শেষের পাতায় তুমি?
পর্ব-০৪
writer_Shanta_islam
-আপু তুই এটা কি করলি,,উনি আমাকে চিঠিটা দেয়নি।
তানিয়ার কথাশুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। কি বলছে এই মেয়ে। উনি চিঠিটা দেয়নি তো কে দিয়েছে।
– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস! উনি দেয়নি তো কে দিয়েছে?
-তুই সবসময় একটু বেশি বুঝিস,,উনার পাশে আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো,,ওই ছেলেটা চিঠিটা দিয়েছে।।
তানিয়ার কথাশুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম আসলেই তো,,স্টেজে উনার পাশে আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো। এই যা আবার কেস খেয়ে গেলাম। আজ যে তোর কি হয়েছে সুচরিতা। গলার ঢোক গিলে বিনীত নম্র সুরে বললাম,,,– ইয়ে মানে,,আসলে,,আমি বুঝতে পারিনি,,আমি অনেক দুঃখিত। আসলে সরি,,,,
আমার কথাটা শেষ না করতেই ছেলেটা গাল থেকে হাত নামিয়ে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে উনার জাওয়া দেখছিলাম। এ কি মানুষ নাকি অন্য কিছু। এতো বড় একটা থাপ্পড় মারলাম মানুষটা কিছু বললো না। বোবা নাকি। ইয়া আল্লাহ এ তো সত্যি সত্যি বোবা মনে হচ্ছে। এই নিয়ে তিনবার টক্কর খেলাম কিন্তু উনার মুখ থেকে একটু টু শব্দ ও শুনলাম না। ইসস যদি এমনটা হয় তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
পুরো অনুষ্ঠানে আমার আর মন বসলো না। মানুষটাকে অনেকবার খুজেছি কিন্তু এর পর আর দেখাও পেলাম না। হয়তো অভীমান করে চলে গেছে। বর পক্ষের আত্নীয়সজনদের কাছে জিজ্ঞেস করার পর বুঝলাম ছেলেটা হবু দুলাভাইয়ের কাজিন।
সেদিন সারারাত আর ঘুম হলো না! কীভাবে ঘুমোবো বোবা একটা প্রানীর গায়ে হাত তুলেছি আল্লাহ আমাকে মাফ করবে না। তাছাড়া তানিয়া এই নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। বলেছে,,দেখ সুচরিতা তোর জন্য একটা নির অপরাধ মানুষ আপমানিত হয়েছে। তোর উচিৎ উনার কাছে ক্ষমা চাওয়া। আর ক্ষমা না করলে পা ধরে মাটিতে বসে পড়বি।
তানিয়ার কথাটা ভেবে দেখলাম মন্দ বলেনি। দোষ না করেও বেচারা চর খেলো,,দোষ তো আমারি না জেনেই একশন করে বসলাম। নাহ ক্ষমা চাইতেই হবে।
সকাল পাচটায় নানির চেচামেচিতে ঘুম ভাংলো। বিয়ে বাড়ি বলে কথা অনেক কাজ আছে। ঘুম থেকে উঠার সময় ইশা আপু আর নানির মধ্যে ছোট খাটো ঝগড়া বাধলো। এটা আমাদের বাসায় দৈনন্দিন কাজের মতো হয়ে গেছে। ঝগড়া না বাধলে নানি ইশা আপু আর তানিয়ার কারোরি পেটের ভাত হজম হয় না।
ভাবছি বিয়ে বাড়িতে সব আত্নীয়সজন আসবে,,তাহলে তো ওই ছেলেটারও আসার কথা। তখনি না হয় ক্ষমা চেয়ে নিব।
,
,
-ভাইয়া তুই এখনো রেডি হসনি? আমাদের সবাইকে বের হতে হবে!
সুয়ে সুয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্টটা চেক করছিলাম। এমন সময় রাফি এসে রেডি হওয়ার জন্য জোরাজুরি করছে।।
-রাফি আমার ভালো লাগছে না। তোরা যা আমি যাবো না।
– ভাইয়া তোর কি হয়েছে বল তো কাল ও না বলে এসে পরলি,,আবার এখন বলছিস,,,একি ভাইয়া,, দেখি দেখি তোর গালে এটা কীসের দাগ লাল হয়ে আছে! মনে হচ্ছে কেও চর মেরেছে।
রাফির কথা শুনে সেই আজব মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। মেয়ে বললে ভুল হবে একটা আস্তো তুফান। হুট করে আসে আর হুট করে একটা ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়।
-কিরে কিছু বলছিস না কেনো? কীভাবে গালের এ অবস্থা হলো?
