শুরুটা_অন্যরকম #পর্ব_১১,১২

0
394

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১১,১২
#অধির_রায়
১১

নির্বণ নিজেকে রক্ষা করতে পারল না৷ ছোঁয়ার কাছে শেষে হার মানতে হলো। নির্বণের চোখে শুধু তার মা বাবার ছবি ভেসে উঠছে৷ নির্বণ জলে হাবুডুবু খাচ্ছে।নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ ধীরে ধীরে জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টি বাড়ির জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল৷ হঠাৎ করে জলে পড়ার বিকট শব্দ পেয়ে জেলেরা নৌকা ঘুরিয়ে নির্বণের দিকে আসে৷ তারাই নির্বণকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে।

নির্বণ আর কিছু বলতে পারল না৷ নির্বণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। নির্বণ নিয়তির হাত চেপে রেখে কান্না করে করছে ৷ নির্বণের সাথে নিয়তিও কান্না করে করছে ৷ একটা মেয়ে কিভাবে জীবনটা শেষ করে দিল?

— নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” আচ্ছা স্যার ছোঁয়ার সাথে আপনার পরিচয় হয় কিভাবে? কিভাবে তার প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন?”

নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” আজ বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই৷ আমি আজ তোমাকে সব বলব।”

_________

–“আজ রাতে তুমি আর আমি এক থাকে থাকব। অনেক মজা হবে সুইটহার্ট। তোমাকে অনেক সুখ দিব।” ছোঁয়ার বুকের ওড়না টান দিয়ে দুইটা বখাটে ছেলে বসে উঠে।

— ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ দাদা! আমার সাথে এমন করবেন না৷ আমি তো আপনাদের বোনের মতো।”

— প্রথমজন অট্টাহাসি দিয়ে বলে উঠে, ” দুনিয়ার সব মেয়ে আমাদের বোন হলে আমাদের চাহিদা কে মেটাবে। ”

— করুন স্বরে হাত জোর করে বলে উঠে, “আমি আপনাদের পায়ে পড়ি৷ আমার সম্মান নষ্ট করবেন না৷” নারীর সম্মান নারীর কাছে সবচেয়ে দামী।

— “এই পল্টু আমার সুইট বেবির মুখটা বেঁধে গাড়িতে তুল। আজ আমাকে সোহাগ করবে, আমার এই সুইট বেবি৷” ছোঁয়ার গালে হাত দিয়ে বলে উঠে।

পল্টু ছোঁয়ার হাত পিছন দিক থেকে চেপে ধরে। বখাটের প্রথম ছেলে ছোঁয়ার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ পল্টু ছোঁয়ার ওড়না নিয়ে পিছন দিক থেকে ছোঁয়ার হাত বেঁধে ফেলে। ঠিক তখনই রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছিল নির্বণ চৌধুরী।

নির্বণ গাড়ির ব্রেক কষে সিচুয়েশনে বুঝার জন্য৷ ল্যামপোস্টের আলোতে দেখা যাচ্ছে দুইজন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে ইভটিজিং করছে৷ নির্বণ সময় নষ্ট না করে হকি খেলার স্টিক নিয়ে একটা ছেলেকে পিছন থেকে মাথায় আঘাত করে। ছেলেটি মাটিতে থুবড়ে পড়ে৷

— নির্বণের হাতে হকি স্টিক দেখে পল্টু বলে উঠে, ” ও হিরো, এখানে হিরোগিরি দেখাতে এসেছিস৷”

— নির্বণ হাতের তলায় হকি স্টিক আপ ডাউন করতে করতে বলে উঠে, ” এই মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে ভালো ভালোই চলে যা৷ তাহলে তোর অবস্থা তোর সঙ্গীর মতো হবে৷ ”

— পল্টু নিজের পকেট থেকে গুলি বের করে,” তুই আমার পথ থেকে সরে দাঁড়া। আমার পথে বাঁধা দিতে আসলে তোকে স্বর্গে পাঠিয়ে দিব৷”

— নির্বণ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমার কোন ক্ষতি করবেন না৷ আমি চলে যাচ্ছি৷ আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন৷”

