#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩১,৩২ শেষ
#অধির_রায়
৩১
হসপিটালের করিডরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নিয়তি৷ নিয়তির পাশেই আসে আছে নির্বণের মা৷ নিয়তির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন থেকে কিছু খায় না৷ চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
নিয়তি এই জন্য ভয় পেয়ে আছে যে, “গতকাল রাতে বমির সাথে রক্ত এসেছে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না কি হবে? তার সাথে কিছু হলে মেনে নিতে পারবে৷ কিন্তু তার বেবির কিছু হলে মেনে নিতে পারবে না৷
— নার্স এসে বলে উঠেন, ” ম্যাম আপনাদের রিপোর্ট এসে পড়েছে। স্যার আপনাদের ডাকছন।”
রিপোর্টের কথা শুনে নিয়তি হাত পা কাঁপতে থাকে৷ সে নিজের মাঝে নেই৷ মনের ভিতরের ভয়টা আরও চেপে ধরেছে৷ সবকিছু পজিটিভ আসবে আসবে তো।
— নিয়তির কাঁধ হাত রেখে, ” কি হলো? এভাবে ভয় পেয়ে আছো কেন? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে ? ”
— নিয়তি কেঁপে উঠে, ” হ্যাঁ মা যাচ্ছি৷ আর আমি একদম ঠিক আছি৷ আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না৷ ”
ধীরে পায়ে ডক্টরের চ্যাম্বারে প্রবেশ করেন দু’জনে৷ নিয়তি মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেন তার মাঝে ভয় চেপে ধরে বসে আছে?
— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” ডক্টর সবকিছু ঠিক আছে তো৷ কোন সমস্যা নেই তো। দেখেন কিভাবে ভয় পেয়ে আছে৷ প্রথমবার মা হতে যাচ্ছে তো৷ ”
ডক্টর নির্বণের মায়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে৷ এতে নিয়তির ভয়টা সত্যতে প্রমাণ হয়৷ ডক্টররা কোন কারণ ছাড়া মাথা নিচু করে না৷
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে, ” ডক্টর আমার বেবি একদম ঠিক আছে তো৷ প্লিজ ডক্টর আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
— মুখ কালো করে ডক্টর বলে উঠেন, ” দেখেন ম্যাম, আমরা ডাক্তার। আমরা রোগীর কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইনা৷ তবে আপনাকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আগে৷”
— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,” কি জানতে চান? আমি একদম ঠিক আছি৷”
— ম্যাম বমির সময় বমির সাথে কখনও ব্লাড আসতো কি?
ব্লাডের কথা শুনে নির্বণের মায়ের চোখ অনেক বড় হয়ে যায়৷ নির্বণ মা নিজেকে সামলিয়ে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে এখানে মিথ্যা কথা বললে তার সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানো যাবে৷
— নিয়তি মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” বমির সাথে কখনও ব্লাড আসেনি। আর আমার ঘন ঘন বমি আসে না৷ আমি প্রায় সারাদিন টক খায়৷”
— গ্রেট। আপনার রিপোর্টে রক্তশূন্যতার কথা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা চাইনা আপনি রিস্ক নিয়ে সন্তান জন্ম দেন এবর্শন করে ফেলেন৷
— নিয়তি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হোয়াইট! আপনার মাথা ঠিক আছে৷ আপনি কি বলছেন এসব৷ আমি এবর্শন করব৷”
— ম্যাম বুঝার চেষ্টা করেন এভিয়েশন না করলে আপনার লাইফ রিস্ক হতে পারে৷ হয় মা বাঁচবে না হয় সন্তান বাঁচবে।
— নিয়তি পেটে হাত রেখে, ” আমি আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিব তবুও আমার সন্তানের গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷”
নিয়তি রাগ দেখিয়ে হন হন করে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে৷
— ম্যাম আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। সন্তান নেওয়া তার জন্য রিস্কের বিষয়৷
— নির্বণ মা কোমল হতাশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি বাচ্চা মানুষ৷ আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে সে সবকিছু বুঝতে পারবে।”
— থ্যাংকস ম্যাম৷ যেভাবেই হোক এবর্শনে উনাকে রাজি করাতে হবে৷ অলরেডি ছয় মাস চলছে৷ এর পর এভিয়েশন করা ক্ষতি কর হবে৷ এমনকি বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে৷
নির্বণের মা ডক্টরের কথা শুনে একটা বড় সড় ধাক্কা খায়৷ তিনি কখনো ভাবতে পারেনি এতটা ক্রিটিক্যাল হয়ে যাব৷
__________
নিয়তি নির্বণের পায়ের কাছে বসে বাচ্চা পোলাপানের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তিকে দাঁড় করায়৷
