শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১১,১২

0
812

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১১,১২
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১

–কেমন আছো তানজিনা?
তূর হাসি মুখে প্রশ্ন করলো তানজিনাকে। ভার্সিটির বাহিরে একটা কফিশপে তূর, তানজিনা, ইনায়া ও ইরা বসে আছে। বিকেল ৩ টার কিছুটা বেশি বাজে। তানজিনা সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

–ভালো। তুমি কেমন আছো?

তূর আলতো হেসে ঘার নাড়ালো। তানজিনা তূরের দিকে একই নজরে চেয়ে আছে। ইনায়া এবার জিজ্ঞাসা করলো,
–দেশে কবে আসলি তুই?

তূর হাসি মুখে জবাব দেয়,
–সপ্তাহ খানেক হলো। তুই জানতি না? কেন ইরা তো জানতো। তাইজুল মেবি জানিয়েছে ওকে। আমরা তাইজুলদের সাথে সিলেট ট্যুরও করে আসলাম।

ইনায়া ইরার দিকে তাকায়। ইরা তা দেখে ডোন্ট কেয়ার মুডে বলে,
–তানজিনা তো তূরকে পছন্দ করে না। চার বছর আগে তো তূরকে অনেক কিছু বলেছিল আর তুই কিন্তু সেদিন তানজিনার পক্ষেই ছিলি। তাই তোদের জানাই নি। এতে আমাকে কি জবাবদিহি করতে হবে?

তানজিনা ভ্রঁ কুঁচকে বলে,
–ওহো! আমাদের জানাতে প্রবলেম! তাহলে আজকে তূরকে এখানে আনার মানে কি? তুই কি আমাদের সাথে ডাবল গেম খেলছিস?

ইরা তানজিনার সামনে নিজের মোবাইল এগিয়ে দেয় তারপর মেসেঞ্জারে তূরের ইনবক্সে ঢুকে দেখায় কি কি কথা হয়েছিল। তারপর ইরা বলে,
–আমাকে তূরই বলেছো তোর সাথে মিট করবে। দ্যাটস অল।

তূর ওদের এরকম বাকবিতণ্ডা দেখে বলে,
–ইরা আগে জানতো না আমি কবে এসেছি। কালকেই জেনেছে হয়তো। আমিই তাইজুলদের মানা করেছি যাতে তোমাদের না জানায়। এসব নিয়ে এতো প্যানিক হওয়ার কি আছে?

ইনায়া ফেসবুক স্ক্রল করছিল তখন তূরের পোস্টটা সামনে পরলে ইনায়া ভ্রঁ কুঁচকে পোস্টটা পড়ে তারপর তূরের দিকে তাকায় দেখে তূর হাসি মুখে চেয়ে আছে। আজকে যেনো তূরের মুখ থেকে হাসি সরছেই না। ইনায়া তূরকে প্রশ্ন করে,

–নতুন কারো মায়ায় জড়িয়েছিস? এতো ইমোশোন ওয়ালা পোস্ট!

তূর বাঁকা হাসে। এটাই তো চেয়েছিল। তূর হেসে উত্তর দেয়,
–আমার হৃদয়ের পরিসীমা অতোটাও দীর্ঘ নয় যে একাধিক মানুষকে জায়গা দিবো! একজনের মায়া কাটাতে পারলাম না দূরত্ব বাড়িয়েও আবার অন্যজন!

ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই না। সবটা জেনেও এসব করে কি লাভ?

