শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৯,২০

0
583

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_১৯,২০
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯

ইফতিরা চলে গেল। নীরার মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসির রেশ লেগেই আছে। নীরার মনে যেন বসন্তের রঙ লেগেছে। নীরা তূরের রুমের বারান্দা থেকে এখনও যায় নি। আঁধারের মাঝে নিচে জ্বালানো সোডিয়াম লাইট সাথে চন্দ্রমার প্রেমময় জোৎসনার আবছা আলোতে নীরা গুনগুন করতে থাকে,

“হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই(২)
দুইকে এক করি-না, আমি এককে করি দুই।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই
দুইকে এক করি-না, আমি এককে করি দুই।”

তূর শব্দহীন পায়ে এসে বারান্দার দরজার কাছে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। বোনের গুনগুন করা শুনছে। আড়াল থেকে তূর এবার বাকি লাইন গাইলো,

“আমার যত ইচ্ছে গুলো তোমার মনে জায়গা দিও,
তুমি ছাড়া আমার কেহ নাই।
তোমাকে আমি ভালোবাসি, থাকো না আজ কাছাকাছি, তোমার মাঝে আমাকে হারাই।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই(২)”

নীরা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও তূরকে দেখে মুচকি হেসে একটু সরে বসে। তূর পাশে বসে। তারপর দুজনেই নিরব। নীরা তূরকে প্রশ্ন করলো,

–বাবা-মা তোর আগে আমায় বিয়ে দিবে আপু?

তূর নিঃশব্দে হাসে। তূর নীরাকে বলে,
–জানি না। এসব রাখ। তুই তোর রুমে যা। তোর ফোন বাজছে শোনলাম। জলদি যা। দেখ ডাক্তার ইফতি ফোন করেছে বোধহয়!

তূর শেষের কথাটা দাঁত কে’লি’য়ে বলে। নীরা লজ্জা পেয়ে তূরের বাহুতে আলতো আ’ঘা’ত করে চলে যায়। তূর মুচকি হাসে তারপর ছন্দ কাটে,

“মন উদাসী হোক কিছুটা তার, কিছুটা আমার।
স্বপ্ননীল রংধনু ভালোবাসার ছটায় রাঙুক।
একটু অভিমান, একটু অভিলাষ,
দূরত্বে ভালোবাসা বাড়ুক।”
[তিথী]
___________
রমজান মাস এসে শেষের দিকে। তূরের মিহালের সাথে দেখা হয় নি। দেখা না হলেও মাঝেমধ্যে দুজনের ফেসবুক ডে তে দেখা যায়, অদৃশ্য সম্ভোদন। “কাল্পনিক সে” কে নিয়ে তূরের আর “তৃষ্ণার্ত প্রেমিক তার প্রেয়সীকে” নিয়ে মিহাল। দুজনের এরূপ সম্ভোদনে বন্ধুমহল বি’র’ক্ত আবার আবেগে আপ্লুত। বন্ধুমহলের সকলের ইচ্ছে করে দুটোকে ধরে বেঁধে রি*মা-ন্ডে নিতে। যাতে করে দুজনে নিজেদের মনের যত রা’গ-অভিমান, কস্ট উগলে দেয় নিজেদের সামনে।
রমজানের শেষের দিকে বন্ধুদের সাথে ইফতার পার্টির আয়োজন চলছে। তূর মিহালকে দেখেও যেন দেখছে না। তূরের ভাবটা এমন যে, “কে আপনি? কোথা থেকে এসেছেন?”
মিহাল উসখুস করছে তূরের সাথে একটু কথা বলার কিন্তু পেরে উঠছে না। মিহালের আগের কথা না বলার স্বভাবটা যেন ঝেঁকে বসেছে তার উপর। মিহাল রাফির সাথে বসে আছে। রাফির পাশে অর্ক আর মিহালের পাশে রিজভী। মিহাল নিজের নজর নিবদ্ধ করেছে সামনে কিছুটা দূরে বসা তূরের মুখপানে। অর্ক রাফিকে টপকে মিহালের পিঠে ঘু*ষি দেয়। মিহাল অর্কর দিকে ভ্রঁ কুঁচকে তাকালে অর্ক রা’গী দৃষ্টিতে ইশারা করে। মিহাল সেটা দেখে অসহায়ের মতো ইশারা করে। বাকিরাও মিহালকে আকারে ইঙ্গিতে বুঝাচ্ছে। বাধ্য হয়ে মিহাল তূরকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–তূর। ইফতারের পর একটু কথা আছে।

