#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,০৬,০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
০৬
ক্লাসের মাঝে আইরিন সুলতানা ম্যাম এসে বললেন,
-“স্যার আপনার অনুমতি পেলে আলো কে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে যেতাম?
ফয়জান অনুমতি দিয়ে বললো,
-“জ্বি ম্যাম অবশ্যই কেন নয়?
আলো যাও ম্যাম যেতে বলছেন।
আলো তখন আইরিন সুলতানা ম্যামের সাথে ক্যান্টিনে যায়। গতকাল পিরিয়ড এর ব্যাথার কারণে কলেজে আসতে পারেনি আলো। এরকম প্রতি মাসের একটি দিন আলো কলেজে আসতে পারে না।
আজকেও কিছুটা ব্যাথা রয়েছে তাই আইরিন সুলতানা আলোকে কিছু খাইয়ে মেডিসিন দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন।
ক্লাসের রুলস অনুযায়ী যারা হোম ওয়ার্ক করেনি তারা দাঁড়িয়ে আছে।কেউ কেউ অজুহাত দেখিয়ে বললো,
-“অসুস্থ ছিল বলে গতকাল কলেজে উপস্থিত হতে পারেনি তাই হোম ওয়ার্ক করতে পারেনি।
তখন ফয়জান বললো,
-“তোমাদের মতো আলো ইসলাম ও গতকাল কলেজে আসেনি। তাহলে ও কি করে হোম ওয়ার্ক করে নিয়ে আসলো? আমি রুলসে বলে দিয়েছিলাম যে এসব অজুহাত গ্রহণ করা হবে না।তোমরা কলেজে উপস্থিত হতে না পারলে এক জন আরেক জনের সাথে যোগাযোগ করে পড়া কমপ্লিট করে আসবে।
ফয়জান এর কথায় সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফয়জান এসব তোয়াক্কা না করে বোর্ডে অঙ্ক করা শুরু করে। একটা অঙ্ক করা হলে আলো এসে বললো,
-“স্যার আসতে পারি?
ফয়জান বোর্ড থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আসো।
আলো তার বেঞ্চে বসলে ফয়জান বললো,
-“আলো এই অঙ্ক টা নিয়ে তোমার কোন প্রশ্ন আছে?
আলো অঙ্কটা দেখে বললো,
-“জ্বি না স্যার।
-“ভেরি গুড।
.
.
তায়েসের বাইকে চড়ে বসে রামিসা।বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তার। তায়েস গাড়ি চালানোতে পূর্ণ মনোযোগ রেখে বলল,
-“মানুষজন যেভাবে বসেছে বাই এনি চান্স পরে টরে গেলে আমার কোন দোষ নেই!
-“দোষ নেই? কিছু হোক তখন বুঝবেন মজা আমার দুই বাবা আপনাকে পুলিশে দেবে!
রামিসার এমন অবুঝ কথায় আড়ালে হাসে তায়েস। পুলিশকে কিনা বলছে পুলিশে দেবে হাহাহা।
অতঃপর,
কলেজের থেকে দু মিনিটের রাস্তা আগে তায়েস বাইক থামিয়ে রামিসা কে বলল নামো। রামিসা ভালো মেয়ের মত বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো ওমনি তায়েস বাইক স্পিডে চালু করে হাওয়া হয়ে গেল! ব্যাপারটা বুঝতে রামিসার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। চেচিয়ে বলল রাজা’কার কোথাকার তোকে আমি একবার হাতে পাই তখন বুঝাবো মজা। কত্ত বড় বদের হাড্ডি হলে আমাকে এখানে নামিয়ে দেয় আমি যদি বড় বাবাকে বলে তোকে বকা না খাইয়েছি তাহলে আমার নাম রামিসা তুজ জোহরা চৌধুরী নয়। তারপর কলেজ যায় রামিসা।
.
.
রামিসার সাথে ঐ ঘটনার পর থেকে ছেলে দুইটাকে শফিক মাহমুদ এর বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়।রামিসা বাসায় সবাই কে বিষয়টা জানালে তায়েস ছেলে দুইটা কে শাসিয়ে বলে এই বাসার আশেপাশে দ্বিতীয়বার যেন তাদের দেখা না যায়। ছেলে দুটো সেদিন ভয় পেয়ে বলে এই এলাকায় আর আসবেনা। বাসার সবাই তখন ভেবেছিল এই ঝামেলা এখানেই হয়তো সমাপ্ত। কিন্তু কে জানতো এদের এভাবে নির্মমভাবে হ’ত্যা করা হবে?
