শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর,পর্ব ৩,৪

0
1121

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর,পর্ব ৩,৪
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৩

‘রাতের শহর’ কথাটা বইতেই পড়েছে ঈশা। এসব সাহিত্যিক কথা বার্তা ঠিক কতো খানি সত্য সেটা সম্পর্কে সিকি খানিও ধারনা নেই তার। রক্ষণশীল পরিবারে সন্ধ্যার আগেই মেয়েদের বাড়িতে ফেরা কঠিন নিয়মের মধ্যেই পড়ে। সব মেনে নেয়া যায় কিন্তু সন্ধ্যার পরে মেয়েদের বাইরে থাকাটা যেন ঘোরতর অপরাধ। এটা কোন ভাবেই মাফ করা যায়না। তাই রাতে শহর দেখার ভাগ্যটা এতো বছরেও কখনও হয়নি ঈশার। দোতলার বারান্দায় বসে আলো আধারের খেলা দেখছে সে। রাস্তার হলদেটে নিয়ন বাতির আলোয় সারা শহর এক মহনীয়ও বর্ণ ধারন করেছে। দোতলা থেকে খুব একটা বেশী দূর পর্যন্ত দেখা না গেলেও যা দেখা যায় তাতেই ঈশা বেশ সন্তুষ্ট। কারন এটাই দেখার ভাগ্য হয় না তার। এখন নেহাত পড়ালেখা নেই তাই এতো সময়। নাহলে তার নিস্তার কই। মাথাটা আর একটু গ্রিলের দিকে বাড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখল এক প্রেমিক যুগলের রিকশা ভ্রমন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সাদা জামদানি শাড়ি পরেছে আর ছেলেটা নীল পাঞ্জাবী। তাদের এই শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর হলদেটে নিয়ন আলোয় সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণ ধারন করেছে। যার তুলনা কোনভাবেই করা সম্ভব না। সাদা শাড়ীটা ঈষৎ কালচে হলুদ লাগছে। আর নীল পাঞ্জাবী এক গাড় কালচে রঙ ধরেছে। সামনের শপিংমলের বিলবোর্ডের ছবির মেয়েটা মাঝে মাঝে উজ্জ্বল শুভ্র আলোয় হেসে উঠছে। সম্ভবত কোন ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন হবে। গালে হাত দিয়ে সেদিকে কিছুক্ষন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকলো। রিকশাটা পার হয়ে যেতেই ঘোর কেটে গেলো তার। স্বাভাবিক জীবনের অভ্যাসেই ডাইরি আর কলমটা হাতে তুলে নিলো। কিছুক্ষন আগেই দেখা দৃশ্যের পটটাতে নিজেকে আর পাশে তার বিশেষ মানুষকে কল্পনা করে লিখে ফেলল কিছু কল্পনাময় প্রহর। নিজের মনের ইচ্ছাটার গতিবিধি ঠিক কতদুর। আদৌ সে গুটি গুটি পায়ে তার গন্তব্য মানে বাস্তবতায় পৌছাতে পারবে কিনা সেটা জানা নেই তার। তবুও ভাবতে তো মানা নেই। মন সে তো দিগ্বিদিক ভুলে ছুটে বেড়ায় এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। অসীম সাহস তার। আর সেটা যদি কিশোরী মন হয় তাহলে তো কথাই নেই। তার যে এক অন্য জগত আছে। সেই জগতের রানি শুধু সেই। নীল রঙের কালি দিয়ে শুভ্র রঙের পাতায় ফুটিয়ে তুলল নিজের কল্পনার কিছু প্রেমপ্রহর।

“এই যে শুনছো?
‘এই ঘনায়মান রাতের অন্ধকার রুপের অপার সৌন্দর্য দেখে যেখানে মন ভালো হওয়ার কথা ছিল সেখানে আমি আজ বড্ড উদাসীন। কারণটা আমার অজানা। কিন্তু জানো কোথাও একটা সুপ্ত আশা জমে আছে যেখানে বেহায়া মন চিৎকার করে বলছে,
তুমি আসবেই। আর এই রাতের শহরের মোহনীয় সৌন্দর্য, শরীরে হলদেটে আলোর ছোঁয়া, মাথার উপরের আকাশে হাজার তারার পসরা সাজিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমাকে ডাকবে। আর আমি কোনদিকে না তাকিয়েই ছুটে চলে যাবো। তোমার হাত ধরে খালি পায়ে হাঁটবো পিচ ঢালা রাস্তায়। সময়টা থমকে দাঁড়াবে। প্রেমিক যুগলের পাগলামো দেখে সময় নিজের গতি ভুলে মুগ্ধতায় ভরে উঠবে। আর সেই সুযোগে অনন্তকাল চলবে তোমার আমার এই প্রেমপ্রহর।’

ইতি
তোমার মায়াজালে আবদ্ধ এক কিশোরী ”

–এখানে এভাবে বসে কাকে দেখছিস?