তূর এক পলক তাকিয়ে আবার আজানের অপেক্ষা করতে থাকে। রাফি ওদের একজনের বা’ঘ ও বি’ড়া-লের স্বভাব দেখে নিজেই গলা ঝেড়ে বলে,

–তূর আপা, আপনি কী খুব রাগ করেছেন? আপা আপনি আমাদের সাথেও কথা বলতেছেন না ঠিক মতো। কিছু হইছে আপা?

তূর বেজায় রে’গে গেলো। তূর নাক ফুলিয়ে বলে,
–মি’র-জা’ফরগিড়ি করার সময় মনে থাকে না তোদের? আমার ফ্রেন্ড হয়ে কেমনে আমার বিপক্ষে ষ’ড়য’ন্ত্র করিস?

রাফি সেন্টি ইমোজির মতো করে হাসি দেয়। তূর চোখ ছোট ছোট করে বলে,
–হাসিস না। দেখিস তুই সিঙ্গেল ম*র-বি। আর অর্ক? তোর বউ হবে দ*জ্জা-লনী। তোরে সারাদিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে।

অর্ক চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে নিবে তখনই আজান হয়। ওরা ইফতার শুরু করে। ইফতারের পর তূরকে মিহাল আবার ডাকে আস্তে করে। তূর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে লিরাদের সাথে। জারিন তূরকে বলে,

–দোস্ত, ডাকছে তো। যা না। বেচারার মুখটা শুকায়ে গেছে দেখ।

তূর জারিনের দিকে ভ্রঁ উঁচিয়ে তাকায় তারপর মিহালের দিকে তাকায়। মিহাল আসলেই অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। তূর বাঁকা হেসে বলে,
–রোজা রাখছে তো। তাই চোখ-মুখ তোর কাছে শুকনো শুকনো লাগছে। তাছাড়া বা-ঘকে বি*ড়া-লে কনভার্ট হতে দেখে আমার খুশি খুশি ফিল হচ্ছে। ভাবা যায়! রাগী ইন্ট্রোভার্ট মিহাল এখন অসহায়ের মতো চেয়ে আছে! শান্তি লাগছে জানিস? চার বছর আমি এর থেকে হাজার গুন কস্ট পেয়েছি। তবে আমি তাকে বেশি কস্ট দিবো না। একটু তার অসহায় নজর দেখতে মজা লাগছে।

ফাইজা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
–এদিকে তুই যে দুই বছরের মতো ফেসবুক ডিএক্টিভ করে রেখেছিলি সেটা? তুই চলে যাবার পর রাফি রিজভীর মাধ্যমে মিহালের সাথে যোগাযোগ করে অনেক কস্ট করে। রিজভী যে মিহালের বন্ধু তা রাফি যখন জানতে পারে তখনই যোগাযোগ করে। মিহাল তোর মে’ন্টাল ট্রমার কথা শোনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ততোদিনে মিহাল বুঝে গিয়েছিল তোকে সে খুব ভালোবাসে। এরপর তোর সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তুই তো আমাদের কারও সাথে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছুক ছিলি না। এরপর দুই বছর পর তুই ফেসবুক এক্টিভ করলে মিহাল মানা করে তোকে ভার্চুয়ালে কিছু জানাতে।

তূর বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
–আমি ফেসবুকে ছিলাম না ছয় মাসের জন্য। তারপর অন্য অ্যাকাউন্ট দিয়ে ছিলাম। ফে’ক ছিল সেটা। যাইহোক, আমি মিহালকে মেনে নিবো তবে তাকে কনফিউশনে রাখতে চাই রোজা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

