শূন্যতায় অস্তিত্ব (৩য় পর্ব)

0
1820

শূন্যতায় অস্তিত্ব (৩য় পর্ব)
লেখাঃতাজরীন খন্দকার

ভেজা চোখ লুকানোর চেষ্টা করে কাঁপা গলায় বললাম,
___ এখানে কেন এসেছো আবার?

তিয়াস এক হাতে দরজাটা খোলার চেষ্টা করে বললো,
___প্রীলি, প্লিজ আমাকে ভেতরে আসতে দাও। অনেক কথা আছে!

___দয়া করে আমাকে বিরক্ত করো না তিয়াস। যেখানে তোমার সব অস্তিত্বের বিলীন হয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে কিছু শুরু করার প্রচেষ্টা আমার মধ্যে কখনোই আসবেনা।

___কিন্তু আমি তো সেদিনও বলিনি তুমি এভাবে হারিয়ে যাও! আমাকে শূন্যতায় ভাসিয়ে দূরে দূরে পালিয়ে বেড়াও।

আমি দরজার উপর থেকে হাতটা সরিয়ে বললাম,
___কিছুই বলোনি তুমি, তবে অনেককিছুই বলেছিলে তো! অযোগ্য ছিলাম না আমি? তবে আজকে যোগ্য হওয়ার আগেই তুমি কেন আমাকে পেতে চাইছো? সেদিন তুমি আমাকে দূরে যেতে বলোনি, তবে আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর মতো করে সুতো ছেড়ে দিয়ে উড়তে দিয়েছিলে। কি করে ভাবতে পারো সেই সুতোসহ ঘুড়ি তোমার কাছে আবার ফিরে আসবে?
আসবেনা তিয়াস, আর যদিও খুঁজে পাও সেটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে! চলে যাও তুমি।

তিয়াস দরজার বাইরে থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো বাবা এপাশে এসে আবার চলে গেছে। সে বিড়বিড় করে বললো,
___ নুজসা’দ কে মনে আছে তোমার?

___কি করে ভুলে যাবো, সা’দ আর নুজহাতকে? পুরো দুই বছর ছিলাম নুজহাতের সাথে।

তিয়াস একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
___ আর প্রীয়াস…

আমি তিয়াসকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

বন্ধ করার সময় দেখেছি মা-বাবা, তিয়াসের মা সহ আমার দাদু এদিকে আসছে। দরজা বন্ধ করতেই বাইরে থেকে শুনলাম মা বলছে,
___ লিয়া ভেতরে যেতে দেয়নি? তার মধ্যে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে? এই মেয়ে তার বাবার আশকারা পেয়ে পেয়ে মাথায় চড়ে বসেছে। কতো বড় বেয়াদব চিন্তা করছো, মেহমানের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাও আজ পর্যন্ত শিখাতে পারলাম না। লিয়ার বাবা, সব তোমার দোষ। তুমিই মেয়ের সাথে মিলে তার কলিজাটা এতো বড় করেছো।

তিয়াস ভীষণ বিনয়ী গলায় বললো,
___ আমি কিছু মনে করিনি আন্টি। এটা আমার জন্য প্রাপ্য ছিলো।

তিয়াসের কথার জবাবটা বিনয়ী শুনলেও তিয়াসের মা রূঢ় স্বরে বললো,
___প্লিজ তিয়াস। এখান থেকে চল, তুই বুঝতে পারছিস না লিয়া তোকে গ্রহণ করবেনা। আমাকেও অপমানিত করিস না বাবা৷ চল তুই!

তিয়াস প্রতিত্তোরে বললো,
___ আম্মু আমি তোমাকে আর এসবে জড়াবো না । এখন চলো, তবে প্রীলি শুনো…আমি আবার আসবো। (কথাটা জোরে আমাকে শুনিয়ে বললো)

চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে এখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন না আকাশ দেখতে পারবো আর না চিৎকার করে কাঁদতে পারবো! বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। চার বছর আগের সেই কান্নাটা তিয়াসের সাথেই আবার ফিরে এসেছে। কেন এসেছে সে? কি চায় আমার কাছে!