পাশের বারান্দা থেকে ভারি গলার আওয়াজ পেয়েই চমকে উঠল ইশা। হাত থেকে ডাইরি কলম দুইটাই মেঝেতে পড়ে গেলো। চোখ তুলে পাশের বারান্দায় তাকাল। ইভান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র গোসল করেছে মনে হয়। ভেজা চুলগুলো খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখা। চিরুনি না করলেও হাত দিয়েই চুল গুছিয়ে রাখাতে ইভান বেশ পটু। আর মনে হয় তার চুল গুলাও এই হাত দিয়ে গোছানটা উপভোগ করে। অবশ্য ঈশাও কম উপভোগ করেনা।

–দেখা শেষ হলে আমার উত্তরটা দিয়ে ধন্য করুন ম্যাডাম।

আবারো ইভানের কথায় এবার ঘোর কাটল ঈশার। একটু ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–তোমার সব সময় কেন মনে হয় আমি কাউকে দেখি?

ইভান তোয়ালেটা মেলে দিল। দেয়ালে হেলানি দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। সামনে তাকিয়েই বলল
–না দেখলে বারান্দায় বসার কি কোন কারন আছে? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই দেখিস। অবশ্য তোর……।

কথা শেষ করতে দিলনা ঈশা। মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বলল
–তুমিও কি কাউকে দেখ?

ইভান বিস্ময় নিয়ে ঘুরে তাকাল ইশার দিকে। কিছুক্ষন শান্ত চাহুনিতে তাকিয়ে থেকে বলল
–দেখি তো। এত দেখি তবুও মন ভরেনা। দেখতেই ইচ্ছা হয় বারবার। একেক সময় একেক রুপ তার। ভীষণ মায়া তার মাঝে। ঐ এক সমুদ্র সম্মোহনী দৃষ্টির গভিরে হারিয়ে যাই আমি।

বলেই থামল। ঈশা এতক্ষন নিস্পলক তাকিয়ে ইভানের কথা শুনছিল। থেমে যেতেই আবেগি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল
–কাকে দেখ এতো এভাবে?

ইভানের কপালে ভাজ পড়ে গেল। ভালবাসায় ভরা চোখ দুটো হঠাৎ করেই অভিমানী হয়ে উঠল। তীব্র অভিমান আর এক বুক জ্বালার বহিপ্রকাশ ঘটাতেই সামনে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল। ঈশা চোখের ইশারা অনুসরন করে সামনে তাকিয়েই দেখতে পেল ঠিক রাস্তার ওপাশের বারান্দা ওয়ালা ঘরের মেয়েটা জানালার পাশে বসে মনের সুখে নেইল পলিশ পরছে। সেদিকে সরু চোখে তাকিয়েই অস্ফুট সরে উচ্চারন করল
–সোনিয়া আপু।

ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশা সেই মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইভানের দৃষ্টির মানে হয়ত ঈশা দেখলেও বুঝতে পারত না। কঠিন দৃষ্টি হুট করেই অসহায় হয়ে উঠল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে শান্ত সরে বলল
–ঈশা।

ঈশা ঘুরে তাকাল। ইভান কে সামনে তাকাতে দেখে ধরেই নিল সে সোনিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই কোন কথা বলল না। ইভান সবটা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল
–ঘরে যা। শুয়ে পড়।

ঈশা দিরুক্তি করল না। উঠে চলে গেলো ঘরে। ইভান সামনেই তাকিয়ে আছে। পাশের বারান্দার দরজা লাগানোর আওয়াজে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কিন্তু চোখ ফেরালনা। ইচ্ছা করছে না কিছুতেই। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মন যে অন্য জায়গায় আটকে আছে। আকাশের ঝলমলে তারা গুলর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর উঠে চলে গেলো একদম নিচে। একাকীত্ব কাটাতে কিছুক্ষন একা একা রাস্তায় হাঁটলে খারাপ লাগবে না। বাসা থেকে বের হয়ে একা একা সোজা রাস্তা ধরে হাঁটছে সে।

