শুষ্ক_পাতার_ভাজে?১৯.
#লাবিবা_তানহা_লিজা?
সকালে তৃনা ঘুম থেকে উঠে দেখে রায়ানের বুকে গুটি শুটি হয়ে মুখ গুজে আছে। মুখ তুলে রায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে খুব নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে সে। এতো শান্তিতে যেন কত শত দিন পর ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত রায়ানের গরম নিশ্বাস তৃনার সারা মুখে ছেয়ে পড়ছে । এই নিশ্বাসেই তো রাতে ঘায়েল হয়েছে তৃনা । আবার ঘায়েল হতে চায় না এই অসময়ে । রাতের কথা মনে হতেই লজ্জা লাগে খুব । চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে আপনাআপনি । গত দশদিনেই চেহারার অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে রায়ান । তৃনা চেয়েছিলো বেশ কয়েকদিন রায়ান থেকে দুরে থাকতে একটু শাস্তি দেওয়ার জন্য । কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি । প্রতিদিন ই এসেছে তৃনাকে নেওয়ার জন্য । কান্নাকাটিও করেছে । সেদিকে তৃনা রুমুর থেকে ফোনে মম মম শুনে অস্থির হয়ে থাকে রুমুর কাছে যাওয়ার জন্য ।বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া কথাটা জেনে আরো আপসেট হয়। রায়ানের মিনতি কান্না দেখে হৃদয় পুড়ে তার । গতকাল সারাদিন বাসার সামনে বৃষ্টিতে ভিজে রাতে অসম্ভব জ্বর হয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় । তারপর রবিন আর মনোয়ার বাসায় নিয়ে আসে । রায়ানের জ্বর কমে এলে তৃনাকে অনেক বকা ঝকা করে চলে যায় । তৃনা রাতে রায়ানের পাশে বসে কান্নাকাটি করে । তার জন্যই আজ রায়ানের এই অবস্থা । নিজেকে দোষী সাব্বস্ত্য করে । রায়ান সজ্ঞানে আসতেই তৃনাকে বুকে টেনে নিয়ে চোখ মুছে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় । তৃনা বাধা না দিয়ে আকড়ে ধরে রায়ানকে। আকড়ে ধরার দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে তৃনার ।সাথে সাথে তৃনার হৃদস্পন্দন বাড়তে শুরু করেছে । এতো জোরে কেন হৃদশব্দ হচ্ছে ..রায়ান শুনতে পেয়ে গেলে কি বলবে ? ভীষন লজ্জা করবে করছে তৃনার । যাহ উনি কিভাবে শুনবেন ..উনি তো ঘুমোচ্ছেন বলে চোখ খুলে উপর থেকে আস্তে করে রায়ানের হাত টা সরিয়ে দিল। কপালে হাত রেখে দেখে জর নেই এখন। একটু নড়ে আবার স্থির হয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় রায়ান । উঠে বসতেই চাদরে আটকে যায় তৃনা ।আস্তে আস্তে প্যাচ খুলতেই পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে চেপে ধরে নিজের সাথে রায়ান। আকষ্মিত ঘটায় আহ করে উঠে তৃনা ।রায়ান তৃনার গলায় মুখ গুজে লিক করে । কেপে উঠে তৃনা । ঘুম জড়ানো গলায় বলে
“কোথায় যাচ্ছ তুমি ? আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ তাইনা ? কোথাও যেতে দেবো না তোমায়। নিজের সাথে চেপে রাখবো তোমায় । ছাড়বোনা কখনো । আমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না।”
একটু দম ছেড়ে তৃনা বলে
“যেতে আর পারলাম কই ..আটকেই তো দিলেন । আমার সব কিছু আপনাকে দিয়ে আমি যে আজ নিঃস্ব। ”
” আমি প্রথমে এইটাই ভাবতাম । কিন্তু পরে দেখলাম এটা সত্যি না । শরীর আর মন দুটোই স্বার্থপর । আর সেই মানুষ গুলো আরো বেশি স্বার্থপর । যদি এভাবেই আটকানো যেতো তাহলে আমাকে একা থাকতে হতো না এতোদিন ।”
“আপনি কি আমাকে সেই মানুষ গুলোর দলে ভাবেন ? ভুলেও এই কাজ টা করবেন না ।”
রায়ান তৃনাকে নিয়ে শুয়ে পড়ে । তৃনার উপরে উঠে চোখে চোখ রাখে । তৃনা কাপা গলায় বলে
