#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১৬,১৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১৬
ফাহমিদা খাতুন পাগল প্রায় হয়ে উঠেছে। তিনি কিছুতেই মানতে নারাজ যে তার মেয়ে নিখোঁজ।
সবার মাথায় হাত!
কেউ কিছুই ধারনা করতে পারছে না ঠিক কি কারণে ফাইজা নিখোঁজ।
আত্মিয় স্বজনরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করছেন কেউ কেউ বলছেন,ফাইজা ভালো একটা মেয়ে নিশ্চই কেউ তাকে কিডন্যাপ করেছে!
আবার কেউ বলছেন,দেখ গিয়ে কোন ছেলের সাথে লাইন ছিল!এখন পালিয়ে গিয়েছে। বিলেত ফেরত মেয়ে তার চরিত্র আর কেমন হবে? কেমন নিষ্ঠুর হলে ছেলেটা কে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পালালো।
তায়েস তার পুলিশ ফোর্স কে ইনফর্ম করতে করতে কমিউনি সেন্টার থেকে বের হয়ে গেল।ফাইজা কে খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সে।আর কেউ না জানলেও তায়েস খুব ভালো করেই জানে তার ভাই ফাইজা কে কতটা ভালবাসে। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে তায়েস।
আলো রামিসা কে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করছে,
-“তুমি এভাবে চুপ করে আছো কেন?আর এভাবে বিয়ের সাজেই বা সজ্জিত হয়েছো কেন!বলো না রামিসা ফাইজা আপু কোথায়? আমার মনে হচ্ছে তুমি জানো আপু কোথায় আছে!
ফয়জান এর মাথা কাজ করছে না। মস্তিষ্ক কেমন এলোমেলো লাগছে।সে আদৌও জানে না তার আদরের বোনের সাথে ঠিক কি হয়েছে? এলোমেলো পায়ে গন্তব্যহীন পথে হেঁটে বেড়াচ্ছে। পাগলের মত মানুষজনের বোনের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে,এই মেয়েটাকে কোথাও দেখেছেন?
মাঝে মাঝে এলোপাথাড়ি হাঁটার কারণে এটা সেটার সাথে পায়ে হোঁচট খেয়ে ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার কোন হুঁশ নেই।
ফাহমিদা খাতুন চিৎকার করে করে কমিউনিটি সেন্টারে ফুলে সজ্জিত ফুল গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।আর বিলাপ করে বলছে, আমার মেয়েকে হাড়াতে হবে জানলে এই বিয়ে কখনোই চাইতাম না আমি। আমার মেয়েকে এনে দাও তোমারা।বার বার গিয়ে আয়েশার পায়ে পরছে আর বলছে আমার মেয়েকে এনে দিন ভাবী? আপনার পায়ে পড়ি।
আয়েশা চোখের পানি রোধ করতে পারছে না,কিছুতেই না।
ফাহমিদার জন্য নিজের ছেলেটার কাছেও যেতে পারছে না। না জানি ছেলেটার কি অবস্থা? সেই ছোট বেলা যখন ফাইজা বিদেশে চলে যায় তখন থেকে ছেলেটা কেমন চুপচাপ, মনমরা হয়ে যায়।
কিন্তু ফাইজা ফিরে আসার পর থেকে মনমরা ভাব কখনোই দেখা যায়নি কায়েসের মাঝে। সবসময় হাস্যউজ্জ্বল মুখশ্রী দেখা গেছে সর্বদা।
দুই বাবা মিলে ফাইজার পরিচিত জায়গায় খুঁজ নিচ্ছে এমনকি ফাইজার অফিসের হেড ম্যাডামদের ও কল করেছে। তাদের কলে না পেয়ে অফিসের অন্যান্য স্টাফ দের কল করেছে। সবার একই কথা তাদের সাথে ফাইজার যোগাযোগ হয়নি।
.
.
