শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১০,১১

0
466

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১০,১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১০

কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন অঞ্চল। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্যে বিখ্যাত এই জেলা চট্রগ্রাম থেকে দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এইখানে আছে আরও অনেক দর্শণীয় স্থান ও স্থাপনা। বিভিন্ন উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসে বৈচিত্রময় এই জেলার জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাতলি বীচ,ইনানী বীচ, মেরিন রোড, সেন্টমার্টিন, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি।
একদিনের সময় নিয়ে প্রত্যেকটি স্থানে খুঁজে বেড়ায় তায়েস।
আসলে কেউ ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকলে তাকে খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য! দুস্কর হয়ে দাঁড়ায়।

সেদিন আলিফ এর থেকে বিভিন্ন কথা জানতে পেরে তায়েস এটুকু বুঝতে পেরেছে যে মেয়েটা ইচ্ছে করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে! হয়তো পারিবারিক বা অন্য কোন মেটার হতে পারে। তবে তায়েস এর শেষ দেখে ছাড়বে এই তার প্রতিজ্ঞা।

তাছাড়া খু’নির পিছনে দৌড়ানোর চেয়ে এতো সুন্দর মোহনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে করতে ডিউটি পালন করা ডের ভালো।
এইতো ঘন্টা খানেক আগে তায়েসের সহকর্মী কল করে জানালেন আরো একটি লা’স পাওয়া গেছে।সেইম কাহিনী করে হ’ত্যা করা হয়েছে।

এগুলো দেখতে দেখতে তায়েস হাঁফিয়ে উঠেছে। বাহিরে প্রকাশ না করলেও মনে মনে বলে ভালোই হয়।এসব দেশের এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর ভয়ে আনবে না কখনোই। উল্টো এদের জন্য নারী জাতি ভয়ে টটস্থ হয়ে থাকতে হয়।
.
.
তায়েস অফিস থেকে ফেরার সময় আলো’র বাসায় গিয়ে সমস্ত ব‌ইপত্র গুলো নিয়ে এসেছে।
আলো সবগুলো বই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছে। ফয়জান একটা চিঠির খাম আলোর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“তোমার দরকারি হবে ভেবে এটাও নিয়ে এসেছি।

আলো কাজের ফাঁকে এক পলক তাকিয়ে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি করে ফয়জান এর থেকে খামট এক প্রকার ছিনিয়ে নিল!

ঘটনার আকস্মিকতায় বরকে গেল ফয়জান। সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো,
-“আমি তো তোমাকেই দিচ্ছি তাহলে এরকম করার মানে কি?

আলো খামটা আঁচলের নিচে নামিয়ে রেখে বললো,
-“আসলে অনেক গুলো কাজ বাকি তো তাই তাড়াহুড়া করছি।
-“ওহ্ তাই বলো। আমি তো ভাবলাম কি না কি?
আচ্ছা আমি তোমাকে সাহায্য করি?

আলো নোট খাতা গুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“না না আপনি বাহিরে থেকে এসেছেন ফ্রেশ হয়ে নিন। আপনি আসলে খাবার দিব।

ফয়জান আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল বাথরুমে।
আলো দরজাটা বন্ধ করে খামে রাখা কতগুলো ছবি বের করে ছুঁয়ে দিল।বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নিয়ে খুব যত্ন সহকারে ছবি গুলো তার কাবার্ডে কাপড়ের নিচে রেখে দিল।

ফয়জান ফ্রেশ হয়ে আসলে দুজনে খেতে বসে। ফয়জান প্লেটে ভাত নিতে নিতে বললো,
-“ঘড়ির কাঁটায় তিনটা বাজে অথচ তুমি এখন খাবার খাচ্ছ?

আলো ছোট করে বললো,
-“আপনিও তো খাননি?
-“আমার জন্য তুমি খাওনি?
-“জ্বি, স্যা..

এতটুকু বলে থেমে গেল আলো।
ফয়জান বললো,আচ্ছা খেয়ে নাও তবে এভাবে না খেয়ে বেলা পার করা উচিৎ নয়।
.
.
তায়েস সমুদ্র সৈকতে আবার এসেছে, কিছুক্ষণ এর মধ্যে সূর্যাস্ত হবে। এরমধ্যে মানুষজন আসতে শুরু করেছে সূর্যাস্ত দেখবে বলে।
তায়েস আশে পাশে নজর রাখছে। তখন একটা মেয়ে এসে বললো,
-“এক্সকিউজ মি আমাকে একটা হেল্প করতে পারেন?