বাসার সবাই যখন নিউজে খবরটা দেখল তখন সবাই থমথমে মুখ করে বসে থাকলেও রামিসা মনে মনে ভীষণ আনন্দ পায় তবে বাহিরে তা প্রকাশ করে না। তারপর নিজের রুমে গিয়ে রিতা কে কল করেন জিজ্ঞাসা করে এমন দারুণ খবর নিতে জানে কিনা?
এমন মুমূর্ষ খবর শুনে রিতা ধপাস করে বসে পড়ে ফ্লুরে। বারান্দার গ্রিল গলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, মানুষের জীবনে কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায় কেউ পূর্বে ঘুনাক্ষরেও টের পায় না।
অনেক ভীতু এবং কোমল প্রকৃতির মেয়ে রিতা তাই ছেলে গুলো ওদের উত্তপ্ত করার পরেও মায়া হয় এমন নির্মল ঘটনা শুনে।
.
.
আজকে দুদিন হলো কয়েসের সাথে ফাইজার আংটি বদল হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।এর মধ্যেই ফাইজা দের এপার্টমেন্ট কমপ্লিট হয়ে যাবে। আজকে সবার থেকে বলে কায়েস ফাইজা কে নিয়ে ট্যুরে বেড়িয়েছে।
ঢাকার কাছে বেরাইদ বালু নদীর ঘাট,ইছাপুরা।যেটা ঢাকার অতি কাছে একদিনের ট্যুর করার জন্য বালুনদী একটি আদর্শ জায়গা। নদীর দুই পাশে রয়েছে সবুজের সমারোহ, দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।নদীর ঘাটের আশেপাশে ছোট ছোট অনেক রেস্টুরেন্ট আছে । যা খাবারের চাহিদা পূরণ করে।
প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক আসে একটু সবুজ শ্যামল পরিবেশ ও নদী এলাকার বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণের জন্য। নদীর ওপারে মানুষ গুলো অনেক ভালো, লোকজন কে অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে হাসিমুখে। নদীর এপারে বেরাইদ আর ওপারে রূপগঞ্জ- নারায়ণগঞ্জ। মরুভূমির স্বাদ নিতে অনেক বড় বালুর মাঠ আছে যেখানে । নদীর ওপারে রাস্তা এত পরিষ্কার যা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অসাধারণ।
নদীর কাছে এসে ফাইজা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সেই ছোট বেলা নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যায় বাবা মায়ের সাথে।এর পর থেকে প্রকৃতির সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। আজকে এতো বছর পর এমন নির্মল প্রকৃতিতে নিজেকে উজাড় করে দিতে ইচ্ছে করছে।ইশ যদি সময়টা এখানেই থেমে যেত!
কায়েস দোকান থেকে কিছু বাজা পুরি নিয়ে নৌকা ভাড়া নিল।
ফাইজা নৌকায় বসে নদীর পানি স্পর্শ করছে। পাশে কায়েস বসে আছে। খাবারের প্যাকেট টা খুলে ফাইজার সামনে ধরে বললো না খাও।
ফাইজা বললো উহু খাব না আমি । আপনি ই খান।
কায়েস বারন শুনলো না বললো, তুমি আগে শুরু করো দ্যান আমি খাব। অঘর্তা না চাইতেও ফাইজাকে খেতে হলো না হয় কায়েস খাবে না।
কায়েস ভাবলো,আর কিছু দিন তারপর আমি নিজ হাতে তোমায় খাইয়ে দিব টুনিপাখি।
অপর প্রান্তে ফাইজা ভাবছে, শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আগমন!এটা কাটানোর নয়।শুভ্রতার আগমন আর কখনোই ঘটবে না। সেখানে মেঘ গুলো স্থায়ী হয়ে গেছে।
বশিলা নামের একটা চড়ে এসে মাঝি নৌকা থামালেন। কায়েস বললো,চলো এখানে নামবো।
ফাইজা বললো, এখানে কেন নামবো?
