শেষের_পঙক্তি,পর্ব_২৪,২৫ (বিয়ে স্পেশাল)

0
615

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_২৪,২৫ (বিয়ে স্পেশাল)
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী

লাল বেনারসিতে বধূ সাঁজে সজ্জিত তূর ও নীরা। পার্লারের দুইটা মেয়েকে বাসায় আনা হয়েছে সাঁজানোর জন্য। তূরের মা ও বাবা দুইজনে মেয়েদের কাছে আসেন। তাদের দেখে বাকি সবাই রুম থেকে বিনাশব্দে প্রস্থান করে। তূরের বাবা ও মা তূর ও নীরার পাশে এসে বসেন। ওদের মায়ের চোখ ছলছল করছে। ওদের মা তার দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন। তূর ও নীরাও কাঁদছে। ওদের বাবা পাশে বসে নিজের ভেজা আঁখিদ্বয় রুমাল দিয়ে মুছে চলেছেন।
বাবা-মা, মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য কেনো এতো উতলা হয়? যখন তারা মেয়ের দূরে যাওয়ার বেদনা সহ্য করতে পারে না।
নীরা ওর মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
–আমাদের বিয়ে দিচ্ছো বলে ভেবো না যে আমরা পর হয়ে গেছি। আপু আমেরিকায় যাবে বলে আসতে না পারলেও আমি কিন্তু প্রায়ই আসবো। একদম কাঁদবা না তোমরা।

ওদের মা মলিন হাসে। তূর ওর বাবার ও মায়ের হাত ধরে বলে,
–আমাকে ছাড়া হয়তো চার বছরে অনেকটা ইউজডটু হয়ে গিয়েছিলে। এটা সত্যি সন্তানের দূরত্ব মানা খুব কষ্টকর। তোমরা ভেবে নেও যে আমি বিগত চার বছরের ন্যায় দূরে আছি। তারপর ফিরে আসবো। তাহলে দেখবে মনে একটা সুখ অনুভূত হবে। আর প্রতিদিন ভিডিও কল তো হবেই। একদম কাঁদবে না প্লিজ। আই লাভ বোথ অফ ইউ সো মাচ।

দুই মেয়েকে একত্রে বুকে জড়িয়ে নিলেন ওদের বাবা। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন।

_________
কমিউনিটি সেন্টারে “বর এসেছে! বর এসেছে!” এর স্লোগান হচ্ছে। দুই বর একই সময়ে এসেছ। গেটের বখশিশের দরদাম শেষে এখন দুই বরকে স্টেজে আনা হয়েছে। প্রত্যেক শ্যালক ও শ্যালিকারা দুই দুলাভাইয়ের কাছ থেকে সর্বমোট বিশ হাজার টাকা হাসিল করেছে। পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিল কিন্তু অনেক কথাবার্তার শেষে বিশ হাজারে নেমেছে। রাফিরা মজা করে মিহালকে বলে,

–বন্ধু, তোমার শান্তির দিন শেষ। এখন থেকে কী করলা, কেনো করলা সবকিছুর কড়ায়গণ্ডায় হিসেব হবে। বেষ্ট অফ লাক।

আসফি, তাইজুল, তাওহীদ, রণক ও রিজভীরা হেসে উঠে। বেচারা অর্ক মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। ওকে দেখে ছ্যা’কা’খো’রের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না। রণক অর্কর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেসা করে,

–তোর কী হয়েছে? এমন প্যাঁ-চার মতো মুখ করে রেখেছিস কেনো?

অর্ক কাঁদো কাঁদো চাহনিতে রণকের দিকে তাকায়। কিছু না বলে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবার রাফিও জিজ্ঞেস করে। একে একে সকলে জিজ্ঞেস করলে অর্ক বলে,

–এই মিহালের বোনের সাথে কাল ভাব জমাতে গিয়েছিলাম কিন্তু মেয়ে আমার দিকে তাকালোই না। একটু পাত্তাও দিলো না।

অর্কর অতীব দুঃখে সকলের হাসিতে নাজেহাল অবস্থা। অর্ক ওদের হাসি দেখে মুখ ফুলিয়ে রাখে। মিহাল হাসি কন্ট্রোল করে বলে,
–ভাই। প্রিতীশা মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিলো। মামা-মামির ওকে এখনই বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নেই। তাছাড়া প্রিতীশা অপরিচিত বা পরিচিত ছেলেদের সাথে প্রয়োজনের বাহিরে কথা বলে না। আমি যে ওর ভাই তাও আমার সাথে গুনে গুনে কথা বলে। সব কাজিন গুষ্টি একত্রে হলে তখন কথা হতো সবার সাথে। কায়রা আপু বলল মেয়ের নাকি ফ্রেন্ডও কম। তাই ওর দ্বারা প্রেম-ভালোবাসা সম্ভব না। এর থেকে ভালো, ২ বছর পর দেশে এসে মামা-মামির কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিস।

