শেষটা_সুন্দর পার্ট_৬

0
2925

#শেষটা_সুন্দর
পার্ট_৬

আমার শরীরের অবস্থা দেখে মা খুব তাড়াতাড়ি রাতের খাবারটা শেষ করে আমাকে নিয়ে তার ঘরে শুইয়ে পড়লেন,,তিনি কিছুতেই শিশিরের নোংরা হাতে আমাকে তুলে দেবার মতো ইচ্ছে দেখাতে পারলেন না,,বাড়িতে আসার পর থেকে মা শিশিরের সাথে কোনো কথা বলে নি,,যে টুকু যা প্রয়োজন সব আহির ভাইয়া কে দিয়ে বলে নিয়েছেন,,মা আমাকে একদম নিজের মেয়ের মতো আগলে শুইয়ে আছেন,,আমিও চেষ্টা করছি মার সাথে হাসি মুখে কথা বলার

বাসবিঃ রোদ মা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিবি তো মা,,আমার ছেলে তোর জীবন নিয়ে যেভাবে নষ্টামো করেছে আমি তোর কাছে____

মা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন,,আমি মার চোখ মুছে দিলাম,,মা যে শিশিরের এই কাজে নিজে খুব লজ্জিত তা আমার বুঝতে বাকি নেই

রোদেলাঃ মা বলে ডাকছো আবার সেই মেয়ের কাছে ক্ষমা চাচ্ছ তুমি মা,,তুমি আর কেঁদো না মা,,শিশির আর কখনো এরকম জঘন্য কাজ করবে না আমি কথা দিচ্ছি তোমায়

বাসবিঃ আমি শিশির কে পুলিশে ধরিয়ে দেই মা,,আমি আমি নিজে সাক্ষী দেবো যে আমার ছেলে তোর সাথে

রোদেলাঃ না মা,,শিশির কে এভাবে শাস্তি আমি দেবো না,,,,দিতাম যদি আমার পেটে এই বাচ্চা টা না থাকতো,,আমি চাই না মা আমার বাচ্চা কখনো বড় হয়ে এটা জানতে পাক যে সে শিশির আর আমার ভালোবাসার মিলনে এই পৃথিবীতে আসে নি এসেছিলো,,,,তবে তোমার ছেলে আমার সাথে যা করেছে আমি এতো সহজে তাকে ক্ষমা করবো না মা,,,,ওনার শাস্তি তো হবেই

বাসবিঃ তুই ঔ শয়তানকে কি শাস্তি দিবি আমি জানি না,,কিন্তু আমি আর কখনো ওর সাথে কথা বলবো না কখনো না

মা সিদ্ধান্ত নিলেন উনি এ জীবনে আর কখনো শিশিরের সাথে কথা বলবেন না,,আমি মা কে জোর করলাম না,,মা আমাকে তার বুকে আগলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন,,একটা সময় পর মা আর আমি দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম,,শরীর ক্লান্ত ছিলো বলে ঘুম টা তাড়াতাড়ি এসে গেলো,,এর মধ্যে শিশির একবার এই রুমে উঁকি দিলেন,,দেখলেন আমি কেমন মাকে জড়িয়ে ছোট বাচ্চার মতো মা মেয়ে তে ঘুমিয়ে আছি,,শিশির গুটিগুটি পায়ে এসে আমার আর মার একটা সেই মুহুর্তের ছবি তুলে নিলেন,,ঘরের লাইট ওফ করে নিজের রুমে চলে গেলেন
__________________

রাত তখন দুটোর কাছাকাছি,,আমার ঘুম টা ভেঙে আসলো,,মাকে না ডেকে ওয়াশরুম গেলাম,,এর মধ্যে ঘুম টা চোখ থেকে উধাও হয়ে আসলো,,ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখলাম রুমের দরজাটা খোলা আছে,,সেটা লাগাতে গিয়ে দেখি রমজান কাকু ওনার রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নামছেন,,আমি একটু অবাক হলাম এই রাতে উনি জেগে জেগে কি করছেন আর রমজান কাকুই বা কেনো এতো রাতে,,মাকে একবার দেখে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে ওনার রুমের দিকে পা বাড়ালাম,,ওনার রুমের গেট টা খোলা ছিলো,,আমি পর্দা সরিয়ে উঁকি দিতে দেখলাম উনি পেছন ঘুরে নিজের খোলা পিঠের উপর কি জানি একটা মাখছেন,,আর মাখতে গিয়েই আস্তে করে চিৎকার করে উঠছেন,আমার কৌতূহল বাড়তেই আমি কখন যে আগাতে আগাতে ওনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম বুঝতে পারি নি,,

ওনার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছি আমি,,খুব গভীরভাবে ওনার পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকলাম,,বুঝলাম তখন মা ওনাকে ওভাবে মারার ফলে ওনার এখন এই অবস্থা,,সাদা পিঠ টা মার খাবার ফলে জায়গায় জায়গায় ছাল উঠে কোথাও লাল কোথাও কালো হয়ে আছে,,ইসস কি মার টাই না মা মেরেছে ওনাকে,,খুব মায়া হলো আমার ওনার উপর,,আমি তো আর ওনার মতো হায়না না আমি তো কত্তো ভালো,,মনে আমার অন্যের জন্য কষ্ট হবে এটাই তো স্বাভাবিক হু,,

আমি ওনাকে দাঁড়িয়ে দেখছি,,এদিকের কোনো হুঁশ নেই আমার,,উনি আর না পেরে পেছন ঘুরে সামনে ফিরতেই ওনার সাথে ধিম করে ধাক্কা খেলাম,,উনি আমাকে দেখে খানিকটা ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে গেলেন

শিশিরঃ রোদ তুমি!!___তুমি এই রাতে আমার ঘরে কি করছো রোদ??

