শুরুটা_অন্যরকম #পর্ব_২১,২২

0
410

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২১,২২
#অধির_রায়
২১

চন্দ্রদেবের মুগ্ধ সিদ্ধ চাঁদের আলোর অবসান ঘটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। সকালের সূর্যের লালবর্ণ হলুদ রশ্মি কাঁচ বেধ করে নিয়তির গায়ে পড়ছে ৷ রাতে লেট করে ঘুমানোর জন্য সকাল সকাল উঠতে পারেনি৷

নিয়তি চোখ মেলে দেখে বিছানা খালি৷ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬ঃ৩০ বাজে। নির্বণকে দেখতে না পেয়ে নিয়তির বুকটা চিন চিন করে ব্যথা করতে থাকে। নিয়তি হন্তদন্ত হয়ে নির্বণকে খুঁজতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণকে ওয়াসরুম, বাড়ির ছাঁদ ইভেন প্রতিটি ঘরে খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে৷

নিয়তি কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ এত সকালে কোথায় যাতে পারে? নির্বণের ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছে। যার জন্য নিয়তির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ নিয়তি মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ে৷ হঠাৎ করেই চোখ আটকে যায় ট্রি টেবিলে। ট্রি টেবিলের গ্লাসের নিচে একটা চিরকুট নিয়তির চোখে পড়ে৷

নিয়তি অতি আগ্রহ নিয়ে চিরকুটটা খোলে৷ চিরকুটটা খুলতেই নিয়তির মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠে। নিয়তি মুচকি হেঁসে চিরকুট পড়তে শুরু করে,

“প্রিয়তমা,
শুভ সকাল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের সাথে গল্প করবে৷ আমি তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি। আমি জানি তুমি গতকাল রাতে অনেক লেট করে ঘুমিয়েছো। তোমাকে না জানানোর জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি৷ আমার অফিসে আজ অনেক কাজ আছে৷ সারাদিন খুব বিজি থাকবো৷ ফোন বন্ধ থাকবে৷ প্লিজ রাগ করো না অভিমানী।
নির্বণ

________

–“মা আপনাকে একটা কথা বলবো প্লিজ কিছু মনে করবেন না৷” হাত কাচুমাচু করে।

— আভয় বানী দিয়ে, “আরে পাগল মেয়ে তুমি তো আমার সোনা মা। আমি কি তোমার কথায় রাগ করতে পারি?”

— আচ্চা মা নির্বণ কি কি খেতে ভালোবাসে? আমি চাই আজ নিজ হাতে নির্বণের জন্য রান্না করতে৷

— বেশ তো৷ এতে রাগের কি হলো? আমিও চাই তোমরা এভাবে একে অপরকে এভাবে ভালোবেসে যাও৷ তুমি কি জানো?

— মা আপনি কোন বিষয়ে জানার কথা বলছেন? হ্যাঁ, মা ৷ আমি মোটামুটি রান্না করতে পারি৷

— আমি রান্নার কথা বলিনি৷ মেয়েরা রান্নার মাধ্যমে স্বামীদের মন জয় করে৷ ভালো রান্না হলে স্বামীদের মন গলতে একটুও সময় লাগে না৷ আমি মন জয়ের কথা বলছি৷

— আমি সে জন্য রান্না করবো না৷ আমি আজ নির্বণের জন্য ভালোবেসে রান্না করব৷ যতটুকু পারি ততটুকু দিয়ে চেষ্টা করব৷ কিন্তু কি খেতে পছন্দ করে, বললেন না তো?

— নির্বণও আমার মতো বাঙালি খাবার খেতে পছন্দ করে। যেমনঃ চিতলের মইঠা, সরষে ইলিশ, সব থেকে বেশি পছন্দ করে স্যান্ডউইচ। যদিও স্যান্ডউইচ বাঙালি খাবার নয়৷

— আচ্চা মা আমি আজ চিতলের মইঠা, সরষে ইলিশ রান্না করব৷ কিন্তু মা আমি চিতলের মইঠা তেমন রান্না করতে পারি না৷

— অরিন রুমে ঢুকতে ঢুকতে, ” কোন চিন্তা নেই। আমি অরিন, সব কাজ পারি৷ আমি ছোট ম্যামকে মইঠা বানানোর কাজে সাহায্য করব৷”

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” তাহলে তোমার কোন চিন্তা নেই৷ আজ তাহলে জমিয়ে খাওয়া হবে৷ কি বল নিয়তি?”

