শেষটা_সুন্দর পর্ব_২

0
3271

#শেষটা_সুন্দর
পর্ব_২
ইভা রহমান

বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসলাম,,দেখলাম সেখানে মানুষ দিয়ে ভর্তি,,আমার পেছন পেছন আসলো মা,,এসেই শুরু হলো তার হাজার প্রশ্ন কেনো আমি কাল রাতে বাড়ি ফিরি নি কোথায় ছিলাম কাল সারারাত আমি,,মার প্রশ্নে চুপ করে থাকলাম,,ডাইনিং এ লোকজন দেখে বুঝতে পারছিলাম বাড়িতে রিফাত আঙ্কেলরা এসেছে,,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কালকের সেই নির্মম ঘটনাটা বাড়ি ফাঁকা হলে তারপর আমি মাকে খুলে বলবো,,

রোদেলাঃ আমি অবন্তী আপুর বাড়িতে ছিলাম মা,,

মাঃ অবোদের বাসায়!!কিন্তু অবো যে বললো তুই

রোদেলাঃ আমি বলতে মানা করেছিলাম,,আর আমি তো এরকম কতো আপুর বাড়ি গিয়ে থাকি বিশ্বাস না হলে ফোন করে দেখো আপুকে

মাঃ তোকে আমি বিশ্বাস করি রোদ,,কিন্তু একবার ফোন টা তো অন্তত ধরে বলবি যে তুই,,কতো চিন্তায় ছিলাম আমি আর তোর বাবা জানিস____আচ্ছা ওসব বাদ দে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় তো,,অভ্র আসছে তোকে দেখতে চাইছে

রোদেলাঃ অভ্র ভাইয়া ফিরেছে কানাডা থেকে,কবে!!কোথায় আমি তো তাকে নিচে দেখলাম না

মাঃ ওয়াশরুমে ছিলো তাই তোর চোখে পড়ে নি_

রোদেলাঃ আচ্ছা____ তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি

মাঃ রোদেলা!!

রোদেলাঃ হ্যা মা

মাঃ তুই কিছু লুকোচ্ছিস না তো আমার কাছে?

রোদেলাঃ কি লুকোবা মা__যাও নিচে রাতে কথা আছে তোমার আর বাবার সাথে

মাঃ হুম তোর সাথেও আমাদের কথা আছে মা,,অভ্র তো ফিরলো এবার তুই হ্যা বললেই তোদের দুজনের চার হাত এক করে আমি আর তোর বাবা একটু মাথা থেকে বোঝাটা হালকা করতে চাই।

রোদেলাঃ আমি তোমাদের বোঝা তাই না মা।

মাঃ ধুর পাগলি,,আমি সে অর্থে কথা টা বলি নি,,সব মা বাবাই চায় তাদের মেয়েকে একটা রাজপুত্তুরের হাতে তুলে দিতে আর আমার মনে হয় অভ্র কোনো দিক থেকে কোনো রাজপুত্তুর থেকে কম না__কি ঠিক তো

রোদেলাঃ ধ্যাত মা যাও তো তুমি

মাঃ যা মেয়ে তো আমার অভ্রর কথা শুনেই লজ্জায় পুরো লাল হয়ে যাচ্ছে,,,আচ্ছা তুই আয় আমি নিচে গিয়ে দেখি কার কি লাগছে

