শূন্যতায় অস্তিত্ব (পর্বঃ ১৬)

0
1904

শূন্যতায় অস্তিত্ব (পর্বঃ ১৬)
লেখাঃ তাজরীন খন্দকার

সবকিছুর পরে আমি বুঝতে পারলাম সত্যি তিয়াস এসব নিজের বশে করছে না। তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া কি যুক্তির হবে? এদিকে নুজহাতের সাথে সে কোনো খারাপ করেনি, যা করেছে আমার সাথে করেছিল এবং আমার মতো আরো অসংখ্য মেয়ের সাথে করেছিল। কিন্তু তিয়াস বলছে সে যাদের সাথে প্রতারণা করেছে সবাই-ই উঠে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে তার মা উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেই ছেলের শাস্তি দাবী করছেন। এতে কি সে কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে? তার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে তবে সেটা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের দ্বারা যদি আবার ভুল হয়। এখন তিয়াসের কথার যেমন যুক্তি নেই, ওর মায়ের কথারও যুক্তি নেই। আগে ওর চিন্তা শক্তি কিংবা প্রতিশোধের ঘোর থেকে মুক্তি লাভ দরকার।
এখন এসব বাদ দিয়ে অন্য উপায় বের করতে হবে।

দুইদিন পরে হঠাৎ করেই রায়ান ভাইয়ার দেখা মিললো। রায়ান ভাইয়া বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখার সাথে সাথে আমি এক দৌঁড়ে নিচে গেলাম। উনি অপরাধবোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কাছে গিয়েই আমি রেগে বললাম,
___ কি সমস্যা আপনার? আমার সাথে থাকতে বলেছিলাম তো। কিন্তু আপনি সেই যে ওখান থেকে উধাও হলেন আর খবর নেই। অন্যদিকে আমি দীপ্তিকে ফোন করেও কথাটা জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি। আমি ফোন দিলে সে ভাবতে পারে, না জানি আমাদের মধ্যে কি আছে,কি হয়েছে, কি কারণ, নাকি আপনি পাত্তা দেন না,আরো কতো রকম চিন্তা।তাই দেওয়া হয়নি। এখন বলেন কোথায় ছিলেন? আর কেন উধাও হলেন?

___প্রীলিয়া আসলে তিয়াসের কথাটাই সত্যি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ওর কথা শুনে ওকে ফিরিয়ে নিবে। আমি সেখানে বসে বসে কথাগুলো নিতে পারছিলাম না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি থাকলে তুমি আমার দিকে করুণা করে তাকাবে, দু-টানায় পড়ে যাবে। তাই আমিই সরে আসতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করো এই কয়দিন আমি নিজের উপর সম্পূর্ণ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার মধ্যে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই, যা আছে তা শুধুই তোমার অস্তিত্ব, আমি ছটপট করছিলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আর বুঝাতেও পারছিলাম না।

___ কি বলছেন এসব? আপনি তিয়াসের ওইসব কথা শুনে চলে আসলেন। আরে আপনি তিয়াসের ব্যপারে কি জানেন? এদিকে আসেন সবকিছু বলছি।

তারপর আমি তিয়াসের মা যেসব কথা আমাকে জানিয়েছিল সবকিছু বললাম। রায়ান ভাইয়া অনেক্ষণ ধরে হা হয়ে শুনছিলেন। তারপর অবাক স্বরে বললেন,
___ তুমি বলতেছো তিয়াসের মা নিজে বলেছে তার মাথায় সমস্যা? কিন্তু প্রীলিয়া তুমি জানো তিয়াস আমাকে নিজে এখানে পাঠিয়েছে। জানিনা সে আমার ঠিকানা কি করে পেলো। তারপর কাল রাতে আমাকে খুঁজে বের করে বললো সেদিন তুমি আমাকে দেখতে না পেয়ে কতটা অস্থির হয়ে গিয়েছিলে। এটাও বললো যতো যাই হোক তুমি নাকি আমাকেই চাও! সেটা তিয়াস স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে সেদিন। তার পর বললো, সে তোমাকে ভালোবাসে ঠিকি কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে। কারণ সে অসংখ্য মেয়ের সাথে মিশেছে, তার পক্ষে ভালোবাসার পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যপার,তার উপর সে এটাও বললো ঘৃণার পরে ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতো হয়না। ভালোবাসতে চাইলেও এতো বছরের ঘৃণাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর এসব কথার প্রসঙ্গকে মূহুর্তেই পাল্টে দিয়ে টিটকারি মেরে বললাম,
___ আচ্ছা ৫০০ কার্ড যে করছেন এগুলো কি করবেন?

