শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৩,১৪

0
782

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৩,১৪
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩

রাকিব তানজিনার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। ডিপার্টমেন্টের টিচার্স অফিস রুমের বাহিরে করিডরে। রাকিবকে দেখে তানজিনা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। রাকিব বুকে দুই হাত গুঁজে তানজিনার দিকে বাঁকা হেসে বলে,

–আরও বাকি আছে দুজন দুজনকে ভালো করে চেনার ও জানার? আরও ভালো করে চিনবে জানবে তারপর রিলেশনশিপ পাবলিক করবে! এমনটাই তো বলেছিলে? চারটা বছরে অনেক তো চিনলাম জানলাম। কয়েকদিনে সেটা তিনগুণে রূপান্তর হয়েছে। তোমার কি মত?

তানজিনা নজর লুকাচ্ছে। রাকিব তা দেখে বলে,
–তোমার ফিউচার যে ব’র্বাদ হতে চলেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। আমরা তোমার প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলাম বলে আমাদের তো ঠকালে। এবার তোমার জীবন ন’রক হতে চলেছে। মিহাল করবে তোমার জীবন ন’রক। ওকে বিয়ে করার জন্য এতো ঠকানো তো এবার বিয়ের পর বুঝবে। বেটার লাক ফর ইউর সো কলড ফিউচার!

রাকিব চলে যায় প্যান্টের পকেটে দুই হাত পুরে শি’স বাজাতে বাজাতে। তানজিনা পেছোনেই দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে।

________

মিহাল তানজিনাকে নিয়ে পার্টিতে এসেছে। তানজিনাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। তানজিনা রাকিবের বলা কথা গুলোর পর আর সেদিনের মিহালের কাজ ও ব্যাবহারের পর মিহালকে এক বিন্দুও ভরসা করতে পারে না।
মিহাল তানজিনাকে একটা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে লাপাত্তা। তানজিনা ভয় পাচ্ছে এমন না। তানজিনা ছবি তুলতে ও সাঁজ-গোজে ব্যাস্ত। তানজিনার সামনে এক কম বয়সি যুবক এসে দাঁড়ালো। যুবুকটি ফর্মাল গেটআপে আছে। যুবুকটি তানজিনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–হাই বিউটিফুল লেডি।

তানজিনা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে যুবুকটির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চাইল অতঃপর আবার ফোনের দিকে নজর দিলো। লোকটি চলে গেলো। এরপর অনেকক্ষণ পর মিহালের সাথে এলো। মিহাল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,

–সাগর, ও হচ্ছে তানজিনা। যার সাথে আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

সাগরও বসতে বসতে বলে,
–সি ইজ সো মাচ বিউটিফুল।

তানজিনা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে তার সন্দেহের ভীর। অন্য সময় হলে সে দারুন খুশি হতো কিন্তু এখন তার মনে সন্দেহের আনাগোনা। মিহাল হাসতে হাসতে বলে,
–তুমিও ওর রূপে ফেঁসে গেলে! ওর রূপে যেই ফাঁসে ও তার ফায়দা তুলে! ও হচ্ছে একাধিক ভ্রমর আকর্ষণীয় ফুল!

তানজিনা হতবাক হয়ে গেলো। এমনটা সে আশা করে নি। সাগরকে ওগুলো বলার সময় ওখানে আরও দুজন উপস্থিত হয়। ওরা চারজনে হাসছে। তানজিনা অপমানে চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলে। একজন বলে উঠে,

–এটা কিন্তু বাহবা দেওয়ার যোগ্য। এতোজন ঘুরালেন কি করে? আর কতোজন ঘুরলো?

এই কথা বলে ওরা আবারও হাসতে লাগলো। মিহাল ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
–অসংখ্য! তবে তিনজনকে ঘুরিয়েছে নিজের পেছোনে। আরও আছে কি-না জানা নেই। আরও আছে কি তানজিনা?

