শেষের পাতায় তুমি?,
পর্ব-০১
writer_shanta_islam
আমাকে ছেরে দেও,,এভাবে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আমাকে যেতে দেও প্লিজ।
-এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
-সাদিক তুমি কি ভাবছো এভাবে তুমি আমার ভালোবাসা পাবে।
-আমি এমনটা করতে চাইনি রিয়া,,,
রিয়া কান্না করতে করতে আবারো হাতের বাধন খোলার চেস্টা করে। সাদিক একটু হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,কেনো বৃথা চেষ্টা করছো,,,তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ছাড়বো না।
-জোর করে কিছু পাওয়া যায় না সাদিক,,,
-কেনো এমন করছো রিয়া। একটু বোঝার চেস্টা করো,,আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না।
-আমার হাত ব্যাথা করছে,,দয়া করে আমার হাতের বাধনটা খুলে দেও,,,
-তুমি কি মনে করো তোমাকে এভাবে কস্ট দিতে আমার ভালো লাগছে। তোমার থেকে দিগুণ কস্ট আমি পাচ্ছি। কেনো তুমি আমাকে বুঝতে চাইছো না।
-সাদিক আমি এক কথা বার বার বলবো না। আমাকে যেতে দেও,,,কথাগুলো বলে রিয়া হাতের বাধন খোলার চেস্টা করছে। কি করে খুলবে,,সাদিক যে অনেক শক্ত করে চেয়ারের সাথে রিয়ার হাত বেধে রেখেছে। রীতিমতো রিয়ার হাতের এক কোনা ছিলে গেছে,,,রিয়াকে এভাবে কস্ট পেতে দেখে সাদিক রিয়ার পাশে হাটু গেরে বসে ওর গালে দু’হাত রেখে বললো,,,রিয়া আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ছেরে যেও না। আমি কোনো ভুল করে থাকলে আমাকে বলো,,আমি সুধরে নিব। কিন্তু প্লিজ আমাকে এভাবে ছেরে যাওয়ার কথা বলো না।
সাদিকের কথা শুনে রিয়ার চোখ থেকে অনুতপ্তের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সাদিক রিয়ার হাতের বাধন খুলে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে। রিয়া সাদিকের হাত দুটো আকড়ে ধরে সাদিকের কপালে চুমু দিয়ে বললো,,,আমিও তোমাকে ভালোবাসি সাদিক,,কিন্তু আমাকে ক্ষমা করে দিও,,,,,
,
,
সাদিকের গলা শুকিয়ে গেছে। ঘেমে পুরো গা ভিজে যাচ্ছে। সাদিক অনেক চেস্টা করছে চোখ খুলতে কিন্তু চোখের পাতাগুলো ভিশন ভাড়ি হয়ে আছে,,,কিছুতেই চোখ খুলতে পারছে না। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙে সাদিকের।
-কি হলো,,,আবার সেই একি স্বপ্ন দেখলি নাকি?
সাদিক কপালে হাত রেখে ঘাম গুলো মুছে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো হ্যাঁ,,
রাফি সাদিকের কাধে হাত রেখে বললো,,ভুলে যা সব কিছু,,ওটা খারাপ স্বপ্ন ছিলো। সাদিক রাফির হাত কাধ থেকে সরিয়ে রাফির চোখে চোখ রেখে বললো,,আচ্ছা রাফি তুই কি আমাকে বিশ্বাস করিস? বিশ্বাস কর ভাই আমি কিছু করি নি।
রাফি কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে বললো,,,তুই ছাড় এসব কথা। জলদি করে রেডি হয়ে নে,,নাহলে আন্টি এভাবে দেখলে রাগ করবে।
সাদিক- তুই কোথায় যাচ্ছিস?
রাফি- সুমনের বাসায়,,সুমন আর নিশার নাকি আবার ব্রেকাপ হয়েছে। সেই খুশিতে সুমন পার্টি দিচ্ছে। তুই কি যাবি?