ঈশা এতক্ষন নিজের সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে জানালার পাশে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তারও মনটা বেশ খারাপ। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ পড়ল ইভানের দিকে। বাসার সামনে দাড়িয়ে ফোনে মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে ফোনের আলোটা ইভানের মুখে পড়ছে সরাসরি। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। ইভান সামনের দিকে চোখ তুলে তাকাল। সেই জানালায় বসে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল। মেয়েটি ইভান কে দেখেই মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত উচিয়ে ইশারা করল। ইভান বেশ বিরক্ত হয়ে চোখ ফিরিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেলো। সবটা দেখে ঈশা নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল। জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে গেলো।

—————-
পাইপ দিয়ে আনমনে নিজের ছাদ বাগানে পানি দিচ্ছে ইরিনা। সূর্যের তেজটা বেশী। বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। ঈশা পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। মৃদু সরে বলল
–আপুউ।

ইরিনা চমকে ফিরে তাকাল। কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকে থুথু দিয়ে বলল
–আস্তে ডাকতে পারিস না। এতো জোরে চিল্লাস কেন? হায় আল্লাহ! এই মেয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে যে কিভাবে সংসার করবে?

ঈশা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকাল। অবাক হয়ে বলল
–আমি আবার কখন জোরে কথা বললাম?

ইরিনা পানি দিতে দিতেই সাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
–কি বলবি বল?

–কাল ইশান ভাইয়ার জন্মদিন।

ইরিনার হাত থেকে পাইপটা পড়ে গেলো। লাফ দিয়ে ঘুরে দারিয়ে ইশার কাধে হাত দিয়ে বলল
–একদম ভুলে গেছিলাম রে। ভাল কথা মনে করেছিস। আজ রাতে অন্তত একটা সারপ্রাইজ পার্টি এরেঞ্জ করা দরকার। ইভান ভাইয়াকে বলতে হবে এখন। চল তাড়াতাড়ি।

ইরিনা পা বারাতেই পিছন থেকে গম্ভির গলার আওয়াজ আসলো
–কোথায় যাচ্ছিস?

তখনি ইরিনার ডাক আসলো নিচ থেকে। ঈশা পিছনে ঘুরে সাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
–তোমার কাছে।

ইভান কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। ইরিনা নিচে চলে গেলো। ইভান ধির পায়ে এগিয়ে যেতে যেতে কঠিন ভাবে বলল
–বেলা শেষে আমার কাছেই তোকে আসতে হবে। এটাই তোর জিবনের বড় সত্য।

ঈশা ইভানের চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির করল। দুজনের দৃষ্টি দুজনের চোখে। অজানা এক নিরব অনুভুতির আদান প্রদান। মস্তিষ্ক সেই ভাষা না বুঝলেও মন অক্ষরে অক্ষরে বুঝে গেলো। ঝনঝন আওয়াজে দুজনেই চোখ নামিয়ে নিলো। ইরিনার হাত থেকে কাচের প্লেট পড়ে গিয়েছে। পুরো ছাদে বিছিয়ে পড়েছে কাচের টুকরো। সবাই সেদিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইরিনা ভিত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়েই কাদকাদ সরে বলল
–মা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে।

ঈশা হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল
–সেটা পরের কথা। আগে এগুলো তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে পায়ে লেগে যাবে।

–দাড়া আমি ঝাড়ু আনি।

ইভান একটু বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে বলল
–পুরো ছাদে যে বন্যা বয়ে ফেলেছিস সেটা কি মাথায় আছে? পানিটা আগে বন্ধ কর।

ইরিনা জিভ কেটে পার হয়ে আসতে নিলেই ঈশা হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে
–এদিকে আসিওনা। পায়ে কাচ লাগবে। তুমি ঝাড়ু আনো। আমি পানি বন্ধ করছি।

ইরিনা সিঁড়ির ঘরে গেলো ঝাড়ু আনতে। ঈশা পা টিপে টিপে এদিক সেদিক দেখে সামনে এগুতে লাগল। ইভান গম্ভির ভাবে বলল
–পা খালি কেন? স্যান্ডেল কই?

