শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,০২,০৩

0
636

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,০২,০৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
০২

ঘর্মাক্ত শরীরে ঘরে ঢুকে তায়েশ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত। আয়েশা দ্রুত পায়ে লেবুর শরবত এনে দেয় ছেলেকে।ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবার নজর এখন তায়েশের উপর নিবদ্ধ। আয়েশা স্নেহের স্বরে বললো,
— আজ‌ও বস রাগারাগী করেছেন?

তায়েশ প্যান্টের পকেট থেকে রি’ভ’ল’বার টা বের করে ছোট ট্রি টেবিলে রেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
— আম্মা এই কয়েক মাসে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। আমি কিছুতেই খু’নি’কে শনাক্ত করতে পাচ্ছি না।খু’নি খুব নিখুঁতভাবে খু’ন গুলো করে চলেছে। সবচেয়ে বড় কথা সব গুলো খু’ন এক‌ই ভাবে করা হচ্ছে যা থেকে বুঝা যায় খু’নি একজন বা এক‌ই চক্রের।

ফয়জান বললো,
— এই মাত্র খবরে দেখলাম আজ‌ও একটা ছেলের লা’শ উদ্ধার করেছে পুলিশ! অন্যান্য হ’ত্যা’র মতো আজকেও ছেলেটার পুরুষাঙ্গে আ’ঘা’ত করে হ’ত্যা করা হয়েছে! আশ্চর্য বিষয় ছেলেটার শরীরে অন্য কোন ক্ষত স্থান নেই।

তায়েশ মাথার চুল টেনে ধরে বললো,
— হুম ভাইয়া,সব গুলো খু’ন এক‌ই ভাবে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়,যে ছেলে গুলো কে হ’ত্যা করা হচ্ছে সেই ছেলে গুলোর সমস্ত ইনফরমেশন থেকে জানা গেছে,কেউ নারী প্রা’চারের সাথে জড়িত,কারো বা নারী নির্যা’তনের মা’মলা রয়েছে! আবার কেউ বা নারীদের ইভ’টিজিং করে বেড়াতো!

কায়েস মাথা নিচু করে বসে আছে, সবার কথা গুলো শুনেও জেন শুনছে না!

তখন রামিশা বললো,
— এসব জঞ্জাল সমাজে না থাকাই ভালো। যারা বা যে এই খু’ন গুলো করছে আমি তাদের সেলুট জানাচ্ছি। এদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তায়েশ ভাইয়া আপনি বরং হ’ত্যা’কারী কে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, কারণ আপনারা পুলিশ’রা ত এই কাজগুলো করতে অক্ষম।

তায়েশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রামিশার দিকে।রামিশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে চলে যায়।
.
.
তায়েশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন উপ-পরিদর্শক (SI)গত কয়েক মাসে একেরপর পর এক খু’ন করা হচ্ছে আর খু’নি’কে শনাক্ত করার দায়িত্ব পরেছে তায়েশের উপর। শুধু তাই নয় ইন্সপেক্টর তুহিন হাওলাদারের মেয়ে,
এক সপ্তাহ যাবত নিখোঁজ!তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পরেছে তায়েশের উপর।
যার দরুন তুহিন হাওলাদার রীতিমতো কথা শুনিয়ে যাচ্ছে তায়েশ কে।
সামান্য একটা মেয়েকে খুজে বের করতে পারছেন না, সেখানে এরকম নিখুঁত খু’নি’কে শনাক্ত করা আপনার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়,যদি না ই পারেন দায়িত্ব নিতে গেলেন কেন?ছেরে দিন পুলিশের পোশাক।
এরকম নানা কথা বার্তা শুনিয়ে চলেছেন ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার।

রগচটা তায়েশ মাহমুদ মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিবে, কিন্তু এতো কষ্টের পর নিজের স্বপ্নের ধাপে পা রেখে পিছিয়ে যাওয়াটা কাপুরুষের কাজ।তাই আবার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নেয় তায়েশ, আরো করা ভাবে পুলিশ ফোর্স কে নিয়ে পরিকল্পনা করে।
.
.
এদিকে রামিশা নিজের রুমে এসে প্রান ভরে দম নেয়। এতক্ষণ ধরে কি দুঃসাহসী কাজটাই না সে করলো। রাগী বদমেজাজী সাব-ইন্সপেক্টর তায়েশ মাহমুদের মুখের উপর এত গুলো কথা শুনিয়ে দিল, ভাবা যায়। নিজের প্রতি নিজের খুব প্রাউড ফিল হচ্ছে রামিশার।

