#শেষটা_সুন্দর
#পার্ট_৯
শিশির কে নিয়ে আসলাম একটা নদীর তীরে,,জায়গা টা অনেকটা নির্জন,,দুই একটা নৌকা আর ফেরি ছাড়া কিচ্ছু চোখে পড়ছিলো না,,দুজনে গিয়ে একটু দূরে পাড়ে বাঁধানো একটা নৌকার উপর বসে গেলাম,,
রোদেলাঃ কবে আমাকে দেখে ভালো বেসেছিলেন আমাকে আপনি??
শিশিরঃ কে বলেছে তোমাকে আমি ভালো বেসেছি
রোদেলাঃ বাসেন নি বলছেন,,এখনো মিথ্যা
শিশিরঃ না মানে
রোদেলাঃ শিশির আজ অনন্ত আপনি সব টা স্বীকার করুন
শিশির একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে আমার হাত দুটো নিজের দিকে এগিয়ে নিলেন,,যদিও এতে উনি আমার অনুমতি চাইলেন আমি তাকে হাত ধরতে দেবো কি না,,আমিও মানা করলাম না চোখের ইশারায় বললাম ধুরুন।
শিশিরঃ একবার মনে আছে রোদ তুমি তোমার কলেজ থেকে সবার থেকে চাঁদা তুলে সেই টাকা দিয়ে গরম কাপড় কিনে কলেজের সামনে লাইন করে সবাই কে দাঁড় করিয়ে সেগুলো বিতরণ করছিলে
রোদেলাঃ হ্যা ঔ একবার বাবার যখন বিজনেসে অনেক টাকা হয়েছিলো তো তখন আমার কাছে অনেক টাকা জমে ছিলো,,আমি ওগুলো এক করে আমার কলেজে যারা আরো বন্ধু ছিলো ওদের মিল করে সবার থেকে চাঁদা তুলে
শিশিরঃ সেদিন কলেজের সামনে ঔ রাস্তা টা দিয়ে রমজান কাকু গাড়ি টা ড্রাইভ করছিলো,,আর আমার ছিলো ইমার্জেন্সি ওটি,,তোমরা রাস্তা ব্লক করে রাখায় গাড়ি মাঝ পথে আঁটকে___মাথা পুরো গরম হয়ে গিয়েছিল আমার,,গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,,ভীড় ঠেলিয়ে লাইন দিয়ে সামনে যেতে একটা নিষ্পাপ মিষ্টি মেয়ের মুখের হাসিতে চোখ আঁটকে গেলো,,দেখলাম সে কি রকম করে ঔ বুড়ো মানুষ গুলোর সাথে নিজের সব টা উজাড় করে কথা বলছে___মনে আসা রাগ টা আর সেদিন দেখাতে পারলাম না কেনো জানি ___আমি তো ভাবতাম সব মেয়ে রা এক কিন্তু সেদিন তোমাকে দেখে_________হ্যা সেদিন তোমাকে আমার ঔ চোখের দেখায় ভালো লেগেছিল এই যা,,তার পর একদিন আহিরের সাথে ওর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে আমি আসলাম তোমার কলেজে,,তোমাদের ওসময় টিফিন পিরিয়ড ছিলো খুব সম্ভবত,,মাহিবা কে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তোমার হেড স্যারের রুম থেকে বের হয়ে মাঠ দিয়ে মাহিবাকে নিয়ে হাঁটছিলাম,,তুমি ওসময় তোমার বান্ধবীদের নিয়ে মাঠে ওসব কি জানি দাগ দিয়ে কিসব খেলছিলে,,আমার চোখ পড়ে তোমার উপর,,তুমি তখন ধাম করে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেলে কিন্তু তোমার পড়ে যাবার ধরন দেখে তোমার ফ্রেন্ডগুলো তো হাসতে হাসতে শেষ এদিকে তুমিও তোমার ব্যাথা ভুলে গিয়ে ওদের সাথে এমন ভাবে হাসতে থাকলে যে আমি নিজেও ওখানে তোমার হাসি দেখে হাসতে শুরু করলাম,,কেনো জানি তারপর থেকে আমি যাই করতাম না কেনো আমার তোমার কথা মনে পড়তো,,চোখ বন্ধ করলে ভেসে আসতো তোমার ঔ হাসি,,তোমার মাঝে কি জানো একটা মায়া ছিলো জানো রোদ যার জন্য আমি একটু হলেও নিজেকে ওসব নোংরা কাজ থেকে হালকা নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলাম__________তারপর আবার একদিন আহিরের সাথে মাহিবাকে আনতে তোমার কলেজে গেলাম,,,চোখ দুটো সেদিন না চাইতেও আমার অজান্তে তোমাকে খুঁজতে শুরু করলো,,,,কি জানি কি ভালো কাজ করেছিলাম জীবনে সৃষ্টিকর্তা আমার ইচ্ছে টা বুঝে নিলেন,,হঠাৎ আমার চোখ পড়লো তোমার উপর,,আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম,,দেখলাম তুমি মাহিবা আর মিহিকা কে কি জানি বলতে গিয়ে খুব কাঁদছো,,মাহি আর মিহি তাদের ছোট হাত দিয়ে তোমার চোখ মুছে দিচ্ছে,,আমি অবাক হলাম!!