শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৭,১৮

0
551

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৭,১৮
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭

কিছু প্রহর বহমান কারও মিষ্টি প্রতিক্ষায়। তূর আড্ডার মধ্যে এলো তবে তার মুখশ্রীতে কিছুক্ষণ আগের ঘটনার রেশ মাত্র নেই। তূরের ভাবসাবে সবাই অবাক হলেও খুশি হয়েছে তূর স্বাভাবিক ভাবে কথা বলাতে। তূর এসেই বলে,

–বোতল ঘুরা। একবার বোতল যেনো আমার দিকে ঘুরে।

অর্ক বোতল ঘুরালো। প্রথমবার জারিনের দিকে গেলো যে কি-না তূরের পাশে বসা। এরপর আবার ঘুরালো সেটা লিরার দিকে। তৃতীয়বার তূরের দিকে আসলে তূর উৎফুল্লতার সাথে বলে,

–ডেয়ার নিবো।

সবাই কিছুটা অবাক হলেও তূরকে ডেয়ার দিতে নিলে তূর ওদের থামাতে বলে,
–ডেয়ারটা যেনো রিজভী আমাকে দেয়। যেমনটা সে তার বন্ধুকে দিয়েছিল। সেম টু সেম।

তূরের এহেনো কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে তূরের দিকে চেয়ে আছে। মিহাল তীক্ষ্ণ নজরে তূরকে পর্যবেক্ষণ করছে কিন্তু ফলাফল শূণ্য। তূরের মুখাবয়ব প্রতিক্রিয়াহীন। রিজভী দোটানাতে আছে কি ডেয়ার দিবে। তূর রিজভীকে উদ্দেশ্য করে সহজ ভাবে বলে,

–আরে! টেক ইট ইজি। ইটস জাস্ট এ গেম। নাথিং মোর। সো, সেম টু সেম ডেয়ার দিতেই পারো। আই এম এক্সসাইটেড।

মিহালের মনে হচ্ছে তূর কিছু একটা করতে চলেছে তাই এরকম করছে। মিহাল রিজভীকে ইশারাতে ডেয়ার দিতে বলে। রিজভী তূরকে মিহালের মতো একই ডেয়ার দেয়, মিহালকে প্রপোজ করতে। তূর সানন্দে তা গ্রহণ করে। তূর নিজের স্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তারপর হাতের ইশারায় মিহালকে উঠতে বলে। মিহাল এখনও তূরের মতিগতি পর্যবেক্ষণে ব্যাস্ত। এমতাবস্থায় মিহাল উঠে দাঁড়ায়। তূর বাঁকা হেসে মিহালের চারিপাশে একবার চক্কর দেয় তারপর আবার রাউন্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিহালের ডান সাইডে গিয়ে তূর বলতে শুরু করে,

“ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই যে তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসা বেঁধে যে রাখে।”

এবার তূর মিহালের সামনে এসে মিহালের চোখের দিকে তাকায়। তূরের চোখে মুখে একধরণের রম্যতার ছাঁপ। তূর ঘার কাঁত করে বলে,
–ডেয়ার ডান! তুমি আগেরবার এটা বলতে ভুলে গিয়েছিলে। তোমার ডেয়ার ডান হয়েছিল এবার আমারটাও।

মিহাল তূরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তূরের কথাতে সে বুঝেছে, তূর তাকে ইনডাইরেক্টলি কি বুঝিয়েছে। মিহালও তো ডেয়ারের বাহানায় প্রোপোজ করেছিল তাই তূর নিজের জমানো ভাব গুলো ডেয়ারের মাধ্যমে বলে দিলো। তূর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা রেখে মিহালকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–কিছু তো প্রতিউত্তর করতে হবে, যেমনটা তখন আমি করেছিলাম। সো প্লিজ!