ওনার কথায় হুঁশ ফিরে দেখলাম আমি এখন ওনার ঘরে দাঁড়িয়ে আছি,,মাথায় হাত চুলকে আমতা আমতা করতে শুরু করলাম আমি এই রাতে কেনো ওনার রুমে

রোদেলাঃ না ঔ আসলে

শিশিরঃ কি??___কিছু লাগবে তোমার?? শরীর ঠিক আছে,,মা কোথায়

রোদেলাঃ মা ঘুমোচ্ছে

শিশিরঃ ঘুমোচ্ছে! মা ঘুমোচ্ছে তা তুমি কি করছো এখানে??___মা তোমাকে আমার ঘরে,, আমার আশেপাশে আসতে মানা করে দিয়েছে না

রোদেলাঃ হ্যা মানে,,কি আসলে,,আমি মানে

শিশিরঃ কি তখন থেকে আমি তুমি করছো রোদ,,কিছু লাগবে তোমার,,আহির কে বলে এনে দেবো,,আহির আজ বাড়িতেই আছে,,বলো আমাকে

রোদেলাঃ না আমার কিছু লাগবে না

শিশিরঃ লাগবে না তাহলে

উনি আর কিছু বলার আগে আমি এক ছুটে ওনার রুম থেকে পালিয়ে মার কাছে গিয়ে শুইয়ে পড়লাম,,কোথায় ওনার আমাকে দেখে ভয় পাবার কথা আর আমাকে দেখো আমি ওনাকে ভয় পেয়ে?‍♀️?‍♀️

সকালে ঘুম থেকে উঠে মা কে বললাম ওনার পিঠে বুকে খুব আঘাত লেগেছে,,মা এক কান দিয়ে আমার কথা শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো,,ওদিকে ওনার ইমার্জেন্সি আসায় উনি আহির ভাইয়া কে বলে মার থেকে পারমিশন নিয়ে টিউলিপে ফিরে গেলেন,,বিকেলের দিকে মা আমাকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে আমার জন্য যাবতীয় যা লাগে সব কিনে দিলেন,,

এভাবে চলতে থাকলো সময় এদিকে কিছু দিন যেতেই ওনার বোন জিনিয়া বাড়িতে আসলেন,,ওর পরীক্ষা চলছিলো তাই এতোদিনে আসতে পারে নি,,আমি মার কথা শুনে জিনিয়াকে যা ভেবেছিলাম জিনিয়া তার চাইতেও বেশি মিষ্টি ছিলো,,খুব অল্প সময়ে জিনিয়ার সাথে ভাব হয়ে গেলো আমার,,এদিকে নিরু আপু একদিন চুপ করে বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে মার্কেটের কথা বলে আমাকে দেখতে আসলেন,,আমি সেদিন খুব খুশি হলাম,,মা কে নিরু আপুর খুব ভালো লাগলো,,নিরু আপু তো বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না শিশিরের মতো একটা ছেলে কি করে মার সন্তান হতে পারে,,এভাবে একদিন নিরু আপুর সাথে অবন্তী আপুও বাবাকে না বলে সবার চোখ এড়িয়ে আমাকে দেখতে আসলেন,,তবে অবন্তী আপু মার সাথে বেশি একটা কথা বললো না আপুর রাগ শিশির থেকে শুরু করে সবার উপর,,
__________________________
এভাবে দেখতে দেখতে পাঁচ মাস পেড়িয়ে আমার তখন প্রেগন্যান্সির সাড়ে পাঁচ মাস চলছিলো,,এই এতোগুলো মাসে মা পুরো সময় টা জুড়ে আমার সাথে ছিলেন,,এক দু বার স্কুল গিয়ে ছেলে মেয়েদের কি লাগতো সব দেখে আসতো,,জিনিয়া আসতো পড়ার ফাঁকে ফাঁকে,,কলেজ ছুটিতে,,নিরু আপুও আসতো,, আসলে নিরু আপু আমাকে ছোট থেকে কেনো জানি খুব আদর করতো তাই হয়তো সে আমার সব ভালো টাকে ভালো খারাপ টাকেও ওভাবে গ্রহন করে ভালো বাসতো,,অবন্তী আপু আসতো মাঝে মাঝে খুব একটা না,,এভাবে চলতে থাকলো সময়,,

ফোনে আমার যিনি মা তার সাথে কথা হলেও মা কখনো বাবার ভয়ে আমার কাছে আসতে পারে নি,,আর বাবা তার কথা তো বাদেই দিলাম,,মার সাথে যা একটু কথা হতো বাবা তো আমার সেই ফোন টাও কেটে দিতো সবসময়,,