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কি হয়েছে তোমার? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? প্লিজ আমাকে বল না৷”
নিয়তি কান্না করার কারণে কোন কথা বলতে পারছে না৷ ডক্টরের কাছ থেকে ফিরে এসে ঘরে নিজেকে বন্ধি করে রেখেছে। নির্বণ আসাতে নিয়তি ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে।
— নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে, ” প্লিজ নিয়তি কান্না কর না৷ তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারব না৷ তোমার চোখের জল দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়৷”
— আপনাকে একটা কথা দিতে হবে।
— কি কথা? আমি তোমার সব কথা রাখার চেষ্টা করব৷
নিয়তি আবারও নির্বণ পায়ে বসে পড়ে। এবার নির্বণ নিজেকে কষ্ট করে নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে দেয়৷
— নির্বণ নিয়তির দিকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।”
— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনি সব সময় আমার পাশে থাকবেন তো৷
— নিয়তি হাত কষ্ট করে চেপে ধরে, “হ্যাঁ আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো৷ তোমার হাত আমি কোনদিন ছেড়ে দিব না৷”
— এভাবে আমার হাত কষ্ট করেই ধরে থাকবেন৷ আমাকে আজ একটা কথদ দিতে হবে৷
— বল কি কথা? আমি আমার জীবন দিয়ে তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো।
— নিয়তি এক বুক কষ্ট নিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাচ্চা এভিয়েশন করবো না৷ আমি আমাদের বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই৷”
নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির হাত ছেড়ে দেয়৷ নির্বণ বুঝতে পারছে না সে কি করবে? নির্বণ নিজের হাত বুকের বাঁ পাশে রাখে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা শুরু করে দিয়েছে৷ নির্বণ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷
— নিয়তি কান্না করে, ” আমার জীবন থাকতে আমি আমার বাচ্চার গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷ ”
— বুকে পাথর জমা রেখে নিয়তির গাল ধরে কান্না করে, ” প্লিজ নিয়তি তুমি বুঝার চেষ্টা করো৷ এভাবে হয় না৷ তোমাকে আমি হারাতে পারবো না৷ আমার কাছে আর কোন শক্তি নেই৷”
— আমার কাছে আমার সন্তান আগে৷ আমি কিছুতেই আমার সন্তানকে একা হতে দিব না৷ আমি তার ঢাল হয়ে থাকবো৷ আমার ধারের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দিব না৷
— নিয়তি আমি যতটা তোমায় ভালোবাসি ততটায় আমাদের সন্তানকে ভালোবাসি৷ আমরা পরবর্তীতে চেষ্টা করতে পারি তো।
— নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে, ” আপনি কিনা বাবা৷ বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে চান ৷ আমার কিছু লাগবে না৷ আমি আমার সন্তনকে ঠিক আগলে রাখবো৷
— নির্বণ এক বুক কষ্ট নিয়ে, ” আচ্ছা নিয়তি৷ তুমি যা বলবে ঠিক তাই হবে।।তুমি যা যাও আমি তাই করে দিব৷
নিয়তি নিজের চোখের জল মুছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। মিয়তি কিছুতেই এত বড় ধাক্কা নিতে পারছে না৷
নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে।
নির্বণ মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কি করে তোমায় ছাড়া থাকবো৷ তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার৷ তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে মনে আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেওয়া৷ আমি এই ঘরে কার সাথে কথা বলবো? কাকে বলবো নিয়তি বুকের রোজটা ঠিক করে দাও৷ কে আমার ট্রাই বেঁধে দিবে৷ কে আমার সাথে পায়ে পা রেখে ঝগড়া করবে৷”
নির্বণ আর নিতে পারছে না৷ নির্রণের মুখ থেকে আর কিছু বের হচ্ছে না। মুখে সব কথা আটকে পড়ে যাচ্ছে৷ মাথা ঘুরতেছে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা করছে৷ একবার নিয়তির চাঁদ মাখা মুখের দিকে তাকাচ্ছে অন্য বার নিয়তির পেটের দিকে তাকাচ্ছে৷
নিয়তির হাত ধরে নিয়তির পাশে বসে কান্না করতে করতে নির্বণ ঘুমিয়ে পড়ে৷ তবে নির্বণ আশা ছাড়েনি যে, ” সে নিয়তিকে বুঝাতে পারবে না৷ আজ না হয় কাল ঠিক নিয়তিকে বুঝাতে সক্ষম হবে৷”
চলবে….
