#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৭,১৮
#অধির_রায়
১৭
— “নিয়তি আমি আজ খুব খুশি। তুমি আমার কাছে কি চাও? তুমি যা চাইবে আমি তাই দেওয়ার চেষ্টা করব৷” আনন্দের সাথে বলে উঠে নির্বণ।
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি যা চাইব আপনি তাই আমাকে এনে দিবেন৷ কথাটা ভেবে বলছেন তো?”
— হ্যাঁ, আমি কথা ভেবেই বলি৷ বল তোমার কি লাগবে?
— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” আমি তো আপনাকে চাই৷ আপনাকে কখন, কবে, কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তে, আমার জানা নেই৷ আমি শুধু আপনাকে চাই৷”
— কি বলছে? আমি কিছুই শুনতে পারলাম না৷ প্লিজ একটু জোরে বল।
— আপনার সময় সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়টা বাজে৷ আপনার অফিসের সময় হয়ে গেছে৷ এখন বের না হলে লেট হয়ে যাবে।
— “তাহলে তোমার কিছু লাগবে না৷ আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাইলাম আর তুমি না করে দিলে।” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।
— আমার যখন লাগবে আমি চেয়ে নিব৷ ধরে নেন এটা আপনার কাছে আমার পাওনা৷ আর আপনার শর্ত ভুলবেন না কিন্তু।
________
— “নিয়তি তুমি আজ ম্যাজিক দেখিয়ে দিলে।” আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না৷
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” মা আমি কি ম্যাজিক করলাম? আমি তো কিছুই করিনি৷”
— মুখে হাসি রেখা ফুটিয়ে, ” মা তুমি আজ সব থেকে বড় কাজ করেছো৷ যা আমরা সবাই মিলেও করতে পারিনি৷ আমরা অনেক চেষ্টা করেছি সেই কাজ করার জন্য। ”
— নিয়তি চোখ ছোট করে কোমল কন্ঠে, ” মা আপনি সব সময় আমাকে ধাঁধায় ফেলে দেন৷ আমি তো সকাল বেলা কোন কাজই করিনি৷ আপনি কোন কাজের কথা বলছেন? ”
— কে বলেছে তুমি কাজ কর নি? তুমি সব থেকে কষ্টকর কাজ সম্পন্ন করেছো সকাল বেলা৷ একমাত্র তুমিই নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসতে পেরেছো৷ আমরা অনেকে অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু কখনও সফল হয়নি৷ প্রতিবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি৷
— না মা এটা আমার কোন কাজ নয়৷ আমি সকলের মুখের হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছি৷ নির্বণও চাই হাসি খুশিতে বাঁচে থাকতে। কিন্তু… (থেমে যায়)
— কিন্তু কি? বল না নির্বণ কেন হাসতে ভুলে গেছে? আমার ছেলেকে আগের মতো করে দাও৷ আমি তোমার পায়ে পড়ি।
— ছি! ছি! এসব কি বলেন? আমি আমার সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করব, নির্বণের মুখে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ৷ আমি নির্বণের সমস্যা সম্পের্ক জানতে পেরেছি৷
— তোমার কোন সাহায্য লাগবে আমাকে বলবে? আমি যতটা পারি সাহায্য করব৷
— ওকে মা। আমার সাহায্য লাগলে আপনাকে না বলে কি থাকতে পারব? আপনিই আমাকে শক্তি জোগান। আমি আপনার কাছ থেকেই সাহায্য নিব৷ “কিন্তু আমি এখন আপনার ওপর রেগে আছি৷” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।
— চকিত হয়ে, ” আমার ওপর রেগে থাকার কারণ কি? আমি কি ভুল করেছি ম্যাম? প্লিজ ম্যাম আমি কোন ভুল করে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিবেন৷”
— মা আমি একটু ফার্ন করছি না৷ আমি এভার সত্যি সত্যি রেগে যাব৷ আপনাকে মুভ অন করতে বলেছি৷ কিন্তু আপনি একটুও নড়াচড়া করেন না৷ এভাবে চলে না৷
— আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেন৷ আজ থেকে আমি মুভ অন করব৷ আমি আর হেয়ালি করব না৷ আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই৷
নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে দাঁড় করায়৷ নির্বণের মা নিয়তিকে ভর করে অনেকক্ষণ হাঁটাচলা করে৷ নির্বণের মা আর পারছে না৷ তিনি নিয়তির কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিচে বসে পড়েন৷
— নিয়তি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে, ” মা আপনাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে হাঁটতে হবে৷ থেমে গেলে চলবে না৷ ”
