শেষের_পঙক্তি,পর্ব_৩,৪

0
907

#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_৩,৪
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩

হঠাৎ মিহালের মুখ নিঃসৃত বাক্যটা যেনো উপস্থিত সকলকে স্তব্ধ ও বিমূঢ় করে তুললো। আর যাকে উদ্দেশ্য করে এই রুঢ় বাক্যব্যয়! সে নিজের অক্ষিযুগলের সম্মুখে সব কিছু যেনো কালোমেঘের মতো আঁধার দেখছে। মিহালের বলা কথাটা ছিল,

–আই এম এনগেইজড উইথ তানজিনা। স্যরি আই কান্ট একসেপ্ট ইউর লাভ। ফরগিভ মি।

মিহাল কিন্তু কথাটা বলে এক মুহূর্তও অপেক্ষা করে নি সেই স্থানে। তূর ছাদের মেঝেতে ধপ করে বসে পরে। শক্তিহীন মনে হচ্ছে নিজেকে তার। কিছুক্ষণ স্তব্ধ ও নির্বাক থেকে হুট করে নিজের দুই হাত দিয়ে মাথা ও চুল খা*মচে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে। অর্করা তূরের চিৎকারে ভয় পেয়ে দৌঁড়ে তূরের কাছে যায়। এতক্ষণ ওরা পুরো ঘটনাতে এতোটাই স্তব্ধ হয়েছিল যে তূরের কি অবস্থা হতে পারে তা তারা খেয়াল করে নি। ইরা ও ইতি গিয়ে তূরকে জাপটে ধরে। তূরের কান্না থামানোর চেষ্টা করছে ওরা। কিছুক্ষণ পর তূর নিস্তেজ হয়ে দেহের সব ভার ইরা ও ইতির উপর দিয়ে দেয়। মূলত তূর সেন্সলেস হয়েছে।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড———

মিহাল ওর মাকে ডোন্টকেয়ার ভাবে জবাব দেয়,
–সে আমার বউ না যে তাকে আমার সময় দিতেই হবে। হবু বউ ও বউয়ের প্রতি পার্থক্য আছে। আর তানজিনার গা ঘেঁষাঘেঁষি স্বভাব আমার পছন্দ না। বিয়ের ঠিক এক সেকেন্ড আগেও আমি চাইবো, এমন কিছু হোক যার দরুন আমি তানজিনার থেকে রেহাই পাবো!

মিহালের মা হতভম্ব হয়ে গেলো। সে এরকমটা আশাও করেন নি। তার বান্ধুবীর সাথে অনেক আগে থেকে কথা বিয়েটা নিয়ে। মিহালের মা আরো কিছু বলতে মুখ খুলতে চাইলেন কিন্তু মিহাল তার আগেই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

–তোমার যদি তানজিনার টপিক ছাড়া ভিন্ন কিছু বলার থাকে তবে বলো। আর না থাকলে, প্লীজ লিভ মি এলোন। আমি অনেকটা টায়ার্ড। আছে ভিন্ন কিছু বলার?

মিহালের মা কিছু না বলে হনহনিয়ে চলে গেলেন। মিহাল হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। তারপর নিজের সুইচ অফ করা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সেটাকে সুইচ অন করার প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা থেকে আর করলো না। সুইচ অন করলেই যদি তানজিনার কল বা মেসেজ আসে!
মিহাল কয়েকমিনিট রেস্ট করে মাগরিবের নামাজটা পড়ে রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পরে। নেত্রপল্লব যেনো নিদ্রাতে মুদিত হতে চাইছে।

_______
মাগরিবের পর তূরের শরীরও আর সায় দিচ্ছে না জেগে থাকতে। জার্নির ধকল এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। লং জার্নির কারনে এখন ঘুমালে ঘুমটা অনেক গভীর হবে তাই একেবারে রাত ৮.৩০ টার মধ্যে ডিনার করে এশার নামাজ পড়ে ঘুমাবে। নাফিহা ও তূর্য দুইজনে তূরের আনা চকলেট ভাগাভাগিতে লেগে গেছে। চকলেট তো তূরেরও খুব পছন্দ কিন্তু দীর্ঘসময় নিজের অনেক পছন্দ ও আবদার গুলোকে মনের গুপ্ত সিন্দুকে তালাবন্ধ করে রেখেছে। তূরের খুব ইচ্ছে ছিল, “মিহালের সাথে বিয়ে হলে মিহাল ওকে ফুলসজ্জার রাতে অনেক অনেক চকলেট দিবে। সাথে কাচের চুড়ি ও ফুল। বাকি আর কিছু দেক বা না দেক। ”
এগুলো ওর উইশ লিস্টে আছে। তূরের পাশে নীরা এসে বসে সাথে তূরের পছন্দের লেবুচা। হালকা চা-পাতি ও বেশি করে মশলাপাতি সাথে কড়া লেবু ও চিনি। নীরা তূরের হাতে চায়ের কাপ দেয়। তূর ওর রুমের ব্যালকনিতে বসে রাতের আকাশ দেখছিল। চন্দ্রমা আজ তার পূর্ণিমা রূপে আছে। অবশ্য আজ পূর্ণিমা না। ভরা পূর্ণিমা দুয়েকদিন আগেই চলে গেছে। সন্ধ্যা ৭.৩০ টার মতো বাজে। নীরার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে প্রশান্তিতে বলে,

