#শেষটা_সুন্দর
পর্ব_৪
পুলিশ যে ওনার সাথে দেখা করে ওনার পায়ের ধুলো নিতে ব্যস্ত হবে এটা আমার নতুন করে আর জানার কিছু ছিলো না,আমি জানতাম ওনার মতো প্রভাবশালি লোককে পুলিশ কেনো উপর মহলো মাথায় বসিয়ে রাখে,তাই নিরুপায় হয়ে বাবা,রিফাত আঙ্কেল সবাইকে একটা সময় হার মানতে হলো,হ্যা তবে ফআইআর করায় ওনাকে এক ঘন্টার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করাতে আমার সাথে থানায় আসতো হলো,কিন্তু লাভ আর কিছুই হলো না আমরা সবাই বাড়ি ফিরে আসতেই উনি ছাড়া পেয়ে ওনার চেম্বারে ডিউটি করতে চলে গেলেন!!
তবে ওনাকে যে এক ঘন্টা বাবা লকাপে রাখতে পারছে এতেও অনেক শান্তি বাবার,,তার মেয়ের সাথে করা অন্যায়ের দোষী কে যে তিনি একটু হলেও শাস্তি দিতে পেরেছেন এতেই খুশি উনি,,,,বাবা হয়তো আরো উপরে যেতো কিম্তু অভ্র ভাইয়ার মা একটু বেশি ঝামেলা করাতে আমি বললাম থাক,,ভুল টা আমারি এ যুগের মেয়ে হয়ে আমি কেনো বোকার মতো চুপ ছিলাম জানি না,, আমি যদি প্রথম দিনই ওনার নামে এই মামলা টা করতাম তাহলে হয়তো প্রমাণ করতে পারতাম যে উনি আমার সাথে,,যাক বাড়িতে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় এ বিষয়ে আর কেউ কোনো কথা তুলবে না,,অভ্র ভাইয়ার সাথে বিয়ের সব পাকা কথা শেষ হয়ে আসে আমার,,কথা হয় দু মাসের মধ্যে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা টা শেষ হয়ে আসার সাথে সাথেই আমি আর অভ্র ভাইয়া বিয়ের পীড়িতে বসবো।
কিছু দিন যেতেই নিজেকে শক্ত করে আবার নিত্যদিনের কর্মে নিজেকে ব্যস্ত করে নেই,,এক সপ্তাহ বাদে বোর্ড পরীক্ষা,তারপর বিয়ে আপাতত,,অভ্র ভাইয়ার নির্দেশে পরীক্ষা টাতেই ফোকাস করতে থাকি,অভ্র ভাইয়ার কড়া নির্দেষ বউ কে তার একদম ভালো রেজাল্টের অধিকারী হতে হবে নয়তো সে কিছুতেই ফেল করা স্টুডেন্ট কে ঘরে তুলবে না উমহুম।
__________________
বাসবি শাহরিয়ার আমার শ্বাশুড়ি মা,,শ্বাশুড়ি বউ মা বললে ভুল হবে বলতে পারেন তার সাথে আমার সম্পর্ক একদম মা মেয়ের মতো,,আমাদের মা মেয়ের খুনসুটি না হয় আর কিছু পর্ব পরে আপনারা দেখবেন,ওনার জন্যেই সেদিন আমি আর শিশির এক হয়ে এতো টা দূর আসতে পেরেছি,নয়তো!!___গত এক সপ্তাহ হলো মা ওনার বাড়িতে এসেছে,আর মার সামনে আমার শাহরিয়ার সাহেব আবার একদম শান্ত সিস্ট ভদ্র একটা বাচ্চা,,যেনো নোংরামো নামক জিনিস টা উনি জানেনই না।
বাসবিঃ দেখি বড় করে হা কর তো এবার,,নিজের দিকে কোনো খেয়াল নেই কি বানিয়েছিস চেহারা টার অবস্থা,,শুখিয়ে একবারে
শিশিরঃ আ মা,,আর কতো খাবো একটু আগে তো রুটি নিয়ে এসে খাওয়ালে
বাসবিঃ হ্যা তো,,মানুষকে গিয়ে দেখ যারা তোর মতো এতো পরিশ্রম করে তারা মিনিটে মিনিটে এটা খাচ্ছে ওটা খাচ্ছে,,খাওয়ার কি শেষ আছে তাদের
শিশিরঃ হুম এখন তো এই যত্নআত্তি করছো তার পর তো কিছু দিন পর আবার আমাকে ফেলে রেখে চলে যাবা,,তখন,,তখন তোমার এই রাজা কে এভাবে কে দেখে রাখবে শুনি
