#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৯,১০
#অধির_রায়
০৯
নিয়তি ভয়ে ভয়ে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করল। প্রায় চারিদিকে অন্ধকার। শুধু নির্বণের কেবিনে লাইট অন করা৷ তাছাড়া অন্যান্য কেবিনে ড্রিম (আবছা আলোয় লাইট) লাইট অন করা৷ নিয়তি নির্বণের কেবিনের দরজা খুলে চমকে ওঠে৷ নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ এমন ভাবে ভেঙে পড়বে৷
নির্বণ তার চেয়ারে বসে কয়েকটা চিরকুট সামনে রেখে ভীষণভাবে কেঁদে যাচ্ছে। নির্বণের কোন খেয়াল নেই, তার আশে পাশে কি হচ্ছে? নিয়তি নির্বণের কাঁদে হাত রাখতেই নির্বণ চমকে উঠে। নিয়তি দেখে চিরকুটগুলো লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই নিয়তি একটা চিরকুট ছোঁ মেরে নিয়ে যায়৷
— নির্বণ কাঁদো কাঁদো স্বরে ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি আমার চিরকুট টা দিয়ে দাও৷ আমি তোমার কাছে হাতজোড় করছি৷”
নির্বণ কারো সামনে এভাবে হাতজোড় করতে পারে নিয়তির চিন্তার বাহিরে৷ নিয়তি নির্বণের অসহাত্ব দেখে খুব দয়া হয়৷ নিয়তি কিছু না বলে চিরকুটটা দিয়ে দেয়৷
— নির্বণ হাতে চিরকুট পাওয়া মনে হাতে চাঁদ ফিরে পাওয়া৷ নির্বণ মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি৷ তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাব, সেই ভাষা আমার জানা নেই৷ ”
— নিয়তি অবাক চোখে হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” স্যার এখন কয়টা বাজে জানেন। ”
— নির্বণ চিরকুটগুলো ওয়ালেটে রাখতে রাখতে বলে উঠে, ” মেবি দশটা বাজে৷ তুমি এত রাতে অফিসে কেন?”
— চোখ ছোট করে হতাশ হয়ে বলে উঠে, ” আপনার মাথা ঠিক আছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়টা বাজে? ”
— নির্বণ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, ” এখন তো রাত ২ঃ৫৬ মিনিট। প্রায় রাত ৩ টা বাজে!”
— হ্যা স্যার এখন রাত তিনটা বাজে৷ আপনি আজ আমাকে একটা কথার জবার দিবেন!
— কি কথা? মা নিশ্চয় এখনো জেগে আছেন৷ লেট করলে চলবে না৷ আমাদের তারাতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে৷
নির্বণ দ্রুত গতিতে চলে যেতে নিলেই নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ফেলে। নিয়তি নির্বণের সামনে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” স্যার মাকে নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি মাকে ঘুম কথা বলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি৷ ”
— ” তুমি এভাবে আমার পথ আটকানো চেষ্টা করছো কেন? বাড়ি ফিরতে হবে।” কর্কট কন্ঠ বলে উঠে
— হ্যাঁ আমরা বাড়ি ফিরব৷ তবে আজ আপনাকে একটা কথার জবাব দিতে হবে।
— কি কথা? আর আমি তোমার কাছে জবাব দিতে যাব কেন? কে হও তুমি?
— ধরে নেন আমি আপনার কাছের কেউ। বা আমি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে তো আপনি সব শেয়ার করতে পারেন৷
— নির্বণ দেয়ালে ঘুশি মেরে, ” আমার জীবনে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে কিছু নেই৷ সব মেয়েরাই বেইমানি করে। কোন মেয়ে কারো আপন হতে পারে না৷ ”
— যদি একই প্রশ্ন আপনার দিকে আমি ছুঁড়ে দেয়৷ তাহলে কি জবাব দিবেন?