তানজিনা অপমানে সেখান থেকে উঠে গেলো। মিহাল মিটিমিটি হাসছে। তানজিনা সোজা বাহিরে বের হয়ে যায় তারপর একা একাই চলে যায় তার বাসায়। নিজের বাসায় গিয়ে ড্রয়িংরুমে চিল্লাতে থাকে তার মাকে উদ্দেশ্য করে,

–মা! মা! তোমার বান্ধুবীর ছেলে আমাকে কি পেয়েছে? যেখানে সেখানে অপমান করে। তার কলিগদের সামনে অপমান করতে ছাড়ে না। মিহাল অনেক বার বেড়ে গেছে। আমি সহ্য করবো না এসব। প্রতিবার আমাকে অপমান করে।

তানজিনার মা নিজের রুমে ছিলেন। দরজা খুলেছে তানজিনার ভাবি। তানজিনার মা ড্রয়িংরুমে এসে মেয়েকে বলেন,

–কি হয়েছে তোমার? রাত ১০ টা বাজতে চললো আর তুমি চিল্লাচ্ছো কেনো? যা বলার তা আস্তেও বলা যায়।

তানজিনা ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
–তুমি মহিমা আন্টিকে (মিহালের মা) জানাও তার ছেলের ব্যাবহার। সবার সামনে আমাকে অপমান ও লাঞ্ছিত করা যেনো তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো। এসব আর নেওয়া যাচ্ছে না।

তারপর তানজিনার মা তানজিনার কাছ থেকে জানতে পারলো মিহাল যে তানজিনাকে ফ্রেন্ডদের সাথে বাজে ভাবে পরিচয় করিয়েছে। তানজিনার মা এতো রাতেই মিহালের মাকে ফোন করেন। মিহাল তখন সবে নিজের বাসায় এসেছে। মিহালের মা মিহালের রুমে গিয়ে মিহালকে চ*ড় মে*রে মিহাল ও মিহালের বাবাকে সাথে নিয়ে তানজিনাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মিহালকে তানজিনার কাছে মাফ চাওয়াবে এটাই তার ইচ্ছে। মিহাল বিনাবাক্য ব্যয়ে যেতে রাজি হয়ে যায়। এমনকি মিহালের মা মিহালকে থা*প্প*ড় মে*রে’ছিল তখনও মিহাল ছিল নির্বিকার! যেনো সে কিঞ্চিত পরিমান হলেও অবগত ছিল ঘটে যাওয়া বিষয়টার বিষয়ে।

রাত প্রায় ১১ টা ছুঁই ছুঁই। মিহালরা তানজিনাদের বাড়িতে গিয়ে পোঁছায়। তানজিনাদের বসার ঘরে ইতোমধ্যে তানজিনা সহ ওর বাবা-মা ও ভাই-ভাবি বর্তমান। মিহালরা পোঁছালে তানজিনার মা প্রথমে মিহালের মায়ের দিকে প্রশ্ন ছোঁড়েন,

–এসব কি মহিমা? তোমার ছেলে অনবরত আমার মেয়েকে অপমান কেনো করে? এসবের কারণ কি মহিমা?

মিহালের মা ব্যাস্ত হয়ে বলেন,
–আমি মিহালকে তানজিনার কাছে মাফ চাওয়াতে নিয়ে এসেছি তাহমিনা। মিহাল এমনটা আর করবে না। আমার ছেলের দ্বারা খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে।

তৎক্ষণাৎ মিহাল তার মাকে বাধা প্রদান করে বলে উঠে,
–উহু মা। একদম না। আমার দ্বারা অন্যায় হয়েছে মানলাম তবে সেটা খুব বড় না। সামান্য পরিমানে। তানজিনার জায়গায় যদি অন্যকেউ হতো তবে সেটা অতিকায় বৃহৎ অন্যায় বলে গণ্য হতো। কিন্তু বিষয় যখন তানজিনা তখন মাফ তানজিনার কাছে চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তানজিনা কি কি করে এসেছে এসব বললে লজ্জায় আপনারা মুখ দেখাতে পারবেন না। আমি ওর এই কর্মের জন্য ওকে সারাজীবন এভাবেই লাঞ্ছিত করে যাবো যদি ওর সাথে আমার সারাজীবন থাকতে হয়। মোট কথা, ওর কোনো সম্মান আমার কাছে নেই।