লন্ডন থেকে আসার পর থেকে তায়েশের সাথে শুধু ঝগড়াই হয়েছে রামিশার।তাই আজকে যেন সুদে আসলে ফেরত দিতে পেরেছে, এরকম ফিল হচ্ছে রামিশার।

লন্ডন থেকে আসার তৃতীয় দিন, একটা অগোছালো রুম চোখে পরে রামিশার তাই দিকপাশ না ভেবে কৌতুহল বশত রুমটায় ঢুকে রামিশা।
কি ভাবছেন রুমটা সুন্দর করে গোছানোর জন্য ঢুকেছে?
আরে না না, এই কাজ রামিশার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়।এই অগোছালো রুমটাকে আরো অগোছালো করার জন্যই তার প্রবেশ!
কারণ এর থেকেও বড় অগোছালো মেয়ে রামিশা যার কারণে মায়ের থেকে কম বকা শুনতে হয় না তাকে।

তো যা বলছি, রুমটায় ঢুকে প্রথমে একটা বড় ফুটবল পায়ের কাছে পায় রামিশা, নিজের ডান পা দিয়ে মেসির মতো করে বলটা মেরে দিল।বলটা গিয়ে পড়ল দেয়ালে থাকা পেপার ফ্লাওয়ারের উপর!যার কারণে পেপার ফ্লাওয়ার টা দেয়ালেই চ্যাপ্টা হয়ে গেল! তারপর খাটের কাছে গিয়ে দেখে অনেক ব‌ই এলোমেলো করে রাখা।ব‌ই গুলো একটা একটা করে হাতে নিয়ে দেখে, দেখার পর একটা ব‌ই রাখে খাটের এক কোনায় তো আরেকটা রাখে আরেক কোনায়।

তারপর আসে বুক সেল্ফের কাছে, একটা একটা করে ব‌ই গেটে গেটে দেখছে মনে হয় যেন কত পরিচিত তার এই বুক সেল্ফ। পাশে একটা রকিং চেয়ার, যেটাতে পুলিশের পোশাক ছড়িয়ে রাখা।যা দেখে ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে রামিশা।
কিন্তু বেশি পাত্তা না দিয়ে, কম্পিউটার রাখা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। কিবোর্ডের উপর একটা কি যেন দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নেয় রামিশা,
হাতে তুলে নেওয়ার পর দেখলো এটা ছেলেদের জাংগিয়া। সাথে সাথে ছুরে ফেলে, নিজের মুখের আকৃতি করে ওয়াক, কি যাতা একটা অবস্থা!নিজে নিজেই বকবক করে বলে,
এখানে কি কোন এলিয়েন থাকে নাকি? আমার রুম তো এতোটাও খারাপ না বাবা।
তারপর একটা খুব সুন্দর সপিশ দেখতে পায়,সপিশটা একটা কাঁচের গাছ উপরের দিকটা গাঢ় সবুজ রঙের পাতা গুলো নিচে শিখর গুলো সচ্চ পানির মতো।সপিশটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে রামিশা তখন পিছন থেকে কেউ বলে, আমার জাংগিয়া টা কফির কাপে ফেললো কে?

হঠাৎ কারো উচ্চ কন্ঠ শুনতে পেয়ে কেঁপে ওঠে রামিশা যার দরুন হাত ফসকে সপিশটা ফ্লুরে পরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়!
তায়েশ মাথাটা খানিক কাত করে দেখলো তার প্রিয় সপিশটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পরে আছে ফ্লুরে!তাই রেগে গিয়ে ধমকে বলে ইডিয়ট কোথাকার!কে তুমি? আমার জিনিসে হাত দেওয়ার সাহস পেলে কোথা থেকে? শুধু তাই নয় ভেঙ্গে ও ফেললে।