তায়েস বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, মেয়েটা মাস্ক পরিহিত তাই চোখ গুলো শুধু দেখা যাচ্ছে।
তায়েস এদিক ওদিক একবার নজর বুলিয়ে বললো,
-“কি বলুন?
-“আমার কয়েকটা ছবি ক্যামেরা বন্দি করে দিতে পারেন? খুব উপকার হবে তাহলে।

মেয়েটাকে “না” করে দেওয়া অভদ্র আচরণ করা হবে তাই তায়েস বললো আচ্ছা দিন?
অতঃপর মেয়েটি তায়েসের হাতে ডিএস‌এল‌আর টা এগিয়ে দিল। তারপর বিভিন্ন ভঙ্গিমা করে সূর্য মামা কে হাতের তালুতে নিয়েছে এরকম স্ট্র্যাইলে দাঁড়ালো।তায়েস এটা ক্যামেরা বন্দি করে।এর ফাঁকে ফাঁকে আশেপাশে লক্ষ্য করে অমনোযোগী হয়ে পড়লে মেয়েটা ডাক দিয়ে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে আনে।

এরকম এক পর্যায়ে বিরক্ত বোধ করে তায়েস মেয়েটার হাতে ক্যামেরা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
মেয়েটি তায়েসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বললো,
-“যাহ বাবা এই সামান্য ব্যাপারে এতো বিরক্ত বোধ করার কি আছে আল্লাহ জানেন।
.
রাতের বেলা হোটেলের রিসোর্টে বসে আগামীকাল এর পরিকল্পনা করছে তায়েস হাতে থাকা স্প্রিড ক্যানে চুমুক দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আসা মায়ের কল দেখতে পায়।কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।

আয়েশা ছেলে কে সাবধানবানী শুনায়। সাথে এও বলে বাসায় ফিরলে তার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
তায়েস কাজের প্রেসারে অতটা গুরুত্ব দিল না। আয়েশা আরো টুকটাক কথা বলে এর মধ্যে বিকাল বেলার সেই মেয়েটি এসে বললো,
-“আরে বাহ্ আপনিও এই হোটেলেই উঠেছেন?

বলতে বলতে তাহেসের সামনে থাকা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
এদিকে আয়েশা সন্দিহান কন্ঠে সুধালো মেয়ের গলার স্বর শুনতে পেলাম!তায়েস মেয়েটা কে?
তায়েস বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“মা এখানে হাজারো মেয়ে ট্যুরে এসেছে তাহলে আমি কিভাবে এদের চিনবো বলো?

সামনে থাকা মেয়েটি প্রতিবাদ করে বললো,
-“আপনি আমাকে চিনেন না?বিকালেই তো আমাদের দেখা হলো এর মধ্যে ভুলে গেলেন?

আয়েশা কলের ওপাশ থেকে সবটাই শুনলো, মুচকি হেসে ভাবলো,যাক এবার তাহলে তায়েস কাউকে পছন্দ করেছে! দুই ভাইয়ের বিয়েটা এক সাথে দেওয়া যাবে।
আয়েশা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বললো,
-“আচ্ছা বাবা তোরা কথা বল! আমি রাখছি পরে কথা হবে।বেষ্ট‌ অফ লাক!

এই বলে আয়েশা কল কেটে দিলেন।
এদিকে মায়ের কথায় বোকা বনে গেলো তায়েস।
সামনের মেয়েটি তায়েসের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তায়েস রগচটা নয়নে তাকিয়ে বললো,
-“সমস্যা কি আপনার? এতো সাউন্ড করে কথা বলেন কেন?আর আমি আপনাকে চিনি না আপনি আমাকে চিনেন? এভাবে বললেন যেন কতো যুগ ধরে চেনা পরিচিত আপনার সাথে।

