শেষটা_সুন্দর পার্ট_৭

0
2639

#শেষটা_সুন্দর
পার্ট_৭

(একটাই Request থাকবে যতো সময় লাগুক আজকে গল্পের প্রত্যেকটা লাইন পড়বা,,মন থেকে উপলব্ধি করে পড়বা,,আমি নিজে লিখতে গিয়ে কাঁদছি অনেক,,আশা করবো শিশির থেকে শুরু করে ঔ মেয়ে গুলোর অবস্থাও তোমাদের মনে দাগ কাটবে,,,,ঔ মেয়ে গুলো আর আহিরের বলা প্রত্যেকটা লাইন পড়বা!!It’s a humbel request???????????????)
__________________

আহির ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসলেন নিষিদ্ধ পল্লীর পাশে একটা হোটেলে,,হোটেলের রিসিপশনের মেয়েটার দিকে ইশারা করে ভাইয়া আমাকে তার দিকে দেখতে বললেন

আহিরঃ এই মেয়েটাকে দেখতে পারতেছ রোদ,,কাল স্যারের গাড়িতে এই মেয়ে টাই ছিলো রোদ,,স্যার কাল মিতুকে নিয়েই__নিষিদ্ধ পল্লী তে মেয়ে দের নিয়ে যতো ডিল হয় সব টা এই মেয়েটার হাত দিয়ে হয়ে থাকে__এখন আমি তোমাকে একটা কাজ দেবো,,তুমি গিয়ে মেয়েটাকে বলবা তোমাকে এখানে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু তুমি এ পেশায় নিজেকে বিক্রি করে দিতে চাও না

রোদেলাঃ ভাইয়া আমি কেনো?

আহিরঃ আমি যা বলছি তা করো রোদ___তুমি শুধু জাস্ট গিয়ে বলবা আপু আমাকে একটু সাহায্য করুন আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসা হ’য়েছে,,আমার বাবা মা অর্থের অভাবে আমাকে দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছে,এই কাজ করতে আমি এতটুকুও ইচ্ছুক নই,,বোঝাতে পারছি।

আহির ভাইয়া আমাকে কি করতে বলছেন আমি সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু কেনো করতে বলছে সেটা কিছুতেই আমার বুঝে আসছে না,,একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে আমি গেলাম আপুটার কাছে,,গিয়ে আহির ভাইয়ার শিখিয়ে দেওয়া সব কথা আপুটাকে বললাম।আপুটা আমার সব শুনে একটা নাম্বারে ফোন দিলো,,তখনি আহির ভাইয়া এসে আপুটাকে বললো ফোন টা স্পীকারে দিতে,,আপুটা আহির ভাইয়াকে সালাম দিয়ে কেমন আছেন কথা টা জিজ্ঞেস করে ফোন টা স্পীকারে দিলেন!!

আপুঃ হ্যালো স্যার,আমি মিতু বলছি একটু কথা ছিলো আপনার সাথে

বলেই মেয়ে টা এক এক করে আমার কথা গুলো অপর পাশের লোকটাকে বলে দিতে থাকলেন,এবার লোকটা অপর পাশ হতে যখনি কথা বলতে শুরু করলো তখনি আমি কেঁপে উঠলাম,এটা তো শিশিরের গলা!!!!!___শিশির কেনো এসবে??

শিশিরঃ ঠিক আছে মিতু,,আমি আহিরকে তোমার ওখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি,,তুমি মেয়ে টাকে একটা সেভ জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখো,,আর তাকে বলো যদি সে এই পল্লী তে নিজের ইচ্ছেয় না এসে তাকে জোর করে আনা হয় তাহলে তার ভয় নেই,,তার সুরক্ষার পুরো দায়িত্ব আমার!!!!

মিতুঃ ওকে স্যার,,রাখছি

আপু ফোন রেখে দিলেন,আমি হতবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,ভাইয়া আমার মনে আসা প্রশ্ন টা বুঝতে পেরেও চুপ থাকলেন,মিতু বলে মেয়েটার থেকে বিদায় নিয়ে উনি আমাকে এবার নিয়ে আসলেন শিশিরের ফ্যাক্টরিতে!!

আমি বুঝতে পারছিলাম না আহির ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এসে আবার ঠিক কি করাতে চাচ্ছেন,,,,আহির ভাইয়া আমাকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে কিছুক্ষণ বাদে কয়েকজন মেয়ে স্টাফ নিয়ে ফিরে এলেন,,আহির ভাইয়া ইশারা করতে মেয়ে গুলো এক এক করে বলতে শুরু করলেন,,

আহিরঃ রাইমা বলো এবার

রাইমাঃ আমার বয়স তখন আর কতো হবে স্যার,, ১৪ কি ১৫,,বাবার ছিলো একটা সামান্য জুতা সেলাইয়ের দোকান,,সেই দোকান থেকে যা উঠতো তা দিয়ে কোনো রকম চলে যেতো সংসার,,কিন্তু চিকিৎসার অভাবে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যাবার পর আমার বড় ভাই যিনি ছিলেন উনি আমাকে টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ পল্লী তে নিয়ে এসে

বাকি টা বলতে গিয়ে রাইমা কেঁদে ভাসিয়ে দিলো,,পাশে থাকা সন্ধি বলে মেয়েটা রাইমার চোখ মুছে দিলেন,,রাইমা আবার বলতে শুরু করলো

রাইমাঃ সেদিন যদি শিশির ভাইয়া না থাকতো,,আমাকে ঔ নর পিচাশ গুলো ওখানেই,,ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসে ওনার এই ফ্যাক্টরিতে কাজ দিলেন,,শুধু তাই না আমার লেখা পড়ার আগ্রহ দেখে উনি আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন এখানকার এক স্কুলে,,আজ যে আমি মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে বাঁচতে পারছি সেটা শুধু শিশির ভাইয়া ছিলো বলেই সম্ভব ছিলো নাহলে আমি সেদিনই।