— হ্যাঁ, মা। আজ রাতে আমরা সবাই এক সাথে বসে খাবো৷
এখন আর আপনি আমাকে কথায় মায়াজালে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না৷

— আমি তোমাকে আটকাতে যাব কেন? আমি জানি তুমি এখন আমাকে হাজারটা বকা দিবে৷ আমি নিজেকে নিয়ে কেন ভাবি না ?

— একদম আপনি সত্যি নিজেকে নিয়ে ভাবেন না৷ আমি আপনাকে বলেছি যে, “আপনি সব সময় মোভ অন করে যাবেন৷” কিন্তু আপনি একটু নড়াচড়া করতে চান না৷

— আমার খেয়াল রাখার জন্য আমার সোনা মা আছে৷ সেজন্য আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি না৷

— একটু উঁচু স্বরে বলে উঠে, “তাই তো দেখতেই পাচ্ছি৷ এখন কথা না বলে ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন৷”

— চকিত হয়ে, “আমি একা ওঠে দাঁড়াব!” আমার দ্বারা হবে না৷ আমার খুব ভয় লাগে। যদি পড়ে যায়।

— মা আপনাকে পারতেই হবে৷ এভাবে হলে চলবে না৷ আর কতদিন আপনি এভাবে শুয়ে থাকবেন৷ আপনাকে আমি এই অবস্থায় দেখতে পারব না৷

— প্লিজ আমার সোনা আমার উপর রাগ করে না৷ আমি তো এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। ওঠে বসতে পারি৷ হুইলচেয়ার বসে চলাচল করতে পারি৷ নিজ হাতে খাবার খেতে পারি৷ উভয় হাতে শক্তি পায়৷

— আপনি শুধু ইমোশনাল কথা বলেন৷ যার ফলে আমার কষ্ট হয়৷ আমি জানি আপনি খুব ভয় পান৷কিন্তু কিসের ভয়? আমি সব সময় আপনার সাথে আছি, থাকব, আর চিরকাল আপনার পাশে থেকে যাব। আমি থাকতে আপনাকে কোন কষ্ট পেতে হবে না।

— এইতো আমার সোনা মায়ের মতো কথা৷

নিয়তি নির্বণের মাকে ধরে ধরে হাঁটানো শিখাচ্ছে। নির্বণের মা এখন একদম ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে। ছোট বাচ্চাদের যেমন বাবা হাত ধরে হাঁটানো শেখান৷ তেমনি নিয়তিও নির্বণের মাকে হাঁটানো শেখাচ্ছেন।

__________

নিয়তি ডাইনিং রুমে পায়েচারী করছে৷ রাত ১২ টা বাজে এখন নির্বণ অফিস থেকে আসছে না কেন? নির্বণ তো কখনও এত রাত করেনি৷ নির্বণের জন্য রান্না করা খাবার সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷

হুট করেই ডাইনিং রুমের সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়৷ নিয়তি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেও থেমে যায়৷ কারণ এখন অনেকে ঘুমিয়ে আছে৷ ঘুমটা একদম কাঁচা। নিয়তি ধীরে ধীরে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ হুট করেই নিয়তিকে পিছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে। নিয়তির বুঝতে বাকি রইল না লোকটি কে?

— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনি খুব পচা লোক। আর একটু হলে আমি ভয়ে মারা যেতাম৷”

— নিয়তির পেটে সোরসোরি কেটে, ” আমি ছাড়া আমর বউটাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার সাহস রাখে কে? যে হাত বাড়াবে সে হাত আমি কেটে রেখে দিব৷”

— হয়েছে এবার তো লাইট অন করেন৷ আর আমাকে সারপ্রাইজ দিতে হবে না৷ আমি আপনার উপর রেগে আছি৷ আপনি একটা বারও আমাকে ফোন করে জানানোর কথা ভাবলেন না৷

নির্বণ লাইট অন করে কান ধরে ওঠ বস শুরু করে। নিয়তি নির্বণের কান্ড দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

— চকিত হয়ে, ” আপনি কি পাগল হলেন!” এভাবে কানে ধরার মানে কি?