মেয়েটি নিচু কন্ঠে বললো,
-“আসলে একাকিত্ব বোধ করছি তাই ভাবলাম আপনার সাথে বসে গল্প করি।তাই আপনাকে ঐখান থেকে দেখতে পেয়ে চলে এলাম। তাছাড়া আমার তখনকার ছবি গুলো খুব সুন্দর করে তুলে দিয়েছিলেন আপনি।তাই একটা ধন্যবাদ আপনি প্রাপ্য।

তায়েস পুনরায় বকাঝকা করার প্রেরণা পেল না। বসে থেকে স্প্রিড ক্যানে চুমুক দিল।
মেয়েটি নিজ থেকেই শুরু করে বললো,
-“আপনার বাসা কি ঢাকায়?
-“হুম।
-“আমারও।

তায়েস ফোন স্ক্রল করছে।
মেয়েটি আবার নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
-“এখানে কতদিনের ট্যুরে এসেছেন আপনি?
-“ঠিক নেই।
-“সেকি মানুষজন তো একটা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে আসে ট্যুরে। তাহলে?

তায়েস ফোনে সম্পূর্ণ মনোযোগ রেখে মুখ ফসকে বললো,
-“তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে!

মেয়েটি চক্ষু বিস্ফোরিত করে বললো,
-“আপনি কাউকে খুঁজতে এখানে এসেছেন!কে সে?

তায়েস এর এবার হুঁশ ফিরল ফোন থেকে নজর সরিয়ে,ক্ষীণ স্বরে বললো,
-“আছে একজন।
-“বুঝতে পেরেছি সে নিশ্চয়ই আপনার কাছের মানুষ।রাগ করে চলে গিয়েছে।

তায়েস আর উত্তর করলো না উঠে চলে গেল। মেয়েটি সেখানেই কিছু সময় বসে র‌ইলো।
.
.
এর দুদিন পর,
হিমছড়ি পাহাড়ে যায় তায়েস। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভাবছে এতো গুলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবে কিনা?
দুই শতাধিক সিঁড়ি তো মুখের কথা নয়। অবশ্য অনেক মানুষ কষ্ট কে পাত্তা না দিয়ে আল্লাহ তা’আলা কে স্মরন করে উঠে চলেছে।

পিছন থেকে একজন এসে বললো,
-“কি সাহস পাচ্ছেন না উপরে উঠার?

তায়েস পিছনে ফিরে দেখল সেদিন এর মেয়েটা। স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
-“আপনি কি আমাকে ফলো করছেন?যেখানে যাচ্ছি সেখানেই হাজির হয়ে যাচ্ছেন।

মেয়েটি হেসে বললো,
-“আপনি তেমনটি ভাবছেন তেমন কিছুই না। আসলে এখানে বাকি সবার মতো আমিও ট্যুরে এসেছি।তাই দেখা হ‌ওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চলেন পাহাড়ের চূড়ায় যাই।

তারপর দুজনে টুকটাক কথা বার্তা বলতে বলতে উপরে উঠে চলে।
কিছুপথ গিয়ে মেয়েটা হাঁপিয়ে ওঠে সিঁড়িতে বসে পড়ল।
তায়েস এসব তোয়াক্কা না করে উপরে উঠতে থাকে। মেয়েটি মিনমিন করে বলে, কি নিরামিষ মার্কা লোক রে বাবা!
এই বলে আবার উঠা শুরু করে।

অতঃপর, দু’জনেই পৌঁছায় পাহাড়ের চূড়ায়। মেয়েটি আবার তায়েস কে অনুরোধ করে তার ছবি তুলে দেওয়ার জন্য।

তায়েস বুঝলো এই মেয়ে একটা পাগলী। ছবি তুলে দিয়ে কিছুক্ষণ আসেপাশে নজরদারি করে নিচে নেমে আসে। পিছন পিছন মেয়েটাও আসে। হিমছড়ি ঝর্ণার কাছে আসলে আবার তার ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ। তবে আজকে সাথে করে ক্যামেরা নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছে মেয়েটা তাই নিজের ফোন দিয়ে তুলছে।

তায়েসের হাতে ফোন দিয়ে ঝর্নার কাছে পানি স্পর্শ করে বিভিন্ন ভঙ্গিমা করছে মেয়েটা এদিকে ফোন লক হয়ে যায়।
তায়েফ লক বাটনে ক্লিক করলে ফোনের স্ক্রিনে আলো ভেসে উঠে কিন্তু ফোনে পিন নাম্বার দেওয়া।
তায়েস লকের কথা ভুলে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে
অরুনলোচন আঁখি মেলে তাকিয়ে আছে! এর মধ্যে ফোনের আলো আবার নিভে গেল….