বাসবিঃ তোকে তো আমি কতো বলি আমার সাথে ফিরে চল কিন্তু না ওনার তো আবার আলমারি ভর্তি করে করে টাকা ইনকাম করতে হবে না,,,,দেখি বড় করে মুখ খুল,,,,এতো টা টাকা করে ফেললি এ বয়সে তা সেগুলো কোন বয়সে শেষ করবি শুনি।
শিশিরঃ টাকাই তো সব মা,,টাকা ছাড়া এই যুগে কারো দাম আছে,,টাকা দিয়ে সব কেনা যায় মা সব_____মনে আছে মা আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার ফির জন্য জাস্ট ৫টা হাজার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে তুমি সবার দরজায় দরজায় গিয়ে কি করে টাকা ভিক্ষে চেয়েছিলো,,কেউ ২০০ কেউ ১০০ কেউ বা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো ৫০টাকা,,Can you imagine মা just ৫০টাকা___তাও আবার তোমাকে দিয়ে এক বালতি কাপড় ধুইয়ে নিয়ে!!_____আমি সেসব দিন ভুলিনি মা,,সেই দিন গুলোর প্রত্যেকটা কথা প্রত্যেকটা অপমান আজো সব স্পষ্ট ভাবে আমার মনে গেঁথে আছে,,তুমি শেষে গিয়ে তোমার শেষ সম্বল গলার হাড় টা ব্রিকি করে আমাকে মেডিকেলের জন্য কোচিং করতে ভর্তি করিয়ে দিলে!!_____আর তুমি বলছো এতো টাকা জমিয়ে কি করবো আমি,,,আমার আরো টাকা চাই মা অনেক টাকা ঔ সব মানুষ গুলোর মুখে টাকা ছুঁড়ে দিতে আমার আরো টাকা চাই!!
বাসবিঃ ?♀️?♀হেই রে আমি কি বলতে কি বলে গিয়ে আমার রাজা টাকে তো একদম রাগিয়ে দিলাম দেখছি,,,,,ঠিক আছে শান্ত হয়ে বস তো আমার কাছে,,,,,নে এই টুকু শেষ কর তো দেখি___এই এই এই___এই তো আমার সোনা ছেলে_____হ্যা তুই টাকা জমাবি ঠিক আছে কিন্তু বয়স তো হয়ে আসলো এবার বিয়ে সাধি করে এই মা টাকে একটা নাতি নাতনির মুখ ও তো দেখাতে পারিস নাকি
শিশিরঃ oh মা প্লিজ,,Not again___আমি তোমাকে আগেই বলেছি এ সব বিয়ে বাচ্চা সংসার এগুলোতে আমি বিলিভ করি না___তুমি জাস্ট প্লিজ এসব নিয়ে আমাকে আবার ফোর্স করো না
বাসবিঃ কি জোর করবো না হ্যা কি করবো না,,বয়স হয় নি তোর,,এই এই তোর এতো টাকা কে খাবে হ্যা__আমি গ্রামে চলে গেলে কে নেবে তোর যত্ন,,একটা বিয়ে করে বউ আনবি তাহলে না এই মা টার একটু টেনশন কমে
শিশিরঃ মা তোমার স্কুল শুরু হয়েছে না,,আমি কাল তোমাকে ফ্লাইটের টিকিট বুক করে দেবো যাও গিয়ে ওখানে বাচ্চা দের পড়াও কি করে টাকা ইনকাম করে সেই টাকা গুলো বিয়ে করে বাচ্চা নিয়ে খরচ করতে হয় সেগুলো শেখাও
বাসবিঃ মা কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস তুই রাজা????
শিশির’ হ্যা দিচ্ছি যাও
বাসবিঃ আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলবো না শিশির
শিশিরঃ একটু পরেই চা নিয়ে এসে আবার গল্প দেবা আমি জানি??
বাসবিঃ এভাবে তোর মাকে অপমান করছিস?????
শিশিরঃ হুম করছি
মা ওনার সাথে এক প্রকার হেরে গিয়ে ওনার দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন??