–জানিস, আমি এই চার বছরে একবারও লেবুচা বানাই নি আর পানও করি নি। আমার জিহ্বা হয়তো লেবুচাকে খুব বেশি পরিমানে মিস করছিল তাই তোর বানানো চা টাও অমৃত মনে হচ্ছে।

নীরা তার বড়ো বোনের কথায় ভ্রুঁ কুঁচকে নিজের চায়ের কাপে চুমুক দেয়। দুই কাপ চা এক সাথেই বানিয়ে তারপর কাপে ঢেলেছে সে। নীরা চুমুক দিয়ে তূরের দিকে তাকায় যেভাবে বাচ্চারা ধরা পরলে ঠোঁট ফুলিয়ে চোরা চোখে দৃষ্টি দেয় তেমন ভাবে। তূর সেটা দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। তারপর নীরার এক গাল টেনে বলে,

–আমি তো জানি তুই চায়ে লেবু ও চিনির পরিমান একসাথে সঠিক বুঝতে পারিস না। এমনকি টেস্ট করেও বুঝতে পারিস না। তবে চা টা কিন্তু জোস হয়েছে। দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় পর চা পান করছি তো। এই নে উম্মা!

নীরাও তূরের দুষ্টুমিতে হেসে ফেলে। তূর আকাশের দিকে তাকিয়ে চা পান করছে। দৃষ্টি যেনো একনিষ্ঠ নিবদ্ধ ওই গোল থালার মতো চাঁদের দিকে। নীরা কিছুক্ষন তূরের দিকে তাকিয়ে থেকে তূরের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলে,

–আপু! তুই কি ঠিক আছিস? তোর খুব কস্ট হচ্ছে! তাই না?

তূর হেসে নীরার দিকে তাকায় তারপর বলে,
–উহুম। বাদ দে সেসব কথা। বাবা-মা তো চাইতো আমি যেনো আর কোনোদিন দেশে না আসি আর না মিহালের সামনে পরি। কিন্তু যদি নিয়তিতে সাক্ষাৎ লেখা থাকে তাহলে আমরা শত বাঁধা অতিক্রম করে হলেও সেই স্থানে সেই সময় উপস্থিত হবো। উপরে একজন সঠিক পরিকল্পনাকারী তো আছেন। তিনি কর্মের মাধ্যমে ভাগ্য বদল করেন ঠিক তবে বদল করা ভাগ্যটাও তিনি আগে লিখে রাখেন। যদি কর্ম করি তবে সেটা আমাদের ধাপে ধাপে প্রদান করবেন। নয়তো না। সঠিক সময়ে যদি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেই তবেই আল্লাহ্ আমাদের সহোযোগিতা করবেন। যদি সবকিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতো তবে রবের প্রতি বিশ্বাস থাকতো না কারো। আচ্ছা, সেসব বাদ দে। আগে এটা বল? আমি আসার পর থেকে তুই আমাকে আপু! আপু! বলছিস কেনো? আমাকে তো তুই কোনো কারণ ছাড়া আপু ডাকিস না!

নীরা চায়ের খালি কাপটা রেখে তূরকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–তোকে কিছু বলার ছিল।

তূর এক ভ্রঁ উঁচিয়ে ইশারা করে। ব্যালকনিতে লাইট জ্বালানো নেই বা রুমেও জ্বালানো নেই। চাঁদের আবছা আলোতে নীরা কিছুটা বুঝতে পেরেছে আগের অভিজ্ঞতা থেকে যে তূরের ফেসিয়াল রিয়াকশন কেমন হতে পারে। নীরা একটু লাজুক স্বরে বলে,

–আসলে..

তূর তাকিয়েই আছে জানার জন্য। নীরা আবারও বলে,
–আসলে কিভাবে বলি!

তূর নীরার মাথায় চা’টা মে’রে বলে,
–তোমারে কি এহন ফুল দিয়া মনোরঞ্জন করতে হইবো? যা বলবা জলদি বলে ফেলো। নাহলে কিন্তু মুই আম্মুর কাছে গিয়া কমু যে তার মেঝো মাইয়া প্রেম করে! কি এহনও ভাব দেহাইবা?

নীরা হেসে ফেললো তূরের এরকম ভাষা শুনে। যেনো তেনো হাসি না! ব্যালকনির ফ্লোরে বসে পরেছে সে হাসতে হাসতে। তূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে নীরা বলে,

–তুই কিন্তু সঠিক আইডিয়া করেছিস। আই এম ইন লাভ উইথ সামওয়ান।

তূর এবার গোল গোল চোখ করে নীরার পাশে ধপ করে বসে পরে বলে,
–রিয়ালি! যাক তুইও তাহলে এই বিষাক্ত সুধা পান করেছিস!