মিহালের মা মিহালকে আরও একটা থা*প্প*ড় মা*র-লেন। মিহাল তাও নির্বিকার। তানজিনার বাবা-মা ও ভাবি হতভম্ব ও তানজিনার ভাই তামজিদ ফুঁসে উঠে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে রা’গান্বিত হয়ে প্রশ্ন করেন,

–তুমি কিসের উপর ভিত্তি করে আমার বোনকে দোষি ভাবো? কি করেছে আমার বোন?

এদিকে তানজিনার ভয়ে দুরুদুরু অবস্থা। মিহালের বাবাও চুপ করে বসে আছেন। মিহাল ওর বাবাকে তানজিনার প্রকৃতি সম্পর্কে খানিকটা অবগত করিয়ে রেখেছিল। মিহাল উঠে গিয়ে তামজিদের সম্মুখে দাঁড়ায় তারপর চোখের পাতা অনড় রেখে বলে,

–ছেলেদের সাথে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক ও আশা দেখিয়ে নিজের ফায়দা হাসিল করা ও কারও ইমোশোনকে হাসির পাত্র বানিয়ে অপমান করা। আমার এখনও মনে আছে, ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসের প্রায় শেষের দিকে আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড সাজিদ, যে কী-না দারুন মেধাবী ছিল কিন্তু দেখতে কালো ছিল। সাজিদ তানজিনাকে চিঠি লিখে খুব স্বল্প ও ভদ্র ভাষায় তার মনের কথা জানানোর পর তানজিনা পুরো ক্লাসের সামনে সাজিদকে অপমান করেছিল। সাজিদের নামে প্রিন্সিপ্যালের কাছে বিচার দিয়েছিল। প্রিন্সিপ্যাল তানজিনার বলার ধরণে বুঝেছিল যে সাজিদ তানজিনাকে অ’শ্লিল ইঙ্গিত ও বিরক্ত করেছিল! তারপর প্রিন্সিপ্যাল সাজিদের বাবা-মাকে কলেজে ডাকিয়ে এসব বলেছিল এবং সাজিদকে এক সপ্তাহের জন্য কলেজ থেকে সাসপেন্ড করেছিল। সাজিদের বাবা-মা এরপর সাজিদকে কলেজ ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই একটা কারণে সাজিদ কোনো ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে নি আর সাজিদের বোর্ড থেকে সব চেঞ্জ করায় সাজিদ একদম নতুন পরিবেশে নিজেকে মানাতে পারে নি। ইন্টার পরীক্ষা তার আশানুরূপ হয় নি। বুয়েটের স্বপ্ন তার অধরাই থেকে গেছিলো। আরও অনেক মানুষের ইমোশোনকে অপমান করছে কিন্তু তার মধ্যে সাজিদের ঘটনাটা অধিক গুরতর ছিল। আর আপনি চাইলে আমি তানজিনার ভার্সিটির সিনিয়র নাহিদ ভাই ও তানজিনার ব্যাচমেট রাকিবকে এই মুহূর্তে ফোন করতে পারি। ওদের কেমন মিথ্যে ভালোবাসার আশ্বাস দিয়ে ঠকিয়ে এসেছে তা জানবেন।

উপস্থিত সকলে বিস্ময়ে হতবাক। তানজিনা মূর্তির ন্যায় হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগের কাহিনী যে এখন সামনে আসবে তা তার ঘুণাক্ষরেও ধারণা হয় নি। নাহিদ ও রাকিবের কথা কিছুটা গোজামেল দিয়ে কাঁটানো যেতো। তামজিদ সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করে,

–তুমি সাজিদের ব্যাপারটায় সত্য বলছো তার প্রমান কি? প্রিন্সিপ্যাল আমাদের তো জানিয়েছিলেন। সাজিদ নির্দোষ তার প্রমান কি?