— প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনও এমন করব না৷ তুমি যা বলবে আমি তাই করব৷

— নির্বণকে রাউন্ড করে, ” সত্যি বলছেন তো আমি যা করতে বলব আপনি তাই করবেন।”

— নির্বণ কিছু একটা চিন্তা করে, ” হ্যাঁ ম্যাম। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।হুকুম করেন আমি কি করতে পারি?”

— আপনাকে কিছু করতে হবে না এখন। এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন৷ আমি আপনার জন্য খাবার সার্ভ করছি।

— আসলে নিয়তি খাওয়ার আগে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই৷

— আজ আবার কিসরে সারপ্রাইজ? আর হ্যাঁ আমি এমনি অনেক সারপ্রাইজ হয়ে আছি৷ আমি আর সারপ্রাইজ হতে চাই না৷

— অসহায়ের মতো মুখ করে, ” জানিস নির্বণ তোর কথা শুনার মতো কারো সময় নেই৷ তোকে কেউ চিনে না৷ তুই কে?”

— এই যে মি. স্বামী। আপনি আপনার নাটক বন্ধ করেন৷ আপনি বলেন আমি ড্রামাবাজ। তুফাল মেইল৷ এখন দেখছি আপনিও কম কথা জানেন না৷ আর নাটকে আপনি আমার থেকে বেস্ট।
,
— আমি আপনার সাআ কথা মাথা পেতে মেনে নিলাম৷ এখন আমার সাথে তোমাকে একটু বাগানে যেতে হবে।

— আমি রাতে বাগানে যেতে পারব না৷ আর এত রাতে আমি বাগানে গিয়ে কি করব?

— ওই তো আমরা আকাশের চাঁদ দেখবো। রাতের আকাশে চাঁদের আলোই বসে তোমার সাথে গল্প করব৷

— মহাশয় আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই৷ আর চাঁদের আলো দেখার জন্য বাহিরে যেতে হবে না৷ আমরা বরং ছাঁদে চাঁদের আলো উপভোগ করতে পারি।

— হ্যাঁ পারি৷ প্লিজ আমার সাথে তোমাকে এখন বাহিরে যেতে হবে৷ আমার একটা কাজ আছে৷

— কি কাজ? আর এত রাতে বাহিরে আপনার কি কাজ থাকতে পারে?

— আরে বাহিরে না গেলে জানতে পারবে কিভাবে? আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷ তুমি আমার সাথে এখন বাহিরে যাবে৷

নির্বণ নিয়তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিয়তিকে এক প্রকার টেনে বাহিরে নিয়ে আসে। নিয়তি বাহিরে এসে সামনের মানুষকে দেখে ফ্রিজ হয়ে যায়৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। ভাবতেও পারেনি নির্বণ এমন কাজও করতে পারে।

চলবে…..

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২২
#অধির_রায়

নিয়তি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিছুই বুঝতে পারছে না কি করা উচিত? নির্বণের নিয়তিকে হালকা করে ধাক্কা দিলে নিয়তি বাস্তবে ফিরে আসে৷

— নির্বণ কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” কি হলো নিয়তি, তুমি খুশি হও নি?”

নিয়তি দৌড়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে৷ নিয়তি কিছু বলছে না৷ শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। নিয়তি এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ” তার সামনে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে৷”

— নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে, ” পাগল মেয়ে এবার কান্না থামাও। আর কত কান্না করবে৷”

— নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” বাবা তুমি দুইদিন থেকে ফোন রিসিভ করনি কেন? আমি তোমাকে কতবার ফোন করেছি, তুমি জানো?”

— আসলে একটা কাজে বিজি ছিলাম৷ সেজন্য ফোন ধরতে পারিনি৷

— তুমি একা এসেছো, দিদি আসেনি কেন?

— না মা তোমার দিদিকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিয়েছে৷ তাদের বাড়িতেই ছিলাম এতদিন৷ আজ বাড়িতে আসার পর নির্বণ বাবা আমাকে এখানে নিয়ে আসে৷ আমি আসতে চাইনি৷

নিয়তি মুগ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বাবা মেয়ের ভালোবাসা উপভোগ করছে৷ নিয়তি চাহনি দেখে নির্বণ বলে উঠে, ” এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবেন? নিয়তি বাবাকে ভিতরে নিয়ে আসো ৷ অনেক রাত হয়েছে৷

নিয়তি তার বাবাকে ভিতরে নিয়ে আসে। খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নির্বণ এক প্রকার বাধ্য হয়ে খাবার খেলো। নির্বণ খাবার না খেলে নিয়তি রাতে খাবে না৷ নিয়তি তো জানে না, সে খেয়ে এসেছে।

নিয়তি খাচ্ছে আর নির্বণের দিকে তাকাচ্ছে। নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কত কষ্ট করে নিজের হাতে রান্না করলাম৷ রান্নার বিষয়ে কিছু বলল না৷ আমি কি খুব বাজে রান্না করেছি?”

