#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৭,০৮
#অধির_রায়
০৭
নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷
— নিয়তি নিজেকে সংযত করে, ” আমার হাত ছেড়ে দেন৷ আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার?”
নির্বণ নিয়তির হাত ছাড়তেই নিয়তি নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি ফ্লোরে বিছানা করতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত থেকে চাঁদর কেড়ে নেয়৷
— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” একি আপনার পা ঠিক হয়ে গেছে স্যার৷ আপনি তো.. ”
— নিয়তিকে থামিয়ে, ” আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি৷ আর আমার পা একদম ঠিক আছে। আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে দিয়ে এমন কাজ করিয়েছি৷”
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনার মূল্যবোধ বলতে কিছু নেই৷ মানুষের ইমোশনাল নিয়ে খেলা করতে খুব ভালো লাগে। একদিন এমনও দিন আসবে কেউ আপনার ইমোশনাল বুঝতে আসবে না৷”
— রেগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাও ডেয়ার ইউ৷ তোমার এত বড় সাহস হলো কি করে, আমার মুখের উপর কথা বলার?”
— আমি সাহস দেখায় না৷ সত্য কথা বলি৷ আর আমি বড়লোকদের মতো অহংকারী নয়৷
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমার টাকা আছে৷ আমার অহংকার থাকবে না তো তোমার থাকবে।”
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ টাকা আছেই বলে আজ একটা মেয়েকে এক মাসের জন্য বউ করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন৷” একবার কি ভেবে দেখেছেন, একটা মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে এমন বাজে শর্তে রাজি হয়েছে? ”
— হোয়াট ডু ইউ মিম? তুমি কি বলতে চাও? তুমিও পরিস্থিতির স্বীকার আমিও পরিস্থিতির স্বীকার। এটা ভুলে যাও কেন?
— আমি বলতে চাই টাকা থাকলেই সব হয় না৷ টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পেরেছেন? আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করেন৷ মানুষদের দাম দেন৷
নিয়তি কথাতে নির্বণ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়৷ নির্বণ আর কিছু না বলে সোফায় শুয়ে পড়ে। নিয়তি কথা বলে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না৷
নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সারারাত শুধু নির্বণের কানে একটা কথাই বাজে টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পরেছেন?
__________
সারারাত ঘুমাতে পারেনি নির্বণ। চোখের জল ফেলে গেছে সারারাত৷ চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
— নির্বণের এমন অবস্থা দেখে নির্বণের মা নির্বণকে কাছে টেনে নেন৷ পাশে বসিয়ে বলে উঠে, ” নির্বণ তোমার চোখ মুখ এভাবে ফোলা ফোলা লাগছে কেন? তোমার কি হয়েছে?”
— নির্বণ আমতা আমতা করে, ” আসলে মা কাল রাতে ঘুম হয়নি৷ অফিসের কাজ নিয়ে বিজি ছিলাম।”
— শক্ত গলায় বলে উঠেন, ” তোমাকে কতবার বলেছি, আগে নিজের খেয়াল রাখবে৷”
— প্লিজ মা রাগ কর না৷ তুমি তো আমার সোনা মা৷ প্লিজ একটু হাসো। তোমার হাসিমাখা মুখ না দেখে আমি অফিসে কোনদিন যায় না৷
— হয়েছে। আর আদর দেখাতে হবে না৷ লাঞ্চ করে নিও দুপুরে।
নির্বণ মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে আসতেই নিয়তি নির্বণের হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার ধরিয়ে দেয়৷
— নির্বণ অবাক চোখে, ” আমি এটা দিয়ে কি করব?”
— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠে, ” কি করবেন মানে কি? আমি লাঞ্চ বানিয়ে দিয়েছি৷ দুপুরে বাহিরের বাজে খাবার খেতে হবে না৷”
— আমি পারব না নিয়ে যেতে। এতদিন বাহিরে খেয়ে এসেছি আজও বাহিরে খেয়ে নিব৷
— নির্বণের মা পিছন থেকে ডাক দেয়, ” নির্বণ খাবার টা নিয়ে যাও। নিয়তি খুব কষ্ট করে রান্না করেছে৷”
— প্লিজ মা বুঝার চেষ্টা কর৷ কেউ অফিসে খাবার নিয়ে আসে না৷ আর আমাদের ক্যান্টিনে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করা হয়।
নির্বণ আর কিছু না বলে নিয়তিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়৷ নিয়তিও নির্বণের চাহনি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। নিয়তি নির্বণের মায়ের পাশে বসে পড়ে।
— মা আজ কিন্তু আপনাকে নিজে থেকে সব করতে হবে৷ আপনাকে সুস্থ হতেই হবে৷
— নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ আমি নিজে থেকে পারব না৷ থেরাপি কাজটা অনেক কষ্টকর৷ আর নিজে থেকে করতে নিলে আরও কষ্ট কর৷
— নিয়তি শক্ত গলায় বলে উঠে, ” আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না৷ আমার একমাত্র এবং প্রধান কাজ হলো আপনাকে সুস্থ করে তোলা৷ ”
— হুম মা৷ আমি তোমার ভালোবাসা বুঝি৷ কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না৷ আমি একা একা পারব না৷
— আপনি পারবেন কিনা আমি জানি না৷ কোন সাহায্য লাগলে আমি করব৷ আমি আছি কিসের জন্য৷ আপনি শুয়ে পা তুলার চেষ্টা করেন৷
নির্বণের মা একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিয়তির কথা মেনে নেন৷ তিনি তো জানেন নিয়তি তার মঙ্গল চায়৷ কষ্ট হলেও তিনি পা তুলার চেষ্টা করেন৷ অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই পা উপরের দিকে তুলতে পারছে না৷ চোখে জল টলমল করছে।
— মা আর লাগবে না৷ আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন৷ মা আমি বলেছিলাম চোখে জল আনবেন না। জল আমাদের দুর্বল করে তুলে।
— আমি ইচ্ছা করে আনিনি৷ কখন যে ব্যথার কারণে জল এসে পড়েছে নিজেই জানি না৷
— আমি তো ভেবেছিলাম আজ আপনাকে হাঁটানোর চেষ্টা করব৷ কিন্তু তা আর হলো না৷ তবে আমি কাল ছাড়ছি না৷
নিয়তি নির্বণের মায়ের পা মালিশ করে দেয়৷ মালিশ শেষে ইলেকট্রনিকস তাপ দেয়৷ যা মানুষের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
_________
নির্বণ রাত ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরে৷ বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। নির্বণ তার মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নিয়তি বিছানা পা তুলে বসে আছে। নির্বণকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ায়।
— স্যার আজ এত রাত হলো কেন? আপনার ফোন বন্ধ কেন?
— সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিব না৷ আমি কেন রাত করে বাড়ি ফিরেছি সে কথা না জানলেও হবে?
— আমি অফিসে ফোন করে জেনে নিয়েছি আপনি অফিস থেকে সন্ধ্যায় বের হয়েছেন৷ আর কোন মিটিং ছিল না আজ৷
— এই শুন৷ তুমি আমার বিবাহিত বউ নয়। আমাকে এত প্রশ্ন করার দায়িত্ব তোমার নেই।
— নির্বণ সেফায় নিজের কোর্টটা ছুঁড়ে মারে৷ নিয়তি কোর্টটা নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বণ ওয়াসরুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়৷
— টাকা পৌঁছে দিয়েছে কি?
— কিসের টাকা পৌঁছে দিব৷ আমি তো আপনার টাকায় হাত বুলাইনি।
— আমি আমার টাকার কথা বলছি না৷ তোমার বাবার মেডিসিনের টাকার কথা বলছি৷
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমি নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছি৷ আর আপানার দেওয়া নিয়মের অমান্য করেছি। এর পর থেকে আর এমন হবে না৷”
— তুই চাইলে প্রতিদিন তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসতে পারো।
নির্বণের কথা শুনে নিয়তি খুব খুশি হয়৷ ভেবেছিল নির্বণ নিয়তিকে বাজেভাবে বকে দিবে৷ নির্বণ নিয়তির মুখে হাসি দেখে সেও মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিয়তি নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
— মিস নিয়তি আমি আজ বাহিরে ডিনার করেছি৷
— “কিন্তু আমি আজ নিজ হাতে সব রান্না করেছি৷ একটু খেয়ে দেখবেন না৷ ” নরম স্বরে বলে উঠে।
— “তোমার মতো মিডিল ক্লাসের মেয়ের হাতের খাবার খাবে না এই নির্বণ চৌধুরী।” নিয়তিকে নিচু করে বলে উঠে।
নির্বণ আর কিছু না বলে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। নির্বণের কথা নিয়তির বুকের মাঝে লাগে।
— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” স্যার আজ থেকে আমার কাজ শুধু আপনার মাকে সুস্থ করা নয়৷ আপনাকে সোজা পথে নিয়ে আসাও আমার কাজ। আমি আপনার অহংকার যদি মাটির সাথে মিশাতে না পারছি তাহলে আমিও নিয়তি নয়৷”
চলবে….