ঈশা পায়ের দিকে তাকিয়েই মৃদু কণ্ঠে বলল
–সিঁড়ির নিচে খুলে রেখেছি।

ইভান নিজের পায়ের স্যান্ডেল খুলে বলল
–এগুলা পরে যা। পায়ে কাচ ঢুকবে।

ঈশা মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–ঢুকবে না।

বলেই পা বাড়াতেই ইভান হাত টেনে ধরল। ঈশার পুরো শরিরে কাটা দিয়ে উঠল। পিছনে ঘুরে কিছু বলার আগেই ইভানের মুখ দেখে থেমে গেলো। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। কঠিন গলায় বলল
–মতামত জানতে চাইনি। সিদ্ধান্ত জানায়ে দিছি।

ঈশা আর কিছু বলতে পারল না। কথা বললেই ইভান রেগে যাবে। তাই মাথা নামিয়ে জুতো জোড়া পায়ে ঢুকিয়ে এগিয়ে গিয়ে পানির ট্যাপ বন্ধ করে দিল। বড় জুতো পরায় হাটতে অসুবিধা হচ্ছে। আর পুরো ছাদ ভেজা তাই আরও বেশী অসুবিধা হচ্ছে। পা পিছলে যাচ্ছে। ঈশা সাবধানে পা টিপে টিপে হাঁটছে। কিন্তু একটা ছোট ইটের টুকরো জুতোর নিচে পড়তেই পা পিছলে গেলো। ঈশা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু খেয়াল করল কেউ একজন পরম জত্নে তাকে নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছে। তার বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ মাদকতা ছড়াচ্ছে চারিদিকে। মিষ্টি ঘ্রাণটা ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে মস্তিস্কে। কিছুক্ষন থাকার পরেই ঈশার অসস্তি হচ্ছে। সে একটু নড়েচড় উঠতেই ইভান তাকে ছেড়ে দিল। ঈশার দিকে তাকিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল
–তুই ঠিক আছিস তো?

ঈশা কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। এর মধ্যেই ইরা গুটি গুটি পায়ে এসে দরজা থেকে বলল
–ইভান ভাইয়া।

ইভান তার দিকে ঘুরেই চিৎকার করে বলল
–ওখানেই থাক টুনটুনি। এদিকে আসিস না পায়ে কাচ ঢুকবে। দাড়া আমি আসছি।

বলেই পা বাড়াতেই ঈশা হাত ধরে ফেলল। ইভান থেমে গেলো। বিস্ময়ে ঘুরে তাকাল। প্রথমে হাতের দিকে তারপর ঈশার দিকে। ঈশা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইভান বিশ্বাস করতে পারছে না ঈশা তার হাত ধরেছে।
–মাথায় কি কিছু নেই নাকি? তুমি খালি পায়ে যাচ্ছ কেন?

বলেই স্যান্ডেল খুলে সামনে দিল। ইভান মুচকি হাসল। ইরিনা ঝাড়ু নিয়ে অবশেষে বের হল। তার চুলে মাকড়শার জাল আটকে আছে। চেহারা দেখার মতো। দেখে মনে হচ্ছে বহু জুদ্ধের পর ঝাড়ু খুজে পেয়েছে। ঈশা তাকে দেখেই হেসে দিল। ইভান স্যান্ডেল পায়ে ইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে আসলো। পাশে শুকনো জায়গায় দাড়ায়ে রাখল। ঈশা আর ইরিনা ততক্ষনে কাচ পরিস্কার করতে শুরু করেছে। ঈশার পায়ের কাছে একটা কাচ পড়ে আছে। ইভানের চোখে সেটা লাগতেই সে এগিয়ে কাচটা ধরতেই তার হাতে ফুটে যায়। ‘আহ’ শব্দ উচ্চারন করতেই ঈশা ঘুরে তাকায়। ইভানের হাত কেটে গেছে। ঈশা সব কিছু ফেলে ইভানের হাত ধরে ফেলে। পাশে সিমেন্টের বসার জায়গাটায় বসিয়ে দিয়ে হাতটা চেপে ধরে ধরে বলে
–ইশ! কেটে গেছে।

ইভান স্থির হয়ে দেখছে ঈশাকে। ঈশা বেশ বিচলিত হয়ে বলল
–রক্ত বের হচ্ছে।

ইভান হাতের দিকে একবার তাকাল। ভ্রু কুচকে ফেলল। ঈশা যেরকম আচরন করছে সেরকম কিছুই হয়নি। সামান্য কেটেছে। একটু চেপে ধরলেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–রিলাক্স! তেমন কিছুই হয়নি। একটু কেটেছে।

বলেই আঙ্গুলটা মুখে ঢুকিয়ে দিল। ঈশা ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–একটু হোক। কেটেছে তো!