তূর মুচকি হেসে বলে,
–পোস্টটা আবার পড়। তারপরেই বুঝতে পারবি। এবার নতুন কাউকে কল্পনা না করে পুরাতনকেই কল্পনা করে পড়। তারপর তোর মস্তিষ্ক কিসের ইঙ্গিত দেয় বলিস কিন্তু।

ইনায়া সন্দিহান হয়ে আবাে পোস্টটা পড়ে। এবার সাথে তানজিনাও পড়ে। ইনায়া ও তানজিনা পোস্টটা পড়ে দুজন দুজনের দিকে বিভ্রান্ত হয়ে তাকায় তারপর তানজিনা তূরকে রূঢ়ভাবে বলে,

–কি বোঝাতে চাইছো? মিহাল তোমাকে ভালোবাসে নাকি কল্পনাতে তাকে নিয়ে আবারও অবাস্তব স্বপ্ন বুনছো? তোমার তো মানসিক সমস্যা হয়েছিল চার বছর আগে। সেটা কি ভালো হয় নি? আবার এসব পাগলামি করতে ফিরে এসেছো?

তূর নিঃশব্দে হাসে তারপর বলে,
–আমি নাহয় কল্পনাতে তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনি কিন্তু সেও যে আমার জন্য স্বপ্ন সাঁজায়! সে তো সিলেটে আমার প্রতি তার হৃদয় অনুরুক্তি জাহির করেছে। তোমাকে তো ঠকাচ্ছে! তাই নয় কি?

তানজিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। মিহালের পাঁচ দিন আগে করা কাজটা কি এইজন্য? মিহাল সবসময় এমন ইনসাল্ট করে কি এইজন্য? তানজিনা তূরকে জিজ্ঞাসা করে,
–কি বলেছে মিহাল?

তূর ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–সেটা নাহয় মিহালকেই জিজ্ঞাসা করো। সেই সুন্দর করে বলতে পারবে। টাটা। এন্ড থ্যাংকস ফর দা ক্যাপেচিনো।

তূর উঠে চলে যায়। ওদিকে তানজিনা বিভ্রান্ত হয়ে বসে থাকে। তানজিনা সিদ্ধান্ত নেয় আজকে মিহালদের বাড়িতে গিয়ে মিহালকে জিজ্ঞাসা করবে। তূর তো দারুন মুডে আছে। তানজিনা বিভ্রান্ত আর তূর তো এটাই চায়।

তানজিনা সন্ধ্যার আগে মিহালদের বাড়িতে গেলো। মিহাল তখনও বাড়িতে ফেরে নি। তানজিনা মিহালের মায়ের সাথে আড্ডা দিয়ে মিহালের রুমে ঢুকলো। মিহাল কিছুক্ষণের মধ্যে আসলে নিজের রুমে তানজিনাকে দেখলে প্রচণ্ড রেগে যায় কিন্তু রাগ সামলে তানজিনাকে বিভ্রান্ত করতে শার্টের হাতার ভাজ করতে করতে বলে,

–আরে তানু বেপি! কেমন আছো? জানো? দুইদিন তোমাকে কত্তো মিস করেছি! এমন কেউ করে বলো? আমার কস্ট হয় না বুঝি?

তানজিনা অবাক হয়। তারপর তূরের কথা গুলো মাথায় আসলে তানজিনার বিভ্রান্তিকর লাগে। তানজিনাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহাল বলে,

–শোনো, পরশু অফিসের কলিগরা পার্টি থ্রো করেছে। সেখানে তোমাকে নিয়ে যাবো। সবার সাথে পরিচয় করাতে হবে তো।

তানজিনা বলে উঠে,
–আমি কেনো?

মিহাল হেসে বলে,
–তুমি না আমাকে বিয়ে করবে? না চাইলেও তোমাকে নিতে হবে। চিন্তা করো না, ওখানে ফ্লার্ট করার মানুষের অভাব হবে না!

তানজিনা শেষের কথাটা শুনে মুখ থমথমে হয়ে যায়। তানজিনা এবার জিজ্ঞাসা করে,
–তুমি নাকি সিলেট গিয়েছিলে তূরের সাথে?

মিহাল এবার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। তানজিনা বলে,
–তূর বললো, তুমি নাকি ওকে ভালোবাসো?