— চালাকি করার চেষ্টা করবি না গুলি চালিয়ে দিব৷

নির্বণ পিছনে ঘুরে পায়ের পাতার উপর ভর করে রাউন্ড করেই পল্টুর হাতে হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে৷ যার ফলে পল্টুর গুলি নিচে পড়ে যায়৷ নির্বণ পল্টুকে হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে আহত করে। ছোঁয়াকে নিয়ে সেখান থেকে তারাতাড়ি কেটে পড়ে।

— “এই মেয়ে রাত দু’টার পর তোমার বাহিরে কি কাজ থাকতে পারে? নাম কি তোমার?” ক্ষেপে বলে উঠে।

— কান্না করে দিয়ে, ” আমি ছোঁয়া। আমার মা অসুস্থ। উনার জন্য মেডিসিন নিয়ে ফিরছিলাম৷ তখন তারা আমার পথ আটকায়৷ ”
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার বাসা এটাই আমি চলে যেতে পারব৷

ছোঁয়া চলে যায় তার বাসায়। নির্বণ ফিরে এসে আর ঘুমাতে পারেনা৷ চোখের সামনে ছোঁয়ার মায়াবী মুখটা ভেসে উঠে। এভাবে কিছুদিন পার হয়ে যায়৷ নির্বণ প্রায় ছোঁয়াকে ভুলে গেছে৷ হঠাৎ করেই ক্যাফেতে ছোঁয়ার সাথে নির্বণে দেখা৷ সেদিন নির্বণ ছোঁয়ার সাথে অনেক সময় কাটায়৷ এরপর থেকে চিরকুট লেখা। ফোনে কথা বলা৷ ধীরে ধীরে ছোঁয়ার ভালোবাসায় আটকে যায় নির্বণ।
_________

নির্বণ আর কিছু বলতে পারে না৷ কান্না করতে থাকে৷ আজ নিজেকে নিজের কাছে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। নির্বণ আর কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি নির্বণকে বিরক্ত না করে নিয়তি ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।

আঁধার কেটে নিয়ে আসে দিনের আলো। মানুষের মনে জাগিয়ে তুলে বেঁচে থাকার নতুন ইচ্ছা৷ সূর্য্যি মামার সকালের সোনালী রোদ্দুরের আলো থ্রাই গ্লাস বেঁধ করে নির্বণের চোখে পড়ছে৷ নির্বণ বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে যায়৷ নির্বণ ঘুম থেকে উঠে দেখে নিয়তি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে।

— নিয়তির মুখে জল ছুঁড়ে মেরে, ” ভোরের প্রহর শেষ হতে চলছে মহারানী। উঠে নিজের কাজে যাও৷ ”

— ঘুম ঘুম নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে সুরু গলায় বলে উঠে, ” স্যার আপনি আমার গায়ে জল ছিঁড়ে মারলেন কেন? আমাকে ডাক দিলেই তো পারতেন৷ ”

— ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে, ” যে লোক মরার মতো ঘুমিয়ে থাকে তাকে এভাবেই জাগিয়ে তুলতে হয়৷”

নিয়তি চোখ বড় করে তাকাতেই নির্বণ ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” সালা খবিশ, তুই মানুষ হবি না৷ ছোঁয়ার তোর সাথে ঠিক কাজই করেছে। রাতে কত সুন্দর কথা বলল। এখনই গোমড়া মুখু হয়ে গেছে৷ মনে হয় জন্মের সময় মুখে নিম পাতার রস দিয়েছিল।
________

— মা আপনাকে আজ হাঁটতে হবে৷ এভাবে বসে থাকলে আর চলবে না৷

— অবাক হয়ে, ” কি আমি হাঁটতে পারব! ” আমার দ্বারা সম্ভব নয়৷

— কেন সম্ভব নয়? আপনি জানেন না ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়৷

— ইচ্ছা তো করে আবার সকলের সাথে হাঁটতে ঘুরে বেড়াতে। প্রকৃতির দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে।