ইভান বাকা হাসল। সাবাভিকভাবেই বলল
–কেটেছে তো আমার। তোর কোথায় লেগেছে যে এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস?

ইভানের কথা শুনে ঈশা নিজেকে সংযত করে নিলো। একটু বেশিই করে ফেলেছে সেটা বুঝতে পেরেই লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে নিলো। ইভান মুচকি হেসে মাথাটা একটু ঝুকে বলল
–এতো কেয়ার পাওয়া যাবে জানলে আরও আগেই নিজে নিজে হাত পা কেটে ফেলতাম। ফ্রিতে কেয়ার কার না পেতে ইচ্ছা করে।

চলবে……

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৪

‘ঈশার বয়ফ্রেন্ড’ কথাটা মধ্য রজনীর নিস্তব্ধ প্রহরে ঝমঝম করে বেজে উঠল। পুরো শহর যেখানে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে সেখানে কয়েকজন রাত পাখি নিজেদের সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে ব্যস্ত। মধ্য রাতে ছাদে মাদুর পেতে বসেছে এক ঝাক পাখি। গল্প আড্ডা খুনসুটিতে মেতে উঠেছে আশে পাশের পরিবেশ। তাদের এই মত্ত পরিবেশ দেখে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের প্রাণহীন পরিবেশটাও খিলখিল করে হেসে উঠছে। ঈশানের জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ পার্টির শেষে তাদের বাড়ির ছাদে চলছে মাঝরাত পর্যন্ত আনন্দ উৎসব।

“আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি। এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি। বছরের পর বছর, সর্বদা, সব সময়ে।“

কথাগুলো অতি বিস্ময়ে পড়া শেষ করে কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে ঈশার দিকে তাকাল ইলু। গম্ভির সরে বলল
–তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?

ঈশা তখন মাথা তুলে মধ্য রাতের আকাশে তারা গুনতে ব্যস্ত। ইলুর কথা শুনে হকচকিয়ে গেল। তার দিকে তাকিয়ে মৃদু সরে বলল
–আমার আবার বয়ফ্রেন্ড কোথায়? আছে নাকি? জানতাম না তো।

ইলু হাতের কাগজটা উচু করে ধরে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তাহলে এটা কি? তোর পড়ার টেবিল থেকে আবিষ্কৃত এই আবেগময় লেখাটা নিশ্চয় আমার না। আর এরকম ভাবে প্রেম করার মত কেউ এখানে উপস্থিত নেই। আর এটাও বলতে পারবি না যে তুই লিখেছিস। কারন তোর হ্যান্ড রাইটিং আমি চিনি।

ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বেশ। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সবার দিকে একবার চোখ চালিয়ে কাগজটা নিতে হাত বাড়াল। তার আগেই ঈশান ছিনিয়ে নিলো সেটা। মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চেষ্টা করছে কার লেখা। অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর কিছুই বুঝতে না পেরে হার মেনে দমে গেলো। হতাশ হয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। এসব কি ঈশা?

ঈশা নড়েচড়ে বসলো। একটু ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–কি যা তা বলছ? এটা আমার না।

ইরিনা মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বলল
–আচ্ছা মানলাম তোর না। আর তুই জানিসও না তোকে কে দিয়েছে? কিন্তু কেউ তো একজন তোকে দিয়েছে। সেই ব্যক্তিটা কে?

