#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৫,১৬
#অধির_রায়
১৫
নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দ্রুত পায়ে রুমে ফিরে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে আছে৷ নির্বণ দৌড়ে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে বিছানা শুয়ে দেয়৷
— হন্তদন্ত হয়ে, ” প্লিজ নিয়তি চোখ মেলে তাকাও? ” নিয়তি আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ জল লাগবে৷
নির্বণ নিয়তির মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ যার ফলে নিয়তি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। নির্বণ যেন প্রাণ ফিরে পেল৷ নিয়তি এমন অবস্থা দেখে নির্বণ বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করছিল। কেন এমন অনুভূতি হয়েছিল নির্বণ নিজেই জানে না?
নিয়তি চোখ মেলে তাকাতেই নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণ নিজেও জানে না সে কি করেছে? নিয়তি নির্বণকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মি. নির্বণ চৌধুরি৷ আমাকে ধরার অধিকার আপনি এখনও পাননি৷ যদি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখতে পারেন তাহলে আমার কাছে আসবেন।”
নিয়তি নির্বণের উপর রাগ দেখিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নির্বণ গালে হাত ঘষতে ঘষতে মনে মনে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি কাজটা ঠিক করলে না৷ আমার গায়ে হাত তুলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে ৷”
নির্বণ অফিসে চলে যায়৷
নিয়তি ওয়াসরুমের গ্লাসে নিজেকে দেখছে আর কেঁদে যাচ্ছে৷ নিয়তি কান্না করতে করতে, ” আমি এই হাত দিয়ে আজ আমার স্যারের গায়ে হাত তুললাম৷ কি করে পারলাম এমন অন্যায় কাজ করতে৷ কেন স্যার আমার ভালোবাসা বোঝে না৷ আমি স্যারকে ভীষণ ভালোবাসি৷ ” কিন্তু আমি স্যারকে নিজের করে পাওয়ার জন্য মাকে কিছু বলিনি৷
________
— এভাবে মন খারাপ করে আছ কেন? আমার উপর তোমার একটুও বিশ্বাস নেই৷ আমি যা করেছি তোমার আর নির্বণের ভালোর জন্যই করেছি৷
— আই অ্যাম ওকে৷ আমি এসব কিছু নিয়ে ভাবছি না৷ এক মুহুর্তের মাঝে আমার জীবনে কত বড় পরিবর্তন এসে পড়েছে৷ আমি নিজেই জানি না৷ যাকে একটু আগে স্যার বলে সম্মোধন করতাম সে আজ থেকে আমার স্বামী!
— তো কি হয়েছে? এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে দাও৷ আমি জানি আমার ছেলে একটু গম্ভীর টাইপের৷ কিন্তু সে ভালোবাসার কাঙাল। সে ভালোবাসা পেলে তোমাকে কখনও কষ্ট দিবে না৷ তুমি পারবে না আমার ছেলের কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে৷ আমি তোমাকে সাহায্য করব৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি পারব৷ আপনি আপনার কাজে মন দেন৷ ঠিকমতো থেরাপি নেন৷ আপনি সুস্থ থাকলেই আমি শক্তি পাব।”
— সোনা মা তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে৷ তুমিই পারবে নির্বণকে আবার আগের মতো হাঁসাতে।
— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার যথেষ্ট দিয়ে চেষ্টা করব৷ এভার দেখে যান নিয়তির খেলা৷”
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে, ” এই তো আমার সোনা মা৷ আমি জানি তোমার কাছে সব সমস্যার সমাধান আছে। তুমি যে আমার ঘরের লক্ষ্মী।”
__________
নির্বণ অফিস থেকে ফিরে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে৷ এমন সময় নিয়তি নির্বণের খাবার নিয়ে রুমে আসে৷
— আপনার খাবার খেয়ে নেন৷ আজ থেকে আমিই আপনার খাবার নিয়ে আসব। আজ আপনি দিনে কিছু খান নি৷
— কাজে মনোনিবেশ করে, ” তুমি খেয়েছো?”