মিহাল মাথা নুইয়ে হেসে হাত পকেটে পুরে তূরের দিকে ঈষৎ মা’থা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে,

“অভিমানী পাখির অভিমান ভাঙাতে আমি সদা প্রস্তুত। তার করা অভিমান যে আমার কাছে প্রিয় অভিমান। তার অশ্রুতে আমি কাজলের মতো গলে যেতেও প্রস্তুত কারণ কাজলমায়ার নয়নযুগলে আমি কাজল হতে চাই।”

তূর ঠোঁট এলিয়ে হাসে তারপর চোখ-মুখে হেসে বলে,
–বেস্ট অফ লাক।

তূর নিজের জায়গায় এসে বসে নিজেই বোতল ঘুরায়। খেলা আবার চলতে শুরু করে। একপর্যায়ে খেলার সমাপ্ত ঘটিয়ে ওরা রিসোর্টে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। তূর আজকে ওর নানুর বাড়ি যাবে। তূরের নানুর বাড়ি যেতে রণক ও জারিনের পথে পরে। তূর রণকদের সাথে চলে যায়।

রিজভী মিহালকে উদ্দেশ্য করে কনফিউজড হয়ে বলে,

–তোর আর তূরের মাঝে কি কোল্ড ও’য়া’র শুরু হলো? আমার তো সব কনফিউশন লাগছে। হুট করে তূরের কি হলো যে সে ওরকম বিহেভ করা শুরু করলো?

মিহাল, রিজভী, অর্ক ও তাইজুলের সাথে একটা ব্রিজে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘরির কাঁটা এখন ১০ টার ঘর ছুঁই ছুঁই। মিহাল নিরবতাকে উপলব্ধি করতে ব্রিজের সাথে গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশ দেখছে। তারকাখচিত চাদরে আচ্ছাদিত অম্বর ঝিকিমিকি করছে। মিহাল জবাব দেয় নি রিজভীর প্রশ্নের। অর্ক সন্দিহান হয়ে বলে,

–তূর মেইবি অনেকটা অসন্তুষ্ট আমাদের প্রতি। নাহলে এই রাতের বেলা ওর নানুর বাড়ি কেনো যেতে যাবে? ওর নানুর বাড়িতে যে যাবে এমন কিছু তো বলে নি। হুট করে রণকরা বাস থেকে নামার সময়ই ওর নানুর বাড়ি যাওয়ার কথা মনে পরলো।

মিহাল ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–তার অভিমান! সে বড়োই অভিমানী। এতো সহজে সে মানবে না। প্রথমে আবেগে কন্ট্রোলেস হলেও পরক্ষণেই সে নিজের অভিমানকে প্রায়োরিটি দিয়েছে। আমি কি করবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। সে মনে হয় ভাবছে, আমি তানজিনাকে পছন্দ করি! কিন্তু এটা তো সত্যি না। আমি তানজিনাকে কখনোই পছন্দ করতাম না। তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক হবার কিছুদিন আগে থেকেই আমি অর্কর মুখ ফসকে বলে ফেলা তূরের ভালোবাসার কথা জানার পর থেকে আমি তূরকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি। অন্যরকম ফিলিংস হতো মনে যা তখন আমার জীবনের বিশটা বসন্তে আগে কখনো হয় নি। আমার আগে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময়ই ছিল না। আমি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পড়ালেখাতেই ফোকাসড ছিলাম সাথে টুকটাক খেলাধুলা। বুয়েটে চান্স না পেলেও রুয়েটে সিএসসিতে খুব ভালো অপশন। নিজের লাইফ অর্ধেকের বেশি সেটআপ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার পর আমি ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডাতে সামিল হতাম। এর আগে আমি খুব একটা আড্ডাতে আসতাম না। ক্লাসের ফাঁকে কেউ আমার সাথে কথা বলতে আসলে তখন হাসি-তামাশা হতো। কিন্তু কখনও কি ক্লাস ছুটির পর বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডাতে আমাকে দেখেছিস অর্ক? এখন আমার ফ্যামিলি কি ঠিক করে রেখেছিল তা আমাকে না জানালে কি আমার জানার কথা? না তো। যখন জেনেছি তখন আমি আমার মায়ের পছন্দের সাথে প্রথমবারের মতো দ্বিমত পোষণ করেছিলাম। আম্মুকে বোঝাতে অক্ষম হওয়ার পরে আমি নিজের মতো করে সবটা হ্যান্ডেল করতে চেয়েছিলাম। এরপর তূরের ব্লাইন্ড কনফেশন। আমি যদি তখন তূরকে এক্সেপ্ট করতাম তবে সেটা অনেক বড় হাঙ্গামা হতো। আমি তোদের কাউকে হয়তো বোঝাতে পারবো না সেটা কিন্তু পরিস্থিতি যার সেই বুঝে। বাবা-মায়ের সব কথা মানা ছেলেটাও যখন বাবা-মায়ের কোনো সিদ্ধান্তে কঠোর বিরোধিতা করে তখন বাড়ির পরিবেশ কেমন হয় তা সবাই বুঝতে পারবে না। আমি তখন নিজের মায়ের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলাম আর তখন যদি তূরকে এক্সেপ্ট করতাম তবে তানজিনা সেগুলোকে রাঙিয়ে বেরাতো। আমার দিক থেকে তখন আমার করা কাজটা খারাপ মনে হয় নি। আমি তূরকে “তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক” এটা বলার তো এই মানে বের হয় না যে, “আমি তানজিনাকে ভালোবাসি!” কী? বের হয়? আমি কি তখন একবারও বলেছিলাম সে কথা? বলেছিলাম, “বিয়ে ঠিক”। আর তোদের সাথে তখন ইনায়াও ছিল। ইনায়া তানজিনার বেস্টি সেটা তো অর্ক তোর অজানা ছিল না। হ্যাঁ, আমি পরে সবটা ক্লিয়ার করি নি। কারণ আমার তখন সত্যি সময়ের দরকার ছিল তাছাড়া তখনও আমি ক্লিয়ার হতে পারি নি যে, তূরের প্রতি হওয়া অনুভূতি গুলো ভালোবাসা। তূরকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগতো তারপর তো মায়ের থেকে বিয়ের কথা জানলাম। তখন আমার মনে কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আমিই জানি। তোদের বললে জানতি তবে আমি রিজভীকে ছাড়া কারও সাথে কিছু শেয়ার করি নি।