রোদেলাঃ হুম

মা চলে যেতেই গেট লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় দুম করে এসে বালিশ মুড়িয়ে কেঁদে উঠলাম আমি,,এই প্রথম আমি মাকে মিথ্যা বললাম,,তাও আবার এমন একটা জিনিসের জন্য যেটায় কোনো দোষ ছিলো না আমার____ঠিক করলাম অভ্র ভাইয়ারা বিদায় নেবার সাথে সাথেই মা বাবাকে সব খুলে বলবো তাই মনে সাহস জুগিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা সুন্দর জামা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে থাকলাম আমি,,হঠাৎই গেটে নক করলো অভ্র ভাইয়া,,অভ্র ভাইয়ার কন্ঠে সেই রোদেলা ডাক নিমিষে পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো আমার,,ছোট থেকে অভ্র ভাইয়ার সাথে বেড়ে ওঠা আমার,,ছোট বেলার খেলার সঙ্গী,,সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করার একমাত্র মানুষ,,ছোট বেলায় নাকি অভ্র ভাইয়া অভ্র ভাইয়া করে আমি সবার মাথা শেষ করে দিতাম কিন্তু এখন,,এখন অভ্র ভাইয়া সামনে আসলেই সব কথা ফুরিয়ে আসে আমার__তার কারণ অবশ্য অভ্র ভাইয়া নিজে,,ভাইয়ার যেদিন এস এস কম্পিলিট হয় সেদিন ভাইয়া আমাকে ডেকে বলে উনি নাকি আমাকে ভালোবাসে,,শুনেই সেদিন পুরো হতভম্ব হয়ে গেছিলাম আমি,,আমার মনে ওনার জন্য ভালোলাগা কাজ করলেও এভাবে ভালোবাসার কথা মনে আসে নি কখনো আমার,,ভাইয়াকে সেদিন আমি না করে দিয়েছিলা, বলেছিলাম আমি এখন পড়াশোনা তে ফোকাস করতে চাই অন্য কিছু ভেবে এখন সময় টা নষ্ট করার মতো বয়স হয় নি আমার,,ভাইয়া মুচকি হেঁসে উওর দিলো সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে,,দরকার পড়লে সারাজীবন করবে!!

হ্যা ভাইয়া আমার জন্য অপেক্ষা করেছে আজো করেছে,,উচ্চ শিক্ষার জন্য বাহিরে পড়তে গিয়েও সে আমার অপেক্ষা তে এতো দিন ছিলো,,আজ দু বছর তার সাথে আমার দেখা হবে আমার,, কি করে দাঁড়াবো আমি তার সামনে,,কি দিয়ে শুরু করবো সব কথা!!
________________

জ্যামে বসে কপাল ভাঁজ করে ট্রাফিক সিস্টেম কে হাজার টা বাংলা গালি দিতে ব্যস্ত আমার শিশির সাহেব,,তার বিরক্তির কারণ গত আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি তার যে জায়গায় সে জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে,,

শিশিরঃ What the_____তুমি জাস্ট ইমাজিন করো আহির এখন কোনো এ্যাম্বুলেন্সে সিরিয়াস কোনো পেশেন্ট আঁটকে পড়লে তার এই মুহুর্তে ঠিক কি অবস্থা হতে পারে??

আহিরঃ কি আর বলবো স্যার,,এটাই এখন ঢাকা শহরের নিত্যদিনকার রুটিন,,মানুষ এতেই অভ্যস্ত_____তা স্যার কি চেম্বার দিয়ে সোজা বাড়িতে ফিরবেন না আজকেও নিষিদ্ধ পল্লীর ওদিকে একবার

শিশিরঃ মা আসছে আজ আহির,,কতোবার বলবো তোমাকে এই কথা

আহিরঃ সরি সরি,,একদম খেয়াল ছিলো না___তা ম্যাডাম কতোদিন থাকবে বাড়িতে কিছু বলেছে

শিশিরঃ উনি আসে ওনার শখে শখে যায়ও ওনার মর্জিমত,,উনি কি কখনো শুনে আমার কোনো কথা

আহিরঃ এটা কিন্তু আপনি ঠিক বললেন না স্যার,,ম্যাডাম কিন্তু আপনার সব কথা শুনে,,সব সময় যে টুকু যা পারে ওটা দিয়ে আগলে রাখে আপনাকে

শিশিরঃ ওখানেই তো আঁটকে আছি আমি আহির,,না হলে এই শিশির শাহরিয়ার এর আরো কতো খারাপ দিক তুমি দেখতে পারতা

আহিরঃ আরো খারাপ দিকটা আসলে ঠিক কি স্যার

শিশিরঃ একসাথে বিছানায় দশটা মেয়ে?!!!!কি হবে না আহির

আহিরঃ আপনি না স্যার

শিশিরঃ কি করে যে একটা মেয়ে কে নিয়ে থাকো তুমি আহির,,বউ পাল্টাও বুঝলা দেখবা একেক টা মেয়ের স্বাদ একেক রকম

আহিরঃ না স্যার,,আমি একটাতেই সন্তুষ্ট

শিশিরঃ সে এখন বলছো,,পরে কিন্তু___তবে তুমি চাইলে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে আমি মেয়ে এনে তোমাকে দিতে পারি,,খরচা যা লাগে আমি দেবো__তুমি শুধু জাস্ট

আহিরঃ না বস মাফ চাই,,একটা নিয়ে বহু সুখে আছি আর এসবে যাইতে বলিয়েন না আপনি,,

শিশিরঃ তবে কি জানো আহির,,কাল রাতে যেই মেয়ে টার সাথে ছিলাম কি যেনো নাম??