রাইমা আপু থামলেন,আহির ভাইয়া এবার সন্ধি আপুকে বলতে অনুরোধ করলেন

সন্ধিঃ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলাম আমি,,,,সবাই বলতো আমার চেহারার সৌন্দর্য নাকি নায়িকাদের কেও হার মানায় কিন্তু সেই সৌন্দর্য টাই একদিন আমার কাল হয়ে ধরা দেবে ভাবি নি,,একটা অফিসে কেরানির চাকরি করে যা আসতো ওটা দিয়ে নিজের পড়াশুনা টুকু মিটিয়ে পাঁচ সদস্যের একটা গোটা সংসার চালাতে হতো আমাকে,,কিন্তু একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা জীপ এসে আমাকে তুলে আনে সেই নিষিদ্ধ পল্লী নামক নোংরা জায়গাটাতে__আমি বাঁচার জন্য গলা ছেঁড়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম,,পারলাম না ওদের সাথে,,ঔ হায়নার দল গুলো আমাকে ধর্ষন করলো শুধু ধর্ষন করে তারা থামলো না আমাকে নিয়ে হোটেলে এসে টাকার অংকে কতো দিয়ে বিক্রি করা যায় তার হিসাব কষতে থাকলো,,আমার সেই বিধস্ত অবস্থা দেখে মিতু আপু শিশির ভাইয়া কে ফোন করলো,,শিশির ভাইয়া আমাকে কিনতে আসা ঔ লোক গুলোর সাথে কথা বলতেই লোক গুলো ভয়ে আমাকে ওখানে থুইয়েই পালিয়ে গেলো___তারপর ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসলো ওনার ফ্যাক্টরিতে বললো আমি কাজ করতে ইচ্ছুক কি না,,,আমি রাজি হয়ে গেলাম ঔ কেরানির চাকরি করে টেবিলে টেবিলে চা বিস্কুট দিয়ে আসার থেকে ভাইয়ার এই এতো বড় ফ্যাক্টরিতে আমি আমার শিক্ষা গত যোগ্যতা অনুযায়ী যেই পদে কাজ পেলাম সেটা সত্যি আমার ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো!!!!!!

সন্ধি আপু শেষ করতে আরো দুটো মেয়ে নিজেদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললনে,,তাদের সাথে তাল মিলিয়ে উপস্থিত আমরা সবাই কেঁদে দিলাম,আহির ভাইয়ার ও চোখে দেখলাম পানির বিন্দু জল রাশি,,সবার শেষে গিয়ে একটা ৫০/৬০ বছর বয়সী আন্টি এবার বলতে শুরু করলেন,বয়সের ভারে নত সে,চামড়া কুঁচকে গিয়ে মুখ টা মলিন হয়ে আছে!!!!!!

আন্টিঃ আমার কথা আর কি বলবো মা,,আমার বুড়ো বয়সের শরীর টাকে খেয়ে ঔ জানোয়ারের বাচ্চা গুলোর যে কি শান্তি হয়েছিলো সেদিন কে জানে____নাতি কে নিয়ে বাজার থেকে ফিরে আসছি অনেকটা দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো বলে ভাবলাম নিষিদ্ধ পল্লীর পেছনের রাস্তা টা দিয়ে যাই কিন্তু সেই ভাবনা টাই কাল হলো আমার,,টেনে নিয়ে গিয়ে ১টা না ৪ ৪ টা ছেলে আমাকে____পুরো বিশ দিন হসপিটালের বিছানায় পড়ে ছিলাম,আমার সব চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় শিশির,,আমার কোনো ছেলে ছিলো না,শিশির প্রথম আমাকে দাদিমা বলে ডাকতেই কলিজা পুরো ভরে গেলো আমার❤️

উনি কথা বলা শেষ করে আহির ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলেন আমি শিশিরের কে হই,,আহির ভাইয়া আমার সাথে ওনার পরিচয় করিয়ে দিলেন,উনি এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন

আন্টিঃ শিশিরের মতো ছেলে লাখে কেনো কোটিতেও একটা হয় না মা,,তুমি কপাল গুনে শিশিরের মতো একটা ছেলেকে স্বামী হিসাবে পেয়েছো,,ছেলে টা আমার খুব ভালো মা খুব ভালো,,❤️

আহির ভাইয়া এবার সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন,,আমাকে নিয়ে এবার উনি আসলেন আমার কলেজে,,আমার স্কুল যেটা ছিলো কলেজও সেটাই,,আহির ভাইয়া আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে ওনার মেয়েকে নিয়ে এসে আমার পাশে বসিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলেন,,ওনার মেয়ে যে আমারই স্কুলে পড়ে জানা ছিলো না আমার,,তবে আমি খুব সম্ভবত আহির ভাইয়ার মেয়েটাকে দেখে বুঝলাম আমি ওকে চিনতাম,,কিন্তু স্কুলে এতো এতো মেয়ের সাথে মিশেছি কিছুতেই খেয়াল করতে পারছিলাম না

আহিরঃ এই যে আমার মাহিবা রাজকন্যা,,আজকে টিফিন পুরো শেষ করা হয়েছে তো,,নাকি আজকেও গিয়ে রাতে তোমার জন্য তোমার এই বাবাকে বকুনি শুনতে হবে??❤️

শুনেই ওনার মেয়ে ফিঁক করে হেঁসে দিলো,,আহির ভাইয়া আর তার কথা শুনে বুঝলাম মেয়েটা ক্লাস ফোরে কি থ্রীতে পড়ে সবেমাএ,,

মাহিবাঃ হে হে,,বকুনি খেলে খাবে__কি ওয়েছে(হয়েছে) তাতে___আচ্ছা বাবা এটা ঔ আন্টি টা না যাকে দেখার জন্য ভালো আঙ্কেল আমাদের ইস্কুলে(স্কুলে) আসে

মাহিবার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে?? আহির ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,এসব কি বলছে মাহিবা আর কে এই ভালো আঙ্কেল,, শিশির!!