রিজভী মিহালের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–আস্তে আস্তে যখন সব ঠিক হওয়া শুরু করেছে তখন এটাও ঠিক হবে। ধৈর্যহারা হলে হবে না।

মিহাল হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এরপর আরও কিছুক্ষণ সেখানে থেকে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
তূরের মামা-মামী তূরকে জোর করে এটা ওটা খাওয়াচ্ছেন। তাদের বড় বোনের সন্তানরা তো দেশে কালেভদ্রে আসে। তাই ছোট বোনের সন্তানদের অধিক যত্ন করেন। তূর আবার অনেক বছর পর নানুবাড়ি গেলো। মামীরা খাবার মুখে তুলে খাইয়ে পর্যন্ত দিচ্ছেন। তিন মামারা তাদের বউদের কার্যকলাপে মুগ্ধ। তূরের নানু বসে বসে বউদের নাতনীকে আদর যত্ন করা দেখছেন। তূর খেতে খেতে হাঁপিয়ে গিয়ে বলে,

–আর না মামি। আমি রাতে এমনিতে খুব কম খাই। আর তোমরা তো আমাকে খাইয়েই চলেছো। ইলিশ পছন্দ বলে এখনি চার-পাঁচ পিছ দিবে! দুই পিছ খেয়েছি ঢের আমার জন্য। আর দেশি মুরগীর কষাটা নিশ্চয়ই বড় মামি করেছো? ঝাল ঝাল আহা! ঢেঁড়শ ভাজিটাও অনেক মজা। আর এই ডিম ভুনা? আমাকে তোমরা ডিম খাওয়ানোর জন্য এতো উতলা হও কেনো বলোতো? বাসায় তোমাদের ননদটাও আমাকে দিনে দুই-তিনবার ডিম সিদ্ধ করে দেয়। আমি তো ডিম খাই তবে প্রতিদিন এতো খেতে ভালো লাগে না।

তূরের বড় মামী প্লেটে দেশি মুরগীর আরেক পিছ দিয়ে বললেন,
–তোরে কি বড়ো আপা খাওয়াতো না? তুই আরও শুকিয়ে গেছিস কেন? জাহিনরা তো মাশাআল্লাহ স্বাস্থবান। এই মেঝো ওরে আরও খাওয়া।

তূর অবাক হয়ে বলে,
–কি বলো! খালামনি আমাকে খাওয়ানোর জন্য কতো কিছু করতো তবে আমি সারাদিন ক্যাম্পাসেই থাকতাম। রাতে তার জোরাজোরিতে খেতে হতো অনেকটা।

