শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৫,১৬

0
602

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৫,১৬
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫

রিসোর্টে ওরা রাতে থাকবে না তাই সকালে যাত্রা শুরু করেছে। যাত্রা পথে তূর মিহালকে দেখে অবাক হয়। মিহালও যে যাবে তার ধারণা ছিল না। অর্ককে তূর দুয়েকবার ইনডাইরেক্টলি জিজ্ঞাসা করেছিল এটা জানতে যে মিহালও যাবে কি-না? তখন অর্ক কথা ঘুরিয়ে ফেলেছে। তূরের রাগ হচ্ছে মিহালকে ফোনে কথা বলার সময় হাসতে দেখে। হেসে হেসে হাত দিয়ে কপালে পরে থাকা চুল সরাচ্ছে যেটার কারণে মিহালকে অনেকটা এট্রাক্টিভ লাগছে। তূররা আলাদা মাইক্রোতে যাচ্ছে না। বাসেই যাচ্ছে। তূর আর মিহাল এক জায়গা থেকে বাসে উঠেছে। বাকিরা তাদের এরিয়াতে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট কা’টা আগের। মিহাল ও তূর পাশাপাশি বসে নি। মিহালের সিটের পাশের সারিতে তূর বসেছে। তূরের পেছোনে দুইটা মেয়ে বসা। ওরা মিহালকে নিয়ে নানারকম কথা বলছে যার কিছুটা তূরের কানে আসছে। তূর ওদের কথা শুনে শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে মিহালের দিকে তাকাচ্ছে। মিহাল কালো শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কেডস পরেছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে রিচ ওয়াচ। শার্টের হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। তূর মুখ কালো করে বসে আছে আর নিজের ওড়না খুঁটছে রাগে। পেছোনের মেয়ে গুলোর যেনো থামার লক্ষণই নেই। ওই মেয়েগুলোর কথা শুনে তূরের ইচ্ছা করছে মিহালকে বোরখা পড়িয়ে দিতে বা ওই মেয়েদের চোখ বেঁধে দিতে।

হঠাৎ তূরের সাইডে রোদ মামা উঁকি দিলো, ওমনি তূর মুচকি হেসে মিহালের দিকে ঘুরে বললো,

–মিহাল।

মিহাল তৎক্ষণাৎ কান থেকে এয়ারফোন খুলে তূরের দিকে তাকালো। এয়ারফোন কানে দিলে যে কেউ এক ডাকে কথা শুনে ফেলে তা আমার জানা ছিল না! এরপর তূর মিহালকে মুখ কালো করে বললো,

–আমার সাইডের জানালা দিয়ে না রোদ আসছে। আমার প্রবলেম হচ্ছে। আমি কি তোমার সাথে বসতে পারি?

মিহাল বাঁকা হাসলো। তারপর সিট থেকে উঠে দাঁড়ায়। তূর মৌন সম্মতি পেয়ে মিহালের সাথে জানালার সাইডে বসে। ওদিকে তূরের পেছোনের মেয়েগুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তূর মিহালের সাথে বসার আগে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়েছিল যার দরুন মেয়েদের এই অবাকতা।

______

পরের বাস স্ট্যান্ডে অর্ক, রাফি, রিজভী, তাইজুল ও রণক উঠলো। তাওহীদ, শাফকাত ও মেয়েরা সব পরের স্ট্যান্ড থেকে উঠবে। তূর মিহালের সাথেই বসে আছে। তূর ফেসবুক স্ক্রোল করছিল তখন রাফসান মেসেজ করে,

“হ্যালো, তূর।”

তূর মেসেজটা পড়ে ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকায় কিছুক্ষণ তারপর ফিরতি রিপ্লাই করলে রাফসান মেসেজ করে,

“কি করছো?”