আহিরঃ হুম মাম্মাম তোমার শিশির আঙ্কেল এই আন্টি টাকে দেখার জন্যেই তোমার স্কুলে আসে মানে আসতো!!
_________________

ভাইয়া মাহিবাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিতে গাড়ি ওনাদের বাড়িতে নিয়ে গেলেন,,ওনার বাড়ি পৌঁছে প্রিয়ন্তি আপু আসলো তার মেয়ে কে নিতে,,আহির ভাইয়া প্রিয়ন্তি আপুর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন

আহিরঃ তাহলে প্রিয় কেমন দেখলে আমাদের এ্যান্জেল কে?

প্রিয়ন্তিঃ তোমার শিশির স্যারের এ্যান্জেল সত্যি একটা এ্যান্জেলের মতো দেখতে আহি!!?

আহির ভাইয়া হাসলেন,,প্রিয়ন্তি আপু আমাকে ভেতরে বসতে বললেন,,আহির ভাইয়া বললো অন্য একদিন তার এখন অনেক কাজ আছে,,আপুর থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়া আমাকে নিয়ে একটা রাস্তার পাশে স্বস্তা হোটেলে বসালেন,,হোটেল টার পরিবেশ ছিলো খুবই নোংরা ওখানেই বাথরুম ওখানেই আবার খাবার রাখা,খালি পায়ে, নোংরা হাতে সবাই খাবার রান্না করছে,,গায়ের ঘাম মিশে যাচ্ছে সেই খাবারে,মশা মাছি উড়ে পড়ছে,কেউ বা নাক ঝেরে ঔ হাতে খাবার সার্ভ করছে মানে একদম খুবই বাজে অবস্থা!!!!

আহির ভাইয়া আমাকে নিয়ে বসিয়ে দিলেন একটা টেবিলে,,একটা ছেলেকে ডেকে শুধু এক প্লেট বাসি ভাত অডার করলেন,,I repeat I repeat I repeat শুধু এক প্লেট মোটা চালের বাসি সাদাভাত!!!!!!

আমি আহির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,,আহির ভাইয়া আমাকে আদেশ করলেন ভাত টুকু খেতে,,আমি অবাক হলাম শুধু ভাত আমি কি করে খাবো তাও বাসি,,তবুও ভাইয়ার কথা শুনে এক লোকমা মোটা চালের শুকনো ভাত গিলতেই গলায় বাধা খেলাম,ভাইয়া আমার দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললেন এবার পানি দিয়ে গিলে খাও কষ্ট কম হবে!!!!

আমি পানি দিয়ে গিলে গিলে অর্ধেক শেষ করে আর খেতে পারলাম না,বমি আসতে লাগলো,ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিলেন,,বললো উঠো আর খেতে হবে না,,আমি উঠতে যাবো তার আগে ভাইয়া আমার প্লেট টা এগিয়ে নিয়ে ভাত গুলো হাতে নিয়ে কি জানি একটা মনে করে চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেলেন,,!!!!!!!!
_______________

এরপর ভাইয়া আমাকে নিয়ে আর কোথাও না সোজা আসলেন বাড়িতে,,আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম,,যাগ এখন আর ভাইয়া আমাকে দিয়ে কিছু করাবেন না এই ভেবে একটু রিলাক্স হতেই,হাতে এক বালতি ভরা পানি নিয়ে এসে আহির ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়ালেন

রোদেলাঃ এসব কি ভাইয়া,,এই বালতি এই পানি দিয়ে কি করবেন আপনি??

আহিরঃ আমি করবো না,তুমি করবে___এই বালতি নিয়ে ২০বার এই সিড়ি দিয়ে উঠবে আর নামবে

রোদেলাঃ ????

আহির ভাইয়ার কথায় টাস্কি খেয়ে মাথা ঘুরে আসলো আমার কি করতে বলছে ভাইয়া আমাকে এটা,,আমাকে এখন বালতি নিয়ে এই উপরে নিচে?‍♀️?‍♀️

ভারী বালতি হাতে ৫বার এই লম্বা সিড়ি টা দিয়ে উঠতে নামতে হাঁপিয়ে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছি,,পেটের কাছে সেলাই থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছিলো,,ভাইয়া আমার অবস্থা বুঝে আমার হাত থেকে বালতি টা কেঁড়ে নিলেন,,আমাকে নিয়ে আসলেন শিশিরের রুমের শেষের কিনারে বড় ব্যালকুনি টার কাছে,,

আহিরঃ তো রোদেলা কিছু বুঝতে পারলা???????

আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম দেওয়াল ঘেঁসে,,আহির ভাইয়া আমাকে যেটা বুঝাতে চাইছে সেটা আমি বুঝছি কিন্তু সেটা বুঝেও আমি বুঝতে পারছি না,,,ভাইয়া নিজের দু পকেটে হাত রেখে পেছন ঘুরে দাঁড়ালেন,,শুরু করলেন এমন কিছু কথা যেটা শোনার পর আমার হাত পা কাঁপতে থাকলো,,চোখ দিয়ে না চাইতেও জল ঝরে পড়তে থাকলো অবিরত!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