মিহাল মনে মনে অবাক হয় কিন্তু চায় না সেটা তানজিনা জানুক। তূর কি বুঝে গেছে? তানজিনার সাথে দেখা করে এগুলোই বললো কেন? মিহাল এবার তানজিনাকে বলে,

–আমার ভালোবাসা আমার কাছে। ঠিক যেমন তোমার ভালোবাসা তোমার কাছে! আর তোমাকে তো মা নিজের আদরের বলে পছন্দ করেছে। তুমি সেদিকেই খেয়াল রাখো। আমি কার সাথে কোথায় গেলাম না গেলাম এগুলো তোমার এখন না ভাবলেও চলবে। আর আমিও কিন্তু কেয়ার করি না তুমি হাজারটা নাকি লাখটা প্রেম করো না-কি করো না। তোমার তো ভাগ্য যে সবটা জেনেও তোমার পরিবারকে ও আমার পরিবারকে এখনও কিছু বলি নি। সো আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবে না। আর হ্যাঁ, আই এম ইন লাভ উইথ মাই মেঘকন্যা তূর। খুব ভালোবাসি জানো? তোমার তো এই নষ্ট রূপটাই আছে কিন্তু নেই কোনো শুদ্ধ মন। তাই আমাকে ঘাটিয়ো না। নাউ গেট আউট! মাকে গিয়ে তোমার ন্যাকা কান্নাতে যা খুশি বলো। আমি তো জানি তোমাকে বিয়ে করতে হবে তো করবো নাহয়। পরে থাকবে মায়ের আদরের বউমা হয়ে!

তানজিনা হতভম্ব হয়ে গেল। তানজিনা তৎক্ষণাৎ মিহালের রুম থেকে বের হয়ে মিহালদের বাড়ি থেকেই চলে গেলো। মিহাল তাচ্ছিল্য হাসে তারপর নিজে নিজেই সগোউক্তি করে,

“একবার চলো শুধু পার্টিতে। তোমাকে কিভাবে ট্রিট করি দেখবে শুধু। তুমি যেতে না চাইলে মাকে দিয়ে রাজি করাবো। তুমি যেমন আমার মাকে দিয়ে আমাকে ব্ল্যা*কমে*ইল করো তেমনি আমিও করবো। তাও পার্টিতে তোমাকে যেতেই হবে।”

________
হঠাৎ কৃষ্ণাকায় অম্বরের বুক চিঁড়ে বাদলধারা নামলো। রাতের অন্ধকারে বৃষ্টি উপভোগ করার এক আলাদা অনুভূতি। শীতল হাওয়ায় শিহরিত দে’হ ও মন। তূর সফট মিউজিক মোবাইলে ছেড়ে ব্যালকনিতে বসে আছে। কারো উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছে জেগেছে মনের। ইউটিউবে গান ছেড়ে রেখেছিল এখন গান পাল্টে বাজছে,

“দূরে দূরে মেঘ যাচ্ছে পুরে,
মন মেলল স্মৃতি দুডানা।(২)
জানিনা,
কেনো তা জানিনা!
জানিনা কেনো তা জানিনা।(৩)
জানিনা..”

মিহালও ফেসবুকে ঢুকে তূরের আইডিতে ঢুকে দেখলো সকালের পোস্টটা। পোস্টটা দেখে মিহাল নিঃশব্দে হেসে নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিয়ে বলে,
–জেলাসিতে আমি সব ইনডাইরেক্টলি উগলে দিয়েছি আর এই মেয়েটা ধারণাও করে ফেলেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
অফিসের জন্য তৈরি হয়ে মিহাল নাস্তা করতে ডাইনিংয়ে যায়। মিহালের মা মিহালকে তখন জিজ্ঞাসা করেন,

–তুমি তানজিনার সাথে বাজে ব্যাবহার করো কেনো? তানজিনা বলেই সব মানিয়ে নিচ্ছে। অন্যকেউ হলে তোমাকে মুখ ঝামটা দিতো।

মিহাল পরোটা চিবুচ্ছে আর মায়ের কথাগুলো শুনছে। মিহাল বিড়বিড় করে বলে,
–দিক না মুখ ঝামটা। তাও আমায় রেহাই দিক।

মিহালের মা মিহালের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে সন্দেহের স্বরে বলে,
–কিছু বলছো তুমি?

