শুরুটা_অন্যরকম #পর্ব_২৩,২৪

0
311

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৩,২৪
#অধির_রায়
২৩

— আমি আমি এ খাম দিয়ে কি করব?

— খাম দিয়ে কিছু করতে হবে না৷ এখন খামটা খুলে দেখো। এখানে কি লেখা আছে?

নির্বণ খামটা খুলে দেখে দুইটা সুইজারল্যান্ডের টিকেট। একটা নির্বণের নামে, অন্যটা নিয়তির নামে। পাঁচ দিনের জন্য টিকেট কেটে রেখেছেন নির্বণের মা৷

— মা এখানে তো আমার আর নিয়তির সুইজারল্যান্ডের টিকেট।

— হ্যাঁ, আমি তোমাদের হানিমুনের ব্যবস্থা করেছি৷ ছয় দিন পরেই তোমাদের ফ্লাইট। আমি কোন অজুহাত শুনতে চাইনা৷

— মা তুমি জানো আমাকে অফিসে অনেক কাজ করতে হয়৷ আমি না থাকলে অফিসে কেউ তেমন কাজ করে না৷

— সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না৷ আমি সব সামলে নিব।

— নির্বণ আশ্চর্য হয়ে, “মা তুমি এই শরীরে অফিস জয়েন্ট করবে৷ প্লিজ মা এমন করো না, তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে আবার৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷
কথাগুলো বলার সময় নির্বণের গলা ধরে আসছিল।

— যদি সৃষ্টি করে চান তাহলে আমার কোন ক্ষতি হবে না৷ ডাক্তার তো বলে দিয়েছিল আমার আয়ুষ্কাল মাত্র ৩০ দিন। বাট আমি এখনো বেঁচে আছি৷ আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷

— মা তুমি সব আমাকে ব্লাকমেইল কেন কর? তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতেও দু’বার ভাবাবো না৷

_________

নিয়তি, নিয়তির বাবা, নির্বণ, নির্বণের মা এক সাথে অফিসে প্রবেশ করে। তাদের সকলকে এক সাথে প্রবেশ করতে দেখে সকলের মুখে হাসি।সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন তাদের মালকিন নির্বণের মাকে দেখে৷ সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।

নির্বণের মায়ের হুকুমে সবাই বড় একটা হল রুমে একত্রিত হয়৷ নির্বণের মা সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন, ” আজ থেকে আমি আর নিয়তির বাবা এই কোম্পানি দেখাশুনা করব৷ আর তোমাদের স্যার এন্ড তোমাদের ম্যাম কিছুদিনের জন্য দেশের বাহিরে যাবে। যতদিন ব্রেক না করছে ততদিন আমরাই এই কোম্পানি পরিচালনা করব৷”

নির্বণের মায়ের বক্তব্য শুনে সকলেই হাত তালি দেয়৷ নির্বণ একে একে সবাইকে সব কাজ বুঝিয়ে দেয়৷

— নিয়তি বলে উঠে, ” আপনারা এই সময় বসে থাকবেন, রেস্ট নিবেন। আমাদের জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন৷”

— নির্বণের না অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে, ” আমি তোমাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত এজন্য নিয়েছি যেন আমি নাতি বা নাতনির মুখ দেখতে পাই৷”

— “মা সেটা আপনার ছেলেকে বলেন৷ আমি কিছু জানি না৷”

নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়৷ নির্বণ এবার বিপদের মুখোমুখি। নির্বণের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে তার মা৷ তার মা হলে মেনেজ করে নেওয়া যেত৷ ড্যাবড্যাব করে তার শ্বশুর মশাইও তাকিয়ে আছে।

— নির্বণ আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” আসলে মা আমার একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। আমি এখনি আসছি৷”

নির্বণ কোন রকম নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে রুম থেকে চলে আসে৷ নির্বণের মা আর নিয়তির বাবা অট্ট স্বরে হাসি দেয়৷
________