এদিকে শিশির শিশিরের মতো বাড়িতে আসতো যেতো,,আমার কখন কি লাগবে কখন চেক আপ করাতে হবে কোন ডক্টর দেখাতে হবে,,কি খেতে হবে কখন খেতে হবে সব আহির ভাইয়ার প্রসেসে মা কে দিয়ে করিয়ে নিতো,,মা-ও ছিলো এক রোখা সে যে বলেছিলো সে শিশিরের সাথে কথা বলবে না,তো এই অবধি সে প্রয়োজন ছাড়া কখনো ভুলেও ভুলেও শিশিরের সাথে একটা কথা বলে নি,,আমি যদিও বা চেষ্টা করতাম শিশিরের সাথে কথা বলতে মার মাঝে ছিলো না তার কোনো আগ্রহ,,

এ কদিনে একটা বিষয় আমি একটু হলেও আন্দাজ করেছিলাম যে শিশির হয়তো আমাকে আগে থেকে চিনতো না হলে আমার ব্যাপারে এতো খুটিনাটি খবর সে কি করে জানতো,,কিন্তু কিছুতেই কোনো হিসাব আমি মেলাতে পারছিলাম না,,
______________

সব কিছু ভালো ভাবেই চলছিলো কিন্তু একদিন সেই আকাশ টা জুড়ে কালো মেঘের এক অন্য রকম ঝড় আমি দেখতে পেলাম যেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,,একদিন অবন্তী আর নিরু আপুর সাথে আমাকে দেখতে অভ্র ভাইয়া বাড়িতে আসলো,,অভ্র ভাইয়াকে দেখে আমি যথেষ্ট পরিমাণে অবাক হয়ে গেলাম,,কিন্তু কাউকে সেটা বুঝতে দিলাম না,,ভাইয়া আসাতে নিয়ম করেই মা আপুদের আপায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,,গল্প হলো সবার সাথে,,যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে অভ্র ভাইয়া আমার রুমে আসলেন,,আমার হাত ধরলেন,,আমি তখন এমন একটা সিচুয়েশনে পড়ে গিয়েছিলাম যে ভাইয়াকে বলবো হাত টা ছাড়তে সেটাও বলতে পারছিলাম না

অভ্রঃ আমাকে ক্ষমা করে দিবি রোদ,,আমি সেদিন মা-র কথা শুনে ওভাবে

রোদেলাঃ বাদ দেও ভাইয়া,,যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন ওসব পুরাতন কথা তুলে কি হবে

অভ্রঃ রোদ তুই ফিরে চল না আমার সাথে,,

রোদেলাঃ কি সব বলছো অভ্র ভাইয়া তুমি,,তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো

অভ্রঃ হ্যা পারছি

অভ্র ভাইয়া আর কিছু বলার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,,তখন খুব রাগ লাগছিলো আমার,,কেনো ভাইয়া আমাকে

অভ্রঃ তুই এই বাচ্চা টা কে জন্ম দিয়ে শিশির কে ডিভোর্স দিয়ে দে রোদ,,তোকে কথা দিচ্ছি তোর এই বাচ্চা কে আমি নিজের পরিচয় দিয়ে মানুষ করবো,,সব সব দায়িত্ব নেবো,,তুই শুধু ফিরে চল আমার সাথে,,দরকার পড়লে আমি মা বাবা সবার থেকে সব সম্পর্ক শেষ করে দেবো তাও তুই ফিরে চল আমার সাথে___ঔ হায়না টার সাথে থেকে কি পাবি তুই,,ও তো নিজেই একটা নোংরা কেনো তুই শুধু শুধু,,শিশির কে ভুলে যা রোদ আমি আছি তোর জন্য

এসময় টা আমার খুব রাগ লাগছিলো,,আমি শিশির কে হায়না বলি জানোয়ার বলে পশুর সাথে মিলিয়ে দেই কিন্তু অন্য কারো থেকে শিশির যে নোংরা সেই কথা শুনতেই মাথা টা পুরো গরম হয়ে গেলো আমার,,কিন্তু এদিকে কখন যে শিশির বাড়িতে এসে অভ্রর সাথে কথা বলতে আমার রুমে এসে কখন যে দাঁড়িয়েছিলো আমি বুঝতে পারি নি,,আমি অভ্র ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছু বলতে যাবো তখনি আমার চোখ যায় শিশিরের উপর,,শিশিরকে দেখে আমি অভ্র ভাইয়ার থেকে দু কদম পিছিয়ে যাই,,

রোদেলাঃ শিশির আপনি!!

