শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা #পর্বঃ১২

0
677

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ১২
#ফারজানা_আক্তার

রোদের প্রখরতা বেড়েই চলেছে। প্রচন্ড রোদের মাঝে হালকা মৃদু বাতাসে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে রাইসা। ক্লাস শেষ করে রিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে টেক্সিতে উঠে যায় রাইসা। রিয়া অনেক বুঝিয়েছে রাইসাকে ওদের সাথে গাড়িতে যাওয়ার জন্য কিন্তু রাইসা নাছোরবান্দা, সে কিছুতেই রাজি হলোনা। আজকের ঘটনাটা রাইসার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে খুব। টেক্সি চলছে আপন মনে, আনমনা হয়ে বসে আছে রাইসা। শ্বাশুড়ির কথাগুলো ভাবাচ্ছে খুব রাইসাকে। কিভাবে সে সিয়ামকে সঠিক পথে আনবে বুঝতে পারছেনা। বড়লোকের বখাটে ছেলে একটা। আসলেই শিক্ষার অভাব আছে উনার নয়তো একটা মানুষ এতোটা ছোট মনের কীভাবে হতে পারে। রাইসার ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে এতোটা জগণ্য একটা মানুষ ওরই স্বামী। রাইসার টেক্সি এসে বাসার সামনে দাঁড়াতেই রাইসা গাড়ি থেকে নেমে দেখে নিজের গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিয়াম। সিয়ামকে না দেখার ভান ধরে রাইসা ঘরের দিকে চলে যেতে নিলে সিয়াম পেঁছন থেকে ডাক দেয় কালো পরি বলে। রাইসা তবুও না দাঁড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রাইসা রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন রাইসা। নিজের ভাগ্যের উপর রাগ করবে নাকি হাঁসবে বুঝতে পারছেনা রাইসা। রাইসা অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রিয়া আর হুসনা বসে আছে ওর বিছানায়। রাইসা ওদেরকে দেখে একটুও অবাক হয়নি কিন্তু রাইসার একটুও মনে ছিলোনা যে হুসনা আজ আসবে। হুসনাকে দেখে রাইসা হাঁসিমুখে বলে তোমরা বসো আমি কাপড়চোপড় গুলো শুকাতে দিয়ে আসি। রিয়া বলতে চেয়েও বলতে পারেনি যে বেলকনিতে সিয়াম আছে। হুসনা রিয়াকে বলে “আচ্ছা রাইসা আমাদের সাথে গাড়িতে আসেনি কেনো? ওদের মধ্যে কি ঝামেলা চলছে?” তখন রিয়া সব বলে হুসনাকে। হুসনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর বলে “জানিস রিয়া এই পৃথিবীতে স্বামীর সুখ হলো সবচেয়ে বড় সুখ। যে নারী স্বামীর সুখ বঞ্চিত হয় তার মতো দূরভাগ্য আর কেউ নেই।” হুসনার কথা শুনে রিয়া কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বলে “জানিনা এতোকিছু তবে এইটুকু জানি ভাবি ভাইয়াকে একদিন ঠিক চেঞ্জ করে দিবে, সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে আমার ভাবির উপর। ”
রাইসা বেলকনিতে যেয়ে সিয়ামকে দেখেও না দেখার মতোন হয়ে কাপড়চোপড় শুকাতে দিচ্ছে। সিয়াম উচ্চস্বরে বলে উঠে হঠাৎ করে “কিসের এতো ভাব তোর হ্যাঁ? এতো ভাব নিচ্ছিস কেনো তুই আজ?” রাইসা সব শুনেও কিছু না বলে চলে আসতে চাইলে সিয়াম রাইসার হাত ধরে টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে “রাতে খবর করে ফেলবো দেখে নিস, তোর সব ভাব শেষ হবে আমার বিছানায় এসে মনে রাখিস। ” এটা বলেই রাইসাকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সিয়াম। রুমে রিয়া আর হুসনা আছে এটা ভেবে খুব লজ্জিত হয় রাইসা কিন্তু কিছু করার নেই এটা ওর ভাগ্য, মেনে নিতে হবে সব। ভাগ্য করে একটা স্বামী পেয়েছে বলতে হবে। রিয়া আর হুসনা রুম থেকে সব শুনেও কিছু না শোনার ভান ধরে বেলকনিতে রাইসার কাছে এসে হাঁসিমুখে বলে “রাইসা আমি যাচ্ছি, ভালো থাকিস নিজের খেয়াল রাখিস।” রাইসা চোখের জল আঁড়াল করে কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে “চলে যাবি মানে? আম্মু কি বলেছে কিছু তো বললিনা।” তখন রিয়া বলে “আম্মু বলেছে ও এখন যেভাবে টিউশনি করছে সেভাবে টিউশনি করে চলতে। কারণ এতো ভালো ঘরের মেয়ে বাহিরে এসে কাজ করবে এটা খুব খারাপ দেখায় আর ধৈর্য ধরলে ফলাফল নিশ্চয়ই খুব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। আরো অনেক কিছুই বলেছে।” রাইসা সব শুনে হুসনাকে বলে “মন খারাপ করিসনা বোন, আম্মু যা বলছে তোর ভালোর জন্যই বলেছেন হয়তো।” হুসনা হালকা হেঁসে বলে “হুম আমি বুঝেছি উনি যা বুঝাতে চেয়েছেন।” এভাবে আরো অনেকক্ষণ কথা বলে ওরা তিনজন। ওরা কথা বলতে বলতে সিয়াম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চিল্লিয়ে বলে “এই কালো পরি কই তুমি?” সিয়ামের ডাকে কিছুটা কেঁপে উঠে রাইসা। পরে নিজেকে সামলিয়ে বলে “আসতেছি।” এটা বলেই রাইসা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রিয়া আর হুসনা মুখ টিপে হাঁসে। রাইসা রুমে গেলে রাইসার পেঁছন পেঁছন রিয়া আর হুসনা যেয়ে রুমে থেকে বেড়িয়ে যায়। ওরা চলে গেলে রাইসা সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে “কিছু কি বলবেন?”