মিহাল তূরকে আবারও ডাকে। তূর এবার যায়। মিহাল তূরকে একটা চকলেট বক্স দেয় যাতে ক্যাটবেরি চকলেটের প্রতিটা ভেরিয়েশন একটা করে আছে সাথে ডার্ক চকলেট ও বলের মতো চকলেটও আছে। তূরের চকলেট পছন্দ অনেক। তূরের চোখে-মুখে লুকিয়িত খুশির ছাঁপ। মিহালের সামনে তাও মুখ গম্ভীর করে রেখেছে। তূরকে অবাক করে দিয়ে মিহাল তূরকে একটা শাড়ির বক্স গিফট করে যাতে বেনারসি আছে। তূর এবার হতভম্ব হয়ে মিহালের দিকে তাকায়। মিহাল হেসে মাথা চুলকিয়ে বলে,

–শাড়িটা মায়ের পক্ষ থেকে।

তূর তো আরও অবাক হয়। মিহালের মা তো তানজিনাকে মিহালের বউ করার জন্য উতলা ছিলেন। তানজিনার সাথে বিয়ে ভেঙে যাবার পর তো উনার তার ছেলের উপর ও তূরের উপর রাগ হয়ে থাকার কথা! তূর অবাক হয়েই প্রশ্ন করে,

–তোমার মা আমার উপর রেগে নেই?

মিহাল চোখে হাসে। তারপর বলে,
–উহু। ছিল তবে এখন নেই। সব ক্রেডিট আব্বু, আপু ও দুলাভাইয়ের। এতোদিন তারা যে কিভাবে মাকে বুঝিয়েছে জানি না। আমাকে পরশুদিন মার্কেট থেকে এসে হাতে এই শাড়ির বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলে, এটা যেনো তার হবু পুত্রবধুর কাছে পৌঁছে দেই। মায়ের কথাতে আমিও অনেকটা অবাক হয়েছিলাম। তানজিনার সাথে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর আমিও মায়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতাম না। বিয়ে ভেঙেছে একমাস হতে চলল। মাও খাবার দেয়া ছাড়া কথা বলতেন না। খারাপ লাগতো অনেক জানো। যাইহোক, মায়ের দেয়া উপহার কী তুমি নিবে?

তূর লাজুক হাসে তারপর বলে,
–আন্টিকে বলো, সে নিজেই যেনো এটা আমায় দেয়। তাতে আমার খুশি আরও দ্বিগুন হবে। সে দেওয়া মানে আমার পরিবারকেও সম্মত করা।

তূর চকলেটের বক্স নিয়ে মুচকি হেসে চলে আসে। নাদিয়া, লিরারা তূরের হাতে চকলেটের বক্স দেখে দাঁত কে’লি’য়ে ভাগ নিতে আসছিল। তূর ওদের মুখ ভে’ঙচি দিয়ে বক্স সরিয়ে নেয়।

আরও কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ওরা বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। তূর মিহালের সাথে যাচ্ছে। দুজনে একদম নিরব কোনো এক অদৃশ্য কারণে। চুপচাপ থাকতে থাকতে গন্তব্য এসে যায়। তূর বাসায় পৌঁছে সবার আগে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে। চকলেটের বক্স খুললে এক ফালি সাদা কাগজের টুকরোতে গোটা অক্ষরে লেখা,

“হাসিতে তার মুক্তঝরা,
কান্নায় তার সাগর শুকায়।
তার অনুরাগের অতলে,
আজও আমি কূল-কিনারার খোঁজে।”
[তিথী]