আহিরঃ আমারো ঠিক নাম টা খেয়াল নেই স্যার

শিশিরঃ যাই হোক____আমার না উচিৎ হয়নি মেয়েটাকে ওভাবে নিয়ে এসে

আহিরঃ Are you guilty sir??

শিশিরঃ No আহির,,,,But ব্যাপার টা না__Actually কি বলো তো আমি তো যেসব মেয়েদের সাথে থাকি তারা তো টাকার বিনিময়ে,,বাট কালকে মেয়েটা কে অহেতুক আমি তুলে নিয়ে এসে____কি যে হয়েছিলো কাল পার্টিতে আমার

আহিরঃ টাকার কথা বলছেন স্যার___মেয়ে টা যদি এতোই সৎ হতো তাহলে আপনার টেবিলের উপর রেখে যাওয়া টাকা টা সে যাবার সময় নিয়ে যেতে পারতো কি!!

শিশিরঃ মেয়ে টা টাকা টা নিয়েছে!!

আহিরঃ ইয়েস আমি তো টেবিলে আপনার কোনো টাকা দেখতে পারি নি শেষে,,আর দেখতে পারি নি মানে মেয়েটাই নিশ্চয় যাবার সময়

শিশিরঃ (নিজ মনে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে ) যাবার সময় তো মুখে কতো কথা বলে গেলা রোদেলা মুনতাসীর??__সব মেয়েরাই এক তুমি সেটা আবার প্রমাণ করে দিলে,,টাকার জন্য অন্য একটা ছেলের বিছানা কেনো চাইলে তোমরা অন্য একটা মেয়ের সাজানো সংসারো নষ্ট করতে দ্বিধা বোধ করো না

সেদিন উনি প্রথমবার আমাকে ভুল বুঝলেন,,টাকা টা সেদিন আমি নেই নি টাকা টা নিয়েছিলো ওনারই বাড়িতে কাজ করা সালেহা আন্টি______!!!!!!!!!

____________________

হাতে টাওয়াল নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি,,অভ্র ভাইয়া গুটি গুটি পায়ে আমার কাছে আসতেই মাথা টা আরো নুইয়ে নিলাম আমি,,অভ্র ভাইয়া আসলো,,কিছু বলার আগে উনি আমার হাত টা ধরে সামনে বাড়িয়ে নিলো,,আর পড়িয়ে দিলো একটা খুব সুন্দর আংটি

অভ্রঃ এখনো সেই লাজুকই থেকে গেলি
রোদ,,যাওয়ার আগেও এরকম করে মুখ নামিয়ে ছিলি আর আজ এতোদিন বাদেও তোর সেই মাথা নুইয়ে রাখা__এই বিক্ষিপ্ত মন টাকে আরো কতো রঙে রাঙিয়ে দেয় জানিস!!______চোখ তুলে দেখ না একবার আমার দিকে,, কি ইচ্ছে করে না একবার নিজের অভ্র ভাইয়ার মুখ টা দেখি_____এখনো চুপ করে থাকবি??

রোদেলাঃ কেমন আছো তুমি?

অভ্রঃ যেমন টা রেখেছিস____তুই কেমন আছিস?

রোদেলাঃ ভালো আছি।

অভ্রঃ আমাকে দূরে সরিয়ে রেখে ভালো আছিস তাহলে তুই!!____যাগ ওসব কথা ছাড় এখন চটপট তৈরি হয়ে নে আমরা সবাই এখন বাহিরে বের হবো

রোদেলাঃ বাহিরে!!বাহিরে কেনো হঠাৎ

অভ্রঃ কাল আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসের দশ বছর কম্পিলিট হচ্ছে সেই উপলক্ষে বাড়িতে বিশাল পার্টি থ্রো করা হচ্ছে,, তাই আমি এখন তোদের কে নিয়ে শপিং মলে শপিং করতে যাবো,,পাটির জন্য নতুন জামা কাপড় কেনা হবে,,খাওয়া হবে মুভি দেখা হবে অনেক অনেক অনেক কাজ

রোদেলাঃ আমার যাওয়া টা কি খুব জরুরি ভাইয়া?