— আপনি আজ বাহিরে যাবেন৷ আজ আপনাকে বাগানে ঘুরতে নিয়ে যাব৷

— আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” তুমি সত্যি বলছো! আমাকে বাহিরে নিয়ে যাবে৷ আমি সেই অনেকদিন থেকে বাহিরে বের হয়না৷ আমাকে একটু বাহিরে নিয়ে যাও৷”

— হুম বাহিরে নিয়ে যাব৷ তবে আমি নয়৷

— মুখটা ফ্যাকাশে করে বলে উঠে, ” তাহলে কে নিয়ে যাবে? আমার তাহলে আর যাওয়া হবে না৷ ”

— আপনাকে কেউ বাহিরে নিয়ে যাবে না৷ আপনি নিজে থেকে বাহিরে যাবেন৷

— কি আমি নিজে থেকে বাহিরে যাব! আর ইউ ক্রেজি? তুমি কি বলছো তা তুমি কি জানো?

— আমি পাগল নয়৷ আর আমি যা বলছি আমার আত্নবিশ্বাস থেকেই বলছি৷ আপনি ঠিক পারবেন, নিজ পায়ে হেঁটে বাহিরে যেতে। এখন ওঠেন তো৷ আর বসে থাকতে হবে না৷

— প্লিজ নিয়তি আমাকে এত বড় শাস্তি দিও না! আমার খুব ভয় লাগছে। যদি আমি পড়ে যায়৷ আমার তো এক পায়ের এখনো কোন শক্তি নেই৷

— “কে বলেছে শক্তি নেই? এইতো কত সুন্দর করে আপনি পা নাড়াতে পারছেন৷” নির্বণের মায়ের পা আপ ডাউন করে।
আমাকে ধরে ওঠার চেষ্টা করেন৷

নিয়তির হাত ধরে ওঠার চেষ্টা করেন। বার বার ওঠতে নিলেও পড়ে যাচ্ছেন৷ নিয়তির হাত শক্ত করে ধরে তিনি অবশেষে ওঠতে সক্ষম হন৷

— এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠেন, “আমি আর বাহিরে যেতে চায় না৷ আমি এখানেই ঠিক আছি৷”

— আপনি একদম ঠিক নেই৷ আমাকে ভর করে হাঁটার চেষ্টা করেন৷ আমি কোন কথা শুনতে চাই না৷

— পা ফেলব। আমি কি পারব?

— হুম পারবেন৷ আর হ্যাঁ পায়ে প্রচুর পরিমাণ ভর দেওয়ার চেষ্টা করবেন৷ মনে রাখবেন আপনার সমস্ত ভর আপনার পায়ে শক্তি ফিরিয়ে আনবে।

নিয়তির কাঁধের উপর এক হাত রেখে নিয়তিকে ভর করে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছেন৷ নিয়তির অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিয়তি সেই কষ্টকে ভালোবাসার কাছে উৎসর্গ করে দিয়েছে। ডাইনিং রুমের মেইন দরজার কাছে আসতেই নির্বণের মা পা উল্টোভাবে ফেলার ফলে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ দৌড়ে এসে তাদের ধরে ফেলে।

— নির্বণ চোঝ রাঙিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” একা পারবে না তাও একা করতে চাও কেন? মানুষের কাছে মহান সাজতে চাও৷ আজ যদি তোমরা পড়ে যেতে তাহলে কি হত?”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে স্যার আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি ঠিক৷ প্লিজ ক্ষমা করে দেন৷ ”

— নির্বণের মা অবাক হয়ে বলে উঠে, ” নিয়তির তোমার মাথা ঠিক আছে৷ তুমি কাকে স্যার বলছো?”

নিয়তি জিহ্বায় কামড় দেয়৷ নির্বণও নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ভুল জায়গায় ভুল কিছু বলে ফেললে কেমন সিচুয়েশনে পড়তে হয় নিয়তি আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷

— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” আসলে মা নিয়তি আগে আমাদের অফিসে কাজ করত। সেখান থেকে আমাকে স্যার বলে। আসলে তার কাজের এক্টিভিটি দেখে আমি..”