— আমি কে? আমি না খেলে আপনার কিছু যায় আসবে না৷ আপনার খাবার আপনি খেয়ে নেন৷
— নির্বণ চোখ রাঙিয়ে, ” সিম্পল কথাটা বলতে পার না৷ আমি তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চাইনি৷”
— আপনি সারাদিন খাননি কেন? কি মহাকাজে বিজি ছিলেন? খাবারের জন্য দশ মিনিট সময় পাননি৷
— তুমি কে? আমি তোমাকে কেন বলব কখন খাব, কখন খাব না ? আর আমার কোন ক্ষুধা নেই৷ খাবার রেখে আসো৷
— আমি খাবার নিয়ে এসেছি আপনার জন্য৷ আপনি খাবেন তার পর কাজ করবেন৷
— নিয়তি তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের সময় বিরক্ত একদম পছন্দ করি না৷
— আমিও যখন কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন সে সিদ্ধান্তে অটল থাকব।
নিয়তি কোন কথা না বলে নির্বণের ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়৷ নির্বণের হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় নির্বণকে বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি নিজ হাতে নির্বণকে খাইয়ে দেয়৷ নির্বণও কম নয় নির্বণ এক লোকমা খাবার মুখে দেওয়ার পর অন্য লোকমা জোর করে নিয়তির মুখে তুলে দেয়৷ নিয়তি খাবার যেন ফেলতে না পারে সেজন্য নিয়তির নাক মুখ চেপে ধরে৷ এভাবে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মাধ্যমে একে অপরকে খাইয়ে দেয়৷
_______________
— ” নির্বণ আজ তো রবিবার। আজ তোমাকে অফিসে যেতে হবে না৷ ” হাতের নখ কাটতে কাটতে।
— নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে, ” মা আমার একটা জুরুরি কাজ পড়ে গেছে৷ আমাকে আজ এক জায়গায় যেতে হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমাকে দাও তো৷
— মা তুমি ফোন দিয়ে কি করবে? আমার ফোনে কত দরকারি ফোন আসে৷
— নির্বণের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে, ” তোমার কাছে আমি ফোন চেয়েছি৷ তুমি আমাকে ফোন দাও। আমি চাইনা তুমি আমার মুখের উপর কথা বল৷”
নির্বণ ভেজা বিড়ালের মতো হাত কাচুমাচু করে ফোনটা মায়ের দিকে এগিয়ে দেয়৷ নির্বণের মা নির্বণের ফোন ঘাটাঘাটি করে দেখে তেমন কোন ফোন আসেনি৷
— অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, ” নির্বণ তুমি আমাকে মিথ্যা বললে! সেজন্য তোমাকে শান্তি পেতে হবে৷ শাস্তি হিসেবে তুমি আজ নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাবে৷”
— নির্বণ কিছুটূ উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” মা আমি পারব না নিয়তিকে শপিং এ নিয়ে যেতে৷ টাকা দিয়ে দাও, সে নিজে থেকে কিনে নিয়ে আসবে।”
— গম্ভীর কণ্ঠে, ” নির্বণ এসব কি ধরনের কথা? তুমি নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাচ্ছো মানে নিয়ে যাচ্ছো। ইট’স মাই লাস্ট ওয়ার্নিং।”
___________
নিয়তি নিজের ইচ্ছামত শপিং করছে। কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনেনি৷ নির্বণ দেখতে পাচ্ছে নিয়তি বাড়ির সকলের জন্য অনেক কেনা কাটা করল।
— আমার সব শপিং শেষ৷ আপনার কি কি লাগবে কিনে নেন?