–আমি কিভাবে বলব কে? আমি তো কিছুই জানিনা। আর ইলু আপু যে এটা আমার টেবিলে পেয়েছে আমি সেটাও জানতাম না। তোমাদের মতো আমিও এখনি জানলাম।

সবার সন্দিহান দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে ঈশা বুঝতে পারল তার এই যুক্তি কারো কাছেই গ্রহনযোগ্য হয়নি। অসহায় কণ্ঠে আবার বলল
–বিশ্বাস কর। আমি এসবের কিছুই জানিনা।

ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সবাই আবার কাগজটার দিকে মনোযোগ দিলো। পিনপতন নিরবতার মাঝেই ইফতি হঠাৎ চেচিয়ে বলল
–আরে আমি জতদুর জানি এটা ইভান ভাইয়া লিখেছে। কারন হ্যান্ড রাইটিং একদম মিলে যাচ্ছে। এটা ইভান ভাইয়ারই লেখা।

–হোয়াট?

সবাই একসাথে চেচিয়ে উঠল। সব মাথা এক জায়গায় জমা হল। কথাটা সবার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য। আবার পরিবেশ থমথমে হয়ে উঠল। সবার থেকে বেশী অবাক হয়েছে ঈশা। ইফতির কথা অনুযায়ী যদি সত্যি সত্যি এটা ইভানের লেখা হয়ে থাকে তাহলে তার কি ধরনের রিয়াকশন দেয়া উচিৎ সেটা ভেবেই অকুল দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে লাগল ঈশা। মাথা ভনভন করছে তার। বয়ফ্রেন্ড শব্দটা শোনার পরেও ততোটা শক খায়নি যতটা ইফতির কথা শুনে খেয়েছে। শুন্য মস্তিষ্ক নিয়ে পলকহীন চোখে কাগজটার দিকে তাকিয়ে থাকল। গোছানো চিন্তা ভাবনা সব এলোমেলো লাগছে তার।

–ইভান ভাইয়া কোথায়?

–আমাদের বাসায় গেছে। আম্মু ফোন করেছিল ইরা ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি করছে তাই তাকে আনতে গিয়েছে।

ইরিনার প্রশ্নের উত্তরে আনমনেই কথা গুলো বলে থামল ঈশা। ইরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যেতে উঠে দেখে ঈশা বাসায় নেই। তখন কান্নাকাটি করে। ঈশার মা তাকে থামাতে না পেরে ইভান কে ফোন দেয় তাদের কাছে নিয়ে যেতে। আর তাকে নিতেই যায় ঈশাদের বাড়িতে। ইফতি এবার অবাকের রেশ টেনে বলল
–ঈশা আপুর বয়ফ্রেন্ড নাহলে তাহলে ইভান ভাইয়া কি তার গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য লিখেছে?

সবাই ইফতির দিকে তাকাল। আবার নিস্তব্ধ হয়ে গেলো চারপাশ। এবারের বিষয়টা আরও অসম্ভব। এ জিবনেও ইভানের গার্ল ফ্রেন্ড আছে সেটা যে কেউ মানতে নারাজ। ঈশা মোটামুটি আহত হল। অতি বিস্ময়ের মাঝে এখন প্রচণ্ড মন খারাপ হানা দিলো। বিষয়টা মানা এতো সহজ না। আবার সোনিয়ার বিষয়টাও মাথায় ঢুকে গেলো। সব মিলে কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ভাবনার মাঝেই সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেয়ে সবাই বুঝে গেলো ইভান আসছে। সেদিকে সব দৃষ্টি স্থির করল। ইভান ইরাকে কোলে নিয়ে এসে মাদুরের উপরে বসে পড়ল। কারো দিকে তাকাল না। ইরার হাতে থাকা চকলেট টা খুলে হাতে ধরিয়ে দিলো। ইরা চকলেটটা নিয়ে দুই হাতে ইভানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিলো। ইভান ইরার দিকে তাকিয়েই বলল
–একটা চকলেটের জন্য এতো ভালবাসা! মেয়ে মানুষ একটুতেই এমন গলে যায় ধারনা ছিলনা। আমি তো ভেবেছি আমার বউকে প্রতিদিন রাতে একটা করে চকলেট দিবো। না জানি কত আদর করবে।

ইভানের কথা শেষ হতেই চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো। কথা শেষ করেই ঈশার দিকে তাকাল ইভান। কিন্তু ঈশার কঠিন দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুচকে নিলো। হাজার প্রশ্ন সেই দৃষ্টিতে। ইভান বুঝতে না পেরে পিছনে ঘুরে তাকাল। সবাই ততক্ষনে হাসি থামিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–কি হয়েছে? এভাবে কেন দেখছিস?

–তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের নাম কি ইভান ভাইয়া?