রায়ান ভাইয়াও এবার হাসতে শুরু করে দিলো। আমি এই হাসির ভেদ কিছুই বুঝলাম না। তিনি হাসির তোড়েই বললেন,
___ কার্ডের তারিখ দেখেছিলে? এটা দেখে থাকলেও নিশ্চয়ই সনটা দেখো নাই। আগামী বছর এই তারিখ বিয়ে হলে কাজে লাগবে, নয়তো সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

লজ্জা মাখিয়ে একটা হাসি দিলাম। আমি সত্যিই কিছু দেখিনি, শুধু এটা চোখে পড়েছিল আগামী সোমবার লিখা। তারপর সেটার আগে তারিখ লিখা থাকলেও এই বছরের তারিখের সাথে সেদিন সোমবার কিনা কিংবা কোন বছর এসব খেয়াল করিনি। ভেবেছিলাম আমি যে তারিখ লিখতে বলেছি উনিও সেটাই লিখিয়েছেন৷ কে জানে উনি এতো এডভান্স চিন্তা করে এসব বানিয়ে ফেলবেন। তিয়াসও কি বিষয়টা খেয়াল করেনি? কি জানি!

এর মধ্যেই রায়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___বিসিএসের প্রিপারেশন নাও। প্রথম চেষ্টায় সফল হলেই তো কার্ডগুলো কাজে লাগবে। নয়তো আমার জরিমানা লাগবে।

আমি মুখ ভেংচিয়ে বললাম,
___ আচ্ছা কিপ্টে তো আপনি। ওকে, আমার চাকরি হোক, তারপর পাঁচশ নয় পাঁচ হাজার চাপাবো। পুরো গ্রাম দাওয়াত দিবো।

আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উনি বললেন,
___ আমি মোটেও কিপ্টে নয়,মিতব্যয়ী। তবে দরকারে শুধু পাঁচ হাজার নয় পঞ্চাশ হাজার চাপিয়ে পুরো শহরকে দাওয়াত দিবো। তবে তুমি চাইলে!

আমি মনে ভাবছিলাম এখন বলবো আমি পুরো দেশ দাওয়াত দিবো, কিন্তু এতে কতো কার্ড লাগবে বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু মুখ চেপে হেসেও কথাটা ভেতরেই রেখে দিলাম। এতো মানুষকে খাওয়ালে সারা বছর চাকরি করেও দেনা শোধ করতে পারবোনা।
রায়ান ভাইয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললেন,
___ আমার অফিস আছে বুঝলে,এখন যেতে হবে। আর আমি আমার সম্পুর্ণ ঠিকানা তোমাকে এমএমএস করে পাঠিয়ে দিবো, আজ থেকে আর ফোনও বন্ধ পাবেনা, পাইলেও বাসায় চলে যাবে । আমার মা-বাবা তোমার ব্যপারে জানে, এটাও জানে আমি তোমার অপেক্ষায় অন্য কোথাও বিয়ের জন্য রাজী হইনা। আর শুনো, আমি কয়েকদিন পরে দুইদিন ছুটি আছে, চট্টগ্রাম যাবো। আমি তিয়াসের সুস্থতার বিষয়ে যাবতীয় চেষ্টা করবো। আমি তোমার পাশে আছি প্রীলিয়া! এখন যাচ্ছি হ্যাঁ?

আমি মাথা নেড়ে বিদায় জানালাম। তারপর একটা মুচকি হাসি দিলাম।
উনাকে না দেখলে হয়তো আমি কখনোই বুঝতাম না, একটা মানুষ সবকিছু একপাশে রেখে কীভাবে অসম্ভাব্য একটা পরিণয়ের জন্য এভাবে অপেক্ষা করতে পারে! এই অপেক্ষা কি আমাকেও ছুঁয়েছে? আমিও তো ভীষণ গভীর থেকে এই অপেক্ষাকে শ্রদ্ধা করি, অনূভব করি!