মিহাল হেসে জবাব দেয়,
–ইনায়া বাদে যারা ক্লাসে সেসময় উপস্থিত ছিল তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে জবাব পেয়ে যাবেন। আর সাজিদ আমাদের হাতে-পায়ে ধরে রিকুয়েস্ট করাতে প্রিন্সিপ্যালের কাছে সেদিন বলতে পারি নি সত্যটা কিন্তু পরেরদিন বলার পর প্রিন্সিপ্যাল সাজিদকে ফোন দিয়ে ডাকিয়ে এনে তাকে সাসপেন্ড থেকে ফ্রি করতে চেয়েছিল আর তানজিনাকে সাসপেন্ড করতে চেয়েছিল কিন্তু সাজিদ প্রিন্সিপ্যালের কাছ থেকে ওয়াদা নেওয়াতে প্রিন্সিপ্যাল চুপ করে থাকেন তবে প্রিন্সিপ্যাল যে তানজিনাকে সাবধান করেছিল পারসোনালি তা তানজিনা নিজেও জানে।

উপস্থিত সকলের মধ্যে আরেকদফা বিস্ময় যেনো ছেয়ে গেলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
তানজিনার বাবা পিনপতন নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করেন। তানজিনার গালে সপাটে চ’ড় পরে। হতবিহ্বল হয়ে যায় সকলে। চ’ড়টার শব্দ এতোটাই জোরে ছিলো যে তানজিনা মেঝেতে পরে গেছে। তানজিনার বাবা গর্জে উঠে বলেন,

–এরকম নিচু মন মানসিকতার অধিকারী তুমি কবে হলে? তোমাকে তো এই শিক্ষা দেওয়া হয় নি। বিবেকে বাঁধে নি তোমার তখন? মানুষ যদি নিজের বিবেকের সাথেই লুকোচুরি খেলে তবে সেই বিবেকহীন মানুষ প’শুর সমান। একটা ছেলের মানসিক অবস্থা নষ্ট করো তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছো তুমি।

তানজিনার ভাবি সাথি মেঝেতে তানজিনার পাশে বসে তার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে নতমস্তকে বলে,

–বাবা, তানু তো সত্যও বলতে পারে। আর সাজিদ যদি না চায় কেউ না জানুক তাহলে ওরা প্রিন্সিপ্যালকে কি মুখের কথায় বিশ্বাস করিয়েছে? সাজিদ নিশ্চয়ই কিছু করেছে। শুধু শুধু তানুকে মিহাল হ্যারাস করছে।

তানজিনা যেনো ভাবির কথায় ভরসা পেলো। ভাবিকে ধরে নিজের অসহায়ত্ব জাহিরে ব্যাস্ত। তানজিনার মা, ভাই ও মিহালের মা এরা একবার তানজিনার দিকে তাকায় একবার মিহালের দিকে। তানজিনাকে যখন ওর বাবা মে’রে’ছিল তখন তামজিদ বাঁধা দিতে আসলে ওদের বাবা হাতের ইশারায় নিজের স্ত্রী এ পুত্রকে সামনে আসতে মানা করেন। মিহাল তানজিনার ভাবির কথার প্রতিউত্তরে বলে,

–সাজিদের ব্যাগ আমাদের কাছে ছিল। সাজিদ যখন তিন লাইনের চিঠি লিখছিল সেটা আমাদের দেখিয়েছিল ডায়েরি থেকে। এরপর পাতা ছিঁড়ে তানজিনাকে দেয়। তানজিনা বি’চার দেওয়ার পর সাজিদকে সাসপেন্ড করলে সাজিদের তখন নিজের ব্যাগের কথা মনে ছিল না। আমরা পরেরদিন প্রিন্সিপ্যালকে ওই ডায়েরির পরে পৃষ্ঠাতে পেন্সিল দিয়ে হালকা করে ঘষে তিন লাইনের লেখাটা প্রিন্সিপ্যালকে দেখিয়েছি তারপর সাজিদের বাবাকে ব্যাগের জন্য অনেক রিকুয়েস্ট করে সাজিদকে কলেজে আনি। এটা নিশ্চয়ই জানা যে আগের পৃষ্ঠার লেখার ছাপ পরের পৃষ্ঠাতে পরে।