মিহাল ঘার নাড়িয়ে না জানায়। মিহালের মা আবার বলেন,
–তাহমিনা(তানজিনার মা) আমায় বলল। তানজিনার নাকি তিন চারদিন ধরে মন খারাপ। তাহমিনা ওকে কাল রাতে জিজ্ঞাসা করাতে বলল, তুমি নাকি অনবরত তানজিনার সাথে বাজে ব্যাবহার করো? তাহমিনার কাছে কতোটা নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিলো জানো?

মিহাল খাবার চি’বানো শেষে বলে,
–আমি তানজিনার সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার করি নি। আর তানজিনা যে আমাকে দোষারোপ করছে, তাহলে ওকে বলতে বলো, আমি কি খারাপ ব্যাবহার করেছি? আমার জানামতে আমি একটু ওর মতো লুতুপুতু না করাতে সে এগুলো বলছে। আর প্লিজ মা। তোমার পছন্দের সে, আমার না। তাই ওসব প্রেম প্রেম আলাপ আশা না করাই বেটার।

মিহালের মা সন্দিহান হয়ে বলেন,
–আমার পছন্দ হলেই কি তুমি তার সাথে বিয়ের পর সাধারণ সম্পর্কে যাবে না? বিয়ে যার পছন্দেই হোক, বিয়ে তো বিয়েই।

মিহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–হুম। আগে সেটা হোক। আর তাছাড়া জীবনসঙ্গী খারাপ হলেও যদি পরিবারের কথায় তার সাথে সম্পর্ক টিকাতে হয় তবে সেটাতে কম্প্রোমাইজ ছাড়া কিছু থাকে না। তখন তোমার কাছে তো তানজিনা অভিযোগের মহাসাগর বানিয়ে বসবে! তখন সামলিয়ো।

মিহাল নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে। তানজিনা এগুলো তানজিনার মাকে বলাতে মিহালের পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে কারণ, দুই দিন পর যে পার্টিতে যাবে সেখানে তানজিনাকে অপদস্থ হবে তাতে তানজিনার মাকে তো তানজিনা বলবে তারপর তিনি মিহালকে আরও খারাপ ভাববে। তারপর যদি রেহাই মেলে!

________
অফিসের ব্রেক টাইমে রিজভী এসে মিহালের পাশে বসে বলে,
–তাইজুল এখনও আসে নি? তাইজুলের তো আজকে একটু বেশি কাজ পরেছে। কি জানি কম্পিলিট করতে পেরেছে কী-না?

মিহাল বলে,
–চলে আসবে। খাবার অর্ডার করি।

তারপর পিয়নকে ডেকে খাবার দিয়ে যেতে বলে। রিজভী হুট করে মিহালকে জিজ্ঞাসা করে,
–ভিসা অফিস থেকে ফোন এসেছে তোর? আমার সকালে এসেছে। সময় করে যেতে হবে। মনে হয় ভিসা কনফার্ম হয়ে যাবে। তিন মাস ধরে ট্রাই করছি।

মিহাল বলে,
–হ্যাঁ এসেছে। রাফিদের সাথে কথা হয়েছে? সবার তো এক ভার্সিটিতে আসবে না। দেখা যাক কার কোনটায় আসে। আর তূরের কি খবর? সে কি মাস্টার্সে ভার্সিটি চেঞ্জ করবে?