“হুম বলবো বলেই তো ডেকেছি”
“বলুন”
“কফি খাবো”
“আচ্ছা আমি কাউকে বলছি কফি দিয়ে যেতে আপনাকে”
“নাহ আমি তোমার হাতের কফি খেতে চেয়েছি”
সিয়ামের শেষের এই কথাটি শুনে বেশ অবাক হয় রাইসা। এই মানুষটাকে বুঝতে পারছেনা রাইসা। কখনো কখনো মনে হয় সিয়াম আসলেই খুব ভালো স্বামী আবার হঠাৎ করে সে এমন কিছু করে বসে যে মুহুর্তেই সব ভাবনা উল্টাদিকে ঘুরে। রাইসা আর সময় নষ্ট না করে এক দৌড়ে গিয়ে সিয়ামের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।

*
সন্ধ্যায় প্রায়ই ৬/৭জন মেয়ে নিয়ে এসে নিজের রুমে আড্ডা দিতে ব্যস্ত সিয়াম। রাইসা এতক্ষণ রিয়ার রুমে থাকায় সে জানতোনা। রিয়ার রুম থেকে এসে রাইসা দেখে ওর রুম জুড়ে চলছে আড্ডা ফাড্ডা। এতোগুলো মেয়ের মাঝে একটাই ছেলে আর সে হচ্ছে সিয়াম, রাইসার রাগ উঠে খুব। রাইসা এসে সবার সামনে সিয়ামের হাত ধরে এক পাশে নিয়ে যায় তাকে তারপর বলে “কি হচ্ছে এসব? কি হয় এই মেয়েগুলো আপনার?”