– I love you
-” I need you . তুমি চাইলেও দুরে যেতে পারবে না । আমি আমার সব টুকু দিয়ে বেধে রাখবো তোমায়। তুমি চেষ্টাও করো না । ”
রায়ান তৃনার গলায় আবার মুখ গুজে । লিক করতে থাকে ঘাড় গলায় । মাঝে মাঝে ছোট্ট কামড় আর চুমুও দিচ্ছে । তৃনার পাগল হওয়ার অবস্থা । নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,” ছাড়ুন আমি ওয়াস রুমে যাবো ।”
” কোথাও যাবে না তুমি। ছাড়বোনা তোমাকে । ”
রায়ান আরো জোরে চেপে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে তৃনার সারা মুখে ।
“ফ্রেশ হতে হবে ছাড়ুন না ..।”
রায়ানের কান অব্দি পৌছায় না । না পেরে তৃনা রায়ানের মাথা শক্ত করে চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে “রুমুর কাছে যেতে হবে তো । কতোদিন আর মম পাপা থাকবে মেয়েটা ? মাম্মা পাপার কাছে থাকবে তো । ফ্রেশ হয়ে ওর কাছে যেতে হবে তো । এবার ছাড়ুন । ”
রায়ান কিছুক্ষন তৃনার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে উপর নিচ মাথা ঝাকায় । তারপর চাদরটা ভালো করে দুজনে সমেত পেচিয়ে নেয় । তৃনাকে কোলে নিয়ে বাথরুমে চলে যায় । তৃনা অবাক । এই লোকটা অসুস্থ তবুও কত শক্তি । একদম ছাড়লো না তৃনাকে । গোসল করে বেড়িয়ে এসে ব্লু কালার শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট পড়ে নেয় রায়ান। আগেই কিনে রেখেছিলো মনোয়ার জামাইয়ের জন্য । তৃনার একটু লেট হচ্ছে । রায়ান দু একবার ডেকেছেও । তবুও বের হবার নাম নেই । শেষে রায়ান এসে হাত ধরে টেনে বের করে তৃনাকে। শাড়ি অর্ধেক পড়া হয়েছে আর অর্ধেক বাকি আছে । কুচিটাই দেওয়া হয়নি । তৃনা নীল শাড়িটার কুচির কাপড় ধরে দাড়িয়ে আছে । রায়ান হাত থেকে নিয়ে কুচি দিতে শুরু করে । ঠিক ঠাক কুচি দিয়ে গুজতে গিয়ে তৃনার দিকে একবার তাকায় । সদ্য গোছল করা ভেজা চুলের ফ্রেশ স্মিগ্ধ লজ্জা মাখা মুখটা হৃদয়ে দাগ কাটে । রায়ান এভাবে তাকাতে তৃনার গাল দুটো লাল টমেটোর মত হয়ে যায় । তৃনা হালকা হেসে কুচি ধরে গুজে দেয় । কোমড়ে গাড় তিলটার দিকে চোখ আটকে যায় রায়ানের । আজ দ্বিতীয়বার দেখছে এই তিলটাকে । প্রথম বার দেখেছিলো মেঘকন্যা মেঘে ভেজার সময় ।
হালকা করে একটা কামড় বসায় । ব্যথায় কাকিয়ে উঠে তৃনা। হালকা টানে আয়নার সামনে এনে বসায় তৃনাকে । হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে আচড়ে দেয় । চুলের কাটা দিয়ে খোপার মতোন করে দেয় চুল গুলো । কানের পাশে এসে বলে একটু সাজিয়ে দেই প্লিজ । তৃনা কিছুই বলে না । চুপচাপ রায়ানের কাজ দেখতে থাকে । গালে হালকা করে ব্রাউন ফেস পাউডার লাগায় । চোখ জুড়া নীল কাজল একে দেয় খুব যত্ম নিয়ে । দুই ভ্রুর মাঝে ছোট্ট একটা টিপ বসিয়ে বলে না করবেনা প্লিজ..নীল টিপে তোমায় কেমন লাগে দেখবো । ঠোট দুটো এমনিতেই লাল হয়ে আছে । তৃনা লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় । সাজ কমপ্লিট করে দাড় করায় তৃনাকে । পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলে – আমার দেখা সম্পূর্ণা তৃনলতা।
তৃনা মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে একসাথে নিজের পার্টনারকে । রায়ান সারাজীবন তার পাশে এভাবে থাকবে ভেবেই চোখ ভরে আসে জলে । রায়ান নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে – কেদে কেটে সময় নষ্ট না করে মেয়ের কাছে যাও। সেও তো মাম্মার জন্য কাদছে । তাইনা ?