রিজভী বলে,
–তা জানি না। রাফিকে জিজ্ঞাসা করতে বলবো। আর একই রাজ্যে থাকলেই হয়। তুই আর তূর একটাতে গেলে ভালো হবে। তাছাড়া আমরা দুই তিনটা ইউনিভার্সিটি চেঞ্জ করে মাস্টার্স করতে পারবো।

তাইজুল আসার পর ওর সাথেও এই বিষয় নিয়ে কথা হয়। তাইজুল পরে যাবে। পাসপোর্ট করে রেখে দিয়েছে। ভিসাটাও। পরে রিনিউ করে সে যাবে। তাইজুল জানালো যে তাওহীদও পরে যাবে। ওরা দুইজনে আগে বিসিএস ট্রাই করবে তারপর যাবে।

_______
তূরের খালা ও খালুকে তূরের বাবা বিয়ের ব্যাপারটা আগাতে মানা করে দিয়েছেন। তূর ওর খালার বাসা লস এঞ্জেলেসে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। এখন সে লোকেশন পরিবর্তন করতে চায়। খালার বাসায় থেকে পড়তে চায় না। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলের ক্যাম্পাসে ভর্তি হবে বা সান ফ্র্যান্সিসকোতে ট্রাই করবে। তূরের পরিচিত প্রফেসর সেই দিকটা লক্ষ্য রাখছেন। খালার বাসা থেকেই ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যেতে দেড় ঘন্টার বেশি লাগতো। এখন চেঞ্জ করলে ৩-৪ ঘন্টার মতো লাগবে।
তূরের খালামনি আজকে তূরকে ফোন করে বলেন,

–তুমি না-কি ভার্সিটি চেঞ্জ করছো?

তূর চায় নি এগুলোর জবাব এখনি দিতে কিন্তু দিতে হবে বিধায় সে বলে,
–আমার তো ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল তুমি জানতে। অনার্সে পাই নি কিন্তু এখন সিজিপিএ ফোর আউট অফ ফোর না হলেও ৩.৫ এর উপরে আছে। তাই ট্রাই করে দেখছি। যদি হয়ে যায়।

তূরের খালামনি তূরের এই ইচ্ছেটা জানতো। তূরের সাথে যখন সময় হতো গল্প হতো তখন তূর ওই ক্যাম্পাসের কথা বলতো। কিন্তু ওই ক্যাম্পাস অনেক দূরে। তূরের খালামনি বলেন,

–কোথায় থাকবে তুমি? যাওয়া আসাতে ৬-৭ ঘন্টার বেশি লাগবে। তোমার শরীর সেটার ধকল নিতে পারবে না।

তূর বলে,
–তুমি টেনশন নিয়ো না। প্রফেসরের বাড়ি ওই দুইটা ইউনিভার্সিটির প্রায় মাঝামাঝি। উনি আমাকে তার বাড়িতে তার মেয়ের সাথে থাকতে বলেছেন। আমি মানা করার পরেও তিনি শোনেন নি। আমার রিসার্চ ফ্যাকাল্টি তো উনিই। বেশিদিন থাকতেও পারবো না। আমি ভাবছি ওখানে বেশিদিন থাকবোও না। কয়েকদিনের মধ্যেই হোস্টেল বা পার্টনারশিপে ফ্লাট পেয়ে গেলে উঠে যাবো। উনি যে জবটা আমার জন্য খুঁজে রেখেছেন সেটাও কাছাকাছি।

তূরের খালামনি স্বস্থির নিঃশ্বাস নিলেন তারপর বললেন,
–রাফসানের ব্যাপারটা ভেবে দেখলে হতো না? তুমি কি ওর কারণেও ভার্সিটি পরিবর্তন করছো?

তূর প্রশ্নে হতাশ হয়। তূর শান্ত স্বরে বলে,
–আমি ইন্টারেস্টেড না উনার ব্যাপারে। আর হ্যাঁ। কিছুটা তার কারণেও। আমি চাই না সে মনের ভিতর কোনো মিথ্যা আশা রাখুক। তাকে আমি আগেও ইনডাইরেক্টলি ইগনোর করতাম। প্রয়োজনেও তাকে আমি নক করতাম না কিন্তু সে নিজে আগ বাড়িয়ে আসতো তখন ভদ্রতার খাতিরে সবসময় মানাও করতে পারতাম না। দোয়া করি সে ভালো কাউকে জীবনসঙ্গিনী পাক। আমি তাকে কখনও সেই নজরে দেখিও নি আর না কখনও তাকে বিন্দু পরিমানও আশা দিয়েছি।

