শেষের পাতায় তুমি?
পর্ব-০৬
writer_Shanta_islam
-আমি কি আপনাকে নিচে ঘুমাতে বলেছি?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,তাহলে কি আমাকে আপনার পাশে ঘুমোতে বলছেন?
এমন ভাবে কথাটা বললো,,আমি অসুস্থিতে পরে গেলাম। নিজ থেকে কীভাবে বলি আমার পাশে এসে ঘুমান। উনি কি ভাববেন,,আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,না ইয়ে মানে,,,
উনি একটু মলিন হেসে বললো,,থাক আর না ইয়ে মানে করতে হবে না। চিন্তা করবেন না আমি কখনো আপনার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না।
কথাটা বলেই উনি উনার মতো সুয়ে পরলো। আজব ব্যক্তি যেচে বলছি উপরে ঘুমাতে তা তো বুঝলোই না
তার উপর বলছে স্বামীর অধিকার চাইবে না। বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হলেও তো আমরা স্বামী স্ত্রী। বিয়ের প্রথম রাতে বউকে এভাবে একা রেখে কেও নিচে ঘুমায় নাকি। হয়তো উনার মেয়েদের সম্পর্কে আইকিউ কম নাহলে বুঝে কম। আর সাত পাচ না ভেবে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। এমনিতেই মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে তার উপর যত ভাববো আরো মাথা ব্যাথা বারবে।
সকাল বেলা শাশুড়ীর ডাকে ঘুম ভাংলো। দরজায় নক করেই যাচ্ছে। আমি তারাতারি করে উঠে উনাকে উঠানোর চেস্টা করলাম।
– এই যে উঠুন। আপনার মা ডাকছে আরে উঠুন। এ মানুষ নাকি কুম্ভকর্ণ। এতো ডাকছি উঠার নাম নেই। অবশেষে না পেরে দরজাটা খুলে দিলাম। এতোক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করছি দরজা না খুললে কেমন দেখায়। হয়তো আন্টি মানে আমার শাশুড়ী উনাকে নিচে সোয়া অবস্থায় দেখে ফেলেছে। উনি স্বাভাবিক ভাবে বললো,,,-রেডি হয়ে এসো,,,প্রতিবেশিরা তোমাকে দেখতে এসেছে। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
,
,
,
মানুষটা কেমন ভাবে ঘুমিয়ে আছে। এতো ডাকাডাকি করলাম কান পর্যন্ত আওয়াজ পৌছায়নি নাকি? ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লাম। কাপড় ছেরে তোয়ালে পেচিয়ে আয়নার সামনে দাত ব্রাস করছি হঠাৎ ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম পিছু তাকাতেই দেখি উনি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,,,উনাকে দেখে আমিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কয়েক সেকেন্ড এভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দুজনি এক সাথে চিৎকার করে উঠলাম,,,আ আ আ আ,,,,,
আমিও চিৎকার করছি আমার সাথে উনিও চিৎকার করছে। আমি চিৎকার থামিয়ে বলি আপনি চেচাছেন কেনো? উনি আমার কথা শুনে তারাতাড়ি হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,,,আপনি চেচাছিলেন তাই আমিও চেচিয়েছি। দরজাটা তো অফ করে নিবেন।
এই রে আমারি ভুল আমিই দরজাটা লাগাতে ভুলে গিয়েছি।
এমন একটা পরিস্থিতিতে পরেছি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছি না। উনি যেভাবে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে দেখে হাসি আটকে রাখতে পারছি না।
দরজা বন্ধ করে নিন। কথাটা বলে উনি বের হয়ে গেলো। আর আমি সিনটা মনে করে মুচকি মুচকি হাসছি। যাই হোক আমার জামাইটা কিউট পরেছে। এখন ইশা আপুর মতো আমারো নানিকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। আর বলতে ইচ্ছে করছে বুড়ি মরার আগে এই একটা সোয়াবের কাজ করে গেলা।
ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখি উনি আলমারি থেকে উনার কাপড় বের করছিলো,,,আমাকে দেখার সাথে সাথে উনার হাত থেকে কাপড়গুলো পরে গেলো আর উনি আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,,,বিশ্বাস করেন আমি কিছু দেখিনি।
উনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকে উনিই বেশি লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।
আমি মজা করে একটু দুষ্টু গলায় বললাম,,,আরে লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? জামাই বউয়েরটা দেখলে কিছু হয় না।
-আপনি শুধু আপদ না একটা বড় আহামক। কথাটা বলে উনি মাথা নিচু করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আমি উনার কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসছি।
,
,
,
-কই গো তোমাদের নতুন বউ কই দেখি? জলদি আসতে বলো,,,না খেয়ে এসেছি বউ দেখে খেতে যাবো।
ডাইনিং রুমে আসতেই মহিলা মন্ডলির সমাবেশ দেখলাম। বুঝাই যাচ্ছে সবাই নতুন বউ মানে আমাকে দেখতে এসেছে। এই প্রথম নিজেকে সেলিব্রিটি লাগছে। সেলিব্রিটিদের মতো আমার জন্য বিরাট সমাবেশ অপেক্ষা করছে। শরীরে সেলিব্রিটি সেলিব্রিটি একটা ভাব আসলো। আমার শাশুড়ী আমাকে সবার সামনে বসাতেই শুরু হলো প্রশ্নের ঠাকুমার ঝুড়ি। তোমার নাম কী?তোমার বয়স কত? কোন পর্যন্ত পড়ালেখা করেছো?দেখিতো মা তোমার হাতটা দেখি,,,,,
এদের প্রশ্নের ধরন দেখে বুঝলাম এরা আসলে পাশের বাড়ির চোকলামি করা আন্টিরা। হঠাৎ কোথা থেকে ছো মেরে একটা ছেলে এসে আমার কানে কানে বললো,,,ভাবি হেল্প লাগবে নাকি?
