#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৯,৩০
#অধির_রায়
২৯
“নিয়তি আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ প্লিজ নিয়তি আঁখি মেলে তাকাও?” নিয়তির মাথা কোলে নিয়ে কান্না করতে করতে নির্বণ বলে উঠে।
— নির্বণ চিৎকার করে বলে উঠে, “প্লিজ মা ডক্টরকে ফোন কর? নিয়তি সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।”
নির্বণের চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে নির্বণের রুমে আসে৷ সকলের চোখ আকাশ পানে৷ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷
একটু আগের ঘটনা..
নির্বণ সোফায় বসে বসে অফিসের কাজ করছিল। নিয়তি রুমে এসে নির্বণকে রুমে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়৷ নিয়তি জানে না যে, “আজ সানডে। ” জানে ঠিক খেয়াল নেই৷
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আপনি এখনও বসে আছেন? অফিসে কখন যাবেন?
— নির্বণ কাজে কনসোনেন্ট করেই বলে উঠে, ” আমি অফিসে কেন যাব? রোজ রোজ অফিসে যেতে ভালো লাগে না৷”
— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে, ” বললেই হলো অফিসে যাবেন না৷ এইতো কিছুদিন আগে অনেক অফিস মিস করলেন৷ সুইজারল্যান্ডে ঘুরে আসলাম, তারপর ছোঁয়া।”
— “সুইটহার্ট তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসাে না? সারা দিন স্বামীকে দিয়ে কাজ করাতে মন চাই৷” ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে।
— ভেংচি কেটে, ” এ্যা শখ কত? আসছে এখানে রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে৷” কোনদিন হবে না, রোমাঞ্চকর পরিবেশ।
— প্যাঁচার মতো মুখ করে, ” তুমি সব সময় আমাকে ইগনোর কেন করো?”
— আমি আপনাকে কখন ইগনোর করলাম! আপনার মাথা পুরো গেছে৷ একে কেউ ধরে বেঁধে বাংলাদেশের পাবনা পাঠিয়ে দাও৷
— নিয়তির দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমাকে পাবনায় কেন পাঠাবে? কি আছে পাবনায়?”
— আমাদের দেশে রাচি, আর বাংলাদেশের পাবনায় পাবনায় মানসিক হসপিটাল আছে৷ সেখানে আপনার মতো পাগলদের চিকিৎসা করানো হয়৷
— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কি আমি পাগল? আমি পাগল হলে তুমি পাগলী।”
“”পাগলী তোর মনের আশায় কাটে না দিন রাত৷”” এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে।
— নিয়তি মাথা নিচু করে হাতের উপর আঙ্গুল দিয়ে হিসাব করে, “আপনি একটা এনাকন্ডা। সরি আস্ত একটা হাতি….”
নির্বণ নিয়তিকে ভয় দেখানোর জন্য তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ নিয়তি আঁখি উপরে তুলতেই নির্বণকে খুব কাছে দেখতে পাই৷ নিয়তি সরে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে, ” আপনি কি করতে চাইছেন? বিশ্বাস করেন আমি আর কিছু বলবো না৷ আমার মতো ভালো মেয়ে এই পৃথিবীতে আর খুঁজে পাবেন না৷”
— তুমি আমাকে কি বলে গালি দিচ্ছিলে সুইটহার্ট? আর একবার দাও না৷ তোমার প্রতিটি গালি আমার কানে ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসে।
— আপনি সত্যি একটা কালপিট। দূরে সরে দাঁড়ান। আমার কেমন জানি লাগছে।
— দুষ্টু হাসি দিয়ে, “কেমন লাগছে? আমার সাথে বাসর করতে মন চাচ্ছে। এত কিছু লাগবে না৷ আজ সানডে। তাই একটা লিপ কিস দিলেই চলবে৷”
— কিস তো দূরের কথা৷ কাছেও ঘেঁষতে দিব না৷ কাছে আসলে খুন করে ফেলবো৷
নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি দৌড়ে নির্বণের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নিয়তির মাথা সেন্টার হয়ে যায়। তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরতে শুরু করে ৷ নিয়তি মাথায় হাত রেখে সেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ ধরে ফেলে।
______
নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে দাঁড়িয়ে মুভির শুটিং দেখে যাচ্ছো৷ কেউ গাড়ি বের করতে বলো। নিয়তিকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
— নির্বণের মা নির্বণের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠেন, “প্লিজ নির্বণ শান্ত হও৷ আমি ডক্টরকে ফোন করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন ” অন দ্যা ওয়ে।” আমরা বরং নিয়তির সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করি৷”
— কান্না জড়িত কন্ঠে, ” কিন্তু মা নিয়তি কিছুতেই আঁখি মেলে তাকাচ্ছে না৷ আমি তাকে অনেকে ডেকেছি৷ কিন্তু কোন সাড়া দিচ্ছে না৷ প্লিজ কিছু একটা করো। আমার নিয়তিকে ভালো করে দাও।”
— অরিন গ্লাস এগিয়ে দিয়ে, স্যার ম্যামের চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেন৷ ম্যামের জ্ঞান ফিরে আসবে৷ ”
নির্বণ অরিনের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে নিয়তির চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ নিয়তি পিন পিন করে চোখ খুলে। তবে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না৷ সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে। কারো কথা তেমন কানে আসছে না৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, “নিয়তি তুমি ঠিক আছো তো?”