ইতোমধ্যে বাবা-মাকে শহরে নিয়ে আসার জন্য ভীষণ তোড়জোড় করছিলাম। কিন্তু বাবা কিছুতেই এখন আসতে রাজী না। বাবা চিন্তা করছে এতে করে আমি সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবো, তার চেয়ে ভালো বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন ভালো একটা অবস্থানে যাবো তখনই সবাই আসবেন।

এদিকে রায়ান ভাইয়া যে দুইদিনের ছুটি পেয়েছেন সেটার পুরোটা সময়ই তিয়াসের বিষয়ে কি করা যায় সেটা খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন। আজকে ফিরবেন। মাঝেরদিন আমার থেকে তিয়াসের মা’য়ের নাম্বারও নিয়েছিল, কিন্তু কিছুই বলে নি। বলেছে ফিরে সব বলবে। জানিনা সেখানে গিয়ে কেমন হদিস পেয়েছেন। কিন্তু এটা ভালো করেই জানি তিয়াসকে স্বাভাবিক জ্ঞানে ফিরিয়ে এনে রায়ান ভাইয়ার কোনো ফায়দা নেই। কিন্তু রায়ান ভাইয়া এই বিষয়টাকে নিজের করে নিয়েছেন শুধু আমার জন্য। কেননা আমি একটা সময় তিয়াসের প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম, যেটা আমার মতো অনেক প্রীলিয়ারা হয়েছে এবং হবে। তিয়াসের এমন কাজ আমার উপরে আর কোনো প্রভাব ফেলবেনা জেনেও একজন মানুষ হিসেবে এটা কর্তব্যের মধ্যে মনে করি, কারণ এর ভয়াবহতা আমি কাছ থেকে টের পেয়েছি এবং একটা মানুষ প্রতারিত হলে কতটা অসহায় হয়ে যায় সেটা গভীর থেকে বুঝতে পেরেছি, তাই সবসময়ই চাইবো এমনটা আর কারো সাথে না হোক। আর এসবকিছু ভেবেই আমার পক্ষ থেকে রায়ান ভাইয়াও তিয়াসের সুস্থতার ব্যপারে সিরিয়াস।

সন্ধ্যার আগে আগে রায়ান ভাইয়া আসলেন, এসেই আমাকে ফোন করে দেখা করতে বললেন।
আমিও তারাহুরো করে রওয়ানা দিলাম,কারণ উনি কি কি তথ্য পেয়েছেন সেই বিষয়ে আমার জানা ভীষণ জরুরী।
রিকশা থেকে নামতেই দেখলাম ফোন হাতে নিয়ে উনি ধিরে ধিরে আমার এগিয়ে নিতে আসছেন।
এদিকে আমি রিকশার ভাড়া মিটিয়েই প্রশ্ন করতে লাগলাম কি হয়েছে, কি জেনেছে, কোনো উপায় আছে কিনা, কারোর সন্ধান পেয়েছে কিনা!
কিন্তু উনি কোনো কথার জবাব দিচ্ছেনা।
হাতে ধরে টেনে সামনের একটা স্টলে ঢুকলেন। আমি অস্থিরতার সহিত এই বিষয়ে আবারও প্রশ্ন করতে যাবো তখনি উনি একটা গিফট বক্স সামনে রেখে বললেন,
___এটা খুলো প্রীলিয়া।

আমি খুলেই বক্সের উপরে একটা লিখা দেখলাম, যেটা দেখেই কিছুটা শিউরে ওঠলাম। দুটো ভালোবাসার চিহ্নের ভেতর লেখা “প্রীয়ান”।
নিশ্চয়ই এই বিষয়টা তিয়াসের থেকে শুনে উনিও দুটো নামকে মিলিয়েছেন। উনার কার্যকলাপগুলো সত্যিই অবুঝের মতো।
আমি হাসিমুখেই পুরো প্যাকটা খুললাম। খোলে দেখলাম ভেতরে ৭ ডজন চুড়ি। আরো কি কি যেন আছে,সেগুলো আপাতত দেখা যাচ্ছেনা। তার সাথে একটা চিরকুট, এসব রেখে এটা খোললাম আগে, দেখলাম লেখা আছে..