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

হিমছড়ি পাহাড়ের ঝর্নার পানি অঝোরে ঝরে পড়ছে। মেয়েটি ছবি তোলার কথা ভুলে গিয়ে পানি নিয়ে ছুড়ে মেরে বাচ্চামো খেলায় মেতে উঠেছে।
তায়েস ডান হাতে মেয়েটার ফোন রেখে বাম হাতটা পকেটে গুঁজে রেখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।ভাবছে,
কি অদ্ভুত এই পৃথিবী।যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি দিন রাত এক করে অথচ সেই মেয়েটি আজকে কিছুদিন যাবত তার পিছু পরে আছে!

হ্যা তাই!
এই সেই মেয়ে!
ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার একমাত্র কন্যা,নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

তায়েস যখন ফোনের লক বাটনে ক্লিক করে তখন লক স্ক্রীনে আলিফ এর সাথে নূর‌আইন এর হাস্য‌উজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠে!
তায়েসের মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠে। নিজের ফোন বের করে আরো একবার নূর‌আইন কে পরখ করে নেয়। না সে কোন ভাবেই ভুল করছে না।এই মেয়েটাই নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

তায়েস এই মুহূর্তের কিছু ছবি ক্যামেরা বন্দি করে ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার কে সেন্ড করে দেয়।
রাকিব হাওলাদার ছবি গুলো দেখার সাথে সাথে কল করে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
-“তায়েস আমার মেয়ে কোথায়? আমি এক্ষুনি আসবো ঠিকানা বলো?

তায়েস হোটেলের ঠিকানা টেক্সট করে দিল রাকিব হাওলাদার কে।

পিছন থেকে নূর‌আইন বললো,
-“আপনি আমার ছবি না তুলে এখানে এসে ফোনালাপ করছেন? এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়।

তায়েস নূর‌আইন কে তার ফোন ফেরত দিয়ে বললো,
-“একটু পর সন্ধ্যা নামবে। চলেন হোটেলে ফিরা যাক?

নূর‌আইন কোমরে হাত রেখে বললো,
-“কিন্তু আমার ছবি তুলার কি হবে?
-“আলোকচিত্রকে নাজায়েজ ও পাপ বলে ফতোয়া দিয়েছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দ। প্রতিষ্ঠানটির মোহতামিম (উপাচার্য) মুফতি আবদুল কাসিম নোমানি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, আলোকচিত্র তোলা নাজায়েজ। শরিয়ার বিচারে পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্ট ব্যবহারের প্রয়োজন ছাড়া মুসলমানেরা ছবি তুলতে পারে না।

তায়েসের এমন নিষেধাজ্ঞা শুনে মাস্কের আড়ালে ঠোঁট উল্টায় নূর‌আইন।
তায়েস হাঁটতে শুরু করলে সেও পিছন পিছন যায়।

হোটেলে ফিরে যার যার রুমে চলে যায়।
রুমে আসার পর তায়েসের খেয়াল হয়,বিরবির করে বলে,ওহ সিট মেয়েটার রুম নাম্বার জানা হলো না। এখন কিভাবে খুজবো? নিশ্চয়ই ছদ্মনামে রুম বুকিং করেছে না হয় আমি চেক করেও পেলাম না কেন?
.
.
রামিসার রাগ পরেছে এতো দিনে।
এখন আলো’র সাথে তার খুব ভাব হয়েছে।
সময় পেলেই গল্পের জুড়ি নিয়ে বসে।
কথায় কথায় আলোকে রামিসা জিজ্ঞাসা করে,
-“ভাবী মনি তোমাদের লাভ স্টরি শুনতে চাই বলবে?