তায়েশ রাগি মুখশ্রী করে এগিয়ে আসে রামিশার দিকে!রামিশা ভয়ে চুপসে যায়,যার কারণে কিছুটা পিছিয়ে যায়। ফলস্বরূপ কাঁচের টুকরো গুলো তে পা দিয়ে দেয়, সাথে সাথে কাঁচ গুলো বিঁধে যায় পায়ে!রামিশার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ইয়া আল্লাহ আর্তনাদ।তায়েশ থমকে দাঁড়ায়,সে এমনটা কখনোই চায়নি। তবে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো, আল্লাহ উচিৎ বিচার করেছে অন্যের ক্ষতি করলে নিজের ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক।

সেদিন তায়েশ রামিশার প্রতি একটু সহানুভূতি ও প্রকাশ করেনি।এরপর থেকে রামিশার সবচেয়ে অপছন্দের মানুষ হয়ে ওঠে তায়েশ মাহমুদ। দুজনে যেন দু’জনের চোখের বালি!
.
.
আজকে ফয়জান ক্লাসে ঢুকে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিল, কোথাও আলো নামের বোরকা পরিহিতা মেয়েটি নেই। তাহলে কি আজকে কলেজে আসেনি? হবে হয়তো।

মেয়েটি ক্লাসে উপস্থিত থাকলে ফয়জানের খুব ভালো লাগে। ফয়জান যেখান থেকেই প্রশ্ন করে না কেন খুব ঝটপট উত্তর দিয়ে দেয় আলো।তাই আলো’র প্রতি এক অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে ফয়জানের।

প্রতিটি স্কুল কলেজে এরকম কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী থাকে। এবং তাদের প্রতি এক আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকে টিচার দের।সে হিসেবে ফয়জান ও ব্যাতিক্রম নয়।

তাছাড়া শুধু ফয়জান নয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রত্যেকটা শিক্ষক আলোকে ভালোবাসে। শুধু যে ওর মেধার কারণে তা কিন্তু নয়।আলো কে ভালোবাসার মতো আরো অনেক কারণ বিদ্যমান।

ফয়জান অফিস রুমে বসে সি.টি. পরীক্ষার খাতা দেখছে তখন সমির স্যার আসলেন। ফয়জান কে বললো,
— স্যার ব্যস্ত নাকি?

ফয়জান খাতায় মার্কস দিতে দিতে বললো,
— এই তো সেকেন্ড ইয়ারের খাতা দেখছি।স্যার কিছু বলার ছিল আপনার?
— এখন আমাদের দুজনের ই তো ক্লাস নেই তাই ভাবলাম আপনার সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিব আর কি।
— আচ্ছা তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, শেষের খাতাটা দেখে যাবো।

সমির স্যার পাশের একটা চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রলে মনোযোগ দেয়। ততক্ষণে ফয়জান এর খাতা দেখা হয়ে যাবে এই ভেবে।
ফয়জান খাতায় চোখ নিবদ্ধ রেখেই বললো,
— জীবনে প্রথম কোন ছাত্রী কে দেখলাম যে কিনা পঞ্চাশ মার্কসের পরীক্ষায় পঞ্চাশ পেয়েছে! মানতেই হবে মেয়েটা খুবই মেধাবী ছাত্রী। তাছাড়া ওর ধার্মিকতা দেখেও আমি ভেরি ইমপ্রেস। একটা মেয়ে এতোটা নিখুঁত হতে পারে সেটা আলো ইসলাম কে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতাম না।

সমির স্যার ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফয়জান কে বললো,
— সরি খেয়াল করিনি।কার এতো প্রশংসা করছেন?
— সেকেন্ড ইয়ারের আলো ইসলাম এর কথা বলছি।

সমির ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে বললো,
— আলো ইসলাম!ঐ নাচনে ওয়ালীর কথা বলছেন?

ফয়জান অরুনলোচন আঁখি মেলে বললো,
— নাচনে ওয়ালী মানে?