আমি এর আগে যতোবার তোমাকে দেখেছি ততোবারই তোমাকে আমি হাসতে দেখেছি কিন্তু হঠাৎ কি হলো যে তুমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে_____তুমি চলে যাবার পর আমি বাচ্চা দুটোর কাছে গেলাম গিয়ে জানতে চাইলাম তুমি কেনো ওভাবে কাঁদছিলে,,মাহি আর মিহি আমাকে সব খুলে বললো,,______সেদিন তোমার প্রতি মনের মাঝে ভালোবাসা জন্মেছিলো কি না জানি না তবে সেদিন তোমার প্রতি একটা অন্য রকম সম্মান তৈরি হয়েছিলো রোদ____আমি জীবনে মা-র পর যদি কোনো মেয়ে কে সম্মানের চোখে দেখে থাকি তাহলে সেটা তুমি ছিলে রোদ!!শুধু তুমি ছিলে
রোদেলাঃ তারপর
শিশিরঃ তারপর আমার তোমার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ে,,আমি তোমার সব কিছু খেয়াল করতে থাকি তুমি কখন কলেজে যাও কখন আসো,,টিউশন কোথায় পড়ো,,কেনো আজ আসো নি কলেজ everything তুমি রিলেটেড সব কিছু খেয়াল করতে শুরু করি______আহির বুঝতে পারে আমার মনের ভাবনা টা_____আহির আমাকে একদিন ডেকে বলে সব মেয়ে এক হয় না স্যার সব মেয়ের টাকার নেশা হয় না,,কিছু মেয়ে টাকার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিলেও অধিকাংশ মেয়েই রোদের মতো হয়,,যাদের চাহিদা টুকু অল্পতেই সীমাবদ্ধ!!_________আমি যবে থেকে এটা ফিল করলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি সেদিন থেকে সেই ২ টো বছর কিন্তু আমি অন্য কোনো মেয়েকে আমার কাছে আমার আশেপাশে আসতে দেই নি রোদ,,বিশ্বাস করো,,ইভেন ওসব লেট নাইট পার্টি ক্লাব কোনো কোনো কিছু তে আমি যাই নি আর,,আমার পুরো টা জুড়ে শুধু তুমি ছিলা রোদ,,আমার ওটি ওপিডি কনফারেন্স চেম্বার সব সামলে আমি যেটুকু সময় পেতাম,,সেই সময় টুকু আমি তোমার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিতাম
রোদেলাঃ আচ্ছা আমাকে আপনি একটা কথা বলুন তো,,আপনার কেনো মনে হয় যে সব বড়লোকের মেয়ে গুলোই টাকার পেছনে ছুটে,,আমার নিরু আপুকে দেখুন তো, আপুর হাসবেন্ডের কতো কি আছে আপনি জানেন তবুও কিন্তু আমার আপু খুব সাধারণ একটা লাইফ লীড করে,,,,,,,,আপনি কেনো মনে করেন যাদের টাকা আছে সেই মেয়ে গুলোই বখে যাওয়া টাইপ,,সব মেয়েরাই খারাপ___সবাই কিন্তু এক না শিশির
শিশিরঃ কি বলো তো রোদ আমি আমার লাইফে Life এর meaning বলতে যা বুঝেছিলাম না সেটা হলো আমাকে বড়লোক হতে হবে আর আমার মাথায় এটা সেট হয়ে ছিলো আমাকেও বড়লোকদের মতো পার্টি করতে হবে মদ খেতে হবে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে হবে,,ছোট থেকে না রোদ আমি এটা বুঝতে শিখেছি এই দুনিয়াতে টাকা মানেই নোংরামো,,Infact রোদ তুমি জানো আমি যতো গুলো মেয়ের সাথে মিশেছি না তারা সবাই শুধু আমার টাকা টা চিনেছিলো,,_____জানো রোদ আমি জীবনে প্রথম যেই মেয়ে টাকে স্পর্শ করেছিলাম