অর্ক মুখ ভাড় করে ফেলল তবে প্রিতীশা ছেলেদের সাথে কথা বলে খুবই কম এটা শুনে মনে মনে খুব খুশি হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজি সাহেব এসে মিহালকে বিয়ের জন্য কবুল বলিয়ে নিলো। এরপর ভিতরের ঘরে গিয়ে তূরকেও কবুল বলিয়ে নিলো। তূর কিছু সময় নিয়েছে কবুল বলতে। তূরের মনে হচ্ছিলো, কণ্ঠনালী রোধ হয়ে গেছে তার। কান্নারা দলা পাঁকিয়ে গলার কাছে আটকে আছে। তূর কবুল বলেই তার মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে। তূরের বাবা চোখের জল মুছে স্টেজে গেছে কাজি সাহেবের সাথে ইফতির সম্মতি আনতে। ইফতি কবুল বলার পর ভেতরের ঘরে এসে নীরার সম্মতি মূলক কবুল বলায়। নীরা কবুল বলার সময়ই কাঁদতেছিল। কান্নামাখা কন্ঠে আবছা স্বরে কবুল বলেই বোন ও মাকে ধরে কাঁদতে থাকে।

তূর ও নীরাকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয় সামনে পর্দা দিয়ে ঢেকে। যেখানে মিহাল ও ইফতি বসে আছে সেখানে সামনে রজনিগন্ধা, গোলাপ ও জারবেরা ফুলের মালা দিয়ে পর্দা লাগানো। পর্দার অপজিটে কনেদের জন্য অস্থায়ী বসার সোফার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তূর ও নীরা সেখানে গিয়ে বসলে ওদের বান্ধুবী ও কাজিনরা ফুলের পর্দার নিচে দুই পাশে দুইটা আয়না রাখে। প্রতিটা আয়নার অর্ধেক বরদের পাশে আর বাকি অর্ধেক বউদের কাছে। মিহাল ও ইফতিকে, তূর ও নীরার বান্ধুবী ও কাজিনরা জিজ্ঞেস করে,

“আয়নায় কাকে দেখা যাচ্ছে?”

মিহালের জবাব,
“এমন কেউ যাকে ছাড়া কাউকে প্রিয়তমার নজরে দেখি নি। যাকে সকল প্রিয় ডাক নামে ডাকলেও কম মনে হয়। আমার জীবনে আল্লাহ্ প্রদত্ত এক অন্যতম নেয়ামত।”

সবাই আনন্দধ্বনি করে উঠে। তূর চোখ নামিয়ে ওষ্ঠকোনে লজ্জামিশ্রিত হাসি আঁকে। তূরকে জিজ্ঞেস করা হলে তূরের প্রতিউত্তর,

“যার নামে লেখা আমার জীবনের শেষের পঙক্তি।”

এরপর ইফতি ও নীরাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইফতির জবাব,
“নতুন করে ভালোবাসা জাগানো প্রিয়তমা।”

নীরার লাজুক স্বরে জবাব,
“যাকে ভরসা করতে পারবো বাবার পরে।”