তূর এক রাশ বিরক্তি নিয়ে লেখে,
“ফ্রেন্ডদের সাথে ট্যুরে যাচ্ছি ভাইয়া।”

রাফসান উৎফুল্লিত হলো। তারপর লেখে,
“বাংলাদেশে গিয়ে তো অনেক ঘোরাঘুরি করছো। যাক দুই মাসের মধ্যে ফিরে আসবে তো ঘোরাঘুরি করো।”

তূর অবাক হয়। রাফসান কি এখনও তাকে বিয়ে করার আশাতে আছে নাকি সেটাই ভাবছে তূর। তূর বুঝে পায় না, এই ছেলে পিছু কেনো ছাড়ছে না। ইগনোর করাটাও কি বোঝে না? ভদ্রতার জন্য টুকটাক কথা বলাতে যেনো সে মা’থায় চড়ে বসেছে। তূর নিজেকে কন্ট্রোল করে লেখে,

–এবার আমি আমার ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ফিরবো। আর তাদের সাথেই থাকবো।

রাফসান জানে না তূরের ভার্সিটি পরিবর্তন ও তূরের খালামনিদের বাসায় থাকবে না সেটা। রাফসান সাথে সাথে অবাক হয়ে মেসেজ করে,

–মানে? কোথায় থাকবে তুমি? আর জাহিনদের বাসায় থাকবে না কেনো? আমেরিকাতে পরিচিত মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তূর।

তূর মুচকি হাসির ইমোজি দিয়ে মোবাইল ডাটা অফ করে দেয়। এদিকে মিহাল সানগ্লাস পড়ে বসে আছে কিন্তু সে লক্ষ্য করেছে তূর মেসেজিং করছে। কিন্তু কার সাথে সেটা বুঝতে পারছে না।

দুপুর ১২ টার মধ্যে গাজিপুরের একটা রিসোর্টে পৌঁছে যায় ওরা। রেস্ট করার জন্য দুইটা রুম নিয়েছে। মেয়েরা একটু ফ্রেশ হয়ে রিসোর্ট ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যাস্ত সাথে ছবি তোলা। দুপুর ২ টার সময় লাঞ্চ করবে। তূররা কিছুক্ষণ ঘুরে রুমে এসে শুয়ে পরেছে। লাঞ্চের পর আবার ঘুরবে।

_________
তানজিনার বাবা তানজিনার সাথে দুইদিন ধরে কথা বলেন না। তানজিনা ভার্সিটিতে যায় আসে। সেদিনের তার বাবার কথা গুলো তানজিনার খারাপ লেগেছিল। আজ যেহেতু ভার্সিটি নেই তাই তানজিনা বাসায়। তানজিনার বাবা মেয়েকে ডাকেন। তানজিনা ভয়ে জড়সড় হয়ে বাবার থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়ায়। তানজিনার বাবা বলেন,

–তোমাকে আমি কানাডা পাঠিয়ে দিবো। সেখানে আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওখানে থেকে মাস্টার্স কম্পিলিট করবে। আমার যোগাযোগ হয়ে গেছে। তোমাকে এবার নিজেকে শোধরাতেই হবে। মনে রেখো, আমার বন্ধুর পরিবার নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। ওর মেয়েরা শালিনতার মধ্যে চলাচল করে। তোমাকেও সেখানে ওদের মতো করে চলতে হবে। কোনো খারাপ সঙ্গে যুক্ত হবে না। আমার বন্ধুর ছোট মেয়ে তোমার সাথেই ক্লাস করবে। দুই মাস পর কানাডার ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হবে কিন্তু তোমাকে তিন মাস সময় দিবে ওরা। তোমার তো আইএলটিএস করা আছে। এখন তোমাকে প্রথম একমাস অনলাইনে ওদের ক্লাস এটেন্ড করতে হবে। তোমার ভিসার জন্য আমি এপ্লাই করে দিয়েছি। কয়েকদিন পর ডকুমেন্ট চাবে। ভার্সিটি থেকে সব ঝামেলা শেষ করে নিবে। এবার যাও।

তানজিনা অবাক হয়ে যায়। এভাবে হুট করে এতোকিছু তার মস্তিষ্ক যেনো গুলিয়ে ফেলছে। তানজিনা নিজের রুমে এসে বসলে ওর মা সেখানে আসেন। তারপর তানজিনার পাশে বসে বলেন,

–তোমার বাবা যা বলেছে সেটাই হবে। তোমার জন্য সেদিন উনাকে কম অ’পমানিত হতে হয় নি। তাছাড়া উনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তোমার ভালোই হবে। নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবে। দুইটা বছরেরই তো ব্যাপার। তারপর ফিরে আসবে। আমাদের মান ঠিক রেখে ফিরবে আশাকরি। তোমার বাবাকে আমি অনেক বলেও বোঝাতে সক্ষম হই নি। তাই মেনে নেও।

তানজিনা কিছুই বললো না। চুপ করে শুনে গেলো। তার ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে বা কেমন হবে নতুন পরিবেশ তা নিয়ে শঙ্কিত সে।