আমি কিন্তু তাকে কিছু বলি নি জাস্ট একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দিতেই মেয়ে টা আমাকে নিজে থেকে তার বিছানায় নিয়ে গিয়েছিলো,,,ঔ থেকে আমার এসবে না একদম বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল জীবনে এতো বিষাক্ততা সহ্য করেছি না রোদ সেখানে নোংরা জিনিসের গন্ডি থেকে বাহিরে গিয়ে যে একটা ভালো পৃথিবী আছে আমি বুঝতে পারি নি________একদিন সেই ভালো পৃথিবী টাকে চিনিয়ে দিতে তুমি আসলে আমি আমার সব টা তোমায় দিয়ে বসলাম___যতো নোংরামো ছিলো সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলাম____কিন্তু
রোদেলাঃ কিন্তু কি শিশির
শিশিরঃ আগে বলো তুমি রেগে গিয়ে আমাকে এখন এই পানিতে ফেলে দিবা না
রোদেলাঃ ??___আচ্ছা দেবো না
শিশিরঃ সেদিন ঔ তোমার ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে তুমি যখন এসেছিলে,,সেই হোটেলে আমার একটা কনফারেন্স ছিলো___আহির আমাকে বললো ও নাকি তোমাকে দেখেছে,,আমি কনফারেন্স শেষ করে তোমার পার্টির ভ্যানুর দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু ভ্যানুর সাথে লাগানো ঔ রুমে তোমাকে আর ঔ রাহাত বলে ছেলে টাকে এক সাথে এক রুমে একই বিছানায় দেখে আমার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গিয়েছিলো
রোদেলাঃ মানে!!মাথা ঠিক আছে আপনার
শিশিরঃ আমাকে শেষ করতে দেও____তুমি মনে করো তো ঔ বার্থডে পার্টিতে তুমি আর রাহাত এক রুমে
শিশিরের কথায় সেদিনের বার্থডে পার্টি টার কথা মনে করতে শুরু করলাম,,সেদিন ভ্যানুর পাশে রুম টায় নিপার বার্থডের জন্য কিনে আনা কেক টা রাখা ছিলো,,কেক টার ওজন ভারী হওয়াতে আমি রাহাতকে নিয়ে ওটা আনতে রুমে যাই,,কেক টা দুজনে ধরে আনতে যাবো ওমনি হাত ফস্কে কেক টা হাত থেকে পড়ে যেতে ধরে,,আমি আর রাহাত কেক টাকে বাঁচাতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ি,,আর সামনের কার্পেটে উস্টা খেয়ে রাহাত সহ আমি বিছানায় পড়ে যাই,,আর এমন ভাবে পড়ি যে ওখানে যে কেউ থাকলে সেটাকে খারাপ চোখেই দেখবে প্রথমে স্বাভাবিক
রোদেলাঃ আপনি তার মানে জাস্ট ঔ সামান্য কারণে আমাকে তুলে এনে,,এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না শিশির,,কখনো না
শিশিরঃ তোমার কাছে ওটা সামন্য কারণ ছিলো রোদ,,কিন্তু ঔ মুহুর্তে,,পর্দা টা সারিয়ে তোমাকে আর রাহাতকে একসাথে বিছানায়,, ঔ কয়েকটা সেকেন্ড,,আমার মনের মাঝে কি হয়েছিলো সেটা শুধু মাএ আমি জানি রোদ আমি জানি,,তোমাকে বিশ্বাস করে ভরসা করে আমি সব ছেড়ে দিয়েছিলাম,,ভেবেছিলাম পৃথিবীতে এখনো তোমার মতো মেয়ে আছে যে কি না___কিন্তু সেদিন তুমিও আমার ভুল টা ভেঙে দিলে,,ওসময় আমার মাথা কাজ করছিলো না,,মনে হচ্ছিলো তোমাকে শেষ করে দেই,,খুন করে দেই তোমাকে,,তাই আমি
রোদেলাঃ তাই আমি কি হ্যা তাই আমি কি,,আপনি জানেন আপনার একটা ভুল বোঝার জন্য আপনি আমার কতো বড় সর্বনাশ করেছেন সেদিন,,
শিশিরঃ আমি জানি রোদ,,আমি তোমার সাথে যা করেছি তা করা আমার উচিৎ হয় নি,,আমি ভুল করেছি____তারপর যখন আমি জানতে পারলাম তুমি ঔ টাকা টা নিয়ে,,আমার মাথা আরো খারাপ হয়ে গেলো,,আমি ভাবতে শুরু করলাম তুমিও শেষমেশ গিয়ে