কায়েস বললো,নেমেই দেখ।
তারপর নৌকা থেকে অতি সন্তর্পণে নেমে সামনে এগিয়ে যায় ফাইজা।
এখানে চড়ের মধ্য ভাগ বালু তার দুই পাশে সবুজ ঘাসের সমারোহ।ফাইজা হাঁটতে হাঁটতে অনেক টা চলে গেল। ইচ্ছে করছে বাচ্চাদের মত দৌড়ে ছুটে বেড়াতে। আবার পরক্ষনেই সেই ইচ্ছা দমন করে নেয়। মনে হয় এইসব তার জন্য নয়।যাদের জীবন প্রকৃতির মতো নির্মল তাদের জন্য।
কায়েস এর ফোনে কল আসায় তার পা থেমে যায়।কলে কথা শেষ করে দেখলো ফাইজা অনেক টা সামনে চলে গেছে।সে দ্রত পা চালিয়ে ফাইজার কাছে যায়।ফাইজা ঘাসের উপর হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
-“একটা জিনিস চাইবো দিবেন?
কায়েস এর ঠোঁটের কোণে খুশির ঝিলিক উপচে পড়ে যেন।দ্রুত বলে একবার শুধু চেয়ে দেখ টুনিপাখি?
“টুনিপাখি” নামটা বহু বছর পর শুনে ফাইজার ভিতর টা দুমরে মুচড়ে উঠলো। নেত্রজোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে ঝাঁপসা হয়ে এলো মস্তিষ্ক এলোমেলো লাগতে শুরু করলো।
কায়েস এর আড়ালে চোখে পানি মুছে বড় বড় কয়েকটি শ্বাস নিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হলো।
কায়েস অধির আগ্রহে অপেক্ষায় আছে কখন ফাইজা তার কাছে কিছু চাইবে।ফাইজা কে তারা দিয়ে বললো, কি হলো বলো?
ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, আগে প্রমিসড করতে হবে আমি যেটা চাইবো সেটা আপনি দিবেন আমাকে!
কায়েস এর মস্তিষ্ক কিছুটা নড়েচড়ে উঠল।বললো, আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দিব ইনশা আল্লাহ। এবার বলো কি চাই তোমার?
ফাইজা কায়েসের দিকে তাকিয়ে বললো, এখন নয়। সময় হলে চেয়ে নিব। তখন কিন্তু না শুনবো না।
.
.
(বর্তমান)
নিজেদের এপার্টমেন্ট কমপ্লিট হয়ে গেলে কিভাবে ফার্নিচার দিয়ে সাজাবে তা নিয়ে আলোচনায় বসেছে ফাহমিদা খাতুন। সেখানে আয়েশা সহ পরামর্শ দিচ্ছেন।
ফয়জান তখন দরজার কলিং বেল বিরতিহীন ভাবে বাজিয়ে চলেছে।রিনু দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিল।আর বললো,
-“আফনেরা ভাই বোন মিল্লা শুরু করছেন কিডা?সুচ টা কি ডাবায় দিবেন নাকি?
ফয়জান ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“সুচ কি?
রামিসা এসে বললো আরে ভাইয়া রিনু আপা কলিং বেলের সুইচ কে সুচ বলছে।
ফয়জান অহ আচ্ছা বলে ভিতরে চলে গেল। শফিক মাহমুদ আর রুহুল আমিন বসে টিভিতে সংবাদ দেখছেন। ফয়জান গিয়ে বললো,
-“বাবা আর বড় বাবা তোমরা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও! আমার সাথে যেতে হবে।
দু’জনেই চমকালো! রুহুল আমিন বললেন,
-“এই সময় আমরা কোথায় যাবো?
-“গেলেই দেখতে পাবে।
তারপর ফয়জান পাঁচ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে এলো। বেশ পরিপাটি হয়ে এসেছে, কালো প্যান্টের,ক্রিম রঙের সাথে কালো মিশেল সার্ট। সুন্দর করে ইন করা।ফর্সা গায়ের রঙের সাথে রঙ গুলো বেশ চমৎকার লাগছে।
দুই ভাই তৈরি হয়ে এসে ফয়জান কে লক্ষ্য করে।একে অপরের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। ফয়জান এসব তোয়াক্কা না করে তাদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
.
.