অভ্রঃ তুই না গেলে তো পাগলি বাড়ির কেউই আমরা যাবো না,আমাদের আনন্দ টা এভাবে মাটি করে দিস না প্লিজ

রোদেলাঃ ঠিক আছে,,তুমি নিচে গিয়ে দু মিনিট বসো আমি আসছি

অভ্রঃ হুম আয়

অভ্র ভাইয়া নিচে নেমে আসলো,,আমিও আসলাম রেডি হয়ে,,সবাই মিলে জড়ো হলাম বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে,,শুরু হলো সবার কেনা কাটা,,আমি শুধু মনে মনে দোয়া করছিলাম কখন এসব কেনাকাটা শেষ হবে কখন আমি বাড়ি ফিরে মা আর বাবা কে সব কথা খুলে বলবো,,

অভ্রঃ কি রে আমার রোদপাখির কি আজ মন খারাপ

রোদেলাঃ না তো ভাইয়া

অভ্রঃ আমাকে মিথ্যে বলছিস তুই রোদেলা,,গাড়ি থেকে দেখছি কেমন অন্য মনস্ক হয়ে আছিস,,এখানে এসেও কিছু কিনছিস না,,শরীর ঠিক আছে তোর

রোদেলাঃ হ্যা আমি একদম ঠিক আছি,,আসলে কিছু মন মতো পছন্দ হচ্ছে না তাই জন্য

অভ্রঃ আচ্ছা বুঝেছি,,দাঁড়া একটু তুই

বলেই অভ্র ভাইয়া আমাকে নিয়ে একটা শাড়ির দোকানে গিয়ে অনেক গুলো শাড়ি থেকে বেছে বেছে একটা হলুদ রঙের শাড়ি চুজ করে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো

অভ্রঃ আমি সিউর তুই এই শাড়ি পড়লে পার্টিতে কেউ তোর থেকে মুখ ফেরাতে পারবে না___কি রোদেলা পড়বি তো শাড়িটা?

রোদেলাঃ ভাইয়া আমি!!

অভ্রঃ কখনো তো কোনো অনুরোধ তুই রাখিসনি আমার,,এটা রাখ অনন্ত

ভাইয়ার রিকুয়েষ্ট আমি ফেলতে পারলাম না,,ওনাকে সব কিছু তে আমি না না করে আসছি সবসময়,,আজ না হয় একবার হ্যা করলাম,,তাতে যদি একটু খুশি হয় মানুষ টা,,শাড়ি টা আমার হাতে দিয়ে উনি বললো মা দের সাথে গিয়ে দাঁড়াতে উনি টাকা টা পে করে আসছে____আমি একটা হাসি দিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে ট্রায়াল রুমের সাইড দিয়ে হেঁটে আসছিলাম,,আচমকা একটা হাতের টানে চলে আসলাম ছেলেদের একটা ট্রায়াল রুমের ভেতরে,,আমি চিৎকার করার আগেই মানুষ টা আমার মুখ চিপে ধরলো,,হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে রাখলো,,চোখ খুলে তাকাতেই দেখলাম মানুষ টা আর কেউ না কাল রাতের সেই হায়না টা,,যার হিংস্রাতক আক্রমনের ব্যাথা আজকেও আমার শরীর জুড়ে আছে!!!!____উনি আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে আমার বুকের নিচে কোমড় বরাবর হাত রাখতেই ঘৃণায় ভেসে গেলাম আমি,,মন তো চাই ছিলো চিৎকার করে করে লোক জড়ো করি,,কিন্তু লাভ কি তাতে,সম্মান যা যাবার সেটা তো আমার যেতো উনার মতো প্রভাবশালি লোক কে তো পুলিশো মাথায় নিয়ে ঘুরে!!