— পায়ে উপর হাত রেখে বলে উঠেন, ” প্লিজ নিয়তি আজ আর নয়৷ আমার পা ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি আর পারব না৷”
— নিয়তি কর্কশ কন্ঠ বলে উঠে, ” মা আপনাকে হার মানলে চলবে না৷ আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ আপনি যদি মন থেকে প্রথমেই হেরে যান তাহলে তো আপনি বাস্তবে সফো হতে পারবেন না।”
— “আমার পায়ে ব্যথা৷ ব্যথা পায়ে মনোবল ফিরিয়ে নিয়ে আসব কিভাবে? ” অসহায়ভাবে বলে উঠেন।
— অরিন মাকে ধর তো। মায়ের কোন কথা শুনতে চাই না৷
নিয়তি আর অরিন নির্বণের মাকে ধরে একটু হাঁটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বণের মা পা ফেলতে আর পারছে না৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের কষ্ট বুঝতে পেরে মাকে রুমে নিয়ে আসে৷
— মা আজ আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু কাল আপনাকে আর ছাড়বো না৷ পুরো দুই ঘন্টা আপনাকে হাঁটতে হবে৷
নির্বণের মা অসহায় ভাবে নিয়তির দিকে তাকয়৷ বির্বণের মায়ের মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছে৷
— মা ভয়ের কিছু নেই৷ আমি আপনাকে ফিজিওথেরাপি দিব এখন। যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে পায়ের ব্যথা চলে যাবে।
_________
রাতে ডিনার শেষে নিয়তি আর নির্বণ এক সাথে রুমে প্রবেশ করছে৷ ধরতে গেলে নিয়তি একটু এগিয়ে৷ নির্বণ পিছু পিছু আসছে৷ নিয়তি রুমের ভিতরে পা না রাখতেই নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷
নিয়তিকে এমনভাবে নির্বণ টান দেয়, যেন নিয়তি দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ নিয়তির মুখ চেপে ধরে৷
— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” আপনি আমাকে রুমে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছেন কেন? কি আছে রুমে? আমি তো রুমে যাবই৷ ”
— তুমি তো রুমেই যাবে৷ তবে এভাবে যেতে পারবে না৷ আমি তোমাকে রুমের ভিতরে এভাবে যেতে দিতে পারব না।
— সন্দেহের চোখে, “আপনি রুমে কাকে লুকিয়ে রেখেছেন? আমি অনেকবার রুমে প্রবেশ করতে চেয়েছি৷ কিন্তু আপনি প্রতিবারই আমাকে আটকিয়ে দিয়েছেন৷ কেন?”
— তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমার জন্য সারপ্রাইজ! আমি স্বপ্ন দেখছি৷ নির্বণ চৌধুরী এই নিয়তির জন্য সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করছে৷ [লেখাঃ অধির রায়]
— তো কি হয়েছে? আমি কি কাউকে সারপ্রাইজ দিতে পারি না৷ আমার মাঝে কি কোন মূল্যবোধ নেই?
— তাহলে চলেন দেখি, আপনি আমার জন্য কেমন সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছেন৷ নাকি এখনো বাদ আছে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” হ্যাঁ, ইশ্বর। তুমি সাহায্য কর৷ যেন নির্বণ আমাকে তার ভালোবাসার কথা বলে৷ আমি জানি নির্বণ আমাকে এখন ভালোবাসে৷”
— সারপ্রাইজ পেতে চাইলে তোমাকে চোঝ বন্ধ করতে হবে৷
— না না আমি চোখ বন্ধ করতে পারব না। আপনি যদি আমাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন৷ আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না৷
— মিসেস কূটনীতি, আমি এমন কোন কাজ করব না৷ তোমার চোখ বন্ধ করতে হবে না৷ আমি তোমার চোখ বেঁধে দিচ্ছি৷
— নির্বণ দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে, ” আমার চোখ বাঁধার চেষ্টা করবেন না৷ চোখ বাঁধলে নিজেকে অন্ধ মনে হয়৷ আমাকে আপনি অন্ধ বানিয়ে দিতে চান৷”
নির্বণ নিয়তির আঙ্গুল নিচে নামিয়ে নিয়তির কোমর চেপে ধরে নিয়তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তি কোমরে নির্বণের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ নির্বণের শার্ট চেপে ধরে৷
— নির্বণ নিয়তি গলায় নাক ঘেঁষে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি জানি তুমি সহজে হার মানবে না৷ তোমাকে কিভাবে হার মানাতে হয়, আমার ভালো করেই জানা আছে?