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়
নিয়তি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নির্বণের মুখে জল ছুঁড়ে মারে৷ নির্বণ মুখে জলের স্পর্শ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে৷ উঠে দেখে নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তিই এমন কাজ করেছে৷
— নির্বণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস হলো কি করে, আমার মুখে জল ছিঁড়ে মারার?”
— নিয়তি ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে বলে উঠে, ” মি. এক মাসের স্বামী। আপনি নিশ্চয় ভুলে যাননি আমি আপনার এক মাসের জন্য চুক্তির বউ৷”
— নির্বণ নিয়তির কথা শুনে আরও ক্ষেপে যায়৷ রাগে গজগজ করে বলে উঠে, “হোয়াট ডু ইউ মিন? ”
— আই মিন.. আজ থেকে আমি যা বলবো আপনাকে তাই করতে হবে৷ চুক্তির বউ বলে কথা৷
— “তুমি কে? আর তোমার কথা শুনে চলবে নির্বণ চৌধুরী, ইম্পসিবল।” মুচকি হেঁসে বলে উঠে।
— স্যার আপনার মুচকি হাসি আমার কিছু হবে না৷ কারণ আমার কাছে চুক্তিনামা আছে৷ আমার কথা মতো না চললে সংশোধানাগারে সারাজীবন কাটাতে হবে৷
— মিস নিয়তি, “যত বড় মুখ তত কথা৷”
— নিয়তি নির্বণের কথা পাত্তা না দিয়ে, ” স্নান করে ভদ্র ছেলের মতে নিচে খেতে আসেন৷ এখন থেকে কেউ আপনার খাবার উপরে দিয়ে যাবে না৷”
— নির্বণ ট্রি টেবিলে লাথি দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি”
নির্বণকে নিয়তি তা জানেই না৷ নির্বণের দিকে না তাকিয়ে রুম থেকে চলে আসে৷ নিচে এসে খাবার তৈরি করতে শুরু করে।
___________
নির্বণ রাগে গজগজ করে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে ছোট বাচ্চাদের মতো রুপকথার “লোভী রাজকুমারী”
গল্প শুনে যাচ্ছে।
— আচ্ছা মা আমাকে একটা কথা বল তো? মেয়েটা এতটাই নিষ্ঠুর কেন হয়? রাজকুমারী রাজ্যের লোভে তার বোন, মা, বাবাকে হত্যা করে৷ তেমনি বর্তমানে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে।
— হুম নির্বণ অনেক মেয়ে আছে যারা ছেলেদের ফাঁসিয়ে টাকা হাসিল করে৷ আবার অনেক মেয়ে মা লক্ষী। যারা ছেলেদের সম্মান করে। তাদের ভালোবাসে। তাদের সম্মানের কথা বিবেচনা করে৷
— মা যেসব মেয়েরা ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে তাদের নিয়ে কোন গল্প নেই৷
— হ্যাঁ নির্বণ তাদের নিয়েও অনেক রুপকথার গল্প আছে৷ তারা কখনো সুখী হতে পারে না৷ মূল কথা হলো তারা তাদের কর্মফল দুনিয়াতে পায়৷
— আচ্ছা মা৷ তুমি রেস্ট নাও৷ আমি আসছি৷
নির্বণ দরজার কাছে এসে আবার মায়ের কাছে ফিরে আসে৷
— নির্বণের মা মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” কিছু বলবে?”