– আরে ওই মেয়ে,,,
– মেয়ে! কোন মেয়ে?
– না কিছু না যা এখান থেকে?
– কি হয়েছে বল না,,বল ভাইয়া প্লিজ প্লিজ প্লিজ,,
-সব হয়েছে তোর জন্য,,,
– আমার জন্য?
– হ্যাঁ তোর জন্য! তুই যেই মেয়েটাকে চিঠি দিয়েছিস ওই মেয়ের বড় বোন এসে আমাকে থাপ্পড়িয়ে গেছে।
-কি বলছিস ভাইয়া তোকে থাপড়িয়েছে। নিকুচি করেছি প্রেমের,,আজ ওই মেয়ে আর ওই মেয়ের বোনের একদিন। এবার উঠ বিয়েতে যাবো।
-রাফি আমার ভালো লাগছে না! তুই যা,,,
-ভাইয়া চল না চল চল চল প্লিজ,,
রাফির টানাটানিতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হলো। এবার আল্লাহর কাছে দোয়া করছি ওই তুফানের সাথে যেনো আমার দেখা না হয়। অনুষ্ঠান এরেঞ্জ করা হয়েছে মেয়েদের বাড়িতে,,বিয়েতে এটেন্ট করায় মামা মামি দুজনেই খুশি হয়। সাওন,রাফি আর আমি তিনজন এক গাড়িতে বসেছি।
সাওন- ভাই আমার না খুব ভয় করছে,,জীবনে বিয়ে করি নি। একটু খুশি খুশিও লাগছে বটে।
রাফি- ছি ছি ছি ভাই এটা তুই কি বলছিস,,তুই হলি সিংহ,,কোথায় সিংহের মতো গরজন করবি তা না বিড়ালের মতো মেও মেও করছিস।
সাওন- সাদিক কিছু এডভাইস দে,,
সাদিক- তুই কি পাগল হয়েছিস সাওন? আমি কীভাবে এডভাইস দিব। এসব বিষয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
রাফি- আমারো তেমন অভিজ্ঞতা নেই। হবে কীভাবে এখনো তো বিয়ে করিনি। আইডিয়া!
সাওন- কী?
রাফি- গুগল বাবাজি,,যার কেও নেই তার গুগল বাবাজি আছে। সাওন আর রাফি গুগলে সার্চ দিতে শুরু করলো। দুজনের কান্ড দেখে হাসি পাচ্ছে। অনেক দিন পর মনটা একটু ফুরফুরে লাগছে। মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে ভারি পাথরটা সরে যাচ্ছে।
গাড়ি থেকে নামতেই দেখি গেটের সামনে ইয়া বড় সুতো দিয়ে গেট বাধা আর চারপাশে মেয়েদের ছড়াছড়ি।
সুচরিতা জলদি শরবতের থালা আর মিষ্টি নিয়ে আয় বর এসে গেছে,,,,,নানির কথাশুনে দৌড়ে শরবত আর মিষ্টি নিয়ে গেটের সামনে দাড়াতেই হবু দুলাভাইয়ের সাথে ছেলেটাকেও দেখতে পেলাম। ছেলেটাকে দেখে যা ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম আসবে না। যাক বাবা এবার সুযোগ পেলে ক্ষমা চেয়ে নিব।
সর্বনাশ তুফানটা এখানে এসেও হাজির হয়েছে। দূর আমি আর অনুষ্ঠানে ডুকবোই না। কথাগুলো ভেবে দুপা পিছু হতেই সাওন আমার হাত ধরে বললো,,ভাই বিপদের সময় এভাবে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছিস। আমি যে টাকা আনিনি। এখন কি করবো?
রাফি- ভয় পেলে চলবে না। হাতে জুতো নিয়ে কুত কুত খেলার মতো দৌড় দিয়ে ডুকে পর।
কথাটা বলে রাফি সত্যি সত্যি জুতো খুলে হাতে নেয়। রাফির দেখা দেখি সাওনও জুতো খুলে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। আমি রাফি আর সাওনকে থামিয়ে বললাম,,,তোরা কি পাগল হয়েছিস,,মান ইজ্জত সব তো এখানেই খাবি। আমার কাছে পাচশ টাকা আছে তোরাও কিছু দে মিলিয়ে জিলিয়ে মিটমাট করার চেস্টা করি।
রাফি- ভাই আমরা পাগল হইনি,,তুই পাগল হয়েছিস,,উপরে ভালো করে তাকিয়ে দেখ,,পাত্রীপক্ষ কত টাকা দাবি করেছে!