ইলুর কথাটা কানে আসতেই ইভানের মুখভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো। কপালের ভাজ সোজা হয়ে গেলো। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইভান। কিছুক্ষন ওভাবে তাকিয়ে থেকে বলল
–থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছা আছে?

ইলু মুহূর্তেই ইভানের থেকে সরে বসলো। দূর থেকেই ঈশানের হাতের কাগজটার দিকে তাক করে নিচু কণ্ঠে বলল
–ঐটা তাহলে কার? কার জন্য লিখেছ।

ইভান ভ্রু কুচকে কাগজটার দিকে তাকাল। হাত বাড়াতেই ঈশান তার হাতে দিয়ে দিলো। সবাই ইভানের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে উত্তরের। ইভান কাগজটার দিকে তাকিয়ে বলল
–কই পেয়েছিস এটা?

ইলু দূর থেকেই আমতা আমতা করে বলল
–ঈশার টেবিলে।

ইভান চোখ তুলে ঈশার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টির কোন পরিবর্তন হয়নি। ইফতি এগিয়ে এসে বলল
–এটা কার ইভান ভাইয়া? তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য?

ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে দেখেছিস?

ইফতি না সুচক মাথা নাড়াল। ইভান ধমকে উঠল
–তাহলে বারবার একি কথা বলছিস কেন? যা নেই তা নিয়ে এতো মাথা ব্যাথার কারন কি?

–তাহলে কি ঈশার জন্য লেখা?

ইরিনা থেমে থেমে কথাটা বলতেই পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। ঈশা চমকে উঠে কঠিন দৃষ্টিতে ইরিনার দিকে তাকাল। সবাই এবার ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান ভ্রু কুচকে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই আমার অগোচরে ঘরে এসে এসব চুরি করিস? কি আজব অবস্থা! ব্যক্তিগত কোন কিছুই সেফ না। এখন তো নিজেকে নিয়েই টেনশন হচ্ছে। রাতে ঘুমাব আর সকালে উঠে দেখব পাশের বাড়িতে! কখন আমার ঘর থেকে আমাকেই চুরি করে নিয়ে যাবে।

হো হো করে সবাই হেসে উঠল। কিন্তু ঈশার মেজাজ চরম খারাপ হল। কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেটা বুঝতে পেরেই তেতে উঠে বলল
–সিরিয়াসলি! এখন এসব চুরি করার অপবাদও ঘাড়ে নিতে হচ্ছে? এটা কোন চুরি করার জিনিস? এটা শোনার পর আমার মনে হচ্ছে উপর থেকে মই নামুক আর আমি উপরে উঠে যাই।

সবাই আরেক দফা হেসে উঠতেই ইভান বলল
–এটা চুরি করার মতো জিনিস। অবাক হওয়ার কিছুই নাই। চোখে না দেখা সব থেকে মুল্যবান জিনিসটা মনটাই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আর এসব! খুব সাভাবিক ব্যপার। তোর দারাই সম্ভব।

ঈশা আরও বেশী রেগে বলল
–দেখ ইভান ভাইয়া। তোমার কোন কিছু চুরি করার ইচ্ছা আমার নাই। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে প্রয়োজন নাই। আমার যা লাগবে সেটা নিজের অধিকার বসত নিয়ে আসব। কেউ আটকাতে পারবে না।

সবাই হাসাহাসি নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে ঈশার কথা তেমন গুরুত্ত দিলো না। কিন্তু ইভান অমায়িক হেসে তাকাল ঈশার দিকে। ঈশা প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে পরে নিজের বোকা বোকা কথার প্রেক্ষিতে প্রচণ্ড লজ্জা পেল। চোখ নামিয়ে নিলো। এতক্ষন ইরা চুপচাপ চকলেট খাচ্ছিল। ইভানের হাতের কাগজটা নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে বলল
–দেখি! দেখি!