রাতের আঁধারে নিয়তি পেটের উপর হালকা কারো স্পর্শ পেয়ে জেগে উঠে। ঘুম ঘুম স্বপনে তাকিয়ে দেখে নির্বণ নিয়তির পেটে ট্যাটু একে যাচ্ছে৷ নিয়তি লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।

— কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি এসব কি করছেন? সকলের নজর এখন থেকে আমার পেটের উপর থাকবে।”

— কেউ দেখতে পারবে না। কাদের এত বড় সাহস আছে, আমার নিয়তির দিকে নজর দিতে। চোখ তুলে ফেলবো।

— আপনি আমার পেটে ট্যাটু আর্ট করছেন কেন?

— আমি তোমার পেটে ট্যাটু আর্ট করিনি৷ আমার বেবিকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। চুপচাপ কোন কথা বলবে না৷

— ভাগাড়ে গিয়ে মারা যান৷ আপনি একটা লুচু পোলা৷ আগে ভাবতাম আপনি খুব ভালো একজন মানুষ৷ দিনে দিনে আপনি এত লুচু টাইপের পোলা হয়ে যাচ্ছেন যে, “কইতেও শরম লাগে।” লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে উঠে।

— নিয়তির পেটে শুরশুরি দিয়ে, ” আমি এখনও কোন লুচু কাজ করিনি৷ আর তোমার মম্ আমাকে লুচু বানিয়ে দিল। তুমি তোমার মমকে বকে দাও৷”

— নিয়তি হেঁসে , ” এই আপনি বার বার এমন করেন কেন? আমার ঘুমটা না ভাঙানো অব্দি আপনার শান্তি হয়নি৷ এখন আমার সাথে অসভ্যতামি শুরু করলেন?”

— নিয়তিকে চোখ মেরে, ” তুমি মাকে কি বলেছিলে? তুমি তো বলেছিলে ‘আসবে তোমার কোলে ছোট সোনা’ সেটা আমি জানি৷ তাই আমি আমার ছোট সোনার আসার ব্যবস্থা করছি৷”

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন আসছে আহ্লাদ দেখাতে৷ আমি ঘুম আসবো৷ আমাকে বিরক্ত করবেন না৷”

নিয়তি কম্বল টেনে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে কম্বলের নিচে চলে যায়৷

— নিয়তির দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে গলায় নাক ঘেঁষে, ” তুমি আমার ঘোর লাগানোর বর্ষা৷ তোমাকে কাছে পেলে আমি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি৷”

নিয়তি নির্বণের নেশা ভরা কন্ঠের মায়াজালে আটকে পড়ে৷ নিয়তি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিয়তি বুঝতে পারছে না, সে কি বলবে?

নির্বণ নিয়তির গলায় কয়েকটা ডিপ কিস করতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণের ছোঁয়ায় পাগল হয়ে যায়। নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷

________

দেখতে দেখতে ফ্লাইটের সময় এসে পড়ে। নিয়তি নির্বণ সকলের আশীর্বাদ নিয়ে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

তারা সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলে উঠে৷ ছবির মতো সুন্দর মধ্যপ্রাচীর শহর বার্ন, সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। ১২ শতকের পুরানো ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই শহরটির মাঝে৷ ১৬ শতের আগে এরা সুইসের সাথে যুক্ত হয়নি৷ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রাচীন ক্লক টাওয়ার। যাতে জলন্ত আশ্চর্যজনক পুতুল আছে, একে “Zytglogge” বলে।

নিয়তি প্রথমবার সুইজারল্যান্ডে আসে৷ মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেল সুইজারল্যান্ডে নামকরা বিখ্যাত হোটেল। এই হোটেলের প্রতিটি আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে রাজকীয় কোন রাজবাড়ী। সবকিছু খুব সুন্দর করে সাজানো৷ মুগ্ধ নয়নে নিয়তি সব অপরুপ দৃশ্যগুলো দেখে যাচ্ছে৷ অপরুপ দৃশ্যগুলো হাত দিয়ে টার্চ করতে খুব মন চাইছে৷ কিন্তু হাত দিয়ে টার্চ না করে মন দিয়ে টার্চ করছে। দুই তলায় সিঁড়ির সাথে যে দেয়াল বিদ্যমান সে দেয়ালটি এমনভাবে গাছপালার প্রেইন্টিং করা দেখে মনে হচ্ছে বাস্তব দৃশ্য। নিয়তি এমন দৃশ্য মিস করতে চাইনা, তাই সে নিজের ফোনে কিছু ছবি তুলে নিচ্ছে।