_______

লাঞ্চের পর কিছুক্ষণ রেস্ট করে ওরা অনেক ছবি ও ঘোরাফেরা করে আড্ডাতে বসলো। এবার ওরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলবে। একটা কাচের বোতল টেবিলের মাঝে রেখে সেটাকে ঘুরাবে। টেবিলটা গোল ও মোটামোটি বড়ো। ছেলেরা একবার করে হলেও ডেয়ার নিচ্ছে ইচ্ছে করে। মেয়েরা দুই-একজন ছেলেদের পিঞ্চে রে’গে গিয়ে ডেয়ার নিচ্ছে। ডেয়ারে নাচ-গান, প্রোপোজ সবই আছে। ট্রুথ নিলেও নিজের জীবনে অজানা কিছু সত্য বলতে হচ্ছে। তূরের কাছে এলে তূর ট্রুথ নেয়। তূরকে নিজের জীবনের লুকায়িত কিছু বলতে বলে যা তূর সবার কাছে প্রকাশ করে না বা বলে না।

তূর ইতস্তত হয়ে বলে,
–আমি রেগে গেলে নিজের ক্ষতি করি।

অর্ক হাই তুলতে তুলতে বলে,
–নেক্সট প্লিজ। এটা সবাই জানে। অন্যকিছু বল।

তূর বাঁকা চোখে তাকায় অর্কর দিকে। তারপর ভাবলো মিহালকে একটি ক্ষেপানো যাক। তাই তূর বলে,

–আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার কাজিনের ফ্রেন্ডের সাথে। যার কারণে আমি দেশে এসেছি। দেশে আসার ওটাও একটা কারণ ছিল। এজন্য বাবা অসন্তুষ্ট ছিল দেশে আসাতে তবে তিনি তখনও জানতেন না যে আমি বিয়ের কথা জেনে দেশে এসেছি। বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে ভাঙিয়েছি কিন্তু সেই ছেলে এখনও আমার আশা রাখে।

সবাই অবাক হয়ে যায়। ওরা এটা জানতো না।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
অতীত তিক্ত হলেও সত্য। মিহাল যেমন চার বছর আগে তূরকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে কস্ট দিয়েছিল তেমনি আজকে সত্য জানতে জোরাজোরিতে মিহাল নিজেও কস্ট পেলো। কিন্তু এটা তূরের প্রাপ্ত আঘাত থেকে অনেকটাই লঘু। মিহাল সামলে নিয়েছে নিজেকে। বিয়ে তো ভেঙেই দিয়েছে তূর। সবার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে তূর চুটকি বাজিয়ে বলে,

–ও হ্যালো! ওটা এখনও নেই। সব ক্লিয়ার ওকে? খেলায় ফেরা যাক?

আবার খেলা শুরু হলো। রাফির কাছে দ্বিতীয়বারের মতো বোতল থামলে রাফি তো কোনো ভাবেই ডেয়ার নিবে না। প্রথমবার নাচিয়েছে তাই এবার ট্রুথ নিলো। রাফিকে প্রশ্ন করবে জারিন। জারিন বলে,

–কাউকে লাইফপার্টনার বানাতে চাস এমনভাবে ভালোবাসিস?

রাফি কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রয়। যেনো প্রশ্নের জবাবটা তার কাছেই বড্ড অস্বস্তির। শেষমেশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–না।

তবে রাফি মুখে না বললেও মনে মনে যে তার অন্যকিছু তা উপস্থিত সকলের বোঝা কষ্টসাধ্য হয় নি। নাদিয়া সন্দিহান হয়ে বলে,

–সত্য বলতে বলা হয়েছে। লুকাতে না। সত্যটা বল। একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর “না” বলতে কারও চিন্তা করতে হয় না যদি না সে কিছু লুকায়!