— আমার কিছু লাগবে না৷ আমি অন্য একদিন সময় করে কিনে নিব।
— অন্য একদিন কিনে নিবেন মানে কি? আমি আপনার জন্য পছন্দ করে দিচ্ছি৷
— লাগবে না। তোমার পছন্দ কেমন আমার জানা আছে? তুমি যেমন মিডিল ক্লাসের মেয়ে তেমনি তোমার পছন্দ হবে মিডিল ক্লাসদের মতো।
— নির্বণ চৌধুরী এভার মুখটা বন্ধ করেন৷ আর হ্যাঁ আমি যা পছন্দ করে কিনে দেব তাই পড়তে হবে আপনাকে৷
দাদা কালো রঙের পাঞ্জাবিটা বের করেন৷
— আমি পাঞ্জাবি পড়ি না৷ আমি পাঞ্জাবি নিব না৷
— একটা কথা বলবেন না৷ দাদা একটা স্কচটেপ দেন তো এই বাঁদরের মুখে লাগিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “কি আমি বাঁদর?”
— হ্যাঁ, আপনি একটা বাঁদর।
— বাসায় চল তারপর তোমাকে দেখাব।
শপিং শেষে নিয়তি নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তি অবাক চোখে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ নিয়তির তাকানোর দিকে কোন পাত্তা না দিয়ে নিয়তিকে আবার শপিং মলে নিয়ে আসে।
— আবার আমরা শপিং মলে কি করব? বুঝতে পেরেছি। আমি নৃত্য করব আপনি ভিডিও করবেন৷ আমি ভাইরাল হয়ে যাব৷
— “জাস্ট সাট আপ। একটা কথাও বলবে না৷ আমি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি বলে তুমি মাথায় উঠে নৃত্য করবে। ” চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে।
নিয়নি নির্বণের এমন গর্জন শুনে চুপসে যায়। ভদ্র মেয়ের মতো নির্বণের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য নিজে পছন্দ করে বাহারি রকমের শাড়ি কিনে৷ শুধু শাড়িতেই আবদ্ধ নয়৷ নিয়তির জন্য ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনে।
— আপনি ওয়েস্টার্ন পোশাক কার জন্য কিনছেন? মনে হয় শাড়িগুলো আমার৷ আমি তো ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ি না।
— আমি যার জন্যই কিনা কেন? তোমার জন্য কিনছি না আমি৷ এটা ভেবে নিও৷ তোমার তো কিছু লাগবেই না৷ তাহলে শাড়ি দিয়ে কি করবে?
নির্বণের কথা শুনে নিয়তির মুখটা ছোট হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে ছিল তার জন্য শাড়ি কিনছে৷ কিন্তু সালা নির্বণ নিয়তির জন্য না কিনে তার প্রেমিকার জন্য কিনেছে৷ নিয়তি মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে যাচ্ছে নির্বণকে৷
নির্বণ নিয়তির এমন অবস্থা দেখে মুচকি হেঁসে যাচ্ছে৷ নিয়তি আরও রাগান্বিত করার জন্য নির্বণ নিয়তির হাত ধরে, ” মিস নিয়তি তুমি চাইলে তোমার জন্য কাজের মেয়ে জরিনার শাড়ি নিতে পারি৷”
নিয়তি নির্বণের কথা শুনে আরও ক্ষেপে যায়৷ নির্বণের হাত এক ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাহিরে চলে আসে৷
চলবে……
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৬
#অধির_রায়
“আপনি একটা প্লে বয়৷ আপনি এতগুলো প্রেম করছেন! তৃনা, মিনা, রিনা, চিনা৷ ঘরে বউ থাকতে বাইরে মেয়ের সাথে প্রেম।” কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে নিয়তি৷
— নির্বণ নিয়তির কাঁধে হাত রেখে নিয়তির নাকে নাক ঘেঁষে, ” কেন তোমার হিংসা হচ্ছে?”
— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি কি করলেন আজ?” আমার চোখের সামনে অন্য মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷
— চকিত চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করলাম! আমার মতো নিষ্পাপ শিশু এই ত্রি ভবনে পাবে না৷”
— নিয়তি অট্টহাসি দিয়ে, ” আমার হাসতেও কষ্ট হয়। আপনি নিষ্পাপ শিশু৷ আপনি শিশু তাহলে ফিটার খান৷ বাবু খাইছো৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি এসব কি ধরনের কথা? তোমাকে আমার বাবু মনে হয়? ”
— “আপনাকে আমার বাবু মনে হবে কেন? আপনি চাইলে তো প্রতিবছর জোড়ায় জোড়ায় বাচ্চা জন্ম দিতেন৷ আর আপনি কিনা ঘরে বউ থাকলে বাইরে মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷ তাও আবার কোনগুলো। মর্ডান ওয়েস্টার্ন পোশাক।” কিছুটা আফসোস নিয়ে বলে উঠে।
নিয়তি কথা শুনে নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তি খুব রেগে আছে৷ নিয়তিকে আরও রাগানোর জন্য বলে উঠে, ” ঘরের বউ কি কোনদিন প্রেমিকা হতে পারে৷ ”
নিয়তির দিকে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিয়ে, ” প্রেমিকা মিষ্টি হিসেবে আমার ঠোঁট জোড়া বেছে নেয়৷ কিন্তু ঘরের বউ তা করে না। ”
নির্বণেট কথা শুনে নিয়তির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়৷ নিয়তি আর সহ্য করতে পারছে না৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে৷ নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি রাগে নির্বণের ঠোঁটে খুব জোরে একটা কাপড় বসায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি এই বিয়ে বাধ্য হয়ে করেছি৷ আমাকে এই বিয়ের বন্ধনে জড়াবে না৷”
আর পোশাক গুলো আমি বাহিরের কোন মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে আসনি৷ সবগুলো পোশাক তোমার৷
নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি নির্বণকে আবারও ভুল ভাবে৷ নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ অন্য কারো জন্য এসব করেছি৷ কিন্তু আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করল?
নিয়তি নিজের কাছে নিজেকেই দোষী মনে করছে৷ নির্বণের চোখে জল টলমল করছে৷ নির্বণের চোখে শুধু ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠছে৷ কেন নির্বণ ছোঁয়াকে ভুলতে পারছে না?
নির্বণ ট্রি টেবিলে একটা ঘুশি মেরে, ” আমার চোখের সামনে কেন ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ ছোঁয়া আজও আমি তোমায় ভালোবাসি৷ তোমাকে কোনদিন আমি ঘৃণা করতে পারব না৷ কথা দিয়েছিলাম তোমার জায়গা কাউকে দিব না৷ আমি আমার কথা রেখেছি৷ আমি নিয়তিকেও ফিরিয়ে দিয়েছে৷ অথচও যার সাথে এখন আমি সাত জন্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি৷ ”
নিয়তি নির্বণের সব কথা শুনে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে তাকে অনেক কষ্ট করতে নির্বণকে পাওয়ার জন্য। আজও তার মনে ছোঁয়া রয়েছে।
________
নির্বণ রাতে কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই৷ নির্বণ বেলকনিতেই ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি বাসার সকল কাজ সেরে নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুমে থেকে বের হচ্ছে।
নিয়তি হাঁ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের পরনে শুধু তাওয়াল। ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছে৷ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী নির্বণ৷ যেকোনো মেয়ে নির্বণের এমন রুপ দেখে প্রেমে পড়তে বাধ্য।
নির্বণ হাত দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তি গাল টেনে বলে উঠে, ” ওই দিকে কাকে দেখছো? আমি এখানে।”
নির্বণের কথায় নিয়তি লজ্জা পায়৷ নিয়তি নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নির্বণের দেহ ঢেকে দেয়৷ নির্বণ চকিত হয়ে নিয়তির দিকে তাকয়৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনি খালি গায়ে আমার সামনে আসবেন না৷”