তানজিনার বাবা কপালে হাত দিয়ে সোফাতে বসে পরেন। তানজিনা কান্নারত অবস্থায় হতবাক হয়ে মিহালের দিকে তাকিয়ে মেঝেতেই বসে আছে। কিছুক্ষণ পর তানজিনার বাবা মিহালকে প্রশ্ন করে,

–তুমি কি চাও? তানজিনাকে তুমি পছন্দ করো না তাই রুড ব্যাবহার করো তার কারণ তো দেখালে এখন তুমি কি চাও?

মিহাল এখনো তামজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পকেটে হাত গুঁজে মিহাল অকপটে বলে,

–তানজিনাকে বিয়ে করতে চাই না।

মিহালের জবাব শুনে তানজিনার মা ও মিহালের মা মিহালের দিকে তাকিয়ে আছে। তানজিনার সেদিকে ভাবাবেগ নেই তার শুধু নিজেকে বাঁচানো নিয়ে চিন্তা। সাথি ও তামজিদ এরকমটাই ভেবেছিল। তামজিদ বলে,

–সেটা তোমার সকল অভিযোগ গুলোতে অনেকটা স্পষ্ট।

মিহাল হোসে তামজিদের কাঁধে এক হাত রেখে বলে,
–আপনি বুঝলেও আমার মা বোঝে নি। এতসব হওয়ার পরেও আমার মা তানজিনাকে সুযোগ দিতো। হ্যাঁ, সুযোগ দেওয়ার যায়েজ আছে তবে আমি তো আর তানজিনাকে ভালোবাসি না। আর বিয়ে যেহেতু আমার সাথে তাই আমার চাওয়া না চাওয়ার তো মূল্য থাকা উচিত।

তামজিদ সহ সবাই চুপ করে আছে। মিহাল এক পলক তার বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। মিহালের বাবার চোখে লুকায়িত প্রসন্নতার রেশ কিন্তু মিহালের মায়ের চোখে মুখে অমানিশা। মিহাল আবার বলে,

–আমি ছোট থেকেই পড়ালেখা ও খেলাধুলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। আমি সবকিছু নোটিশ করতাম কিন্তু জরুরী না হলে চুপ থাকতাম। তানজিনার সকল কাজকর্ম নোটিশ করেও চুপ থাকতাম কারণ ওকে কয়েকজন মেয়ে মানা করেছিল। তূর, ইরা সহ কয়েকজন কিন্তু তানজিনা শোনে নি। ওদেরটা শুনেনি তাই আমার রুচি হয় নি কিছু বলার। কিন্তু সাজিদের ঘটনাটা গুরুতর ছিল বলেই আমি ইন্টারফেয়ার করেছিলাম। আমি ও সাজিদ দুইজনে ভালো ফ্রেন্ডই ছিলাম। ইন্টারের পর রুয়েটে চান্স পাবার পর যখন মা আমাকে তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিকের কথা জানিয়ে কারও সাথে সম্পর্কে যেতে মানা করেন তখন আমি বাড়িতে কি করেছি তা মা নিজেও জানে।

