শুষ্ক_পাতার_ভাজে?২০.

0
2140

শুষ্ক_পাতার_ভাজে?২০.
#লাবিবা_তানহা_লিজা?

বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতেই রুমু মাম্মা পাপা বলে দৌড়ে আসে পাখির মতো । তৃনা দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নেয় মেয়েকে । চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে । তৃনার কোল ছেড়ে রায়ানের কোলে যায় রুমু । রায়ানের গলা জড়িয়ে বলে ” পাপা মাম্মা মিস ইউ ।”
” উই মিস ইউ ট্রু মা।”
কোল থেকে নেমে গিয়ে দৌড়ে রোহান রোহানাকে ডেকে নিয়ে আসে । ছেলে ছেলে বউকে একসাথে দেখে খুশি হয়ে যায় । রোহানা রায়ানকে ধরে হু হু করে কেদে উঠে । রায়ান ও মমকে বুকে জড়িয়ে নিঃশব্দে কাদে।রায়ানের মুখে হাত বুলিয়ে বলে, ” কি অবস্থা করেছিস চেহারার বাবা এই কয়দিনে । তৃনাটাও শুকিয়ে গেছে । ”
” তোমার যত্মে দুজনেই ঠিক হয়ে যাবো মম। ”
রোহানের কাছে গিয়ে বলে, ” আমি তোমার বউমাকে নিয়ে এসছি পাপা । এবার তো এ বাসায় থাকতে পারবো ।”
রোহান ছেলেকে একপাশে জড়িয়ে বলে,”আম হেপি মাই সন । এখন একটা পরিপূর্ন পরিবার আমরা । ”
রোহানা বলে, ” খেয়ে এসেছিস তো তোরা ! আমি স্ন্যাকস পাঠিয়ে দিচ্ছি । ফ্রেশ হয়ে নে তোরা।”
রায়ান তৃনা রুমুকে নিয়ে রুমে চলে আসে । রায়ান রুমে এসেই বিছানায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । তৃনা তাড়াতাড়ি কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে দেখে আবার জ্বর চলে আসছে । রায়ানকে ধরে জোর করে শুইয়ে দিয়ে রুমুকে বলে রোহানাকে ডেকে দিতে । রোহানা এসে জ্বরের ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেয় ।

তৃষার নতুন সংসার হয়েছে । রবিন তার অফিসে একটা চাকরির ব্যবস্হা করে দিয়েছে । অফিসের কাছেই একটি দু রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে । সাথে এনেছে নিজের বাবাকে । পঙ্গু বাবাকে আনতে গেলে তার স্ত্রী সন্তান কেউই বাধা দেয় নি । উল্টো যেনো হিমশিম খাচ্ছিলো এই পঙ্গু বুড়োকে টানতে টানতে । তাই নিয়ে আসতে চাওয়ার সাথে সাথেই ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে দিয়েছে । হাফ ছেড়ে বাচার ন্যায় মুখে ছিলো হাসির ছোয়া। তৃষা বাবাকে এনে নতুন বাপ মেয়ের সংসার পাতে । অফিস আর বাবার দেখা শুনা করেই দিন কাটে তার । দুদিন না যেতেই পারুল গিয়ে উপস্থিত হয় । পারুল কে দেখে তৃষা সাদরে আমন্ত্রন জানায় । অনেক দিনের সপ্ন পূরন হয় তার । নিজের একটা পরিবার হয় যে পরিবারে সে তার বাবা মার সাথে থাকতে পারছে । পারুল স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইলে পারুলকে ক্ষমাও করে দেয় । সব মিলিয়ে হ্যাপি ফেমেলি । কিন্তু পারুলের এখন মনে প্রানে চাওয়া রবিনের সাথে তৃষার বিয়েটা হওয়া । সেজন্য মনোয়ারকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটিও করা বাদ রাখে না । মেয়ের সুখের জন্য মরিয়া হয়ে আছে সে । তৃষা অফিসে কাজ শেষে বের হবার সময় রবিনের সাথে চোখাচোখি হয় । দিনে হাজার বার চোখা চোখি হয় তাদের কিন্তু সামনা সামনি দাড়িয়ে হয়না বললেই চলে । রবিন গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করে
” কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো ?”