রোদেলাঃ আমি টাকা টা নেই নি শিশির
শিশিরঃ আমি জানি টাকা টা তুমি নেও নি,,টাকা টা সালেহা খালা
রোদেলাঃ তাহলে কিসের জন্য আপনি তার পরো ঔ পার্টিতে ঔ মেয়ে টার সাথে
শিশিরঃ আমি টাকা টা যে সালেহা খালা নিয়েছে সেটা অনেক পড়ে জানতে পারি,,আর সেদিন পার্টিতে আমার খুব রাগ হচ্ছিলো তোমাকে আর অভ্রকে একসাথে দেখে,,অভ্র তোমার হাত ধরে কি করে তুমি আর অভ্র একসাথে___আমি সহ্য করতে পারি নি,,আমি যদিও বা তোমার সাথে ওসব করার জন্য মনের মধ্যে কোথাও একটা অনুতপ্ত ছিলাম কিন্তু তোমাকে অভ্রর সাথে দেখার পর___আমি পারি নি সামলাতে নিজেকে,,তাই তোমাকে দেখানোর জন্য আমি
শিশির আর কিছু বলার আগে আমি শিশির কে থামিয়ে দিলাম,,কারণ ঘটনা যা বোঝার তা আমার অলরেডি বোঝা শেষ
রোদেলাঃ দোষ টা আপনার না শিশির দোষ টা হয়তো এই পৃথিবীর,,এই পৃথিবীটা আপনাকে ভালোবাসা কি জিনিস সেটা শেখাতে পারে নি,,তাই আপনি আমাকে ভালো বেসেও বাসতে পারেন নি
শিশিরঃ রোদ আমি
রোদেলাঃ ভালোবাসতে গেলে আগে বিশ্বাস করতে হয় শিশির,,ভালোবাসার ভীত টাই হচ্ছে বিশ্বাস,,আজ যদি আমার প্রতি আপনার মনে একটুও বিশ্বাস থাকতো তাহলে আপনি কখনো শুধু আমাকে আর রাহাতকে ওভাবে একসাথে দেখে
শিশিরঃ রোদ আমার কথা শুনো
রোদেলাঃ না শিশির আপনি সেদিন আমার সাথে জোর করে যা করেছেন আমি তাতেও এতো টা কষ্ট পাই নি যতো টা আজ আপনার কথা শুনে এটা জানতে পারলাম যে সামান্য একটা ভুলের জন্য আপনি আমার সাথে
শিশিরঃ সেই ভুলের শাস্তি তো শুভ্র আমাকে এখন অবধি দিয়ে যাচ্ছে রোদ,,হয়তো এই শাস্তি আমি সারাজীবন
রোদেলাঃ খবরদার এখানে আমাদের বাচ্চা টাকে টেনে নিয়ে এসে আপনি আমাকে দূর্বল করতে চেষ্টা করবেন না
শিশিরঃ আমি কেনো শুভ্র কে আমাদের মাঝে এনে,,রোদ তুমি শোনো আমার কথা টা,,আমার একটা ভুলের জন্য কি আমাকে একবার আরেক টা সুযোগ তুমি দিতে পারবে না রোদ
রোদেলাঃ না শিশির আমি আপনাকে আর কোনো সুযোগ দেবো না,,আমি যাও বা ভেবেছিলাম আপনাকে নিয়ে জীবন টা নতুন করে সাজাবো কিন্তু আর না___আপনি আমাকে অবিশ্বাস করে,,আপনি তো একবার অনন্ত আমাকে
শিশিরঃ I am sorry রোদ
রোদেলাঃ আপনার এই সরি আপনি আমার কাছে রাখুন,,এখন তো মনে হচ্ছে আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেই আমি ভালো করতাম,,জাস্ট এই কারণে আপনি আমার সাথে,,এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না শিশির,,এটা জাস্ট একটা
শিশিরঃ রোদ লিসেন,,রোদ,,রোদ কোথায় যাচ্ছ,,রোদ শুনো,,আরে___রোদ আমি ক্ষমা চাচ্ছি তো রোদ___রোদ কোথায় যাচ্ছ রোদ
শিশিরের কথায় মনটা খুব খারাপ হয়ে আসলো আমার,,জাস্ট সেদিন আমাকে আর রাহাতকে একসাথে ওভাবে দেখার জন্য উনি,,আমি উঠে সোজা হাঁটতে শুরু করলাম,,আমি জানি এটা আমার কাছে একটা সামান্য কারণ হলেও শিশিরের কাছে এটা বিরাট কিছু কিন্তু তারপরো,শিশির আমার পেছন পেছন দৌড়ে আমার সাথে এলেন,,
শিশিরঃ রোদ লিসেন না,,তোমার যা শাস্তি দেওয়ার তুমি দেও আমাকে___কিন্তু প্লিজ এভাবে রাগ করে___প্লিজ রোদ আমার একটা ভুলের জন্য কি আমাকে
রোদেলাঃ আপনি ভুল করেন নি,,আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন!!