শিশিরঃ তুমি চিন্তা করো না অভ্র,,যদি রোদ এই বাচ্চা টা হয়ে যাবার পর আমার মতো একটা নোংরা ছেলের সাথে আর থাকতে না চায়,,আমি রোদকে জোর করবো না___তুমি চাইলে রোদ কে নিয়ে গিয়ে_______কিন্তু একটা কথা এই বাচ্চা টা আমার তাই এই বাচ্চার দায়িত্বও আমার,,আমি রোদ কে দিলেও এই বাচ্চা কে কখনো তোমায় দেবো না অভ্র,,নেভার,,

বলেই শিশির রুম থেকে হন হন করে বেড়িয়ে গেলেন,,আমি আসলাম শিশিরের পিছু কিন্তু লাভ হলো না শিশির গাড়ি নিয়ে তার আগেই বেড়িয়ে গেলেন,,অভ্র ভাইয়াকে বুঝালাম আমি এ বাড়িতেই থাকতে চাই আর শিশির কে নিয়েই থাকতে চাই অভ্র ভাইয়া যেনো এরকম কোনো প্রস্তাব আমাকে আর কোনোদিন না দেয়,,

অভ্র ভাইয়া রাগে আপুদের সাথে ফিরে গেলেন,,আমি সারারাত সেদিন শিশিরের অপেক্ষা তে থাকলাম কিন্তু শিশির সেদিন টা আসলো না,,পরের দিন সকালে শিশির আসলো,,গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে যাবে আমি তখন শিশিরের সাথে কথা বলতে শিশির কে থামিয়ে দিলাম

রোদেলাঃ কাল রাতে বাড়িতে ফেরেন নি কেনো আপনি

শিশিরঃ ডিউটি ছিলো

রোদেলাঃ সত্যি ডিউটি ছিলো না অন্য কোথাও গিয়েছিলেন

শিশিরঃ আমি যদি অন্য কোথাও ও গিয়ে থাকি তোমার কি তাতে,,কে হও তুমি আমার যার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো

রোদেলাঃ আপনি আমার সাথে এরকম বিহেভ কেনো করছেন,,এই এতো গুলো মাসে আপনাকে তো কোনোদিন আমি

শিশিরঃ এই এতো গুলো মাসে তোমাকেও তো আমি আমি ছাড়া অন্য ছেলের বুকে এভাবে জড়িয়ে

রোদেলাঃ কি জড়িয়ে হ্যা কি জড়িয়ে,,হ্যা অভ্র ভাইয়া আমাকে ধরেছে না হয় জড়িয়ে কি হয়েছে তাতে,,অভ্র ভাইয়া তো জাস্ট আমায় জড়িয়ে ধরেছে আর আপনি আপনি তো আমার সাথে সেদিন,,ছিঃ

শিশিরঃ এসব এসব বলতে তুমি আমাকে থামিয়েছ এসব বলতে___তাহলে শাস্তি দিচ্ছ না কেনো আমাকে মা তো রাজি আছেই তোমার হয়ে সাক্ষী দিতে,,যাও পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেও আমায়

রোদেলাঃ দিতাম,,যদি এই বাচ্চা টা আমার শরীরের মাঝে বড় না হতো

শিশিরঃ রিয়েলি,,এই বাচ্চা টার প্রতি যদি তোমার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা থাকতো না রোদ তাহলে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ঔ অভ্রর কাছে গিয়ে

রোদেলাঃ আমি কিন্তু একবারো বলি নি আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবো,,অভ্র ভাইয়া আমাকে বলেছিলো কিন্তু আমি

শিশিরঃ কিন্তু তুমি কি রোদ,,তুমি আবার আমার তোমার প্রতি ভাবনা টা ভুল প্রমাণ করে দিলে আবার প্রমাণ করে দিলে যে তুমি

শিশির রাগে আর কিছু না বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলেন,,আমি শিশিরের সাথে তাল মিলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যাচ্ছিলাম,,কিন্তু নামতে গিয়েই!!!!!!____শাড়ির সাথে পা টা আঁটকে গিয়েই দশ টা সিঁড়ি দিয়ে আছড়ে পড়লাম সোজা ফ্লোরে,,আমি শিশির বলে চিৎকার করলাম,,আমার চিৎকার শুনে শিশিরের হাতে থাকা ফাইল টা পড়ে গেলো,,শিশির দৌড়ে ছুটে আসলেন আমার কাছে কিন্তু ততোক্ষণে যা হারানোর তার সব টাই আমি হারিয়ে ফেললাম!!!!!
_________________

সেন্স ফিরতে চোখ খুলে কিছুক্ষন নিজেকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করলাম,,বুঝে আসতে বুঝলাম আমি এখন একটা হসপিটালের বেডে,,একটু উঠে বসতে যাবো তখনি দেখলাম মা আমার পাশে বসে আছে,,আমাকে উঠতে দেখে মা তড়িঘড়ি করে আমার দিকে ঝুঁকে এসে আমাকে আগলে ধরতে শুরু করলেন,অনেক কষ্টে মা আমার পিঠে একটা বালিশ ঠেকিয়ে দিয়ে আমার মুখে হাত বুলিয়ে আমার মাথায় একটা স্নেহের পরশ আঁকলেন,,একটু সময় যেতেই আমার মনে আসতে থাকলো আমি কেনো হসপিটালের বেডে শুইয়ে,,একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে মার দিকে জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে আমার মনে আসা প্রশ্ন টা ছুঁড়ে দিলাম,মা ডুকরে কেঁদে দিলেন,বুঝলাম যেই বাচ্চা টার জন্য আমার এতো লড়াই শেষে গিয়ে নিজের সেই বাচ্চাটাকেই আমি আর বাঁচাতে পারলাম না!!