কায়েস দুই হাতে নিজের মুখশ্রী চেপে ধরে বসে আছে। আজকে ছেলে বলে চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না প্রিয় মানুষটির জন্য। কেননা ছেলেদের যে চিৎকার করে কাঁদার রিতী নেই।
কায়েস কখনোই ভাবেনি ফাইজা এভাবে তাকে ধোঁকা দিতে পারে। সে তো সবটা জেনেও নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছিল তবুও কেন ফাইজা এরকম করলো? কেন?
সব প্রশ্নেরা জট পাকিয়ে বসেছে কিছুতেই জট খোলা যাচ্ছে না।
একটা ছোট্ট মেয়ে এসে বললো,
-“আংতেল?এই নিন!
কায়েস দুই হাত সরিয়ে পিচ্চি মেয়েটির দিকে তাকালে মেয়েটা তার হাতে একটা ছোট চিরকুট দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
কায়েস সাথে সাথে চিঠির বাজ খুলে চোখ দুটো স্থির রাখে চিঠিতে।
আসসালামু আলাইকুম।
কায়েস ভাইয়া আপনার মনে আছে সেদিন “বালুনদী” তে আপনি কথা দিয়েছিলেন আমি যা চাই আপনি আমাকে তাই দিবেন?
আমি চাই আপনি রামিসা কে বিয়ে করুন! আজ এবং এই মুহূর্তে!
এটাই আপনার কাছে আমার শেষ চাওয়া,যদি কখনো বিন্দু পরিমাণ আমাকে ভালবেসে থাকেন তাহলে আশা করি আপনি আমার ইচ্ছে পুরন করবেন।
যদি শুনি আমার ইচ্ছে পুরন হয়নি তাহলে আর কখনোই আমাকে দেখতে পাবেনা না।
“আল্লাহ হাফেজ”।
.
চিঠিটুকু পরে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে কায়েস মাহমুদ। সেদিন ফাইজার কষ্ট গুলোর সাক্ষী হয়েছিল সে। সে গুলো স্মৃতির পাতায় নতুন করে উল্টায়….
ছোট্ট বেলা থেকে আপনার আদর্শেই নিজেকে তৈরি করেছি। তবে কেন আজ আমাকে ধর্ষ’ণের শিকার হতে হলো! বলতে পারেন? বলতে পারেন কায়েস ভাইয়া? কি হলো জবাব দিন?
আপনি আমাকে বলেছিলেন পর্দা করলে,যেমন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করা হয় তেমনি মানুষ রুপি শকুনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। তবে কেন সেই পর্দা ভেদ করে, আমার সতীত্ব হর’ন করলো! বলতে পারেন কায়েস ভাইয়া? আমি জানি এর কোন জবাব আপনার কাছে নেই।
খোলা আকাশের নিচে বসে,আকাশের পানে তাকিয়ে একেরপর এক ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে কায়েস।ফাইজার একেকটা কথা তীরের মত আঘাত করছে কায়েস এর মস্তিষ্কে! আকাশের পানে তাকিয়ে থেকেই ফাইজার কষ্টগুলো অনুভব করার চেষ্টা করছে।
ধংস লিলার খেলায় মেতে উঠেছে মানুষ,তার কর্ম দোষেই ধংস হবে একদিন, পৃথিবীতে কেয়ামত আসার বেশি সময় বাকি নেই!