কনে বিদায়ের সময় এসে গেছে। বাবা-মা তার আদরের দুই কন্যাকে হৃদয় বিদীর্ণ করে বিদায় দেন। নীরাকে ইফতি কোনোমতে ধরে ধরে গাড়িতে তুলেছে। গাড়িতে উঠে নীরা সেন্সলেস হয়ে গেছে। ইফতি যেহেতু ডাক্তার তাই পালস চেক করে বুঝে গেছে বড়সড় কিছু হয় নি। অতিরিক্ত কান্নায় প্রেশার নেমে গেছে যা নীরার আগেও হয়েছিল। ইফতি নিজের বুকের সাথে আগলে নেয় নীরাকে। নীরা বাবা-মাকে ছাড়া দূরে কোথাও থাকে নি তাই তার কান্নার বেগ প্রচণ্ড। তূর গাড়িতে মিহালের কাঁধে মাথা রেখে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। মিহাল তূরকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর মিহালরা নিজেদের বাড়িতে পৌঁছায়। মিহাল গাড়ি থেকে আগে বের হয়ে তূরকে হাত ধরে নামায়। তূরকে মিহালের মা সাদরে গ্রহণ করেন। রাত আটটায় পৌঁছায় ওরা। তূরকে মিহালের মা কায়রা আপুর রুমে নিয়ে যায় রেস্ট করতে। মিহালের রুম এখন সাঁজানো শুরু করে। কায়রা আপু, কায়রার স্বামী, মিহালের মা, প্রিতীশা ও আরও কিছু কাজিনরা মিলে। মিহালের মা পুরোটা সময় সাঁজানোতে ছিলেন না তবে উনিও সাহায্য করেছেন। ছোট্ট রিয়ানা তার মামির কাছে বসে বসে মামির হাতের চুরি, শাড়ি ও ফুলগুলো খুঁটছে। তূরকে সঙ্গ দিতে মিহালের এক কাজিনের প্রেগনেন্ট বউ ও মাঝে মাঝে মিহালের মা আসেন। তূরকে বলা হয়েছে ফ্রেশ হয়ে নিতে। তূর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে লম্বা শাওয়ারে মুখের ও চুলের কৃতিম প্রসাধনী ধুয়ে একটা থ্রিপিস পড়ে বের হয়। শাড়িটা একটু সময়ের জন্য ফ্যানের নিচে রেখেছে যাতে ঘাম গুলো শুকিয়ে যায়। মিহালের মা বলেছিলেন বিয়ের শাড়িটা আজকে আর পড়ার দরকার নেই। সে একটা লাল অসম্ভব সুন্দর জামদানী শাড়ি দিয়েছিল পড়তে। জুন মাসের উত্তপ্ত গরমে নাজেহাল অবস্থা সবার আর তূর তো সেই দুপুর ১টা থেকে এই ভারী সাঁজ-সজ্জাতে আছে। কিন্তু তূরের ইচ্ছে সে বাসর ঘরে বিয়ের শাড়ি পড়েই যাবে। মিহালের মা ও কাজিন ভাবি মুচকি হেসে সায় দেয়। মিহালের মা তূরকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। অলরেডি কায়রাদের ঘর সাঁজানো শেষের পথে আর আধ ঘন্টার মতো লাগবে। মিহালের কাজিন ভাবি তূরের চুল গুলো মুছিয়ে শুকিয়ে দিয়েছে প্রায়। খাওয়ানোর শেষে তূরকে আরও কিছুক্ষণ রেস্ট করে নিতে বলে। তূরকে বাসর ঘর সাঁজানোর কিছুক্ষণ পর সেখানে নেওয়া হবে। অন্তত এক ঘন্টা হাতে সময় আছে। একটু ঘুমিয়ে নিতে বলা হয়। তূরের ক্লান্তিতে চোখ বুঝে আসছে তাই তূর কিছুক্ষণ ঘুমিয়েই নেয়।

_________

ওদিকে,,
গাড়িতেই নীরার জ্ঞান ফেরে। ইফতি আগেই সাথে করে মেডিসিন ও ইন’জে’কশন গাড়িতে রেখেছিল। নীরা সেন্সলেস হওয়ার দশ মিনিট পর ধীরে সুস্থে ইন’জে’কশন দিয়ে দেয়। নীরার জ্ঞান ফেরার পর চুপচাপ শান্ত হয়ে ইফতির বুকের সাথে মিশে ছিল। রাত ৮.৩০টায় ইফতিরা বাড়িতে পৌঁছিয়েছিল। ইফতি নীরাকে কোলে করে গাড়ি থেকে নামায় নীরার বহু বারণকে উপেক্ষা করে। ইফতির মা নীরাকে ড্রয়িংরুমে কিছুক্ষণ বসিয়ে বাড়ির মহিলাদের চক্ষু শান্ত করিয়ে খুব জলদি ইফতির রুমে পাঠিয়ে দেয়। ইফতির রুম আগেই সাঁজানো ছিল। তবে সব দেয়ালে ও খাটের বর্ডারে ফুল লাগানো ও ঘরের ফ্লোরে ও বিছানার হালকা গোলাপি চাদরে ফুলের পাঁপড়ি ছিটানো। মোমবাতির সমাবেশও ঘরে আছে। নীরা ঘরে ঢুকতেই তাজা ফুলের ঘ্রাণে মন ভালো হয়ে যায়। তারপর একাকি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ইফতির মায়ের দেয়া গোলাপি সিল্কের শাড়িটা পড়ে নেয়। ভেজা চুল মুছে নেয় তারপর দরজার টোকাতে দরজা খুলে দেখে তার শাশুড়ি ও ফুফি শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে খাবারের প্লেট নিয়ে হাসিমুখে। তারপর ওরা ঘরে ঢুকে ঘরে থাকা একটা টেবিল ফ্যানটা নীরার দিতে মুখ করে ছেড়ে দিয়ে নীরাকে খেতে বলে। নীরা ইতস্তত করলে ইফতির ফুফি নিজ হাতে নীরাকে খাওয়াতে থাকে। আর ইফতির মা নীরার খুলে রাখা গহনা থেকে স্বর্ণের বালাগুলো, আংটি ও নিজের এখন আনা স্বর্ণের চেইন, কানেরদুল ও নাকেরফুল পড়িয়ে দেয়। নীরাকে রেস্ট করতে বলে ওরা চলে যায়। এসি রুমে শীতল আবহাওয়াতেও নীরা টেনশনে ঘামছে। অচেনা পরিবেশ ও অচেনা কক্ষতে ভয় ভয় লাগছে। বিছানার সাথে হেলান দিয়ে কখন ঘুমিয়ে যায় টেরও পায় না।
হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম থেকে হকচকিয়ে উঠে নীরা। ঘুমিয়ে গেলেও নীরার মস্তিষ্কের থ্যালামাস অংশ তো অর্ধজাগ্রত ও ভীত। রাত ১০টা বাজে। ইফতি নীরার হকচকিয়ে উঠা দেখে নীরার পাশে বসে বলে,