নিয়তি নির্বণ কথায় আরও নির্বণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ নিয়তি ঠোঁট জোড়া কাঁপতে থাকে। নির্বণ সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নিয়তি চোখ বেঁধে দেয়৷
— এখন চল আমার সাথে। আমার সাথে কেউ কোনদিন পেরে উঠেনি৷ আর কোনদিন পেরে উঠতেও পারবে না৷
— আকুল কন্ঠে বলে উঠে, “ছাড়েন আমাকে। এভাবে আমাকে ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি আপনার সাথে যাব না৷”
— একটা কথা বললে তোমাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসব৷ আমাকে তুমি এখনও চিন না৷ তাই চুপচাপ আমার সাথে হাঁটতে থাকো৷
নিয়তি ভয় পেয়ে নির্বণের সাথে হাটতে থাকে। নির্বণ নিয়তিকে বেলকনিতে নিয়ে আসে৷
— একটা শর্তে তোমার চোখ খুলে দিতে পারি৷
— কি শর্তে?
— চোখ খুলে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে আঁখি মেলে তাকাবে।
— আমি আপনার শর্তে রাজি। প্লিজ আমাকে এভাবে অন্ধ বানিয়ে রাখবেন না!
“আগে চোখের বাঁধন খুলে দেন৷ পরের বিষয় পরে দেখা যাবে। আমার একদম অস্বস্তি লাগছে।” মনে মনে বলে উঠে।
নির্বণ নিয়তির চোখ খুলে দিয়েই আঙুল দিয়ে নিয়তির চোখ চেপে ধরে৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি আমার সাথে দুর্নীতি করতে পারেন না৷ আপনি এভাবে চোখ চেপে ধরলেন কেন?
— আমি জানতান তুমি সোজা কথার মানুষ নয়৷ আমি ধীরে ধীর হাত সরাবো তুমি ধীরে ধীরে চোখ মেলতে পারবে।
নিয়তি বিরক্ত স্বরে বলে উঠে, ” আসলে আপনি এমন একটা লোক, যাকে চেনা খুব কঠিন৷”
নির্বণ নিয়তির চোখ ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিয়তির সামনে এক জোড়া শালিক পাখি৷
— নিয়তি খুশি হয়ে বলে উঠে, ” আপনি কি করে জানলেন শালিক আমার প্রিয়৷” আমি খুব খুশি হয়েছে৷ আপনি আমাকে সব থেকে ভালো সারপ্রাইজ দিয়েছেন৷
নিয়তি খুশিতে ঠেলায় নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না সে কি করছে? নির্বণ নিয়তির মুখের হাসির কথা ভেবে নিয়তির কানে কানে বলে উঠে, ” মিসেস নিয়তি আমাকে জড়িয়ে না ধরে পাখিগুলো দেখো৷ তোমাকে দেখার জন্য পাখিগুলো আকুতি মিনতি করছে৷”
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরেছে নিয়তি নিজেই জানে না৷ আসলে নিয়তি শাকিল পাখি পেয়ে কতটা খুশি হয়েছে যা বলে বুঝাতে পারব না৷ নিয়তি এখন নিজেই লজ্জা পাচ্ছে৷ নিয়তি চোখ তুলে তাকাতে পারছি না৷ নির্বণ নিয়তির লজ্জা মাখা মুখটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নিয়তি কেঁপে নির্বণে হাত চেপে ধরে৷
— নির্বণ নিয়তি কানে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” তোমার লজ্জা জনিত মুখটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে৷ তোমাকে একদম স্ট বেরির মতো লাগে।”
নির্বণ কথায় নিয়তি আরও লজ্জা পায়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ নির্বণ নিয়তির গলায় থাকা কালো তিলটাতে ডিপ কিস দিয়ে, ” কি হলো নিয়তি? কথা বলছো না কেন? আমার পছন্দ হয়নি পাখিগুলো৷”
— নিয়তি আর নিতে পারছে না৷ নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার এত কাছে চলে আসবে৷ নিয়তির কেন জানি আজ খুব ভালো লাগছে। অন্য দিন নির্বণ তার হাত ধরলেই ঘৃণা হতো৷ আজ কেন এমন অনুভব হচ্ছে৷
নিয়তি নির্বণের হাত সরিয়ে লজ্জা মাখা মুখে নির্বণের দিকে ছোট করে তাকিয়ে রুমে চলে আসে৷ নির্বণ তখন বুঝতে পারে সে কি করেছে নিয়তির সাথে?