— কিসের প্রশ্ন? তোমাকে আমার জীবন নিয়ে ভাবতে হবে না৷ সামনে তোমার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তুমি বরং সেখানেই মন দাও।
— আমি কোন স্বার্থপর মেয়ে নয়৷ আমার চোখের সামনে একজন মানুষ নিবরে দগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। আমি তাকে ফেলে সামনে এগিয়ে যাব৷ আর হ্যাঁ সব মেয়েরা এক নয়৷ যেমনঃ ছেলেরা ধর্ষক হয়৷ আবার সেই ছেলেরাই কারো ভাই, কারোর আদর্শ স্বামী, কোন কাঙালি মায়ের আদর্শ ছেলে। তেমনি সব মেয়ে এক না৷
— নির্বণ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হোয়াট ডু ইউ মিন? তুমি বলতে চাইছো তোমরা বেইমানি কর না৷ তুমি আজ আমার সাথে বউ হিসেবে আছো। কাল আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর তুমি কি বসে থাকবে? তুমি তো টাকার জন্য নিশ্চয়ই একটা কাজ করবে৷ ”
— অবশ্যই আমি কাজ করব৷ কাজ না করলে খাব কি? আমার জীবন নিয়ে আমাকেই ভাবতে হবে৷ আমি ছাড়া আমার জীবন নিয়ে ভাবার মতোন কেউ নেই।
— ঠিক তেমনই৷ আমি আমার জীবন নিয়ে ভালোই আছি৷ আমার জীবনে কি হবে, সেই নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না?
নিয়তি কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্বণ নিয়তির মুখের উপর আঙুল দিয়ে কথা বলতে মানা করে দেয়। নিয়তি বুঝতে পারে এখন নির্বণকে এভাবে ফোর্স করা যাবে না৷ এই নিয়ে পরে কথা বললে ভালো হবে। নির্বণ এমনিতেই অনেক আপসেট।
______________
নির্বণ ঘুম থেকে উঠে অবাক। আজ নিয়তি নির্বণকে কোন বিরক্ত না করে নির্বণের পোশাক। খাবার রুমে রেখে দিয়েছে। অফিসের ফাইল, নতুন প্রজেক্টের অনেক কাজ করে এগিয়ে রেখেছে৷
আসলে নিয়তি রাতে আর ঘুমাতে পারেনি৷ মাথায় হাজারটা চিন্তা চেপে বসেছে। চিন্তাগুলো দূরে করতেই নিয়তি এসব কাজ করেছে।
নির্বণ ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিচে চলে আসে। নিচে এসে দেখে পাই নির্বণের মা সকলের সাথে হুইলচেয়ার বসে গল্প করে যাচ্ছে। নির্বণ তার মাকে দেখে খুব খুশি। সকল সার্ভেন্ট মাকে ঘিরে বসে আছে। মার কাছ থেকে রুপকথার গল্প শুনে যাচ্ছে। নির্বণ তার মাকে এভাবে দেখে ফাইলগুলো ট্রি টেবিলে রেখে এক প্রকার দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে।
— নির্বণ টলমল চোখে বলে উঠে, ” মা আমি কতটা হ্যাপি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ তোমাকে ডাইনিং রুমে দেখে আমি খুব খুশি। আমার অনুভুতি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।”
— মা ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে উঠে, ” আমিও খুব খুশি৷ এসব কিছু শুধু নিয়তির জন্য সম্ভব হয়েছে৷ নিয়তির মতো লক্ষী বউমা থাকলে আমার কি লাগে?”
— মায়ের দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” হুম মা তুমি একদম ঠিক বলেছো। নিয়তি আমাদের সবাইকে একটা নতুন জীবন দান করেছে। আমি তার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না৷ ”
— সার্ভেন্টরা বলে উঠে, ” আমাদের ছোট ম্যামের হাতে জাদু আছে। আবার আমাদের এক করে দিয়েছে৷ আমাদের মুখের হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। ছোট ম্যামের কাছে আমরা সারাজীবন ঋণি থাকব৷ ”
— নিয়তি সবার উদ্দেশ্য বলে উঠে, ” মা তো আমার মা৷ আমি যা করেছি আমার মায়ের জন্য৷ আমিও চাই মা তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। তিনি যেন এই সংসারকে আবার আলোকিত করতে পারে৷”
— নির্বণের মা নিয়তির হাত ধরে বলে উঠে, ” এটা এখন থেকে তোমার সংসার৷ তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে এই সংসারকে আলোকিত করবে৷”
নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? সে তো আর এই বাড়িতে থাকতে আসেনি৷ সে এসেছে এই বাড়িতে চুক্তি হিসেবে৷ ধরতে গেলে একবার মাইনে করা কর্মচারী। নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ নিয়তিকে ইশারা করতে হ্যাঁ বলতে বলে।