তৃনা মাথা ঝাকিয়ে বলে চলুন ।
সকালের নাস্তা করে নেয় সবার সাথে । সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশে।
রায়ান ড্রাইভ করছে । ড্রাইভার ছুটিতে আছে তাই অসুস্থ হয়েও ড্রাইভ করছে । পাশে তৃনা বসা । মাঝ রাস্তায় এসে আচমকা রায়ান তৃনাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে । তৃনা এমন চাপে অস্থির হয়ে পড়ে । ছাড়ুন । গাড়ি ড্রাইভ করুন মন দিয়ে । ড্রাইভার থাকলে আপনাকে গাড়ি ড্রাইভ করতেই দিতাম না । এমনিতেই অসুস্থ দুর্বল তার উপর ড্রাইভ করছেন দুইসিডেন করলে অবস্থা খারাপ । রায়ান মৃদু হেসে এক হাতে গাড়ি চালাতে থাকে আরেক হাতে তৃনাকে জড়িয়ে ধরে বুকে। তৃনাওও চুপটি হয়ে যায় । মুখের সামনে চুল গুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে গাড় করে চুমু খায় । তৃনা রেগে যায় ।শাডির নিচে হাত রেখে পেটে হালকা চাপ দিতেই তৃনা ঝাঝিয়ে উঠে বলে, “লুচু একটা । গাড়িতেও তার লুচুগিরি করতে হয় । সারাটা জালিয়েও শান্তি হয়নি । রায়ান শব্দ করে হেসে বলে
– কি করবো বলো ..লুচু না হয়ে কি আর উপায় আছে ? সাথে নতুন বউ ..ফিলিংস ই অন্যরকম ডিয়ার জানু বউ। তাছাড়া সব বউদের কাছে স্বামীরা লুচুই হয় । লুচু না হলে বউ টিকে না গো ।
তৃনা মনে মনে প্রশ্ন করে তাহলে আগের বউ কেন টিকলো না ? মনে মনে বলতে গিয়ে বেচারা জোরে বলে ফেলে । রায়ান তৃনাকে ছেড়ে জোরে ব্রেক কষে । গেট খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে । তৃনার বোধগম্য হোওয়া মাত্রই সেও বেড়িয়ে পড়ে ।রায়ান একটু এগিয়ে গিয়ে বেঞ্চিতে বসে ।তৃনাওও বসে পাশে । রায়ানের গালে হাত দিয়ে বলে
– I am sorry . আর কখনো হবে না । রাগ করবেন না প্লিজ ।
রায়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে – গাড়ি থেকে নামলে কেন ? গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি । আমি একটু বেশি বেশি করে ফেলছি । sorry for that .
তৃনা রায়ানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে
– যেদিন থেকে আপনাকে মনের মনিকুঠায় বসিয়েছি সেদিন থেকেই আমি পুরোটাই আপনার হয়ে গেছি । শুধু বাকি ছিলো শরীরে আপনার অস্তিত্ব আপনার চিহ্ন সেটাও দিয়ে দিয়েছেন । আমি পুরোটাই আপনার । আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা যন্ত্রনা, ব্যথা, ভালুপাসা , সুখ পাওয়ার জন্যই আমি আজ আপনার এতো কাছে । আমি আপনার ..আপনি আপনার যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন । সব সহ্য করবো বলেই ভালোবাসি ।আপনার হাতে মৃত্যু হলেও যে আমার সুখী। আমি যেমন আপনার আপনিও তেমন আমার । আমাদের মাঝে আমি কাউকে আসতে দিবো না । এতোদিন দোটানায় ছিলাম আমার হাতে কিছু ছিলো না বলে আগলে রাখতে পারিনি। এখন দোটানার মৃত্যু ঘটেছে ।যা আমার আমি তা কারো সাথে ভাগ করতে পারবো না । সবটা দিয়ে আগলে রাখবো । আপনি প্রমিজ করুন আমাকে কখনো দূরে ঠেলে দিবেন না ।
তৃনার দু চোখ বেয়ে ঝরা জল হাতে মুছে দিয়ে বলে
– মৃত্যু অব্দি ছাড়বো না ।
– I love you
– I also need you বউ ।
তৃনার ঠোটে ঠোট ডুবায় রায়ান । শুষে নিতে থাকে ভালবাসার মিষ্ট স্বাদ টুকু । তৃনা ঠেলে সরিয়ে বলে – কি করছেন ? এটা রোড় ।
– উহু । এটা পার্ক। পার্কের ভেতর দিয়ে গিয়েছে রাস্তাটা ।
তৃনা আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সত্যিই সে পার্কে বসে আছে । রায়ান বাকা হেসে বলে – পার্কে এটা কমন বেপার । আরো কতো কি ঘটে ..। লজ্জা পেয়ে যায় তৃনা । রায়ান উঠে পাজা কোলে করে নিয়ে গাড়িতে যায় । ড্রাইভিং সিটে বসে তৃনাকে কোলে বসিয়ে দেয় ।
-শোন আমি ড্রাইভ করবো আর তুমি ৩০ সেকেন্ড পর পর আমাকে কিস করবে ।
– পারবোনা আমি । দুইসিডেন্ট হলে তখন কি হবে ??
– ভয় লাগে ? মরতে পারবেনা আমার সাথে ?
তৃনা মাথা ঝাকায় । রায়ানের গালে গভীর ভাবে উচ্চ শব্দ করে চুমু দেয়।
চলবে?