শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-১
tani tass ritt
তিহাম তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে চমকে উঠলো।কেনোনা এই মেয়েটিকেই সে ৩ বছর আগে সবার সামনে ঘটা করে অপমান করেছিলো।এমনকি শাড়ি তে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো যাতে সে সবার সামনে শাড়ি খুলতে বাধ্য হয়।
তিহামের হাত পা কাঁপছে। এই শীতের দিনেও সে ঘামছে।গত ৩ বছর ধরে যাকে পাগলের মতো খুঁজেছে আজ তাকে সামনে পেয়েও কেমন যেনো ভয় লাগছে।কিভাবে মুখোমুখি হবে ভেবে পাচ্ছেনা সে।
মেয়েটি এখনো বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় তিহামকে দেখতে পাচ্ছেনা।
তিহাম ভয়ে ভয়ে প্রিয়তা বলে ডাক দিলো।নাহ মেয়েটা সাড়া দিচ্ছে না।সে এবার একটু জোরেই প্রিয়তা বলে ডেকে উঠলো। একটু বেশিই জোরে হয়ে গেলো। কেনোনা প্রিয়তা তো তাকালই সাথে সাথে ট্রেনে বসা তার আশেপাশের মানুষ ও অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“প্রিয়তা তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো?”
মেয়েটি কোনো জবাব দিলোনা।শুধু এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তিহামের দিকে।
“আমি তোমাকে গত ৩ টি বছর ধরে কত খুঁজেছি।তুমি কোথায় চলে ছিলে?”
মেয়েটির চোখে মুখে ক্ষোভ ফুটে উঠেছে।কি যেনো একটা ভেবে মেয়েটি উত্তর দিলো,
“বাহ প্রিয়তা নামটা তো বেশ মনে আছে আপনার।তা আমাকে খুঁজার কারণ কি? একবার অপমান করে কি শখ মিটে নি?” খুব রাগি গলায় বললো প্রিয়তা।
তিহাম নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।খুব লজ্জা লাগছে তার।অবশ্য লাগাটাই স্বাভাবিক। ৩ বছর আগে যে জঘন্য কাজটাই না সে করেছিলো।
“প্রিয়তা আমাকে একটা বার সুযোগ দাও।আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।”
প্রিয়তা কিছু বললো না।কেননা আশেপাশের মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে যা তার একদম পছন্দ হচ্ছে না।সে আবার বই পড়ায় মন দিলো।
তিহাম বুঝতে পারলো কিছু বলে লাভ হবেনা।প্রিয়তা তার উপর খুব রেগে আছে।রাগাটাই স্বাভাবিক।
৩ বছর আগে,
তখন তিহাম অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা মায়ের অঢেল ধনসম্পদ।ভাব ই আলাদা ছিলো।এক নামে সবাই চিনতো।কত মেয়ে যে তার জন্য পাগল ছিলো।তিহামের বাঁকা দাঁতের হাসিতে সব মেয়ে পাগল হয়ে যেতো।আর তার মিষ্টি মিষ্টি কথায় যে কেউ ফেসে যেতো।
তার এই হাসিতেই পাগল হয় প্রিয়তা।প্রিয়তা তখন কেবল ভার্সিটি ভর্তি হয়।প্রথম দেখায়ই তার ভালো লেগে যায় তিহাম কে।প্রিয়তা বেশ চুপচাপ স্বভাবের ছিলো।আর একটু বোকাও ছিলো। যে কারো কথায় গলে যেতো।তিহাম ও তার সুযোগ নেয়।মিষ্টি মিষ্টি কথায় পটিয়ে ফেলে প্রিয়তাকে।ধীরে ধীরে প্রিয়তার ফিলিংস তিহামের জন্য বাড়তে থাকে।একটা টাইমে এমন হয়ে যায় সে তিহাম ছাড়া কিছুই বুঝেনা।
তিহাম এবং তিহামের বন্ধুরা আড়ালে
এটা নিয়ে বেশ মজা নিতো ।কিন্তু বোকা প্রিয়তা কিছুই বুঝতোনা।
তিহামের জন্মদিনের দিন প্রিয়তা নীল শাড়ি পরে তিহামকে প্রপোজ করে সবার সামনে।
“তুমি কি আমার হবে?”