কায়েস নিজেকে ধাতস্থ করে বললো, তোমার সাথে যা হয়েছে খুবই জঘন্য কাজ হয়েছে আমি মানছি কিন্তু তুমি যা করছো ঠিক করছো না। ফিরে এসো এই দুর্গম পথ থেকে কথা দিচ্ছি সারা জীবন আমার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখব, কোন বিপদের আঁচ লাগতে দিবোনা তোমার গায়ে।
দুর্লভ হেসে ফাইজা বললো,তা আর কখনই হওয়ার নয়। নিজেকে কোন মায়ায় জড়াতে পারবো না।আর তা ছাড়া আমি তো ভা’র্জিন নই! আমার সাথে জড়ালে আপনার জীবনও জড়িয়ে যাবে এই অন্ধকার জগতে।যার কোন নিশ্চয়তা নেই! এই আছি, তো এই নেই! জেনে শুনে কখনোই আমি হতে দিতে পারি না।
নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নেয় কায়েস।ফাইজার দিকে শাহাদাত আঙ্গুল তুলে বললো, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো! সেই ছোট্ট বেলায় আমাকে বলেছিলে যে “কথা দাও আমাকে তুমি বিয়ে করবে”!
আজ সব ভুলে গেলে? আমি ভুলিনি কিন্তু, ভুলবো না কখনো।
হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ফাইজা! হেসে কুটিকুটি হয়ে বললো, সেদিন তো আপনি কথা দেননি?
কায়েস থমথমে গলায় বললো, সেই সময় কথা দেওয়ার বয়স ছিল না আমার। তুমি যখন বিদেশে চলে গেলে, তখন থেকে তোমাকে উপলব্ধি করে চলেছি আমি!আর তখন নিজেই নিজেকে কথা দিয়েছি আমি তোমাকে বিয়ে করবো! সেই সময় এখন নিকটে। তোমাকে আমি বিয়ে করবোই!
আচ্ছা,চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্টটেড! তারপর হিজাবের নেকাব লাগিয়ে দ্রুত পায়ে চলে যায় ফাইজা।
কায়েস বসা থেকে শুয়ে পড়ে অজস্র সবুজ দুর্ভা ঘাসের উপর। তারপর আকাশের পানে তাকিয়ে নিজের কষ্ট গুলো আল্লাহ তা’আলা কে বলে।
মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহ তা’আলা কে বলা।প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত।
[মুসলিম- ২৫৩১]
.
.
লন্ডন থেকে বাবা মায়ের সাথে দেশে ফিরে ফাইজা। তখন ফয়জান এবং রামিসা লন্ডনে ছিল।
প্রথমে তারা গ্রামের বাড়িতে উঠে। সেখানে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করে।
ফাইজা গ্রামের মানুষজনের থেকে কায়েস দের শহরের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে। এরপর একদিন ঢাকায় রওনা হয়। বাড়ি থেকে যখন রওনা হয় তখন খুব সুন্দর শুভ্র নীলাভ আকাশ ছিল। কোথায় কোন মেঘের আনাগোনা ছিল না। কিন্তু বাসে উঠার ঘন্টা খানেক পরে “শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা” শুরু হয়। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
ফাইজার ঠিকানা অনুযায়ী বাস থেকে নেমে যেতে হয়।নামার পর কোথাও কোন মানুষের গতানুগতি দেখতে পায় না। এখান থেকে একটা রিকশা করে কায়েস দের বাসায় পৌঁছাতে হবে।তাই যাত্রী ছাউনীর নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।
তখন একটা প্রাইভেট কার এসে থামায়।মাস্ক পরিহিত ছেলেটার চেহারা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছিল না। হাত নাড়িয়ে কথা বলার সময় হাতে থাকা ট্যাটু দেখা যাচ্ছিল।
ছেলেটা কাছে এসে ফাইজা কে বললো,
-“মিস আপনি চান তো চলুন আপনাকে লিফ্ট দিব?
ফাইজা প্রথমে রাজী হলো না। শেষে আকাশের অবস্থা অবলোকন করে দেখলো, মিনিট কয়েকের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি শুরু হবে। তখন আরো আগেই রিকশা পাওয়া যাবে না।তাই ফাইজা রাজি হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
এটাই যে তার জীবনের কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে কে জানতো?
.
.