আমার একজন বাবা একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ি। যা রোজগার করেন তা দিয়ে কোনো রকম আমরা মাসের পরে মাস ভালোই চলে যাই। আমার বাবা-মার বিয়ের ৮ বছরের মাথায় আমার জন্ম হয়েছে। কয়েক বছর পরেই নিঃসন্তান আমার মা’কে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করার জন্য আমার দাদাভাই তাড়া করেছিল । কিন্তু দাদু মা’কে খুব ভালোবাসতো, বিভিন্ন তাবিজ,কবিরাজ,ডক্টর, চিকিৎসার জন্য কিছু বাদ রাখেননি। অবশেষে আমার জন্ম হলো, সবাই খুব খুশি ছিলো। কয়েক বছরেই দাদাভাই মারা গেলো।
আমার জন্মের পরে প্রায় ৫ বছরের মাথায় আমার ছোট ভাইটা হলো।
আমার তখন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়। আমাদের মতো পরিবারের সন্তানদেরকে মা-বাবারা কোনো রকম কাছাকাছি একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে। কিন্তু আমার বাবা আমাকে উপজেলার সেরা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করিয়েছিলো। সেই পিচ্চি বেলা থেকে আমাকে পড়ালেখা করানোর তীব্র আকুলতা ছিল বাবার। নিজের কাজের মধ্যে আমাকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ায় কখনো দেরি করতেন না।

সেখান থেকে সবকিছুতে ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হয়ে জেলার সবচেয়ে নামি-দামি হাই স্কুলে ভর্তি হলাম। সেখান থেকেই আমার হোস্টেল জীবন শুরু। প্রথম প্রথম এসব খাবার খেতে পারতাম না বলে, প্রতিদিন বাবা একবার গিয়ে আমাকে খাবার দিয়ে আসতেন। আমার স্কুল জীবন পুরোটাই কেটেছে চোখবুঁজে শুধুই পড়ালেখায়। সেখান থেকে প্রশংসনীয় রেজাল্ট নিয়ে বের হলাম। বাবা খুশিতে আমাকে বললেন দেশের সেরা কলেজগুলোতে চয়েজ দিতে। দেশের যে কোনো প্রান্তে যেমন খরচই হোক তিনি আমাকে জায়গা বিক্রি করে হলেও পড়াবেন৷
ভালো কলেজে ভর্তির জন্য নিজের বিভাগ পেরিয়ে অন্য বিভাগে পাড়ি জমাতে হয়েছিল, তবুও বাবা খুব খুশি ছিলেন। তাছাড়া আমাদের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে রেলস্টেশন, ট্রেনে যাতায়াত ছিলো আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধার। এখান থেকে দেশের প্রায় অধিকাংশ জায়গাতেই ট্রেনে চলাচল করা যায়।
আমার দ্বারা আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে বাবা সেদিন আমাকে কলেজ হোস্টেলে রেখে এসেছিল। তখনও আমি বুঝতে পারিনি, আমার এবং বাবার এই স্বপ্ন অন্য মোড় নিতে যাচ্ছে।

আমার রুমমেট ছিল দিয়া, শুভা, রুহি, আর নুজহাত৷ স্কুলের হোস্টেলে আমি পড়ালেখা নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকতাম, কারো সাথে মিশতামই না। আমার সাথেও কেউ মিশতে চাইতোনা। দূর থেকে অনেকে অহংকারীও বলতো৷ তাই আজ পর্যন্ত কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড হয়নি। কিন্তু এখানে আসার পরে ওরা নিজ থেকে মিশতে শুরু করে, একসাথে খাওয়ার জন্য বসে থাকে। নানান গল্প করে। ওদের সবকিছু ভালো লাগলেও একটা বিষয় কেমন যেন লাগতো! ওরা ভালো করে পড়ালেখা করতোনা, শুধু বিভিন্ন ছেলেদের সাথে চ্যাটিং, ফোনে হাসি ঠাট্টা, এসব করে রাত পুরোটাই কাটিয়ে দিতো। আর সকালে ঘুম থেকে উঠতে না পেরে কলেজ ফাঁকি দিতো।

আমি ওদের বাজে স্বভাবগুলোকে এড়িয়ে নিজের পড়ালেখার মাত্রা ঠিক রাখছিলাম। কলেজে ভর্তির ২৭ তম দিনে আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আমি ছাড়া সবাই-ই এটা নিয়ে বিভিন্ন প্লানিং করতে থাকে। কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম মাসের শুরুতে বাবা এতোগুলো টাকা দিয়েছে, এমনকি চাচার থেকে ধারও নিয়েছে। এখন আবার উৎসবের জন্য কি করে টাকা চাইবো? তাছাড়া আমার মধ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের ইচ্ছে আগেও ছিল না।
তার উপর আমি না গেলে কি নবীন বরণ হবে না?
সেদিন সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবো ভেবে বসে থাকলাম।


অনুষ্ঠানের দিন সকাল সকাল রুমে ধুম ধুম শব্দ শুনে আমি লাফিয়ে উঠে বসলাম। উঠে দেখি রুমের সবাই আজ তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেছে। তিনজন গোসল সেরে ফেলেছে আর নুজহাত বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে, এখন গোসলে যাবে। আমাকে উঠতে দেখেই বললো,
___ এ লিয়া এখনো ঘুমাচ্ছো কেন? উঠে পড়ো, সাজবা না? আজ না কলেজে আমাদের জন্য এতো বড় আয়োজন!