নিয়তির গলায় কালো তিলটা নির্বণকে আকৃষ্ট করেছে। মেয়েদের গলায় কালো তিল যেকোনো ছেলেকে আকৃষ্ট করতে পারে। নির্বণ দেয়ালে ঘুশি মেরে, “আমি কিভাবে করতে পারলাম এমন কাজ? আমি নিয়তির প্রতি এতটা কেন দুর্বল হয়ে পড়লাম?” আমি তো নিয়তিকে ভালোবাসি না৷
নির্বণ দ্রুত গতিতে রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি এখনও লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বসে আছে৷ নিয়তির গলার কালো তিলটা আবারও দেখা যাচ্ছে। নির্বন একটা ওড়না নিয়ে নিয়তি গলায় ঝুলিয়ে দেয়৷
— কিছুটূ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” গলা থেকে যেন কখনো ওড়না না নামে। বিশেষ করে তোমার কালো তিলটা যেন না দেখা যায়৷”
নির্বন আর কিছু না বলে উল্টো দিক হয়ে শুয়ে পড়ে৷
নিয়তি ছোট থেকেই কালো তিনটা লুকিয়ে রেখেছে৷ শাড়ির আঁচল সরে যাওয়ার ফলে তিলটা নির্বণের চোখে পড়ে।
চলবে…..
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৮
#অধির_রায়
নিয়তির ঘুম হারাম করে দিয়েছে নির্বণ। নির্বণের কথাগুলো শুধু নিয়তির মনে ঘন্টা বাজে যাচ্ছে। নিয়তির কখন চোখ লেগে এসেছে, সে নিজেও জানে না।
কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় ভোর না হতেই৷ নিয়তি ঘুম নির্বণের আগে ভাঙার পর নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায়৷ নিয়তির দৃষ্টি আটকে যায় নির্বণের ঠোঁটে।
— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” একি নির্বণের ঠোঁটের হাসি ঘুমের মাঝেও ফোঁটে আছে।”
নির্বণের ঠোঁট নিয়তিকে টানছে। নিয়তির উদ্দেশ্য হলো নির্বণের ঠোঁটে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেওয়া৷ নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেই নির্বণের ঠোঁটের কাছে যাবে ঠিক তখনই নির্বণ আঁখি মেলে তাকায়।
— ঘুম ঘুম স্বপনে নির্বণ বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি এখানে কি করছো?”
নির্বণের চোখের দিকে তাকিয়ে নিয়তি খুব লজ্জা পায়৷ নিয়তির মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না৷ নিয়তি একইভাবে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷
— কি হলো নিয়তি? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তুমি ঠিক আছো তো?
— নিয়তি আহ্লাদী স্বরে বলে উঠে, ” হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি৷ আমি যতই দেখি ততই প্রেমে পড়ি৷ কি আছে আপনার মাঝে? ”
— উঁচু গলায় বলে উঠে, ” আর ইউ ক্রেজি? তুমি কি বলছো এসব আবোল তাবোল? তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি তোমাকে কিন্তু… (থেমে যায়)”
নিয়তি নির্বণের উঁচু গলার আওয়াজ শোনে বাস্তবে ফিরে আসে৷ নিয়তি নিজেও জানে না এতক্ষণ সে কোথায় ছিল?
