
-” কেন?
-” তোমার জন্য দুশ্চিন্তা করে ইচ্ছে হয়নি দেখার।
-” খুব খারাপ করেছেন আপনি।যান এখনি কোলে নিয়ে আদর করুন ওরে।
-” আমার ভয় লাগে কোলে নিতে,যদি বাই এনি চান্স ফেলি দেই!
-” কিছু হবে না ইনশা আল্লাহ।

তারপর কায়েস বেবির কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে তুলে নিল বেবি কে। কায়েস এর মনে হচ্ছে তার শক্ত শরীরের ছোঁয়ায় বেবি বোধহয় ব্যথা পাচ্ছে। এতো নরম শরীর,লাল র’ক্ত গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
তারপর ধীরে ধীরে রামিসার কাছে নিয়ে এসে ওর পাশে শুইয়ে দিয়ে।রামিসা মুচকি হেসে তাকায় বেবির পানে।সদ্য মা ছেলের এই মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দি করে নূর। সাথে আলোর ফোনে সেন্ড করে দিল।
সবাই খুব খুশি নতুন অতিথি কে পেয়ে।

তারপর,
কায়েস, আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন হসপিটালে রয়ে গেলেন রামিসার পাশে।আর বাকিরা সবাই বাসায় ফিরে এলো।
ফয়জান বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই আলো প্রশ্নের জুড়ি নিয়ে বসে। কতো সত প্রশ্ন তার‌।বেবি হাসছে কিনা? ফয়জান এর দিকে তাকায়ছে কিনা?আরো কতো কি।
ফয়জান বলে,
-” আচ্ছা ম্যাডাম আপনি সারা দিন খেয়েছেন তো নাকি? না দুশ্চিন্তা করে না খেয়ে বসে ছিলেন? তেমন হলে কিন্তু আপনার শা’স্তি আছে!
-” খেয়েছি বাট ভালো করে খেতে পারিনি, কেমন যেন দুশ্চিন্তায় খাবার খাওয়ার রুচি ছিল না।
-” এমন করলে সব? আমাদের বেবি ও খাবে তোমার সাথে সাথে।

তারপর আলোর উঁচু পেটের কাছে গিয়ে বললো,
-” বেবি তোমার মামনি খুব পঁচা তাই না? তোমাকে না খাইয়ে রেখেছে।
নিজের অধর দুটো ছুয়ে দেয় পেটে।আলো মুচকি হাসে।
.
.
দেড় মাস পর,
রামিসা এখন সুস্থ প্রায়।বেবির দেখাশোনা পরিবারের সবাই মিলে করে তাই রামিসার কষ্ট হয় না।আর কায়েসের কথা কি বলবো?সে তো তার ছেলেকে ছাড়া এক মূহূর্ত‌ও ভাবতে পারে না। তখন রামিসা পিঞ্চ করে বলে,ও আমার ছেলে! কায়েস তখন বাঁকা হেসে বলে,
-” এখন মুখ খুললে আপনি নিজেই লজ্জাবতী গাছ হয়ে যাবেন ম্যাডাম!

এ কথা শুনেই রুম থেকে প্রস্থান করে রামিসা। কায়েস হেসে তার ছেলের সাথে কথা বলে।
.
.
আজকে বহুদিন পর,
শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখতে পায় রামিসা! সকাল বেলা কতো সুন্দর ছিল,আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে রামিসার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। বেলকনির রশিতে দেওয়া বেবির কাপড় গুলো নিয়ে রুমে চলে এলো রামিসা।এসে মনমরা হয়ে গুছিয়ে রাখছে। কায়েস ব্যাপারটা খেয়াল করে বললো,
-” হঠাৎ ম্যাডাম এর মুখশ্রী জুরে মেঘের আনাগোনা কেন?
-” কেন জানি না হঠাৎ শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে! ভালো লাগছে না কিছুই।

কায়েস রামিসার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তার মাথা নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বললো,
-” মন খারাপ করে না আল্লাহ ভরসা।

রামিসা শান্তির স্থান পেয়ে আদুরে চোখ বুজে আল্লাহ তা’আলার কে স্মরন করে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর বেবি চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। বিচলিত হয়ে রামিসা দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিল ছেলেকে।আদর করে বলে,
-” আমার”রাদ শাহমাত” এর কি হয়েছে?ভয় পেয়েছে সে?

ছোট্ট “রাদ শাহমাত” মাকে পেয়ে ঠোঁট উল্টে আরো জোরে কেঁদে ওঠে। কায়েস পাশে বসে বলে,
-” আমার বাবাটাকে তার আম্মু মেরেছে তাই না বাবা?

এ কথা শুনে চোখ দুটো কিঞ্চিত ছোট করে তাকায় রামিস। এতে করে হাসতে থাকে কায়েস।
.
.
রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট,
একদিকে খুশির সংবাদ অন্যদিকে দুটো পরিবারে হাহা’কারে ছেয়ে গেছে! সেখানে খুশির সংবাদ চাঁপা পরে দুঃসংবা’দ টাই বড় হয়ে গেল!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here