শুষ্ক_পাতার_ভাজে?৭
#লাবিবা_তানহা_লিজা?
রবিন তৃষা অনেকক্ষন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে । তৃনা দরজা খুলে দেয় । রবিন সিরিয়াস মুড নিয়ে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে । তৃষা দরজা ভেজিয়ে দিয়ে রবিনের পাশে এসে বসে । তৃনা তাদের দেখে বলে –তোমাদের মুখ গম্ভির কেনো ? কিছু বলতে চাও ?
রবিন মুখ খুলে
–তৃষার বিয়েটা শীঘ্রই দিয়ে দিবে বাবা।তার আগে তোর বিয়েটা দিতে হবে ।
–আমি বিয়ে করবো না ভাইয়া ।
–তুই শুধু তোর দিকটা দেখিস কেনো ? আমরা কি নাই ? আমরা তোর একটা সুন্দর জীবন কামনা করতে পারি তুই কেনো পারিস না ?
–আমি তোদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলি নি কখনো। প্রয়োজনে আমাকে ভুলে যেতে পারো ।
–আমরা ভুলি আর না ভুলি তোকে সব ভুলে যেতে হবে । কোথাকার কোন ছেলের জন্য তুমি নিজের লাইফ টাই নষ্ট করে দিবে সেটা তো মেনে নিবো না আমরা ।
তৃনা ভাইয়ের দিক তাকিয়ে হাসে । ইশারায় বলে তৃষা তোমাকে বলেছে তাই না ? রবিন আরো রাগী মুড করে তাকায় । তৃনা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
— বাবা তোমাকে বার বার আমাকে বোঝানোর জন্য পাঠায় তাই না ?কিন্তু আফসোস এত কষ্ট করেও তুমি আমাকে রাজি করাতে পারো না । ভাইয়া একজনকে ভালোবেসে অন্য জনকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না । বুকে অন্যজনের জন্য প্রেম রেখে স্বামীকে মিথ্যা প্রেম দিয়ে ভুলিয়ে রাখার মতো মেয়ে আমি নই । আমি একাই ভালো আছি । আমাকে তোমরা শুধু শুধু ফোর্স করো না ।
–দেখ তৃনা তুই শুধু তোর দিকটাই ভাবছিস আমাদের দিকটা ভাবছিস না । তোর জন্য বাবা কতো টেনশনে আছে জানিস ? মেয়েকে বিয়ে না দিতে পারলে কোন বাবাই শান্তি পায় না । তোর এই একগুয়েমির জন্য চিন্তা করে করে বাবার চেহেরা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে । আম্মু তুই কষ্ট পাবি ভেবে তোকে সামনে সামনে সাপোর্ট করে কিন্তু আড়ালে ঠিক ই কষ্ট পায় । তোর জন্য তৃষার বিয়ে আটকে আছে । লোকজন এসে বলে বড় মেয়ে এখনো বিয়ে করেনি কেনো আবার বলে বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে নিশ্চয় কিছু ভেজাল আছে । আবার দেখ আমার বউ যখন আসবে তখন তার সংসারে অবিবাহিত ননদ কতো দিন ভালো চোখে দেখবে বলতো ? এই নিয়ে সংসারে আরো বেশি ঝামেলা হবে । সবাই তো আর আমার আম্মুর মতো হবে না বল! সমাজের কথা নয় বাদ ই দিলাম ।
তৃষা বলে –আপু সেদিন রায়ান শুনে অবাক হয়েছিলো তোমার কথা শুনে ।এর প্রভাব যে আমার উপর পড়বে তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি । একটা বিয়ের জন্য এতো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে । তুমি বিয়েটা করে নিলে এইসব সমস্যাও সৃষ্টি হবে না আর তোমার জীবনেও একটা গতি আসবে । তোমার বিয়ের পর পর ই আমি রায়ানকে বিয়ের কথা বলতে পারবো । আমি চাই না বাইরের লোকজন এসব বিষয় জেনে যাক । আমার মাথা নত হয়ে যাক ।
রায়ানের কথা শুনে হসপিটালের কথা মনে পড়ে যায় তৃনার । সমস্ত কিছু ভেবে রাগ উঠে যায় মাথায় । দাতে দাত চেপে নিজেকে কন্ট্রোল করে । তৃষাকে বলে –রায়ান ছেলেটা ভালো নয় । তুই ওকে ভুলে যায় ।
–আপু তুমি আবার রায়ান আর আমাকে আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো ?