— কি হলো আমার সোনা মায়ের? আমি যতদূর জানি আমার সোনা মা কিছুতেই ভয় পায় না৷ আজ সেই সোনা মায়ের মুখে ভয়ের ছাপ ছড়িয়ে পড়েছে৷
— আসলে মা.. আপনারা আমাকে এত ভালোবাসা দিবেন৷ আমি জীবনে কখনো ভাবতে পারিনি৷ আমি কি এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
— নির্বণের কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি সব সময় মায়ের সাথে সাথে থাকবে৷ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না৷”
— হ্যাঁ ছোট ম্যাম। আপনাকে আজ থেকে কিছুই করতে হবে না৷ আমরা সব কাজ করে দিব৷ কখন কি করতে হবে শুধু আমাদের বলবেন? আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করব৷
— নির্বণ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ” আমার লেট হয়ে যাচ্ছে৷ তোমরা সকলে মিলে আড্ডা দাও৷ সকলের মুখে যেন হাসি থাকে৷”
_________
নিয়তি নির্বণকে ফলো করতে করতে সেও অফিসে চলে আসে ছদ্মবেশ নিয়ে৷ নিয়তি সবাইকে বলে এসেছে তার বাহিরে দরকার আছে। নির্বণের গাড়ি গেইট দিয়ে ঢুকার সময়ই নির্বণ খেয়াল করে গেইটের দারোয়ানের চোখে জল। নির্বন গাড়ি সেখানেই থামিয়ে দারোয়ানের কাছে যায়৷
— দারোয়ান চেখের জল মুছে, “নমস্কার স্যার৷ প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিবেন৷ গতকাল রাতে আমার ছেলে আসতে পারেনি৷ প্লিজ তাকে চাকরি থেকে বের করে দিবেন না৷” হাত জোর করে।
— নির্বণ দারেয়ানের হাত ধরে, ” কাকা আমি সেজন্য নামিনি৷ মানুষের জীবনে সমস্যা থাকতেই পারে। আর একদিন গেইটে না থাকলে কোন সমস্যা হবে না৷ কারণ ভিতরে লোক আছে। ”
— স্যার আপনার মনটা অনেক বড়৷ আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব আমার জানা নেই?
— আচ্ছা কাকা আপনি বসে চোখে জল মুছছিলেন কেন? কি হয়েছে আপনার?
— না স্যার৷ আপনি ভুল ভাবছেন৷ চোখে কোন একটা পড়েছিল৷ সেজন্য এমন হয়েছে৷ আমি একদম ঠিক আছি৷
— কাকা আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চান? আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেন না৷ আমি কিন্তু খুব রেগে যাব৷
— দারোয়ান কাকা কেঁদে বলে উঠে, ” স্যার আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে কোন টাকা নেই৷ এত টাকা পাবো কোথায়? ”
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কাকা চিন্তা করতে হবে না৷ জাস্ট অ্যা মিনিট। ”
নির্বণ গাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এনে দারোয়ান কাকার হাতে খুব যত্নসহকারে তুলে দেয়৷
— কাকা আজ আমাকে আর কাজ করতে হবে না৷ এই টাকা নিয়ে কিছু কিনা কাটা করে ফেলেন৷ কাল আমার মিটিং আছে আমি বিজি থাকব৷ আগামী পরশু আমার সাথে দেখা করবেন৷ আমি টাকা দিয়ে দিব৷
নির্বণ আর কিছু না বলে গাড়ি পার্কিং করে কেবিনে চলে যায়৷ নিয়তি বুঝতে পারে নির্বণ শুধু মেয়েদের ইনগোর করে। মেয়েদের সহ্য করতে পারে না৷ দারোয়ান কাকাকে কত সুন্দর ভাবে টাকা হাতে বুঝিয়ে দিল। আর আামকে টাকা ছুঁড়ে মেরে দিয়েছেন৷ নিশ্চয় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে৷ কি রহস্য লুকিয়ে আছে, আমি বের করেই ছাড়ব?
______________
— “নিয়তি তুমি আমার আলমারির সামনে কি করছো?” পিছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠে নির্বণ।
নিয়তি নির্বণের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায়। নিয়তি কিছু জানার জন্য আলমারি খোলার চেষ্টা করছিল।
— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” কই কিছু না তো। এমনি রুম পরিষ্কার করছিলাম।”
— নির্বণ নিয়তির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে, ” রুম পরিষ্কার করছিলে তাহলে তোমার হাতে কোন টিস্যু বা নেকরা নেই। হাউ ফানি!”
