শেষের পাতায় তুমি? পর্ব-০৫

0
1116

শেষের পাতায় তুমি?
পর্ব-০৫
writer_Shanta_islam

– আপনি কি আমার উপর থেকে উঠবেন। নাকি এভাবেই আমার উপর পরে থাকবেন?
-আরে আপনি এভাবে বলছেন কেনো? আমারো ইচ্ছে নেই এভাবে আপনার উপর পরে থাকার,,কিন্তু কি করবো আমার চুল যে আপনার বোতামের সাথে আটকে গেছে।
-আপনি শুধু তুফান না,,আস্তো একটা মুসিবত,,যখনি আসেন একটা না একটা মুসিবত নিয়ে আসেন!
কথাটা বলতে না বলতেই মেয়েটা আমার পেটে একটা চিমটি কেটে বসে,,,
– আহ কি করছেন? চিমটি দিচ্ছেন কেনো?
-আপনার সাহস তো কম নয়,,,আমার সামনে আমারি বদনাম করছেন,,কালকের জন্য সরি বলতে এসেছিলাম কিন্তু এখন আর সরি বলবো না। কথাটা বলে উঠতে নিলেই চুলে টান খেয়ে আবার পরে যাই,,,ওহ মা গো,,,,
– আপনার মাথায় বুদ্ধির এতো ঘাটতি কেনো? ছোট বেলায় শাকসবজি খাননি? কে বলেছে এভাবে টান দিতে,,, একটু অপেক্ষা করুন আমি ছাড়িয়ে দিচ্ছি।
বুঝতে পারছি মেয়েটা সরল। কিছু না করেও
ঘটনাক্রমে ফেসে যায়। চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,,,
-এটা মনে হয় ছুটবে না। এতোটুকু চুল কেটে ফেললে ভালো হবে।
-কিইইইই আপনার মাথা নস্ট হয়েছে,,,আমি আমার চুল কাটবো না। আমার দাদার লম্বা চুলের খুব শখ ছিলো। দাদা মারা যাওয়ার আগে বলে গেছে সুচরিতা কখনো চুল কাটবি না। লম্বা চুল রাখবি,, দাদার কথা রাখার জন্য কখনো স্টাইল করে চুল কাটিনি,,,আর আপনি বলছেন চুল কেটে ফেলতে ইম্পসিবল।
মেয়েটার কথা শুনে হাসি আটকে রাখতে পারছি না। মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষন হাসি আটকে রাখলে পেট ফেটে যাবে। মেয়েটার সাথে মজা নিয়ে বললাম
– তাহলে আরেকটা উপায় আছে,,,মেয়েটা করুন কন্ঠে বললো,,,কি?
– আপনার মাথাটা কেটে ফেলতে হবে। তাহলে আপনার দাদার কথাও রাখা হলো আর আমিও ফ্রি হলাম।
-কিইইইইইই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন,,এর জন্য আমার মাথাটাই কেটে ফেলবেন?
কথাটা বলেই উঠার জন্য চুল টানছি এমন সময় পিছন থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পেলাম। কীসের শব্দ,,পিছনেও তাকাতে পারছি না। হঠাৎ নানির আহাজারি কন্ঠে শুনতে পেলাম,,সর্বনাশ হয়েছে,,ওরে লতা তোর মেয়ে সর্বনাশ করেছে। নানির কন্ঠ শুনা মাত্রই চুলে জোরে টান দিয়ে উনার পাঞ্জাবির বাটনটা ছিরে ফেললাম। উঠে দেখি নানি সহ আরো কয়েকজন মুরব্বিরা এখানে উপস্থিত হয়েছে। এর মধ্যে নানির মরা কান্না সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আসলেই আমার সর্বনাশ হতে চলেছে।
সাদিক- দেখুন আপনারা যেমনটা ভাবছেন আসলে তেমন নয়। এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।
-নানি বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নি।
নানি আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে মারতে বললো,,,
-ওরে মুখপুরি কেলেংকারী করে বলছিস কিছু করিসনি। এখন এ সমাজে মুখ দেখাবি কীভাবে,,
এমনিতেই ভুল বোঝাবুঝি এর উপর নানির মার সব মিলিয়ে আমি পড়েছি মাইংকা চিপায়।
নানির চেচামেচি শুনে রীতিমতো আরো লোকজন জমা হয়ে গেছে। ঘরের শত্রু বিভীষন যাকে বলে। কেরেক্টারটা নানির সাথে পুরো মিলে যায়। আমরা অনেক চেষ্টা করলাম সবাইকে বোঝানোর কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। পুরো বিয়ে বাড়িতে একটা এলাহি কান্ড বেধে গেলো। এরপর কি আর হবে,, একটা বিয়ের জায়গায় দুটো বিয়ে হলো,,ইশা আপু আর সাওন দুলাভাই,,,আমার আর ওই ছেলেটার। আমার জীবনটা এতো পেচানো কেনো বুঝি না।