নিয়তি দেখে মনে হচ্ছে কোন মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে আসা রোগী। একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি দৌড়ে দৌড়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। নির্বণের কোন কথা নিয়তির কান অব্ধি যাচ্ছে না৷

নির্বণ বাধ্য হয়ে নিয়তির হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়তিকে রুমে নিয়ে যায়৷ নির্বণদের রুম হলো সাত তলায়।

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” তুমি কি পাগল হয়েছো? এভাবে কেউ দৌড়ে দৌড়ে পিক তুলে। তুমি কি এটা ইন্ডিয়ান মনে কর?”

— নিয়তির নির্বণের রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে আমি বুঝতে পারিনি৷ মানে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না৷ কোনদিন তো এসব কিছু দেখিনি। আসলে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না৷”

— নির্বণ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে, “তুমি নিজের মাঝে ছিলে কিন্তু বুঝার চেষ্টা করনি৷ এমন ভাব করলে মানুষ তোমাকে পাগল ভাববে৷” এভাবে আর ছুটাছুটি করবে না৷ সেলফি তুলবে ভালো কথা৷ ধীরে সুস্থে সেলফি তুল৷ তোমাকে তো কেউ মানা করবে না৷

— হুম বুঝতে পেরেছি।

নির্বণ নিয়তির দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি বেড়ে বসে ভাবতে থাকে, ” এই লোকটার রাগ সব সময় ওঠেই থাকে। নিজে সেলফি তুলে না বলে আমাকেও সেলফি তুলতে দিবে না৷ যত্তসব ফাউল পোলা একটা।”

নিয়তির ভাবনার মাঝে বুঝতে পারে নিয়তি শূর্ণে ভাসছে৷ নিয়তিকে নিয়ে নির্বণ হাঁটা শুরু করলে নিয়তি বুঝতে পারে সে নির্বণের কোলে৷

— এই আপনি হুট হাট করেই আমাকে পাঁজা কোলায় তুলে নেন কেন? আপনার মতলব কি?

— আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই তোমাকে হুট হাট করে কোলে নেওয়ার৷ তোমাকে অনেকবার ডাকা হয়েছে। কিন্তু মহারানী ভাবনার মাঝে রাজ্য জয়ের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

— আমাকে নামান৷ আর আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন৷ আমি রাজ্য জয় করেই ফেলেছিলাম।

ওয়াসরুমে নিয়ে এসে নিয়তিকে নামিয়ে দেয় নির্বণ৷ কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই নিয়তির ঠোঁটে আঙ্গুল দেয়৷ নিয়তিকে বলার সুযোগ না দিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়৷ দু’জনে ঝর্ণার জলে ভিজে যাচ্ছে।

নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঝর্ণার জল নিয়তির ফ্রেসটা মুক্ত দানার মতো চকচক করছে। এলো কেশ বেয়ে ঝড়ে যাচ্ছে জল। লালচে ঠোঁটগুলো নির্বণকে কাছে টানছে৷ নিয়তিও নির্বণের দিকে ঘোর লাগানোর চাহনিতে তাকিয়ে আছে। সিল্কি চুলগুলো চোখের পাপড়ি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। সিল্কি চুল থেকে কপোল বেয়ে ঝড়ে যাচ্ছে ঝর্ণার জল। একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে৷

নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। নির্বণ এত কাছে আসাতে নিয়তি অনেকটা লজ্জা পেয়ে যায়৷

— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠে, ” আপনি আগে স্নান করে নেন৷ আমি পরে স্নান করছি৷”

— নিয়তির কোমর চেপে ধরে, ” আমি একা স্নান করতে পারব না৷ তুমি আমার সাথে স্নান করবে।”

— আমি পারব না আপনার সাথে স্নান করতে৷ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমি পরে স্নান করে নিব৷

— তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরে রাখিনি। আর আমি তোমার কথা শুনবো কেন? আমি এখানে আমার বেবির মায়ের সাথে হানিমুনে এসেছে৷ আমার বেবি যা চাইবে তাই হবে। তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট, এসিস্ট্যান্টের মতো থাকবে।

— কি আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট! তাহলে থাকেন আপনি আপনার বেবির মমকে নিয়ে৷ আমি চললাম৷

— নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির গলায় থাকা কালো তিলটায় ডিপ কিস করতে থাকে। নিয়তি বাধ্য হয়ে নির্বণের সাথে স্নান করে৷ নির্বণ দিনে দিনে যেমন লুচু টাইপের পোলা বের হচ্ছে যে, “নিয়তি চিনতেই পারছে না।”
________

দুপুরের খাবার খেয়ে নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণ ঘুমিয়ে পড়লেও নিয়তির চোখে ঘুম নেই ৷ নিয়তির মন শুধু হোটেলের বাহিরে ঘুরে দেখা৷ নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একা হোটেলের বাহিরে চলে আসে৷

— নিয়তি হোটেলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে৷ নিয়তি সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুইমিং পুলের নীল জল দেখে যাচ্ছে। গোধূলি বেলা সোনালী রোদ নিয়তির রুপটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে।

— সুইজারল্যান্ডের একজন হাফপ্যান্ট পড়া বিলাই মার্কা ছেলে নিয়তির সামনে দাঁড়িয়ে, ” ইউ আর সো হট৷ ইউ আর লুকিং সো সুইট। ইউ লিভ ইন উইথ মি৷

লিভ ইন কথাটা শুনে নিয়তির মাথায় রক্ত ওঠে যায়৷ নিয়তি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “কুত্তার বাচ্চা। মানুষ চিনে কথা বল৷ তুই আমার সাথে লিভ ইন করতে চাস৷”

— নিয়তির কথা বুঝতে না পেরে লোকটি মিষ্টি স্বরে বলে উঠে, ” ইউ এগ্রি।”

— নিয়তি কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” কুত্তার বাচ্চা তুই আমার সাথে লিভ ইন করতে চাস৷ আমি যদি তোর বারোটা না বাজিয়েছি তাহলে আমি ইন্ডিয়ান নয়৷ মেয়ে মানুষ দেখলে উল্টে পড়তে মন চাই।”

— নিয়তি শয়তানি হাসি দিয়ে, ” বেবি, উই ক্যান সুইমিং।

— খুশি হয়ে, “ইয়া সিউর৷ কম অন বেবি৷”

নিয়তি লোকটির হাত ধরে সুইমিং পুলের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তির চোখ যায় ছোট একটা স্টিকে৷ নিয়তি দৌড়ে নিয়ে আসে৷

— “হোয়াইট আর ইউ ডুইন দিস স্টিক?”

— এটা দিয়ে তোকে পিটাবো কুত্তার বাচ্চা৷ কিভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়, তোর আজ সে বিষয়ে ক্লাস নিব?

নিয়তি আর দেরি না করেই লোকটার চুল মুঠোয় চেপে ধরে। লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। কেউ নিয়তিকে আটকাতে আসছে না৷ নিয়তির অগ্নি দৃষ্টি দেখে সবাই দূরে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে।

নিয়তির লোকটা পিছনে লাথি দিয়ে লোকটাকে সুইমিং পুলে ফেলে দেয়৷

— লোকটি চিৎকাট করে বলে উঠে, ” আই উইল সি ইউ।”

