শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা #পর্বঃ০১

0
1888

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ০১
#ফারজানা_আক্তার

এই কালো পরি বাসর করবো তোমার সাথে, দিবে কী একটা রাত? মিটাবে কী তৃষ্ণা এই প্রাণের?

সিয়ামের এই কথার প্রতিটি শব্দ রাইসার কর্ণগোচর হতেই যেনো গাঁয়ের সব লোম কাঁটা দিয়ে গেলো ওর। রাগে কান্নার ভাব আসছে রাইসার কিন্তু উচিত জবাব না দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরার মতো মেয়ে রাইসা নয়। কিছুটা সামনে এগিয়ে চোখের কালো চশমা টা ঠিক করে রাইসা বলে উঠে “শিক্ষার বড্ড অভাব আপনার মাঝে, আপনার বাবা মা কী এতোটাই মূর্খ নাকি যে আপনাকে এইটুকু শিক্ষা দিতে পারেনি একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়? ছিঃ”

এইটুকু বলে নিজের ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় রাইসা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রাইসা। চট্টগ্রাম সিটি কলেজে পড়ার বড্ড স্বাদ ছিলো তাই অনেক খাটাখাটুনি করে এই কলেজেই ভর্তি হয়েছে সে। যদিও টাকা সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়েছে অনেক। স্কুল জীবন পার করে মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে রাইসা। আজকে কলেজের প্রথম দিন আর আজকেই রাইসার মন খারাপ হয়ে যায় সিয়ামের এমন বাজে কথায়। খুব ছোটবেলা থেকেই পরিপূর্ণ পর্দা করে আসছে রাইসা, আজকেও কালো বোরকায় কালো নিকাবে কালো হাত-পা মুজায় নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে এসেছে সে তবুও বাজে লোকের নজরের আঁড়াল হতে পারলোনা তাই রাগ হচ্ছে নিজের উপরই। সব স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় উত্তম আনমনা হয়ে ভাবছে রাইসা।

ক্লাসে মন খারাপ করে একা বসে আছে রাইসা। যেহেতু কলেজে নতুন তাই এখনো কোনো ফ্রেন্ড হয়নি ওর। স্যার চলে গেলে ক্লাস শেষে পাশ থেকে রিয়া নামের একটা মেয়ে হঠাৎ বলে উঠে “বন্ধু হবে আমার?”
রাইসা কি বলবে ভাবছে কারণ এতো সহজে কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক না তবুও কিছু তো বলতে হবে নয়তো খারাপ দেখা যায় বিষয়টা। অনেক ভেবে রাইসা বলে “হুম কেনো নয়”। তারপর দু’জনে ক্যাম্পাসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। মেয়েটার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগে রাইসার। কথার এক ফাঁকে রিয়া বলে উঠে “রাইসা আমিও তোমার মতো এমনভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে চাই, কলেজের পাশেই একটা ভালো শপিংমল আছে। ”

“আলহামদুলিল্লাহ। তবে সেখান থেকেই কিনে নিও সব।”
কিছুটা মুচকি হাসির সাথে কথাটি বলে রাইসা যদিও রাইসার হাঁসিটা পর্দার আঁড়ালেই ছিলো তবুও কথার ভাজে লক্ষ করেছে রিয়া সেই হাসিটি।”

কপাল কুঁচকে রিয়া বলে “যাবে আমার সাথে শপিংমল প্লিজ?”
রাইসা প্রথমে রিয়ার প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরে ওর অনেক জোরাজোরিতে রাজি হয়।
_____________

রাত ২টা পার হয়ে গেলেও সিয়ামের চোখে ঘুম নেই। সিয়ামের কানে যেনো বারংবার রাইসার বলা কথাগুলো বাজতে লাগলো। রাগে ফর্সা চেহারাটা লাল হতে থাকে সিয়ামের। অনেক চেষ্টা করেও যখন নিজের রাগ কমাতে পারেনি সিয়াম তখন ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকেই সিয়ামের অভ্যাস এটা কোনো কিছুর জন্য রাগ উঠলে সহজে রাগ কমেনা যতক্ষণ স্নান করবেনা। প্রায়ই এক ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় সিয়াম। এসি চালু করে দিয়ে শাওয়ার টাওয়াল পরেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। রাইসা সিয়ামের প্রথম দেখা যে কিনা তার শরীরের একটা অংশও প্রকাশ্যে রাখেনি তাই রাইসাকে দেখার বড্ড স্বাদ হলো সিয়ামের। সিয়াম বখাটে হলেও মা বাবার খুব আদরের। এলাকায় ধ্বনির দিক দিয়ে সিয়ামরাই সবার উচ্চ স্থানে আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই সিয়াম কারো কোনো কথা শুনেনা সে নিজের ইচ্ছেই চলাফেরা করে।

*
পরদিন সকালে নাস্তা শেষ করে সোফায় বসে অপেক্ষা করছে সিয়াম ওর বোনের জন্য একসাথে কলেজে যাবে বলে। সিয়াম বখাটে হলেও নিজের বোনের প্রতি যত্নের অভাব রাখেনা।
একটু পর এক বোরকা পরা মেয়ে সিয়ামের সামনে এসে দাঁড়াতেই আচমকা লাফিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সিয়াম আর বলতে শুরু করে “এই কালো পরি তুমি এখানে কি করছো? আর আমার বাসা চিনলে কি করে?”