–হা লেগেছি আর সারাজীবন লেগে যাবো । রায়ানের মতো একটা ছেলের হাতে আমি কখনোই আমার বোনকে তুলে দিতে পারিনা । রায়ান আমার পূর্ব পরিচিত । আমরা একি ভার্সিটিতে পড়েছি। ঐ ছেলের সম্পর্কে যথেষ্ট জানা আছে আমার।
–আর আমারো জানা আছে । চার বছর থেকে চিনি আমি ওকে । আজ পর্যন্ত তার সম্পর্কে কোন বাজে রিপোর্ট পায় নি । আর তুমি আলতুফালতু কথা বললেই আমি ভুলে যাবো রায়ানকে বললেই হলো ?
–হা বললেই হলো । আমি চাই না রায়ানকে বিয়ে করে তুই তোর জীবনটা শেষ করে দিশ । তোর জিবনে কোন সমস্যা হোক সেটা চাই না আমি ।
–আমার জীবনে সমস্যা টা কি জানিস আপু ? আমার জীবনের সমস্যা হলি তুই । তুই যদি বিয়ে টা করে নিতি তাহলে আমার জীবন আমার মতো করে আমি গুছিয়ে নিতে পারতাম ।
–তৃষা!!
রবিন বলে , ” তৃষা তো ঠিকি বলছে। অনেক হয়েছে আর না । কাল ছেলে বাড়ি থেকে লোক আসছে । পছন্দ হলে কাল ই আংটি পড়িয়ে যাবে । বুঝেছিস তুই ?”
তৃনা লাফ দিয়ে উঠে আলমারি খুলে । লাগেজে কাপড় পুরতে থাকে । রবিন তৃষা গিয়ে তৃনাকে ধরে আটকাতে চেষ্টা করতেই তৃনা ঝাড়ি দিয়ে দুজনকে সরিয়ে দিয়ে বলে –আমার জন্য যদি কারো এতো প্রবলেম হয় তাহলে আমি আর থাকবো না তোদের লাইফে । চলে যাচ্ছি আমি । শোন তৃষা ঐ ছেলে ভালো না জন্যেই আমি তোকে না করছি । আমি কোন দিন তোর ক্ষতি চাইতে পারি না তাই । বুঝবি তুই বুঝবি । আজ না হয় কাল ঠিক ই বুঝবি । আর ভাইয়া তোমার বউয়ের সংসারে আমি থাকবো না। আমি নিজেরটা নিজে রোজগার করে খাই । এ বাড়িতে থাকবো এটা যদি কারো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমি থাকবো না । আর বাবা কে বলে দিবে আমার জন্য তার টেনশন করতে হবে না । না সহ্য করতে পারলে ত্যাগ করুক আমায় ।
ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে । রবিন তৃষা আটকাতে গেলেও আটকাতে পারে না । শিল্পি কান্না কাটি শুরু করে । পারুল বলে –থামো তো ভাবী । রাগ পড়ে গেলে ঠিকি বাড়িতে ফিরে আসবে । কই আর যাবে তোমার বোনের বাসা ছাড়া। চলে আসবে কান্না কাটি করো না।