শিশিরঃ আর কখনো আমি এরকম করবো না,,কথা দিচ্ছি তোমায়
রোদেলাঃ করি না আমি আপনাকে বিশ্বাস
শিশিরঃ রোদ আমি
রোদেলাঃ না শিশির আমি এখন আর আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না,,আপনি প্লিজ এখন আমার সামন থেকে সরে যান আমার আপনাকে দেখেই রাগ হচ্ছে
শিশিরঃ রোদ
রোদেলাঃ প্লিজ শিশির
আমি শিশির কে থুইয়ে সেদিন একা একা বাড়ি ফিরে এলাম,,ঠিক করলাম আমি মা-র সাথে পরশু গ্রামে ফিরে যাবো,,আর কখনো শিশিরের সাথে কোনো কথা বলবো না কখনো না,,
______________________
আমি মা’র সাথে গ্রামে আসলাম,,এই দুদিন বাড়িতে থাকতে শিশির অনেক চেষ্টা করেছিলো আমার সাথে কথা বলার কিন্তু আমি সেই সুযোগ শিশির কে দেই নি,,এতো সহজে আমি শিশির কে মাফ করবো না এতো সহজে না___গ্রামে যতো বার মা-র সাথে গেছি দু চারদিনের বেশি থাকা হয় নি,,আর বেশি দিন থাকলেও দিন গুলো প্রথম দিকে আমার ভালোই কাটে পড়ে আর বেশিদিন শিশির কে ছাড়া থাকতে ভালো লাগতো না,,এবারো পুরো দু সপ্তাহ হয়ে আসলো আমি মা’র সাথে গ্রামে,,এদিকে শিশির কে দেখার জন্য মন টা একটু খারাপ হলেও আমি নিজেকে শক্ত করে নিলাম,,ওদিকে শিশির আমাকে ফোনে না পেয়ে মা’র সাথে কথা বলে আমার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু আমি তো বলেইছি আমি শিশির কে এতো সহজে ক্ষমা করবো না মানে করবোই না
বাসবিঃ এরকম কেনো তুই,,এদিকে আমার ছেলে টাকে দেখার জন্য নিজে শেষ হয়ে যাচ্ছিস ওদিকে আবার ওর সাথে কথাও বলতে চাইছিস না
রোদেলাঃ শুনো মা,,তোমার ছেলে একটা খারাপের খারাপ,,এখন আমার সাথে কথা বলতে চাইছে কেনো উনি বাজে লোক একটা,,বাড়িতে থাকলে তো আমার দশটা কথার পর একটা উওর দেয় আর এখন এসব ফোন করে করে কি বুঝাতে চাইছে,,দরদ যেনো উওলে পড়ছে
বাসবিঃ আরে তুই এতো হাইপার কেনো হয়ে যাচ্ছিস বল তো
রোদেলাঃ শুনো মা তোমার ছেলে না খুব বলে টাকা হলে সব পাওয়া যায় টাকা দিয়ে সব কেনা যায়,,তা টাকা দিয়ে থাকুক উনি ওনার ঔ আলিশান বাড়িতে,,আমার কি দরকার ওনার
বাসবিঃ এ যা আমার মেয়ে টার তো দেখছি খুব রাগ হয়েছে,,আচ্ছা যা তোর যতোদিন মন চায় তুই আমার সাথে গ্রামে থাক আমি আর কিচ্ছু বলবো না তোকে,,ঔ বদজাত টা এবার একটু বুঝুক
_____________________
মা’র সাথে পাক্কা চার মাস ধরে আমি গ্রামে আছি এর মাঝে প্রায় দশ বারের বেশি শিশির এসেছিলো আমার সাথে কথা বলতে কিন্তু আমি বলি নি,,,ওনাকে বলার সুযোগো দেই নি,,বাড়িতে থাকতে থাকতে এই নয় দশ মাসে আমি এক প্রকার ওনার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছিলাম,,উনি বাড়ি ফিরে এসে সর্বপ্রথম আমি ঠিক আছি কি না সেটা দেখতো,,সকালে যাবার আগে আমি ঘুমে থাকলেও আমাকে একবার দেখে নিয়ে বের হতো এরকম আরো অনেক কিছু কিন্তু এই আমি না থাকাকালীন এ কদিনে ওনার যেনো সব এলোমেলো হয়ে একবারে যাচ্ছে তাই হয়ে আছে আমি ছাড়া,,