আমি চোখ কচলে উঠলাম,কিন্তু কোনো কিছু বললাম না। ফ্রেশ হয়ে আজকে একা একা হলের ডাইনিংয়ে খেতে গেলাম। ওদের খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু ওরা নাকি আজকে বাইরে খাবে ৷ আমাকেও জয়েন হতে বলেছিল কিন্তু আমি বাইরের খাবার খেতে পারিনা অজুহাত দেখিয়ে ডাইনিং থেকে খেয়ে রুমে গেলাম।
রুমে এসে দেখি একেকজন সেজে পরীর মতো হয়ে গেছে। বিশেষ করে নুজহাতের দিকে তাকিয়ে আমিই বারবার মুগ্ধ হচ্ছিলাম। মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দরী!

তারপর আবার আমাকে এলোমেলো অবস্থায় পড়ার টেবিলে বসে যেতে দেখে নুজহাত দুই হাত কোমরে ভর করে রাগী গলায় বললো,
___ আজকেও পড়তে আসছে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। সবসময়ই তো পড়ো, আজকে এসব রেখে শাড়ী পরো।

আমি ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
___আমি শাড়ী পরতে পছন্দ করিনা, সাজতেও পছন্দ করিনা৷ আর আমি অনুষ্ঠানেও যোগ দিবোনা। তোমরা যাও প্লিজ৷ আমার অনেক পড়া বাকি।

নুজহাত একটানে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
___এই মেয়ে এক্ষন উঠে রেডি হও। শাড়ী না পরো এমনিতেই স্বাভাবিক ড্রেস পরে আসো।

___ আমি গিয়ে কি করবো বলো তো? তোমরা ঘুরবে, ছবি তুলবে। আমি অযথা মন খারাপ করে বসেই তো থাকবো। এর চেয়ে রুমে বসে পড়ালেখা করি।

কিন্তু নুজহাত আমার কথা শুনলোনা। আমার ধরে টেনে উঠালো। আর বললো,
___ তুমি যদি ভাবো তোমার কোনো কাজ নেই, তাহলে আমরা তোমাকে একটা কাজ দিবো। আমাদের ছবি তুলবে। হেহে!

বলেই হাহাহা করে হেসে উঠলো সবাই। আমাকে নেওয়ার জন্য এই কথাটা মজার ছলে বলেছিল।
কেন জানি না মানা কর‍তে পারিনি। উঠে আমার ব্যাগ থেকে একটা বাদামী রঙের থ্রিপিস বের করলাম। মা বলে এটা পরলে আমাকে নাকি অনেক মায়াবতী দেখায়। মা নিজেই এটা কিনে দিয়েছিলো।
ড্রেস পরে আমি হিজাব পরার জন্য হিজাবটা খুলতেই নুজহাত একটানে খোঁপা করে রাখা চুলগুলো ছেড়ে দিলো, ভারী চুলগুলো কোমর পেরিয়ে হাঁটুর কাছ পর্যন্ত গিয়ে ছড়িয়ে গেলো।
শুভা এগিয়ে বললো,
___আমাদের এতো সুন্দর চুল থাকলে প্রতিদিন চুল দেখানোর জন্য এগুলো ছেড়ে এদিক ওদিক চক্কর দিয়ে আসতাম। মানুষ এক পলকেই চুলের প্রেমে পড়ে যেতো।

আমি না না বলতে বলতে চুলগুলো আবার বেঁধে ফেলতে যাবো তখন ওরা চারজন একসাথে আমাকে ধমকে উঠলো।
আমি কিছু না পেরে কান্নার ভান করে বললাম,
___ আম্মু আমাকে চুল খোলা অবস্থায় কোথাও যেতে বারণ করে। আমি এখন পর্যন্ত কোথাও যায়নি। দেখোই তো আমি সবসময় হিজাব পরে বের হই। প্লিজ মানা করো না।

কিন্তু সবগুলোই ছিল পুরাই নাছোড়বান্দা। বাধ্য হয়ে এভাবেই ওদের সাথে গেলাম। ওড়না মাথায় দিয়ে পেছনে বারবার ঢেকে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ওড়নার চওড়ার সাথে চুল কোনোভাবেই ঢাকতে পারলাম না।

ক্যাম্পাসে যাওয়ার পরে আমার লজ্জার পরিমাণ আরো বাড়তে শুরু করলো। সবাই সেজেগুজে হাজির হয়েছে। শুধু আমি একা এভাবে এসেছি। সব মেয়ে আজ শাড়ী পরেছে, আর সব ছেলেরা পাঞ্জাবী!
এর মধ্যে কয়েকটা ছেলেকে পাঞ্জাবী ছাড়া দেখা গেলেও খুব দামী পোশাকে দেখা যাচ্ছে।
আমি সবার দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে চোখ রাখার সাহস করতে পারছিলাম না।
ভয়ে ভয়ে পা বাড়াচ্ছিলাম।
নুজহাত তার দামী ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
___ আমাদের তিনজনের একটা ছবি তুলো তো।

আমি মাথা নেড়ে ছবি তুলতে গেলাম। কয়েকটা ছবি তোলার পর হঠাৎই পেছন থেকে আমার চুলের হাত দিলো। আমি চমকে ফিরে তাকালাম। তাকানোর সাথে সাথে শুনলাম কেউ বলছে,
___এগুলো সত্যিই আসল চুল? নাকি আলগা লাগিয়েছে। কিরে বন্ধু মানুষের চুল এতো সুন্দর হয় কি করে?