“ওরা আমার ফ্রেন্ড, তোমার কি আমি আমার ফ্রেন্ডেদের নিয়ে আড্ডা দিলে আর এটা প্রথম নয় ওরা সবসময়ই আসে এখানে আড্ডা দিতে। ”
“এখন আর তখন পার্থক্য আছে। তখন এই রুম আপনার একার ছিলো কিন্তু এখন আমিও আছি সাথে। আমি আপনার স্ত্রী আর কোনো স্ত্রীই এসব দৃশ্য নিজের চোখে সহ্য করতে পারবেনা।”
“সহ্য করতে হবেনা তুমি রিয়ার রুমে যেয়ে পড়তে বসো যাও।”
মেয়েগুলো অবাক ওদের কথাবার্তা শুনে। সিয়াম যে বিয়ে করেছে সেটা মেয়েগুলো জানতোনা। মেয়েগুলোর মধ্যে একটা মেয়ে নাম ইফা। এই ইফা নামের মেয়েটা ভীষণ ভালোবাসে সিয়ামকে এবং এক বছর ধরে তাদের সম্পর্ক। ইফা সিয়ামের গার্লফ্রেন্ড। রাইসা রিয়ার রুমে না যেয়ে ওই মেয়েগুলোর সামনে যেয়ে বলে “আমার রুম থেকে বের হয়ে যান সবাই। উনি আগে সিঙ্গেল ছিলো তাই আপনাদের আড্ডায় কারো সমস্যা হয়নি কিন্তু উনি এখন আর সিঙ্গেল নেই, আমার সমস্যা হয় আপনাদের এই আড্ডায়।”

মেয়েগুলো হা হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে রাইসার কথা শুনে। ইফা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে “মানে কি এসবের? কে তুমি?”
হাঁসিমুখেই রাইসা বলে “আমি সিয়াম রহমানের স্ত্রী ”
এই কথা ইফার কর্ণকুহর হতেই সে ধপাস করে বসে পরে। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে সিয়াম এতক্ষণ সব দেখলেও এবার সে দৌড়ে এসে রাইসার দুই বাহু চেপে ধরে বলে “রাগ বাড়াইয়ো না আমার, ফলাফল ভালো হবেনা বলে দিলাম।” রাইসা সিয়ামের কথায় একটুও ভয় না পেয়ে বলে “কি আর করবেন? মাথা মোটা একটা মানুষ। রাগ উঠলেই তো হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পরেন আমার উপর কিন্তু সত্যি কি জানেন আপনার ওই আচরণে আমি একটুও কষ্ট পায়না কারণ আপনি আমার স্বামী আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমাকে কাছে টানার আদর করার।” কথাগুলো শুনে যেনো সিয়ামের গা জ্বলে যাচ্ছে। সিয়াম জানে রাইসা ইচ্ছে করেই গুছিয়ে মিথ্যা বলছে তবুও সে চুপ আছে কারণ এখন যদি সে কিছু বলতে যায় হিতের বিপরীত হতে পারে। রাইসা এবার মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে “আপুরা এবার আপনারা আসতে পারেন, আপনার ভাইয়ের সাথে কিছু পার্সোনাল কথা আছে আমার।” রাইসা কথাটা বলতেই ইফা বসা থেকে উঠে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে “সিয়াম তুমি এভাবে না ঠকালেও পারতে আমায়, বিয়ে করেছো অথচ আমাকে একবার বলা প্রয়োজন মনে করোনি তুমি। কিভাবে পারলে আমার জায়গাটা অন্যকাউকে দিতে?”
মেয়েটার কথা শুনে রাইসার আর বুঝতে বাকি রইলো না সিয়াম মেয়েটার সাথে সম্পর্কে ছিলো। ইফার কথার প্রতুত্তরে সিয়াম কিছু না বলে রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে “তুমি আজ যা করেছো মোটেও ভালো করোনি, পস্তাবে তুমি।”

“কেনো পস্তাবো আমি। আমি তো ইচ্ছে করে আসিনি আপনি জোর করেই বিয়ে করেছেন আমায়। আমার পরিবারকে রাজি করিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছেন আমায়।”
সিয়াম কিছু বলতে যাবে তখনই ইফা বলে “সিয়াম তুমি কেমন ছেলে তা আমি ভালো করেই জানি। শুধু শুধু ওই মেয়েটাকে কেনো বকছো তুমি? শুধরে নাও নিজেকে আর আজকের পর আমার সাথে ভুলেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা।” কথাগুলো বলেই সিয়ামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ইফা। ভীষণ কষ্ট পেয়েছে ইফা যা সে সহ্য করতে পারছেনা কারণ ইফা সিয়ামকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছে।
ওরা সবাই চলে গেলে লাল লাল চোখ করে সিয়াম রাইসার দিকে এগিয়ে যায়। রাইসা ভয়ে ঢুক গিলে আর এক পা দু পা করে পিঁছাতে থাকে।।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here