ফাইজা কে বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে দুজন মহিলা তাদের বাসায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করে। ততদিনে তার গায়ে ধর্ষ’ণের তকমা লেগে গিয়েছিল!ফাইজা সুস্থ হয়েও ভেঙ্গে গুড়িয়ে গিয়েছিল। মহিলা দুটো ফাইজা কে বেঁচে থাকার পথ দেখায় আর সে কারণেই ফাইজা আজ পর্যন্ত আ’ত্মহ’ত্যার মতো মহা পাপ করেনি।
এ কথা বাবা মাকে বলার সাহস হয়ে উঠেনি। তারা যে সহ্য করতে পারতো না কখনোই।তাই আবার বিদেশে ফিরে যায়।
তারপর দেশে ফিরে ঐ মহিলা গুলোর আন্ডারে থেকে এনজিও তে কাজ করা শুরু করে…
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।
নোট:ফাইজা বিয়ে কেন করতে চায় না এটা আরো পরে জানতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
কায়েস দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। পাঞ্জাবির পকেট হাতড়ে ফোন বের করে কলে ডায়াল করলো।
তারপর অপরপাশে কল রিসিভ হতে বললো, সেন্টারে ফিরে আস।
ওপাশ থেকে কেউ হয়তো বলছেন যে ফাইজা কে পাওয়া গেছে কিনা?
তখন কায়েস বলে, আসলেই দেখতে পাবে।
.
.
তারপর,
ফয়জান সহ যারা যারা খুঁজতে বের হয়েছিল সবাই কমিউনিটি সেন্টারে ফিরে আসে।
রুহুল আমিন ঢুকেই বললেন,
-“কোথায় আমার ফাইজা মা?
সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে কায়েসের দিকে। কায়েস ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত।
ফয়জান আর ধৈর্য ধরতে পারে না এগিয়ে এসে কায়েসের কাদ ঝাঁকিয়ে বললো,
-“কিছু বলো? চুপ করে আছো কেন?
কায়েস এবার মুখ খুললো। নিজেকে শক্ত করে বললো,
-“যে নিজ থেকে নিজ ইচ্ছায় হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয় ভাই!
ফয়জান বিষ্মিত চোখে তাকায়! অতঃপর কিছু বুঝতে না পেরে বললো,
-“হেঁয়ালি না করে সোজা ভাষায় বলো না?
কায়েস নিজের হাতে মুঠো করে রাখা কাগজটা ফয়জান এর হাতে দিল।
ফয়জান সাথে সাথে কাগজের বাজ খুলে পড়া শুরু করল।পড়া শেষে নিজের চুল টেনে ধরে।
শফিক মাহমুদ এগিয়ে এসে বললেন,
-“কি এটা?
ফয়জান তার দিকে কাগজ টা এগিয়ে দিল। শফিক মাহমুদ ও পড়লেন।
এরকম একে একে সবাই পড়া শুরু করলো। সবার চোখ মুখে বিষ্ময়ের অন্ত নেই।কেন ফাইজা এরকম করলো?
তাছাড়া রামিসা কেই বা কায়েস বিয়ে করবে কেন?রামিসা কি মেনে নিবে এই বিয়ে?
পরিবেশটা কেমন শান্ত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগেও এখানে চিৎকার, চেঁচামেচি ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে, বসে আছে।
এই নিস্তব্ধতা বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না!রামিসা এসে বললো,
-“বিয়ে শুরু করা হচ্ছে না কেন?
এ কে?
বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে আছে!
শান্ত,স্নিগ্ধ,শোভন একজন পাথরের ন্যায় মানব দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে।
আরেক দফায় সবাই বিষ্মিত হলো। মেয়েটা নিজ থেকে বলছে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার কথা? হচ্ছে টা কি আজকে?
এই দিনটা কি এক কালো অধ্যায়ের স্বপ্ন?যা কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙ্গলেই চলে যাবে।
কিন্তু তা আর হওয়ার নয়।
সবাই স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রামিসার দিকে।
এদিকে রামিসা আষাঢ় শরীরটা ভয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। আজকে দুপুরে খাওয়া ও হয়নি এখনো। খুব পানি তৃষ্ণা পেল কিন্তু কাউকে বলতে পারলো না আমাকে একটু পানি দাও?