তূরের মেঝো মামি ভাত মেখে খাওয়াচ্ছেন আর ছোটো মামি বাচ্চাদের কোলে নিয়ে তূরের খাওয়া দেখছেন তৃপ্তি নিয়ে। খাওয়া দাওয়ার পালা শেষে তূর ওর মামাতো বোনদের সাথে ঘুমাতে গেলো। নেট অন করার পর দেখলো অর্কদের সাথে যে মেসেঞ্জারে গ্রুপ আছে সেটাতে ওরা অনেকগুলো মেসেজ করেছে। এই গ্রুপে মিহাল, রিজভী ও তাইজুল নেই। তূর মেসেজগুলো পড়ে দেখলো না। তবে রাফি বাদে সবাই মেসেজ করে রেখেছে। একটা মেসেজ পড়ে বুঝলো সবাই মিহালকে নিয়ে হবে। তূর রিপ্লাই করার ইচ্ছা পোষণ করলো না।
মিহালকে সে অনেকটা ভালোবাসে বলেই অন্য কাউকে বিয়ে বা ভালোবাসা তূরের পক্ষে সম্ভব না মন থেকে। তূর জানে মিহালও তাকে ভালোবাসে। তূর নিজের ভাবনাকে আর গভীরে নিতে চাইলো না। তার ঘুম প্রয়োজন।

_______
সূর্য রশ্নির তেজস্বী কিরণে বিভাসিত ধরণী। বৈশাখ মাস পেরিয়ে জৈষ্ঠতে পদার্পণ করেছে প্রকৃতি কিন্তু নেই তেমন কোনো পরিবর্তন। ফল পাকা ছাড়া লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায় না। তিন চার দিন পর রোজা শুরু। রোজার ঈদের সপ্তাহ দুয়েক পর তূর ফিরে যাবে আমেরিকায়। আমেরিকায় রোজা অনেক লম্বা। চার বছরে রোজার তুলনায় এবার একটু স্বস্থির হবে।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর তূরের বাবা বাড়ি ফিরলে তূর ওর বাবা-মায়ের রুমে যায়। তূরের বাবা ফ্রেশ হয়ে চা পান করছেন সাথে মোবাইলে নিউজ দেখছেন। তূরের মাও চা পান করছেন। তূরকে বসতে দেখে তূরের বাবা একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যাস্ত। তূর ওর বাবাকে উদ্দেশ্যে ইতস্তত করে বলে,

–বাবা।

তূরের দিকে তাকায় তার বাবা। তূর আড়ষ্ট ভাবে বলে,
–আমি যদি কাউকে বিয়ে করতে চাই তবে কি তুমি তাকে মেনে নিবে?

তূরের বাবা চায়ের খালি কাপটা রাখলেন তারপর চশমাটা আরেকটু ঠেলে দিয়ে মেয়ের দিকে গভীরভাবে তাকালেন। তূর তার হাত কচলাচ্ছে। কাল রাতে মেসেজ গুলো না পড়লেও দুপুরে বাড়ি ফিরে সবগুলো পড়েছে। তূরের বাবা তূরকে কোনো প্রতিউত্তর করছে না যা তূরকে আরও অস্বস্তিতে ফেলছে। তূর বলে,

–বলো না বাবা?

তূরের বাবা শান্ত স্বরে বলেন,
–কি বলবো? তুমি যে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইবে না তা আমাদের জানা হয়ে গেছে। এখন নিজ থেকে যাকে বিয়ে করতে চাইবে করো।

তূরের খারাপ লাগলো। তূর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। রমজান মাসে আল্লাহর কাছে সাফ মনে কিছু চাইলে আল্লাহ্ ফেরান না। ইবাদাতে তূর এক মাস কাটানোর চিন্তা করলো। দুটি মনের পার্থনা এক হলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এদিকে দুটি মন একে অপরকেই চায়।

________
ডাক্তার ইফতি তার বাবা-মাকে নীরার কথা জানায়। ইফতির বাবা-মা ছেলের সিদ্ধান্তে যারপরনাই খুশি। কম তো বছর পেরোলো না। দশ বছরের বেশি হলো। এবার যদি একটু সুখের মুখ দেখে হাসিখুশি থাকে তাদের ছেলে। ইফতির বাবা-মা নীরাকে দেখতে যেতে চান। রোজার আগেরদিন যাবেন ভাবলেন। ইফতি তূরের থেকে বাড়ির ঠিকানা নেয়। ইফতির বাবা-মায়ের নীরার ছবি দেখে পছন্দও হয়েছে।