রাফি এখনও নিরব। অর্ক পরিবেশ ঠিক করতে হেসে বলে উঠে,
–বাদ দে তো। বোতল ঘুরা।

তূর এবার অর্কের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তারপর বলে,
–আমার সময় তো তুই ছাড় দিস নি। এখন কেনো রাফিরটা ঘুরাচ্ছিস? রাফিকে বলতে হবে। বল রাফি। আমাদের ফ্রেন্ড মনে করে বল।

রাফি বলতে চাচ্ছিলো না। আরও কয়েকজন ঝেঁকে ধরাতে তারপর স্বিকার করে,
–হ্যাঁ।

রাফির মুখাবয়ব দেখে মেয়েটার নাম এখনই জিজ্ঞাস করলো না। অন্তরালের কারণটা তো তারা জানে না। এরপর আবার খেলা শুরু হলো। মিহালের কাছে বোতল থামলে ডেয়ার নেয় মিহাল। মিহালকে ডেয়ার দেয় রিজভী।

–তূরকে প্রোপোজ কর মিহাল।

রিজভীর কথা শুনে তূর আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। ডেয়ার দিবে ভালো কথা কিন্তু এটা কেমন ডেয়ার? তূর অসন্তোষ নিয়ে বলে,

–এটা কেমন ধরনের ডেয়ার? এতে আমাকে ইনভলব করছো কেনো?

রিজভী তূরের অসন্তোষ মনোভাব দেখে কথার খেই হারিয়ে ফেলে। আমতা আমতা করে বলে,
–মিহালের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং। সহজে পূরণ করতে পারবে না। তাই আর কি। তুমি রাগ করো না হ্যাঁ!

মিহাল অর্কদের দিকে তাকায়। ওরা চোখ দিয়ে ইশারা করলে মিহাল উঠে যায়। তূর মিহালকে উঠতে দেখে তাচ্ছিল্য হাসে। তূর মনে মনে জানে, মিহাল এটা করবে না। মিহাল তাকে পছন্দ করে ঠিক তবে তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক আবার চার বছর আগে হয়তো এটার জন্যই রিজেক্ট করেছিল। তূর অনিচ্ছাসত্ত্বেও মুখে হাসির রেশ লাগিয়ে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর হাতের তালুতে কয়েকটা গন্ধরাজ, কাঠগোলাপ ও বেলি ফুল নিয়ে হাজির হয় মিহাল। সব শুভ্রতায় পরিপূর্ণ। রঙিন ফুল তূরের পছন্দ কিন্তু শুভ্রতার প্রতীকী কিছু ফুল সর্বদা ভালোবাসার ছোট্ট তালিকায় একটা অতুলনীয় স্থান দখল করে আছে। ফুল গুলো এনে মিহাল তূরের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে। মিহালকে যখন ফুল আনতে দেখেছিল তখনই তূর স্বস্থানে দাঁড়িয়ে যায় অবাক হয়ে। এটা সে কাশ্মিককালেও আশা করে নি। একটা ডেয়ারের জন্য এতো আয়োজন! তূর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে মিহালের দিকে চেয়ে। মিহাল তার ওষ্ঠকোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে তূরের হতবাক হওয়া মুখশ্রী অবলোকন করে। তূরের পাশে বসে থাকা সবাই আস্তে করে সরে যায়। অর্ক ও রণক ছবি তুলছে। ওরা দুইজন ভালো ছবি তুলতে পারে বলে ওরাই তুলছে। রাফিও ভালো ছবি তুলতে পারে কিন্তু তার মন আজ খুব খারাপ!

মিহাল তূরের স্থির হওয়া কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–চোখে তার মায়াতে পরিপূর্ণ। হোক সে অনেকটা অভিমানী! তার কাজল চোখের মায়ায় পরে আমি আজও উঠতে পারি নি। কাজলমায়া তার সাথে সয়ংসম্পূর্ণ। তার স্নিগ্ধ হাসিতে মুক্তো ঝরে। শুভ্রতা ঘেরা ভালোবাসা তারই জন্য। নীল অন্তরিক্ষে যখন মেঘেরা পেজা তুলোর মতো উড়ে যায় আবার যখন মেঘেরা এক রাশ বিষন্নতাকে কেন্দ্র করে খুব কাঁদে! আমার মন তখন বলে, মেঘকন্যার আমার উপর বড্ড অভিমান তো আমি আজও ভাঙাতে পারি নি। সে কি জানে? আমি তার অভিমানের ভার নিতে নিতে ক্লান্ত? ভালোবাসি তো তাকে। আমার কারণে তার ওই কাজলমায়া মিশ্রিত আঁখিযুগল থেকে অশ্রুরা অন্তহীন গড়িয়েছে। আমি যদি পারতাম তার অশ্রুকণার মূল্য দিতে! তার সামার্থ আমার আদৌ আছে? যদি সে এই শুভ্র ভালোবাসার প্রতীকগুলো গ্রহণ করে? আমার প্রতি অসম্ভব রাগ এই পবিত্র ফুলগুলোকে ভাগিদার করো না। তোমার সকল অভিযোগ আমি মেনে নিলাম।