— নিয়তি নির্বণের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে জবার দেয় নিয়তির ঠিক আছে। তখনই ডাক্টর এসে হাজির৷ সবাইকে সাইটে সরিয়ে দিয়ে ডক্টর নিয়তির চেক আপ করেন৷ সকলের মুখে টান টান উত্তেজনা। নিয়তির বাবা রুমের এক সাইট থেকে অন্য সাইডে পায়েচারী করছে৷
— ডক্টর মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” আমি এখন কিছু বলবো না৷ তবে একটা বলতে পারি নিয়তি একদম ঠিক আছে৷”
— নির্বণ রাগী গলায় বলে উঠে, ” ডক্টর আঙ্কেল নিয়তি ঠিক আছে, তাহলে সেন্স হারিয়ে ফেললো কিভাবে? প্লিজ বলেন নিয়তির কি হয়েছে?”
— নির্বণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে, ” বলতে পারি একটা শর্তে? আমার শর্তে রাজি হলে বলবো।”
— আঙ্কেল আপনি যা চান তাই দিব৷ প্লিজ নিয়তিকে সুস্থ করে দেয়৷
— নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” নিয়তির কিছু হয়নি৷ এমন সময় এমন একটু হয়৷”
— এ সময় মানে কোন সময়৷ প্লিজ আঙ্কেল আমি এখন কোন ধাঁধার সমাধান করতে পারব না৷
— অরিন যাও সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসো৷
নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” মিসেস চৌধুরী আপনি গ্রেনি হতে চলছেন৷ আর নির্বণ তুমি বাবা হতে চলেছো।”
পাতা উল্টে দেখো, একটা গল্প লেখা।
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলায় কনে দেখার আলোতে,
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট্ট ঘরে, বরণ ডালায় সাজালো কে?
তুমি আমি দু’জনে, রয়েছি হৃদয়ের বাঁধনে
“”””’সাত পাকে বাঁধা “”””
সকলের মুখে হাসি। খুশিতে নির্বণের চোখে জল এসে পড়েছে৷ নির্বণের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলছে। নির্বণ লাফ দিয়ে বলে উঠে, ” ইয়া হু,, হিপ হিপ হুররে নিয়তি৷ আমি বাবা হবো।”
__________
নিয়তি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নিলেই কোথা থেকে নির্বণ যেন উঠে আসে? নির্বণ এভাবে আসলে দেখে নিয়তি ঘাবড়ে যায়৷
— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “তোমাকে নিচে নামতে কে বলেছে? কি লাগবে আমাকে বল আমি নিয়ে আসছি?”
— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” আমি রুমে বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গেছি৷ আমার ভালো লাগে না এখন ওই রুমে।”
— তোমাকে ওই রুমেই থাকতে হবে৷ সিঁড়ি বেয়ে তোমাকে নিচে নামতে হবে না৷ আমি তোমাকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছি৷
— চকিত হয়ে, ” আপনি নামিয়ে দিবেন! মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না৷”
— আমার কথা বুঝার জন্য তোমাকে আরও সাত বার জন্ম নিতে হবে৷ যদি আমার বেবি ব্যথা পাই আমি তোমাকে ছাড়বো না৷
— মুখ ফ্যাকাসে করে, “আরে কিছু হবে না৷ আমি তো মাত্র ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি সব কিছু করতে পারব৷ আমাকে নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ ”
নির্বণ নিয়তির মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে উঠে, ” দুই লাইন বেশি বুঝার কোন দরকার নেই৷ ডক্টর বলেছে তোমাকে রেস্ট নিতে৷ সো তুমি বসে বসে রেস্ট নিবে৷”
— পারবা না আমি বসে বসে রেস্ট নিতে৷ বসে থাকতে থাকতে আমি গোল মোলু হয়ে যাচ্ছি৷ পরে তো আমি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে যাব৷
— নিয়তির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” একদম বাজে কথা বলবে না৷ তুমি মোটু হও বা চিকন হও আমার কোন সমস্যা নেই৷ তুমি আমারই থাকবে সারা জীবন। আর হ্যাঁ ডায়বেটিস তোমার ধারের কাছেও আসতে দিবো না৷
নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলায় তুলে নিয়ে৷ নিয়তির চোখের দিকে তাকিয়ে নিয়তিকে চোখ টিপল দেয়৷ নিয়তি লজ্জায় নির্বণের বুকে লুখ লুকায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তিকে নিয়ে এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নেনে যাচ্ছে নির্বণ৷ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে তার পাশে বসে পড়ে নির্বণ৷
— সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” আপনার দেখে ম্যাম আপনাদের ছাড়া একদম থাকতে পারছিল না৷ তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে নিয়ে আসলাম৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বসে সবার সাথে গল্প গুজবে মেতে উঠে৷ সকলের সাথে হাসি তামাশা করে দুপুরে গাড়িয়ে রাত্রি হয়ে যায়। নির্বণ নিয়তিরকে খাবার খাইয়ে আবার পাঁজা কোলা করে রুমে নিয়ে আসে৷
__________
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে একটিও ভালোভাবে কথা বলার সুযোগ দিবেন না৷ সব সময় আমার নামের দোষ ধরতেই থাকেন৷”
নিয়তির কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে নির্বণ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দেয়। নিয়তির চোখ রসে গোল্লায় পরিণত হয়ে। নিয়তি বুঝতে পারছে না নির্বণ কি করতে চাই?
— নিয়তি বিষ্মণ হয়ে বলে উঠে, ” আমি রাতে শাড়ি দিয়ে কি করব? আমি এই পোশাকে দিব্যি আছি৷ আমাকে নিয়ে এভার ভাবা বন্ধ করেন৷ সারাদিন শুধু আমাকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছেন৷ আপনার কি এখন কোন কাজ নেই?”
— নিয়তির কোলে মাথা রেখে, ” আমার কোন কাজ নেই এখন৷ আমি অফিসে বলে দিয়েছি আমি অফিসে এখন আসতে পারব না৷ আমি সব কাজ ভিডিও কনফারেন্সে করবো।”
— কিন্তু কেন? আমি তো ঠিক আছি৷ আপনি কাজে মন দেয়৷
— সুইটহার্ট আমার কাছে তুমিই সব। তোমার থেকে আমার কাজ বড় নয়৷ আর হ্যাঁ কোন কথা না বলে শাড়িটা পড়ে আসো।
— আপনি তো জানেন, “আমি ভালোভাবে শাড়ি পড়তে পারি না৷” যতদিন শাড়ি পড়েছি ততদিন আমি ইউ টিউব দেখে পড়েছে। তার উপর বেল্ট লাগিয়ে পড়েছি৷ এখন বেল্ট লাগানো সম্ভব নয়৷
— নিয়তি কোল থেকে মাথা তুলে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ এখন তোমাকে এমন টাইট শক্ত পোশাক পড়তে দিতে পারি না৷ তোমাকে আমি শাড়ি পড়িয়ে দিব৷”
— চকিত হয়ে, ” আপনি আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবেন! আর ইউ ক্রেজি!”