তৃষা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।
” অসুবিধা হলে বল আমায় । হেল্প করতে পারি তো । টাকা পয়সার কোন সমস্যা হচ্ছে ? সামান্য বেতনে চলতে সমস্যা হওয়ার ই কথা । তার উপর ফুপার ঔষধ কিনতে হচ্ছে । বলবিতো আমাকে । না বললে বুঝবো কি করে ?”
” আমার ফাকা ফাকা লাগে । ”
” কি ফাকা ফাকা লাগে ?”
” বিছানার পাশটা । একজন পুরুষ নামি তুমি রবিন কে প্রয়োজন । ”
” বাসায় যা । ” বলেই হেটে চলে আসে রবিন ।পেছন থেকে তৃষা গলা বাড়িয়ে বলে ” একটু ভালোবাসবে আমায় ?” দু পা থেমেও আবার চলে যায় রবিন । তৃষা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসে ।

আজ তৃষার বাসায় যাওয়ার দিন তৃনার । বোনটার নতুন সংসার দেখতে যাবে সে । সাথে যাচ্ছে রায়ান আর রুমু । বাসার সামনে এসে তৃনা ফোন দেয় তৃষার নাম্বারে । তৃষা এগিয়ে আসে তৃনাদের রিসিভ করতে । তৃনাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে । ছাড়ার পর চোখ পড়ে রায়ানের দিকে । হালকা হেসে দুজনেই ভাব বিনিময় করে । রুমুকে নিতে গেলে রুমু ভয়ে রায়ানকে শক্ত করে ধরে । তৃনা এসে রুমুকে কোলে নিয়ে বলে ” মাম্মা যাও । তুমার খালামনি হয় । তোমাকে অনেকগুলো চকলেট দিবে । ” তৃষাও অনেক বুঝ দিয়ে কোলে তুলে নেয় । বাসার সামনের দোকান থেকে অনেকগুলো চকলেট কিনে দেয় । রুমু চকলেট খেতে খেতে বাসায় চলে আসে । পারুল তৃনাকে দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় । তৃনার কাছে ক্ষমা চায় । তৃনা পারুলকে সামলিয়ে ফুপার সাথে দেখা করতে যায় । রায়ান সোফায় বসে পারুলের সাথে কথা বলে । পারুল উঠে তৃনার কাছে যায় । তৃষা ট্রে তে ফ্রুটস নিয়ে আসে । রায়ানকে নিতে বললে রায়ান হাতে একটা আপেল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে ” কেমন আছো ? সব ঠিক ঠাক?”
তৃষা মাথা নাড়ায় । ” তৃষা ফরগিভ মি । আমি এখন তোমার জিজু । আমি চাই আমাদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক থাকুক আর পাচটা সম্পর্কের মতো । ”
” প্যারা নাই দুলাই । ”
” সব ভুলে যাও প্লিজ আমাদের মধ্যে যা ছিলো । ”
” সত্যি ? কিছু ছিলো নাকি দুলাই ? তোমাকে একটা সিক্রেট বলি দুলাই । শোন । আমি কাল কার সাথে রিলেশনে ছিলাম সেটা আজকেই ভুলে গেছি । তোমার সম্পর্কে তো আরো সব ভুলে গেছি । আমি শুধু জানি তুমি আমার দুলাই । এগুলো ভুলা এই তৃষার ব্যপার না।”
” কই রবিন ভাইকে তো ভুলতে পারলে না । ”
” পারবোও না । নাইবা বললে সেসব কথা ।”
” বলবোতো অবশ্যই । তৃনা হাল ছাড়লেও আমি হাল ছাড়বোনা । ”
” তা বোধহয় দরকার হবে না । মামার সাথে আম্মুর প্রতিদিন কথা হয় । ”
তৃনা এসে বলে , ” এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ঠিক করিস নি তৃষা । ”