রাফির কথা শুনে উপরে তাকাতেই আমার চোখ দুটো থমকে গেলো। উপরে বড় বড় অক্ষরে লিখা দয়া করে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে ভিতরে ডুকুন ধন্যবাদ।
সুবহানাল্লাহ আর এখানে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকার বদলে পাচশ টাকা দিয়ে মিটমাট করার কথা ভাবছি। আকাশ জমিন তফাত। আস্তে করে মানিব্যাগটা পকেটে ডুকিয়ে ফেললাম। রাফি আর সাওন জুতো নিয়ে দৌড়ে ডুকার চেস্টা করলো,,বৃথা চেস্টা,,এতোগুলো মেয়ের মধ্যে দিয়ে গেট পার করা চারটি খানি কথা না।
টাকা নিয়ে অনেক্ষন ধরে দর কষাকষি হচ্ছে,,,আশ্চর্য সেই মেয়েটা তার গুটি গুটি চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো চোখ সরাচ্ছে না। একটু লজ্জা লাগচ্ছে,,কিছুক্ষন পর দেখলাম মেয়েটা তার ছোট বোনের কানে ফিসফিসিয়ে কি জেনো বললো আবার সেই ছোট মেয়েটা অন্য মেয়েদের সাথে কানে কানে কি যেনো কথা বলে গেট থেকে সবগুলো মেয়ে সরে গেলো। অনেক অবাক হলাম,,কোনো প্রকার জামেলা ছাড়াই গেট ছেরে দিলো,,তার থেকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ওই মেয়েটার সাথে সাথে সবগুলো মেয়ে আমার দিকে কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে,,আরে বাবারে আমি তো জামাই না আমার দিকে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
সাওন- কিরে সবাই সাদিকের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
রাফি- ভাইয়া কোনো সুরা টুরা পড়ে যাদু টোনা করলি নাকি?
সাদিক- দূর কি যে বলছিস,,আমিও কিছু বুঝতে পারছি না। লাইন ক্লিয়ার দেখে সাত পাচ না ভেবে বরপক্ষের সবাই গেটের ভিতর ডুকে পরলাম। যেখানেই যাচ্ছি মেয়েটা বার বার আমার পিছু নিচ্ছে। কিছু মেয়েকে দেখলাম আমার দিকে আংগুল দেখিয়ে কিছু একটা বলছে। দূর ছাই কেনো যে আসলাম। সাওনকে বউয়ের পাশে বসানো হয়। আমি নিরিবিলি একটা জায়গা দেখে বসে পরে।
-এই যে শুনুন,,,
একি আবারো সেই মেয়ে,,মেয়েটাকে দেখে আমি চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে অন্য জায়গায় পালানোর চেস্টা করি।
– আশ্চর্য তো মানুষটা আমাকে দেখে এভাবে পালাচ্ছে কেনো? আমিও উনার পিছু নেই। নাহ এমনিতেই একজন বোবা মানুষ। কথা বলতে পারে না। তার গালে চর মেরেছি,,যেভাবেই হোক ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু উনাকে তো আমি ধরতেই পারছি না। পিছু নিতে নিতে ছাদে যেয়ে পৌছাই,,ভালো হয়েছে এখানে কেও নেই,,এখানেই সরি বলে দিব। উনার কাছে যেয়ে যেই সরি বলতে যাবো পায়ের সাথে কিছু একটা বেধে হোচট খেয়ে আবার উনার উপর পরি।
-এই যা আবার পরে গেলাম,,,আমার সাথেই এমন হয় কেনো?
– বড় অদ্ভুত মেয়ে তো আপনি,,,বার বার কেনো আমার উপরি এসে পরেন।
হঠাৎ মানুষটার মুখে কথা শুনে চমকে গেলাম,,,
-আপনি বোবা না? আপনি কথা বলতে পারেন?
-আশ্চর্য তো আমি বোবা হতে যাবো কেনো?
তারাতাড়ি উনার উপর থেকে উঠতে যাবো উনার পাঞ্জাবির বোতামের সাথে আমার চুল আটকে যায়। লে হালুয়া এখন হয়ে গেলো আরেক কেস,,
চলবে,,,