মা আমাকে জড়িয়ে নিলো তার বুকে,,মা কাঁদছে আমিও কাঁদছি,,শুধু তফাৎ এটাই মা কাঁদছে গলা ছেড়ে আর আমি কাঁদছি একদম নিশ্চুপ হয়ে,
____________

মা বা আমার কারোরই চোখের পানি থামছে না,মা তবুও নিজের চিৎকার টা থামিয়ে আমাকে কি ঔষধ দিতে হবে এরপর আমি কি খাবো নাক টেনে টেনে হাত দিয়ে বারবার চোখের জল টা মুছে সেগুলো দেখতে থাকলেন,আমি তখনো একদম নিশ্চুপ হয়ে আছি,শুধু চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে অনবরত,এমন সময় শিশির এসে কেবিনে ঢুকলো,আমার চোখ পড়লো ওনার দিকে,উনি আমার থেকে চোখ নামিয়ে নিলেন,কিন্তু আমি ওনার থেকে চোখ সরালাম না,

বাসবিঃ তুই এলি,,কি বললো তৃনা ম্যাডাম রোদেলা কে আজ নিয়ে যেতে পারবো আমরা বাড়িতে?

মার কথার উওরে উনি শুধু মাথা নাড়ালেন।

বাসবিঃ আচ্ছা এসেছিস যখন তখন একটু রোদের পাশে বস আমি একটু বাহির থেকে আসছি

মা ওনাকে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেলেন,শিশির আমার পাশে বসে সংকোচে কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে আমতা আমতা করতে শুরু করলেন,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন আমি তখনো এক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি,উনি আবার চোখ নামিয়ে নিলেন,দুজনে চুপ হয়ে আছি,শিশির আমার পাশে বসে ছটফট করছে,কিছু ক্ষন নীরব থাকার পর এবার আমি বলে উঠলাম,,শুধু বলে না এই প্রথম আমি শিশির কে তুমি বলে সম্বোধন করলাম!!!!

রোদেলাঃ শিশির___তুমি তো বলো টাকা দিয়ে নাকি সব কেনা যায়

শিশিরঃ রো রো রোদ আমি

রোদেলাঃ তোমার তো অনেক টাকা শিশির,,তাহলে সেই টাকা দিয়ে আমার বাচ্চা টাকে তুমি এনে দেও না আমার কাছে শিশির!!

শিশিরঃ রোদ আমি

রোদেলাঃ আমি খুব খারাপ মা তাই না শিশির,,নিজের বাচ্চা টাকে আমি এভাবে

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই গলা আমার ভারী হয়ে আসলো,,কান্নার মেঘ এসে আবার জড়ো হলো দু চোখে,,শিশির আমার অস্থিরতা দেখে আমার পাশে এসে বসলেন,,কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে আমার গালে হাত রাখতেই আমি শিশিরের হাতের উপর হাত রেখে অঝোরে কেঁদে ভাসিয়ে দিলাম।

রোদেলাঃ শিশির ও শিশির বলো না আমি খুব খারাপ একটা মা তাই না,,আমি পারলাম না আমাদের বাচ্চা টাকে_____শিশির তোমার তো অনেক ক্ষমতা অনেক অনেক,,,,তুমি তো কতো বড় একজন ডাক্তার কতো মানুষকে সারিয়ে তোলো তোমার এই হাত দুটো দিয়ে,,তুমি আমার পেটে হাত রাখো না গো___একটু দেখো না আমার বাচ্চা টাকে ফিরিয়ে আনা যায় কি না___কি হলো রাখো না হাত

আমার সাথে শিশিরো ডুকরে কেঁদে ফেললেন এবার,,আমিও কাঁদছি শিশিরো আমার মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে,,খুব কাঁদছি খুব

রোদেলাঃ যেই বাচ্চা টার জন্য আমি সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসলাম,,নিজের বাবাকে নিজের মাকে নিজের বোন কে ফেলে দিয়ে তোমার কাছে থাকতে আসলাম আজকে আমার বেখেয়ালের জন্য আমি তাকে_____আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো শিশির,,বলতো পারো কি মানে থাকলো আমার এই বেঁচে থাকার,,,,ও শিশির,,শিশির দেও না গো আমার বাচ্চা টাকে ফিরিয়ে,,তোমার তো কতো টাকা বলো পাবে না তুমি ঔ টাকা দিয়ে আমাদের বাচ্চা টাকে

শিশির আমার ঔ রকম বিধ্বস্ত কান্না দেখে আমাকে তার বুকে মিশিয়ে নিলেন,,একদম মুখ চেপে আমাকে থামাতে চেষ্টা করলেন,,কিন্তু আমি কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারলাম না যে আমার পেটে আর আমার বাচ্চা টা নেই,,মনে হচ্চিলো সব চুল ছিঁড়ে ফেলি ভেঙে ফেলি সব কিছু

শিশিরের শার্টের কলার ধরে শিশির কে ঝাঁকি দিয়ে বারবার বারবার বলতে থাকলাম এনে দেও আমার বাচ্চা টাকে,,আমার বাচ্চা টাকে আমার পেটে তুমি এনে দেও শিশির,,এনে দেও
____________________

বাড়ি আসলাম,,দু সপ্তাহ মা আমার সাথেই বাড়িতে ছিলেন,,আজ স্কুলে ইমার্জেন্সি আসায় মা কে একবার গ্রামে যেতে হলো তবে মা আমাকে কথা দিলেন মা কাল রাতের মধ্যেই আবার ফিরে আসবেন,,হসপিটাল থেকে শুরু করে বাড়িতে আসার পরো অবধি শিশির আমার সাথে কোনো কথা বলে নি,,শুধু যা লাগবে মাথা নাড়িয়ে হুম হ্যা তে উওর করে গেছে,,আমিও শিশির বা মার সাথে কথা বলি নি,,এখনো একটা ট্রমার মধ্যে যাচ্ছিলাম,,কিছু তেই এটা মেনে নিতে পারছিলাম না বাচ্চা টার আর আমার মাঝে নেই,,!!!!!