নিরবতা ভেঙ্গে কায়েস বললো,
-“বাবা আর ছোট বাবা কাজী সাহেব কে বলো বিয়ের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য!
শফিক মাহমুদ বললেন,
-“সত্যি রামিসা কে বিয়ে..
কথা শেষ হওয়ার আগেই কায়েস বললো,
-“তোমার বড় মেয়ে তো তাই চাইছে বাবা!তার এই শেষ আবদার কি করে না রাখি?
প্লিজ আর কিছু ভালো লাগছে না, বিয়ে শুরু করতে বলো?
সবাই আর কিছুই বললো না। বলার মতো আছেই বা কি?থাকলে তো বলবে?
নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো সবাই।
.
.
আঁখিপল্লব জোড়া মেলে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে ফাইজার। আজকে তার সব থেকেও নিঃস্ব সে।ভিশন নিঃস্ব।
ফাইজার কলিগ রাইমা এবং অনন্যার বাসায় পালিয়ে চলে আসে ফাইজা। পূর্ব পরিকল্পনা ছিল যার কারণে সহজেই আসতে পারে এখানে। তাছাড়া রাইমা আর অনন্যা গাড়ি নিয়ে আগে থেকে কমিউনিটি সেন্টারের ওখানে তৈরি থাকে।
তারা অবশ্য ফাইজাকে অনেক বুঝিয়েছে।ফাইজা যেন অতিত ভুলে জীবনটা নতুন করে শুরু করে। কিন্তু ফাইজা কিছুতেই কায়েস এর জীবন নষ্ট করতে চায় না।তার থেকে রামিসা কে বিয়ে করলে সুখী হতে পারবে।
ফাইজা জানে ফাইজা চলে আসার পর কায়েস কখনোই বিয়ে করবে না।আর তাই রামিসার সাথে বিয়ের কথা বলে।
অপরদিকে রামিসা ও একজন ভালো মানুষ পাবে জীবনসঙ্গী হিসেবে। কখনো অসুখী হবে না ইনশা আল্লাহ।
.
রাইমা এসে বললো,
-“বোন চল কিছু মুখে দিবি? সারাটা দিন দাঁতের কুটাও দেসনি।
ফাইজা ভাঙ্গা গলায় বললো,
-“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আপু। তোমরা খেয়ে নাও।
রাইমা সামনে এসে দাড়িয়ে ফাইজার দুই কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“এখনো কাঁদছিলি?আর কতো কাঁদবি?গলা যে ভেঙ্গে গেছে। এভাবে চলতে দিলে, দূর্বল শরীর নিয়ে প্রতি’শোধ নিতে পারবি? প্রতি’শোধ নিতে হলেও তো শক্তির প্রয়োজন।
দূর্বল কে তো শ’ত্রুরা সহজেই দূর্বল করে দিতে পারে। কিন্তু..
ফাইজা থেমে থেমে বললো,
-“বাঁচতে হলে তো খেতে হবেই। না খেয়ে তো বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু আজকের দিনটা না হয় শোক দিবস হিসেবে না খেলাম। একদিন না খেলে কিছুই হবে না।
অনন্যা আসলো ছাদে।এসেই বললো,
-“তোরা এখনো এখানে বসে আছিস? আমি ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করে শেষে না পেরে এখানে আসলাম।চল খেতে চল?
রাইমা তখন বললো,
-“দেখ না আপা ও খাবে না বলছে। কতোবার বলছি শুনছেই না। তুই একটু বুঝিয়ে বল তো?
