শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা #পর্বঃ১০

0
771

#শূন্যস্থানে_তুমি_পূর্ণতা
#পর্বঃ১০
#ফারজানা_আক্তার

জ্যোৎস্নায় ভরপুর পৃথিবী। চারিদিকে আলোয় আলোয় মাঠ ঝিকিমিকি করছে। মৃদু বাতাস মাহিনের চোখে মুখে ছুঁয়ে যাচ্ছে। বন্ধুদের কন্ঠ কর্ণকুহর হতেই পট করে চোখ মেলে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় মাহিন। সবাই একসাথে চিল্লিয়ে বলে উঠেছে “শুভ জন্মদিন মাহিন।” কিন্তু এতে মাহিনের চোখে মুখে মোটেও আনন্দ খুঁজে পেলোনা ওর বন্ধুরা। তারপর সবাই ওকে বললো “দেখ মাহিন তুই আমাদের বন্ধু ভাবিস আর না ভাবিস আমরা কিন্তু মন থেকেই তোকে ভালোবাসি। আরে টাকা পয়শা কোনো ব্যাপারই না যদি আমাদের মন টা সরল থাকে। আজ থেকে তুই কখনো আমাদের সামনে নিজেকে ছোট করে রাখবিনা বলে দিলাম আর হ্যাঁ আজ থেকে এমন গম্ভীর হয়ে থাকিসনা প্লিজ। আরে দোস্ত আমরা আমরাই তো, চিল।” এসব বলে সবাই একসাথে হৈ হুল্লোড় করতে থাকলো। মাহিনের জন্য অনেক উপহার আর একটা চকলেট কেক এনেছে কিন্তু মাহিন এসব গ্রহণ করতে নারাজ কিন্তু ওর বন্ধুরা নাছর বান্দা তাই এসব নিতেই হবে। তবুও মাহিন কেক কাটাই অমত প্রকাশ করছে মাহিনের মুখে একটাই কথা ইসলামে জন্মদিন এভাবে পালন করার নিয়ম নেই।
“কেনো রে জন্মদিন পালন করা কি হারাম?”
হুট করে বন্ধুদের মাঝ থেকে একজন বলে উঠলো। তখন মাহিন বলে
“জন্মদিন পালন করা হারাম বলাটা সহজ হবে না। কেননা কেবল সে সব কর্ম বা জিনিসকে হারাম বলা যায় সে জিনিসের বিপরীত স্পষ্ট রেফারেন্স থাকে।
কুরআন বা হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া থাকে যে এটা হারাম। অথবা কুরআন ও হাদিসে হারাম ঘোষিত জিনিসের সাথে সাদৃশ্য রাখে।

কিন্তু জন্মদিন পালনের বিষয়টি কুরআন হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ নয়। অন্যদিকে যে সব কারণের ভিত্তিতে হারাম বলা হয় সে সব কারণ জন্মদিন পালনের মধ্যে বিদ্যমান নয়।

যেমন যদি বলা হয় যে, জন্মদিন কাফিররা পালন করে। আর কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখতে রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – নিষেধ করেছেন। তাই এটা পালন করা হারাম।

তাহলে এই দাবিটি ঠিক হবে না। কেননা হাদিসে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখতে যে নিষেধটি আছে সেটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
যেমন কাফিররা শার্ট প্যান্ট পরিধান করে তাই বলে কি মুসলিমদের জন্য শার্ট প্যান্ট পরিধান হারাম?
একইভাবে জাতিসংঘ অনুমোদিত অনেক দিবস কাফির মুসলিম সকলে মিলে পালন করে যেমন ভাষা দিবস, শিশু দিবস, স্বাস্থ্য দিবস, বৃক্ষরোপণ দিবস ইত্যাদি।
এই দিবসগুলো কাফিররা পালন করছে বলেই মুসলিমরা পালন করতে পারবে না বিষয়টি এমন নয়।
বরং হাদিসে কাফিরদের সাথে সে সব ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রাখতে নিষধ করা হয়েছে যে কর্মগুলো কাফিরদের ‘শিয়ার’ বা ধর্মীয় প্রতীক বহন করে।
বা যে কর্মক্রীয়া একান্তভাবে কাফিরদের সাথে বিশেষিত। যেমন সর্বপ্রকার পূজা, বড়দিন, নওরোজ, মেহেরজান ইত্যাদি।
কিন্তু যে কর্মগুলো কাফির সম্প্রদায়ের সাথে বিশেষিত নয় সে কাজগুলো সার্বিকভাবে মুসলিমদের জন্য নিষেধ নয়।
তার মধ্যথেকে কিছু কাজ কোনো কারণ বিশেষে নিষেধ হতে পারে আবার কোনো কাজ বৈধও হতে পারে।
এই পুরো আলোচনা থেকে যে উপসংহার বের হবে সেটা হলো জন্মদিন পালন করা শরয়ি অকাট্য রেফারেন্স দ্বারা হারাম নয়।
অন্যদিকে তা কাফির সম্প্রদায়ের শিয়ারও নয়। তাই জন্মদিন পালনকে হারাম বলা যাবে না।”