— হুম৷ তো অবাক হওয়ার কি আছে? আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতে মানা কোথায়৷
— না মানে… আসলে…
— কোনো ইয়ে অজুহাত শুনতে চাইনা৷ তোমার মুখ থেকে এখন যা কথা বের হবে সব “হুম” বের হবে৷
নিয়তি কোন উপায় না পেয়ে নির্বণের হাতে শাড়ি পড়তে রাজি হয়ে যায়। নিয়তি ওয়াসরুম থেকে পেটিকোর্ট আর ব্লাউজ পড়ে আসে৷
নির্বণ নিয়তিকে সিল্কের শাড়ি পড়িয়ে দিবে৷ আগে কয়েকবার নির্বণ ইউ টিউবে দেখে নেয়৷ নির্বণ শাড়ি পড়ানোর কথা বললে ভুল হবে৷ নির্বন শাড়ি পড়ানো নামে নিয়তির সাথে শয়তানি করে যাচ্ছে। নির্বণ নিয়তি উম্মুক্ত উদরে একটা ডিপ কিস দেয়৷ নিয়তি নিরর্বণে চুল খামচে ধরে।
চলবে….
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩০
#অধির_রায়
নিয়তি গা গুলিয়ে আসাতে নিয়তি কোন মতো নিজের গাড়ে শাড়ি প্যাঁচিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তড়িঘড়ি করে নির্বণও তার পিছু পিছু ছুটে আসে৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হলো? এভাবে বমি করার কারণ কি? প্লিজ নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নাও৷ আমার খুব ভয় লাগছে৷”
আমি এখনই ডাক্তারকে ফোন করছি৷
নির্বণ চলে আসতে নিলেই তার হাত ধরে ফেলে নিয়তি৷ নির্বণের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ব্যস্ত হতে হবে না৷ এমন সময় আমাদের বমি বমি ভাব হবেই এবং বমি আসবেই ৷ এটাই তো মা হবার আনন্দ।”
নির্বণ নিজের কষ্ট মনের মাঝে জমা রেখে নিয়তির হাত ধরে নিয়তিকে ধীরে ধীরে রুমে নিয়ে আসে৷ বিছানায় নিয়তিকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দেয়৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে৷
_______
আবারও একটা নতুন দিনের সুচনা করলেন সূর্যদেব। সূর্যের তেজস্বী আলোতে আকাশের চাঁদ তারকা হার মেনে নিয়েছে। অন্ধকার আছেই বলেই দিনের এত কদর৷ নিয়তি ঘুম থেকে উঠে নির্বণকে পাশে পায় না৷ নির্বণকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়৷ কেন এমন নেশা হয়ে গেছে নির্বণকে দেখার৷
নিয়তি মন ভার করে টিপ টিপ পায়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নির্বণ তার পথ আটকায়।
— নিয়তি ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” এভাবে পথ আটকানোর কারণ কি? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আমি মানুষ, কোন হনুমান বা উগান্ডা নয়৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনাকে দেখে আমার হনুমানই মনে হয়। সত্যি বলছি আপনার পিছনে যদি লেজ থাকতো একদম হনুমান দেখাতো৷ কল্পনাতেই হাসি পায়৷”
— হাসা হয়ে থাকলে এবার হাসি থামিয়ে আমার সাথে আসো৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ধীরে পায়ে নিয়ে আসে৷ তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কিছু শপিং ব্যাগ তার দিকে এগিয়ে দেয়।
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” এসব কি? আর আপনি সকালে শপিং এ গিয়েছিলেন! আমার জানামতে এত সকাল বেলা শপিংমল খুলে না৷”
— কে বলেছে সকাল বেলা শপিং মল খুলে না? এটা কোন অভিধানে লেখা আছে৷ তবে আমি এসব কিছু তোমার জন্য বানিয়ে এনেছি৷ তারাতাড়ি খুলে দেখে বল তো কেমন হয়েছে?