রণক পুরো দৃশ্য রেকর্ড করে নেয়। তূরের নয়নযুগল দিয়ে নোনাজলের ধারা বইছে। বহুপ্রতীক্ষিত ভালোবাসার মানুষটা যখন সকল অভিযোগ গুলোকে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মুখ নিঃসৃত বাক্য দিয়ে হাওয়া করে দিতে পারে তখন কেমন অনুভূতি হয়? শুভ্র ভালোবাসা গুলোও যেনো অপেক্ষা করছে তাদের সাদরে গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু তূরের মনে এখন দুই রকম ভাবনারা আন্দোলোন করছে। পূর্বের কস্টগুলো স্বীয় ইচ্ছায় মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। তূর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে। ভালোবাসা ও ফুল দুটোরই অপমান সে ইচ্ছাবশত করতে নারাজ। কি করবে না করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। চোখের উপরে কপালের রগ ধপধপ করছে। মাথা প্রচণ্ড ব্যাথায় আরও অস্থির অবস্থা। তূর মিহালের মুখশ্রীতে আকুলতা দেখতে পাচ্ছে। এদিকে তূরের নিজের মনের অন্দরমহল ঝরে বিদ্ধস্থ হচ্ছে। তূর মিহালের মুখাবয়ব অপলক অবলোকন করতে থেকে নিজের দুহাত বারিয়ে মিহালের হাত থেকে ফুল গুলো স্বিকার করে নেয়। তারপর বহু কস্টে জড়ানো কন্ঠস্বরে বলে,

–আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যদি তুমি দেখতে! আফসোস! আমি তোমার নিবেদন করা ফুল গুলো অস্বিকার করতে পারলাম না। এটা তোমার প্রতি থাকা আমার দুর্বলতার এক বিশাল কারণ। আমার পূর্বের ক্ষতগুলো আমাকে সকল অভিযোগ ও অভিমান ত্যাগ করতে দিচ্ছে না। আমি নিরুপায়। আজ হয়তো তোমার কস্টের কারণ হবো আমি আবার হয়তো না। মানুষের মন খুব খুব অভিমানী জানো! আমার অভিমানের পাহাড় ভাঙবে কবে তার দিনক্ষণ সমন্ধে আমি নিজেও অজ্ঞাত।

তূর ফুল গুলো নিয়ে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে সেই স্থান ত্যাগ করে। মিহাল এখনও হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে। অধরকোনে তার সূক্ষ্ম হাসি পরক্ষনেই নয়নযুগল দিয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা সুখ গড়িয়ে পরলো। অস্বিকৃত হয়ে তার মনে দহন হচ্ছে তবে এই অস্বিকৃতি একদিন তার মঞ্জিল হাসিল করবেই। ভালোবাসার অভিমানের পাহাড় সে ভঙ্গ করবেই।

তূরের পিছু পিছু নাদিয়া, লিরা, ফাইজা ও জারিন যেতে চাইলে তাওহীদ ও শাফকাত ওদের বাঁধা দেয়। নাদিয়া শাফকাতের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যেতে নিলে আসফি নাদিয়ার যাওয়ার পথ রোধ করে বলে,

–যাস না। জানি আমার কথা তোদের আজও বোকা বোকা লাগবে। তাও বলছি যাস না। কিছুটা সময় ওতে নিভৃতে নিজের কস্ট বিসর্জন দিতে দে। চার বছর আগের ওইদিন আমি তোদের আমি আটকাই নি তূরের সাথে সাথে থাকতে কিন্তু আজকে বলছি, যাস না।

চার বান্ধুবী আসফির ভাবাবেগ শূণ্য মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাওহীদ তখন আসফির সুরে সুর মিলিয়ে বলে,
–এখন তূরের একা থাকাটা জরুরী। থাকুক কিছু সময়। মিহালকেও এখন স্পেস দেওয়া উচিত। ওদের মনোমালিন্যে আমরা প্রত্যেক্ষ ভাবে না পরোক্ষভাবে সামিল হতে পারি যাতে আমাদের হস্তক্ষেপ ওরা জোর-জবরদস্তি মনে না করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here