— আর লজ্জা পেতে হবে না৷ আমি বুঝতে পারছি৷ আমাকে একটু বাগানে দিয়ে আয়৷

— ওকে মা৷

— নির্বণ তার মাকে পাঁজাকোলা নিতেই নিয়তি বলে উঠে, ” না না ভুলেও এমন কাজ করবেন না৷ মাকে হাঁটাতে হবে৷”

— দেখতে পাচ্ছো তো মায়ের কষ্ট হচ্ছে। মা হাঁটতে পারছে না৷ কেন জিত ধরে বসে আস?

— আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। মাকে এখন হাঁটাতে হবে৷ মাকে এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে হবে। মাকে হাঁটতে শিখতে হবে। আপনি বরং মাকে ধরে হাঁটানো শেখান৷

নির্বণ নিয়তির কথা বুঝতে পেরে তার মাকে পাঁজাকোলা থেকে নামিয়ে ধরে ধরে বাগানে নিয়ে আসে৷ মাকে দোলনায় বসিয়ে দেয়৷

নির্বণের মা অনেকদিন পর বাহিরে আসতে পেরে অনেক খুশি৷ চোখ বন্ধ করে সবকিছু উপভোগ করছে। আজ সামডে সেজন্য নির্বণ তার মায়ের পাশে বসে আছে। আজ অফিস বন্ধ।

— নির্বণ তার মাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে,” মা আমি আর কিছু চাইনা৷ তুমি তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও৷ আমি এটাই চাই৷”

নির্বণের মা কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়৷ ডাক্তার তো বলেছে তিনি আর মাত্র ৩০ দিন বাঁচবে। দেখতে দেখতে ১২ দিন কেটে গেছে। নির্বণ তার মায়ের ফ্যাকাসে মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে।

— মাকে সাহস জুগিয়ে বলে উঠে, ” মা ডোন্ট ওরি। তোমার কিছু হবে না৷ ডাক্তারের তো সব কথা সত্যি হয় না৷ অনেক সময় তো ভুল হয়৷”

— নিয়তি নির্বণের পায়ের পাশে বসে বলে উঠে, ” মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ সৃষ্টি কর্তা আমাদের সাথে কোন অন্যায় হতে দিবেন না৷ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিনটা জিনিসে আমাদের কোন হাত নেই৷ আপনাকে আমি আজ হসপিটালে নিয়ে যাব৷ কোন চিন্তা করতে হবে না৷”

এমন সময় বাগানে অরিন নামের একটা সার্ভেন্ট আসে৷ এসেই নিয়তিকে বলে উঠে, ” ছোট ম্যাম আপনি যেগুলো কাজ দিয়েছিলেন সব কলমপ্লেইন।”

— নির্বণ অবাক হয়ে, ” হোয়াট ইস কলমপ্লেইন৷”

নিয়তিও বুঝতে পারছে না কলমপ্লেইন কি? পরে বুঝতে পারল সে সব কাজ শেষ করেছে৷

— নিয়তিকে অরিনকে কাছে টেনে, “কলমপ্লেইন না৷ কমপ্লিট হবে।”

— ছোট ম্যাম ওটা কলমপ্লেইন হবে৷ আমি কলমপ্লেইনই বলব।

অরিনের কথা শুনে উপস্থিতি সবাই হেঁসে উঠে৷

চলবে…..

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১২
#অধির_রায়

দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে নিয়তির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্বণ৷ নিয়তি নির্বণের তাকানি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷ ড্যাব ড্যাব করে শুধু তাকিয়েই থাকেনি চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে রেখেছে৷

— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার কিছু বলবেন? এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

— মুচকি হেঁসে, ” মিস নিয়তি তুমি নিজেকে ওভার স্মার্ট ভাবো। কিন্তু তুমি ততটাপ স্মার্ট নয়।”

— প্লিজ স্যার হেয়ালি না করে কি বলতে চান? ধাঁধা আকারে কিছু আমার দিকে ছুঁড়ে মারলে আমি তার সমাধান বের করতে পারি না৷

— আজ মাকে বাহিরে বের করার খুব দরকার ছিল। ডাক্তারের কাছে নেওয়া অব্ধি ঠিক আছে৷

— স্যার সেই সকালের বিষয় আপনি এখনো ভুলেননি। মাকে হাঁটানোর জন্য আমি বাহিরে নিয়ে গেছি৷

— হ্যাঁ আমি মানলাম তুমি মাকে হাঁটানোর জন্য বাহিরে নিয়ে গেছো। “তাহলে মাকে ফেলে দিচ্ছে কেন? বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে। তাদের ডাক দিলে তারা মনের সুখে কাজ করে দিত।” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।

— স্যার এখানে রাগের কি হলো? আমি ভেবেছিলাম মাকে আমি একাই নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু সদর দরজায় কিছু একটার সাথে আটকে পড়ে যাচ্ছিলাম তার জন্য..

