শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-৩

0
2830

শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-৩
tani tass ritt

ডায়েরিটা খুলেই প্রথমে ২ টা মেয়ের হাস্যজ্বল ছবি দেখা যাচ্ছে।দেখতে তারা হুবহু একরকম।যমজ হলেও এমন কার্বনকপি খুব কমই দেখা যায়।

তিহাম এটা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।তার হাত পা কাঁপছে।কেমন যেনো এক অজানা ভয় কাজ করছে।

“তার মানে?” তিহাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।

“জি আপনি একদম ঠিক অনুমান করেছেন। আমি প্রিয়তা নই।প্রিয়তার বোন রিদিতা। প্রিয়তা কে তো আপনি ৩ বছর আগেই মেরে ফেলেছিলেন।”

তিহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“কি বলছো এইসব? ”

“কি বলছি মানে।যেই মেয়ে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো তাকে কিনা আপনি ভরা মজলিসে ঘটা করে অপমান করেছেন।আপনি এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারলেন? আরে পছন্দ ছিলোনা বলে দিলেই পারতেন? এতোটা অপমান করার কি দরকার ছিলো বলতে পারবেন?”

তিহাম কাঁদছে।কোনো কথা বলছে না।

“জানেন প্রথম ও যেদিন আপনার কথা আমাকে বলে কত খুশি ছিলো ।প্রিয়তা আমার সাথে সব শেয়ার করতো। তাই আপনাকে আমি খুব ভালো করেই চিনতাম।

আমার বাবা মা সেপারেশনের পর আমি বাবার সাথে দেশের বাইরে চলে যাই।আর প্রিয়তা মায়ের সাথে এখানে থাকতো।ও খুব চাপা স্বভাবের ছিলো।আপনাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলো। আর আপনি কিনা ওর সাথে ছি।”

তিহাম এবার ডায়েরির পেইজ উল্টালো।যেখানে প্রিয়তা তাকে নিয়ে হাজারো কথা লিখেরেখেছে।

“আপনি যেদিন ওকে অপমান করেছিলেন সেদিনই ও ফ্যানের সাথে ঝুলে সুইসাইড করে।ও যে আপনার জন্য সুইসাইড করে তা আমাকেও বলেনি। মা আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে প্রিয়তা সুইসাইড করেছে।আপনি বুঝতে পারছেন এটা আমাদের জন্য কতটা কষ্টের ছিলো?”

রিদিতা এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।তিহামকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো।
“আপনার জন্য আমি আমার বোনকে হারিয়েছি।আপনার জন্য আমার মা আজ মেন্টাল হসপিটালে।সে প্রিয়তার সুইসাইড মেনে নিতে পারেনি।এখনো তার ট্রিটমেন্ট চলছে।আপনি আমাদের জীবিত মেরে ফেলেছেন এমন কেনো করলেন বলেন কেনো করলেন?”

“প্রিয়তা মারা যাওয়ার ১ বছরের মাথায় আমি আর বাবা দেশে আসি।বোনের রুম থেকে ডায়েরিটা পেয়ে আমি সব বুঝতে পারি।আমার প্রথমেই আপনাকে সন্দেহ হয়েছিলো।কিন্তু প্রিয়তা ডায়েরিতে লিখে গিয়েছলো যাতে আপনাকে কোনোরকম ঝামেলায় না ফেলা হয় ওর মৃত্যুর জন্য।কিন্তু ও তো আমার বোন ছিলো,আমি কিভাবে আপনাকে ছেড়ে দেই।তাইতো নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করি যেদিন আপনি নিজ থেকে আমাকে ধরা দিবেন আমি আপনাকে ছাড়বোনা।আর আজকে ঐদিন এসে গিয়েছে।আজ আপনি কাঁদছেন আর আমি দেখছি।এখানের উপস্থিত সবাই দেখছে। আপনার এই ফেইসের পিছে যে কতটা কুৎসিত ফেইস লুকিয়ে আছে তা আজকে সবার সামনে এসেছে।”

তিহাম রিদিতার পা ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
“আমি বুঝতে পারিনি ও নিজেকে শেষ করে দিবে।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওকে অনেক খুঁজেছিলাম বিশ্বাস করো।আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না।”

রিদিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,
“শাস্তি ঐটা আমি দেওয়ার কে আপনাকে।আপনি তো প্রিয়তাকে ভালোবেসেছেন আমাকে না।সে তো অনেক আগেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে।নাহ সরি আপনি পাঠিয়ে দিয়েছেন।আপনার চোখে আমি ওর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।আর এই ভালোবাসার আগুনেই আপনি জ্বলে পুড়ে মরবেন।”
বলেই রিদিতা সেখান থেকে উঠতে নিলে তিহাম ওর হাত ধরে ফেলে।
“আমার ভালোবাসা না হয় প্রিয়তার জন্য কিন্তু তোমার ভালোবাসা কার জন্য? আমি তোমার চোখে যে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি ঐটা মিথ্যে হতে পারেনা।এই ভালোবাসা তো আর ১দিনে তৈরি হয়নি।যেদিন তুমি আমাকে প্রথম ছাদে ডেকেছিলে ঐদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাস।তাহলে এটার মানে কি? ”

রিদিতার বুকটা ধক করে উঠলো।সে হাত ছাড়িয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।

১ বছর পর। আজ রিদিতার বিয়ে। পুরো বাড়িতে হৈচৈ বেজে গিয়েছে।

রিদিতার বাবা তার মেয়ের রুমে এসে,
“মা তুই খুশিতো এই বিয়েতে? তো কোনো আপত্তি নেই তো।তোকে দেখে খুশি কেন মনে হচ্ছে না।তোর মা পুরোপুরি সুস্থ থাকলে আজ হয়তো সব আরো সুন্দর হতো।আমার এক মেয়েকে হাড়িয়েছি আমি।আরেক মেয়ে কষ্ট পেলে তা আমি মেনে নিতে পারবো না।” আফজাল সাহেব চশমা খুলে নিজের চোখ মুছলেন।”

“না বাবা আমি অনেক খুশি।তোমাকে ছেড়ে যাবো তো তাই একটু মন খারাপ।”

এর মধ্যে বর এসে গিয়েছে শুনে রিদিতার বাবা বাইরে চলে গেলেন বর কে বরণ করতে।

রিদিতার মনে যে এক চাপা কষ্ট আছে তার হয়তোবা কেউ কোনোদিন জানবে না।১ বছর আগে সে তার বোনের হয়ে প্রতিশোধ নিলেও নিজের কাছে হেরে গিয়েছে সে।

ঐদিনের পর থেকে রিদিতা তিহামের কোনো প্রকার খোঁজ নেয়নি। খোঁজ নিয়ে আর কি ই বা হবে।এসব ভাবতে ভাবতে রিদিতার ডাক পরলো।

৩ বার কবুল পড়ে রিদিতার বিয়ে হয়ে গেলো।কিন্তু তার মনের সেই চিন চিন ব্যাথা কোনোভাবেই কমছে না।

বাসর ঘরে বসে আছে রিদিতা।তুর্যের সাথে তার পরিচয় অদ্ভুত ভাবে।ছেলেটা বেশ ভালো।তাকে অনেক ভালোবাসে।এইসব ভাবতে ভাবতে রুমে দরজা লাগানোর আওয়াজ এলো। রিদিতা তাকিয়ে দেখলো তুর্য এসেছে।কিন্তু আজব ব্যাপার তুর্য রুমে ঢুকেই সোজা বারান্দায় চলে গেলো। রিদিতার দিকে একবার তাকালো ও না।

তুর্য সিগারেট ধরালো।কি যেনো ভাবছে সে,দেখে বুঝা যাচ্ছে না।

রিদিতার রাগ এবার আসমানে উঠে গেলো।কেননা তার সিগারেট পছন্দ না তা খুব ভালো করেই জানে তুর্য। রিদিতা উঠে যেয়ে তুর্যের পিছে যেয়ে দাড়ালো।
“আই তুমি জানোনা আমি সিগারেট পছন্দ করিনা।”

তুর্য রিদিতার দিকে ঘুরে ঠাস করে থাপ্পর লাগিয়ে দিলো।

“আমার ডিভোর্স চাই।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here