–শান্ত হও তুমি। এতো ভয় পাও কেনো? আমি কোনো রা-ক্ষ স না। টেক এ ডিপ ব্রিথ এন্ড ব্রিথ আউট। তারপর পানি খাও। মা দুই গ্লাস গরম মিল্ক পাঠিয়েছেন। তোমাকে এক গ্লাস পান করতেই হবে।

নীরা খাবে না বললেও ইফতি শোনার পাত্র না। জোর করে খাইয়েই ছেড়েছে। এরপর নীরার সাথে কিছুক্ষণ কথা ও সমস্যা জিজ্ঞাস করে। নীরাকে কম্ফোর্টেবল করতে ও হাসাতে সক্ষম হয় ইফতি। নীরাকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে নীরার খোলা চুল গুলো কানের পেছোনে গুঁজে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে কপালে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে ইফতি নীরাকে ঘুমোতে বলে। এরপর দুজনেই ঘুমিয়ে যায়।

________

তূর রাত ৯.১০ থেকে ঘুমোচ্ছে এখন ১০.২০ বাজে তার ঘুম ভাঙলো কায়রার ডাকে। তূর লজ্জিত বোধ করলো এতসময় ঘুমানোর জন্য। কায়রা, মিহালের কাজিন ভাবি ও প্রিতীশা এসেছে তূরকে তৈরি করতে। বাকিরা মিহালের সাথে বাসর ঘরে কতো টাকা দিলে ঢুকতে দিবে তা নিয়ে চি’ল্লা’চি’ল্লিতে ব্যাস্ত। কায়রা তূরকে বলে,

–আরে ঘুমিয়েছ তো কী হয়েছে? ক্লান্তিতে ঘুম তো আসবেই। এই প্রিতীশা, যা তো কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। তাহলে ঘুম ও ক্লান্তি কাটবে।

মিহালের কাজিন ভাবি টিটকারি করে বলেন,
–ভালোই হয়েছে ঘুমিয়ে নিয়েছো। সারারাত জাগতে হবে তো! বাসর রাত বলে কথা। আমার দেবরকে কিন্তু একদম নাজেহাল করে ফেলবে। ঘুমানোর ফলে চোখে-মুখে ক্লান্তি ভাব থাকবে না। তোমাদের সাঁজানো ঘরটা দেখে এলাম। ফুলের ঘ্রাণেই তো প্রেম প্রেম পাবে গো!

তূরের ইচ্ছে করছে, ধরিত্রী ফাঁক হও সে ভূমিতে মিশে যাক। কায়রা ও তার কাজিন ভাবি মিটমিট করে হাসছে তূরের লজ্জায় রক্তিম হওয়া মুখ দেখে। প্রিতীশা চার কাপ কফি করে নিয়ে আসে। ওরা চারজন কফি পান করে তারপর তূরকে বিয়ের শাড়িটা সুন্দর করে পড়িয়ে দিয়ে হালকা করে খোঁপা করে তাতে বেলি, কাঠগোলাপ ও গন্ধরাজ ফুলের মিশ্রণে তৈরি মালা গুঁজে দেয়। কায়রা মালাটা তূরের খোঁপায় গুঁজতে গুঁজতে বলে,