চলবে…

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৪
#অধির_রায়

রাতের আকাশে তাঁরার মেলা। সব তারকাদের হার মানিয়ে উঠেছে পূর্নিমার চাঁদ। চাঁদের আলোই সুইজারল্যান্ডের বিচের সমুদ্রসৈকতে আয়েশ করে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে দু’জনে।

— নিয়তি নির্বণের কাঁধে মাথা রেখে, “চলেন আমরা বালির উপর দিয়ে হেঁটে কথা বলি৷ এভাবে বসে বসে আইসক্রিম খেতে ভালো লাগছে না৷”

— হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক বলেছো, আমরা হেঁটে হেঁটে আইচক্রিম খেতে পারি৷

আইসক্রিম হাতে নিয়ে দু’জনে হেঁটে হেঁটে খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার কথা বললে ভুল হবে৷ নিয়তির একবার নির্বণের আইসক্রিমের উপর অট্যাক করছে৷ নির্বণ নিয়তির আইসক্রিমের উপর। অবশেষে সুইজারল্যান্ডের স্পেশাল চক্রবাক আইসক্রিম ডাস্টবিনে জায়গা করে নিল।

বিচের সব থেকে বড় সুন্দর এবং আকর্ষনীয় দৃশ্য হলো সাগরের জল। চাঁদের আলোয় জলের গায়ে সাথে মিশে রয়েছে৷ প্রতিটি ঢেউয়ের বাঝে বাঝে ভিন্ন ভিন্ন কালারে পতিত হচ্ছে৷ ঢেউয়ের সাথে অনেকে খেলা করছে৷ যখন ঢেউ আসে তখন জল হালকা নীল রঙের দেখায়। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অদ্বিতীয়।

— মুখে এক ঝাঁক হাসির রেখা টেনে বলে উঠে, “আমিও স্নান করব সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ? দেখেন সকলে কত ঢেউয়ের সাথে মেতে উঠেছে৷”

— নির্বণ গম্ভীর কণ্ঠে, ” না, একদমই না৷ এখন স্নান করলে তোমার জ্বর আসতে পারে। আমরা এই আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি এখনও।” আমরা আসলাম মাত্র এক দিন হলো।

— “কিছু হবে না৷ প্লিজ চলেন না! আমি তো অনেল সয়মে অসময়ে স্নান করেছি৷” প্যাঁচার মতো মুখ করো

— অন্যদিকে মুখ করে, ” আমি সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে নামতে পারব না৷ তোমার ইচ্ছা হলে তুমি নিজেই স্নান করে নাও৷”

— নির্বণের সামনে দাঁড়িয়,” কেন? প্লিজ আমি আর কিছু করব না৷ একদম ভালো মেয়ের মতো থাকবো৷ আপনাকে কখনও বিরক্ত করতে যাব না৷ আপনি যত ইচ্ছা মুখ গম্ভীর করে থাকতে পারেন৷”

— কর্কশ কন্ঠে, ” তুমি কি কিছু বুঝতে চাও না৷ নাকি বুঝার চেষ্টা করো না। তোমার কোন আইডি আছে৷ রাত ১১ টার দিকে স্নান করবে৷ স্নান করা মানে জ্বরকে নিমন্ত্রণ করা৷”

— নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, “আপনার কিছু হবে না, আমি আছি তো৷ জ্বর হলে আপনার সব জ্বর আমি নিজের করে নিব৷ আপনাকে কখনও কষ্ট পেতে দিব না৷ ”

নিয়তি নির্বণের কোন কথা না শুনে নির্বণকে টেনে নিয়ে যায় স্নান করতে৷ নির্বণ বাধ্য হয়ে নিজের জিনিসপত্র একটা আইসক্রিম ওয়ালার কাছে রাখে। তারপর নিয়তির মুখের হাসির জন্য সমুদ্রের জলে নামে৷

অল্প জলে বালির সাথে খেলা করছে নিয়তি। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিয়তির হাসি নির্বণের মনে ভালোবাসার দাগ কেটে যাচ্ছে। যদি এই মুহুর্তটা থেমে যেত৷ তাহলে নির্বণ সারাজীবন নিয়তির দিকে এভাবে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।

— নির্বণের ঘোর কাটে নিয়তির জল ছিঁটানোতে। নির্বণ অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, “ননসেন্স।” এসব কি? আমার দিকে এভাবে জল ছিঁড়ে দেওয়ার মানে কি?