— ব্যাস৷ আমি তোমার মুখ থেকে কোন এক্সকিউজ শুনতে চাইনি৷ তোমাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলেও তুমি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে চাও না৷ তুমি ভেবে নিয়েছো তুমি একাই সব করে মহান সাজবে৷

— নিয়তি মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আসলে স্যার আমি এমনটা কখনো চাইনি৷ আমার নিজের মা নেই৷ আমি উনাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসি৷”

— ন্যাকা কান্না বন্ধ কর৷ কথায় কথায় চোখে জল আসে কোথা থেকে? আবার কিনা নিজেই বলে উঠে, ” চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে। ”

— স্যার আমি সত্যি বলছি আমি মার কোন ক্ষতি চাইনা৷ আমিও চাই মা আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠুক। মা সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে৷

— নিয়তি আমি তোমাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, “আমার মা আমার কাছে সব৷ যদি মায়ের যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”

— স্যার মায়ের কিছু হবে না৷ ডাক্তার তো বলেছে মা এখন বিপদমুক্ত। মায়ের বিপি, হার্ট, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷

— হ্যাঁ আমিও সেটা জানি৷ আর হ্যাঁ তোমাকে কতবার বলেছি মা সামনে আমাকে স্যার ডাকবে না৷ আজ থেকে কোথাও আমাকে স্যার ডাকবে না৷

— “ওকে স্যার। ” মাথা নিচু করে বলে উঠে।

— আবার স্যার বলছো। তোমাকে প্রথম দিন বলা হয়েছে আমাকে স্যার বলা বন্ধ করবে৷

— হাত কাচুমাচু করে ঠিক আছে। আর স্যার বলবো না৷ এখন প্লিজ আমার উপর রেগে থাকবেন না৷

— মনে থাকে যেন৷ আমি মাকে দেখে আসি মা ঘুমিয়ে আছে কিনা৷

— ওকে স্যার৷

— আবার স্যার।

নির্বণ তেড়ে নিয়তির কাছে যেতেই পা স্লিপ করে নিয়তিকে নিয়ে বিছানায় পড়ে যায়। নিয়তি স্নান করার পর ভেজা চুল শুকিয়েছে সেখানে। ভেজা চুলের জল ফ্লোরে পড়ে ছিল৷ নির্বণ অস্বাভাবিকভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকা জলে পা রাখতেই স্লিপ খায়৷

নির্বণ পড়ার সময় নিয়তি যেন ব্যথা না পায় সেজন্য নির্বণ হাত বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু নির্বণের ঠোঁট জোড়া নিয়তির ঠোঁটে লেগে যায়৷
__________

— “মিস নিয়তি তুমি নিচে বিছানা করছো কেন?” ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে

— আমি খেয়াল করেছি আপনি সোফায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না৷ সেজন্য আজ থেকে আমি মাটিতেই থাকব৷ আপনি বিছানায় থাকবেন৷

— এই মেয়ে পাগল হলে নাকি৷ মাটিতে শুয়ে নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাও?