রাত তখন তিনটের কাছাকাছি,,ঘুম ভেঙে আসলো,,না উঠে বিছানায় শুইয়ে মাথার দিকে ঘুরন্ত ফ্যানটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,হঠাৎই কানে আসলো কে জানি কাঁদছে,,আমি উঠে বসলাম,,ভালো করে শুনতে চেষ্টা করলাম কি হচ্ছে,,বুঝলাম কেউ একজন তো কাঁদছে,,

আমি উঠে রুমের লাইট টা জ্বালিয়ে দিলাম,,জামার ওরনা টা গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে শিশিরের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম,,শিশিরের রুমে ঢুকে আমার চোখ আঁটকে গেলো,,দেখলাম জায়নামাজ এ দাঁড়িয়ে দু হাত তুলে শিশির অঝোরে কাঁদছে,,কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে,,গলা ছেড়ে কাঁদছে!!

আমি তো জানতাম শিশির এসবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে,,কিন্তু না এই প্রথম আমি শিশিরকে জায়নামাজ এ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখলাম!!

প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো হয়ে আসে শিশির কাঁদতে থাকে,,দু হাত পেতে কিসব বলতে থাকে,,কান্নারত গলা থাকায় আমি সেগুলোর কিছু বুঝতে পারছিলাম কিছু না,,শিশির এবার থামে,,সালাম ফিরিয়ে উঠতে যাবে তার আগে আমি আমার রুমে এসে দৌড়ে আবার ঘুমের ভান করলাম,,না আমি শিশির কে বুঝতে দেবো না আমি তাকে দেখেছি,,!!!!

কিছুক্ষন বাদে শিশির আমার রুমে আসলো,,এই প্রথম মা না থাকাকালীন উনি আমার রুমে আসলেন!!আমি চোখ বন্ধ করে কম্বল দিয়ে অর্ধেক মুখ ঢেকে ওনাকে না দেখার ভান করলাম,,

শিশির আসলো,,আমার পাশে বসে আমার পুরো গায়ে সূরা পড়ে ফু দিয়ে দিলো,,তারপর শিশির আমার পায়ের কাছে গিয়ে বসতেই দু হাতে আমার পা দুটো জড়িয়ে নিলো,,নিজের মাথা ঠেকালো আমার পায়ে,,শুরু হলো আবার তার সেই কান্না,,আমি কিছু বললাম না মুখ চিপে সবটা শুনে গেলাম

শিশিরঃ সেদিন বলেছিলাম রোদ ফিরে যাও,, রোদ তুমি ফিরে যাও,,আমি আমি একটা খারাপ ছেলে,,আমার মতো একটা জঘন্য ছেলের সাথে নিজেকে জড়ালে তুমি কখনো সুখি হতে পারবা না রোদ,,পারবা না ভালো থাকতে____তুমি কেনো সেদিন শুনলে না রোদ আমার কথা,,আজ দেখলে কি হলো________যেই ভয় টা যেই ভয় টা আমি সব চাইতে বেশি পেয়ে এসেছি এতোদিন সেই বাবা হবার ভয় টাই আজ আমার সত্য হলো রোদ,,আমি বাবা হয়ে পারলাম না নিজের সন্তান কে বাঁচিয়ে আনতে,,,,আমি তোমাকে বলেছিলাম রোদ আমি কখনো ভালো বাবা হতে পারবো না আর দেখলে তো আজ____বাবা তো তাও আমাকে আর মা কে বাঁচিয়ে রেখেছিলো রোদ আমি তো বাবা হয়ে নিজের বাচ্চা কে,,বাচ্চা টাকে মেরে ফেললাম আমি,,___আমাকে ক্ষমা করবা তুমি রোদ,,রোদ এই খুনি টাকে ক্ষমা করতে পারবা তুমি রোদ??