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সমির বিমূঢ় হয়ে পড়ে,মুখ ফসকে এ কি বলে ফেললো সে? না না কিছু একটা বলে ব্যাপারটা এরিয়ে যেতে হবে।
ফয়জান উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। সমির মেকি হাসি দিয়ে বললো,
— আসলে আমি…

কথাটা শেষ করার পূর্বেই ফোনের রিং টোন বেজে উঠল। সমির যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে উঠে দাড়ালো।ফয়জানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,
— স্যার জরুরি কল এসেছে, আমি কথা বলে আসছি।

ফয়জান হাতে ইশারা করে যেতে বললো ঠিকই কিন্তু মনের মধ্যে এক আকাশ সম বিষ্ময় রয়েই গেল। খাতা দেখা বাদ দিয়ে ভাবনায় ডুবে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর তৈরি করলো,
— নিশ্চ‌ই সমির স্যার অন্য কোন স্টুডেন্ট এর কথা বলেছেন। আমি যে আলো ইসলাম এর কথা বলেছি তিনি হয়তো খেয়াল করেন নি। হুম এইটাই হবে।

এতটুকু ভেবে শান্তি পেলো ফয়জান।আলো’র খাতাটা আরো একবার ট্রায়াল দিয়ে সবগুলো খাতা নির্দিষ্ট ড্রয়ারে তালা মেরে রেখে দিল।
হাত ঘড়িতে সময় দেখে আরো কিছু প্রয়োজনীয় পেপার্স নিয়ে ল্যাপটপ অন করলো।
.
.
কায়েস অফিসে বসে কাজের ফাঁকে তার প্রেয়সির ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। মায়ের সাথে কথা বলতে তার রুমের কাছে যেতেই বাবা মায়ের কিছু কথা তার কর্ণোগোচর হয়।
আয়েশা বলছিল তখন কায়েস আর ফাইজার বিয়েটা এবার দিয়ে দিলে মন্দ হবে না বলো? তখন সেলিম সাহেব বললেন,
— ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে তাদের মতামত আগে জানা প্রয়োজন নয় কি?

আয়েশা সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো,
— আমি জানি ওরা একে অপরকে খুব পছন্দ করে, তার পরেও ওদের মতামত জেনেই আগাবো।

বাবা মায়ের এটুকু আলোচনা শুনে নিজের রুমে চলে আসে কায়েস। অপেক্ষার প্রহর ইতি শেষের পাতা উল্টে তার মনে রঙিন প্রজাপতির ঝাঁক উড়ে যায় যেন।
এখন অফিসে বসেও এক‌ই ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে কায়েস।
.
.
আয়েশা রহমান এবং সেলিম সাহেবের দুই ছেলে কায়েস মাহমুদ এবং তায়েস মাহমুদ। দুইজন দুই মেরুর বাসিন্দা! একজন ধার্মিক হলে আরেকজন ধার্মিক এর “ধ” ও মানে না! আবার একজন শান্ত স্নিগ্ধ শোভন তো আরেকজন এর বিপরীত ধর্মী!
একজন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে তো আরেকজন সরকারি চাকরি করে।

এদের মধ্যে মিল শুধু ফেইসে খানিকটা,
এর একটাই কারণ এরা এক মায়ের সন্তান।তা ছাড়া দু’জনেই সুদর্শন যুবক।যদিও কায়েস মাহমুদের গায়ের রং কিছুটা চাঁপা। তবে তায়েস মাহমুদ তুলনায় অনেক ফর্সা গায়ের রঙের অধিকারী।

দু’জনেই বিয়ের উপযুক্ত। কিন্তু তায়েস মাহমুদ এই মুহূর্তে বিয়ের নামক প্যারায় জড়াতে চায় না। সে আরো গুটি কয়েক বছর বিন্দাস লাইফ কাটাতে চায়।তার মতে বিয়ে মানে “দিল্লি’কা লাড্ডু” যা খেলেও প্রস্তাবে না খেলেও প্রস্তাবে। তাছাড়া পুলিশের চাকরি নিয়ে তার জীবন এমনিতেই ত্যানা ত্যানা!তার‌উপর বিয়ে করে বাকি ত্যানাছেড়া করার মতো ভুল করবে না সে।
.
.
রামিশা পর পর কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে এক সেকেন্ড ও ক্ষ্যান্ত দিচ্ছে না।রিনু দরজা খুলে বললো,
— ছোড আফা শুরুডা করলেন কিডা? দরজার দার আইতে আইতে সময় দিতেন না নাকি?