অতঃপর রাত দশটার দিকে রিনু দরজা খুলে অবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। শফিক মাহমুদ বললেন,
-“কি ভিতরে ঢুকতে দিবি না নাকি?
রিনু বললো,
-“হে তো দিমুই কিন্তু এ বোরকা পরা বেডি কেডা?
শফিক মাহমুদ সহসাই উত্তর দেয়,
-“আমাদের ফয়জান এর বউ!
এ কথা শুনে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে রিনু! চেঁচিয়ে পুরো বাসা মাথায় করে বললো,
-“খালাম্মা দেইক্কা যান ভাই আমাগো বাদেই বউ লইয়া আইয়া পরছে!….
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
রিনু’র গলা ফাটা চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসে। সবার স্তব্ধ নয়ন আটকে আছে দরজার দিকে। রুহুল আমিন বললেন,
-“বউ মা কে নিয়ে ভিতরে চল?আর কতোক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে থাকবে মেয়েটা?
-“জ্বি বাবা।
তারপর ফয়জান তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী কে নিয়ে ভিতরে ঢুকে।রামিসা অভিমানী কন্ঠে বললো,
-“ভাইয়া তুমি বিয়ে করেছো? আমাদের একটু জানালে কি হতো? আমাদের কত্ত প্লান ছিল তোমার বিয়ে নিয়ে আর তুমি..
ফাইজা ও বোনকে সাপোর্ট করে বললো,
-“ভাইয়া তুমি এমনটা করতে পারলে?
বোরকা পরিহিত মেয়েটা জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সত্যিই তো ছেলে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের অনেক স্বপ্ন থাকে কিন্তু তিনি এমনটা কেন করলেন? লজ্জায় মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা।
ফাহমিদা খাতুন পা দুটো পিছিয়ে দপ করে বসে পড়লো সোফায়। তিনি যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
আয়েশা আগ বাড়িয়ে কিছু বলছেন না।যদি তার জা রাগ করে এই ভেবে।
শফিক সাহেব বললেন,
-“তোমাদের না জানিয়ে আমরা এতো বড় কাজটা করে ফেলেছি সে জন্য দুঃখিত। এখন এভাবে সবাই ঘুমড়া মুখ করে বসে থাকলে মেয়েটার খারাপ লাগবে।
ফাইজা,রামিসা তোদের ভাবী কে তোদের রুমে নিয়ে যা।
-“জ্বি বড় বাবা।
ফাইজা মেয়েটাকে নিয়ে যায়। পিছন পিছন রামিসা যায়।রিনু টলি ব্যাগটা নিয়ে তাদের পিছু পিছু যায়।
ফয়জান মায়ের পাশে বসে অতি নরম গলায় বললো,
-“সরি মা।এ ছাড়া উপায় ছিল না।মাফ করে দাও প্লিজ?
ফাহমিদা খাতুন এবার আর্তনাদে ফেটে বিলাপ শুরু করলেন। এই দিন দেখবার জন্য তোকে পেটে নিয়েছিলাম ফয়জান? তোর বাপেরে নিয়া বিয়ে করে নিয়া আইলি অথচ মায়েরে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলি না? একবার তো কইতে পারতি মেয়েটা কে তুই পছন্দ করিস, বিয়ে করতে চাস। আমি কি তোকে বাঁধা দিতাম?
সাথে আয়েশা মৃদু রাগ করে বললেন,
-“বুঝলে ফামিদা ছেলের কাছে তার দুই বাবাই সব। আমাদের দুই মায়ের কোন মূল্য নেই।
ফয়জান উঠে আয়েশার কাছে গিয়ে বললো,
-“সরি বড় মা।প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও?
শফিক মাহমুদ বললেন,
-” বুঝলি ভাই মানুষজন আমাদের কে নিয়ে হিংসাত্মক কথা বলছে। আসলে আমাদের মতো কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারেনি তো তাই ঘা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
রুহুল আমিন ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে বললেন,
-“ভাইজান হক কথা বলেছেন।যাই হোক খাবার গুলো কিন্তু বেশ সুস্বাদু ছিল। এবার একটা সুন্দর ঘুম দিলেই হবে।
দুই ভাইয়ের কথা শুনে মুখ বাকায় আয়েশা এদিকে ফাহমিদার অবস্থা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো।
.
.