সাদিক মুচকি হেসে বললো,,পার্টিতে নিশ্চয়ই কেও একজন খুনিকে দেখতে চাইবে না। আমি জানি তুইও ভাবিস রিয়ার মৃত্যুর পিছনে আমি দ্বায়ী।
রাফির চোখমুখ গমভীর হয়ে যায়।
-ভাই আমি কখনো এটা বলিনি,,,
-চলে যা এখান থেকে,,,
-কিন্তু সাদিক,,,,,রাফি কিছু বলার আগে সাদিক রাফিকে ঘর থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
– কাওকে দরকার নেই আমার। কাওকেই না,,আমি আমার ভালোবাসার খুনি। আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে খুন করেছি,,আমি একজন খুনি। খুনি আমি খুনি,,সাদিক কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়ে।
,
,
,
-ভাই এই জামাটার দাম কত?
-এক দাম পঁচিশো টাকা আফা,,
-দুইশ টাকা দিবো,,,
দুইশ টাকার কথা শুনে তানিয়া পিছন থেকে একটু সরে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো,,মান ইজ্জত সব শেষ। পাশে থাকা এক আন্টি তানিয়ার কথা শুনে ফেলে,,,আন্টিকে একটা ভেটকি হাসি দিয়ে তানিয়া ওর মার দিকে ইশারায় দেখিয়ে বললো এই মহিলাকে আমি চিনি না।
-না আফা এমনে তো আমাগো লস হইয়া যায়। পঁচিশো টাকার জামা দুইশো টাকায় কেমনে দেই,,,
-দিলে দেন না দিলে গেলাম। কথাটা বলেই যেই তানিয়ার মা হাটা দিবে পিছন থেকে লোকটা ডেকে বললো,,আর একশো টা টাকা বাড়াই দিয়েন আপা। দোকানদারের কথা শুনে তানিয়া হতবাক হয়ে একবার তার মার দিকে তাকায় আরেক বার দোকানদারের দিকে।
-আর একটা টাকাও দিব না। দুইশোতে দিলে দিন,,নাহলে গেলাম।
-আচ্ছা আপা নিয়ে যান।
তানিয়া অবাক না হয়ে পারছে না। পচিশো টাকার জামা দুইশো টাকায়,,কীভাবে সম্ভব। হঠাৎ তানিয়ার চোখ পড়ে সেই আন্টির উপর যাকে তানিয়া মিথ্যে বলেছিলো যে এটা ওর মা না। মহিলাটা এতোক্ষণ যা হলো সব দেখছিলো,, তানিয়া আবারো ওই আন্টির দিকে ভেটকি হাসি দিয়ে বললো,,,আসলে এটা আমারি মা,,, ভুলে মিস্টেক হয়ে গেছে,,ভিরের মধ্যে কোনটা কার মা চেনাই যায় না। কথাটা বলে তানিয়া তার উপর নিচের দুই পাটি দাত মেলে আবারো হাসতে থাকে। এমন সময় সুচরিতা এসে তানিয়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,কিরে বলদের মতো এভাবে ভেটকাচ্ছিস কেনো?কেও দেখলে বলবে পাবনা থেকে পাগল ছাড়া পেয়েছে।
আমার কথা শুনে তানিয়া একটু রাগী গলায় বললো,, আমি পাগল,,,তোর বাপ পাগল।
-মারবো এক ঠাটিয়ে,,আমার বাপ তোর কি হয়,,,
তানিয়া মুখ ভেংচি কেটে বললো,,হ্যাঁ হ্যাঁ ভুলে তোর বাপ আর আমার বাপ এক হয়ে গেছে। তোকে তো স্টেশন থেকে কুরিয়ে নিয়ে এসেছিলো,,,ভুলে গেছিস।
এই মেয়েটা দিন দিন বড় হচ্ছে আর বদমাশের আচাড়ি হচ্ছে। নিজের বড় বোনের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা ভুলে গেছে। এ যে আমার বোন হলো কীভাবে আল্লাহ তায়ালা মালুম। মাঝে মাঝে মনে হয় ডিএনএ টেস্ট করে চেক করি আসলেই কি এই বাদরটা আমার বোন নাকি,,,কথা বলার ধরন দেখো না মুখে ভেংচি কেটে কথা বলে,, আজ একে মজা দেখাতেই হবে,,তানিয়ার চুলের মুঠো ধরে যেই পিঠে কিল বসাবো এমন সময় মা এসে তানিয়া আর আমার কান ধরে মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,,,মার্কেটেও ঝগড়া শুরু করেছিস। এমন লাথি মারবো দুটোকে দুটো দু দিকে যেয়ে পড়বি। তানিয়া মায়ের হাত ধরে বললো,,,আহ মা সবাই দেখছে,,মান ইজ্জত সব গেলো,,,ছারো প্লিজ,,,
ইসসস এতোটুকু মেয়ে তার নাকি মান ইজ্জত,,,এখানে আমার কানটা জ্বলে যাচ্ছে ও আছে ওর ইজ্জত নিয়ে। মা আমাদের দুই বোনের হাতে কতগুলো ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো আয় আমার পিছনে আয়,,,
তানিয়া আমার হাতে ওর ব্যাগগুলো দিয়ে বললো,,একটু ধর তো আপু,,কথাটা বলে তানিয়া ওর ফোনটা বের করে কি জেনো লিখতে শুরু করে।
আমি ওর মাথায় একটা টোকা মেরে বললাম,,,আমার হাতে ব্যাগ ধরিয়ে তুই কি করছিস? মাকে ডাক দিব?