অধর এলিয়ে সুখের হাসি অম্লিন থাক।

_________

তানজিনার জুন মাস থেকে কানাডার ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে। তানজিনা ইতোমধ্যে নিজের ভার্সিটির থেকে ট্রান্সফার নিয়ে নিয়েছে। সারাদিন বাসায় থাকে এখন সে। ইনায়া বাসায় আসলেই যা একটু কথা হয়। ভিসা পেয়ে গেলে তানজিনা চলে যাবে কানাডা।
এদিকে প্রফেসর আরিফের মা প্রফেসর আরিফের বিয়ের জন্য বলছে। বিয়ের কনে প্রফেসর আরিফের খালাতো বোন। যে কি-না অসুস্থ। প্রফেসের আরিফের খালাতো বোনের দুইটা কিডনিরই ৮০% ড্যামেজ। শরীর অনেকটা দুর্বল তাই চারটা ডায়ালাইসিস করা হয় মাসে আর ঔষুধ তো আছেই। মেয়েটার নাম প্রমিতি। ছোট থেকেই সে তার খালাতো ভাইকে পছন্দ করে। অসুস্থ মেয়েটার ইচ্ছে সে তার খালাতো ভাই আরিফের বউ হবে। প্রমিতির বয়স ২০। এই কম বয়সেই সে নিজের মধ্যে বিশাল রোগের আক্রমণে জর্জরিত। প্রফেসর আরিফের কাছে যখন প্রমিতি হসপিটালের বিছানায় শুয়ে হাত ধরে বলেছিল,

“বিয়ে করবে আমায়? বেশিদিন তোমায় জ্বালাবো না তো। চলে যাবো ওই দূর আকাশে। শেষ সময়ে আমার জীবনের শেষ পঙক্তিটুকু হবে?”

প্রফেসর আরিফ এরপর রাজি হয়। শেষ রোজার দিন ইফতারের পর ওদের বিয়ে হবে। প্রফেসর আরিফ তার নিজের মনে আদৌতেও কারও জন্য কিছু আছে কি-না জানে না। কিন্তু প্রমিতির ভালোবাসা আগ্রাহ্য করতে পারে নি।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
আকাশে ঈদের চাঁদ। ত্রিশ দিন সিয়াম-সাধনার পর মুসলিমদের খুশির ঈদ। আরিফ ও প্রমিতির বিয়ে হয়ে গেলো একটু আগে। প্রমিতির অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না কেন সেটাই চিন্তার বিষয়। ডাক্তাররা প্রমিতির শারিরিক অবস্থা বিবেচনা করে সপ্তাহে দুটো করে ডায়ালাইসিস দিতেও পারছে না। কিডনির সাথে সাথে প্রমিতির র*ক্তেও ইনফেকশন দেখা দিয়েছে যার কারণে প্রমিতি আরও বেশি অসুস্থ। সচরাচর ৮০% কিডনি ড্যামেজ থাকলে রুটিন মাফিক ডায়ালাইসিস, ঔষুধ ও ডায়েট চার্ট মেনে চললে জলদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (আমার দাদীর ৮০% কিডনি ড্যামেজ ছিল। ডায়ালাইসিসও লাগে নি। ঔষুধ নিয়েই ১০ বছরের মতো সুস্থ ছিলেন।)
প্রফেসর আরিফ চাইছে প্রমিতিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবেন। সেখানের স্পেশালিষ্ট দেখাবেন।

________
নাফিহার হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে তূর। নীরা ব্যাস্ত প্রতিবেশি একটা মেয়েকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে। তূর নাফিহার দুই হাতের এক পিঠ করে মেহেদী পড়িয়ে দিয়ে শেষ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরে বলে,

–আমি আর পারবো না। আঙুল গুলো মনে হচ্ছে বাঁকা হয়ে গেছে। আমেরিকায় তো মেহেদী নিজেও পড়তাম না আর কাউকে পড়াতামও না। কতো বছর পর মেহেদীর টিউব হাতে নিয়েছি। আর পারবো না। যা এখন। আমি আগে রেস্ট করবো।

নাফিহা অনুরোধের স্বরে বলে,
–প্লিজ আপু প্লিজ। বাম হাতের তালুতে একটা ফুল আঁকিয়ে দেও শুধু। প্লিজ দেও। একটাই তো। খালি খালি লাগছে। ডান হাতের তালুতে দেয়া লাগবে না। দেও আমার সো’না আপু।

তূর কাঁদো কাঁদো চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
–আমার দুই হাতই খালি। আমার বাম হাতে আমি দিবো আর ডান হাতে নীরা দিয়ে দিবে তারপর আমি নীরার ডান হাতে দিয়ে দিবো। তোর বাম হাতে তুই ঘুমালেও দিয়ে দেওয়া যাবে। যা না বইন।