_________________
সেদিনের পর থেকে শিশির আরো চুপচাপ হয়ে গেলেন,,,,এতোদিন যাও আমার সাথে উনি কথা বলতেন বাচ্চা টা মারা যাবার পর আমি শিশিরের থেকে সেটুকুও কথা শুনতে পারলাম না,,শুধু আমার সাথে না উনি বাকি সবার সাথেই কথা বলা কমিয়ে দিলেন,,কিন্তু আমি একটু মন থেকে হালকা হলাম,,পুরোটো না কিছুটা

আজ খালা না থাকায় আমি দুপুরে শিশিরকে খেতে দিলাম,,ডাইনিং এ বসে আমি আর শিশির খাচ্ছি,,শিশির চুপচাপ,,আমি নিজেই যা টুকটাক জরুরি কথা বলার তা বলছি উনি শুধু হ্যা না তে উওর দিয়ে যাচ্ছেন

রোদেলাঃ বলছি কি মা না চাইছে আমি এবার মা এলে কিছু দিন মার সাথে গ্রামে গিয়ে থাকি,,আপনি যদি বলেন

শিশিরঃ ঠিক আছে

রোদেলাঃ ??____আর একটু ভাত দেবো আপনাকে

শিশিরঃ না

রোদেলাঃ আজ রাতে আপনার ডিউটি আছে,,আমি বাড়িতে একা থাকবো,,মা যে বললো মা আজ ফিরবে মা কি ফিরবে?

শিশিরঃ ফিরছে

রোদেলাঃ ওহ,,তাহলে তো ভালোই হলো,,আচ্ছা আপনি খান আমি আমার ব্যাগ গুছিয়ে নেই তাহলে??

বলেই আমি খাওয়া অর্ধেক শেষ করে উঠে বসলাম,,মনে আজ অনেক অনেক অনেক দিন পর খুব আনন্দ শুরু হলো,, আমি এই প্রথম মার সাথে গ্রামে যাবো মার স্কুল দেখবো,,মাকে দেখবো কি করে বাচ্চাদের পড়ায় মা,,আমিও মার সাথে ওদের পড়াবো,,আমি উঠে যেতেই উনি আর চোখে আমার প্লেটের দিকে তাকালেন দেখলেন বেশির ভাগ ভাত ই আমি না খেয়ে উঠে যাচ্ছি,,উনি খুববববব????রেগে গেলেন কিন্তু কিছু বললেন না,,আমি হাত ধুয়ে এসে পানি খাচ্ছি ওনার পাশে এমন সময় উনি বলে উঠলেন ডালের বাটি টা ওনার দিকে এগিয়ে দিতে

শিশিরঃ মুনতাসীর,,ডাল টা এদিকে দেও তো একটু!!!!

ওনার কথায় নিমিষে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস টানলাম,,মুহুর্তে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা পানি,,ওনাকে ডালের বাটি টা এগিয়ে দিয়ে আমি দ্রুত রুমে চলে আসলাম,,এই প্রথম উনি আমাকে মুনতাসীর বলে ডাকলেন,,বাড়িতে শুধু বাবাই আমাকে মুনতাসীর বলে ডাকতো সবাই তো ছোট্ট করে রোদ বলেই চালিয়ে দেয়,,ওনার কন্ঠ ছিলো ঠিক বাবার মতোন,,বাবাও আমাকে এই নাম ধরে ডাকতো বলতো মুনতাসীর এটা আন তো মুনতাসীর ওটা আন তো,,আজ ওনার মুখে মুনতাসীর নাম টা শুনেই বুক ভরে উঠলো আমার,,খুব খুব খুব বাবার কথা মনে পড়লো,,এই কয়েকমাসে আমি বহুবার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারি নি,,আজ অনেকদিন পর আমি ঠিক করলাম আমি আজ আবার বাবাকে ফোন করবো,,তাই শিশির চলে যেতেই আমি রুমে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে বাবাকে ফোন করলাম,,বাবা ফোন ধরলেন আমার নীরবতা শুনেই বাবা বুঝতে পারলেন ওটা আমি,,আজ অনেকদিন পর আমি বাবার কন্ঠ শুনলাম

বাবাঃ কিসের জন্য আমাকে ফোন দিস তুই,,ঔ ছেলেটার সাথে থাকতে থাকতে কি লজ্জা বলে জিনিস টাও হারিয়ে গেছে তোর থেকে মুনতাসীর

আমি বাবার কন্ঠ শুনেই কেঁদে ফেললাম

রোদেলাঃ আমি আমার বাচ্চা টাকে বাঁচাতে পারি নি বাবা,,যেই বাচ্চা টার জন্য আমি তোমাদের ছেড়ে এতোদূর এসে,,সেই বাচ্চাটা আমার আর

আমি আর বলতে পারলাম না,,কেঁদে ফেললাম গলা ছেঁড়ে,ওদিকে হয়তো বাবাও কাঁদছিলেন,,আর কিছু না বলে ফোন টা কেটে দিলেন বাবা,,মা কে আর আপুকে বললেন কিছুদিনের জন্য তার মুনতাসীর কে নিয়ে এসে সে বাড়িতে রাখতে চায়,,আপুকে জিঙ্গেস করলেন তার আদরের ছোট্ট মুনতাসীর কি আসবে তার বাড়িতে,,

_________________

মা কে নিয়ে আসলাম বাড়িতে,,নিরু আপু ছাড়া প্রথমে কেউ ই মা র সাথে খুব একটা ভালো করে কথা বললো না,,তারপর আস্তে আস্তে মার ব্যাবহারে সবাই অনেক টা মা কে গ্রহন করতে শুরু করলো,, বাবা আসলো,,আমাকে ডেকে পাঠালো নিজের রুমে,,আমি ভয় ভয় বুকে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম,,বাবা আমার মাথায় হাত রাখলেন,,বাবা বুঝলেন বাচ্চা টাকে হারিয়ে আমি অনেকটা ভেঙে গেছি