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩২ (অন্তিম পর্ব)
#অধির_রায়
কান্না করতে করতে নিয়তি চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে৷ নিয়তির দিকে চোখ তুলে তাকানো যাচ্ছে না৷ একদিন এক রাত না খাওয়াতে একদম ভেঙে পড়েছে৷
নির্বণ সূর্যদেবকে প্রমাণ জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় “সে কখনও নিয়তির ক্ষতি হতে দিবে না৷ আমি আমার সন্তান স্ত্রীর কোন ক্ষতি হতে দিব না৷” নির্বণ ঠিক করে নেয় সে নিয়তি এখন একা ছাড়বে না৷ সব সময় নিয়তির পাশে ছায়া হয়ে থাকবে৷
নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সারা রুম বাহারি রকমের ফল দিয়ে ভর্তি৷ রুমের মাঝে দু’টাে নিউ ফ্রিজ।
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” এসব কি, রুম ফল দিয়ে ভর্তি কোন?”
— নির্বণ নিয়তির পাশে বসে, ” এসব কিছুই না৷ তুমি সব সময় ফল খাবে৷ আমি তোমার বা আমাদের বেবির কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— কিন্তু আমি এত ফল কিভাবে খাবো?
— তোমাকে খেতেই হবে৷ তোমার স্বাস্থ্যের সাথে আমাদের সন্তানেও খেয়াল তোমাকে রাখতে হবে৷ আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারি তুমি রক্তশূন্যতায় ভোগছো৷ তোমাকে আমি কিছুতেই অসুস্থ হতে দিব না৷”
— কিন্তু এসবের কোন দরকার নেই৷
— কোন কথা নয়৷ আমি যা করতে বলবো, আজ থেকে তাই করতে হবে৷ আমার কথামতো তোমাকে চলতে হবে৷ আমি দিনকে রাত বললে রাতই হবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” কি আমার মহাগুরু এসেছেন, তার কথা মতো নিয়তি চলবে? নিয়তি কারো কথামতে চলে না৷”
— নির্বন নিয়তিকে গালে টুপ করে একটা লাভ ব্রাইট দিয়ে, ” তোমার মাথা থেকে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দাও৷ এখন তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না।”
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নির্বণের হাত চেপে ধরে বলে উঠে, ” আপনি আমার বেবিকে এবর্শনের জন্য কোন পরিকল্পনা করছেন না৷”
— নির্বণ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে, ” আমাকে দেখে তোমার তাই মনে হয়৷ আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— নিয়তি কান্না করে, ” আমাকে কথা দেন আমাদের সন্তানকে আপনি কখনও অবহেলা করবেন না৷ যদি আমি কোনদিন এই পৃথিবীতে না থাকি৷”
— নিয়তির কথা নির্বণের বুকের তীরের মতো লাগে৷ নির্বণ কাঁপা কাঁপা ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ আমি থাকতে তোমাকে স্বয়ং যমরাজ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেঁড়ে নিতে পারবেন না৷ আমি তোমার ঢাল হয়ে থাকবো৷”
— নির্বণের হাত চেপে ধরে, ” আর আমাদের সন্তান৷ আমি কখনও আমার সন্তানের গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দিব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও আমি আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখবো।”
— নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে, ” আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে এবর্শনের জন্য জোর করবে না৷ আমি আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ প্লিজ সুইটহার্ট এবার একটু হাসো৷”
নির্বণের ভরসা পেয়ে নিয়তি মুচকি হাসে৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” সরি সুইটহার্ট যদি আমাকে আমাদের সন্তান আর তোমার মাঝে যেকোন একটা বেছে নিতে বললে আমি তোমাকে বেছে নিব৷”