বাসবিঃ তুই কি নীলিমা কে পছন্দ করিস,,আমি কথা বলবো নীলির বাবার সাথে
মার প্রশ্নের উওরে উনি মাকে ওনার পাশে বসিয়ে মার হাত দুটো ধরে শান্ত গলায় মাকে বুঝাতে থাকলেন
শিশিরঃ_______নীলিমা আমার জাস্ট ভালো বন্ধু মা,,আমি কখনো নীলিমা কে ঔ চোখে দেখি নি,,আর নীলিমা আমার থেকে অনেক বেটার ছেলে ডিজার্ভ করে মা
বাসবিঃ কথা বলে দেখতে তো সমস্যা নেই
শিশিরঃ মা আমি না বিশ্বাস কর এই সব বিয়ে বাচ্চা এগুলো ভয় পাই,,কোনো বাচ্চার বাবা হতে তো আরো,,যদি আমিও আমার সন্তানকে ঔ লোকটার মতো
বাসবিঃ কেনো তুই তোর সাথে তোর বাবার তুলনা করছিস রাজা,,তোকে দেওয়া আমার শিক্ষে টা কি এতোই ঠুনকে যে তুই ও তোর বাবার মতো নিজের ছেলে মেয়ে কে??
শিশিরঃ Calm down Calm down মা রিলাক্স,,আমি তা বলি নি মা_____আমাকে আর একটু সময় দেও মা,,আর একটু
বাসবিঃ ঠিক আছে,,কিন্তু আর একটুই হ্যা
মার গাল দুটো টেনে দিয়ে উনি একটা হাসি দিলেন
শিশিরঃ এই তো আমার বেস্ট মা,,চলো আজ আমি তোমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো আর এত্তো গুলো শপিং করবো তোমার ছোট মেয়ে তো আবার লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই!!
__________________
দেখতে দেখতে প্রায় চারটা পরীক্ষা শেষ হয়ে আসলো,,আজ কেমিস্ট্রি পরীক্ষা দিতে সেন্টারে যাচ্ছি কিন্তু পথে ঘটে এক বিপদ,,জ্যাম তো আছে আছেই সাথে অভ্র ভাইয়ার বাইক টাও মাঝ পথে Accident করে যাচ্ছে তাই অবস্থা,,ঘটনা স্বরপ পরীক্ষা সেন্টারে পৌঁছাতে আমার পাক্কা এক ঘন্টা লেট?♀️?♀️
যেই কলেজে আমার সেন্টার বসেছে সেই কলেজের হেড স্যারের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি আমি,,ভেতরে চলছে আমাকে নিয়ে এখন তারা ঠিক কি করবে পরীক্ষা দিতে দেবে না দেবে না,ম্যাজিস্ট্রেট তো সোজা বলে দিলো এই মেয়ে কে পরীক্ষার সীটে উনি কিছুতেই বসতে দেবেন না,,যেই মেয়ের সময় সম্পর্কে কোনো ধারণা সে কি না আসছে বোর্ড পরীক্ষা দিতে,,এদিকে বাবা আমাদের কলেজের হেড স্যারকে ঘটনাটা জানিয়ে তড়িঘড়ি করে বললেন আমার মেয়ে টার কি অবস্থা একটু দেখুন গিয়ে,,হেড স্যার এসেও খুব একটা লাভ হলো না,,চলতে থাকলো বাক বিতন্ডা,,বুঝলাম আজ বুঝি আমার আর পরীক্ষা দিয়ে বোর্ড পরীক্ষায় পাস করা হলো না?♀️?♀️
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া দরুদ পড়ছি,,হঠাৎই আমার সামন দিক দিয়ে আহির ভাইয়া হেঁটে গেলো,ওনাকে দেখেই পুরো কেঁপে উঠলাম আমি,,কি করছে উনি এখানে আবার,উনি কিছু দূর গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চা পানি সার্ভ করা আঙ্কেল টা কে কি যেনো একটা জিজ্ঞেস করলেন,আঙ্কেল টা আমাকে ইশারা করে কি জানি বললো ওনাকে__আমি আর ওদিকে তাকালাম না চোখ নামিয়ে এদিকে কি হচ্ছে সেটা দেখায় মনোযোগ দিলাম,,মিনিট পাঁচ এক পরে আহির ভাইয়া আসলো এসে আমার সামন দিয়েই হেড স্যারদের রুমে ঢুকে প্রথমে যেই সেন্টারে সীট পড়েছে তার হেড কে ফোন ধরিয়ে দিলেন তারপর ম্যাজিস্ট্রেট লোক টাকে ফোন ধরিয়ে দিতেই উনি সবাইকে চুপ হতে বললেন,,কিছুক্ষণ বাদে আমাদের কলেজের হেড স্যার বেড়িয়ে আসলো এসে বললো মা তুমি বসো পরীক্ষা দিতে আর সমস্যা নেই,,স্যারের কথা শুনে আমি থ একটু আগে যেই ম্যাজিস্ট্রেট
আমাকে পরীক্ষা দিতে দেবে না বলে কি চিৎকার করছিলো তিনি হঠাৎ রাজি হয়ে গেলো কি করে??