ভাইয়ের কথা শুনে চমকে যায় রিয়া, কি বলতেছে সিয়াম কিছুই বুঝতে পারছেনা রিয়া। রিয়া দ্রুত তার মুখের নিকাব টা সরিয়ে বলে “ভাইয়া তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি রিয়া তোমার বোন। তুমি কাকে মেনশন করে কথাগুলো বললে বলো তো।”

সিয়াম কিছু না বলে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে, রিয়াও ওর পেঁছনে যায়। প্রতিদিন রিয়া সিয়ামের সাথেই কলেজে যাওয়া আসা করে।
সিয়াম মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলো কিন্তু মুখে কিছু বলতেছেনা। সিয়ামের এমন হুট করে চুপ হয়ে যাওয়াটা কিছুটা সন্দেহ জন্ম দেয় রিয়ার মনে।

*
সিয়ামের ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে কিছুটা তাই সে প্রতিদিনের মতো ক্যাম্পাসে বসে আছে কিন্তু আজকে সিয়াম ভীষণ চুপচাপ। সিয়ামকে এভাবে চুপচাপ দেখে ওর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে চুপচাপ থাকার কারণ তখনই সিয়াম চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে রাইসা আসতেছে, রাইসাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হলোনা সিয়ামের কারণ রিয়ার হাত মুজাগুলো ছিলো নীলের মধ্যে আকাশি আর রাইসার হাতমুজা টা কালো যেটা গতকালও ছিলো। রাইসাকে দেখেই রাগে লাল হতে থাকে সিয়ামের কান দুটো। নিজে নিজেই কিছুটা শব্দ করে বলে উঠে সিয়াম “সাহস হয় কি করে এইটুকুনি মেয়ের আমাকে শিক্ষার খোঁটা দেওয়ার? এই মেয়ে কি জানে আমার সম্পর্কে? এই মেয়েকে কোনো একদিন আমি দেখবোই এবং আমার বিছানায় নিয়ে যাবোই যাবো দেখে নিস তোরা।”
সিয়ামের কথা শেষ হওয়ার সেকেন্ড কয়েক পর রাইসা ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে। আজকে আর ডিস্টার্ব করেনি সিয়াম রাইসাকে, এতে ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে রাইসার। আজ রাইসার মনটা ফ্রেশ, হেঁসে হেঁসেই কথা বলতেছে রিয়ার সাথে। কথার ফাঁকে রিয়া হুট করে বলে ফেলে “তোমাকে যদি ভাবি বাানাতে পারতাম জনম জনম তোমাকেই ভাবি ডাকতাম” আনমনা হয়ে কথাটি বলেই ঢুক গিলে ফেলে রিয়া, এতে কিছুটা লজ্জা লাগলো রাইসার কিন্তু কিছুই বুঝতে দিলোনা সে রিয়াকে।

ক্লাস শেষে রিয়া আর রাইসা এক সাথেই ক্যাম্পাসে এসে বসেছে। দূর থেকে সিয়াম দেখছে তাদের। ওদেরকে দেখে চিনতে কষ্ট হলোনা সিয়ামের কারণ এই কলেজে রিয়া আর রাইসা ছাড়া কেউ এভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে না। সিয়ামের মাথায় ঘুরছে অন্য বুদ্ধি কিন্তু সে বন্ধুদের কিছু বলছেনা এসব সম্পর্কে। বন্ধুরা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে ওদের দিকে তাকিয়ে সে কি ভাবছে কিন্তু সিয়াম কথা ঘুরিয়ে বলে এই কালো পরিটা আমার বোনকেও কেমন জানি অদ্ভুত ভাবে চেঞ্জ করে দিয়েছে। বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে সিয়াম এগিয়ে যায় রাইসাদের দিকে আর মনে মনে ভাবছে “তবে রিয়ার থেকেই এই কালো পরির সব ডিটেইলস জানা যাবে”।

রিয়ার সামনে গিয়ে একটা ভাব নিয়ে সিয়াম বলে ” রিয়া চল বাসায় যাবো, তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে একটা কাজে যেতে হবে আমার”। হঠাৎ সিয়ামের এমন আচরণে বড্ড বেশি অবাক হয় রিয়া কিন্তু রাইসার সামনে কিছুই প্রকাশ করলো না সে। রিয়া রাইসা থেকে বিদায় নিয়ে সিয়ামের পেঁছন পেঁছন হাঁটতে লাগলো।
রাইসা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার পথে আর ভাবছে এইরকম একটা বজ্জাত ছেলের এমন মিষ্টি বোন কিভাবে হতে পারে? রাইসাও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

*
সিয়াম ড্রাইভ করছে, সামনের দিকে তাকিয়েই সে রিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে “তুই ওই কালো ভুতনির থেকে দেখেই এই ভেস ধারণ করেছিস তাই নাহ?”

“ছি ভাই কি বলছো তুমি এসব, ওর নাম রাইসা, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে”
কিছুটা মুচকি হাসির সাথে কথাটা বলে রিয়া।

“ওওও তাহলে রাইসা ওই কালো পরির নাম” আনমনা হয়ে ভাবছে সিয়াম তখনই ওদের গাড়ির সামনে__________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here