নাফিহা তূরকে আরও রিকুয়েস্ট করেই চলেছে। শেষে না পেরে তূর বাম হাতের তালুতে পড়িয়ে দিলো। গ্রুপ কল আসছিল কিছুক্ষণ ধরে। তূর রিসিভ করে কথা বলে নেয় বন্ধুদের সাথে। বান্ধুবীরা মেহেদী দিয়ে বসে আছে আবার কেউ পরে দিবে। আর ছেলেরা সবাই নাকি একসাথে ক্যাম্পাস এড়িয়াতে গেছে। কথা বলা শেষে এশার নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে নিজের হাতে মেহেদী দিতে বসে তূর।

_________রোজাদারদের উৎসবের দিন ঈদ-উল_ফিতর। মুসলমানদের দুইটা বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। যা আমাদের ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ ভুলে যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে এক মাস রোজার পর আনন্দ উৎসব।
ঈদের দিন সকাল থেকে তূর ও নীরা তাদের মা ও চাচির সাথে টুকটাক সাহায্য করে কাজ শেষ করে নেয়। এরপর সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থেকে সন্ধ্যার পর তূর ওর দুই বোন ও তূর্যকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মিহাল, অর্করাও আসে। মিহাল ও তূর দুজনে একটু টুকটাক কথা ও নজর লুকানোতেই কাটিয়ে দেয়। ঘোরাফেরা শেষে বাড়ি ফিরবে ওরা। মিহাল তূরকে বলেছে, পরশুদিন মিহাল ও তার পরিবার তূরদের বাড়িতে যাবে। তূর নীরাকে এটা জানিয়েছে। নীরা খুশি হয় অনেক কিন্তু তূর ভয় পাচ্ছে। নীরা তূরকে আশ্বাস দিয়ে বলে,

–চিন্তা করিস না। আজকে বাসায় গিয়ে আব্বুকে বলিস শান্তভাবে। মিহাল ভাইয়ার দিকটাও বলিস। আব্বু মানবে দেখিস।

তূর কিছুটা স্বস্থি পেলেও পুরোপুরি নিশ্চিত না। বাসায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ভয়ে নাজেহাল অবস্থা। বাসায় গিয়ে তূর নিজের রুমে দরজা দেয়। নীরা তূরকে কয়েকবার ডাকে যাতে বাবাকে বলে। কিন্তু তূর দরজা খুলছেই না। নীরা ভাবলো ইফতিকে বলবে। ইফতি যদি কিছুটা সাহায্য করে। যেই ভাবা সেই কাজ। ইফতিকে নীরা এই প্রথম নিজ থেকে ফোন করেছে। ইফতি ফোনের স্ক্রিনে নীরার নাম্বার উঠতে দেখে অবাক হয় কিন্তু পরক্ষণেই ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফোঁটে। সকালে মেসেজে কথা হয়েছিল ওদের। এরপর এখন নীরা ফোন করলো। ইফতি ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়। নীরাও সালামের জবাব দেয়। নীরার ইতস্তত বোধ হচ্ছে অনেকটা। যার বদৌলতে চুপ করে আছে সে। ইফতি বলে,

–কেমন কাটলো আপনার দিন?

–ভালো।
সরল জবাব নীরার। ইফতি নীরার অস্বস্থি বুঝতে পারে তাই খানিকটা অস্বস্থি আরও দিতে বলে,

–আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না আমার দিন কেমন কাটলো? আচ্ছা সমস্যা নেই। আমিই বলে দিচ্ছি। ঈদের নামাজের পর নাশতা করে তোমার সাথে মেসেজের পর ঘুমিয়ে উঠেছি বেলা তিনটায় তারপর নামাজ পড়ে মুভি দেখতে বসলাম। এর মাঝে আসরের নামাজ পড়ে আবার মুভি। মাগরিবের পর ঘুরতে বের হয়ে এইতো বাসায় ফিরলাম।

নীরা আবারও ছোট করে জবাব দেয়,
–ওহ ভালোই কাটলো।

ইফতি সন্দিহান হয়ে বলে উঠে,
–এখনও কি তোমার কথা বলতে লজ্জা লাগে? তুমি ফ্রিলি কথা বললে আমার ভালো লাগবে। অপরপাশের মানুষটা আনইজি হলে আমাদেরও আনইজি লাগে। কিছু বলবে?