তিহাম তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিলো।
“আমাকে পেতে হলে তোমাকে এখন সবার সামনে এই সুন্দর শাড়িটা খুলতে হবে।” বলেই প্রিয়তার দিকে এগোতে লাগলো।
প্রিয়তা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।এগুলো কি শুনছে সে।তিহাম তার সাথে এমন কেনো করবে।
“তুমি আমার সাথে মজা করছো তাইনা তিহাম?” ভয়ে ভয়ে বললো প্রিয়তা।
“মজা মাই ফুট।হারি আপ বেবি।” বলেই তিহাম প্রিয়তার শাড়ির আঁচলে লাইটার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলো।
প্রিয়তা তো চিৎকার করছে।কিন্তু কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসছেনা।না চাইতেও তার শাড়ি খুলতে হলো।সে সবার সামনে বসে অঝোরে কাঁদছে।
উপস্থিত কেউ কেউ মজা নিচ্ছে।আবার কারো কারো প্রিয়তার কান্নার আওয়াজে বুক কেঁপে উঠছে।
তিহাম এতক্ষন খেয়াল না করলেও কেন যেনো প্রিয়তার কান্না টলারেট করতে পারছেনা সে।তার বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।সে তার জ্যাকেট টা খুলে প্রিয়তাকে পড়িয়ে দেয়।প্রিয়তা সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।সেদিনের পর থেকে প্রিয়তা আর আসেনি।তিহাম হাজার খুঁজেও আর প্রিয়তার খোঁজ পায়নি।
আজ এতো বছর পর ট্রেনে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি তিহাম। তিহাম এক ধ্যানে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা যে স্টেশনে নেমে গেলো তিহাম ও তার পিছে পিছে ঐ একই স্টেশনে নেমে গেলো।যদিও তিহামের পরের স্টেশনে নামার কথা ছিলো।তিহাম প্রিয়তার পিছু পিছু যাচ্ছে।
তিহামের ফোনে কল এলো
ওপাশ থেকে..
“আরে গুল্লি মার তোর ক্লাইন্টকে। আমি এখন খুব ই গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছি।জানিস আমি ওকে পেয়ে গেছি।” বলেই তিহাম ফোনটা রেখে দিলো।
সে দ্রুত প্রিয়তার সামনে যেয়ে দাড়ালো।
“প্লিজ আমি একটা বার তোমার সাথে কথা বলতে চাই। ”
প্রিয়তা কিছু বলছে না সে তার মতো হেটে চলছে।
হঠাৎ তিহাম প্রিয়তার হাত ধরে ফেললো।সাথে সাথে প্রিয়তা এক ঝটকায় হাত টা ছাড়িয়ে ফেললো।
“আমি আপনার কেনা সম্পত্তি নই যে যা ইচ্ছা তাই করবেন?”
তিহাম এবার প্রিয়তার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো।
“প্লিজ একটা বার।”
প্রিয়তা কি ভেবে যেনো থেমে গেলো।
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার কথা শুনবো এখন উঠুন তো। ”
তারা দুজন একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো।
“কি বলবেন বলেন?”
“আমাকে মাফ করে দাও। ঐদিনের জন্য আমি খুবই লজ্জিত।আমি তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।তুমি রিলেটেড কাউকেই আমার চেনা ছিলোনা যে তো ব্যাপারে জানতে পারবো।” তিহাম বললো।
“ভাগ্যিস জানতেন না। ”
তিহাম এই কথা আগামাথা কিছুই বুঝলোনা।
“তুমি তো আমাকে তুমি করে বলো। তাহলে আজ কেনো আপনি বলছো?”