— কেন? আমায় খালি গায়ে দেখলে তোমায় আদর করতে মন চাই৷ আমি ছেলে মানুষ৷ আমিতো এখন থেকে খালি গায়েই বেশি থাকবো৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” না। আপনি খালি গায়ে থাকবেন না৷ যদি কোনদিন খালি গায়ে দেখছি তাহলে.. ”
— তাহলে কি নিয়তি? আমার গায়ের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নাও৷
— না সারাবো না৷ আপনি আগে একটা ট্রি শাট পড়েন। তার পর আমি শাড়ি সরিয়ে নিব৷
— আমায় খালি দেখলে তোমার লজ্জা লাগে। তখন তোমার মুখ রংধনুর সাত রং হয়ে যায়৷ তখন তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে। কিন্তু তোমার পিছনের কালো তিলটা গ্লাসে দেখা যাচ্ছে৷
— আপনি একটা অসভ্য লোক। আপনার একটু লজ্জা নেই৷
নিয়তি শাড়ি সরিয়ে নিতে নিলেই নিয়তির শাড়িতে আঁচল নির্বন পা দিয়ে ধরে রাখে। যা নির্বণ বা নিয়তি কেউ জানে না৷ শাড়ি টান দিতেই নিয়তি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু নির্বণ হিরোর মতো নিয়তিকে বাঁচিয়ে নেয়৷
নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রেখে নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তির নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখতেই নিয়তির দেহে ১২০০ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উঠানামা করছে৷
নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলে উঠে, ” ধন্যবাদ। আপনি পোশাক পড়ে নেন৷ আমি বাহিরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি৷”
নিয়তি চলে যেতেই নির্বণ গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ ভগবান, মেয়েদের মন কি দিয়ে তৈরি করছো? ঝগড়া করবে আবার লজ্জায় পাবে। ”
__________
— স্যার একটা কথা বলবো? প্লিজ রাগ করবেন না!
— নিয়তি তুমি এর আগেও ভুল করেছো৷ এখনও ভুল করে যাচ্ছে৷ আমাদের এখন বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমাকে স্যার বলা বন্ধ কর। আমাকে নির্বণ বলে সম্মোধন করবে৷ যদি নির্বণ বলে ডাকতে না পারো তাহলে তোমার কথা শুনছি না৷ আমার নাম ধরে বল, ” নির্বণ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
— নিয়তি আমতা আমতা করে, ” নি..নি..নি…”
— কি নি..নি করে যাচ্ছো? আমার নাম নি. নয় আমার নাম নির্বণ৷
— নিয়তি চোখ বন্ধ করে, ” নির্বণ আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?”
— হুম বল, কি কথা? আমি শুনছি। আর হ্যাঁ রাগ করব না৷
— “আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন তাই না৷ ” কোমল স্বরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে।
— নির্বণ ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” হুম আমাকে কাছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তিনি এখন আর নেই৷ জানো নিয়তি রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা আমার বাবা৷ ”
— আপনি জানেন আপনার জন্য আপনার বাবা কষ্ট পাচ্ছে । আপনি অনেক ভুল করছেন৷ আপনি কেন খাবার টেবিলে যান মা৷
— নিয়তি আমি কেন খাবার টেবিলে যায় না সেটা না জানলে ভালো?
— আমি সব জানি৷ আর এইজন্য তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি৷ আপনি জানেন কি?, ” বাবা সে দূর আকাশে তাকিয়ে আমাদের সবাইকে দেখছেন৷ প্লিজ আপনি বাবাকে আট কষ্ট দিবেন না৷ বাবা চাইনা আপনি আলাদা ভাবে খান৷ ”
— নির্বণ কিছু একটা ভেবে বলে উঠে, ” আমার এখন কিছু ভালো লাগে না৷ আমাকে এসব নিয়ে প্লিজ বিরক্ত করবে না৷”
— আপনি তাহলে রাজি এক সাথে খাওয়ার জন্য৷ আপনার পায়ে পড়ি আপনি প্লিজ আর বাবাকে কষ্ট দিবেন না৷ আপনার এমন ব্যবহারে বাবা কষ্ট পায়৷
— নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ভাঙা গলায় বলে উঠে , “আমি জানি তুমি ভুল বল না৷ তোমার সাথে নিশ্চয় বাবার কথা হয়৷ আমাকে একটু কথা বলিয়ে দাও না৷ আমি সকলের সাথে খাবো৷ আমি আর বাবাকে কষ্ট দিব৷”
চলবে….