________
নির্বণ নিয়তির সব দায়িত্ব নিয়ে মিজ হাতে খাইয়ে দেয়৷ নিয়তির দেখাশোনা করার জন্য আলাদাভাবে দুইটা নার্স রেখে দিয়েছেন৷ নিয়তি প্রায় প্রতি ১০ দিন পর পর চেকআপ করেন৷ নিয়তি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ৷
নিয়তি পেটে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে নির্বণের বাচ্চা। নিয়তি নির্বণ এই বাড়ি এখন মাতিয়ে রাখে৷ নিয়তি রাতে হুট করেই নির্বণের হাত চেপে ধরে৷
— নির্বণ তড়িঘড়ি করে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হয়েছে? আমাকে বল তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে নির্বণের হাত অনেক জোরে চেপে ধরে আছে৷ নির্বণের হাতে মিয়তির নখ ঢুকে যাচ্ছে৷ নির্বণ তবুও নিজেকে শান্ত রেখেছে৷
— নিয়তিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে, ” কি হলো নিয়তি এভাবে ভয় পেয়ে আছো কোন?”
— নিয়তি কান্না করে দিয়ে, ” আমি মনে হয় আর বাঁচবো না৷ আমার খুব কষ্ট হয় যখন আমার পেটে বেবি নাড়াচাড়া করে৷ আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।”
— প্লিজ নিয়তি এমন কথা বলো না৷ সৃষ্টি কর্তা তোমার সাথে আছে৷ তিনি তোমার কিছু হতে দিবে না৷
— নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, ” আমাকে কথা দেন আমার কিছু হলে আমার বাচ্চাকে কোনদিন অবহেলা করবেন না৷ তার মাথা থেকে বাবার ছায়া কেঁড়ে নিবেন না৷”
— নির্বণ আধো আধো চোখ থেকে নোনাপানি ফেলে বলে উঠে, ” আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ আমি তোমার আর বেবির দুই জনের মাঝে কারো কোন ক্ষতি হতো দিব না৷”
নিয়তি ঘাড়ে গরম জলের স্পর্শ পেয়ে বলে উঠে, ” আপনি কান্না করছেন কেন? আমি আমার সাহস৷ আপনি এভানে ভেঙে ফেললে আমি নিজে কিভাবে শক্তি পাবো?”
— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” এই দেখো আমি চোখের জল মুছে নিয়েছি৷ আর কখনও কান্না করবো না৷ তুমি আমাকে কথা দাও! কখনও বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবে না৷”
— নির্বণের হাত ধরে, ” আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি৷ আর কোনদিন বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবো না৷ এবার একটু হাসেন৷”
নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷ যেন নিয়তি কোন কিছুতে কষ্ট না পায়৷
_________
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ নদীর জলের মতো বয়ে যেতে থাকে৷ এভানে পার হয়ে যায় নিয়তি নির্বণের জীবন৷ নিয়তি সকলের সাথে বসে কথা বলছে৷ ডক্টরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এখনো দুইদিন বাকি আছে।
হঠাৎ করেই মিয়তির ল্যাভার পেইন উঠে৷ নিয়তি চিৎকার করে বলে উঠে, ” মা আমার ভীষণ ব্যথা করছে।”
নিয়তি কথা বুঝতে পেয়ে নিয়তিকে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে চলে আসে৷ ডক্টর কিছু বন্ডের ফাইল পূরণ করার জন্য তাদের কাছে আসে৷
— ডক্টর বলে উঠেন, ” আমি আপনাদের অনেক আগেই বলেছিলাম এবর্শন করাতে৷ এখন আপনারা কাকে বাঁচাবেন৷ সন্তান নাকি মা৷”
— নির্বণ পিছন থেকে বলে উঠে, ” ডক্টর নিয়তি বাঁচিয়ে দেন৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।”
— ডক্টর নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে প্রচুর ব্লাড প্রয়োজন হবে। আপনারা কি ব্লাডের ব্যবস্থা করেছেন?”