আজ পাঁচ মাসের কোঠায় উনি ঠিক করেছেন উনি আমায় নিয়ে বাড়ি ফিরবেন তবেই এবার ঢাকা ব্যাক করবেন,,আমারো একটু মন টা ঢাকা ঢাকা করছিলো,,তাই ঠিক করলাম আমি এবার ফিরবো ওনার সাথে,,অনেকদিন তো দূরে সরে যা শাস্তি দেবার দিলাম এখন না হয় একটু ক্ষমা করাই যায়,,কিন্তু তবুও মাথায় ঘুরছিলো দুষ্ট বুদ্ধি তাই ঠিক করলাম ওনাকে আর একটু ভোগাবো
___________________
প্রতিবারের মতো উনি এবারো ব্যস্ত আমার সাথে দুটো কথা বলতে কিন্তু আমি তো আমার ভাব নিয়ে চলছি,,রাতে খাওয়া শেষে আমি আমার আর মার ঘরের মশারী টানছি এদিকে মাঘ মাসের শীত এখন দরজায় কড়া নাড়ছে,,আর গ্রামের দিকের শীত মানেই তো যেনো সুইজারল্যান্ড,,এমন সময় শিশির রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আমার হাত ধরে টেনে এনে আমাকে তার বুকের উপর ফেললো
শিশিরঃ কি চাইছো তুমি রোদ,,যে আমি শেষ হয়ে যাই
রোদেলাঃ ??
শিশিরঃ রোদ আমি আর পারছি না,,রোদ তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছো রোদ সেই অভ্যাস থেকে বেড়িয়ে আমি
রোদেলাঃ_____
শিশিরঃ আর কতো শাস্তি দেবা,,পাঁচ টা মাস ধরে আমাকে রেখে গ্রামে পড়ে আছো,,আমার আমার জন্য একটুও তোমার কষ্ট হয় না না,,একটুও করুনা হয় না
রোদেলাঃ না হয় না
শিশিরঃ কি করতে হবে বলো আমাকে,তুমি যা বলবা আমি তাই করবো
রোদেলাঃ যা বলবো তাই করবেন
শিশিরঃ হ্যা যা বলবা তাই
রোদেলাঃ ঠিক তো
শিশিরঃ ঠিক
রোদেলাঃ পাক্কা প্রমিস করুন আগে
শিশিরঃ করলাম
রোদেলাঃ ভেবে বলছেন তো
শিশিরঃ বলছি
রোদেলাঃ ঠিক আছে,,যান গিয়ে পুকুর ঘাট থেকে পুকুরে দুটো ডুব দিয়ে দশমিনিট গোসল করে আসুন????
শিশিরঃ হোয়াট!!
রোদেলাঃ হুম আপনি তো বললেন আমি যা বলবো আপনি তাই করতে রাজি
শিশিরঃ হ্যা কিন্তু রোদ,,,পুকুরের পানি পুরো বরফ হয়ে আছে রোদ
রোদেলাঃ হ্যা তো
শিশিরঃ তুমি,,তুমি একটা পাগলি রোদ,,,আমি এখন দশ মিনিট ধরে ঔ বরফ জলে ডুবে থাকলে তুমি ফিরবে আমার সাথে
রোদেলাঃ হুম পাক্কা পাক্কা
শিশির একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিরহির করে কাঁপতে কাঁপতে এই রাত এগারোটায় পুকুর জলে গিয়ে পুকুরে ডুব দিলেন,,এদিকে মা আমি আর জিনি হাসতে হাসতে পুরো শেষ,,না শিশিরের সামনে বেশি হাসা যাবে না,,ছেলে মানুষ ইগো তে গিয়ে লাগলে আবার প্রবলেম আছে??