— নিয়তি শাড়ির আঁচল হাতে নিয়ে, ” এইতো আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে পরিষ্কার করছিলাম৷”
নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির একদম কাছে চলে আসে। নিয়তি নির্বণকে এত কাছে দেখে আলমারির সাথে আরও লেগে যায়৷
— নির্বণ নিয়তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি.. তোমাকে বলা হয়েছিল তুমি আমার এই আলমারিতে হাত দিবে না৷ ”
নির্বণের গরম নিঃশ্বাস নিয়তির ঘাড়ে পড়ছে৷ নিয়তি একটা নেশায় চলে যাচ্ছে৷ খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। চোখ মেলাতে ভয় লাগছে। তবুও অনেক চেষ্টায় আধো চোখে তাকায়৷
— নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে, প্লিজ স্যার দূরে সরে দাঁড়ান৷ আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে৷”
— আচ্চা নিয়তি সত্যি করে বল কি করছিলে?
— আসলে.. স্যার আপনার বিষয়ে কিছু জানার চেষ্টা করছিলাম। আপনি কি এমন লুকিয়ে রেখেছেন এখানে, যা কাউকে হাত লাগাতে দেন না?
— নির্বণ নিয়তির দুই বাহু চেপে ধরে, ” নিয়তি তুমি কেন বার বার আমার বিষয় জানার চেষ্টা করছো? জেনে কি করবে তুমি? ফিরিয়ে দিতে পারবে কি সেই আগের স্বাভাবিক জীবন?”
নির্বণ চোখ বন্ধু করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। নির্বণ রুম থেকে চলে যেতে নিলে নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়ায়৷
নিয়তি নির্বণকে যা বলে উঠে তা শুনে নির্বণ নিয়তির উপর কিছু একটা ভরসা হয়৷ তবুও নিয়তিকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷
চলবে……
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১০
#অধির_রায়
— নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে” আপনি যদি কাউকে মন থেকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আজ সব কিছু বলবে।”
— আমি কাউকে মন থেকে ভালোবাসি কিনা সেটা জেনে তোমার কি? তুমি আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও৷ আমাকে রাগিয়ে তুল না৷
— আমাকে একটা কথা বলবেন? আপনি রাগ করা ছাড়া আর কি করতে পারেন? মাঝে মাঝে হাসতেও তো পারেন৷
— মিস নিয়তি তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো৷ আমার পার্সনাল লাইফে ঢুকার চেষ্টা করবে না৷
— আমি ঢুকতে চাই না৷ আমি আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করতে চাই৷
— সত্যি তাই! আমি ডিপ্রেশনে কেন আছি তুমি জানো? আমার লাইফ নিয়ে তোমায় মাথা ঘামাতে হবে না৷ আমার জীবনে এক সময় একজন ছিল।
— নির্বণ পিছনে ফিরে ওয়াসরুমে দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি বলে উঠে, ” যদি বলি ছোঁয়া আপনার এমন লাইফের জন্য দায়ী৷ তখন কি করবেন?”
— নির্বণ ক্ষেপে নিয়তির হাত ধরে বলে উঠে, ” আমার সামনে ছোঁয়া নামটাও নিবে না৷ আমি ছোঁয়া নাম সহ্য করতে পারি না৷ ”
নির্বণ নিয়তির হাত খুব জোড়ে চেপে ধরে৷ ব্যথায় নিয়তির চোখে জল চলে আসে৷ টলমল চোখে নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার লাগছে৷”
— নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি স্বরে, ” সরি! আমার খেয়াল ছিল না৷”
— ইট’স ওকে। স্যার আমি যতটুকু জানি আপনি ছোঁয়াকে ভালোবাসেন৷ তাহলে তাকে ঘৃণা করার কথা কোথা থেকে আসছে?