মাহিনের কথা শুনে এক বন্ধু বলে উঠে “তাহলে তো কেকটা কাটা যায় কারণ আমরা তো শুধু সাময়িক আনন্দ করতেছি গান বাজনা নাচ গান তো আর করতেছিনা।” এক প্রকার বাধ্য হয়ে মাহিন কেক কাটলো।
প্রায়ই রাত ২টা বেজে যায় মাহিন সবার সাথে আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে। মাহিন ঘরে গিয়ে দেখে ওর মা ঘুমাচ্ছেন। মাহিনও তাই কোনো শব্দ না করে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়।

*
ভোর রাতে রাইসা কোনো রকমে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হচ্ছেনা। রাইসা কখনোই ভাবেনি সিয়াম এতোটা নিষ্টুর হবে। কিভাবে পারলো সিয়াম ভালোবাসার নামে শুধু চাহিদা মেটাতে? ভাবতে পারছেনা রাইসা। রাইসা বেশ বুঝতে পারছে সিয়াম সেই প্রথম দেখার ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই বিয়ে করেছে। সিয়াম গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে কিন্তু রাইসার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। পুরো শরীর দাগ দাগ হয়ে আছে। শরীরের যন্ত্রণায় কাতর হচ্ছে রাইসা। রাইসার ইচ্ছে করছে সব ছেড়ে বাবা মায়ের কাছে চলে যেতে। সিয়ামকে সহ্য করতে পারছেনা রাইসা আর।

সকালে সিয়াম আর রাইসা নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ে না গেলে ওদের জন্য খাবার ঘরেই পাঠিয়ে দেন রাহেলা খাতুন। সিয়াম পেট পুরে খেলেও রাইসা ছুঁয়েও দেখেনি খাবার।
সিয়াম খাবার শেষ করে কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে কিন্তু রাইসা নিজের মতো করেই খাটের এক কোণে বসে রয়েছে মন খারাপ করে। সিয়াম রাইসার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাঁসে আর গরম কন্ঠে বলে “আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলার শাস্তি পেয়ে গিয়েছো হয়তো এক রাতেই আর আমার উদ্দেশ্যও সফল হয়েছে এখন তোমাকে আমার আর লাগবেনা। তোমার শরীর দেখার লোভ ছিলো শুধু কিন্তু এখন তো সেই শরীরের প্রতিটি অংশ ছুয়েও দিয়েছি, এটাই সিয়াম বুঝেছো? ভুলেও আর কখনো আমার সামনে আমার স্ত্রী সাজার মতো বোকামি করবেনা বলে দিলাম নয়তো গত রাতের চেয়েও জগন্য ভাবে যন্ত্রণা দিতেও দু’বার ভাববো না আমি। মনে থাকে যেনো।”
এটা বলেই কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় সিয়াম। সিয়াম বেরিয়ে গেলেই রিয়া প্রবেশ করে রুমে। রিয়াকে দেখে কিছুটা লজ্জিত হয় রাইসা কারণ রাইসার বুঝতে বাকি রইলো না যে রিয়া সব শুনে ফেলেছে কিন্তু সিয়াম দেখে নাই রিয়াকে। রিয়া এসে রাইসার পাশে বসে বলে “আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাবি, আমি জানতাম না ভাইয়ার মনে এতোটা ঘৃণা জমে আছে তোমার প্রতি। আমি মনে করেছিলাম ভাইয়া হয়তো তোমাকে ভালোবেসে চেঞ্জ হয়েছে কিছুটা।”

“না বোন নিজেকে দোষ দিওনা। এটা আমার ভাগ্য আর ধৈর্যের পরিক্ষা। যাও কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে। ”

“তুমি যাবেনা?”

