শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা #পর্বঃ০৫

0
787

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ০৫
#ফারজানা_আক্তার

“কিভাবে কি হলো মানে কি? ঘুম সম্পূর্ণ হয়নি তাই আবুল তাবুল বকছো হয়তো।”
ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে সিয়াম।

“শুনুন আমি মোটেও আবুল তাবুল বকছি না। আপনি তো রাতে বলেছেন গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তাহলে এখন এতো সকাল সকাল মিস্ত্রি পেলেন কোথায় গাড়ি ঠিক করার জন্য?”
নিকাব টা বাঁধতে বাঁধতে বলে কথাগুলো বলে রাইসা। সিয়াম একটুখানি রাইসার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে “ম্যাজিক”।
রাইসা আর কিছু বলেনা। এই মানুষটাকে ভীষণ বিরক্ত লাগছে রাইসার কিন্তু আফসোস সারাজীবন ওকে এই বিরক্তিকর মানুষটার সাথেই কাটাতে হবে।
একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামে। রাইসা চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। গাড়ি গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই দারোয়ান একটানে গেইটটা লাগিয়ে দেয় আবার। সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে রাইসার সাইডে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। রাইসা গাড়ি থেকে নেমে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, শুধু শ্বশুড়বাড়ি বলে দৌড়াতে আর লাফালাফি করতে পারছেনা। একটা বাড়ি এতো সুন্দর হতে পারে কল্পনার বাহিরে ছিলো রাইসার। রাইসা একটু সামনে এগিয়ে ডানপাশে তাকাতেই দেখে একটা বিশাল বাগান যেখানে ফুটে রয়েছে নানা ধরনের ফুল, রাইসার ইচ্ছে করলো সূর্যমুখী ফুল টা একটু ছুঁয়ে দেখেতে প্রিয় ফুল বলে কথা।

*
ঘরে প্রবেশ করতেই রাইসা যেনো আর বড় ধাক্কা খাই, সে যা আশা করেনি তার থেকেও বেশি পাচ্ছে এতে খুশি হবে নাকি কাঁদবে ভাবতে পারছেনা। সবাই এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘরের চাবি একটা সবসময়ই সিয়ামের কাছে থাকে, সিয়াম দরজা খুলে সোজা নিজের সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রাইসার কাপড়ের ব্যাগটাও সে নিলোনা। সিয়ামের এমন কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাইসা। হঠাৎ করে বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠে রাইসার, কষ্ট হচ্ছে খুব। রাইসার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো কেনো সিয়াম বিয়েটা করেছে? সিয়ামের আচার-আচরণে ভীষণ অসন্তুষ্ট রাইসা। রাইসা কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে কোনো মতে সিঁড়ি পর্যন্ত যায় তারপর থেমে থেমে এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি বেয়ে উঠে উপরের দিকে। রাইসার রাগও হচ্ছে খুব সিয়ামের উপর কিন্তু কিছু করার নেই তার এই মুহুর্তে। প্রায়ই অনেকক্ষন পর রাইসা সিঁড়ি ছেড়ে উপরে উঠে, কেমন জানি হাঁপিয়ে গেছে সে, খুব তৃষ্ণা পেয়েছে রাইসার কিন্তু এখন পানি পাবে কোথায় সেটা ভাবছে। উপরে উঠে দেখে অনেকগুলো গলি, একেকটা একেক দিকে, সিয়ামের রুম কোন দিকে খুঁজবে কিভাবে চিন্তায় পরে যায় রাইসা। রাইসা সেখানে একটা টুল দেখতে পেয়ে সেখানে বসে নিঃশ্বাস নিতে থাকে জোরে জোরে, খুব ক্লান্ত লাগছে ওর।
রিয়া ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে সকালের হালকা বাতাসের ঘ্রাণ নেয়। তারপর ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়ে একটু আগাতেই খেয়াল করে রাইসাকে।
“আরে ভাবি তোমরা চলে এসেছো?”
একগাল হেঁসে বলে রিয়া। কিছুটা মুচকি হাসির সাথে রাইসা বলে “হু”। রাইসার কন্ঠ শোনে রিয়ার বুঝতে বাকি রইলোনা যে রাইসা বেশ ক্লান্ত, রিয়ার দৌড়ে পাশের রুমে যেয়ে সেখান থেকে ঠান্ডা পানি এনে রাইসাকে খাইয়ে দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে ” ভাইয়া কোথায় আর তুমি এখানে কেনো বসে আছো?”

“উনার সাথেই তো এসেছি কিন্তু উনি উপরে উঠে দ্রুত পায়ে কোনদিকে চলে গেলেন লক্ষ করতে পারিনি তাই এখানে বসে ছিলাম।”

রাইসার কথা শুনে রিয়া মুচকি হেঁসে ওকে সিয়ামের রুমে নিয়ে যায়। সিয়াম তখন ওয়াশরুমে ছিলো। রিয়া রাইসাকে কাপড় চেঞ্জ করতে বলে চলে যায় সেখান থেকে। রিয়া চলে গেলে রাইসা বোরকা খুলে জোরে জোরে শ্বাস নেয়, এই অতিরিক্ত গরমে এতো সময় ধরে বোরকা পরে থাকাটা সহজ ছিলোনা, অনেক ধৈর্য্য নিয়ে ছিলো এতক্ষণ সে। রিয়া এসি ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে, আর বসে থাকতে পারছেনা রাইসা, সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। খানিকবাদে শাওয়ার ছেড়ে সিয়াম রুমে আসতেই দেখে রাইসা শুয়ে আছে বিছানায়, সিয়াম কিছু বললো না, চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে উপভোগ করলো ঘুমন্ত কালো পরিটাকে তারপর উচ্চস্বরে মিউজিক বাজিয়ে দিয়ে হালকা ডান্স করতে করতে কাবার্ড থেকে শার্ট বের করতেছিলো তখন রাইসা লাফ দিয়ে উঠে বসে কারণ সে মিউজিক শুনেনা। রাইসা উঠে বসে কানে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে বলে “প্লিজ বন্ধ করুন এসব, আমার সহ্য হচ্ছে না।”