বাবাঃ হুমায়ুন স্যারের সব গল্পের মাঝে তোর মার আর আমার খুব ভালো লাগার একটা চরিএ ছিলো শুভ্র,,খুব ইচ্ছে ছিলো তোর মার আর আমার,,আমাদের যদি কখনো ছেলে হয় তার নাম রাখবো শুভ্র,,,,কিন্তু সৃষ্টি কর্তা আমাকে সেই সুযোগ দিলো না তাই আমি চাই ভবিষ্যৎ এ তুই যখন আবার মা হবি আর তখন যদি তোর কোল জুড়ে ছেলে আসে তুই তার নাম রাখবি শুভ্র,,রাখবি তো

রোদেলাঃ আর যদি মেয়ে হয়

বাবাঃ মেয়ে হলেএএএএ___কি রাখা যায় বল তো

রোদেলাঃ তুমি বলো

বাবাঃ মেয়ে হলে রাখবি বর্ষা,,তুই তো ছিলি ভোরের রোদের মতোই শান্ত কিন্তু আমার মন বলে তোর মেয়ে হলে বর্ষায় আসা বৃষ্টির মতোই সে হবে চঞ্চল!!❤️তোকে একদম টপটপ করে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার মতো পাগল করে দেবে,,দেখিস

রোদেলাঃ তাহলে আমি তখন তাকে রোজ তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো আর বলবো গিয়ে নানু ভাইয়ের গায়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যা,,!!!!????

আমার কথায় বাবা হো হো করে হেঁসে দিলেন,,আমিও চোখ মুছে বাবার সাথে হাসলাম,,যতো জমানো কথা ছিলো সব সেরে আর সেদিন বাড়ি ফেরা হলো না আমার আর মার,,তাই মার সাথে আমি থেকে গেলাম আমার বাড়িতে।
__________________

পরেরদিন বাড়ি ফিরতে গিয়ে মা অর্ধেক রাস্তায় এ্যায়রপোর্টের সামনে নেমে গেলেন কারণ তাকে আজ হুট করেই গ্রামে যেতে হচ্ছে কিছু কাজে,,তাই আমি একা বাড়ি ফিরছি,,গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি শিশির একটা মেয়ে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে,,!!মুহুর্তে হাত পা কাঁপতে শুরু করলো আমার,,এই কদিনে যাও বা আমি সব ভুলে ছিলাম কিন্তু এই দৃশ্য দেখার পর আমি আর নিজের মধ্যে থাকতে পারলাম না,,আবার সেই ঘেন্নার মেঘ জমা হলো আমার মনে

দুপুরে শিশির বাড়িতে আসতেই আমি শিশিরের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম,,শুধু থাপ্পড় না যা নয় তাই বলে অপমান করতে থাকলাম,,

রোদেলাঃ আমি একটু হলেও ভেবেছিলাম আপনি বদলে গেছেন,,কিন্তু না,,মানুষ হলে না আপনি বদলাবেন,,কুকুর কে দেখেছেন রাস্তার,, তার লেজ কখনো সে সোজা করতে পারে না সেটা বাঁকা তো বাঁকাই থাকে,,আপনিও একটা কুকুরেরই মতোন আপনার স্বভাব চরিত্র যা ছিলো সারাজীবন চাইলেও আপনি সেটা পাল্টাতে পারবেন না___ছিঃ____ভাগ্যিস বাচ্চা টা আমার মরে গেছে নাহলে জন্ম নিয়ে তাকে তো সেই আপনার নোংরামোই দেখতে হতো

শিশিরঃ______

রোদেলাঃ একবার নিজের মার কথা টা অনন্ত ভাবতে পারতেন,,আজ যদি আমি না এসে মা আপনাকে___ছিঃ

শিশির আমার সব কথা মাথা নিচু করে শুনে গেলেন কোনো উওর দিলেন না,,রাগে ঘেন্নায় ওনার দিকে তাকাতেও আমার রুচি তে লাগতে শুরু করলো,,শিশির আমাকে কিছু না বলে বেড়িয়ে পড়লেন,,আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে পেছন ফিরতে যাবো দেখি আহির ভাইয়া আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে

আহিরঃ স্যারকে তুমি রাস্তার কুকুরের সাথে তুলনা করলা রোদ___আমার স্যারকে তুমি কুকুরের আসনে বসিয়ে দিতে পারলা তুমি রোদ,,,,সত্যি রোদ স্যার ঠিকই বলে এই দুনিয়াতে ভালো মানুষের সত্যি কোনো সম্মান নেই তুমি আবার সেটা প্রমাণ করে দিলা

রোদেলাঃ এতো কিছুর পরো আপনি আমাকে এসব বলছেন আহির ভাইয়া

আহিরঃ বলছি___আমি তোমাকে কালকে কয়েকটা জায়গায় নিয়ে যাবো রোদ,,আর তোমাকে যা যা করতে বলবো তুমি ঠিক তাই তাই করবা

রোদেলাঃ ভাইয়া আমি

আহিরঃ কোনো কথা না রোদ,,মনে করে বড় ভাই হয়ে আমি তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছি___যাবা তো আমার সাথে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here