রোদেলাঃ পরীক্ষা কি দেবো স্যার,,আর এক ঘন্টায় কি আমি প্লাস নাম্বার তুলতে পারবো আপনি বলুন??
হেড স্যারঃ সমস্যা নেই মা,তুমি পরীক্ষা জন্য তিন ঘন্টাই সময় পাবা,,তবে বোর্ডের ব্যাপার তো চেষ্টা করবা তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করার,,আর স্যার ম্যাডামরা তো আছে তোমাকে সাহায্য করতে
Whatttttttttt the ফাওওওও কথা????কথা গুলো তো শুনেই পুরো মাথা ঘুরে আসলো আমার,,পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে ভালো কথা,,তার উপর পরীক্ষা দিতে সময়ো দিচ্ছে পাক্কা তিন ঘন্টা,তার উপর বলছে স্যার ম্যাডামরা নাকি আছে আমাকে হেল্প করতে??কি হচ্ছে এসব,,,,,কি হচ্ছে হোক পরীক্ষা দিয়ে আসি আগে শান্তি মতো এটাই এখন আমার কাছে মুখ্য কাজ হু
___________________
সেদিন টা কোনো মতে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসলাম,,কে বা কার কথায় ম্যাজিস্ট্রেট রাজি হয়ে গেলেন আমরা কেউ জানি না,,তবে এই পরীক্ষার মতোই আরো কিছু অদ্ভুত ঘটনা গত ২বছর ধরে ঘটছে আমার সাথে,,এই যেমন ধরুন কেউ আমার নাম্বারে হঠাৎই হাজার টাকা লোড দিয়ে দিচ্ছে আবার হঠাৎই আমার কার্ডে কেউ ভরিয়ে দিচ্ছে হাজার টাকা,,কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না,,আজকের ঘটনার পর তো পুরো আরো মাথা নষ্ট হয়ে আসলো আমার আবার,,
আজ শেষ পরীক্ষা দিয়ে একটু রিলাক্স করে ফ্রেন্ড রা মিলে ফুচকা আইসক্রিম খেতে সামনের দিকে হাঁটছি,,রাস্তায় একটা ফকির দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি,,কি অবস্থা হয়ে আছে সেই বৃদ্ধা দাদি টার,,মনে হচ্ছে কতোদিন ধরে সে কিছু খায় না,,সবাই কে বললাম তোরা দোকানে গিয়ে অডার কর আমি আসছি,,সবাই চলে যেতে সামনে একটা দোকানে ঢুকলাম,,টাকা তো ছিলো পকেটে খুবই সামান্য ঔ ১০০,,হাফ প্লেট ফুঁচকা খেলেও যাবে ৩০ বাড়ি ফিরবো ২০আর থাকে ৫০,,৫০ দিয়েই হিসাব করে এক হালা কলা আর একটা পাউরুটি নিয়ে কিনে এনে বৃদ্ধা দাদি টার হাতে তুলে দিলাম,,উনি মন ভরে আমাকে দোয়া দিলেন,,আমি ওনার থেকে বিদায় নিয়ে সামনে হাঁটতেই কারো হাতের শক্ত টানে একটা গাড়ির পেছনের সীটে ঢুকে গেলাম আমি,,ঘটনা বুঝে চিৎকার করার আগেই দেখি আমার শাহরিয়ার সাহেব গাড়ির দরজা লাগিয়ে আমার গা ঘেঁষে বসে পড়লো,,ওনাকে দেখে চিৎকার করতে গিয়েও আমি চিৎকার টা ঠিক আজ করতে পারলাম না,,কিন্তু ওনাকে খুব রাগ ঝারতে শুরু করলাম,এদিকে গাড়ির দরজার কাঁচ গুলো ছিলো কালো কাঁচের বাহির থেকে ভেতরে কি হচ্ছে কেউ বলতে পারবে না!!
রোদেলাঃ কি হচ্ছে এসব,,এভাবে আমাকে গাড়িতে এনে বসানোর মানে কি??