তিন দিন হয়ে গেছে তৃনার কোন খোজ নেই। খালার বাসাতে যায় নি সেদিন । আত্মীয় স্বজন সবার বাসায় খোজ নেওয়া হয়ে গেছে । কোথাও নেই তৃনা । আজকের রাত টা পেরিয়ে গেলে চার দিন । মনোয়ার শহরের সমস্ত হসপিটালে খবর নেওয়ার চেষ্টায় আছেন । তিনি এখন পাগল প্রায় । সেদিন বলেছিলো হসপিটালে ছিলো কিন্তু কেনো ছিলো সেটা বলে নি । মনোয়ার এটা ভেবেই ভয় পাচ্ছে যে তার মেয়ের বড় কোন অসুখ করেনিতো যার জন্য বিয়ে করছে না আর সবার থেকে কথাটা লুকাচ্ছে । পারুল তৃষা শিল্পি থেমে থেমে কেদেই চলেছে । ঘরের মেয়ে ঘরে না ফিরলে যা হয় তা ঘরের অন্য মেম্বারসরাই বুঝে শুধু ।রবিন বার বার আল্লাহ আল্লাহ করছে যেনো তার বোনটার কিছু হয় । আর কখনো বিয়ে করতে বলবোনা তোকে আর কখনো কোন কিছুতে জোর করবোনা তুই শুধু বাড়ি ফিরে আয় বলেই নিঃশ্বব্দে কাদছে।
টেবিলের উপরের জিনিস গুলো তছনছ করে ফেলছে রায়ান । টেবিলে চেয়ারে পা দিয়ে লাথি দিচ্ছে । রোহান বারবার আটকাতে যাচ্ছে রায়ান কে । সামনে দাড়িয়ে থাকা এডভোকেড থরথরিয়ে কাপছে। অবশেষে ক্ষান্ত হয়ে হুংকার ছাড়ে রায়ান ।
” ঐ ডার্টি লেডিকে আমি কিছুতেই এক্সেপ্ট করবোনা । কোন দিন না । আমার মেয়ে শুধু আমার ই মেয়ে । ওকে বলে দিবেন ভালোয় ভালোয় যেন টাকা গুলো নিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দেয় আমাকে । ঐ লেডিকে তো আমি অনেক আগেই ছেড়েছি এখন অফিসিয়ালি ছাড়ব । এতোদিন ছাড়ার কোন তাগিদ পাই নি কিন্তু এখন আমাকে সবার আগে এটাই করতে হবে আমার বাচ্চার ফিউচারের কথা ভেবে এই লেডিকে ছাড়াব আমি । ”
এডভোকেড–স্যার উনি তো ডিভোর্স করতে চাইছেন না । আপনার লাইফে আবার ব্যাক করতে চাইছেন । আপনাকে আর বেবিকে নিয়ে হেপি লাইফ লিড করতে চাচ্ছেন। ”
” আমার আর আমার মেয়ৈর লাইফে তার কোন জায়গা নেই । উই জাস্ট হেট হিম । ঐ লেডিকে বলে দিন ওর সাথে আমার কোর্টে দেখা হচ্ছে । ”
এডভোকেট চলে গেলে রোহান ছেলেকে শান্ত করে চেপে ধরে । রায়ান শান্ত হলে রোহান বলে
–আজ যদি একটা বিয়ে করতি তাহলে এই দিনটা দেখতে হতো না।
–বিয়ে করলে আমার রুমুটার কষ্ট হবে পাপা । পরের মেয়েকে কেইবা নিজের মেয়ে করে নিবে !
