শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-২

0
3107

শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-২
tani tass ritt

আচমকাই প্রিয়তা তিহাম কে তার দিকে ঘুরিয়ে নাক বরাবর একটা ঘুষি দিলো।ঘুষিটা এতো জোরেই ছিলো যে তিহামের নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে গেলো।

এমন কিছুর জন্য তিহাম মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।সে প্রিয়তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।যেই মেয়ে নাকি ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতোনা সে আজ তাকে মারলো।

“তুমি আমাকে মারলে? ” তিহাম বললো।

“কেন রে বাবা? তোমার জন্য তো আমি সবার সামনে শাড়ী খুলেছিলাম।আমি তো তোমাকে একটা ঘুষিই দিয়েছি তাও সবার চোখের আড়ালে।” বলেই মুচকি একটা হাসি দিলো।

তিহাম ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে।সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।তার খুব লজ্জা লাগছে।সে কত জঘন্য কাজ করেছিলো প্রিয়তার সাথে।সেই তুলনায় এই এটা তো কিছুই না।

“তুমি আমাকে যত ইচ্ছে মারো কিন্তু আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।” প্রিয়তার হাত ধরে বললো তিহাম।

“আমি তোমাকে মাফ করার কে বলো? ” বলেই আকাশের দিকে তাকালো প্রিয়তা। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।কিন্তু তিহাম তা দেখতে পেলো না।

“তুমি আমাকে মাফ না করলে কে করবে বলো? আমি অনেক অনুতপ্ত আমার কাজের জন্য। আই এম সরি প্রিয়তা। ”

প্রিয়তা কিছু বললো না। তিহামের হাত ধরে দাড়িয়ে রইলো।

এভাবেই কেটে গেলো কিছুক্ষণ। কেউ কোনো কথা বলছে না।

“তুমি এখন বাসায় যাও। অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।” প্রিয়তা শান্তভাবে বললো।

“তোমাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে নীল শাড়িতে। পুরোই নীল পরী।”

“ঐদিনো কিন্তু আমাকে সুন্দরই লেগেছিলো নীল শাড়িতে কিন্তু আফসোস তোমার চোখে পরেনি।”

প্রিয়তার কথা শুনে তিহামের মন টা খারাপ হয়ে গেলো।সে প্রিয়তার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে,

“আজকের পর থেকে আর কোনোদিন তোমাকে কষ্ট পেতে দিবোনা। ” বলেই প্রিয়তার কপালে চুমু খেলো। আর দেড়ি না করে সেখান থেকে চলে গেলো।

প্রিয়তা এখনো ঠাই দাড়িয়ে আছে। তার হাত পা কাঁপছে। তিহামের স্পর্শে পুরো শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেলো ।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।এই যন্ত্রনা বয়ে বেড়ানো যে সম্ভব না।

আজ তিহামের চোখে প্রিয়তার জন্য শুধু ভালোবাসার প্রকাশ পেয়েছে।চোখ কখনো মিথ্যা বলে না।

প্রিয়তা পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।গোছালো চুলগুলো সব অগোছালো হয়ে গেলো।পরনে শাড়িটাও আর গোছালো নেই। তার মধ্যে এক চাপা কষ্ট আছে যা কারো জানা নেই।

কিছুক্ষণ পর প্রিয়তা উঠে নিজের রুমে যেয়ে ১ ঘন্টার মতো শাওয়ার নিলো।তারপর বেরিয়ে সেই ডায়েরিটা বের করে বুকে জড়িয়ে বসে রইলো।

এইদিকে তিহাম তো খুশিতে শেষ।হাসতে ভুলে যাওয়া ছেলেটা আজ পুরো বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে।আফজাল সাহেব তিহামের বাবা এসব দেখে খুশি হবে না অবাক হবে বুঝে উঠতে পারছেনা।

“বাবা আমি ওকে পেয়ে গিয়েছি।তোমার বউমাকে পেয়ে গিয়েছি।”বলেই খুশিতে বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগলো।

ছেলেকে এতো খুশি দেখে আফজাল সাহেবের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।

” কালই আমরা ঐ মেয়ের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো।মেয়েটাকে আমাকে একটু দেখাতো।”

“না বাবা এখন না পরে।আরে একটু সবুর করো একবারে যেয়েই না হয় তোমার বউমাকে দেখো।আমি আগে ওকে নিজে প্রপোজ করবো তারপর তুমি না হয় ওর বাসায় যেও।” বলেই তিহাম নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে এলো।