আমার কথার উওরে উনি সীটে হেলান দিয়ে চোখ টা বন্ধ করে শ্বাস নিতে শুরু করলেন,,ওনার নিশ্বাসের শব্দ শুনে এটুকু বুঝতে পারলাম উনি হয়তো অনেকদিন ধরে নিজের মনের মধ্যে দম টাকে চেপে ধরে ছিলেন!!
রোদেলাঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি আপনাকে,,আমি কিন্তু এবার চিৎকার করবো___চুপ করে আছেন কেনো,,আমি যে আপনার বাড়িতে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিলাম আপনার এতে কোনো শিক্ষে হয় নি না,,এতো কিছুর পরো কোন সাহসে আপনি
আমি আর কিছু বলার আগে ওনার ফোন বেজে উঠলো,উনি চোখ খুলে ফোন টা রিসিভ করলেন,কথা শুনে বুঝলাম আহির ভাইয়া ফোন করেছে ওনাকে,উনি ভাইয়াকে বললেন চেম্বারে ফাইল রেখে যেতে একটু পর ওনার ওটি আছে ওটা শেষ করে এসে উনি ফাইল টা চেক করবেন,ফোন কেটে ফোন টা আবার নীল জিংকসের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে উনি এক হাতে ওনার মুখ টা পুরো মুছে নিলেন,,তারপর আমার দিকে তাকিয়ে উঠতেই ওনার চোখের সাথে চোখ মিলে গেলো আমার,আমি রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে
রোদেলাঃ আমাকে যেতে দিন,,নাহলে কিন্তু আমি এবার চিৎকার করবো____এই পরীক্ষার দুটো মাস কোনো ঝামেলা করেন নি ভেবে ছিলাম শুধরে গেছেন কিন্তু আপনি শুধরবেন কি করে আপনি কি মানুষ,,আপনি তো মানুষই না আপনি তো একটা,,ছিঃ
আমি থেমে যেতেই উনি আমার দিকে ঝুঁকে আসলেন,,আমি সরে যাবো কি তার আগে উনি আমাকে ওনার বাহুডোরে আগলে নিলেন,,আমার কপালে একটা স্নেহের পরশ বুলিয়ে উনি আমার ঠোঁট জোড়া পুরো নিজের দখলে নিয়ে নিলেন,,আর সব থেকে মজার জিনিস কি জানেন আজ আমি তাকে বাঁধাও দিতে পারছিলাম না,,না মন থেকে না শরীরে জোর দিয়ে!!!!
উনি ব্যস্ত আমার ঠোঁট জোড়া নিয়ে ওনার শান্তি মেটাতে,,যেন এগুলো আমার ঠোঁট না ওনার নিজের সম্পদ!!কি অধিকার তার__লেহনযুদ্ধে আমি আর পারছিলাম না ওনার সাথে,,দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার,,কিন্তু ওনার মনে আমার জন্য তো কোনো করুনা হচ্ছিলোই না সাথে উনি ওনার এক হাত দিয়ে আমার বুক থেকে শুরু করে পিঠে কোমড়ে এতোটাই গভীরভাবে স্পর্শ করতে শুরু করলেন যে আমার কলেজ ড্রেস পুরো নষ্ট হয়ে একাকার অবস্থা তো বটেই সাথে ওনার সেই স্পর্শ আমার বুকে পিঠে জ্বলুনি তুলে দিতে যথেষ্ট ছিলো!!!!
প্রায় ১০মিনিটের কাছাকাছি হয়ে আসছে উনি গাড়িতে বসে আমার সাথে এসব করে যাচ্ছেন,,আমি কিছু বলতেও পারছি না তাকে,,এমন না যে আমি বলতে পারবো না কিন্তু আমি চাইছি না বলতে,কি হচ্ছে আমার আজ কিছুই বুঝতে পারছি না আমি,একদিকে ঘেন্নায় গা ঘিনঘিন করছে অন্য দিকে ওনার চোখের দিকে তাকাতেই আমার সব কথা দলা পাকা দিয়ে উঠছে!!ওনার চোখে পানি আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কিন্তু উনি কাঁদছে কেনো??আর উনি কাঁদছে তো আমার কি আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি এতে!!এমনি দিন তো গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দেই আজ তো সেটাও পারছি না!!