মিহালের মা ছেলের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে। মিহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–মা জানতো কলেজ পর্যন্ত আমি নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে এসব প্রেম-ভালোবাসাতে জড়াই নি। কিন্তু একজনের মনের খবর সামনে আসার পর আমার মনেও সেই মেয়েটার প্রতি কিছু অনুভূতি জন্ম নিয়েছিল। যেই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে বলে জেনেছিলাম সেটা আমি রুয়েটে ভর্তির আগেই আরেক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জেনেছিলাম। কথায় কথায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল আমার এক ফ্রেন্ড কিন্তু পরক্ষণেই তার হুঁশ হওয়াতে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। আমি ঠিকই শুনেছিলাম তারপর সেদিন বাসায় গিয়ে যে মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে তার কথা চিন্তা করতে করতে তাকে আমার নিজেরও ভালো লেগে যায়। কিন্তু মায়ের সিদ্ধান্ত শোনার পর আমি বাধ্য হই মেয়েটার ব্লাইন্ড কনফেশনকে রিজেক্ট করতে।

তানজিনার বাবা চুপ করে শুনলেন তারপর বললেন,
–ঠিক আছে। তোমার সাথে তানজিনার বিয়ে আমি এখানেই ভেঙে দিলাম। তোমাদের এনগেইজমেন্ট এখানেই সমাপ্ত। তুমি তোমার নিজের পছন্দে বিয়ে করো। দোয়া করি সুখি হও।

মিহালের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে। মিহাল ওর বাবাকে ইশারা করে চলে আসতে। মিহাল তানজিনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। মিহাল বেরিয়ে গেলে তানজিনার বাবা উঠে মিহালের বাবা ও মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন,

–আমার মেয়ে যা করেছে তা জানা স্বত্বেও আপনাদের ছেলে যে এতোদিন চুপ ছিল এটা তার ধৈর্যশীলতা। মিহাল চেয়েছিল তানজিনার মাধ্যমেই এসব সামনে আনতে। আর এতোকিছুর পরেও যদি ওদের বিয়ে দেই তবে দুজনের জীবন নষ্ট করা হবে। মিহাল তো বলেই দিয়েছে সে তানজিনাকে সবসময় অপদস্থ করতে ছাড়বে না। এর চেয়ে ভালো নয় কি, ওদের একে অপরের সাথে না জড়ানো? মিহালের পছন্দেরও তো গুরুত্ব থাকা উচিত।

তানজিনার বাবার শান্ত ভঙ্গিতে কথায় মিহালের বাবা এগিয়ে গিয়ে উনার হাত ধরে বলেন,
–আপনার সাথে আমি একমত। মনের মধ্যে প্রথম থেকে অসম্মান ও রেশ নিয়ে পবিত্র সম্পর্ক শুরু না করাই ভালো কারণ এটার সমাপ্তি করুণ হতে দেখা যায়। আর মিহাল তো তানজিনার ব্যাপারে সবটা অবগত তাই বিরূপ প্রভাব আরও বেশি পরবে।

মিহালের বাবা-মা তানজিনাদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে চলে আসেন। মিহাল বাহিরে বের হয়ে অর্ককে ফোন করেছে। অর্ককে সব জানালে অর্ক এবার রাফিকে জানিয়ে কিছু ঠিক করবে। মিহালের বাবা-মা এলে মিহালরা তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

ওদিকে তানজিনার বাবা নিজের মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তানজিনার মা নিজের মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।

________

আঁধার কাটিয়ে নতুন শুভ্রতায় আলোকিত ধরণী। কিছু নতুন করে শুরু হওয়ার আহ্বান করছে যার এক সময়ের শেষটা ছিল বিষাদময়। এবার সেই শেষ থেকে রচিত হোক নতুন শেষের পঙক্তি। নতুন শুরুতে কিছু আয়োজন না করলেই নয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে বেছে নিয়েছে শুভারম্ভ করতে।
তূরের দিনকাল বাড়িতে শুয়ে বসেই কাটে। মায়ের সাথে হেল্প করা এসবেই ব্যাস্ত। রমজান আসছে তাই প্রিপারেশন নিচ্ছে। অর্ক যখন ফোন করে একদিনের জন্য গাজিপুরের রিসোর্টে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তখন তূর যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। চার-পাঁচদিন যাবত ঘরেই বসে আছে সে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here