আফজাল সাহেব আজ বেশ খুশি। তার একমাত্র ছেলে আজ এতো খুশি।এতগুলো বছর পর তার ছেলেকে সে হাসতে দেখেছে।কেননা তিহামের মা মারা যাওয়ার পর সে কেমন যেনো হাসতে ভুলে গিয়েছিলো।যেই ছেলেকে এতোদিন বিয়ের কথা বললেই রেগে যেতো সে নাকি আজ নিজ থেকেই বিয়ে করতে চাচ্ছে।আফজাল সাহেব হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলেন।

তিহাম ড্রয়ের খুলে প্রিয়তার একটা ছবি বের করে হাসতে লাগলো।একদিনেই সে এতো কিছু পেয়ে যাবে নিজেও বুঝেনি।আজ সে শান্তির ঘুম দিবে একটা।

আর এইদিকে প্রিয়তার ঘুম যেনো কোথায় উধাও হয়ে গেলো।সে চাইলেও ঘুমোতে পারছেনা।ঘুমও যেনো তার সাথে বেইমানি করছে।

এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।তিহাম যেনো প্রিয়তাকে চোখে হারায়।ছোট ছোট সব ব্যাপারেই প্রিয়তার এতো খেয়াল রাখে।মানে গত ৩ বছরের কষ্ট পুষিয়ে দেয়ার ট্রাই করছে ভালোবাসা দিয়ে।প্রিয়তা দিনকে দিন অবাক হচ্ছে তিহামের এই বিহেবে।তিহাম কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক তাকায় অব্দি না।সারাদিন প্রিয়তা প্রিয়তা করে।ওর পুরোটা জুড়েই তো শুধু প্রিয়তার বসবাস।

এভাবে কেটে গেলো ৬ মাস।আর দুদিন পর তিহামের বার্থডে।প্রিয়তা অনেক কিছু প্ল্যান করেছে তিহামকে সারপ্রাইজ দেওয়ার।এই সারপ্রাইজ হয়তো তিহাম কোনোদিন ভুলতে পারবেনা।

এইদিকে তিহাম মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে সে ঐদিনই প্রিয়তাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে।তার থেকে বিডে গিফট হিসেবে তাকেই চাবে।সব থেকে স্পেশিয়াল গিফট তো তার জন্য প্রিয়তাই।গত তিন বছর ধরে যাকে পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছে ফাইনালি তাকে বিয়ের জন্য বলবে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে তার।

তিহামের বিডের আগেরদিন প্রিয়তার বাসায় পার্সেল আসলো একটা।পার্সেলটা খুলে দেখলো খুব সুন্দর একটা লাল শাড়ি। সাথে একটা চিরকুট।

“আমার দিলবার আমি চাই কাল তুমি এই শাড়িটা পরে আমার বার্থডেতে আসো।আমার লালপরী হয়ে।আই লাভ ইউ প্রিয়।”

রিদিতা চিরকুট টা হাতে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।আনমনেই তার মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো,
“আই লাভ এই টু তিহাম”
সে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। শাড়িটা নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।তিহামের চয়েজ অনেক ভালো শাড়িটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

পরেরদিন প্রিয়তা খুব সুন্দর করে সাজলো।যে কে দেখেই ফিদা হয়ে যাবে।তিহাম নিজে নিতে আসলো প্রিয়তাকে।একটা রেস্টুরেন্টে খুব সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে।তিহামের ভাব দেখে প্রিয়তার মনে হচ্চে আজ তিহামের না তার নিজের বার্থডে।আনমনেই হেসে উঠলো সে।

রেস্টুরেন্টে ঢুকার সাথে সাথে সবাই একসাথে হ্যাপি বার্থডে বলে উইশ করলো তিহামকে।কেক কাট করা হলো।

“আজ আমি তোমার থেকে কিছু চাবো? তুমি আমাকে দিবে না বলো?”

প্রিয়তা কোনো জবাব দিলো না।

তিহাম হাটু গেড়ে বসে সবার সামনে,

“আমি জানি প্রিয়তা আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছি।তুমি আমাকে মাফ করে সারাজীবন আমার সাথে থাকবে? তুমি কি আমার হবে? চলোনা #শেষটায়_তুমিআমি এক হয়ে যাই।” বলেই তিহাম প্রিয়তার দিকে চেয়ে রইলো।

প্রিয়তা মুচকি একটা হাসি দিয়ে ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করলো।

তিহাম কিছু বুঝতে পারছেনা।

“দেখোতো ডায়েরিটা চিনো নাকি।” বলেই তিহামের দিকে ছুড়ে মারলো।ডায়েরিটা মোটা হওয়ায় তিহামের মাথায় লেগে মাথাটা কেটে গেলো।”
উপস্থিত সবাই হতবম্ভ হয়ে গেলো।কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

তিহাম ডায়েরিটা হাতে নিলো।
খুলতেই সে চমকে গেলো।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।কিভাবে সম্ভব এটা তার মানে….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here