— নিয়তি হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” আপনার কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো! এভাবে রেগে আছেন কেন?”
নির্বণ নিয়তির কথা শুনে হাসবে নাকি কান্না করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ নির্বণ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” মিসেস নিয়তি আমার সামনে অতন্ত্য নাটক করা বন্ধ কর। আমি এসব নাটক একদম পছন্দ করি না৷”
নির্বণ ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি বোকার মতো নির্বণের যাওয়া দেখচ্ছে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কি করলাম? সকাল সকাল আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছে কেন?”
নিয়তি আর কিছু না ভেবে রান্না ঘরে চলে যায়৷
__________
— “নিয়তি শালিক পাখি পছন্দ হয়েছে তো?” নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে বলে উঠেন।
— হ্যাঁ আমার খুব পছন্দ হয়েছে৷ আমি কতটা খুশি বলে বুঝাতে পারব না৷ আমি শালিক পাখিকে খুব ভালোবাসি। আমি ভাবতেই পারিনি নির্বণ আমার জন্য এমন একটা সারপ্রাইজ ব্যবস্থা করবে।
— আমাকে কিন্তু জানায় নি নির্বণ যে “তোমাকে পাখি এনে দিয়েছে৷”
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” কি বলেন মা! তাহলে আপনি জানতে পারলেন কিভাবে?”
— অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ আজ সকালেই নির্বণ আমাকে বলেছে৷ আমায় জানায়নি কারণ আমি যদি তোমাকে বলে দেয় ৷
— মা এটা অন্যায় করেছে৷ আপনাকে জানানো উচিত ছিল৷ আজ রাতে অফিস থেকে ফিরে আসুক তার পর মজা দেখাবো।
— আমাকে ছেলেকে শুধু টর্চার করা হচ্ছে৷ একটু ভালোবাসা হচ্ছে না৷ আমি খুব রেগে আছি তোমার উপর৷
— ব্রু কুঁচকে, ” মা আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনার ছেলেকে টর্চার করব৷ বাহ্ বাহ্। যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত টর্চার করে যাচ্ছে। আমাকে উঠতে বসতে বকা শুনিয়ে যাচ্ছে ৷”
— হয়েছে আর বলতে হবে না৷ এখন যা করার আমাকেই করতে হবে। তোমরা দুইজনেই সাপ বেজি৷
— আপনি কি করবেন? প্লিজ নির্বণকে কিছু বলবেন না৷ আপনার কথা উল্টো বুঝবে৷ আর আমাকে ভুল বুঝবে।
— নিয়তির হাত ধরে, ” মা’রে, আমি তো মা৷ আমি আমার ছেলেকে চিনি৷ আমার ছেলে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমাদের ভালোবাসা অটুট থাকবে সারাজীবন।”
— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” মা আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছুই নেই নির্বণের মাঝে। নির্বণ আমাকে একটুও ভালোবাসে ন। নির্বণের মনে আজও শাঁকচুন্নি ছোঁয়ার বাস। শাঁকচুন্নি আমার জীবনের একটা কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাকে এখন সামনে পেলে আমি তাকে দিয়ে ফুটবল খেলতাম৷ ”
— কি হলো নিয়তি? কি ভাবছো? এটাই তো ভাবছো, তুমিও নির্বণকে খুব ভালোবাসো। আমি জানি তোমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসো।
নিয়তি নির্বণের মায়ের কথাতে লজ্জা পায়৷ নিয়তি মাথা নিচু করে ফেলে। নির্বণের মা নিয়তিকে আরও লজ্জায় ফেলতে চাই৷
— আমার সামনে লজ্জা পেতে হবে না৷ তবে আমি আমার লজ্জাবতী বউমার কাছে খুশির খবর শুনতে চাই৷ আমি নাতি নাতনির সাথে খেলতে চাই৷
নিয়তি আর নিজেকে সামলাতে পারল না৷ নিয়তি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে৷
_____________
— মা তোমার অবস্থা এখন কেমন? তোমাকে কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব৷ নিয়তি তোমাকে কিছু বলেনি৷
— নির্বণ আমি একদম ঠিক আছি৷ প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে হাঁটা হচ্ছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। এখন আমি পায়ে শক্তি পাচ্ছি৷ আমাকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না৷
— মা তুমিই আমার স্বর্গ। তোমাকে নিয়ে না ভাবলে আমি কাকে নিয়ে ভাববো?