অনন্যা ও ফাইজার পাশে বসে বললেন,
-“দুঃখ কষ্ট নিয়েই তো আমাদের জীবন বোন।তাই বলে কি না খেয়ে বসে থাকলে চলবে? চলবে না। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য হলেও খাওয়া অতিব জরুরি। তাছাড়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“রাতের আহার ত্যাগ করো না
যদিও তা এক মুঠো খেজুরও হয়। কারণ রাতের আহার ত্যাগ মানুষকে বৃদ্ধ করে দেয়”
(ইবনে মাজাহ,হাদিস:৩৩৫৫,তিরমিজি, হাদিস:১৮৫৬)
.
.
মাথাটা ভিশন দরেছে রামিসার।নিয়ম অনুযায়ী স্বামীর জন্য বসে অপেক্ষা করছে বাসর ঘরে।
একসময় বসে থাকতে না পেরে পিছনে বালিশ রেখে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে থাকে।রাত বেড়েই চলেছে। এখন আর মানুষের গতানুগতি নেই। সবাই সবার মতো আছে। মেহমানরা নিজেদের বাসায় ফিরে গিয়েছে।এই পরিস্থিতিতে তারা আর শফিক মাহমুদ এবং রুহুল আমিন সাহেবদের বাসায় আসার প্রয়োজন মনে করেনি। তবে সবার মনে প্রশ্ন ফাইজা এরকম কেন করলো? সারাজীবন এই কৌতূহল গেঁথে থাকবে সবার মনে।
কিছুক্ষণ আগে আয়েশা জোর করে রামিসা কে কয়েক লোকমান ভাত খাইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কায়েস খায়নি। কোথাও একটা বেরিয়ে চলে গিয়েছে।
আলো ফয়জান তারা নিজেদের বাসায় ফিরে গিয়েছে। ফয়জান যেন এখনো অবধি একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আজকে তার বোনটাকে যেন চিনতে পারছে না। পড়াশোনা কাজের ব্যস্ততায় কখনো মিশা হয়নি বোনদের সাথে। তবুও বোন,জন্মের পর থেকে দেখে আসছে। এরকম করার কথা ভাবনার বাহিরে ছিল।
আলো পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ঘুমাবেন না?
ফয়জান ঐ দূর আকাশে দৃষ্টি রেখেই বললো,
-“ঘুম যে কিছুতেই আসছে না আলো। কিন্তু ঘুমের বড্ড প্রয়োজন। ঘুম ও আল্লাহ তা’আলার একটা নেয়ামত। সেই নিয়ামত থেকে আজকে হয়তো আমি বঞ্চিত।
-“এরকম বলতে হয় না। চলুন আমি আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেব?
আলো আধশোয়া হয়ে বসে ফয়জান এর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে কিছু কথা বলি?
ফয়জান ছোট করে বললো,
-“বলো।
আলো বলতে শুরু করে,
-“সংসারে কতইনা ঝামেলা হয়, তাই না?
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াঝাঁটি, শাশুড়ী ননদদের প্যারা, কাজের প্রেসার, বাচ্চার দুষ্টুমি ইত্যাদি…
নিজের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অসহায়ত্ব চেপে বসে, হতাশ লাগে। কান্না পায়, কিছুই ভালো লাগে না, মনে হয় জীবনটা শেষ হয়ে গেলো বুঝি!
যারা এমন সমস্যাগ্রস্ত তাদের জন্য আমি কিছু পরামর্শ দিচ্ছি নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে। ট্রাস্ট মি, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
১) সার্বক্ষণিক জিকির ,?