— সরি। আপনিকে অনেকক্ষণ থেকে ডাকা হচ্ছে৷ কিন্তু আপনি কোন সাড়া দেননি৷ এজন্য আমি আপনার চোখে মুখে জল ছিঁড়ে দেয়৷

নির্বণ বুঝতে পারে সে নিয়তির দেখার নেশার ঘোরে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। নির্বণ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷

— কোমল স্বরে, “আমার বেবির মম্ বুঝি রাগ করেছে আমার উপর৷ আমি তো সেটা ফার্ন করেছি৷ প্লিজ মন খারাপ কর না৷”

— অসহায়ভাবে বলে উঠে, “আমি কিছু মনে করেনি৷” চলেন আমরা এখন হোটেলে ফিরে যায়৷

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ এক হাত দিয়ে নিয়তির হাত ধরে অন্য হাত দিয়ে নিয়তির দিকে জল ছুঁড়ে মারে। নিয়তি চোখে হাত দেয়৷

— এই থামেন৷ আমার চোখে জল আসছে। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷

কিন্তু নির্বণ নিয়তির চোখের দিকে জল ছুঁড়েই যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অতি কষ্টে এগিয়ে আসে৷ আর নির্বণের মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷

___________

অনেকক্ষণ ধরে স্নান করছে কিন্তু কিছুতেই বালি গা থেকে উঠছে না৷ নির্বণ খুব রেগে আছে নিয়তির উপর৷ কিছুতেই নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না৷ প্রায় এক ঘন্টা থেকে নিয়তি ওয়াসরুমে স্নান করে যাচ্ছে। এই দিকে নির্বণের গায়ের বালি শুয়ে কাট হয়ে গেছে৷ ধীরে ধীরে শুকনো বালিই গা থেকে ঝড়ে যাচ্ছে৷

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিয়তি ওপেন দ্যা ডুর। আর কতক্ষণ লাগবে। প্রায় এক ঘন্টা থেকে তুমি ওয়াসরুমে কি করছো?”

— নিয়তি নির্বণের কথা শুনেও না শুনার ভান করে, “কি বললেন? বুঝতে পারি নি৷ প্লিজ পুনরায় আবার বলেন৷

— “নিয়তি ভালোভাবে বলছি দরজা খোল, না হলে দরজা ভেঙে ফেলবো।” রেগে বলে উঠে নির্বণ।
আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না৷

নিয়তি বুঝতে পারে তার উপর অনেক রেগে আছে৷ কোন উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমের দরজা খোলে দেয়৷

— নির্বণ ওয়াসরুমে প্রবেশ করে বলে উঠে, ” স্নান করতে কতক্ষণ লাগে। আমি তো মনে করতেছি তুমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছো।”

— ইনোসেন্ট ফ্রেস নিয়ে বলে উঠে, ” আমি কি করব বলেন? গা থেকে কিছুতেই বালি উঠছে না? দেখেন সোপ অর্ধেক হয়ে গেছে। কিন্তু বালি এখনও অর্ধেক হয়নি৷”

— নিয়তির মাথায় টুকা দিয়ে, “আরে বুদ্ধু এসব বালি একা তুলতে পারবে না৷ মানুষের গায়ের স্পর্শে এসব বালি উঠে যায়৷ কোনদিন হিন্দি মুভি দেখোনি৷ মানলাম তুমি সুইজারল্যান্ডে এর আগে আসো নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় কোনদিন পড়েনি মান্টিকালো বিচের বালির কথা।”

— মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে, ” আমি জানলে এমন কখনোই করতাম না৷ সোপ দিয়ে অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই কাজ হচ্ছে না।”