আহিরঃ স্যার যখন কলেজ পড়ুয়া স্টুডেন্ট তখন থেকেই স্যারের জীবনে শুরু হয় একটা ঝড়__ঝড় টা শুরু হয় কি দিয়ে জানো রোদ? স্যারের বাবা আর মায়ের নির্মম সেই বিচ্ছেদ দিয়ে!!___একদিন কলেজ শেষে বাড়িতে এসে স্যার দেখতে পারেন তার মা মেঝেতে বসে কাঁদছে কোলে তার ১বছর বয়সী বাচ্চা জিনিয়া,,চোখ মুখ বিধ্বস্ত,চুল অগোছালো,,স্যার দৌড়ে তার মার কাছে যেতেই জানতে পারেন তার বাবা তাদেরই এলাকার একটা মেয়ের জন্য তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে____স্যার থেমে থাকে নি সোজা গিয়ে তার বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন এই কাজ টা উনি কেনো করলেন,তার বাবা উওরে কি বলেছিলো জানো,টাকার জন্য!!স্যারের মাকে বিয়ে করে নাকি উনি জীবনে কিছু পাননি কিন্তু ঔ মেয়ে কে বিয়ে করে পুরো এলাকার মেম্বারশীপের দায়িত্ব উনি হাতে পেয়েছেন,,স্যার ওনাকে প্রশ্ন করলো, তাহলে এখন তার মা আর তার বোনের ভবিষ্যৎ কি হবে__ওনার বাবা স্যারের মুখের উপর দশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল ছুঁড়ে দিয়ে বললো এই টাকায় বাঁচতে পারলে বাঁচো নয়তো মাকে নিয়ে গিয়ে আত্মহত্যা করো,,,,!!!!সেদিন স্যার অনেক জায়গা ঘুরেছিলো একটু জাস্টিস এর জন্য কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয় নি________ম্যাডাম কে নিয়ে ফিরে গেলেন ওনার নানু বাসায়,,একটা ছোট্ট,রঙ ওঠা, দেওয়াল থেকে চুন খসে পড়া ঘরে ঠাই মিললো ওনাদের তিনজনের,,এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবনটা চলতে থাকলো,,,,জীবনে স্যার টাকার যে অভাব টা সহ্য করেছে না রোদেলা সেই কষ্ট টাই ওনাকে লোভ দেখিয়েছে টাকার পেছনে এভাবে ছুটতে!!!!!!!!!______তবে একটা মজার ব্যাপার কি জানো রোদ,,তুমি স্যারের প্রথম ভালোবাসা হলেও কিন্তু স্যারের প্রথম ভালো লাগা ছিলো অন্য কেউ,,স্যার স্যারদের কলেজে প্রজ্ঞা নামের একটা মেয়ে কে খুব পছন্দ করতো,ঔ চোখে দেখা পছন্দ যা হয় আরকি মেয়েটাও কিন্তু নিজে থেকে স্যারকে বুঝিয়ে ছিলো সে স্যারকে ভালোবাসে কিন্তু যখন মেয়ে টা জানতে পারলো স্যার তার সব কিছু হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে তখন মেয়েটা কি করলো জানো,,স্যারকে এভয়ড করতে শুরু করলো,,স্যার কারণ জানতে চাওয়াতে মেয়ে টা স্যারকে সেদিন ক্লাসরুমে যে অপমান টা করেছিলো না রোদ, তারপর থেকে কোনো মেয়ে কে ভালো ভাবতেই স্যারের রুচিতে বাঁধতে লাগলো,,স্যারের মাথায় এটা সেট হয়ে গেলো যে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মেয়ে লোভী,,প্রত্যেকটা মেয়ে শুধু টাকা চিনে,,শুধু টাকা!!!!

আহির ভাইয়া দম ছাড়লেন,,রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে আবার বলতে শুরু করলেন।

আহিরঃ দুটো বছর কষ্ট করে এলাকার এক মামার দোকানে চা পানি বিক্রি করে নিজের উচ্চ মাধ্যমিক টা শেষ করলেন,,কিন্তু এই দুটো বছর নিজের মা নিজের এক বছরের বোন কে সামলাতে গিয়ে উনি পুরো___(আহির ভাইয়া এবার কেঁদে ফেললেন) ____স্যারের পরীক্ষার ফি টা দিতে আন্টি সবার দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরেছিলো রোদেলা কেউ ২০০টাকা কেউ ১০০ কেউ বা____কেউ বা ম্যাডামকে দিয়ে এক বালতি কাপড় ধুইয়ে নিয়ে হাতে শুধু ৫০টা টাকা ধরিয়ে দিয়েছিলো___সেদিন ম্যাডামের সাথে স্যারের তুমুল ঝগড়া লেগে গিয়েছিলো,,যতো যাই হোক স্যার কখনো তার মা কে দিয়ে কারো বাড়িতে কাজ করার পক্ষে ছিলেন না,,স্যার বিষয় টা মেনে নিতে পারি নি,,তার পরীক্ষার ফি যোগাড় করতে তার মাকে কি না অন্যের কাপড় ধুইয়ে___ব্যাপারটা কিছুতেই স্যার হজম করতে পারলেন না কিছুতেই না!!!!

আহির ভাইয়া থেমে গিয়ে তার চোখ মুঁছলেন,,কিন্তু আমার চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকলো আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেগে!!!!!!

আহিরঃ এতো অভাবের মাঝেও ম্যাডাম স্যারকে মেডিকেল কোচিং করতে ঢাকায় পাঠালেন,,তখন অবশ্য ম্যাডাম ওখানকার এক স্কুলে নার্সারিতে পড়ানোর কাজ পান,,কিন্তু ঔ ৪হাজার টাকার বেতনে নিজে চলবে না স্যারকে এদিকে টাকা পাঠাবে,,স্যার ম্যাডামকে মিথ্যা বললো,,বললো উনি ঢাকায় একটা মোবাইল কোম্পানি তে সার্ভিসিং এর কাজ পেয়েছে তাই ম্যাডামকে তার টাকা পাঠাতে হবে না,,পারলে উনি ম্যাডামকে জিনির জন্য কি লাগে সেই টাকা পাঠিয়ে দেবেন______শুরু হলো আরো একটা কষ্টের জীবনের সূচনা!!!!____স্যারের ম্যাচে থাকার মতোও পকেটে টাকা ছিলো না রোদ,,কোচিং সেন্টারের বাহিরে ফুটপাতের পাশে একটা দোকানের সামনে পুরো একটা মাস উনি খোলা আকাশের নিচে কাটিয়েছেন!!Can you imagine রোদ শীতের রাতে কম্বল মুড়িয়ে একটা খোলা আকাশের নীচে থাকাটা কতো টা কষ্টের!!!!!!!!____আজকে যে তোমাকে আমি হোটেলে নিয়ে গেলাম না ওখানে তো তুমি তাও ভাত টা পেয়েছ রোদ কিন্তু আমার স্যার,,আমার স্যার তো এরকম কতো রাত না খেয়ে কাটিয়েছে জানো তুমি!!জানো না রোদ,,তুমি কিচ্ছু জানো না_____যে টুকু এদিক ওদিক কাজ করে টাকা পেতো সেগুলো দিয়ে স্যার শুধু বই কিনতো অনেক অনেক বই,,কারণ তাকে পড়তে হবে, অনেক পড়াশুনা করতে হবে তাকে,,পড়াশুনা করে মানুষ হতে হবে এ জন্য না কিন্তু পড়াশোনা করলে নাকি টাকা পাওয়া যায় সেজন্য রোদ সে জন্য____!!!!!!!!