আহাম্মক বনে গেল আলো এ কথা শুনে।
স্যারের সাথে কিনা তার লাভ স্টরি!যা কখনোই মনে আনেনি আলো। বিয়েটা তো হুট করেই হয়ে গেল। সবটা তার বাবা রহমান সাহেব এর মতামতে।
তবে আলো ইস্তিখারা নামায পড়ে আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করে বিয়েটা করে।
আর বিয়ে তো ফরয ইবাদত।যেটা পালন না করলেই নয়। তাছাড়া আইরিন সুলতানার মৃ’ত্যুর পর আলো’কে যে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে তার থেকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন তার কাছে আল্লাহ তা’আলার একটা রহমত বলে মনে হয়েছে।যদিও ফয়জান তার শিক্ষক বলে একটু অমত ছিল কিন্তু এখন আর নেই।
ফয়জান কে কলেজে যতটা কঠোর মনে হয়েছে,ব্যক্তিগত জীবনে ততটাও কঠোর নয়।
কয়েকদিনে আলো বুঝতে পেরেছে ফয়জান খুব ভালো মানের অধিকারী।
সে সর্বদা আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করে সে যেন ফয়জান এর যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে উঠতে পারে। ফয়জান এর বেগম হতে পারে।

-“কি হলো চুপ করে আছো যে? আমাকে বলবে না?

আলো ওরনা টা আরেকটু সামনে টেনে কপালের অংশ ঢেকে বললো,
-“তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা তবে সত্যি এটাই যে আমি বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পূর্বে জানতে পারি আমার বিয়ে! তা-ও আবার আমার কলেজ টিচারের সাথে! কথাটা শুনতেই তৎক্ষণাৎ বাবাকে বলেছিলাম আমি এই বিয়ে করবো না কিছুতেই।

তারপর মত পাল্টে বিয়ে করি।এই হলো আমাদের লাভ স্টরি।

রামিসা সবটা শুনে বললো,
-“তারমানে ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করতো।আর সেই কারণেই তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখে।তাই না?

রামিসার এ কথা শুনে লজ্জায় লাল রঙা ধারন করে আলোর ফর্সা মুখশ্রী।
রামিসার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এশার নামায পড়তে হবে আমি যাই। তুমিও পড়ে নাও।

তারপর এখান থেকে প্রস্তান করে আলো। নিজের রুমে ফিরে দুই হাতে নিজের মুখশ্রী চেপে ধরে। কিছু মূহুর্ত কল্পনা করে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলে।

গত এক বছর শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে না আলো। বুকে আকাশ সম যন্তনা নিয়ে চোখ বুজে আল্লাহ তা’আলার কাছে এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাইতো।
এরপর আইরিন সুলতানার মৃ’ত্যুর পর আরো মুষড়ে পড়ে আলো। চোখ বুজে থাতেও যেন কষ্ট হতো প্রচুর।
অথচ এই কয়েকদিন ধরে আলো শান্তিতে ঘুমাতে পারে। চোখ দুটো বুজলেই ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। ফয়জান তাকে নিজের সর্বাঙ্গে আগলে রাখে। আলোও মুখ লুকানোর ঠাঁই পায়। আহ্ কি শান্তি আল্লাহ।

তাছাড়া দুইটা মা, দুইটা বাবা, দুইটা বোন পেয়েছে। দুই বাবা বাহিরে থেকে আসার সময় হাতে করে আলোর জন্য চকলেট, আইসক্রিম,চিপস নিয়ে আসে।
আলোর তখন মনে হয় দুই বাবা ছোট্ট আদরের মেয়ে সে।

রামিসা নাক ফুলিয়ে যখন বলে, হুম এখন তো তোমারা আরেক মেয়ে পেয়ে গেছ, আমি তো তোমাদের কেউ না।
তখন পিছন রাখা আরেক হাত বের করে ভিন্ন আরেকটি প্যাকেট রামিসার হাতে দেয় তার দুই বাবা।
রামিসা খুশিতে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,থ্যাংক ইয়ু।

আলো মুচকি হাসে এদের ভালোবাসা দেখে। মনে মনে বলে,মা শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের বন্ধন অটুট রাখুন আমীন! সুম্মা আমীন!