রামিশা গটগট পায়ে ভিতরে ঢুকে, কাঁধ থেকে কলেজ ব্যাগটা দিরাম করে সোফায় রেখে স্কার্ফ টা ছুড়ে ফেলেলো!
বোনের এহেন কান্ড দেখে ফাইজা তড়িগড়ি করে কিচেন থেকে এলো।সে জানে রামিশা যখন কোন কিছু নিয়ে রেগে থাকে তখন জড় পদার্থের উপর সেই রাগ ফলায়,তাই ফাইজা স্বগতিক করে বললো,
— কি হয়েছে বোনু?
— আরো কয়েক ঘা বসিয়ে দিলে মনের আঁশ মিটতো আপুই!

ফাইজা বোনের কথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না।রিনু কে বললো,
— বনুর জন্য লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আসো।

রিনু আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
— আনতাছি বড় আফা।

শুরু থেকেই রামিশার চলনবলন মোটেও ভালো চোখে দেখে না রিনু।তাই আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে রামিশার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।

ফাইজা বোনের মাথায় পরম আদুরে হাত বুলিয়ে বললো,
— আপুই কে বল কি হয়েছে?
— কলেজ থেকে ফিরতে হেঁটে আসছিলাম।রিতা আর আমি। তখন আকস্মিক দুটো ছেলে এসে পথ রোধ করে বললো, হাই ফুলটুসি!চলো সিনেমা দেখতে যাই?
এই বলে আমার আর রিতার হাত চেপে ধরে! পরিস্থিতির বিড়ম্বনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হাতে থাকা পানির কন্টিনার দিয়ে ছেলেটির ঘাড়ে বসিয়ে দিলাম এক ঘা! ঘটনা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো রিতার হাত চেপে ধরা ছেলেটার। তারপর রিতার হাত ছেড়ে আমার চুলের মুঠি ধরতে নিলে,আমি বুদ্ধি করে রিতার হাত ধরে দৌড় শুরু করি। পিছন পিছন ছেলে দুটো দাওয়া করে। ততক্ষণে দৌড়ে লোকালয়ে চলে আসি আমরা তাই আর আগাতে সাহস পায়নি ছেলে দুটো।

বোনের বা’ড়’ন্ত শরীরের দিকে এক পলক তাকিয়ে শিউরে উঠে ফাইজা।যুগ যে মোটেও ভালো নয়, আজকে এমন একটা দূ’র্ঘটনার শিকার হয়েছে রামিশা না জানি ঐ ছেলে গুলো কি রুপ নিয়ে হাজির হয়।বাসা থেকে কলেজ কাছাকাছি হ‌ওয়াতে হেঁটেই যাতায়াত করে রামিশা।
রামিশার কাঁধ ঝাঁকিয়ে ফাইজা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বললো,
— বোনু ছেলে গুলো কে বুঝিয়ে বলতে পারতি। এভাবে আ’ঘাত করা একদম উচিৎ হয়নি।

রামিশা ঝাঁকুনি দিয়ে হাত সরিয়ে দেয় ফাইজা’র। তীব্র ক্ষো’ভ প্রকাশ করতে বলে,
— আপুই তুমি একটা ভিতুর ডিম হতে পারো! কিন্তু আমি ন‌ই। শয়’তান গুলোর সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার?আর একবার সামনে পাই তো দেখিয়ে দিব রামিশা তুজ জোহরা ঠিক কি কি করতে পারে!

আয়েশা দুই বোনের সম্পূর্ণ কথা শুনে খু’ন্তি হাতে দৌড়ে এলো কিচেন থেকে।ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
— ইয়া আল্লাহ!একি কাণ্ড ঘটিয়েছো? আল্লাহ না করুন ছেলে গুলো যদি পরবর্তীতে রাস্তা ঘাটে কোনো বিপদ ঘটায়!

রামিশা আয়েশা কে আশস্ত করে বললো,
— বড় মা তুমি চাপ নিও না।ঐ লাফা’ঙ্গা গুলো আমার সামনে আসুক একবার তখন হারে হারে টের পাবে।
— মেয়ের কথা শুন?কিসব বলছে।মা এটা লন্ডন নয়,এটা বাংলাদেশ তোকে বুঝতে হবে। এখানে জোর যার মুল্লুক তার।কেউ কারো বিপদে এগিয়ে আসে না উল্টো ক্যামেরা হাতে ভাইরাল করতে উস্তাদ।যাই হোক তোকে আগামীকাল থেকে ফয়জান বা তায়েস কিংবা কায়েস যেকোন একজন কলেজে পৌছে দিবে। আর আসার সময় আমি বা ফাইজা গিয়ে নিয়ে আসবো।এই বলে দিলাম।

এই বলে আয়েশা কিচেনে চলে গেল।রামিশা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– আমি কি এখনো বাচ্চা নাকি যে আমাকে এভাবে গার্ড দিয়ে পাঠাতে হবে?