— কিছুই না স্যার৷ আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব সারাজীবন। আপনার জন্য আজ আমার বাবা সুস্থ। এর থেকে বেশি কিছু চাইনা৷

— ওকে ফাইন। তুমি ফ্লোরে শুয়ে ঠান্ডা লাগাবে আর সেই দায় বইতে হবে আমায়৷ বলবে আমি কোন খেয়াল রাখি না৷

— স্যার আপনি ভুল ভাবছেন? আমার কিছু হবে না৷ বাংলায় একটা কথা আছে , ” ব্যাঙের আবার সর্দি।” ধরে নেন আমি একটা ব্যাঙ৷

— তোমায় ডায়লগ বন্ধ হলে তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই কর৷ তোমাকে তো বুঝানো কোনদিন সম্ভব হয়নি৷

নিয়তি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফ্লোরে বিছানা করতে শুরু করে দেয়৷ নির্বণ এদিকে রাগে ফুসফুস করছে। মনে মনে বলছে, ” কিছু মানুষের মমতা দেখলে নিজেরই করুণা হয়৷”

নিয়তি বিছানা করে বালিশ নিতে যাবে, ঠিক তখনই নির্বণ নিয়তির সুন্দর বিছানাটি ডাস্টবিনে পরিণত করে। নিয়তির বিছানায় ইচ্ছা করে জল ঢেলে দিয়ে বিছানা স্থানচ্যুত করে ফেলে।

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” স্যার কি করলেন আপনি? আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আর আপনি আমার বিছানা ডাস্টবিনে পরিণত করলেন৷” এভাবে জল ঢেলে দেওয়ার মানে কি?”

— কিছু না মিস নিয়তি৷ তুমি তো নিজের মুখেই স্বীকার করলে “ব্যাঙের আবার সর্দি।” ব্যাঙ তো জলে বাস করে। সেজন্য তোমার জন্য জলের ব্যবস্থা করলাম৷

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি একজন মানুষ৷ সারারাত আমি কি জলের মাঝে থাকব।”

— তুমি মানুষ আমার জানা ছিল না৷ একটি আগেই বললে ব্যাঙ তো জলে বাস করে৷ বাই দ্যা ওয়ে আমার ঘুম পাচ্ছে। তুমি চাইলে আমার সাথে বেড শেয়ার করতে পার৷

আপনার সাথে আমি কোনদিনও বেড শেয়ার করব না৷ আমিও দেখিয়ে দিব আমি জলে থাকতে পারি৷ আমি বজ এখানেই ঘুম আসব৷ দেখি আপনি কি করেন? আপনার জিত যদি আকাশ সমান তাহলে আমার জিত সপ্ত আকাশ পর্যন্ত।

নিয়তি বিছানা ঠিক করে সেই ভেজা বিছানায় ঘুমাতে যাবে৷ নিয়তি রাগে গজগজ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ দেখতে পাই এই মেয়ে ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷ নির্বণ নিয়তিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে উঠার চেষ্টা করলে পা ভেঙে দিব৷ আমি বলেছি আজ থেকে তুমি আমার সাথে বেড শেয়ার করবে৷ আমার কথায় শেষ কথা৷ ”

— আমি পারব না আপনার সাথে বেড শেয়ার করতে৷ আমি বরং সোফায় শুয়ে পড়ব৷

— এই মেয়ে তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ যার জন্য তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ব৷ তুমি চাইলে আমাদের মাঝে বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানতে পার।

— হ্যাঁ আমি তাই করব৷ আমি বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানব। মাঝখানে বালিশ থাকবে৷ আপনি আমার দিকে আসবেন না। আমি আপনার দিকে যাব না৷

বিছানার মাঝে কোলবালিশ রেখে দুই জনে দুইদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। কারো চোখে ঘুম নেই৷ দু,জনে ঘুমে ছটফট করছে তবুও ঘুমাতে পারছে না৷ কখন যে তারা ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷

___________

নির্মল অম্বরে নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূর্বের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা বেধ করে তার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন৷ পরো ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।

নিয়তিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে নির্বণ৷ আজ নির্বণের আগে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি চোখ মেলে দেখে নির্বণ তাকে বাহুজড়ো করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ নিয়তি নির্বণের বুকে ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো শুয়ে আছে৷

নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নির্বণ শক্ত করে চেপে ধরাতে নিয়তি ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। নিয়তির নড়াচড়াতে নির্বণ জেগে উঠে৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নেয়৷ নিয়তিকে এমন অবস্থায় মুখ গোমড়া নির্বণ দেখলে একশটা কথা শুনাবে৷