— নিয়তির বাবা বলে উঠেন, ” আমি আমার মেয়েকে রক্ত দিব৷ আমার আর নিয়তি রক্তের গ্রুপ এক। আমাদের দুইজনের রক্তের গ্রুপ (O+).”
— নির্বণ নিয়তির বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” না বাবা তার দরকার পড়বে না৷ আমি ব্লাডের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷”
কই তোমরা আসো।
নির্বণের ডাক শুনে নির্বণের তিনটা ফ্রেন্ড আসে। ডক্টরের সাথে তারা চলে যায়৷
অপারেশনের লাল লাইট অন হতেই সকলের মাঝে চিন্তার উত্তেজনা উঠে যায়। নির্বণ সেখান থেকে মন্দিরে চলে আসে৷
ইশ্বরের কাছে নিয়তির জন্য প্রার্থনা করে৷ নির্বণ ইশ্বরের কাছে কান্না করতে করতে বলে উঠে, ” হ্যা, সৃষ্টিকর্তা। আপনি আমার নিয়তিকে বাঁচিয়ে দেন৷ আমি এই পৃথিবীতে আর কিছু চাইনা৷ আমি কোনদিন আপনর কাছে হাত পেতে কিছুই চাইনি৷ আজ আপনার কাছে এসেছে আপনার বান্দা৷ আপনার বান্দাকে ফিরিয়ে দিবেন না৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমার নিয়তিকে যদি নিয়ে যান৷ আমাকে নিয়ে যেতে হবে৷”
_______
ডক্টর বেরিয়ে আসলেই সবাই ডক্টরকে ঘিরে ধরে৷ সকলের মাঝে টান টান উত্তেজনা। কিন্তু নির্বণ এক ধ্যানে চেয়ারে বসে আছে৷ যেন জীবন্ত একটা লাশ হয়ে গেছে৷
— নির্বণের মা কান্না জনিত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমার নিয়তি ঠিক আছে তো? ডক্টর আমরা বেবি চাইনা৷ আপনি আমার মেয়েকে ঠিক করে দেন৷”
— ডক্টর হাসিমুখে বলে উঠেন, ” চিন্তার কোন কারণ নেই৷ আউট অফ ডেঞ্জার। ইশ্বর আপনাদের সহায় ছিল৷ মা ও সন্তান উভয়েই ভালো আছে৷”
সকলের মুখে হাসি৷ নির্বণ দৌড়ে এসে ডক্টরের হাত ধরে, ” আমি কি নিয়তির সাথে দেখা করতে পারি৷ প্লিজ ডক্টর আমাকে একটু দেখা করতে দেন৷”
— সরি মি. নির্বণ চৌধুরী। আমরা এখনই কাউকে এলাউ করবো না৷ তবে আপনাদের জন্য খুব ভালো খবর আছে৷”
— নির্বণ চকিত হয়ে, ” কি খবর ডক্টর! নিয়তির কিছু হয়নি তো?”
— ডক্টর মুচকি হেঁসে, ” আপনার স্ত্রীর টুইন বেবি হয়েছে৷ একটা ছেলে একটা মেয়ে। বাচ্চাদের সাথে আপনারা দেখা করতে পারেন৷”
ডক্টর চলে যেতেই নার্স সন্তান দু’টোকে নির্বণের হাতে দিয়ে যায়৷ নির্বণ দুই হাত দিয়ে নিজের ছেলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন৷ যাকে বলে আনন্দের অশ্রু।
নির্বণ তাদের সন্তানকে তার মা আর নিয়তির বাবার কাছে দিয়ে সে নিয়তির সাথে দেখা করতে যায়। নিয়তির এই মাত্র জ্ঞান ফিরেছে৷ নিয়তির অবুঝ চোখ দু’টো শুধু পরিচিত কারো খুঁজ করছে। নির্বণকে দেখে ঠোঁটে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে পাশে বসে। নিয়তি টলমল চোখে তাকিয়ে বলে, ” আমার বেবি কই? প্লিজ আমি একটু আমার সন্তানকে দেখতে চাই৷”
— নির্বণ নিয়তির হাত বুকে নিয়ে, ” তারা একদম ঠিক আছে৷ আমি বলেছিলাম না কারো কোন ক্ষতি হতে দিব না।”
— মির্বণ চকিত হয়ে, ” তারা মানে কি?”