— আরে বাবা আমি একদম ঠিক আছি৷ আমি সুস্থ হয়ে যাব যদি তোমরা…
— যদি কি? আর এখানে শুধু আমি আছি৷ আমি এখানে অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷ মা তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তোমার চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷
— আমার চোখের সমস্যা নেই৷ আমি তোমরা বলতে তুমি আর নিয়তিকে বুঝিয়েছি৷ আমি চাই তোমরা আমাকে একটা খুশির খবর দাও৷ আমি এই বুড়ো বয়সে আমার খেলার সঙ্গী চাই৷
— মা অনেক রাত হয়ে গেছে৷ প্লিজ মা ঘুমিয়ে পড়। এসব কথা মাথা থেকে ফেলে দাও৷ আমি আসছি৷
— আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চাও? তুমি কি আজও নিয়তিকে মেনে নাওনি৷ তাহলে এত ভয় কেন?
— নির্বণ আমতা আমতা করে, ” কই ভয় না তো৷ বেশি রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে। তাই বলছি ঘুমিয়ে পড়তে।”
আমি আসছি তুমি শুয়ে পড়৷ তোমাকে আর ডিস্টার্ব করব না৷ “গুড নাইট ”
নির্বণ রুমে থেকে বাহিরে এসে মনে মনে বলে উঠে, ” সরি মা! আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ আমি নিয়তির কাছে আসলে আমার চোখের সামনে ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ কেন আমি ছোঁয়াকে ভুলতে পারছি না?
________
এভাবে কেটে যায় ৩০ দিন৷ আজ ছোঁয়ার চুক্তির শেষ দিন৷ রাত ১২ টার পর ছোঁয়ার এই বাডি থেকে চলে যাবে জানিয়ে দিয়েছে নির্বণকে৷ নির্বণ নিয়তিকে ভালোবাসে ফেলেছে৷ নির্বণ নিয়তির চলে যাওয়ার কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না৷
নিয়তি সবকিছু গুছিয়ে গাড়িতে রেখে এসেছে৷ নির্বণ অনেক বুঝিয়েছে সকালে চলে যেতে৷ কিন্তু নিয়তি নির্বণের কথায় রাজি নয়৷ সকাল হলে মা আর চলে যেতে দিবে না৷
— “স্যার আমার চুক্তিনামার আজ শেষ দিন৷ আর আপনি এই বিয়ের বন্ধন মানেন না। তাই আমি জোর করে এই বিয়ের বন্ধনে আটকে থাকতে চাই না৷” কথা বলার সময় নিয়তি গলা ভার হয়ে আসছিল।
— নির্বণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” কাল সকালে চলে গেলে হয় না৷ আমি তোমার কাছে এই রাতটা চাইছি৷ মা সকালে জানতে পেলে কষ্ট পাবে।” মাকে তুমি বুঝিয়ে চলে যাও। আমি তোমাকে আটকাবো না।
— মা শুধু কষ্ট পাবে। আর তো কেউ কষ্ট পাবে না৷ কিছুদিন পর মা ঠিক বুঝতে পারবে৷ তবে আমি আমার জীবনে মায়ের আদরটুকু পেয়েছি উনার কাছ থেকে। কিছুতেই উনাকে ভুলতে পারব না৷
— নির্বণ টলমল চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” তুমি একটা দিনের জন্যও আমার ভালোবাসা বুঝতে চাওনি৷ আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না৷ তুমি আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
— নিয়তি নির্বণের দিকে ছোট করে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে , ” আপনি আমাকে একটিও বারের জন্যও ভালোবাসার কথা বলছেন না৷ আমি আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ আমি আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকব? আমি জানি আপনি কষ্ট পাবেন৷ কিন্তু একবারও জন্য বলছেন না৷ নিয়তি লাভ ইউ৷ আমি এই বিয়ের বন্ধনে থাকতে চাই৷”
একে অপরকের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কারো মুখে কোন কথা নেই৷ চোখে চোখে কথা হচ্ছে। না বলা ভাষাগুলো আজ চোখের দেখায় শেষ হয়ে যাচ্ছে৷