একটা পর্যায় আর বেশি দূর আগাবার আগে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন,,হাতের উল্টো পিঠে নিজের ঠোঁট মুছে নিজ হাতে আমার জামা ঠিক করে দিলেন,,আমি শুধু জাস্ট রোবটের মতো বসে ওনার কান্ড দেখে যাচ্ছিলাম,,গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে উনি আমার মাথার চুল ঠিক করে দিয়ে ওনার সামনের সীটে রাখা সাদা কোর্ট টা এনে আমাকে পেছন দিক দিয়ে জড়িয়ে দিলেন!!
শিশিরঃ জামাকাপড় কি পড়ো না চিবিয়ে খাও কোনটা??___জামার পেছনের চেইন টা নষ্ট হয়ে পুরো পিঠ দেখা যাচ্ছে কোনো হুঁশ আছে তোমার সে দিকে___তোমার ফ্রেন্ড গুলোও কি তোমার মতো অন্ধ এসব দেখে একটু বলতে পারে না তোমাকে!!___Now just leave,,,,কি হলো যাও
রোদেলাঃ ছিঃ
একটা ঘেন্না ভরা চাহনি নিয়ে আমি ওনার গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম,স্বাভাবিক করে বুঝালাম কিছুই হয় নি আমার সাথে,,সাথে এটাও ঠিক করলাম আর কখনো যদি উনি আমার সাথে এরকম কিছু করে আমি ফোন বের করে সব রেকর্ড করে ওনাকে প্রমাণ সহ পুলিশে ধরিয়ে দেবো।
সবার সাথে ফুচকা খেয়ে আবার কলেজের দিকে হাঁটছি,,হাঁটতে গিয়ে নজরে পড়লো সেই বুড়ি দাদি টার উপর,আর ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম কে জানি ওনাকে কেক বিস্কুট থেকে শুরু করে নাস্তার যতো আইটেম আছে সব কিনে দিছে,,বুড়ি দাদি টা এখন মুখে এক বিরাট হাসি টেনে সেগুলো প্যাকেট করতে ব্যস্ত,যাগ দেখে শান্তি পেলাম কেউ তো আছে যে ওনার ক্ষুধা টা বুঝতে পেরে ওনাকে সাহায্য করলো,,মন থেকে অনেক দোয়া দিয়ে দিলাম মানুষ টাকে খুব ভালো হোক মানুষ টার কিন্তু যার জন্য একটু আগে খারাপ দোয়া চাইলাম সেই মানুষটার জন্যেই এখন ভালো দোয়া চাইছি এটা ঠিক বুঝে আসে নি আমার তখন?♀️?♀️?♀️?♀️
____________
আজ অভ্র ভাইয়ার সাথে এনগেজমেন্ট এর সব কাজ সম্পূর্ণ হয়ে আসলো আমার,,সামনের মাসের ২৫তারিখে বিয়ে হাতে সময় আছে মোটে আর বিশ দিনের মতো,,নিজের বিছানায় শুইয়ে আংটি টার দিকে এক মনে তাকিয়ে আমি অভ্র ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম,মানুষ টা সত্যি আলাদা এতো কিছুর পরো আমাকে কতোটা ভালোবাসে সে,,
অভ্র ভাইয়ার ভাবনায় ডুবতে যেতেই হঠাৎই এই রাতে কারেন্ট টা চলে গেলো,,কি করবো আমি এখন,,অবশ্য রুমের লাইট তো ওফই ছিলো মাথার উপর ফ্যান টা ঘুরছিলো এই যা,,তাই আর উঠে টর্চ না জ্বালিয়ে ওভাবেই শুইয়ে থাকলাম
আংটি টা ধরে চোখ বন্ধ করে আছি,,হঠাৎই কারো শরীরের ভারে কেঁপে ওঠে আমি চোখ খুলে চিৎকার করতে যাবো ওমনি মানুষ টা আমার মুখ চিপে ধরলো,,ওনার সমস্ত ভার দিয়ে দিলো আমার শরীরে!!
শিশিরঃ চুপ!!___ভূত না আমি,,মানুষ
ওনার কন্ঠস্বর আমার খুব চেনা,তাই সেটা চিনতে বিন্দু মাএ দেড়ি হলো না আমার,এতোক্ষণের কাঁপা কাঁপি টা থামিয়ে দিয়ে আমি এবার স্থির হয়ে ওনার দিকে তাকালাম,,কারেন্টাও চলে আসলো এর মধ্যে,,মাথার উপর নীল রঙের বাতি টাও জ্বলে উঠলো,,আর ফ্যান টা চলতে শুরু করলো নিজের ছন্দে,,এক হাত দিয়ে আমার মুখ থেকে ওনার হাত টা সারিয়ে দিলাম আমি,,এটাই মোখখম সুযোগ বাড়ি ভর্তি মানুষ এখন যদি আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করি কে বাঁচাবে এনাকে!!