তানিয়া ফোনটা ব্যাগে রেখে বললো,,ফেসবুকে পোস্ট করলাম,,,জীবনটা বেদনার পচিশ হাজার টাকার একটা ড্রেস কিনলাম,,কিন্তু পছন্দ হলো না,,হেশট্যাগ সেড লাইফ উইথ সেড ইমোজি।
এই মেয়েটা পারেও বটে কাজের কাজ কিছু করে না চাপাবাজীতে ওসতাদ।
বড়বোনের বিয়ে উপলক্ষে মার সাথে আমি আর তানিয়া দুজন বেড় হলাম। এ জীবনে তানিয়ার সাথে মার্কেটে আর আসছি না। তানিয়া আমার ছোট বোন,,ছোটরা একটু দুষ্টু থাকে জানেনি তো,,,কিন্তু একে শুধু দুষ্টু বললে ভুল হবে সয়তানের খালাতো বোনও এর কাছে হার মানে। বাসায় এসে রুমে ডুকতেই দেখি ইশা নানির আলগা দাতের মধ্যে নিম পাতা লাগাচ্ছে। ইশা হলো আমার বড়টা,,,যেটার বিয়ে হবে,,আমাদের পিঠাপিঠি বললেও চলে,,যদি তানিয়া সয়তানের খালাতো বোন হয়ে থাকে তাহলে ইশাকে সয়তানের নানি বললে ভুল হবে না,,,,,ইশাকে দেখে মনে হচ্ছে আবার কোনো কান্ড ঘটাতে যাচ্ছে,,,আর সেটা যে নানির দাতের সাথে তা আমার বোঝা হয়ে গেছে,,,,,ব্যাগগুলো হাত থেকে ফেলে আতংকিত কন্ঠে বললাম,,
,
,
,
-সর্বনাশ ইশা একি করছিস? তুই নানির দাতে নিমপাতা লাগাচ্ছিস কেনো?নানি একবার জানতে পারলে তিন বোনের গরদান একসাথে নিবে। ইশা দাতটা নিয়ে ফুটবলের মতো খেলতে খেলতে ভিলেন স্টাইলে আমার কাছে এসে বললো,,,ওই বুড়িকে মারার পরিকল্পনা আটছি,,,,ইশার কথায় আমি একটুও হতভম্ব হইনি। তানিয়া আর ইশা সবসময় নানিকে উসকানোর পরিকল্পনা আটে। এটা নতুন কিছু নয়। তানিয়া আর ইশার সাথে নানির বনে না। তিনজন তিন সতীনের মতো লেগে থাকে। গতবার ইশার সাথে মার্কেটে এসেছিলাম,,আমাদের ইশা মহারানী আবার বেশি গরম সহ্য করতে পারে না,,তাই মার্কেটে আসার কিছুক্ষন পড়েই সে বেহুশ হয়ে যায়। ও যে বেহুশ হয়েছে এটা নতুন কিছু নয়। কাজের কথা বললেই মহারানী মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যায়। সয়তানি বুদ্ধিতে আবার ওস্তাদ,,একজন চাপাবাজীতে আরেকজন সয়তানিতে,,মাঝে মাঝে ভাবি আসলেই কি এরা আমারি বোন,,,তানিয়া আমার পাশে দাড়িয়ে ছিলো,,ইশার হাত থেকে নানির দাতটা নিয়ে বললো,,,সেকি ইশা নিমপাতা লাগালি কেনো?বিষ লাগাতে পারলি না,,খেয়ে বুড়িটা মরতো।
চলবে,,,