— তারা মানে আমাদের টুইন বেবি হয়েছ। একটা ছেলে একটা মেয়ে। ইশ্বর আমাদের মনের আশা পূরণ করেছে৷ আমি তাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে আসছি৷
পাতা উল্টো দেখো, একটা গল্প লেখা
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলা কনে দেখার আলোতে
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট ঘরে, বরণ ডালায় চৌকাঠে সে৷
নির্বণ আর নিয়তি তাদের বেবির নাম আগেই ঠিক করে রেখেছিল। নিধি আর নিহানকে নির্বণ নিয়তির কাছে দেয়৷ নিয়তির একটু কষ্ট হলেও নিধি & নিহানের কপোলে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নির্বণও তাদের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
____________
সময় চলে যায় স্রোতের মতো। কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেছে। নিয়তির বাবা এই সময়ের মাঝে গত হয়ে গেছেন৷ ছোঁয়ার মা তাদের গ্রামের বাড়ি চলে এসেছেন৷ ছোঁয়ার কাকার ছেলে ছোঁয়ার মাকে নিয়ে চলে এসেছে৷
নিয়তি, নির্বণ, নির্বণের মা ডাইনিং রুমে বসে আছে৷ নিধি নিহানকে দৌড়াচ্ছে।
— নিধি ক্ষেপে বলে উঠে, ” দাঁড়া নিহান৷ এখন না দাঁড়ালে তোর সাথে কথা নেই৷”
— নিহান বলে উঠে, ” তুই স্বীকার কর তুই হার মেনে নিয়েছিস৷”
— নিধি মুখ গোমড়া করে চলে আসতে নিলেই নিহান নিধির সামনে এসে কান ধরে, ” প্লিজ রাগ করিস না৷ আমি আমার সব চকলেট তোকে দিয়ে দিব৷”
— নিধি মুচকি হেঁসে, ” তুই কান ধরে উঠ বস কর৷ তাহলে তোকে ক্ষমা করে দিব৷”
নিধির কথামতো নিহান কান ধরে উঠ বস শুরু করে৷ নিধি বলে উঠে, ” এই কুম্ভকর্ণ হাত বাড়া।”
নিহান হাত বাড়ালে নিধি নিহানের হাতে রাখি পড়িয়ে দেয়৷” নিহান তার সব থেকে প্রিয় ডল নিধিকে গিফট করে৷ নিধি খুশিতে নিহানকে জড়িয়ে ধরে৷
— নিধি আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” লাভ ইউ দাদা৷” আমার কথা না শুনলে তোকে আর কোনদিন রাখি পড়াবো না৷”
— ওকে। এখন থেকে তোর কথা শুনেই চলবো৷
— চল গ্রেনির কাছে।
নিধি নিহান নির্বণের মাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। নিধি তার গ্রেনির কোলে মাথা রাখে৷ নিধির সাথে সাথে নিহানও মাথা রাখে৷ নিধি একটা গান ধরে৷ যা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি৷
ভাই সাথী মোর কত না আপন
নেয় ভুলে যাওয়ার কোন কারণ৷ (!!)
মনে মনে কবু দেবনা তো দুঃখ
হাসাবে তোমায় সারা জীবন। (!!)
রাখি বাঁধলে বোন রাখনে মান৷(!!)
“”””””” রাখি বন্ধন “””””'””
আনন্দ উল্লাসের সাথে মেতে উঠে সবাই৷ ভাই বোনের বন্ধন আত্মার বন্ধন৷
— নির্বণ নিয়তিকে চোখ টিপল দিয়ে বলে উঠে, ” হালকা আঁধার দিচ্ছে ঘিরে। আবছা আলো নিচ্ছে ঘিরে।”
— নিয়তি নির্বণের বুকে মাথা রেখে, ” অল্প করে হোক না শুরু ভালোবাসা এখনো ভীরু৷”
অসমাপ্ত