“নাহ।”
এটা বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাইসা। লজ্জায় রিয়াকে বলতেও পারছেনা যে সে হাঁটতে পারছেনা ঠিকমতো। সিয়াম যে রাইসাকে আদর করেনি, নির্যা’তন করেছে এটা স্পষ্ট রিয়ার কাছে। রিয়ার ফোনে সিয়ামের কল আসলে রিয়া বুঝে যায় ভাই তাকে কেনো কল করেছে তাই সে দ্রুত ভাবে রাইসাকে বলে “তুমি এভাবে চুপ হয়ে থেকোনা ভাবি। তুমি যতই ওর এমন অত্যা’চার সহ্য করবে ততই ও তোমাকে আরো বেশি করে কষ্ট দেওয়ার ফন্দি আঁটবে তাই তুমি নিজেকে শক্ত করো তৈরি করো নিজেকে একজন স্ত্রী যোদ্ধা হয়ে। ভাই কল দিয়েছে আমায় এসে কথা হবে আল্লাহ হাফেজ।”
রিয়া চলে গেলে রাইসা অনেক চিন্তা করে এই বিষয় নিয়ে। জীবনটা এমনভাবে হুট করে এতোটা পরিবর্তন হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি কখনো রাইসা।
রাইসা মনে মনে ঠিক করে সে সিয়ামের সামনে কিছুতেই নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করবেনা। সিয়ামকে কিভাবে সঠিক পথে আনতে হবে ভালো করেই জানা আছে রাইসার। রাইসা মোটেও ভীতু হয়ে বসে থাকার মতো মেয়ে নয়, যথেষ্ট সাহসী রাইসা।

*
“ভাবি একটা কথা বলার ছিলো।”
রিয়া খুব নরম সুরে কথাটি বলে রাইসাকে। রাইসা আর রিয়া মাগরিবের পর একসাথে পড়তে বসেছে রিয়ার রুমে তখনই হঠাৎ কথাটি বলে রিয়া। রাইসাও স্বাভাবিক ভাবে বলে “হুম বলো৷ এতে আবার অনুমতির প্রয়োজন নেই তো।”

“আসলে হুসনা বলেছিলো ওর জন্য একটা পার্ট-টাইম জবের ব্যবস্থা করতে কিন্তু বাসায় তো তেমন ৪ঘন্টার কোনো কাজ আমি দেখছিনা। তবুও তুমি একটু আম্মুর সাথে কথা বলে দেখবে কি?”

“মন খারাপ করিওনা। আম্মুকে বলে দেখি কোনো কাজ হয় কিনা।”
রাইসার কথা শুনে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় রিয়া।
পড়া শেষ করেই রাইসা আর রিয়া রাহেলা খাতুন এর কাছে যায় কিন্তু কেউ উনাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। রাইসা এই পরিবারের নতুন সদস্য তাই হুট করে এমন বিষয়ে কথা বলতে একটু নার্ভাস লাগছে ওর। প্রায়ই অনেকক্ষণ পর রাইসা হুসনার বিষয়ে কথা বলেন শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে। রিয়াও বলে ওর সাথে যা কথা হয়েছে হুসনার তা আর সে যে হুসনাকে ভরসা দিয়েছে তাও বলেছে। ওদের কথা শুনে রাহেলা খাতুন চিন্তায় পরে যায় কি কাজ দেওয়া যায় তাও বড়লোক ঘরের মেয়েকে। গরিব হলে যে কোনো একটা কাজ দিলেও সমস্যা হতোনা কিন্তু হুসনাকে কিভাবে কি কাজ দিবে মাথায় আসছেনা রাহেলা খাতুনের।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here