রিনু শরবত তৈরি করে নিয়ে আসে।ফাইজা রিনুর থেকে গ্লাস নিয়ে রামিশার হাতে তুলে দিয়ে
বললো,
— তুই ছোট না ঠিকই কিন্তু তোকে মনে রাখতে হবে তুই একজন নারী। ধরে নে এটাই তোর দূর্বলতা! একজন নারীর ইজ্জ’তের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই।যা একবার ক্ষুন্ন হলে জীবনে আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। তখন যত‌ই আহাজারি কিংবা প্রতি’শোধ পরায়নতা হস না কেন।

রামিশা কিছু বুঝতে পারলো কিনা জানিনা,ফাইজার কাছ থেকে উঠে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল শাওয়ার নেয়ার জন্য।ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোনের ব্যাগ, কলেজে ড্রেস গুছিয়ে রাখে।
.
.
তায়েস বসে আছে তার বস এর বাসায়। সামনে রাকিব হাওলাদার এর সহধর্মিণী তহুরা বেগম মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদছেন। আজকে কতোদিন হয়ে গেল একমাত্র মেয়ে নিখোঁজ।মেয়ের শোকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

বার বার তায়েস কে অনুরোধ করে বলছে,
— বাবা আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে এনে দাও প্লিজ। আমার মেয়েটা নিশ্চ‌ই আমার জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে, না জানি কি অবস্থায় আছে মেয়েটা আমার।

তায়েস শান্তনা দিয়ে বললো,
— ম্যাম আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করছি এবং করবো। আপনি দো’আ করুন, সন্তানের জন্য মায়ের করা দো’আ বিফলে যায় কখনো।

রাকিব হাওলাদার তহুরা বেগম কে শান্তনা দিয়ে উপরের তলায় রুমে নিয়ে গেলেন।তায়েস ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার এর জন্য বসে আছে তিনি কি ইনট্রাকশানস দেয় তার জন্য।

পিচ্চি একটা ছেলে বল খেলছে। তখন তায়েসের কাছে বল চলে আসায় বল নিতে এসে ছেলেটা বললো,
– তুমি লুকোচুরি খেলতে পারো?

তায়েস প্রাণ খোলা হাসি দিয়ে বললো,
– লুকোচুরি খেলতে না পারলেও খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। তুমি খেলবে আমার সাথে?

পিচ্চি ছেলেটা মুখশ্রী কুঁচকে বললো,
– না আমি লুকোচুরি খেলতে চাই যেমনটা আপ্পি খেলছে! আমিও খেলতে চাই তুমি খেলবে কিনা বলো?

তায়েস সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটার পানে। তারপর জিজ্ঞাসা করলো,
– তোমার নাম কি পিচ্চি?

ছেলেটি প্রতিবাদ করে বললো,
– আমাকে পিচ্চি বলবে না।
– আচ্ছা সরি। এবার তো বলো?
– আলিফ।

তায়েস বললো,
– আলিফ তোমার কেন মনে হলো তোমার আপ্পি লুকোচুরি খেলছে?

আলিফ ঠোঁটে আঙুল রেখে করে বললো,
– হুঁশ!

আলিফ কে পর্যবেক্ষন করে তায়েস ও ঠোঁটে আঙুল দেয়। তখন আলিফ ফিসফিস করে বলে,
– কাউকে এ ব্যাপারে জানতে দিও না। না হয় আপ্পিকে বাবাই মামুনি আপ্পিকে খুঁজে পেয়ে যাবে!

রাকিব হাওলাদার এসে তাদের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তিনি এসে তায়েস কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু তায়েস আলিফ কথা গুলো হেলাফেলা করতে পারছে না কিছুতেই। ঠিক করলো এ ব্যাপারে আলিফের সাথে কথা বলবে……

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here