–তুই তো থাকিস ই না দাদুমনির কাছে ।
–আমি থাকি বা না থাকি দিন শেষে আমি রুমুর পাপাই থাকবো । আমি অনেক দেখেছি পাপা বিয়ে করে বউ আনলে প্রায় সবাই চেঞ্জ হয়ে যায় । আর আমি তো আমি।
–ভাগ্য ভালো থাকলে এমন মেয়েও পেতে পারিস যে তোর মেয়েকে নিজের মেয়ে করে তোর সাথে সুখে পুরো লাইফ কাটিয়ে দিবে ।
–আমার এই জীবনে আমি কাউকে জড়াতে চাই না পাপা । আমরা পাপা মেয়েই বেশ আছি ।
–রুমুর মার প্রয়োজন । মেয়েটা সব সময় মায়ের খোজ করে । সে তো জানেও না তার মা কে ! এতে ব্যপারটা সহজ হবে । তোর নতুন বউকে মা বলে পরিচয় দিলেই সে জানবে ইনিই তার মা । হাল না ছেড়ে একটু খোজে দেখতে তো পারিস । একজন মেয়ের জীবনে মায়ের প্রয়োজন যে কতটুকু তা তুই নিশ্চয় জানিস ।
–ভেবে দেখবো পাপা ।
রোহান রায়ানের পিঠে দুটো চাপর দিয়ে উঠে যায় ।
কোর্টে মুখোমুখি দাড়িয়ে রায়ান লিনা । একটু আগে ব্যরিস্টারের রুম থেকে বেরিয়ে আসছে তারা । লিনা আলাদা কথা বলবে বলে এদিকটায় এসেছে । লিনা বলে –রায়ান আমি তোমার লাইফে আবার ব্যাক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শুনলাম তুমি নাকি বিবাহিত। ডিভোর্স না দিয়ে তুমি বিয়ে করেছো এইটা আনবিলেভল ।তবুও আবার বলবো আমার মেয়ের জন্য বলবো আমাকে এক্সেপ্ট করো । আমার মেয়ের আমাকে প্রয়োজন । অন্য কেউ আমার মেয়েকে নিজের মেনে নিবে না কখনো । আমি তোমার বড় বউ হয়েই থাকব । তুমি যা বলবে তাই করবো ।
রায়ান মিটি মিটি হাসছে লিনার দিকে তাকিয়ে।
লিনা এই হাসির অর্থ বুঝে লজ্জা পায় । আজ লিনা কাচা সবুজ শাড়ি , হাতে কাচা সবুজ চুড়ি ,কপালে কাল টিপ ,চোখে কাজল, খোলা চুলে এসেছে যেমনটি রায়ান পছন্দ করে । আগের থেকে আরো সুন্দরী হয়েছে সে । অনেক স্মিগ্ধ লাগছে । শেষ পয়েন্টে এসে রুপ দিয়ে রায়ানের মন ভুলানো ভেবেই হাসে রায়ান । এই রুপ দেখেই তো সম্পর্কে জড়িয়েছিলো সে । ভার্সিটিতে ক্যাম্পাসে দেখেই ক্রাস খেয়েছিলো রায়ান যা আজ বাশ হয়ে রিটার্ন আসছে । হুর পরীর মতো মেয়েটিকে দুদিন ফলো করে বুঝতে পারে এই মেয়ে একদিন এই ভার্সিটিতে রাজ করবে রায়ানের মতো । একে হাত করলে দোষের কি ! তাছাড়া সুন্দরীও বেশ পারফেক্ট মেচিং । কয়েকদিন একটু একটু কথা বলে ক্লোজ হয়ে ইজি হয়ে নিচ্ছিল । কয়েকদিন পর প্রপোজ টা করবে ভেবেছিলো । কিন্তু হলো তার উল্টোটা । হুটহাট লিনাই রায়ানকে প্রপোজ করে দেয় । রায়ানের মতে তখন ফাগুন হাওয়া লাগে । ইয়েস বলতেই লিনা রায়ানের বুকে ঝাপিয়ে পড়েছিলো ।সেই থেকে রায়ানের এক্স গুলো একটাও তার ধারে কাছে ঘেসতে পারে নি । নতুন কেউ এলেই ওকে সাইজ করে দিয়েছে । ভিপি রায়ান চৌধুরীর তখন আকাশ ছোয়া অবস্থা । আর আজ সে লিনার উপস্থিতিতে ধুলোর সাথে মিশে যেতে চাইছে।
রায়ান হাসি বন্ধ করে বলে– মিস লিনা ..কাম উইথ মি ।
চলবে?