আহির ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে এসে আমাকে ঝাঁকি দিয়ে থামিয়ে দিলেন!!

আহিরঃ তুমি এটুকু শুনই কাঁদছো রোদ,,এখনো তো তোমার অনেক শোনা বাকি রোদ অনেক জানা বাকি__সেগুলো সহ্য করবা কি করে!!

আহির ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন।

আহিরঃ তোমাকে যে আমি বালতি ভর্তি পানি নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে নামতে বললাম তার কারণ কি জানো রোদেলা,,আমি চেয়েছিলাম স্যারের ঔ কষ্ট টুকু তুমি নিজে ফিল করো_____জানো এক বার কি হয়েছিলো আমরা যেই সাবলেটে থাকতাম ঔ বিল্ডিং এ কারেন্ট ছিলো না পাক্কা তিনদিন,,পানির সংকোটে সবাই অস্থির___তখন শুধু কটা কাটার জন্য জাস্ট কয়েকটা টাকার জন্য স্যার বালতি বালতি পানি তুলে নিয়ে গিয়ে তিন তলা চার তলা পাঁচ তলা এমনকি ছয় তলা তে অবধি দিয়ে আসতো রোদ,,বুঝো তুমি সেই কষ্ট টা, বুঝো সেই টাকার অভাব টা!!!!!!!!জিনির যখন একবার নিউমোনিয়া হয়ে যায় যায় অবস্থা তখন স্যার নিজের শরীর থেকে তিন ব্যাগ Blood ডোনেন্ড করে জিনির সেই চিকিৎসার টাকা যোগাড় করেছিলো রোদ,,সেদিন শরীর থেকে ওতো গুলো রক্ত দিয়ে তো আমার স্যার মরেও যেতে পারতো রোদ!!____এই ঢাকা শহরে নিজে চলে ডক্টরির মতো একটা পড়াশোনা নিজ টাকায় শেষ করা তোমার কাছে সামান্য কথা মনে হয় রোদ!!জাস্ট একটা বার ভাবো প্রতি প্রফের টাকা,স্কেলেটন কেনার টাকা,একটার পর একটা দামি দামি ডক্টরি বই কেনার টাকা,,ডক্টরি পড়তে যতো টাকা লাগে সব এক হাতে কি করে স্যার_____এই বয়সে এতো টাকা আয় করা চারটে কথা না রোদ,,অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে স্যার নিজেকে এ জায়গায় নিয়ে এসে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে____

আমি আর পারলাম না এবার নিজেকে সামলে রাখতে,,গলা ছেড়ে কান্না শুরু করলাম,,আহির ভাইয়া কে হাত জোর করে বলতে থাকলাম ভাইয়া আপনি এবার একটু চুপ করুন,চুপ করুন আপনি,আমি আর শুনতে পারবো না,,কিন্তু আহির ভাইয়া থামলেন না আমাকে চুপ করে উনি আবার বলতে শুরু করলে।

আহিরঃ আমি তো তাও রোদ শুকনো ভাতের সাথে একটা ডিম কেনার ক্ষমতা রাখতাম কিন্তু স্যারকে তো শুধু আমি লবন মিশিয়ে সাদা ভাত খেতে দেখেছি রোদ শুধু সাদা ভাত!!!!!!!!!!__________নিষিদ্ধ পল্লীর সাথে স্যার এমনি এমনি যুক্ত হয় নি রোদেলা,,একবার ম্যাডাম যখন সব হারিয়ে শূন্য হাতে জিনির জন্য একটু খাবার খুঁজতে বের হয়েছিলেন তখন খাবার না পেয়ে উনি ঠিক করেন উনি এই পল্লীর সাথে যুক্ত হবেন,,কি আছে আর ওনার জীবনে চোখের সামনে কোন মা কোন মা পারবে বলতে পারো এটা দেখতে তার বাচ্চা দুটো খুদার জ্বালায় মরে যাক??___তুমি তো নিজেই তোমার বাচ্চা টাকে এ্যাবরসন করতে পারো নি রোদ তাহলে ম্যাডামের ও সময় কি অবস্থা হয়েছিলো রোদ just imagine করো রোদ জাস্ট ভাবো একবার___ঔ থেকে নিষিদ্ধ পল্লী সম্পর্কে জানার স্যারের আগ্রহ বাড়ে,, স্যার ওখানে গিয়ে মেয়েদের এই অবস্থা বিশ্লেষণ করে কোন মেয়ে এটা থেকে বের হতে চায় তাকে বের করে নিয়ে এসে একটা সুন্দর জীবন উপহার দেয়,,একটা সুন্দর জীবন!!_______নিষিদ্ধ পল্লী তে এরকম কোনো মেয়ে আসলেই মিতু স্যারকে খবর দেয় স্যার সাথে সাথে সেই মেয়ে কে সেখান থেকে উদ্ধার করে এনে ওনার ফ্যাক্টরি বা যেখানে পারে একটা কাজ এনে দেয়___আমার দুটো ছেলে মেয়ের সম্পূর্ণ পড়ালেখার খরচ উনি বহন করে শুধু কি তাই ওনার ফান্ডের পুরো টাকা টা যায় এক একটা অনাথ আশ্রমে এক একটা বৃদ্ধা আশ্রমে___এরকম কতো স্টাফকে তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য বিনা বাক্যে উনি টাকা দিয়ে দেয় তুমি জানো রোদ,,তুমি জানো না__ইনফেক্ট তুমি কেনো রোদ,,ম্যাডামো হয়তো সে খবর জানেন না_______