______

— পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ” এভাবে মন খারাপ করে আছো কেন সুইটহার্ট? আজ তোমাকে এত বড় সারপ্রাইজ দিলাম কই আমাকে ধন্যবাদ দিবে তা। আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?”

— একদম ঠিক কাজ করছি৷ আজ আমি কত কষ্ট করে শুধু আপনার জন্য.. (থেমে যায়)

— আমার জন্য কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না৷
নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমার জন্য মেবি বাসরের ব্যবস্থা করেছো?”

— নিয়তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে, ” আপনি কিছু বুঝবেন না৷ শখ কত বাসর করতে আসছে। মেরে ভর্তা বানিয়ে দিব৷”

— নির্বণ পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে, ” দেখ তোদের গুন্ডি পাষাণ মা৷ আমাকে মেরে ফেলতে চায়৷” আমি এত কষ্ট কোথায় রাখবো? এক কাজ কর, তোদের ডানাগুলো আমাকে দান কর। আমি আকাশে উঠে যায়।”

— হয়েছে, আর নাটক করতে হবে না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি যদি ঘুমাতে না চান তাহলে এখানে বসে বসে, ” দ্যা ক্যামেরা” গল্প পড়েন৷ আপনি তো আবার বাংলা গল্প পড়েন না৷

নিয়তি অভিমান করে চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

— নেশা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমার সাথে সব সময় রেগে থাকো কেন? মাঝে মাঝে ভালোবাসাও তো দিতে পারো।”

— আপনি একটা পঁচা লোক। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে আমাকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছেন৷ কি এমন রাজ কাজ করেছেন? মানুষকে চিন্তায় ফেলতে ভালো লাগে।

— সুইটহার্ট তুমি ঘুমিয়ে ছিলে সে জন্য বিরক্ত করতে চাইনি৷ তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসলাম তাও রেগে থাকবে৷ কান ধরে ক্ষমা চাইছি।

— “হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না৷ আজ কত কষ্ট করে আমি আপনার জন্য রান্না করলাম৷ আপনি কিছুই বললেন না৷” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।

— “কে বলেছে আমি কিছু বলিনি? সত্যি বলতে খাবার গুলো একদম বাজে ছিল। আমি তো প্রথম ভেবে নিয়েছিলাম সস্তা হোটেল থেকে নিয়ে এসেছো?” নিয়তিকে রাগান্বিত করার জন্য।

— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তাহলে আপনি তখন বলেন না কেন? বাবা কিছু না বলেই খেলে নিও। আপনি আসলেই একটা পঁচা লোক।” তার থেকে বড় কথা একজন ড্রামাবাজ। কারণ সবাই খেয়ে প্রশংসা করেছে।

নিয়তি কথাগুলো চোখ বন্ধ করে এক টানা বলে ফেলে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে কোথাও নির্বণ নেই৷ নিয়তির দৃষ্টি নিচের দিকে পড়তেই নির্বণকে দেখতে পাই৷ নির্বণ হাঁটু গেড়ে বসে আছে৷

— চকিত হয়ে, ” একি আপনি নিচে কেন! উঠেন বলছি৷”

— নির্বণ মিষ্টি হেঁসে, “তোমার পা দুটো একটু বাড়াও।”

— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি পাগল হলেন? আমি আপনার দিকে পা বাড়াবো৷ আপনি এটা কিভাবে ভাবলেন?” আমি পা বাড়াতে পারব না৷

— নিয়তি তুমি কি এখনো সেই সত্য যুগের মেয়ে রয়েছে? আমি বলছি তুমি তোমার পা আমার হাঁটুর উপর রাখো।

— নিয়তি নরম স্বরে বলে মনে, ” আমি এমন কাজ করতে পারব না৷ প্লিজ আমাকে এই কাজে জোর করবেন না৷”

— নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” নিয়তি আমাকে বাধ্য করো না এমন কোন কাজ করতে৷ তুমি ভালো করেই জানো আমি চাইলে কি করতে পারি?”