শিশিরঃ ভুলেও চিৎকার করার চেষ্টা করবা না,,তোমার বাবার নেক্সট মানথ এর অপারেশন এর দায়িত্ব কিন্তু বোর্ড আমার হাতে দিয়েছে__সো যা করবা ভেবে কাজ করবা!!
ওনার কথায় সব কথা আমার গলার কাছে জমা বেধে গেলো,,একজন ডক্টর হয়ে উনি কি করে,,আমি জানি আমার বাবা শেষ হয়ে গেলেও এই লোকের থেকে কখনো অপারেশন করাবে না কখনো না,,কিন্তু বাবার যে হার্টের অবস্থা আমি বা মেয়ে হয়ে কি করে!!
রোদেলাঃ আপনি একজন ডক্টর হয়ে একটা পেশেন্ট এর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমাকে ব্লাকমেইল করছেন,,লজ্জা করে না আপনার
শিশিরঃ না
রোদেলাঃ করবেই বা কেনো মানুষের বাচ্চা হলে না করবে,আপনি তো একটা
শিশিরঃ জানোয়ারের বাচ্চা তাই তো
রোদেলাঃ ছিঃ
শিশিরঃ তা রোদেলা মুনতাসীর শেষ মেষ অর্থের প্রয়োজনে নিজেকে বিক্রি করে দিতেই হলো তো তোমাকে
রোদেলাঃ ঠিক করে কথা বলুন,,আপনি কিন্তু আপনার মাএা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন
শিশিরঃ তোমার বাবার বিজনেসের জন্য টাকার প্রয়োজন ছিলো সেটা তো আমার থেকেই নিতে পারতা তুমি তার বদলে না হয় একটা রাত আমার বিছানায় আবার
রোদেলাঃ কি বলতে কি চাইছেন আপনি
শিশিরঃ না তোমার বাবা তোমার বিয়ে টাকে শর্ত রেখে রিফাত বলে লোক টার থেকে কুড়ি লাখ টাকা নিয়েছে,,তা অভ্রর সারাজীবন বিছানার সঙ্গী হবার জন্য জাস্ট এতটুকু মূল্য তোমার রোদেলা মুনতাসীর!!
ওনার কথা শুনে আমি পুরো হতবাক হয়ে গেলেম,,বিজনেস পারপাসে এরকম অনেক লেনদেন রিফাত আঙ্কেল আর বাবার মধ্যে হয় কিন্তু বাবা আমার বিয়ে টাকে সামনে রেখে কুড়ি লাখ টাকা রিফাত আঙ্কেলের থেকে নিয়েছে মানে কি!!কি বলছে উনি এসব,,আর আমাদের ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে উনি কি করে এতো খোঁজ পেলো!!
রোদেলাঃ হ্যা বাবা টাকা নিতেই পারে,,রিফাত আঙ্কেলো তো বিজনেস পারপাসে এরকম কতো টাকা বাবার থেকে নেয় তাতে কি
আমার প্রশ্নের উওরে উনি শুধু হাসলেন,,কিছু না বলে ওনার মুখ ডুবিয়ে দিলেন আমার কাঁধের এক পাশে কানের নিচে চুলের ভাঁজে
রোদেলাঃ এসব কি করছেন আপনি,,আমার দরজা খোলা,প্লিজ ছাড়ুন আমাকে
শিশিরঃ আমি দরজা লাগিয়ে তারপর এসেছি
রোদেলাঃ কিন্তু এসেছেন কেনো আপনি,,আপনি তো একবার বলেছেন কোনো ইউস করা জিনিস নাকি আপনি দুই বার ইউস করেন না তাহলে কিসের লোভে এসেছেন আপনি আমার কাছে
শিশিরঃ থাকার জন্য আসি নি,,চলে যাবো আমি____রোদেলা(অস্ফুটে)
রোদেলাঃ_____
শিশিরঃ একটু তোমার বুকে মাথা রেখে জাস্ট আধা ঘণ্টা ঘুমাবো একটু রাখবা আমাকে তোমার বুকে!!!!