” জানি ভাব্বে প্রতিষ্ঠিত একটা মানুষ বেকার প্রেমিকের মতো এটা কেমন উপহার দিলো! কিন্তু জানো? ভালোবাসাটা কিন্তু বেকার প্রেমিকেরই বেশি হয়। তীব্র আকুলতা, দেখার আকাঙ্খা, ভালোলাগা,ভালোবাসা প্রকাশ্যের মাত্রা তাদের মধ্যেই অতাত্ত্বিক হয়, কেননা তারা প্রেমিকার খেয়াল রাখা ব্যতিত দুনিয়ার আর কিছুতে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না।
আমার স্বর্ণ কিংবা হিরে দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও আমি চুড়ি,কাজল,টিপ,আলতা,সস্তা দুলের সাথে একজন প্রেমিক উপাধি পেতে চাই। ভালোবাসায় স্থায়ীত্ববোধ দেখতে চাই। সংসারের দায়ভার, আরো উন্নতিরচেষ্টা, ভবিষ্যৎ চিন্তা, হতাশা গ্লাণি আমাকে ছুঁয়ে পড়ার আগে আমি তোমার প্রেমিক হতে চাই! ”

আমি কাগজটা ভেতরে রেখে বক্সটা বন্ধ করলাম। আর চোখ ত্যাড়া করে জিজ্ঞাসা করলাম,
___প্রেমিক হওয়ার বয়স আছে আপনার? কেন পাগলামো করেন বলেন তো? আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলেন তিয়াসের ব্যপারে। কিছু জানতে পারলেন?

রায়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, তারপর বললেন,
___ তিয়াসের মা’কে ফোন করে ওই মহিলার সন্ধানে বের হয়েছিলাম,যার জন্য তিয়াসের ছোট পাপা সুইসাইড করেছে। সেদিন সারাদিন ঘুরেও কোনোভাবেই খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারপর তিয়াসের মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম উনারা আসলে তখন কোন কলেজে পড়তো আর কতো সনের ব্যাচে ছিল। তারপর সেটা জেনে আমি সেখান থেকে গেলাম সিলেট, কলেজের আশপাশ থেকে খোঁজ নিলাম,প্রথম সারির স্টুডেন্ট তো, অবশেষে শীগ্রই পেয়ে গেলাম তার বাবার বাড়ির ঠিকানা। তারপর সেখানে পৌঁছালাম। আর চট্টগ্রামের ঠিকানা জোগাড় করে আবার চট্টগ্রাম গেলাম। তারপর সেখানে গিয়ে জানলাম উনি সেখানে থাকেন না। সেখানে গিয়ে একটা মেয়ের কাছ থেকে উনার সব ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য ফোন নাম্বার আর ফেইসবুক আইডি আনলাম। মেয়েটা উনার ভাতিজী। কেন নিয়েছি সেটা না জেনেই মেয়েটা আমাকে সাহায্য করতে রাজী হলো। এরপর সোজা এখানে চলে আসলাম, কারণ আমার কাল অফিস আছে। ওয়েট মেয়েটার সাথে তুমিও যোগাযোগ করো পরে।

রায়ান ভাইয়া আমাকে মেয়ের আইডি দিলো। আমি ফোনটা বের করে জেসিয়া ইসলাম নামে এই আইডিকে এড করতেই চমকে উঠলাম। জেসিয়া ইসলাম আর নামের পাশে সংক্ষিপ্ত নামে দিশা! প্রোফাইলে তার নিজের ছবি। নাহ আমার কোনো ভুল হচ্ছেনা। এটা সেই মেয়েটাই, যে তিয়াসের সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছিল, সাথে আমার প্রশংসাও করছিল। আমি আতংকের সহিত বলে উঠলাম,
___ওই মহিলার সাথে দিশার সম্পর্ক আছে সেটা ভুল করেও যেন তিয়াস না জানে। সে প্রতিশোধের স্পৃহায় নির্দোষ মেয়েদেরকে কষ্ট দেয়, সেখানে যদি এটা জানতে পারে একসময় তার উপকারে ঘুরে দাঁড়ানো মেয়েটা তারই শত্রুর আত্মীয়, তাহলে ভীষণ খারাপ হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে রায়ান ভাইয়া কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here