— আমি এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে কেউ না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে একটা দুঃস্বপ্ন ছিল।
— ছোঁয়া আপনার জীবনে এখনো রয়েছে। আপনি তাকে এখনো ভুলতে পারেননি৷
— নির্বণ ভাঙা গলায়, ” হ্যাঁ আমি ছোঁয়াকে ভুলতে পারিনি৷ তার সেই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো এখানো কানে বাজে।”
নিয়তি নির্বণের হাত ধরে নির্বণকে বিছানা বসতে বলে৷ নির্বণ নিয়তির কথামতো বিছানায় বসে পড়ে। নিয়তি এক গ্লাস জল নির্বণের দিকে এগিয়ে দেয়৷
— জলটা খেয়ে নেন৷ ভালো লাগবে৷ জল অনেক সময় মানুষের জীবনে শক্তি এবং সাহস জোয়ায়৷
নির্বণ জল খাওয়ার পর নিজের কোর্টটা খুলে ফেলে৷ অফিস থেকে এসে এখনো চেঞ্জ করা হয়নি৷ ট্রাই টাও খুলে রেখে দেয়৷
— নিয়তি নির্বণের পাশে বসে নির্বণের হাত ধরে, “স্যার আমি জানি আমি আপনার কাছে অন্যায় দাবী করছি৷ তবুও বলব মনের ভেতরে কষ্ট লুকিয়ে রাখতে নেই৷ আপনি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন৷ আমি আপনাকে সাহায্য করবে ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যেতে৷”
— অনেক দেরি হয়ে গেছে নিয়তি৷ ছোঁয়া আমার জীবনে আর নেই৷ সে ফিরে আসতে চাইলেও আমি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব না৷ ছোঁয়াকে অন্ধের মতো ভালোবাসতাম৷”
— আপনার সাথে ছোঁয়ার কি হয়েছিল? যার জন্য ছোঁয়া সোনা ছেড়ে পিতল বেছে নিল।
________
নির্বণ বলতে শুরু করে….
নির্বণ কেবিনে বসে অফিসের কাজ করছিল৷ তখন ছোঁয়া নির্বণের কেবিনে প্রবেশ করে।
— ছোঁয়া নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” আর কত কাজ করবে৷ চলনা একটু ঘুরে আসি৷ ”
— নির্বণ ছোঁয়ার হাত টান নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে, ” এই তো হয়ে এসেছে। জাস্ট অ্যা টু মিনিট। ”
— আহ্লাদীর স্বরে বলে উঠে, “রেখে দাও না এসব ফাইল। আগামীকাল চেক করে নিবে৷”
— রেখে দিতে পারি একটা শর্তে। যদি তুমি আমায়.. চোখের ব্রু নাচাতে থাকে৷
— ছোঁয়া চোখে মুখে হাত রেখে লজ্জা পেয়ে বলে উঠে, ” তুমি এত দুষ্টু কেন? সত্যি তুমি একটা অসভ্য।”
— নির্বণ ছোঁয়ার হাত সরিয়ে নাকে নাক ঘেষে, ” আমি শুধু তোমার প্রেমে অসভ্য। প্লিজ একটা মাত্র কিস৷ আর কিছু না৷
— চোখ বন্ধ করতে হবে৷
ছোঁয়ার কথা মতো নির্বণ চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া নির্বণের গালে আলতো করে একটা কিস দেয়৷ কিস দিয়েই নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।
— তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করলে না৷ আমি শোধসহ আসল তুলে নিব৷
— তোমার কথা শেষ হলে এখন যাওয়া যাক।
ছোঁয়া আর নির্বণ সেদিন অনেক ঘুরাঘুরি করে। এভাবে তাদের প্রেম আরও গভীর হতে থাকে।
একদিন নির্বণ তার মা বাবাকে নিয়ে বিয়ের কথা বলে৷ সে ছোঁয়াকে বিয়ে করতে চাই৷ বিয়ের কথা শুনে নির্বণের মা বাবা খুব খুশি৷
নির্বণ ছোঁয়াকে “নর্থ ক্যারোলাইনার” হোটেলে নিয়ে আসে। অনেক প্রকার গল্পে তারা মেতে উঠে৷ নির্বণ ছোঁয়ার দিকে অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।
— ছোঁয়া নির্বণের চোখে ফুঁ দিয়ে, ” এভাবে তাকিয়ে থাকবে৷ আমাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে৷”
— ওকে চল।
ছোঁয়াকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই নির্বণ ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়৷
— এই কি করছ? সকলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে?
— ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে বলে উঠে, ” আমি তো অন্য কাউকে কোলে তুলিনি৷ আমি আমার পাখিকে কোলে তুলে নিয়েছি৷”
— লজ্জা মুখে বলে উঠে, ” যা অসভ্য। ভরা লোকসমাজে আমার তো সম্মান আছে৷”
নির্বণ কোন কথা না বলে ছাঁদের দিকে হাঁটতে থাকে৷ ছাঁদে নিয়ে এসে ছোঁয়াকে নামিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতে রিং নিয়ে নির্বণ বিয়ের প্রপোজাল দেয়৷
ছোঁয়া হিরার রিং দেখে সাথে সাথে নিজের হাতে পড়ে নেয়৷ আর নির্বণকে একটা আলতো করে লিপ কিস দেয়৷ নির্বণ ভেবে নেয় ছোঁয়া তার প্রপোজালে খুশি৷
— নির্বণ মুখে হাসি রেখা নিয়ে বলে উঠে, ” তাহলে আমরা আগামী সানডে বিয়ে করে নিব৷ আমি মা বাবাকে সব কিছুর আয়োজন করতে বলি৷”
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি এখন বিয়ে করতে প্রস্তত নয়৷ প্লিজ আমাকে বিয়েতে জোর করবে না৷”
ছোঁয়া এক ঝাঁক বিরক্তি নিয়ে চলে আসে৷ নির্বণ আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। এভাবে কেটে যায় প্রায় একমাস৷ কিন্তু ছোঁয়া নির্বণের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি৷ নির্বণ ফোন দিলে ছোঁয়ার ফোন সুইচ অফ পাই৷ ছোঁয়া যে বাসার ঠিকানা দিয়েছে সেটা ছোঁয়ার বাসা নয়৷
________
নির্বণ মন খারাপ করে ছাঁদে বসে বসে গিটারে টুং টুং শব্দ তুলার চেষ্টা করছে। ছোঁয়ার কোন বিপদ হয়নি তো। ছোঁয়া নিখোঁজ কিভাবে হতে পারে৷ তখন নির্বণের ফোন বেজে উঠে। ছোঁয়ার নাম্বার দেখে নির্বণের মৃত দেহে প্রাণ ফিরে আসে৷
— ছোঁয়া আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে৷ তুমি ঠিক আছো তো৷ এতদিন কোথায় ছিলে।
— অপর পাশ থেকে ছোঁয়া বলে উঠে, ” আমার সাথে বৃষ্টি বাড়ির ধামের ধারে ব্রিজে দেখা কর৷”
— তুমি সেখানে কি করছো? ওই জায়গায় কিভাবে পৌঁছলে।
ছোঁয়া কোন রিপ্লাই না দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে রাখে৷ ছোঁয়া বিপদে আছে জেনে নির্বণ তাড়াতাড়ি করে বৃষ্টি বাড়ি দামের ধারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷
সন্ধ্যার দিকে নির্বণ ব্রীজে পৌঁছে যায়। পাহাড়ি এলাকা সেজন্য সন্ধ্যায় কোন লোকজন নেই৷ একদম জনশূন্য জায়গা৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একটা ছেলের ঘাঁ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।
নির্বণ রেগে তাদের দিকে তেড়ে আসতেই ছোঁয়া সামনে এসে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নির্বণ ছোঁয়ার এমন ব্যবহার দেখে খুবই আশ্চর্য হয়৷
— ছোঁয়া বলে উঠে, ” তোর মতো দুইটার ব্যবসীকে আমি বিয়ে করব৷ তোকে তো সাথে রেখেছিলাম নিজেকে প্রটেক্ট করতে।” আরও একটা কারণ আছে, ” সেটা হলো আমি গরিব৷ তাই তোর টাকা দিয়ে চলতে হয়েছে। আমার জীবনে তোর দিন শেষ এখন তুই যেতে পারিস৷ ”
— নির্বণ কান্না করে দিয়ে, ” প্লিজ ছোঁয়া আমাকে ছেড়ে দিও না৷ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি৷”
ছোঁয়ার সামনে হাতজোড় করে ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে পড়ে।
— ছোয়াঁ অচেনা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে, ” জান এই কালপ্যাট বেঁচে থাকলে আমাদের জীবনে সমস্যা হতে পারে৷ চল একে মেরে ফেলা যাক। ”
— ইয়া সিউর৷
দু’জনে এক সাথে নির্বণের বুকে লাথি মারে। যার ফলে নির্বণ ব্রীজ থেকে পড়ে যায়৷ কিন্তু নির্বণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ব্রীজের পাড় ধরে৷
— প্লিজ ছোঁয়া আমাকে মেরে না৷ আমি ছাড়া আমার মা বাবার কেউ নেই৷ ছোঁয়া আমি সাতার জানি না৷
— তুই বেঁচে থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি করবি৷ তোকে বাঁচিয়ে রাখবো না৷
ছোঁয়া নির্বণের হাতে লাথি মারতে থাকে৷ নির্বণ চিৎকার করতে থাকে৷ তবুও ব্রীজ পাড় থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছে না৷ হাত থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। এক সময় নির্বণ সহ্য করতে না পেরে ব্রীজের উপর থেকে পড়ে যায়।
চলবে……