পরের দিন ঠান্ডা লেগে বর আমার রুমাল নিয়ে এক হাতে নাক মুছছে আরেক হাতে ফোনে কি সব টাইপ করছে,,তবু আমি তাকে জোর করে আজ মা’র স্কুলে নিয়ে আসলাম,,অনেক দিন পর উনি আজ স্কুলে এলেন তাই সবাই যেনো ওনাকে পেয়ে খুশিতে এক হয়ে কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না
শিশিরঃ আর কতোক্ষন তুমি এখানে থাকবে রোদ,,আমি দুদিন থেকে কতো গুলো ওটি চেম্বার সব ফেলে রেখে এসেছি
রোদেলাঃ হ্যা তো কে আসতে বলেছে যান আপনি
শিশিরঃ যাবো মানে!!তুমিও যাবা আমার সাথে
রোদেলাঃ ঠেকা আমার
শিশিরঃ তুমি কিন্তু কাল বলেছিলে আমায় রোদ আমি এই শীতে ঔ ঠান্ডা জলে ডুবে থাকলে তুমি আমার সাথে
রোদেলাঃ আমি!!আমি বলেছিলাম আপনাকে এসব কথা,,কখন
শিশিরঃ হেয়ালি হচ্ছে??তুমি ফিরবে আমার সাথে না আমি সেবারের মতো আবার তোমায় তুলে নিয়ে যাবো
রোদেলাঃ নিয়ে দেখুন তো শুধু,,আপনার এই মাথার একটা চুলো অক্ষত থাকে কি না তাই দেখবো আমি
শিশিরঃ রোদ, ও রোদ,,তুমি আর কতো শাস্তি দিবে ৬মাস ধরে আমাকে রেখে এখানে পড়ে আছো,,বাড়ি টা পুরো ফাঁকা হয়ে আছে আমার রোদ
রোদেলাঃ তো
শিশিরঃ আমার খুব কষ্ট হয় রোদ তোমাকে ছাড়া একা থাকতে একটু বুঝো
রোদেলাঃ হুম,,,তাহলে যান ওখানে মা বাচ্চা গুলোকে পানিসমেন্ট দিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখছে,,আপনি এখন ঔ বাচ্চা গুলোর সাথে গিয়ে দাঁড়িয়ে ১০০বার কান ধরে উঠবস করুন যান
শিশিরঃ এসব কি ছেলেমানুষী রোদ,,আমি আমি এখন এই বাচ্চা গুলোর সাথে
রোদেলাঃ হ্যা ওদের সাথে এখন কান ধরে উঠবস করতে পারলে করুন নয়তো আমি আর আপনার সাথে ফিরছি না
শিশিরঃ না??
রোদেলাঃ যান তাহলে
শিশিরঃ যাচ্ছি??
শিশির রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে ঔ বাচ্চা গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করলো,,বাচ্চা গুলো তো শিশির কে দেখে হাসতে হাসতে কুপোকাত,,এদিকে শিশিরের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে আমিও আমার হাসি থামাতে পারছিলাম না,,দৌড়ে মা কে আর জিনি কে নিয়ে এসে দেখাতে শুরু করলাম মা দেখো শিশির কি করছে,,সবাই মিলে শিশির কে দেখে হেঁসে যাচ্ছি,,অনেক ক্ষন এভাবে কান ধরে উঠবস করার পর শিশির এবার ক্ষেপে গেলো,,ভয়ে আমরা তিনজন চুপ হয়ে গেলাম
রোদেলাঃ এই রে ক্ষেপে গেছে মনে হয়,,এখন কি করি আমি
শিশিরঃ আমি বাড়ি গিয়ে ব্যাগ গুচ্ছাচ্ছি,,মা তোমার মেয়ে কে বলো সে যেনো জাস্ট এক ঘন্টার মধ্যে কি কাজ আছে সব সেরে আমার গাড়িতে গিয়ে বসে??
__________________________