–জানো তূর, এই বেলি, কাঠগোলাপ ও গন্ধরাজ ফুল গুলো মিহালের লাগানো গাছের। মিহালের রুমের ব্যালকনিতে দুইটা বেলি ফুলের গাছ, একটা গন্ধরাজ, একটা কাঠগোলাপ ও একটা গোলাপ গাছ আছে। একটু আগেই মিহাল গাছ থেকে ফুল গুলো সংগ্রহ করে নিজে সুঁই সুতা নিয়ে মালাটা বানিয়েছে। কাঠগোলাপের চারটা কলি ছিল ফুটেছে তিনটা, দুইটা গাছে বেলির নয়টার মতো কলি ছিল ফুটেছে সাতটা আর গন্ধরাজ গাছে পাঁচটা কলি ছিল তিনটা ফুটেছে। এগুলো যাতে আজকে ফুটে তাই পরশুদিন পানি দেয় নি গাছে। মিহাল নিজে মালা বানিয়ে বলেছে এটা যাতে তোমার খোঁপায় পড়িয়ে দেই। ওকে বলেছিলাম যাতে ওই পড়িয়ে দেয় কিন্তু সে নাকি তোমাকে খোঁপাতে আগে থেকে মালাটা লাগানো অবস্থায় দেখতে চায়।

তূরের যেনো আজ লজ্জাদিবস। প্রতিটা কথায় সে লজ্জায় লাল-নীল হচ্ছে। ফ্রেশ মুখে কাজল ও লিপস্টিক লাগিয়ে গ’লায় স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, বালা, নাকেরফুল ও আংটি পড়িয়ে সাঁজ কম্পিলিট করে তূরকে মিহালের রুমে নিয়ে যায়। তূরকে মিহালের রুমের দরজার বাহিরে রেখে কায়রারা চলে যায়। তূর দুরুদুরু বুকে এক পা এক পা করে আগায়। দরজা হালকা খুলে দেখে ঘরের ভিতর মোমবাতি জ্বলছে অনেকগুলো। পুষ্পের মৌ মৌ ঘ্রাণে মন সুভাষিত। বিছানার উপরে ঝালরের মতো রজনিগন্ধার মালা সাথে গোলাপ ফুল। বিছানার হেডবোর্ডে হরেক রকম গোলাপ ও জারবেরা ফুল সাথে ডেকোরেশনের জন্য যা দরকার তা দিয়ে হেডবোর্ডের উপর লম্বা লাইন করে সাঁজিয়েছে। বিছানার অফহোয়েট ফুলের চাদরের উপর লাল গোলাপ পাঁপড়ি ছড়ানো। তূর রুমে প্রবেশ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে এগুচ্ছে। হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে হকচকিয়ে উঠে। পেছোনে ঘুরে আবছা আলোতে দেখে মিহাল দরজার সাথে হেলান দিয়ে হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। মিহালের মুগ্ধ দৃষ্টি তূরের উপর নিবদ্ধ। তূর আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিহাল আস্তে আস্তে তূরের দিকে অগ্রসর হয় তূরের খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। অতঃপর তূরের মা’থার উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা আলতো করে নামিয়ে দেয়। তূর নিজের আঁখিজোড়া বন্ধ করে শাড়ির আঁচল মুঠ করে রেখেছে। মিহাল সামনে থেকে তূরের কাঁধের কাছ দিয়ে ঘারের সাথে পরে থাকা ফুল লাগানো খোঁপার কাছাকাছি নিজের মুখ এগিয়ে নেয়। তূর মিহালের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে। মিহাল তূরের খোঁপায় অধর স্পর্শ করে তূরের কাঁধের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে এনে তূরের বন্ধ আঁখিযুগলে ও তিরতির করে কাঁপতে থাকা ওষ্ঠদ্বয়ে তাকায়। মিহাল আলতো করে তূরের অধর স্পর্শ করে হাত দিয়ে। তূর ফট করে চোখ খুলে ফেলে যা দেখে মিহাল বাঁকা হেসে বলে,

–আজ তোমাকে লজ্জাবতী লতার ন্যায় লাগছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে বুজে যাও। পরিষ্ফুটিত পুষ্পের মতো লাগছে যে নিজের সুভাষে আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ ও ঘোরে ফেলে দিচ্ছো।

তূর মা’থা নিচু করে পায়ের দিকে নজর সরিয়ে রেখেছে। মিহাল তূরের মুখ হাত দিয়ে উুঁচু করে কপালে চু’মু দেয় তারপর বাহোডোরে আবদ্ধ করে নেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here