আলো ভাবে এতো শান্তি তার কপালে আল্লাহ তা’আলা রেখেছেন বলেই এতো দিন দূরর্ভুগ পোহাতে হয়েছে।
.
.
আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন নামায পড়ে গল্প করছে বসে। সামনে দুটি বিয়ের রিসিপশন আছে।এ নিয়ে কতো প্লান তাদের।
প্রথমে কায়েস আর ফাইজার বিয়ে হবে তারপর ফয়জান আর আলোর বিয়ের রিসিপশন। আত্মীয় স্বজনদের জানানোর জন্য এই আয়োজন। না হয় ফয়জান আর আলো’র বিয়ের রিসিপশন না করলেও হতো।

যাই হোক, আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন ঠিক করলেন আগামীকাল থেকে শপিং করা শুরু করবেন। এত্ত এত্ত শপিং আগে থেকে না করলে পরে সময় সুযোগ হয়ে উঠবে না। তাছাড়া ফাহমিদা খাতুন এর নতুন ফ্লাট গুছাতে অনেক সময় লাগবে। সবকিছু ক্রয় করতে হবে। একটা সংসারে কি না লাগে?

ফাহমিদা খাতুন এগুলো ভাবলেই শিউরে উঠেন। এতো কাজ আল্লাহ।
আয়েশা আশ্বস্ত করে বলে,
-“চিন্তা করিস না।বড় কাজ গুলো তো লোক দিয়ে করানো যাবে,যেমন ফার্নিচার সেটিং এগুলো। আর গুছানো গুলো আমরা সবাই একটা একটা করে করে ফেলবো ইনশা আল্লাহ।
.
.
তায়েস ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে রিসোর্ট এর দিকে গেল। গতকাল যেখানে বসে ছিল সেখানে। হয়তো মেয়েটার সাথে দেখা হতে পারে এই ভেবে।

গিয়ে দেখলো নূর‌আইন আগে থেকে ওখানে বসে আছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার দরুন তায়েস কে দেখতে পায়নি এখনো।তায়েস এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“হাই।

নূর‌আইন বিনিময়ে মুচকি হেসে বললো,
-“আমার মনে হয়েছিল আপনি এখানে আসবেন।

তায়েস সোফায় বসতে বসতে বললো,
-“এমনটা কেন মনে হলো আপনার?
-“এমনিতেই হয়েছে।
-“আচ্ছা।

নূর‌আইন ফোন রেখে বললো,
-“তো আপনার সেই মানুষটির খুঁজ পেয়েছেন? সে আপনার কি হয় বললেন না কিন্তু?

তায়েস কথা ঘুড়াতে বললো,
-“তেমন কিছু না বাদ দিন তার কথা।
তো ডিনার করেছেন?
-“না।
-“চলেন একসাথে করি?
-“আচ্ছা চলেন।

তারপর দুজনে টুকটাক কথা বলতে বলতে রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেয়ে নেয়।এর মধ্যে কথায় কথায় তায়েস নূর‌আইন এর রুম নাম্বার জেনে নেয়। এখন শুধু সকাল হ‌ওয়ার অপেক্ষা।
.
.
আলো ব্যাতিত সবাই গল্পের আসর জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।এটা ওটা নিয়ে মজা করছে।কায়েস প্রথম থেকে খেয়াল করে আসছে ফাইজা কখনো ভুল করেও আসে না। এতে খুব ব্যাথিত হয় কায়েস।প্রিয় মানুষের হাসি যে কত্ত সুন্দর হয় সে বলে বুঝানো যাবে না। কিন্তু কায়েসের সে সৌভাগ্য হয়নি আদৌও।
এখন যখন সবাই হাসছে তখনো শান্ত ভাব ভঙ্গিতে বসে আছে ফাইজা।

একটু পর উঠে চলে যায় এখান থেকে। কায়েস ভাবলো ফাইজার বুঝি খুব হাসি পাচ্ছে তাই লুকিয়ে হাসতে যাচ্ছে।

ফাহমিদা খাতুন জিজ্ঞাসা করলে বলে,
-“একটু ছাদে যাচ্ছি মা। কিছুক্ষণ পর চলে আসবো আমি।

এ কথা শুনে তায়েসের মাথায় দুষ্টুমি ভর করলো। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে সেও উঠে চলে গেল ছাদে।
প্লান করলো ছাদে গিয়ে ফাইজা কে ভয় পাইয়ে দিবে।
অথচ সে নিজেই ভয় পেয়ে গেল।

ফাইজা চিৎকার করে কাঁদছে ফ্লুরে বসে!
ঢাকা শহরের যানযট এবং মানুষের কোলাহলের কারণে এ চিৎকার কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না।…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here