সবসময়ই জিকিরে রত থাকবেন। ছোটো ছোটো জিকির, সবচাইতে উত্তম হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”! টয়লেট ছাড়া সব স্থানে জিকির করা যাবে। বাচ্চা ঘুম পাড়াবেন সুরে সুরে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” জিকির করে। বাসন ধুতে, রান্না করতে, ঘর গুছাতে সবসময়
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” চলতে থাকবে।
এছাড়া দুরুদ, ইস্তেগফারও জারি রাখবেন। মুখস্ত তিলাওয়াতগুলো করতে চেষ্টা করবেন। অন্তত বাচ্চাকে নিয়ে মোবাইলের এ্যাপ থেকে কুরআন তিলাওয়াতটা করার চেষ্টা করবেন রোজ ৫ মিনিট হলেও। আর রোজ ঘরে তিলাওয়াত অবশ্যই বাজাবেন। বাচ্চাকে বাদ্যবিহীন নাশীদ ও তিলাওয়াত শোনাবেন।
২) আল্লাহর সাথে গল্প ?
আপনার খারাপ লাগছে? আল্লাহর সাথে গল্প করুন। কাজ করছেন? নাপাক আছেন? কোনো সমস্যা নাই। বাসন ধুতে ধুতে, রান্না করতে করতে বলুনঃ আল্লাহ দেখছো আমার কত কষ্ট হচ্ছে, তুমিতো সব পারো, দাওনা আমার কষ্টটা দূর করে….
কেউ কষ্ট দিয়েছে? আল্লাহকে বলুনঃ আল্লাহ দেখছো আমি কত কষ্ট পাচ্ছি? আমার মনটা ভালো করে দাওনা…
মনে মনেই বলুন। সারা দিন গল্প করতে থাকুন। আল্লাহকেই কথা বলার সাথী বানিয়ে নিন, বন্ধু বানিয়ে নিন। তিনি আপনার সব কথা শুনবেন। তিনি কখনো বিরক্ত হবেন না।
৩) সালাত ও দু’আ ?
সালাতে আপনার স্পেশাল দু’আ গুলো করুন। আপনার টাকার সমস্যা, বাজার নাই, কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে, বুয়া লাগবে, বাচ্চা জ্বালায় বেশি, জামাইর সাথে ঝগড়া, এটা চাই, ওটা চাই না ইত্যাদি সব আল্লাহ তা’আলাকেই বলুন। তিনিই সব ঠিক করে দেবেন ইনশাআল্লাহ্। বাচ্চা নিয়ে সালাতে সমস্যা? সালাম ফিরিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে বাচ্চার হাত নিজ হাতের উপর রেখে মুনাজাত করুন। দেখেন কি সুন্দর জান্নাতি অনুভূতি হয় সুবহানাল্লাহ্!
৪) রিযা বিল কাযা ?
যদি দু’আ কবুলে দেরী হয় তবে ভাববেন তিনি আরো কিছুদিন আপনার ডাক শুনতে চান। কারণ আপনার ডাক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বেশি পছন্দ। তাই সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিনের উপর তাওয়াক্কুল রাখবেন। এমনকি আপনি অসুস্থ হলেও খুশি হবেন। সবসময় ভাববেন আল্লাহ আপনাকে ভালো রেখেছেন, আল্লাহ আপনাকে উনার বিশেষ রহমত দিয়ে ঘিরে রেখেছেন, তিনি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। এই ভাবনার মাঝেই সকল সুখের চাবি আছে। সবসময় ভাববেন আপনি অত্যন্ত ভালো আছেন। আপনার চাইতে যারা খারাপ হালাতে আছে, যাদের হাত নাই,
পা নাই, যারা দিন মজুর, তাদের কথা ভাববেন। (এগুলো নারীদের জন্য আমল লিখা হলেও আপনিও আপনার কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই আমল গুলো করতে পারেন)
✍️mumtaz mily
বলা শেষে দেখলো ফয়জান ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই আলোও ঠিক হয়ে শুয়ে পড়ল।
.
.
কায়েস রুমে ঢুকে দেখলো রামিসা আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে। সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে থেকে ডাকলো,
-“রামিসা?রামিসা?
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
গল্পটা আমি প্রথম থেকে এরকম ই ভেবে রেখেছিলাম তাই পরিবর্তন করতে পারলাম না দুঃখিত ?)