অনেক চেষ্টা করেছি বিয়েটা আটকানোর জন্য কিন্তু তার মধ্যে প্রধান বাধা ছিলো নানি। ছেলেটার পরিবারেরও তেমন কোনো আপত্তি ছিলো না। তানিয়া আর ইশাপুর কাছ থেকেও হেল্প নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ইশা আপু গুরিয়ে পেচিয়ে বার বার একি কথা বলে,,,আগেই বলেছিলাম বুড়িটাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলি। আর তানিয়া বললো,,,আমি নাকি আগের জন্মে নির্ঘাত কোনো সাপ মেরেছিলাম। তাই সাপের অভীশাপ লেগে আমার জীবনটাও নাকি সাপের মতো পেচানো হয়ে গেছে। বদমাশটা শুধু এতোটুকুই বলেনি আরো বলেছে,,,দেখিস বাসর রাতে তোর জামাই আবার নিজেই না সাপ বের হয়। ইশা আপু তানিয়ার কথায় তাল দিয়ে বললো,,,তোর জামাই যদি সত্যি সত্যি সাপ বের হয় তাহলে তোর জামাইয়ের বিষ দিয়ে আগে ওই বুড়িটাকে মারবি। তুই যদি কাজটা করতে পারিস তাহলে পুরুষ্কার সরুপ আমি তোকে একটা কেটভেরি কিনে দিব। এদের কল্পনার জগতের শেষ নেই। অথচ যেই জামাইকে নিয়ে এতো কথা হচ্ছে এখন পর্যন্ত আমি সেই জামাইয়ের নামটাও জানি না। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এটা কোনো কথা হ্যাঁ! সত্ত্যটা যাচাই না করেই একজনকে দোষারোপ করে সাজা দেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা একটা দূরস্বপ্ন,,চোখ মেললেই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে। কিন্তু না যতবার চোখ খুলি ততোবারি বাস্তবতার মুখোমুখি হই।
,
,
,
ইশা আপুকে তার জামাই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর আমাকে আমার জামাই বাড়ি। ইয়া লম্বা গোমটা টেনে আমাকে একটা রুমের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে গেছে। লজ্জার ঠেলায় গোমটাটা উঠাতেও পারছি না। গোমটাটা উঠালে হয়তো দেখতে পারতাম কোথায় আছি?
ঘুমে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে,,সকাল থেকে অনেক ধকল গেছে তার উপরে এতো বড় ঘটনা,,,রাত বারোটার উপরে বাজে এটা সিওর,,,কিন্তু এখনো উনি আসছে না,, হয়তো আবার কোনো জামেলা বেধেছে। জামেলা বাধবেই না বা কেনো,,আমার জীবনটাই যে জামেলাময়। কথাগুলো ভাবতে ছিলাম হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেলাম। ওই যে এসেছে বোধ হয়। গোমটাটা একটু সরিয়ে দেখবো কি? না থাক আবার অন্য কিছু মনে করলে,,উনি বিছানার কাছে এসে আমার পাশে উপাস হয়ে ধপাস করে সুয়ে পরলো।
আমি উনার থেকে একটু দূরে সরে বসে বললাম,,,আজব মানুষ তো আপনি,,এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর আপনি এতো স্বাভাবিক আছেন কীভাবে?
উনি আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো,,তাহলে কি করবো বলুন? অনেক তো চেষ্টা করলাম বিয়েটা আটকানোর জন্য। কিন্তু কথায় আছে না বিপদ যখন আসে চারোদিক দিয়ে আসে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
-এর থেকে খারাপ ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি। এভাবে জোর করে একটা বিয়ে কি মেনে নেওয়া যায়?
উনি একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,,,
-আমার জীবনে এর থেকেও খারাপ ঘটনা ঘটে গেছে। স্বাভাবিক এভাবে পরিস্থিতির কবলে পরে কেওই সহজে বিয়ে মেনে নিবে না। আপনি মনে হয় আনকনফোর্টেবল ফিল করছেন,,,কথাটা বলেই উনি বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা করতে লাগলো,,,
-কি করছেন,,নিচে বিছানা করছেন কেনো?
-আমি চাই না আপনি বিব্রত ফিল করুন,,তাই আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।
মানুষটাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ না। আসলে না জেনে কাওকে বিবেচনা করা ঠিক না। তবে আমাকে কানফোর্টেবল ফিল করার জন্য নিজে নিচে ঘুমাচ্ছে ব্যাপারটা আমার কাছে কিউট লাগলো।
আমি একটু কেশে বললাম,,,আমি কি আপনাকে নিচে ঘুমাতে বলেছি?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here