সিয়ামের মুখে দুষ্টু হাসি, ও এমন ভাব নিয়ে আছে যেনো রাইসার কথা তার কানেই যাচ্ছেনা অথচ সে সব শুনতেছে এবং দেখতেছে। রাইসা এখনো সিয়ামকে দেখেনি। রাইসা আবারো বলে সিয়ামকে মিউজিক বন্ধ করার জন্য কিন্তু সিয়াম না শোনার ভান ধরে আছে। এবার রাইসা কান থেকে হাত নামিয়ে চোখ জোড়া খুলে বিছানা থেকে নেমে যায়, তারপর এদিক ওদিক তাকাতেই বামদিকে সিয়ামকে দেখতে পাই, সিয়ামকে দেখেই চোখজোড়া আবার বন্ধ করে নেয় কেননা সিয়ামের পরনে ছিলো শুধুমাত্র টাওয়াল, বেশ লজ্জা পেয়ে যায় রাইসা, ও আর এক মুহুর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিয়াম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে।

*
হুসনা এক মগ কফি নিয়ে বেলকিতে যেতেই দেখে ওর বাবা বাগানে হাঁটাহাটি করছেন, এই বাবা নামের মানুষটাকে দেখলেই হুসনার মাথা ঠিক থাকেনা সে কফি না খেয়েই তৈরি হয়ে বেরিয়ে যায় আর যাওয়ার সময় জাহানারা বেগম কে বলে যান “মা আমি যাচ্ছি, টিউশন শেষ করেই কলেজ চলে যাবো, ক্লাস শেষ করে আবার দুটো টিউশন করে ফিরবো।” এটা বলেই হুসনা বেরিয়ে যায়, বাগানের পাশ দিয়েই হুসনা হেঁটে যায় কিন্তু বাগানের দিকে আঁড়চোখেও সে তাকালো না। একটা মানুষ নিজের বাবাকে এতোটা ঘৃণা কিভাবে করতে পারে? ইমতিয়াজ হোসেন হুসনাকে যেতে দেখলেও কিন্তু কথা বলার সাহস পেলোনা, নিজের মেয়ের কাছে নিজেকে এতোটা ছোট হয়ে থাকতে হবে কখনো ভাবেননি উনি। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে সব মেয়েকে নিয়ে একসাথে বসে আনন্দের সাথে খাবার খেতে হাঁসতে হৈচৈ করতে কিন্তু উনার ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালা এই সুখ রাখেননি। হুসনা চলে যায় নিজের মতো করে, অসহায়ের মতো ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকেন ইমতিয়াজ হোসেন। হুসনা এক পার্কে এসে বসে থাকে একা, কোথাও কেউ নেই, সকালের ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে শিতল হচ্ছে সে আর সাথে ঝাপসা চোখের কোণা থেকে জল মুছে ভাবতে থাকে “জীবনটা তো অন্যরকমও হতে পারতো”

*
রাইসা শাওয়ার ছেড়ে এসে দেখে পুরো রুম ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই। এখন একটু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে রাইসার, এক কাপড়ে এতোসময় থাকা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর তাও আবার বিয়ের শাড়িতে।দরাইসা আয়নার সামনে গিয়ে মাথায় প্যাঁচানো টাওয়াল টা খুলে চুল মুছে নিলো তারপর নিজেকে খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলো কারণ এই প্রথম রাইসা গোল্ডেন পাড়ের মধ্যে লাল শাড়ি পরিধান করেছে তাও নিজে নিজে, কোথাও কোনো ভুল হলো কিনা শাড়ি পরায় সেটাই দেখছে সে। রাইসার ব্লাউজ টা একদম কোমর অব্ধি তাই সে নিশ্চিন্তে যেমন ইচ্ছে শাড়িটা পরতে পেরেছে যদিও সে ঠিক করেছে আজকের পর কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া সে আর শাড়ি পরিধান করবেনা।
নিজেকে ঠিকটাক মতো তৈরি করে রাইসা পুরো রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো আর ভাবছে “মানুষটা অগোছালো হলেও রুমটা কিন্তু বেশ গুছানো। কিন্তু উনি গেলেন কোথায় এই সময়ে?”

এসব ভাবতে ভাবতে রাইসা একটা দরজা দেখতে পেলো রুমের মধ্যে, দরজাটা কিসের দেখতে গিয়েই আরো বড়সড় সারপ্রাইজ পাই সে কারণ এতো সুন্দর বেলকনি সরাসরি দেখার সুযোগ কখনোই হয়নি ওর। রাইসা একগাল হেঁসেই বেলকনিতে গিয়ে খেলো আরেক ঠাস্কি। বেলকনিতে দোলনায় বসে সিয়াম যা করতেছে তা দেখে তো রাইসার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়___________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here