শিশিরঃ তাহলে মিস রোদেলা মুনতাসীর তুমিও প্রমাণ করে দিলে তো সব মেয়েরাই টাকার কাঙাল

রোদেলাঃ মুখ সামলে কথা বলুন,,সেদিন আমি আপনার বাড়িতে ছিলাম বলে কিছু বলি নি কিন্তু আজ আপনি যদি আমার সাথে কোনো ধরনের অসভ্যতামি করেন আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না

শিশিরঃ ইসসস,,কি তেজ দেখো___কাল করার সময় এই তেজ টা কোথায় ছিলো রোদেলা মুনতাসীর,,একটু দেখাতে পারতে আমি তাহলে আর একটু বেশি ফিল নিয়ে you know

রোদেলাঃ ছিঃ একটা মানুষ কি করে এতো নোংরা হতে পারে,,জানেন আপনাকে দেখলেই আমার এখন বমি আসে

শিশিরঃ যা কনসিভ করে ফেললে নাকি,,এতো বমি এখনি

ওনার কথায় রাগে মাথা পুরো গরম হয়ে আসলো আমার,,ওনার হাত ছেড়ে যেতে ধরবো ওমনি উনি আমাকে পেছন থেকে দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে পেছন দিক থেকে আমার সামন জড়িয়ে ধরে আমাকে আঁটকে দিলেন,ওনার সাথে দেওয়ালে মিশে যেতে থাকলাম আমি,,ওনার গরম নিশ্বাস এসে পড়তে শুরু করলো আমার ঘাড়ের নিচে বুকের উপর!!

শিশিরঃ টাকা গুলো নেবার সময় এই এতো সততা কোথায় ছিলো তোমার?আমি না হয় খারাপ আমাকে দেখলে তোমার বমি আসে কিন্তু তুমি

রোদেলাঃ কি করছেন আপনি,,ছাড়ুন আমাকে,,আমার দম বন্ধ লাগছে

উনি আমাকে ছাড়ার বদলে আরো জোরে করে ওনার সাথে লেপ্টে ধরে দেয়ালে ঠেসে ধরলেন,,এক হাত দিলেন ঠিক আমার বুক বরাবর নিচের দিকে,,আর এক হাত রাখলেন আমার গালে!!

রোদেলাঃ আমার কষ্ট হচ্ছে,,একটু বুঝুন

শিশিরঃ you know তোমাকে একটু হলেও আমি অন্য রকম ভেবেছিলাম but তুমিও আমার সেই ভুল ভেঙে দিয়েছ রোদেলা মুনতাসীর,,তুমি প্রমাণ করে দিয়েছ মেয়েদের জায়গা শুধু বিছানায়

রোদেলাঃ আমি আপনার কোনো টাকা নেই নি,,দেখুন গিয়ে অন্য কেউ সেই টাকা গুলো সরিয়ে___ছাড়ুন আমাকে

শিশিরঃ জাস্ট শাট ইউর মাউথ,,আমার বাড়ির মেড সার্ভেন্টরাও তোমার চাইতে বেটার ক্লাসের,, ওদের এই তোমার মতো টাকার প্রয়োজন নেই___কি এটা হাতে,,কোন ছেলেকে ফাঁসিয়ে এসব কিনলে নাকি আমার সেই টাকা দিয়ে

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার ব্যাগ থেকে শাড়ি টা বের করে ওনার জুতার তলায় পিশে দিলেন,,মুহূর্তে কান্নার মেঘ এসে জমা হলো আমার চোখে অভ্র ভাইয়ার দেওয়া জিনিস উনি এভাবে ওনার জুতার তলাতে,,কান্নার সাথে সাথে রাগে পুরো একাকার হয়ে শাড়ি টা ওনার পা থেকে তুলে পর পর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম আমি ওনার গালে!!