রোদেলাঃ____না
শিশিরঃ জাস্ট আধা ঘণ্টা
রোদেলাঃ কখনোই না,,কে আপনি,,আমার জীবনে আপনার মতো একটা হায়নার কোনো জায়গা নেই,আমি শুধু ঘেন্না করি আপনাকে জাস্ট ঘৃণা
উনি আমার কথায় রেগে গিয়ে আমাকে এক হাতে তুলে নিজে আমার পাশের বালিশে শুইয়ে আমাকে তার বুকে নিয়ে এসে ফেললেন,আমার ঘাড়ের ভেতর কানের নিচে মুখ ডুবিয়ে ওনার দু হাত আমার পিঠে রেখে জোরে করে আমার পিঠে হাত বুলাতে শুরু করলেন!!
শিশিরঃ আমি হায়না,আমি জানোয়ার আমি পশু আমাকে দেখলে ঘেন্না লাগে তোমার,,আর ঔ অভ্র অভ্র খুব ভালো তাই না,,অভ্র তো যেনো এসব কিছুই জানে না,,নিষিদ্ধ পল্লী কি খারাপ কাজ কি কিছুই বুঝে না ফিডার খাওয়া বাচ্চা অভ্র তাই না__এতো লোভ তোমার রোদেলা মুনতাসীর,,এতো লোভ,,এতো লোভ তখন সেই মুখোশের আড়ালে ভালো মানুষ কেনো সাজো তুমি সবসময় এতো ,,কেনো রোদ কেনো
বলতে বলতে উনি আবার আমাকে ওনার উপর থেকে এক পাশ করে নিচে নামিয়ে আমার উপরে উঠে গেলেন,,মুখে আসা চুল গুলো দ্রত হাতে সারিয়ে এক এক করে আমার পুরো মুখে ওনার ঠোঁটের নরম স্পর্শ এঁকে দিলেন,,আমি ওনাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেনো উনি এসব করছিলেন!!
উজানঃ কিসের অভাবে আমি তোমাকে রাখতাম রোদেলা মুনতাসীর,কিসের অভাব ছিলো আমার??
বলেই উনি আমার মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে এবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন,,জীবনে এই প্রথম আমি কোনো ছেলে মানুষকে কাঁদতে দেখলাম তাও আবার এরকম করে কাঁদছে যে একটা ছোট বাচ্চা কেও হার মানাবে!!!!,,ওনার চোখ দিয়ে জল পড়ছিলো ঠিক ঝড়ো বৃষ্টির মতো,,চোখ দিয়ে টপ টপ করা পানিতে আমার পুরো মুখ ভিজে গেলো নিমিষে,,তবুও ওনার কান্না থামছে না__কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে গিয়ে উনি আমাকে ওনার বুকের সবটা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন,,চুমু এঁকে দিলেন আমার বুক থেকে শুরু করে পায়ের পাতাতে অবধি!!❤️❤️❤️❤️❤️
উজানঃ I hate you রোদেলা মুনতাসীর I just hate you
বলেই উনি আমার উপর থেকে উঠে গেট খুলে বেড়িয়ে গেলেন,,আমি পুরো হতবাক হয়ে প্রায় অনেকক্ষণ বিছানায় বসে ছিলাম,,ওনার চোখের পানি দিয়ে এখনো আমার মুখ গলা সব ভিজেঁ আছে,,হুঁশ ফিরতে সোজা উঠে রুম থেকে বের হতে দেখি কেউ নি সবাই সবার ঘরে ঘুমাতে ব্যস্ত,,শুধু সদর দরজা টা হা মেলে খুলে রাখা!!
_____________
বিয়ের আর এক সপ্তাহ হাতে আছে,,সবাই ব্যস্ত কেনাকাটা সারতে,,আমার শরীর টা আজ দশ বারো দিন ধরে কেমন জানি খারাপ করতে শুরু করে,,আমি সেই খারাপ লাগার কারণ টা প্রথমে ঠিক ধরতে পারি না,,কিন্তু হঠাৎই সেদিন দু বার বমি করায় একটু সন্দেহ হয়ে আসলো আমার,, খেয়াল করতে থাকলাম আমি আগের মাসে পিরিয়ড মিস করেছি কি না কিন্তু পরীক্ষা বিয়ে সব মিলায় আমি কিছু মনেও আনতে পারছিলাম না,,,,এদিকে আপু আমাকে যে ঔষুধ টা দিয়েছিলো সেটাও তো আমি সময় পেরিয়ে তার পর খেয়েছিলাম,,মনে ভয় হতেই একটা প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ নিয়ে এসে কাউকে না জানিয়ে ঘরে বসেই টেস্ট করালাম,,আর আমার ভয় টাই সত্য হলো,,আমি কনসিভ করেছি!!