প্রিয়তা এই কথার কোনো জবাব দিলোনা।
“তোমার কথা শেষ? ”
“তুমি যাওয়ার দুদিন পর আমার মা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমার পাপের ফল হয়তোবা আমার মাকে ভোগ করতে হয়েছে।” বলেই কেঁদে ফেললো তিহাম।কেননা তার মা ই তার দুনিয়া ছিলো।
প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।কিন্তু তিহাম তা দেখতে পেলো না।
“আমি এখন উঠি। ”
“তোমার নাম্বারটা পাওয়া যাবে।”
“০১৯১… আমার নাম্বার। ” বলেই প্রিয়তা ওখান থেকে চলে গেলো।
তিহামের বেশ অদ্ভুত লাগলো ব্যাপারটা।এত সহজেই সে নাম্বারটা পেয়ে যাবে বুঝতে পারেনি।
প্রিয়তা বাসায় এসে সরাসরি রুমে ঢুকে পরলো।আলমারি থেকে সবুজ ডায়েরিটা বের করলো।
ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক হাসি দিলো।এই হাসির পিছে অজানা কত রহস্য আছে তা কারো জানা নেই।ডায়েরিটা আবার লকারে রেখে দিলো।
আজ তার এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে।বেশ আয়েশ করে সাওয়ার নিলো।
ফ্রিজ থেকে আইস্ক্রিম বের করে খেতে খেতস গুন গুন করে গান গেতে লাগলো।এতো খুশি হতে এর আগে কেউ ওকে দেখেনি।
“মা তোর কি হয়েছে? আজ এতো খুশি? ”
“কিছুনা বাবা।এমনি। ”
রুমে এসে দেখেলো তার ফোন বাজছে।আননোন নাম্বার।তার বুঝতে বাকি রইলো না কে কল দিয়েছে। সে ফোনটা কেটে দিয়স অফ করে দিলো।তারপর শান্তির এক ঘুম দিলো।
রাতে সে গাড়ো নীল রঙের একটা শাড়ী পরলো।পরে তিহাম কে কল দিলো।
“আমি বাসার ঠিকানা দিচ্ছি তুমি এখনি আধা ঘন্টার মধ্যে আমার বাসার সামনে আসবে।” বলেই ফোন কেটে দিলো প্রিয়তা।
তিহাম তো আকাশ থেকে পড়লো। সে খুশি হবে নাকি কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসলো।
প্রিয়তা ঠিকানা লিখে পাঠিয়েছে।সে সাথে সাথে রওনা হলো প্রিয়তার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
প্রিয়তা ছাদে দাড়িয়ে আছে।আনমনে গুনগুন করে গান গাচ্ছে।তিহাম কে দেখতে পেয়ে তাকে ইশারা করলো ছাদে আসার জন্য।
তিহাম ছাদে আসার পর প্রিয়তাকে ডাক দিলো।প্রিয়তা তিহামকে দেখে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো।
তিহাম এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। এতো সুন্দর শাড়ি পড়ার পর ও কেন যেনো তিহামের ঐ আকর্ষণ টা কাজ করছে না।ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগলো তিহামের।
“আসো আমরা একসাথে আজ আকাশ দেখবো?”
এত পরিবর্তন দেখে তিহাম শক খেলো। কই তার সাথে ঝগড়া করবে তা না উল্টো তাকেই কিনা বলছে..
প্রিয়তার ডাকে ঘোর কাটলো তিহামের।
“কিন্তু তুমি যে একবার আমাকে বলেছিলে তোমার আকাশ পছন্দ না?”
এই ৩ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে তিহাম।
প্রিয়তা ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে।তিহামও তার পাশে এসে দাড়ালো।দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারছেনা সে।প্রিয়তার কি আসলেই কোনো রাগ নেই তার উপর।মনে মনে খুশিও হলো সে।
আচমকাই প্রিয়তা তিহামকে…
চলবে…