রোদেলাঃ আপনার চরিত্র যেমন নীচ আপনার চিন্তা ভাবনাও ঠিক ততোটাই নীচ শাহরিয়ার সাহেব,,এদিকে চিকিৎসা করে মানুষকে বাঁচান আর অন্যদিকে এভাবে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেন আপনি,,ছিঃ

আমার কথায় উনি আর কিছু বললেন না চুপ হয়ে বেড়িয়ে পড়লেন,,আমিও শাড়ি টা ভাঁজ করে এদিক সেদিক দেখে সামনে হাঁটতে শুরু করলাম।

____________________

আহির ভাইয়ার বুকে মাথা দিয়ে দিনের ক্লান্তি টুকু মুছতে ব্যস্ত প্রিয়ন্তি আপু,,সারাদিনের ব্যস্ততায় এই রাতের সময় টুকু শুধু আহির ভাইয়া প্রিয়ন্তি আপু কে নিজের কাছে পায়,,তাই সে চেষ্টা করে এই পুরো সময় টা সে তার প্রিয়ন্তি কে উজার করে ভালোবাসুক,,আর সব চাইতে মজার বিষয় প্রিয়ন্তি আপুও না ঘুমে জাগ্রত থাকে শুধু তার আহিরের মুখ থেকে প্রিয় ডাক টা শোনার জন্য❤️

আহিরঃ জানো প্রিয় স্যার আজকে আমাকে কি অফার দিয়েছে

প্রিয়ন্তিঃ কি

আহিরঃ বলেছে বউ পাল্টাতে,,নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়ে এনে এক একটা মেয়ের স্বাদ উপভোগ করতে

আহিরের ভাইয়ার কথায় প্রিয়ন্তি আপু ওনার বুক থেকে মুখ তুলে তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠলেন,,আহির ভাইয়া আপুর সেই রাগান্বিত মুখ দেখে ফিক করে হেঁসে দিয়ে প্রিয়ান্তি আপুর কপালে একটা স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন❤️

আহিরঃ আরে আমার প্রিয় টার তো দেখছি রাগ হচ্ছে খুব

প্রিয়ন্তিঃ রাগ হবে না,,এটা কোন ধরনের কথা আহি!!তুমি তোমার বস কে কিছু বলতে পারো নি কেনো সে সময়

আহিরঃ বলেছি,,বলেছি আমি আমার এই প্রিয় কে নিয়ে খুব সুখে আছি অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে সেই সুখ টাকে নষ্ট করতে পারবো না স্যার

প্রিয়ন্তিঃ শুধু এতটুকুই,,তোমার উচিৎ ছিলো ওনার মুখের উপর রিজাইন লেটার দিয়ে এই চাকরি টা থেকে বেড়িয়ে আসা?

আহিরঃ ধুর পাগলি,,তা বললে হয়,,সংসার চালাবো কি দিয়ে তখন,,কে দিবে এই অক্ষম কে একটা চাকরি বলতে পারো

প্রিয়ন্তিঃ তাই বলে এরকম একটা লোকের আন্ডারে তুমি কেনো

আহিরঃ এরকম লোক বলছো,,আমাদের দুই ছেলে মেয়ের এই পড়াশুনার খরচ কে চালাচ্ছে প্রিয়,,একবার ভাবো,,তোমার এই আহিরের কি যোগ্যতা আছে তার ছেলে মেয়ে কে এতো নামি দামি প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর

প্রিয়ন্তিঃ আমি বুঝি আহির,,কিন্তু তোমার বসের এই মেয়ে নিয়ে এসব,,আমার একদম ভালো লাগে না বিশ্বাস করো,,এসব শুনলেই মনে হয় লোকটা একটা খুবই জঘন্য লোক,খারাপ লোক!!

আহিরঃ খারাপ না প্রিয়ন্তি,,উনার মতো মানুষ হয় না____ওনার সেই জীবনের কালো অধ্যায় গুলোর সাক্ষী ছিলাম আমি,,কি করে উনি____জানো প্রিয় আমি আমার মোনাজাতে দু হাত পেতে সবসময় শুধু একটাই দোয়া করি স্যারের জীবনে যেনো এমন একজন আসে যে তাকে ভালোবাসার আসল মানে টা বুঝতে শিখায়,,মেয়েদের কে সম্মান করতে শেখায়,,সব মেয়ে রা এক না এই বোধ টা ওনার মাঝে তুলে আনে,,,,,আর সব থেকে বড় বিষয় মেয়েটা যেনো তাকে বাবা হবার ভয় টা থেকে বেড়িয়ে আনে!!!!!!!___দেখো একদিন আমার এই দোয়া টা ঠিক সৃষ্টিকর্তা কবুল করবেন❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here