নিয়তি খুব যত্ন সহকারে শপিং ব্যাগ খুলে। নির্বণ নিয়তির জন্য রাতে পড়া নাইটিং মতো ঠিলেঠালা পোশাক নিয়ে এসেছে৷
— নিয়তি ঠিলে ঠালা পোশাক নির্বণের সামনে ধরে,” এসব কি? এসব দিয়ে আমি কি করব? আমি এমন মোটা মানুষ৷ আমার মতো আস্ত তিনটা লোক এই পোশাকের মাঝে ঢুকতে পারবে৷”
— এটার নাম মেক্সি৷ প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের এমন পোশাক পড়ে৷ এতে মা ও বাচ্চা উভয়েই ভালো থাকে৷
— কি! আমি এখন মেক্সি পড়বো৷ আমার জানা মতো মেক্সি গ্রাউনের মতো৷ কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছে হরর মুভির ভুতের পোশাক মনে হচ্ছে৷
— সে যাই হোক৷ আজ থেকে তোমাকে এসব পোশাক পড়তে হবে৷ ডক্টর তোমাকে এসব পোশাক পড়ার জন্যই বলেছে৷
________
— “নিয়তি তোমাকে আগামীকাল ডাক্টরের কাছে নিয়ে যাব। সকাল সকাল রেডি থেকো৷” নির্বণের মা কাঁথা সেলাই করতে করতে বলে উঠেন।
— মা আমি তো কয়েকদিন আগেই ডক্টর দেখিয়ে আসছি৷ এখন আবার যেতে হবে৷
— হ্যাঁ আমার যখন মন বলবে তখনই তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব৷ আমি কোন রিস্ক নিতে চাইনা৷
— মা আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন৷ আমার কিছু হবে না৷ আমি একদম ঠিক আছি৷
— নিয়তি দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি তোমার থেকে এই বিষয়ে পারদর্শী বেশি৷ তুমি তো এর আগে কোন দিন মা হওনি। নাকি এর আগেও মা হয়েছো?”
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” না মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম কয়েকদিন পর পর না গেলে হয় না৷ প্রতি এক মাস পর পর চেক আপ করলেই তো হতো৷”
— নিয়তিকে কাছে বসিয়ে, ” না সোনা মা হওয়া এতটা সহজ নয়৷ গর্ভকালীন অনেক সমস্যা হতে পারে৷ রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে৷ শরীর কখন খারাপ হয় জানা নেই৷ আমরা তো বমি থেকে দুর্বলতা ধরে নেয়৷”
— নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে, ” আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো তাহলে আমার খেয়াল এভাবেই রাখতো।”
— কড়া গলায় বলে উঠে, ” একদম কাঁদবে না৷ কে বলেছে তোমার মা বেঁচে নেই? আমিই তোমার মা৷ আমি তোমাকে বউমা হিসেবে দেখি না। আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি৷”
— চোখের জল মুছে, ” আচ্ছা মা কাঁথা সেলাই করে কি হবে? ”
— অবাক চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে, “কি হবে! মানে কি? আমি এসব আমার নাতি বা নাতনিকে গিফট করবো৷ গ্রেনির হাতের প্রথম ছোঁয়া লাগবে তার দেহে।”
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে, “বুঝতে পেরেছি মা৷”
— ছোঁয়ার মা বলে উঠে, ” আমি কিন্তু টুইন বেবি চাই৷ চাই মানে কি, আমি তো এটাই বিশ্বাস করি আমার নিয়তির টুইন বেবি হবে৷”
মন খারাপ করে, ” ছোঁয়া চলে যাওয়ার পর নিয়তিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি৷”
— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” একদম মন খারাপ করবেন না৷ আমরা সব সময় আপনার পাশে আছি৷ আর সারাজীবন আপনার পাশে থাকব৷”
— ছোঁয়ার ভাঙা গলায় বলে উঠেন, ” ইশ্বর আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিচ্ছেন৷ প্রথমে আমার কাছ থেকে আমার রঙ কেঁড়ে নিলেন৷ এখন হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়েও পেলাম না৷ আমি কি অন্যায় করেছি, যার জন্য ইশ্বর আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন৷”
“আমি জানি ছোঁয়া আপনাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে৷ তনুও আপনারা আমায় মাথায় করে রেখেছেন৷ কোনদিন আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না৷”
— আমাদের কাছে আপনি কোন ফেলনা নয়৷ আপনি আমাদের পরিবারের একটা সদস্য। পরিবারে সবাই আত্মার বন্ধনে আটকে পড়ে৷ আপনার সাথে এখন আমাদের আত্নার সম্পর্ক।