প্রথম তাকিয়েই এক ছেলের একজোড়া চোখে আমার চোখ আঁটকে গেলো। ঘন কালো জোড়া ভ্রুর নিচে দুটো চোখ! ঠোঁটে দূর্লভ এক হাসি, ফর্সা গাল রোদে লালচে হয়ে গেছে, আমার দিকে তার দৃষ্টি ঠিক আমার মতোই অনড়! পেছন থেকে নুজহাত এসে এই ছেলেটার পাশের ছেলেটাকে হালকা জড়িয়ে ধরে বললো,
___ সা’দ তুমি এতক্ষণে এসেছো?

আমি চোখ নামিয়ে নুজহাতের দিকে তাকালাম। এই প্রথম বাস্তবে কোনো ছেলেমেয়েকে এতো কাছাকাছি ঘেঁষতে দেখেছি। তবে অনুমতি ছাড়া আমার চুলে হাত দেওয়াটাকেও প্রচুর মাইন্ড করেছি,কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না।
নুজহাত আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
___ সা’দ আমার জীবন। আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। আর এই হলো সা’দের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, আমাদের ক্লাসের বহুল মেয়ের ক্রাশ বয় তিয়াস!

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এতো মেয়ের ক্রাশ হওয়ার কারণটা আমারও বুঝা হয়ে গেছে। এই ছেলের দিকে আর তাকাবোনা। তখনই তিয়াস বললো,
___, হাই আমার নাম তো জেনেছো। এবার বলো তোমার নাম কি?

আমি লজ্জামাখা একটা হাসি দিয়ে বললাম,
___ আমি প্রীলিয়া হাসান!

তিয়াস নুজহাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিলো। তারপর খেয়াল করলাম নুজহাত এখান থেকে চলে যাচ্ছে। পেছনে ঘুরে দেখলাম রুমের বাকিরাও উধাও। চারপাশে অসংখ্য মানুষ থাকা সত্ত্বেও আমার তিয়াসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বুক দুরুদুরু করছিল। চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তিয়াস বললো,
___ তোমার বাবা মেবি তোমার নামটা প্রীতিলতা ডাকতে চেয়েছিল। ভুলে প্রীলিয়া ডেকে ফেলেছে। আচ্ছা তোমাকে ওরা এই নামে ডাকতে পারে তো?

আমি থতমত করতে করতে জবাব দিলাম,
___ না মানে সবাই আমাকে লিয়া বলে ডাকে৷

তিয়াস এবার মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,
___ হুম হুম বুঝলাম। তবে আমি সবার মতো নই। একটু আলাদা, সবাই যা করে আমি তা করিনা। আমি তোমাকে প্রীলি বলে ডাকবো। আচ্ছা তোমাদের ঘরে ডালিয়া নামে কেউ আছে?

আমি অবাক হয়ে বললাম,
___ হ্যাঁ আপনি কি করে জানেন? আমার মা’র নাম ডালিয়া।

তিয়াস হেসে বললো,
___তিয়াসের আন্দাজের তীর মিস হয়না বুঝলে? এই নামের সাথে আর নাম কানেক্টেড থাকবে এটা শুনেই বুঝে গেছিলাম। নয়তো এতো কঠিন নাম রাখতো না। তো উনাকেও কি লিয়া বলে ডাকে?

আমি এবার জোরে হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতে বললাম,
___আরে নাহ, আমার মা’কে সবাই ডালি বলে ডাকে।

তিয়াসও আমার সাথে হাসতে শুরু করে দিলো।
হাসির মধ্যে হঠাৎই বললো,
___প্রীলি আসো আমরা দুজন একটা ছবি তুলি।

আমি নড়েচড়ে বললাম,
___ না না আমি ভালো করে নিজের ফোনেই ছবি তুলিনা। অন্য কারো সাথে তো কখনোই না।

___ আমাকে বিশ্বাস করতে পারো প্রীলিয়া মেডাম।
তাকাও তাকাও, আরাফ ছবি তুলতেছে।

আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওর সাথে কয়েকটা ছবি তুললাম।
তখন বুঝতে পারিনি এই ছবিগুলোই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here