আমি কিছু না বলে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
-আরে আন্টি আপনার মেয়ে সুমাইয়া কেমন আছেন?
– রাফি এখান থেকে সর তোর নতুন ভাবিকে দেখতে দে। না খেয়ে এসেছি একে দেখে খেতে যাবো।
– সারাদিনি তো খান খেতে খেতে কবে জানি আংকেলকে না খেয়ে ফেলেন?
-দেখেছেন পারুল আপা আপনার ছোট ছেলেটা কি বেয়াদব হয়েছে,,,,
মহিলাটার কথাশুনে আমার শাশুড়ী রাগী দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চোখ পাকায়,,ছেলেটা গায়ে না মাখিয়ে ওই আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
-আরে আন্টি রাগ করেন কেনো? নতুন বউয়ের মুখ দেখতে এসেছেন কিছু নিয়ে আসেননি? সবার হাত খালি কেনো? মনে হয় আনতে ভুলে গেছেন,,আচ্ছা সমস্যা নেই এখন তাহলে টাকা বের করুন,,নতুন ভাবির মুখ দেখতে হলে টাকা বের করতে হয় তা তো ভালো করেই জানেন।
রাফির কথা শুনে পাশের বাসার আন্টিরা রীতিমতো উঠে পরেছে।
-থাক আর মুখ দেখা লাগবে না। আমাদের বউ দেখা হয়ে গেছে।
– আন্টি যাওয়ার সময় আপনার মেয়ে সুমাইয়ার নাম্বারটা দিয়ে যেয়েন। না মানে আগেরটা হারিয়ে গেছে তো তাই। রাফির কথা শুনে মহিলাটা রাগে গজগজ করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
যতটুকু বুঝলাম ছেলেটা আমার দেবর। দুষ্টু হলেও ভালো,,আমার সাথে জমবে।
– কি ভাবি কেমন দিলাম,,,
আমি একটু হেসে বললাম,,,একদম ফাটাফাটি,,,
-নেক্সট টাইম কিন্তু এভাবে ফ্রিতে কাজ করবো না। ঘুষ লাগবে।
আমি ছেলেটার কথায় হেসে বললাম,,,ধন্যবাদ তোমাকে,, অনেক বড় উপকার করেছো আমার,,,,
শাশুড়ী-রাফি তোর খবর আছে দারা! বউমা তুমি সাদিককে নাস্তার জন্য আসতে বলো।
ওও তাহলে আমার স্বামীর নাম সাদিক! বাহ মন্দ না সুচরিতা সাদিক,,,আমাদের ছেলে মেয়েদের নাম রাখতে খুব বেশি একটা অসুবিধা হবে না।
রুমে ডুকতে যাবো সাথে সাথে মনে হলো কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম,,,এমন ধাক্কা খেয়েছি আমি তো পরেছি পরেছি যেই খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরেছি সেই খাম্বাটাও আমার উপর এসে পরেছে। চোখ মেলে দেখি খাম্বাটা আর কেও নয় আমার জামাই সাদিক সাহেব।
-আপনি বার বার আমার সাথেই ধাক্কা খান কেনো বলুন তো?
-আপনি আমার জামাই যে তাই,,,কথাটা বলেই একটু দুষ্টু চোখ মারলাম।
-আপনি তো আস্তো একটা বেয়াদপ মেয়ে,,একে তো আমার উপর এসে পড়েছেন তার উপর আবার চোখ মারছেন,,
চলবে,,,