আহির ভাইয়া দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,,

আহিরঃ একদিন সেই মেঘলা আকাশে রামধনু হয়ে নিজের নামের মতো রোদ নিয়ে দেখা দিলে তুমি রোদেলা❤️স্যারের মেঘলা আকাশ টাকে তোমার নামের মতোই রোদ দিয়ে ভরিয়ে তুললা___স্যার তোমাকে কোথায় কখন কীভাবে দেখেছে আমি সেটা বলতে পারবো না রোদ,,তবে যবে থেকে তোমাকে স্যার পেয়েছে স্যার নিজের পুরোটা তোমার মাঝে দিয়ে বসেছে,,আমি বুঝেও না বোঝার ভান করতাম স্যার কেনো মাহিবা কে স্কুল থেকে আনতে প্রায় প্রায় আমার সাথে তোমাদের স্কুলে যেতেন,,_____স্যার তোমাকে দেখার জন্য কতো পাগলামো করতো রোদ জানো(আহির ভাইয়া হালকা হাসলেন),,আমাকে তো বলতে পারতো না,,উনি ওনার ঔ সময় টা করে ওটি ওপিডি সব থুইয়ে আমার সাথে মাহিবা কে আনতে স্কুল যেতো,,শুধু তোমার জন্য রোদ শুধু তোমার জন্য,,মাহিবা দের ছুটির সময় তোমাদের টিফিন হতো আর তুমি টিফিন নিতে তোমার সব ফ্রেন্ড সহ নিচে আসতে,,ব্যাচ দূর থেকে ঔ টুকু যা দেখা যেতো ওটাতেই উনি শান্তি খুঁজে নিতেন,,,,এ-র পর তোমার কোচিং তুমি যেখানে যেখানে যেতে সব খোঁজ খবর রাখতো উনি রোদ,,তোমার এ টু যেড কখন কি দরকার উনি সব ঠিক করে দিতো,,উনি তোমার জন্য পাগল ছিলো রোদেলা জাস্ট পাগল,,,,,,,,,,,,,তোমার মনে আছে রোদ তুমি যখন ক্লাস 9 কি 10 এ তখন দুটো বাচ্চার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে তাদের ভর্তি করে দিয়েছিলে তোমাদেরই স্কুলের সাথে লাগানো প্রাইমারি স্কুল টাতে কিন্তু ২বছর পড়িয়ে যখন তুমি ফাস্ট ইয়ারে উঠো তুমি আর তাদের পড়াতে পারছিলে না,,মনে পড়ে কিছু তোমার রোদ???????????????

আহির ভাইয়ার প্রশ্নে আমি মনে করতে শুরু করলাম,হ্যা আমি ক্লাস নাইনে এ থাকাকালীন আমাদের এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করা রহিম মামার দুটো বাচ্চার মাহিবা আর মিহিকার পড়াশোনার পুরো দায়িত্ব নিয়েছিলাম,ওসময় আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসের অবস্থা বেশ ভালোই ছিলো,,আমার হাতে সবসময় কিছু না কিছু টাকা থাকতো ওগুলো জমিয়ে জমিয়ে আমি ঔ বাচ্চা দুটোর,,কিন্তু আমি যখন কলেজে ফাস্ট ইয়ার এ উঠি তখন বাবা বিজনেসে অনেক অনেক লসের মুখ দেখে,,ঔ সময় টাতে আমরা পুরো ফ্যামিলি মেম্বার সবাই একটা বিরাট টাকার ক্রাইসিসের মধ্যে যেতে থাকলাম,,এমনকি আমার কলেজের ফি দিতেও মা কে তার ডিপোজিট টা ভাঙ্গতে হয়েছিলো,,তাই আমাকে বাধ্য হয়ে মাহি আর মিহিকে না করে দিতে হয়েছিলো,,সেদিন মাহি আর মিহির সামনে নিজেকে অনেক ছোট বলে মনে হচ্ছিলো,,অনেক কেঁদে ছিলাম আমি সেদিন ওদের সামনে,ওরা ওদের ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার চোখ গুলো মুছে দিয়েছিলো,,তার কিছুদিন পর যখন আমি একদিন কলেজের জন্য আমার বন্ধু দের সাথে হাঁটছিলাম তখন মাহি আর মিহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নাকি ওদের কোন এক আঙ্কেল নিয়েছে উনি এখানে থাকে না বাহিরে থাকে,,সেদিন সেই কথা টা শুনে যে আমি কতো খুশি হয়েছিলাম আপনাদের বলে সেটা বোঝাতে পারবো না,,মনে হচ্ছিলো বুক থেকে একটা শক্ত পাথর নেমে গিয়েছিল আমার!!

আহিরঃ সেই মিহি আর মাহির লেখাপড়া না রোদ তাদের পুরো ভবিষ্যৎ এর দায়িত্ব এখন স্যার নিজে নিয়েছে!!___শুধু কি তাই রোদ তোমার টাকার ক্রাইসিসের কথা শুনে তোমার কলেজের হেড স্যারকে বলে তোমার বেতন হাফ ফ্রি করা হয়েছিল মনে পড়ে কিছু রোদেলা???????????

আহির ভাইয়ার কথা শুনে আমার মাথা ঘুরতে থাকলো,,হাত পা কাঁপতে থাকলো,,আহির ভাইয়ার এক একটা কথা এক একটা বাক্য কলিজাটাকে ছিঁড়ে খেতে থাকলো,,কলেজে সহজে কারো হাফ ফ্রি হয় না বৃওি বা উপবৃওি কিছু না থাকলে,,আর যেগুলোর কোনোটাই আমার ছিলো না,,কিন্তু সেদিন হুট করে হেড স্যার আমাকে ওনার রুমে ডেকে কাগজ ধরিয়ে বললো আমার হাফ ফ্রি টা নাকি Approve হয়ে গেছে।আমি শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম কারণ আমি তো কোনো হাফ ফ্রির জন্য আবেদন করি নি,,কাগজ পএ দেখে বুঝলাম ওগুলো সব আমারই কাগজ,,আমি ভাবলাম বাবা বা ভাইয়া মানে অবন্তী আপুর হাসবেন্ড হয়তো এসে আমার জন্য,,আমি আর এ বিষয়ে কথা বললাম না কারণ বাবা আর ভাইয়া এরকম অনেক কাজই না বলে করেন,,কিন্তু এই হাফ ফ্রির বিষয় টাতে যে পুরো শিশিরের হাত আছে সেটা আহির ভাইয়া না বললে হয়তো আমি কখনোই জানতে পারতাম না!!!!!!!