— “মা আমি খুব খুশি। আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না৷ তুমি এখন নিজ থেকে উঠে বসতে পারছো৷ জানো মা আমার আর কিছু চাই না৷ তুমি সুস্থ হয়ে উঠো৷ ” কথাটি বলার মাঝে নির্বণ কেঁদে উঠে। আজ কিছুতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারল না৷
— নির্বণের মা নির্বণের চোখের জল মুছে দিয়ে, ” দূর পাগল ছেলে। কান্না করে না৷ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, এই তিনটা জিনিস ওই উপর ওয়ালার হাতে৷ সেখানে আমাদের কোন হাত নেই৷ তিনি যদি চান আমি এই যাত্রায় বেঁচে যায় তাহলে কোন শক্তি তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না৷
— নির্বণ তার মাকে জড়িয়ে ধরে, ” মা তুমি আমাকে একা করে প্লিজ ছেড়ে যাবে না! তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷”
ছেলের চোখের জল দেখে আমার মন ভেঙে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মায়ের চোখেও জল।তবে সে জল টলমল করছে৷ ছেলেকে শক্তি জোগানোর জন্য সেই জলকে বহু কষ্টে আটকে রেখেছেন৷
— কাঁদো কাঁদো ভাঙা গলায় বলে উঠেন, ” নির্বণ আমি তোমাকে এই শিক্ষা দেয়নি৷ তোমাকে ভেঙে পড়তে আমরা দেখতে চাই না৷ তুমি সব পরিস্থিতিতে মাথা উঁচু করে থাকবে। পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করতে হবে তোমাকে৷
— মা আমি আর পারছি না৷ আমি মনে মনে মরে যাচ্ছি৷ তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়৷ আমি সব সময় প্রার্থনা করি সৃষ্টি কর্তার কাছে, তোমাকে সুস্থ করে দিতে৷
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” নির্বণ তুমি কি জানো না? চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে দেয়৷ আমি তোমার চোখে জল নয়৷ ভালোবাসা দেখতে চাই৷ বিপদের সময় চোখে আগুন দেখতে চাই৷”
— হ্যাঁ মা। চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে। আমি আর কাঁদবো না৷ এইতো হাসছি, ” বুকের মাঝে হাজারও কষ্ট লুকিয়ে রেখে মিষ্টি করে মুচকি হাঁসে৷
— এই তো আমার সোনা ছেলে। আমি সব সময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই৷ ভুলেও চোখে জল আনবে না৷
— ওকে মা৷ তুমি রেস্ট নাও৷ কিছু সময় পর নিয়তিকে পাড়িয়ে দিচ্ছি৷
________
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” এই যে স্যার৷ আপনাকে কি বলা হয়েছে?” তবুও এখানে বসে আছেন কেন?
–” কি বলা হয়েছে? তোমার কথার ধরণ ঠিক কর? এভাবে অসভ্যের মতে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে? ” নরম কন্ঠে বলে উঠে।
— আমি জানি আমি যথেষ্ট সভ্য ভদ্র একটা অবুঝ মেয়ে। আপনাকে নিচে ব্রেক ফাস্ট করতে বলা হয়েছে। চলেন ব্রেক ফাস্ট করবেন।
— আমি নিচে ব্রেক ফাস্ট করি না৷ ইভেন আমি আমার রুম ছাড়া কোথায় খাবার খাই না, এই বাড়িতে।
— গোমড়া মুখ করে রুমে বসে খাওয়া চলবে না৷ আমার সাথে নিচে যাবেন আর এক সাথে বসে খাবার খাবেন।
— মিস নিয়তি আমাকে রাগিও দিও না৷ তুমি নিচে টেবিলে বসে সবার সাথে খেয়ে নাও৷ বাড়ির সকল সার্ভেন্ট অনেক ভালো। তারাও টেবিলে বসে খাবার খায়।
— আমি যতদূর জানি আপনারা সকল সার্ভেন্টের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেতেন৷ তাহলে এখন টেবিলে বসে খাবার খান না কেন?
— নিয়তি তোমাকে এই বাড়িতে এক মাসের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে৷ তোমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে৷ সে কাজ করো? টাকা লাগলে আরও টাকা দিবো৷
— স্যার আমাকে কি আপনার লোভী মনে হয়৷ আমি গরিব হতে পারি কিন্তু লোভী বা অহংকারী নয়৷ আর আমি আমার কাজ ভুলিনি৷ আমি আমার কাজ করেই যাচ্ছি৷
— আমি জানি তুমি যথেষ্ট একটা ভালো মেয়ে। আমি সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করতে চাই না৷ আমার মন মানসিকতা এমনিতেই ভালো নেই।
— সকলের সাথে আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে খাবার খেলে মন মানসিকতা ভালো হয়ে যাবে। চলেন আমার সাথে।
নিয়তি নির্বণের হাত ধরে টান দিতেই নির্বণ নিয়তির গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি গালে হাত দিয়ে অসহায়ের মতো নির্বণের দিকে তাকায়৷
— নির্বণ রেগে বলে উঠে, ” তোমাকে বলা হয়েছে তুমি আমার ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না৷ কতবার বলেছি আমি টেবিলে বসে খেতে পারবো না৷”
চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা একটু কমিয়ে,” নিশ্চয় কোন কারণ আছে। কারণ না থাকলে আমি নিশ্চয় টেবিলে বসে খাবার খেতাম।”
নির্বণের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে৷ চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে দুই চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে৷ নিয়তি নির্বণের চোখে জল দেখে অবাক। এই মানুষের মনে এত কষ্ট। নিয়তি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না?