সবাই তার দিকে তাকাল। মাত্র পড়ালেখা শিখছে সে। বানান করে পড়তে পারে অনেকটা। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল
–এটা তো ইভান ভাইয়ার ঘরে ছিল। আমি পড়তে পারছিলাম না তাই নিয়ে এসেছি বাসায়। ঈশা আপুকে পড়তে দিবো। কিন্তু আপু ছিলনা বলে টেবিলে রেখেছিলাম।

ইরার কথা শুনে সস্তির নিশ্বাস ফেলল সবাই। কিন্তু পরক্ষনেই আবার থম্থমে পরিবেশে ইরিনা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল
–তাহলে কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা? এখন তো রহস্যের কিনারা হল না।

ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। গম্ভির গলায় বলল
–তোরা যে পড়ালেখা করিস না সেটার সত্যতা তোর কথায় প্রমান হল। এটা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বিখ্যাত উক্তি। ভাল লেগেছিল তাই আমার ডাইরিতে লিখেছিলাম। ডাইরির পাতাটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। আর সেটাই ইরা নিয়ে যায় আমার ঘর থেকে।

সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেলল। এতক্ষনে জটিল রহস্যের সমাধান হল। ইভান বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। ইরাকে নিয়ে নিচে যেতে বলল
–ভাগ্যিস ইরা রহস্যের সমাধান করে দিলো। নাহলে আজ না জানি আমাকে কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হত। কার না কার সাথে আমাকে তোরা জুড়ে দিতিস। শেষে দেখা জেত তোদের জন্য আমাকে অগ্নি পরিক্ষা দিতে হচ্ছে।

কথা শেষ করে ইভান নিচে চলে গেলো। ঈশাও কিছুক্ষন বসে থেকে বলল
–আমার ঘুম পাচ্ছে।

ওর কথা শুনে সবাই সম্মতি দিলো। একে একে উঠে নিচে চলে এলো। নিচে এসে দেখে ইভান সোফায় বসে টিভি দেখছে। আর ইরা ওর কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঈশা একটুক্ষণ ইভান কে দেখে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
–ইভান ভাইয়া। ইরাকে আমার কোলে দাও। আমার পাশে শুয়ে দিবো।

ইভান শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। একটু ভেবে বলল
–চল। আমি দিয়ে আসি।

বলেই ইরাকে কোলে নিয়ে উঠে পড়ল। ঈশা আর কথা বাড়াল না। পাশে হাটতে হাটতে আচমকা ঈশা একটা অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে বসলো
–আচ্ছা তুমি তখন বললে কেন রাতে ঘুমালে সকালে পাশের বাড়িতে তোমাকে পাওয়া যাবে।

ইভান অতি বিস্ময় নিয়ে তাকাল। যে উদ্দেশ্যে কথাটা সে বলেছিল ঈশা যে সেটা ঠিক সেভাবেই ধরে ফেলেবে সেটা তার ধারনা ছিলনা। ভেবেছিল ঈশা হয়ত বুঝতে পারবে না। বুঝতে পেরেছে ভেবেই নিজের হাসিটা চেপে রেখে সাভাবিক ভাবেই বলল
–ঐ সময় যেহেতু তোর চুরি করার কথা হচ্ছিল। তাই আমাকে চুরি করে তো তোর বাড়িতেই নিয়ে যাবি। নিশ্চয় চুরি করে সোনিয়ার বাড়িতে রেখে আসবি না।

তেলে বেগুনে জলে উঠল ঈশা। কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল সে। ইভান বুঝতে পেরে ঠোট চেপে হাসল। ঘরের ভিতরে ঢুকে ইভান ইরাকে বিছানায় শুয়ে দিলো। ঈশা পাশেই দাড়িয়ে আছে। ইভান বের হতে গিয়েও থেমে ঘুরে তাকাল। ঈশা অপেক্ষা করছে কিছু বলবে কিনা সেটা শোনার জন্য। ইভান পকেট থেকে চকলেট বের করে ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঈশা এক পলক সেটার দিকে দেখে ইভানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে নিয়ে নিলো। ইভান দাড়িয়েই ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা ঠোটের কোনে চাপা হাসি নিয়ে বলল
–কিছু বলবে?

–ইরাকে চকলেট দিলাম আমাকে রিটার্ন গিফট দিলো। তুই দিলি না যে?

ঈশা কিছু না ভেবেই হাসি মুখে বলল
–কি চাও?

–ইরা যা দিলো।

ইভানের কথা মাথায় ঢুকতেই ঈশার হাসি মিলিয়ে গেলো। স্থির দৃষ্টি অস্থির হয়ে উঠল। মাথা ভনভন করে ঘুরে গেলো। শুকনো ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকাল। ইভান শব্দ করে হেসে বের হয়ে চলে গেলো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here