নিয়তি নির্বণের রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ কারণ নিয়তি এই রাগের সাথে অনেক পরিচিত। নিয়তির সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা পা’দুটো ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে বাড়িয়ে দেয়৷

নির্বণ নিয়তির পা টার্চ করতেই নিয়তির দেহে কারেন্ট বয়ে যায়৷ নিয়তি চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। নির্বণ অতি যত্নে নিয়তির পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি এখনো চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না৷

— অন্য পা এখন বাড়িয়ে দাও৷ আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না৷

নিয়তি অন্য পা ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে বাড়িয়ে দেয়৷ নির্বণ অতি যত্ন সহকারে দুই পায়েই নুপুর পড়িয়ে দেয়৷ নির্বণ নিয়তির চোখে ফুঁ দেয়৷ যার ফলে নিয়তি আঁখি মেলে তাকায়।

— ভয়ের কিছু নেই৷ আমি তোমার জন্য ভালোবেসে এই নুপুর জোড়া নিয়ে এসেছি৷ ধরে নাও এটা তোমার রান্নার জন্য গিফট।

নিয়তি ভাবতেও পারিনি নির্বণ তাকে এত তারাতাড়ি ভালোবেসে ফেলবে। যে নির্বণ নিয়তিকে সহ্য করতে পারত না৷ আজ সেই নির্বণ নিয়তিকে এত ভালোবাসে। নাকি নির্বণ কোন অভিনয় করছে?

নিয়তির বুকটা কেঁপে উঠতেই নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে বিছানা বসিয়ে দেয়৷

— ম্যাম এবার ঘুমাতে পারেন৷ আপনাকে আর বিরক্ত করব না৷

নিয়তি শুয়ে শুয়ে শুধু নির্বণের কথা ভেবে যাচ্ছে। নির্বণ তার সাথে কোন গেম খেলছে না তো। হঠাৎ করে এমন চিন্তা মাথায় কেন আসলো?

নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে৷ নিয়তির দিকে ছোট আঁখি মেলে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? ”

— নিয়তি কথাটা বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আপনি তো আমাকে এই মাত্র ঘুমাতে বললেন? আমি তো ঘুমানোর চেষ্টা করছি৷”

— আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, ” তুমি আমার বুকের মাঝে ঘুম আসবে। যেহেতু অন্যায় করেছো তার জন্য শাস্তি পেতেই হবে।”

— নিয়তি একটু নড়তেই নির্বণ নিয়তিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। নিয়তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়তি চুলে মুখ লুকায়৷ নিয়তি নির্বণের এমন স্পর্শ পেয়ে পাগল হয়ে উঠে৷ নিয়তিও নির্বণকে চেপে ধরে। নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।

__________

পাখির কিচির মিচির শব্দে নিয়তির ঘুম ভাঙে। নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে এখনও সকাল হতে প্রায় এক ঘন্টা সময় আছে৷ নিয়তি নিজেকে আবিষ্কার করে নির্বণের উম্মুক্ত বুকের মাঝে।

নিয়তি একটু নড়তে পারছে না। নির্বণ দুই বাহুর মাঝে চেপে ধরে আছে। বাধ্য হয়ে নির্বণের উম্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে৷ আসলে নির্বণের কাছ থেকে দূরে যেতে মন চাচ্ছে না৷

প্রতিদিনের মতো নির্বণের ঠিক টাইমে ঘুম ভেঙে যায়৷ ঘুম থেকে উঠে নিয়তিকে প্রতিদিনের নিজের বুকে আবিষ্কার করে। নিয়তির অবাধ্য কেশগুলো কানের পাশে গুছে দিচ্ছে। আর নিয়তিকে অপলক দৃষ্টিতে দর্শন করে যাছে৷

— নিয়তি আঁখি মেলে, ” তাহলে এভাবে প্রতিদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙানো হয়৷”

— ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে, “তুমি আজ ঘুম থেকে উঠে পড়েছো। কখন উঠলে? আমাকে ডাক দিলে না যে।”

— কিভাবে ডাক দিব? আমি একজন অবলা শিশু৷ আর আপনি কিনা আমাকে দুই বাহুর মাঝখানে চেপে ধরে আছেন৷ আমি একটু নড়তে পারছি না৷