নির্বণ চোখ মেলে দেখে নিয়তি ছোট অবুঝ শিশুর মতো নির্বণের বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে৷ নিয়তিকে ডাক দিতে নিয়েও ডাক দিল না৷ নির্বণ চাইনি নিয়তির ঘুম ভাঙাতে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির মাথা বালিশের রাখে৷ নিয়তির মাথা বালিশের উপর রেখে সরে যেতে নিলেই নিয়তির চেইনের সাথে নির্বণের চেইনের টান পড়ে৷ নিয়তি ব্যথা পেয়ে “আউচ” করে উঠে।

— নিয়তি না জানার ভান করে বলে উঠে, ” আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই৷ এভাবে আমার দিকে ঝুঁকে আছেন কেন?”

— নির্বণ আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি আমাকে ভুল বুঝবে না৷ আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি৷ আমার গলার চেইন তোমার গলায় চেইনের সাথে লেগে রয়েছে৷”

— হুংকার দিয়ে, ” কি! আপনি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছেন৷ আমার কাছে আসার জন্য৷ ”

— করুন স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না৷ আসলে ঘুমের মাঝে তুমি আর আমি৷”

— কি আপনি ঘুমের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন! আপনার তো সাহস কম নয়৷

— এক সেকেন্ড তুমি কি করে জানলে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলাম৷ তুমি নিশ্চয় জানতে তাহলে আমাকে স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? তোমার দোষের কারণে এমন হয়েছে৷

নিয়তি মনে মনে বলে, ” নিয়তি তোর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই৷ কোন সময় কোন কথা বলতে হয় তোর জানা নেই৷ তোকে পিটিয়ে উগান্ডা পাঠাতে হবে৷”

— কি হলো মিস নিয়তি? তুমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছো তাইতো৷

— আপনি পাগল হলেন নাকি৷ আমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করব৷ আর আমি এমনি বললাম৷ কারণ বালিশ বিছানার নিচে পড়ে আছে৷ আমার তো মনে হয় আপনাকে রাচি থেকে ঘুরে আসতে হবে৷ না…. বাংলাদেশের পাবনা পাঠাব।

— এই মেয়ে কথা বন্ধ করে চেইনের বাঁধা খুলতে সাহায্য কর। এতেই আমাদের মঙ্গল হবে৷

_____________

— নিয়তি চা নিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে, ” গুড মর্নিং মা৷ ঘুম কেমন হলো? ”

— গুড মর্নিং। নির্বণ আজ এত সকালে অফিসে চলে গেল কেন? তুমি কিছু জানো।

— আজ অফিসের মিটিং আছে৷ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা আজ সকল ডিজাইন দেখতে আসতে হবে৷ ক্লাইনরা তো শুধু উপস্থাপন দেখেছে। এখন দেখবে আমাদের উপস্থাপন কথাটা কার্যকর।

— আমার কাছে একটু বসে যা৷ আজ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না৷ নির্বণ বলে গিয়েছে তোমাকে যেন কোন কাজ করতে দেওয়া না হয়।

— নিয়তি অবাক হয়ে, ” কি বলছেন মা! স.. নির্বণ আমাকে কাজ করতে মানা করেছে। উনি বললেই হলো আমি কাজ করেই যাব৷”

— মাথা ঠান্ডা রাখ।এমন সময় কাজ না করাই ভালো।

— নিয়তি ব্রু কুঁচকে, ” এমন সময় মানে কি? আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন৷”

— মুচকি হেঁসে, ” তেমন কিছু না সোনা মা৷ তুমি পরে নিজে থেকেই জানতে পারবে৷ অপেক্ষা কর এবং দেখে যাও৷ ভবিষ্যতে কি হয়? ”

— আমার মাথায় কোন ধাঁধার সমাধান আসছে না৷ তবে আমি একটা কথা জানতে চাই?

— কি কথা জানতে চাও? আমার সোনা মা কিছু জানতে চায় আর আমি সেটা না বলে থাকতে পারি৷

— নির্বণ এখন সকলের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খায় না কেন?

নিয়তির কথা শুনে নির্বণের মায়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷ হাসিমাখা মুখটা আষাঢ়ের ঘনঘটার মতো কালো হয়ে যায়৷ মুখে পড়ে চিন্তার ছাপ৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here