তূরের খালামনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
–বড় বিচিত্র জালে ফেঁসে গেছো তুমি। খুব জলদি নিজের জীবনের গতি খুঁজে নাও দোয়া রইল। অবশ্যই ছুটির দিনে মাসে একবার হলেও আমার কাছে আসতে হবে। তোমাকে তো আমার দুই মেয়ের থেকে কোনো অংশে কম দেখি নি। তোমার মায়ের অনুপস্থিতিতে আমি তোমার মায়ের মতো। ভিনদেশে ক্ষুদ্রাকায় আপনজনও অনেক আপন হয়। আর শোনো, তোমার ভাবিকে একটু সময় করে রাতে ফোন করো। সে তোমার সাথে না-কি কথা বলবে না আর। রাগ করেছে বোধহয়।

তূর হাসলো। তারপর বিদায় জানিয়ে ফোন রাখলো। তার এই দুই মাসে অনেক কিছু ফিক্সড করতে হবে। তানজিনার কলেজ লাইফের চাল-চলন গুলো মনে করে এখন তূরের মনে হচ্ছে, একবার হলেও তানজিনার পারসোনাল রিলেশনের বিষয়ে জানতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ইরাকে আর প্যাঁচানো যাবে না। সিলেটে সেদিন জারিনের কথাগুলো এখন তূরের কিছুটা আঁচ করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। জারিনকেই আগে ধরতে হবে।

_______
–দেখো, তানজিনা। তোমার নিজের ফিউচার রিলেশনশিপ নিয়ে আবারও ভাবা উচিত। সেদিন ওই ছেলের কাজে তুমি সত্য-মিথ্যা যাই প্রমানিত হও না কেনো, দিনশেষে কোনো সম্মান ও ভালোবাসার ছিঁটে ফোঁটাও নেই। এজ এ এডভাইসর হিসেবে বললাম। তোমার সাথে আমার ওরকম কোনে সম্পর্কও ছিলো না যা সেদিন ওই ছেলে মিন করেছে। অন্তত আমি তোমার সাথে কখনও ওরকম ক্লোজনেস ক্রিয়েট করি নি। তুমি ব্রাইট স্টুডেন্ট এন্ড তোমার প্রবলেম হলে আমার সাথে ক্লিয়ার করো। এটুকুই তো।

তানজিনা নিজের অসহায়ত্ব প্রফেসর আরিফের সামনে জাহির করে বলে,

–সেটাই তো মিহাল খুব বাজে ভাবে উপস্থাপন করেছে। আমি কারও সাথে ফ্রেন্ডলি মিশলেই সেটাকে বাজে ইঙ্গিত মনে করে। আমি আম্মুকে বলেছি বাজে বিভেবের ব্যাপারে। বিয়েটা তো আমার ইচ্ছে তে হচ্ছে না। আমার মা তার বান্ধুবীর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল।

প্রফেসর আরিফ আর কথা বাড়াতে চাইলেন না। হ্যাঁ তার মনে সফট কর্নার আছে তানজিনার জন্য পারসোনালি কিন্তু সেটা কখনও সে তার প্রফেশনালিজমে আঘাত করাতে নারাজ। ওদিকে তানজিনা প্রফেসর আরিফের অফিস রুম থেকে বেরিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

–স্যার অন্তত আমাকে জাজ করেন নি। আমি তো রিলেশন করে বেড়াচ্ছি না। কেনো জানি মনে হয় স্যারের সফট কর্ণার আছে আমার প্রতি। খেয়াল রাখতে হবে সেটা। আর ওই দুইজন তো আমাকে দেখলে নাক ছিঁটকায়। আমি ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপই তো করেছিলাম তবে ফান হিসেবে একটু আকটু তো চলেই। যাক ওদের মুখো হওয়া যাবে না। তাহলে পুরো ডিপার্টমেন্ট কি! ক্যাম্পাসে রটিয়ে যাবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here