” আমি ঠিক করেছি আপু । আমার একটা আলাদা পরিবার চাওয়ার ছিলো । যেখানে আমার বাবা আম্মু একসাথে থাকবে ।আমাকে যদি তোমার ভাইয়ের বউ করে নিয়ে যাও সেখানে আম্মুর থাকাটা কি ঠিক ? এতোদিন ভাইয়ের বাড়ি পরিচয়ে ছিলো এখন তো মেয়ের শ্বশুর বাড়ির পরিচয়ে থাকতে হবে । সমাজ এটি কোন চোখে দেখবে ? তাছাড়া আমারো একটা সম্মান আছে । এখানে এসে সবার ভালো হয়েছে আপু । শেষ বয়সে হলেও আমার বাবা আম্মু একসাথে থাকছে । বাবা একটা বেটার লাইফ পেয়েছে । ঠিক ভাবে চিকিৎসা হচ্ছে । এর থেকে আর কি ভালো হতে পারে ? ”
রায়ান বলে , “তৃষা ঠিক বলেছে তৃনলতা । যাক শালিকার ঘটে একটু হলেও তাহলে বুদ্ধি আছে । ”
তিনজনেই হেসে উঠে । ডিনার করে একবারে বাড়ি ফিরে তৃনা রায়ান রুমু ।

রবিনের সাথে মিট করবে বলে রেস্টুরেন্টে ডেকে আনে তৃনা । এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় বলেই ফেলে ” তুমি যা করছো তা ঠিক নয় । তৃষাকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না । এবার তোমার বিয়ে করা উচিত । ভাইয়া আমি এতো বছর পর ওকে নিজের করে পেয়েছি । কতো বাধা বিপত্তি ছিলো আমাদের মাঝে তবুও এক হয়েছি । তোমাদের মাঝে এখন কোন বাধা নেই । মান অভিমানের পালা শেষ করে এবার অন্তত কাছে টেনে নাও । এভাবে শুধু কষ্ট ই মিলবে সুখ মিলবে না । ”
“তোর এতো ভাবতে হবে না । নিজের সংসার নিয়ে ভাব। ”
” আমার ভাইয়ের সংসারটাও দেখতে চাই আমি । আমার বোনের সংসারটাও দেখতে চাই । ”
” তোর বোন তো সংসার পেতেই নিয়েছে। ”
” সেটা ফুপির সংসার । তৃষার সংসার তো হবে তোমার সাথে । ”
” যখন হবে তখন দেখা যাবে । ”
” তার মানে তুমি বিয়ে করবে ? ”
মুখে উচ্ছলতার ছোয়া ।
” তোকে ভাতিজার মুখ দেখাতে হবে তো । আজ আসি । বাসায় চলে যা।”
রবিন চলে যায় । তৃনা সেখানেই বসে থাকে । বুক জুড়ে হাওয়া বয়ে যায় । এককাপ কফি হাতে খুশি গুলো আওড়াতে থাকে মনে মনে । সব ভাল তার শেষ ভালো যার । চোখ খুলেই কল্পনা করতে থাকে রবিন তৃষা বর কনে সেজে বাড়ির চৌকাঠে দাড়িয়ে । তৃনার চোখ মুখ বেয়ে আনন্দ গড়িয়ে পড়ে । হটাৎ কারো ওয়েটার ডাকে চেতনা ফিরে । চেনা গলা শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে মাসুদ ওয়েটারের সাথে কথা বলছে । সামনে তার পুরো টেবিল খাবার । এমন কিছু দেখবে তৃনা ভাবেনি । উঠে সামনে যেতেই খাওয়া রেখে মাসুদ তাকিয়ে থেকে বলে তৃনলতা ভাবি ?
তৃনা মাথা নাড়িয়ে সামনে বসে পড়ে । মাসুদ তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে । তৃনার জন্য অর্ডার দেওয়া কফি খেতে থাকে তৃনা । খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে মাসুদ বলে ” ভাবি আপনি এখানে ? খেতে এসেছিলেন বুঝি ?”