নির্বণ বিছানা থেকে শার্ট নিয়ে শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে অফিসে চলে যায়৷ অফিসের সকল ফাইল ট্রি টেবিলের উপর রাখা আছে।
নিয়তি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ে। গালে হাত দিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” কি এমন কারণ আছে? যার জন্য স্যার এখন সকলের সাথে বসে এক সাথে খাবার খান না৷ কেন তিনি সব সময় রেগে থাকেন? কেন মেয়েদের এত ইগনোর করেন? স্যার কি অহংকার থেকে ইগনোর করেন নাকি কোন রহস্য থেকে ইগনোর করেন? আমাকে সব কিছু জানতে হবে৷
_________
— সোনা মা! নির্বণ তোমার গায়ে হাত দিয়েছে? তোমাকে নির্বণ কেন টর্চার করেছে? আজ বাড়িতে ফিরতে দাও আমি তাকে শাস্তি দিবো৷
— নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে অবাক। নিয়তি চরের দাগ ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে। মনে মনে বলে উঠে, ” মা কিভাবে জানতে পারল? আমি তো ঢেকে রেখেছি।”
— মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয়৷ গালে এন্টিসেপ্টি মলম লাগিয়ে নাও৷ নাহলে কালো দাগ পড়ে যাবে।
নিয়তি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? তখন একটা হিন্দি সিরিয়ালের কথা মনে পড়ে যায়৷ মশা কথা বলে নায়কা বেঁচে যায়৷
— মা আপনি ভুল ভাবছেন! আমাকে কেউ আঘাত করেনি৷ রাতে মশা মারতে গিয়ে গালে আমি নিজেই ঠাস করে বসিয়ে দিয়েছি৷
— আমাকে মিথ্যা বলা৷ আমাদের বাড়িতে কোন জায়গায় কোন কোন মশা নেই৷ মশা আসল কোথা থেকে।
— আসলে মা রাতে আমাদের রুমে একটা মাছি চলে আসে৷ মাছি না মশা জানি না ঠিক। কানের মাঝে শব্দ করতে থাকে। তাকে মারতে নিয়েই এমন অবস্থা।
মা এখন এসব নিয়ে গবেষণা না করে আপনি থেরাপিতে মন দেন৷
নিয়তি নির্বণের মাকে থেরাপি দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আর নির্বণের কথা বলবে বলবে ভাবছে৷
— নিয়তি কি ভাবছো আজ? তোমার মন তো অন্য দিকে? আমার কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইছো কি?
— না মা। আমি তেমন কিছু ভাবি না৷
এখন কি বলি? নির্বণের কথা আজ জানতে চাইলে মা বুঝে যাবে৷ নিয়তি উপস্থিতি বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আবারও বলে উঠে, “আমার মা যদি আজ বেঁচে থাকতো৷ তাহলে আপনার মতো আমাকেও আগলে রাখতো।”
— আমি আছি তো? আমি তোমার মায়ের জায়গা নিতে পারব না ঠিক৷ কিন্তু এখন থেকে মায়ের অভাব বুঝতে দিব না৷ আর মন খাবার করবে না৷
নিয়তি মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে জবাব জানায়৷
_________
রাত একটা বাজে এখনো নির্বণ বাসায় ফিরেনি৷ নিয়তি রুমের মাঝে পায়েচারী করছে। মা নির্বণের কথা অনেকবার জানতে চেয়েছেন৷ বাধ্য হয়ে মাকে জানানো হয়েছে নির্বণের মাথা ব্যথা, সে ঘুমাচ্ছে।
দেখতে দেখতে রাগ দুই টা বেজে গেছে। নিয়তি আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারল না৷ নিয়তি গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে আসে। নির্বণের কেবিনে প্রবেশ করে যা দেখে সেজন্য নিয়তি মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷
চলবে….