— নিয়তির চোখের জল মুছে, ” স্যার আমি শালিকের জোড়া নিতে পারি৷ আমি আর কিছু নিব না৷ আমি পাখিগুলোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ তাদের ছাড়া থাকতে পারব না৷”
— ভাঙা গলায় বলে উঠে “তোমার যা যা লাগে নিয়ে যাও৷ ”
একবারও তো বললে না আমায় ভালোবাসো৷ আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না৷ আজ আমি স্যার হয়ে গেলাম৷ মানুষের মন দুই মিনিটের মাঝেই পরিবর্তন হয়ে যায়। পাখিগুলো ছাড়া থাকতে পারবে না৷ কিন্তু আমায় ছাড়া দিব্যি ভালো থাকবে৷
নিয়তি পাখিগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখের জল মুছতে মুছতে মনে মনে বলছে, ” আমাকে আটকাবেন না৷ আমাকে একটুও ভালোবাসেননি৷ আমি একটুও আপনার মনে জায়গা করতে পারিনি।” নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছে।
নিয়তি চৌকাঠে পা রাখার আগেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিশে নেয়। নিয়তিও পরম আদরে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ কেউ কোন কথা বলছে না৷ শুধু দুইজনের চোখের জল তাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।
নির্বণ নিয়তিকে এমনভাবে দুই বাহুর মাঝে আটকিয়ে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে। নিয়তিও যেন আজ নির্বণের বুকে চির সুখের জায়গা খুঁজে পেল৷
পাতা উল্টে দেখো একটা গল্প লেখা।
একটু জানা কাহিনি কিছু কিছু অজানা।
একটা গোধুলি বেলা কনে দেখা আলোতে।
একটু উলো সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে। (২)
ছবির মতো একটা ছোট ঘরে৷
বরণ ডালায় সাজালো কে?
তুমি আমি দুজনে রয়েছি হৃদয়ের বাঁধনে
→→সাত পাকে বাঁধা ←←
— নিয়তি প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷
— আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।অনেক বার অনেক ভাবে বুঝাতে চেয়েছি৷ কিন্তু কোনদিন বুঝাতে পারিনি৷ কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।
— একদম এসব কথা আমার সামনে বলবে না৷ তুমি কোথায় থেকে বড় হয়েছো। সেটা আমার কাছে বড় কিছু নয়৷ সবার আগে তুমি একজন মানুষ৷ আমি তোমায় কখন ছাড়তে পারব না৷
— চলেই তো যাচ্ছিলাম। কই একবারের জন্যও মানা করেননি তো।
— তুমিও তো একবারও বল নি, তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি না আটকালে তো তুমি চলেই যেতে।
— তো কি করব? আপনি তো সেই ছোঁয়াকে এখনো ভুলতে পারেন নি৷ আমায় ভালোবাসবেন কিভাবে? আমি আপনাকে ঠিকই ভালোবাসি৷ কিন্তু আমি আজ থেকে এই রুমে থাকতে পারব না৷
নিয়তি কথা শুনে নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমি ছোঁয়াকে ভালোবাসি না৷ আর এই রুমে থাকবে না তো কই থাকবে?”
— আমি গেস্ট রুমে থাকব৷ যতদিন পর্যন্ত আপনি ছোঁয়াকে না ভুলে আমায় এই ঘরে নিয়ে আসবেন না , ততদিন আমি অপেক্ষা করব আপনার৷
নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনাকে নাকে দড়ি দিয়ে যদি না ঘুরাতে পারি আমিও নিয়তি নয়৷ আজই আমি ছোঁয়ার ভুত আপনার মাথা থেকে নামাব।
নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷
— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাত ধরলেন কেন।”
— আর এক পা এগিয়ে দেখো তোমার পা ভেঙে এখানে রেখে দিব৷
— আপনি তাই তো করতে পারেন। শুধু হুমকি দিয়ে পারেন৷ ভালোবাসা দিয়ে মন থেকে জয় করতে হয়৷
— কিভাবে ভালোবাসা আদায় করতে হয় আমার জানা আছে?
চলবে…..