নীরা লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,
–হুম।

–তাহলে বলো। আমার সাথে ফর্মালিটি করার প্রয়োজন নেই। তুমি ফ্রিলি বলো।

ইফতির আশ্বাসবাণীতে নীরা তূরের ব্যাপারটা সংক্ষেপে ইফতিকে জানায়। ইফতি কনফিউজড হয়ে বলে,

–আঙ্কেল কি মানবে? যদিও সবটা পরিস্থির চাপে ঘটেছে। কেউ এতোটা হবে আশা করে নি। কিন্তু মিস তূর তো এর জন্য চার বছর চেনা শহর, পরিবার ছেড়ে দূরে ছিল সাথে উনি অসুস্থ ছিলেন।

নীরা অনুনয় করে বলে,
–প্লিজ যদি আপনি বাবাকে একটু জানাতেন। আপু ভয় পাচ্ছে। একবার বলেছিল নাকি। তখন বাবার কথাবার্তাতে আপুর মনে হয়েছিল বাবা হয়তো রাজি হবে না। আপনি নাহয় ইনডাইরেক্টলি বলবেন। শুধু বোঝার চেষ্টা করবেন বাবার রিয়াকশন।

ইফতি সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে নীরার বাবাকে ফোন করে। নীরার বাবা ফোন রিসিভ করলে ইফতি খোশমেজাজে বলে,

–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। ঈদ মোবারক। কেমন আছেন?

নীরার বাবা সালামের জবাব দিয়ে বলেন,
–আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি। তা তুমি কেমন আছো?

ইফতি বলে,
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। সকালে আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলেছিলেন তখন আমি ছিলাম না।

–হ্যাঁ শোনলাম। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।

ইফতি ইতস্তত করে বলে,
–আসলে আঙ্কেল যা বলতে ফোন করেছিলাম। আমার ফুফিরা কালকে দেশে আসবেন। ফুফি চাইছিলেন, আকদটা হয়ে যেত।

নীরার বাবা বলেন,
–হ্যাঁ, তোমার বাবা-মা বলেছেন আমাকে। আমি ভেবে বলবো বলেছি।

ইফতি এবার মনে সাহস এনে আসল কথাটা বলার চেষ্টা করে,
–আমি জানি, আপনি তূরফা আপুর বিয়ে নিয়ে টেনশনে আছেন। নীরার থেকে শুনেছিলাম, তূরফা আপু কাউকে পছন্দ করেন। শুনেছি ছেলেটা ভালো। তূরফা আপু যদি…

নীরার বাবা বলেন,
–তূর যাকে পছন্দ করে তার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক। তাই সে ব্যাপারে সম্ভব না।

ইফতি বলে,
–না। বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন উনি। বিয়ে ভাঙার জন্য এতো বছর লেগে গেছে। সেও তূরফা আপুকে পছন্দ করে।

নীরার বাবা সন্দেহের স্বরে বলে,
–তুমি জানো কিভাবে? আমি তো জানি না। তূরও বলে নি।

ইফতি পাশে থাকা টিসু বক্স থেকে টিসু নিয়ে কপালের ঘামের বিন্দুগুলো মুছে ক্ষীণ স্বরে বলে,

–নীরাই জানিয়েছে। আপনি তূরফা আপুকে ডেকে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। উনি হয়তো আপনাকে জানাতে ভয় পাচ্ছেন। রাখি ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

নীরার বাবা সম্মতি দিলে ইফতি ফোন কে*টে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্বগোতক্তি করে বলে,
“শ্বশুরের সাথে কথা বুঝে বলতে হয়। বেঁফাস বলে দিলে শেষ! এটা যে প্রিপ্লানেড তা না বুঝলেই হলো।”

এদিকে তূরের বাবা তূরকে ডেকে পাঠায়। সেদিন তূরের বলা কথাগুলো চিন্তা করছেন উনি।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here