— সোপ দিয়ে এসব বালি উঠবে না৷ আমি তোমার বালি তুলে দিচ্ছি। তুমি আমার বালি তুলে দাও৷ তাহলে আমরা এই বালি থেকে মুক্তি পাবো৷

একে অপরকে সাহায্যের মাধ্যমে দেহ থেকে অনেক কষ্টে বালি দূরে করে। তাদের জীবনে এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা।

__________

ক্যাফেতে নির্বণের জন্য বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি৷ সেই সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি৷ খাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে। তাদের মাঝে কেউ তো সকালে উঠেনি৷ তাহলে খাবে কি করে?

রাতে অনেক দেরিতে ঘুমানোর জন্য তাদের ঘুম ভাঙে দুপুর বারো টার দিকে। নিয়তি ক্ষুধা লাগাতেই নিয়তি নির্বণকে ছেড়ে একাই ক্যাফেতে চলে আসে।

এই দিকে নির্বণ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে নিয়তিকে খুঁজে যাচ্ছে। হোটেলের ছাঁদে, বেলকনিতে, হোটেলের চারপাশে। কিন্তু কোথাও নিয়তিকে খুঁজে পাচ্ছে না৷ নির্বণের চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে৷ অচেনা শহরে কিভাবে নিয়তিকে খুঁজে যাবে? যেভাবেই হোক নিয়তিকে খুঁজে বের করতে হবে৷ নির্বণ আবার রুমে ফিরে আসে৷

নির্বণ ফোন হাতে নিয়ে মনে মনে বলে উঠে, “না নিয়তিকে একটা ফোন করে দেখি৷ নিয়তি মেবি ফোন নিয়ে গেছে। পুলিশের কাছে ডায়েরি না করে আগে নিয়তির কাছে ফোন দেয়।”

যেই ভাবা সেই কাজ৷ নির্বণ নিয়তির নাম্বারে ফোন দেয়৷ সুইজারল্যান্ডে আসার আগে নির্বণ এন্ড নিয়তি দুইটা সুইজারল্যান্ডের সিম কিনে নেয়৷ হঠাৎ কোন বিপদ হলে যেন তারা যোগাযোগ করতে পারে খুব সহজেই।

— নির্বণ কাঁদো কাঁদো স্বরে, ” নিয়তি তুমি ঠিক আছো কি? নিয়তি তোমার কিছু হয়নি তো।”

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আমার আবার কি হবে! আমি তো ঠিক আছি৷ আপনার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি৷”

— নির্বণ নিয়তির কথায় একটা ছোটখাটো ধাক্কা খায়। তার জন্য অপেক্ষা করছে মানে। আশ্চর্য হয়ে বলে উঠে, ” তুমি আমার জন্য কোথায় অপেক্ষা করছো? আর এই দিকে..(থেমে যায়) ”
না নিয়তিকে এই বিষয়ে না জানানোই ভালো।

— কি হলো? আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে৷ আপনি হোটেলের সামনের ক্যাফেতে চলে আসেন৷ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না৷

নির্বণ ফোন রেখে শার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে লিফ্টের কাছে চলে আসে৷ নির্বণ এই কয়েক মিনিটের মাঝে প্রায় হ্যাফ মেন্টাল হয়ে গিয়েছিল।


— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এভাবে না বলে চলে আসার মানে কি? কাউকে চিন্তায় না ফেললে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না৷’

— এভাবে বলার কি আছে? আমি ওয়াসরুমে ছিলেন৷ আর আমি তো আপনাকে জানিয়েছি৷ আপনি মেবি শুনতে পারেন নি৷

— ওকে ফাইন৷ এর পর যেন এমন ভুল আর না হয়৷ আমাকে না বলে কোথাও যাবে না৷

— প্রমিজ করছি৷ আর কখনও এমন ভুল করব না৷


নির্বণ নিয়তি খাবার শেষ শেষ করে হোটেলে ফিরে আসে৷ একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বিচের সাগরসৈকতে আবার আসে। কিন্তু তাদের পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here