আহিরঃ সেটা শুধু স্যার করিয়েছিলো রোদ,,স্যার তো পারলে পুরো full free studentship এর ই ব্যবস্থা তোমার জন্য করতো কিন্তু তোমার কলেজ হেড এলাও করে নি,,আর স্যার এ বিষয়ে কোনো বেশি কথা উঠাননি কারণ একটু বাড়াবাড়ি হলে কথা টা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়তো যেটা স্যার চাননি___আমার স্যার জানোয়ার না রোদ আমার স্যার কোনো পশু না______(আহির ভাইয়া একটু থামলেন)_____এখন তুমি আমাকে প্রশ্ন করতে পারো তাহলে স্যার কেনো আগে রোজ রাতে অন্য মেয়ে নিয়ে,,আর স্যার যখন তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে সে তোমাকে না বলে কেনো তোমার সাথে সেদিন জোর পূর্বক!!

রোদেলাঃ_____???????????

আহিরঃ তুমি স্যারের জীবনে আসার আগে থেকেই স্যার মেয়ে দের বাড়িতে নিয়ে এসে___আর এটাই একটা অনেক বড় কারণ ছিলো রোদ যার জন্য স্যার তোমাকে স্যারের মনের ভালোবাসা টা বলতে গিয়েও বলতে পারে নি,,,,জানো তো কি রোদেলা,,স্যার না জীবনের যেই অধ্যায় গুলো পার করেছে সেখানে শুধু টাকার খেলা ছিলো,,স্যারের মনের মধ্যে এটা গেঁথে গিয়েছিল যে টাকা যার এই দুনিয়া তার,,বড় লোক হবার নেশা তাই কুঁড়ে কুঁড়ে ওনাকে খেতে থাকে___বড় লোকের ছেলেরা যেমন টাকা উড়িয়ে পার্টি নেশা মেয়ে এসব করে করে বের হয়,ওনার মাথায়ও না এটা SET UP(জোর দিয়ে) হয়ে গিয়েছিলো যে ওনাকেও সে রকম হতে হবে,,বড় লোক হওয়া মানেই মদ খাওয়া বড় লোক হওয়া মানেই মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা বড়লোক হওয়া মানেই সব নোংরামো করা!!!!!!!!!!!!!!!!টাকা থাকা মানেই ওসব করা,,টাকা মানে নোংরামো আর যে যতো নোংরামো করতে পারবে এই দুনিয়াটা তোতোই তার হয়ে যাবে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!___এতে স্যারের কোন দোষ নেই রোদ পরিস্থিতি ওনার ব্রেন টাকে এমন করে ওয়াশ করে দিয়েছে যে____________ স্যার কিন্তু কখনো কোনো মেয়ের সাথে জোর করে নি রোদেলা,,বড় লোক বাবা মার যেই মেয়ে গুলো এরকম ছেলেদের সাথে বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে অভ্যস্ত স্যার কিন্তু শুধু তাদের সাথেই______তবে তুমি যেদিন থেকে স্যারের জীবনে এসেছো না রোদ স্যার কিন্তু সেই ২টো বছর মেয়েদের আর নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন নি!!!!!!!!!কিন্তু সেদিনের ঔ বার্থডে পাটি থেকে যে কেনো স্যার তোমাকে তুলে এনে তোমার সাথে,, আমি না সেদিন নিজেও অবাক হয়েছিলাম রোদ কিন্তু স্যারকে বুঝতে দেই নি,,,তোমার সাথে ওসব করার পর স্যার আবার আগের মতো হয়ে গেলো রোদ আবার সেই মেয়ে নিয়ে নোংরামো,,আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না স্যার কেনো আবার,,ভয়ে তাকে জিজ্ঞেস ও করতে পারলাম না কিছু,,_________তুমি যেদিন পুলিশ নিয়ে এসে স্যারকে গ্রেফতার করালে সেদিন তোমার উপর আমার ভীষণ রাগ হয়েছিলো,,চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো আমার স্যার রেপিস্ট না রোদ আমার স্যার রেপিস্ট না,,স্যার যে সেদিন কেনো তোমার সাথে জোর করে ওসব করেছিলো,এই উওর শুধু স্যারই তোমাকে দিতে পারবে রোদ,,শুধু স্যার___স্যার তো তোমাকে নিজের সব দিয়ে ভালোবাসে রোদ,,খুব ভালোবাসে___তোমার জন্য নীলি ম্যাডামের দিকেও সে কোনোদিন ভুলেও চোখ তুলে দেখেন নি রোদ শুধু তোমার জন্য!!!!!!!!!!!!!!!!

আহির ভাইয়া বলতে থাকলেন আর এদিকে আমি কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিলাম,,শূন্য বাড়িতে পুরো দেওয়াল জুড়ে আমার সেই কান্না প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছিলো,,বাকি সব সার্ভেন্ট রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে শুধু দেখে যাচ্ছিলো,,!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