— “তোমার বাসা তো আমার বুকেই৷ যদি তুমি কোথাও হারিয়ে যাও তাই তোমায় বুকের মাঝে খুব যত্ন করে আগলে রাখি৷” হারিয়ে যাওয়ার কথা বলার সময় নির্বণের গলার স্বর পাল্টে যায়।

— আপনি এখনও খালি গায়ে আছেন কেন? আপনার ট্রি শার্ট কোথায়? আমি আপনাকে বলেছিলাম আমার সামনে খালি গায়ে থাকবেন না৷

— নির্বণ শয়তান হাসি দিয়ে, ” রাতে তুমিই আমার গায়ের ট্রি শার্ট খুলে দিয়েছো? রাতের কথা মনে আছে তো। আবার হয়ে যাক।”

— আপনি সত্যিই একটা অসভ্য। এমন করলে পাঠকরা আপনাকে পিটাবে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। নির্বণ মুচকি হেঁসে কম্বল মুড়িয়ে দিয়ে লম্বা বরাবর শুয়ে পড়ে।
_____________

ব্রেকফাস্টের পর নির্বণের মা জরুরি কাজের জন্য নির্বণ নিয়তি সহ বাড়ির সকলে ডেকে পাঠিয়েছেন। নিয়তির বাবাকেও ডেকে পাঠিয়েছেন।

নিয়তি একটু দৌড়ে দাঁড়িয়ে রাম রাম জব্দ করে যাচ্ছে৷ হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে এটা ভেবে যে, “তার বাবাকে নিয়ে কিছু বলবে নাতো৷ বর্তমান সমাজে মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে মেয়েদের মা বাবাকে এলাউ করে না। ”

— সবার হয়ে নির্বণ বলে উঠে, “মা তুমি আমাদের সবাইকে এক সাথে ঢাকার কারণ কি? কোন কি সমস্যা হয়েছে?”

— নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “জীবন চলার পথের সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে৷ যা বুঝার ক্ষমতা তোমার হয়নি৷”

নিয়তি আরও ভয় পেয়ে যায় নির্বণের সাথে কর্কশ কন্ঠে কথা বলাতে৷ নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” মা কি সমস্যা হয়েছে? আমাদের বলেন আমরা সেই সমস্যা এক হয়ে সমাধান করব৷”

— কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” পারবে কি তুমি সেই সমস্যার সমাধান করতে?”

— মা আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব৷ আপনি শুধু বলেন না, আমায় কি করতে হবে?

— তাহলে দূরে সরে দাঁড়াও৷ আমি সেই কথা মুখে বলবো না, করে দেখাবো।

নির্বণের মায়ের কথামতো সবাই দূরে সরে দাঁড়ায় নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” অরিন আমার লাঠিটা এনে দে তো?”

অরিন নির্বণের মায়ের কথামতো লাঠি না দিয়ে একটা চিরকুট এর খাম দেয়। এতে সবাই অবাক হয়ে যায়৷ চাইল লাঠি দিল চিরকুটের খাম৷ কিভাবে কি হচ্ছে কারো মাথায় ঢুকছে না?

নির্বণের মা আজ নিজে থেজে বিছানা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে৷ সকলের মুখে হাসি চোখে আনন্দের জল। কেউ কোনদিন বিশ্বাস করেনি নির্বণের মা হাঁটতে পারবে৷

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” কেমন সারপ্রাইজ দিলাম? সবাই তো ভয় পেয়ে গিয়েছে।”

নির্বণ তার মাকে নিজ থেকে হাঁটতে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷ নির্বণের মাথায় হাত বুলিয়ে, ” বাচ্চা পোলাপানের মতো কান্না করার কি আছে?” আমি খুব রেগে আছি তোমাদের উপর৷

— নির্বণ চকিত হয়ে, “মা আমরা কি করলাম!”

— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠেন, “হাতটা বাড়িয়ে দাও৷”

নির্বণ ভয়ে ভয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। নির্বণের মা চিরকুট এর খামটা নির্বণের হাতে তুলে দেয়৷ নির্বণ চিরকুট পড়ে অবাক হয়ে যায়৷ নির্বণ ভাবতে পারেনি, মা তাদের জন্য এসব করতে পারে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here