তূর ওর বাবা-মাকে বলেছে নীরা ও ইফতির ব্যাপারে। তারা বড় মেয়ে রেখে মেঝো মেয়ের বিয়ে দিবেন কিনা ভাবছেন। সন্ধ্যার সময় উনারা আসলে তূর, তার মা ও চাচি মিলে আপ্যায়ন করছেন। নীরাকে নাফিহা ব্যাপারটা জানালে নীরা লজ্জায় নিজের রুমের দরজাই খুলছে না। ইফতির বাবা-মা এর সাথে তূরের বাবা-চাচা কথা বলছেন। ইফতি তূর্যকে নিয়ে বসে আছে। তূর্য ইফতিকে দেখে চারিপাশে ঘুরছিল তাই ইফতি পাশে নিয়ে বসে আছে। তূরের বাবা ইফতির বাবা-মাকে জানালেন, তার বড় মেয়ের বিয়ে হয় নি। এমতাবস্থায় মেঝো মেয়ের বিয়ে দিবেন কিনা বুঝতে পারছেন না। ইফতির বাবা বিনয়ের সাথে বলেন,

–আপনার ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পারছি। আমরা বলবো না এখনই বিয়ে দিতে। রিং পড়িয়ে রাখতে পারি। তারপর আপনার বড় মেয়ের বিয়ের সময় বা পর ইফতি ও নীরার বিয়ে দেওয়া যাবে। তাছাড়া আমার বোন ও বোন জামাই কয়েকদিন পর নীরাকে দেখতে আসবে। ওরা সঠিক সময়ে টিকিট পায় নি বলে রোজার পরই আসবে। নীরাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।

তূরের বাবা মুগ্ধ হলেন ইফতির বাবার বিনয়ে। তূরকে বলা হলো নীরাকে পরিপাটি করে নিয়ে আসতে। তূর তাই করলো। নীরা ও তূরকে একত্রে দেখে ইফতির মা উৎফুল্লতার সাথে বললেন,

–আমার আরেকটা ছেলে থাকলে আমি আপনার বড় মেয়েকেও চাইতাম। মাশাআল্লাহ আপনার তিন মেয়ে।

তূরের বাবা কিছুটা বিব্রত হন। তূরও হাসফাস করছে এখান থেকে যাওয়ার জন্য। বলা যায় না, ইফতির মা আবার তার কোনো আত্মীয়র জন্য তূরের বিয়ের সম্ভন্ধ নিয়ে আসে! নীরাকে দেখে উনারা কোনো প্রশ্ন করলেন না। ইফতি আগেই নীরার ব্যাপারে সবটা জানিয়েছিল। ইফতি নীরার লজ্জায় অবনত মুখশ্রী দেখে মুগ্ধ। সামান্য পরিপাটি হওয়াতেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রূপের সৌন্দর্য নয়! এটা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা। ইফতির মা নীরার হাতে রিং পরিয়ে দেন। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেন। ইফতি ও নীরাকে আলাদা কথা বলতে তূরের রুমের ব্যালকনিতে পাঠায়। দুইজন দুজনকে একাকি কথা বলতে গিয়ে নিশ্চুপ। কিয়ৎক্ষণ পর ইফতি নিরবতা ভঙ্গ করে বলে উঠে,

–তুমি আমার অতীত মেনে নিতে পেরেছ? কারণ আমি চাই না ভবিষ্যতে সেটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক। তোমার নাম নীরা বলে তোমাকে বিয়ে করছি, এমনটা ভেবো না। তুমি আমার মনের আঙিনায় প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছ বলেই তোমায় আমি নিজের অর্ধাঙ্গিনী করতে চাই। আমার কাজিন নীরার পর কেউ আমার মনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। কেনো পারে নি সেটার কারণটাও আমার অজানা। এমন না যে কোনো রূপের অধিকারী কেউ আমার সামনে পরে নি! পরেছে। কিন্তু আমার মন সায় দেয় নি। তোমার ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম।

নীরা নত মস্তকে সবটা শুনলো তারপর ইফতির চোখের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসির রেখা। নীরা বলে,

–হ্যাঁ, সবটা আমি ভেবেছি আর মেনেও নিয়েছি বলে আজ আমি আপনার নামে রিং পরেছি। মানতে না পারলে এই রিং (নিজের বাম হাতের রিং ফিঙ্গারকে দেখিয়ে) আমার আঙুলে উঠতো না।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here