আহিরঃ স্যার কে আমি জীবনে কখনো মসজিদে যেতে দেখি নি রোদ,,একটা ওয়াক্ত কোনোদিন তাকে আমি নামাজ পড়তে দেখি নি___কিন্তু শুধু সেদিন স্যার তোমার জন্য জায়নামাজ এ দাঁড়িয়ে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছিলো রোদ,,দু হাত জুড়ে শুধু একটাই দোয়া করেছিলো তোমার সুস্থতা❤️,,সিজদায় গিয়ে নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বারবার ক্ষমা চাচ্ছিলো,,সৃষ্টিকর্তার কাছে ভিক্ষে চাচ্ছিলো তোমাকে রোদ,,আর সেই তুমি আজ স্যারকে একটা পশুর সাথে তুলনা করলা রোদ,,তোমার থেকে আমি এটা আশা করি নি রোদেলা এটা আশা করি নি_______আচ্ছা তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো রোদেলা তুমি এ বাড়িতে বিয়ে করে আশার পর কি কখনো স্যার একবারো ভুল করে হলেও ছুঁয়েছিলো তোমাকে,,কোনো কোনো জোর করেছিলো তোমার সাথে,,স্যারের যদি তোমার শরীর টারই প্রয়োজন থাকতো রোদ তাহলে তো উনি রোজ রাতে তোমাকে নিয়ে,,,,,,,,,,,,আমি স্যারকে চিনি রোদ নিজের থেকে ভালো জানি উনি তোমাকে বাচ্চাটা নষ্ট করতে বললেও কোনোদিন তোমাকে দিয়ে এই কাজ উনি করাতেন না কখনো না Never রোদ Never ever in his life,,,,,,,,,আসলে স্যার এসবের জন্য বাবা হতে ভয় পায় রোদ,,ভয় পায় যদি উনিও ওনার বাবার মতো___________,,,আমার স্যার কে কি তার একটা সেই ভুলের জন্য ক্ষমা করা যায় না রোদ একবার কি তাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না____আমি আর কিছু বলবো না তোমাকে রোদ আর কিছু না___শুধু এতটুকুই যে, আজ ঔ নোংরা রেস্তোরাঁতে তুমি ঢুকে সাদা ভাত গিলতে গিয়েই বমি করে দিচ্ছিলে সেখানে তোমার শিশির শুধু এই সাদা ভাত লবন দিয়ে মেখে খেয়ে দিনের পর দিন নিজের সাথে লড়াই করে এই জায়গাতে এসে পৌঁছেছে রোদ,,জাস্ট নুন আর ভাত!!

আহির ভাইয়া আর একটা মুহূর্ত ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না,, কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলেন বাড়ি থেকে,,আমি তখনো অঝোরে কেঁদে যাচ্ছি খুব কাঁদছি,,গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদছি,,এই মানুষ টাকে কি করে আমি এতো টা ভূল বুঝতে পারলাম কি করে

মেঝেতে বসে কাঁদতে কাঁদতে আমি ওখানেই লুটিয়ে পড়লাম,,,,,ঘন্টা খানেক বাদে শিশির আসলো,,এসেই রোজকার মতো সর্বপ্রথম সে তার হাতে থাকা এ্যাপরোন আর স্টেথোস্কোপ টা বিছানার এক কানিতে রেখে আমাকে খুঁজতে শুরু করলো,,

শিশিরঃ রোদেলা___রোদ___রোদ____মুনতাসীর কোথায় তুমি??_____মুনতাসীর___রোদেলা কোথায় তুমি___রোদ

ওনার ডাক কানে আসতেই আমি উঠে বসলাম,,এক ছু্ঁটে ওনার ডাক অনুসরণ করে দৌড়ে ছুটতে শুরু করলাম,,উনিও আমার খোঁজে এদিকে আসছিলেন,,আমি গিয়ে সোজা ওনার বুকের উপর ঝাপ্টে পড়লাম,,,উনি ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে ধরেও সামলে নিলেন,,,,উনি আমাকে কবে দেখেছিলেন, কেনো সেদিন আমার সাথে উনি ওসব করেছিলেন ওসব এখন আর আমার জানতে ইচ্ছে করছে না,অন্য একদিন সময় করে আমি ওনার থেকে সব শুনবো,আজ শুধু আমি ওনাকে জড়িয়ে কাঁদবো খুব কাঁদবো,খুব খুব খুব❤️
____________________________

নিষিদ্ধ পল্লী জায়গাটা টা হয়তো নোংরা কিন্তু ওখানে থাকা প্রত্যেকটা মেয়ে কেই আমরা এক করে দেখি,,কেউ ইচ্ছে করে নিজের শরীর বিক্রি করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে না,, অভাব জিনিস টা যার জীবনের সাথে জড়িত সেই বুঝে টাকার পেছনে ছুটতে থাকা কি জিনিস,,তাই একটা মেয়ে বাধ্য হয়েই এসবে জড়িয়ে পড়ে,,নিষিদ্ধ পল্লী তে অর্ধেক মেয়ে যদি নিজের ইচ্ছেয় নিজেকে বিলিয়ে দেয় বাকি অর্ধেক কিন্তু শুধু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে!!শুধু আপসোস আমরা মেয়ে হয়ে মেয়ে দের সম্মান করতে পারি না আর সেখানে আশা করি ছেলেরা আমাদের সম্মান করবে??!!!খুবই হাস্যকর শুনতে লাগে ব্যাপারটা তাই না_____হ্যা শিশির রোদের সাথে যা করেছে তার পুরোটাই অন্যায় ধর্ষনকে আমিও কখনো সাপোর্ট করি না তবে গল্প টা আমাকে কিছু দিয়ে শুরু করতে হতো তাই ওভাবে লেখা,,শিশিরের ব্রেন টাকে এতো কঠোর তৈরি করেছে এই সমাজ শিশির কিন্তু কখনো কোনো মেয়ের সাথে জোর পূর্বক কিছু করে নি যেই মেয়ে গুলো শিশিরের টাকা দেখে স্বেচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলো শিশির শুধু তাদের সাথেই তবে রোদেলা আসার পর সে কিন্তু এসব নোংরামো তে আর জড়ায় নি,,আর রোদেলার সাথে কেনো সে জোর করেছিলো সেটাও হয়তো আমরা কিছু পর্ব পর জানতে পারবো_____আমি উজান হিয়াকে নিয়ে গল্প টা লিখতে কেনো হ্যা বলেছিলাম I hope এখন সেটা সবার কাছে ক্লিয়ার,,,,শুধু বুঝাতে চেয়ে ছিলাম আমরা যেনো মেয়ে হয়ে আগে মেয়ে দের সম্মান টা করা শিখি____যাগ এই শিশির রোদেলাও যে আপনাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে দেখে খুবই খুশি হলাম❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here