— নিয়তি বলে উঠে, ” আচ্ছা মা আমি রুমে যাচ্ছি, আপনারা গল্প করেন৷”
— নির্বণের মা বলে উঠে, ” ধীরে ধীরে যাবে৷ সব সময় নিজের খেয়াল রাখবে?” কাকে বলছি আমি? যে নিজের খেয়াল রাখেই না৷”
অরিনকে ঢেকে এনে বলে উঠেন, ” নিয়তিকে রুমে পৌঁছে দিয়ে আয়৷”
— নিয়তি বলে উঠে, ” মা আমি একা যেতে পারবো৷”
— অরিন নিয়তির হাত ধরে, ” ম্যাম আপনি একা যেতে পারবেন না৷ আমি আপনাকে দিয়ে আসছি৷”
নিয়তি আর কিছু বলতে পারল না৷ নির্বণ & ছোঁয়ার মা চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাদের হাতের পুতুলের মতো নিয়তি অরিনের সাথে চলে আসে ।
__________
— নিয়তি বসে বসে তেঁতুলের আচার খাচ্ছে ৷ পিছন থেকে নির্বণ নিয়তির চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, “আপনি আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না। আমি আপনার উপস্থিতি বুঝতে পারি৷”
— নির্বণ মুখ গোমড়া করে, ” দিলে তো মনটা ভেঙে৷ কই বলবে বাঁচাও বাঁচাও? আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে৷ বা ভয়ে কাঁদু হয়ে যাবে।”
“তা না বলে আমি আপনার উপস্থিত বুঝতে পারি৷” ভেংচি কেটে বলে উঠে।
— নির্বণের কাঁধে মাথা রেখে, “আপনাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন? কি ব্যাপার? ”
— চোখ বন্ধ করো৷ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
— না আমি চোখ বন্ধ করবো না৷ কি সারপ্রাইজ আছে আমাকে আগে বলেন?
— ব্রু নাচিয়ে, “না বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ কোনদিন কাউকে বলা যায় না৷”
— আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি৷ আপনার সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমার মন আকুল হয়ে আছে৷
নিয়তি চোখ বন্ধ করা নাম করে পিন পিন করে চোখ খুলে সব দেখছে৷ নির্বণ তার পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে৷ নিয়তির সামনে বক্স রেখে বলে উঠে , “এবার আঁখি মেলে তাকায়৷”
— অজানার ভান করে অবাক হয়ে বলে উঠে, ” ওয়াও ডায়মন্ডের রিং! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমার হাতে একটা চিমটি কাটেন। ”
— তোমার পছন্দ হয়েছে! তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও৷ আমি নিজ হাতে আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিব৷
নির্বণ নিয়তির হাতে ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” সারপ্রাইজ আপনার দেখার আগেই আমি দেখে ফেলেছি৷ এভাবে না বললে আপনি রাগ করতেন৷ তাই এভাবে একটু অভিনয় করে বললাম৷”
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নির্বণ বলে উঠে, ” আমাদের ছোট একটা রাজকন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে শুরশুরি দিয়ে, ” না আমাদের একটা রাজপুত্র হবে। আমাদের রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে আমাদের মন খারাপ হলে মন ভালো করবে৷”
— নির্বণ চোখ বড় করে, “না আমাদের রাজ কন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের থেকে চোখ আরও বড় করে, “না আমাদের রাজপুত্র হবে৷ ”
— আচ্ছা মেনে নিলাম আমাদের রাজপুত্র হবে৷
— আচ্ছা আমিও মেনে নিলাম আমাদের রাজকন্যা হবে।
নিয়তি নির্বণ দু”জনেই খুশিতে মেতে উঠে। নির্বণ বলে উঠে, ” তোমার রাজপুত্রের নাম কি রাখবে?”
— নিয়তি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠে, ” আমার রাজপুত্রের নাম রাখবো ‘নিহান’। আমার খুব প্রিয় নাম নিহান৷”
আপনার রাজকন্যার নাম কি রাখবেন?
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে, “আমার রাজকন্যার নাম হবে নিধি। ”
— বাহ্ খুব সুন্দর নাম৷ নিধি নামটা আমারও খুব পছন্দের৷
— তুমি কি জানো?
— নিয়তি অবাক হয়ে, ” আমি কি জানবো?”
— আমাদের টুইন বেবি হবে৷ আমাদের মনের আশা পূরণ করবে৷ একটা ছেলে, একটা মেয়ে৷
— আপনি কি বিজ্ঞানী? আপনার কথা আমার বিশ্বাস হয়না৷
— আমার কথা মিলিয়ে নিও৷
চলবে….