আইরিন সুলতানা ম্যামের মৃত্যুর পর থেকে আলো ইসলাম কলেজে আসা বন্ধ করে দেয়। ফয়জান জানতে পারে আইরিন সুলতানার মেয়ে আলো ইসলাম।আর তাই মায়ের মৃ’ত্যুতে মুষড়ে পড়ে আলো। দুনিয়ায় অন্ধকারে ছেয়ে যায় তার জীবন। তাকে সার্থহীন ভালোবাসাতো এক মাত্র আইরিন সুলতানা।আলো’র প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা ছিলেন আইরিন সুলতানা ম্যাম।
ফয়জান প্রতিদিন এই আশায় ক্লাস রুমে যেত যে আজকে নিশ্চয়ই আলো এসেছে। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশার মেঘ জমেছে। ফয়জান আগের মত উৎসাহ পায় না ক্লাসে। আগের মত কঠোরতা অবলম্বন করতেও ইচ্ছে করে না।
আসলে প্রতিটি ক্লাসে দুই একজন হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী থাকে।আর তাদের কারণেই শিক্ষকরা ক্লাস করতে আনন্দ পায়।এর মাঝে হুট করে মেধাবী শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি প্রতিটি শিক্ষকের নজর এড়ায় না।
এরকম তিন সপ্তাহ পার হলো।
একদিন ক্লাসের রুলস অনুযায়ী যারা হোম ওয়ার্ক করেনি তারা দাঁড়িয়ে আছে। ফয়জান তার নিয়মমাফিক ক্লাস শুরু করলো।
বই থেকে মাথা তুলে হঠাৎ বোরকা পরিহিত মেয়েটা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ফয়জান বিষ্ময় ভরা চাহনিতে তাকিয়ে রইলো ঠিক কতক্ষন বলা মুশকিল।
ধ্যান ভাঙল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা কেরানির ডাকে। কেরানি ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“স্যার একটা নোটিশ জানানোর ছিল শিক্ষার্থীদের।
ফয়জান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
-“কি নোটিশ বলুন?
কেরানি ভিতরে এসে প্রিন্সিপালের দেওয়া নোটিশ পড়ে শোনালো।
তারপর কেরানি ফাইল এগিয়ে দিলে ফয়জান সাইন করে দিলে কেরারি চলে গেল।
কেরানি থেতে ফয়জান আলো’র দিকে পুনরায় তাকিয়ে দেখলো আলো নেত্রজোড়ায় পানি টলটল করছে!
ফয়জান এর ভিতরটা মুচড়ে উঠলো। মনে মনে খুজার চেষ্টা চালালো,আলো কাঁদছে কেন?
তার আগে প্রশ্ন জাগলো,
আলো দাঁড়িয়ে আছে কেন?
সবার দিকে দৃষ্টি রেখে উত্তর পেয়ে গেল।আলো হোক ওয়ার্ক করেনি বলে দাড়িয়ে আছে।তার মানে এই জন্যই কাঁদছে।
যে সব সময় সবার আগে পড়া কমপ্লিট করে। আজকে দাঁড়িয়ে আছে সে। এই দাঁড়িয়ে থাকাতে তো সে অভ্যস্ত নয়, সে কারণেই লজ্জায় কষ্টে কাঁদছে।
ফয়জান নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
-“আলো সিটে বসো!
কথাটা যেন বুঝতে পারলো না আলো, সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় ফয়জান এর দিকে। ফয়জান পুনরায় চোখে ইশারা করে বললো,
-“বসতে বলেছি।
আলো দ্বিরুক্তি না করে বসলো।
অতঃপর ক্লাসে মনোযোগ দিল ফয়জান।
.
.
ক্লাস শেষ হওয়ার ঘন্টা পড়লে ফয়জান ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। বারান্দা দিয়ে কিছুটা হেঁটে যেতে কি মনে করে যেন আবার ক্লাসরুমের সামনে আসে। আলো হাই বেঞ্চের উপর মাথা রেখে বসে আছে।
ফয়জান বললো,
-“আলো ইসলাম বিরতি সময় অফিস রুমে দেখা করবে আমার সাথে।
আলো মাথা তুলে তাকায়। কিছু বলার পূর্বেই ফয়জান চলে যায়।
.
.