” হ্যা ভাইয়া । ”
” আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাবি । আমার বন্ধুটার ছন্নছাড়া জীবনটাকে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য । ”
” আপনাকেও ধন্যবাদ । সব সময় ওর পাশে থাকার জন্য । ”
” সে আর পারলাম কোথাই ? আপনি চলে গিয়েছিলেন সময়ে আপনাকে তো আর এনে দিতে পারিনি । ”
” আপনার সাধ্যে ছিলো না তাই । ”
” ভাবি মনে কিছু রাখবেন না । আসলে অতীত ভেবে ভুলে যান । ”
” আমি যতো দূর জানি একটা মানুষকে কেউ কখনো আঘাত করলেই সে বিপথে যায় না । এর মধ্যে হাজারো মসলা থাকে। আমি কি সেই মসলা সম্পর্কে জানতে পারি ভাইয়া?”
মাসুদ ইতস্তত বোধ করে । তৃনা বলে, ” ভাইয়া আমি কিন্তু চাইলেই আপনার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করতে পারি । আমি যতদূর জানি ও বলবে আমাকে । কিন্তু আমি চাই না ও অতীতের কিছু নিয়ে ভেবে কষ্ট পাক । আমি চাই আমার আর রায়ানের মাঝে কোন কালো ছায়া না পড়ুক । রুমুকে আমার সন্তান হিসেবে মেনে নিয়েছি । রায়ান কেনো আমি নিজেও চাইনা অতীতের খারাপ কোন স্মৃতি মনে রাখতে । কিন্তু আমি শুধু সিওর হতে চাই ।প্লিজ সে…….আমি যা ভাবছি তাই কি সঠিক? ”
মাসুদ মাথা নাড়ায় ।
” হ্যা ভাবি । আমি ঠিক ধরেছেন । রায়ানের পুরুষত্বে আঘাত করেছিলো রায়ান । অন্য একজনের সাথে রিলেশনে গিয়ে রায়ানের থেকে দূরে সরতে অনেক চেষ্টা করে লিনা । বিভিন্ন ভাবে অপবাদ দিতে থাকে । রায়ান তখন এক সন্তানের বাবা উল্টো ওদের লাভ ম্যারেজ ছিলো । রায়ান লিনাকে উল্টো বুঝাতো । কিন্তু কোনকিছুতেই কোন কাজ হয়না । রায়ানের সাজানো গার্লফ্রেন্ড বউ বচ্চা সবই আনা হয় । কিন্তু সব মিথ্যা প্রমানিত হয় । শেষে রায়ানের নামে এই অপবাদটা আনা হয় । একদিন ড্রাগস দিয়ে দুজন মহিলার সাথে রাখা হয় । পরদিন সকালে সবাই গিয়ে এই দৃশ্য দেখে । কিন্তু মহিলা দুটো উল্টো রায়ানের অক্ষমতা নিয়েই কথা শুনিয়ে যায় । তৃপ্তির হাসি হেসে লাগেজ নিয়ে দুধের বাচ্চাটাকে ছেড়ে বেড়িয়ে যায় লিনা । তখন রুমুকেই নিয়ে থাকত রায়ান । কিন্তু আত্মীয় স্বজনের প্রতিবেশীর অফিসের সবার অকথ্য শ্রবন করতে করতে সুইসাইড করতে যায় রায়ান । তখন তাকে বাচায় ফাল্গুনী নামের এক সুন্দরী । সূচনা ঘটে রায়ানের ভুল জগতে পা দেওয়ার । ”
” কিন্তু লিনা এসব করলো কেনো ? সে তো এমনিই চলে যেতে পারতো । ”
” পারতো না । কারন লিনার ফেমেলি,রায়ানের ফেমেলি আর এদের আত্মীয় স্বজন সবাই স্ট্রেট ছিলো ওদের সম্পর্কে । উপায় না পেয়ে এসব করেছে লিনা। ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here