বিরতি সময় ইসমত আরা মনে করিয়ে দেয় আলোকে স্যার এর সাথে দেখা করতে।আলো দূর্বল পায়ে হেঁটে যায় অফিস রুমের দিকে পথিমধ্যে সমির স্যার এর সাথে দেখা হয়। সমির স্যার মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
-“সুখে থাকতে ভুতে কিলায় মানুষকে”! এখনো সময় আছে ফিরে যাও! আমার প্রস্তাব মেনে নাও!
আলো পাশ কাটিয়ে চলে যায় অফিস রুমে। সমির স্যার রাগে ফুঁসছে ফুঁসতে দেয়ালে সজোরে ঘু’সি মা’রে।
.
সমির স্যার ও একজন ইয়ং ম্যান। দেখতে শুনতে সুদর্শন যুবক। তার পুরো নাম সমির চন্দ্র সূত্রধর।আলো’কে ভিশন পছন্দ করেন প্রথম থেকেই!আলো’কে প্রপোজ করলে আলো তা প্রত্যাক্ষাণ করে।
.
.
ফয়জান এর মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে আলো।প্রায় পনেরো মিনিট যাবত আলোকে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বুঝাচ্ছে ফয়জান।আলো মাথা নিচু করে শুধু শুনে যাচ্ছে কোন টু-শব্দ করছে না দেখে ক্লাসে যেতে বলে ফয়জান।
আলো চলে যাওয়ার পর ফয়জান হাতে থুতনি ভর দিয়ে ভাবছে এভাবে চলতে থাকলে মেয়েটার খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। পড়াশোনায় যে কোন মন নেই বুঝা যাচ্ছে। ঠিক করলো আলো’র বাবার সাথে কথা বলবে সে।
অতঃপর একদিন সময় করে আলো’দের বাসায় গেল। সেখানে গিয়ে একটা সত্য শুনে কিছুটা ধাক্কা খেল ফয়জান।
জানতে পারলো আলো ইসলাম আইরিন সুলতানার নিজের মেয়ে নয়!আর তাই আইরিন সুলতানার মৃ’ত্যুর পর থেকে তার ছেলে ছেলের বউ এবং মেয়েরা আলো উপর একপ্রকার অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। আইরিন সুলতানার স্বামী চুপিসারে কেঁদে এই কথা জানান ফয়জান কে।
আলো’র কষ্ট গুলো কিঞ্চিৎ হলেও উপলব্ধি করে ফয়জান আর তাই তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেয় আলো’কে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিবে সে।এর জন্য একমাত্র উপায় বিয়ে! সেদিন ই মরহুমা আইরিন সুলতানা ম্যামের স্বামীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখে ফয়জান।
কলেজের টিচার হিসেবে পরিচিত ফয়জান।তাই মিনিট খানিক ভেবে বিয়েতে মত দেন রহমান সাহেব।
এরপর বাসায় ফিরে শফিক মাহমুদ আর রুহুল আমিন কে সাথে নিয়ে বিয়ে করতে যায় ফয়জান।
আলো প্রথমে দ্বিধা বোধ করে, রহমান সাহেব কে অনুরোধ করে বলে,এই বিয়ে করতে চায় না সে। টিচার কে বিয়ে করবে ভাবতেই শরীর শিহরিত হয়।
তারপর ইসতিখারা নামায পড়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সালাতুল ইসতিখারা-
ইস্তিখারার অর্থ কারো কাছে সঠিক বিষয় বেছে দেওয়ার প্রার্থনা করা। যে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা একাধিক বিষয়ের মধ্য থেকে একটি বেছে নেয়ার অবকাশ আছে সেখানে আল্লাহর সাথে পরামর্শ না করে কোনো কিছু বেছে নেয়া বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মুমিনের উচিত নয়। ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বহীন সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আল্লাহর সাথে পরামর্শ করা, অর্থাৎ তাঁর মহান দরবারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাওফীক চাওয়া মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব।
অতঃপর তাদের বিয়েটা সুষ্ঠু মতো সম্পূর্ণ হয় আলহামদুলিল্লাহ।
.
.
তায়েস কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। কারণ রাকিব হাওলাদার এর পিচ্চি ছেলে আলিফ এর থেকে এমন কিছু তথ্য পেয়েছে যার থেকে তায়েস এর ধারণা কক্সবাজারেই রহস্য লুকিয়ে আছে!…
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