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
তূর নীরার কাছে থেকে জানতে চাইলো,
–ছেলেটা কে? সে তোকে ভালোবাসে তো? নাকি আমার মতো একতরফা?

নীরা লাজুক হেসে বলে,
–সে নিজে আমাকে সরাসরি বিয়ের প্রেপোজাল দিয়েছেন। এখন আমি যদি হ্যাঁ বলি তাহলে উনি তার বাবা-মাকে নিয়ে আসবেন। কিন্তু আমার কেনো জানি খুব ভয় হচ্ছে! দুই-তিন দিন দেখেই বিয়ে প্রেপোজাল! আমার আগে কি তার জীবনে কাউকে ভালো লাগে নি? সবকিছু মিলিয়ে আমি দ্বিধান্বিত। তাকে যে আমারও ভালো লেগেছে কিন্তু আমি যে তোর মতো যন্ত্রণা পেতে চাই না।

তূর হাসলো তারপর নিকষকালো অম্বরের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে উদাস কন্ঠে বললো,
–ভালোবাসাতে কোনো, কিন্তু, কেনো এসব থাকে না। যদি সে তোমার হয় তবে আজন্ম সে তোমার অপেক্ষাতে থাকবে অথবা তোমার উপস্থিতিতে বিলীন হবে তার অস্তিত্ব! এজন্যই বলে,
“কারো প্রথম ভালোবাসা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তবে শেষ ভালোবাসা হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
হতে পারে তার জীবনের প্রথমে কেউ ছিল আবার নাও থাকতে পারে। সে তো তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন বাকিটা আল্লাহ্ ভালো জানেন।

নীরা তূরের কাঁধে মাথা রেখে মুচকি হাসে। তার বোনটা যে খুব সুন্দর করে মানুষকে বোঝাতে পারে তা তার জানা কিন্তু কেনো যে তার বোনটা নিজের ক্ষেত্রে অবুঝ! হয়তো নিজের ক্ষেত্রে অবুঝ বলেই সবাইকে বোঝাতে পারে।

________
পরেরদিন,,
সকাল সকাল মিহাল নাস্তার টেবিলে তানজিনাকে দেখে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল। মিহালের মা তানজিনাকে অনেক খাতির-যত্ন করছেন। মিহাল আবার নিজের রুমে ফিরে যেতে নিলে মিহালের মা মিহালকে ডাক দেন।

–মিহাল কোথায় যাচ্ছো? আসো নাস্তা করে নেও তারপর তানজিনাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসো। তোমার তো এখনও অফিসে জয়েনিং আরো তিন দিন পর। (ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে মাস্টার্স না করলেও ইজিলি জব পাওয়া যায়। আমার এক আত্নীয় আছে)

মিহাল তপ্ত শ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বসে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ করে মিহাল নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পেছোন থেকে মিহালের মা অনেকবার ডাকে কিন্তু মিহাল নির্বিকার। প্রায় এক ঘন্টা পর মিহাল নিজের রুম থেকে বের হয়। সোফার রুমে গিয়ে তানজিনাকে উদ্দেশ্য করে রুক্ষ স্বরে বলে,

–তোমার যদি আমার সাথে যেতে ইচ্ছে হয় তাহলে চলো নয়তো বারবার আমার মায়ের কান ভাঙিয়ো না। তোমার হাতে ৩০ সেকেন্ড আছে জবাব দেও। নয়তো প্লিজ লিভ মি এলোন।

তানজিনা অপমান বোধ করলো। মিহালের এই উগ্র এটিটিউট তার খুব বিরক্ত লাগে। কতো ছেলেরা তার পেছোনে ঘুরে! আর এই মিহাল তাকে পাত্তাই দেয় না। তানজিনা ভাবে যে সে ৩০ সেকেন্ডের ভিতর বলবে না যাবে কী না? তানজিনা পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। তানজিনার ধারণা, মিহাল তাকে নিতে বাধ্য হবে। শত হোক মিহালের মা তো তানজিনার পক্ষে!

মিহাল নিজের হাতের ঘরির সেকেন্ডের কাটাতে ৩০ সেকেন্ড হওয়ার সাথে সাথে বিনাবাক্যে প্রস্থান করে। একদম দরজা খুলে বাসার বাহিরে চলে গিয়েছে। এদিকে তানজিনা হতভম্ব। সে তো ভেবেছিল, মিহাল তার জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য! কিন্তু না। মিহালের মা মিহালকে অনেকবার ডাকার পরেও মিহাল থামে নি।

মিহাল উবারে উঠে ভাবতে থাকে,
“এই তানজিনাকে জীবন থেকে বের করার আগ পর্যন্ত কাউকে আমি দ্বিধাতে রাখতে পারবো না। যদি আমার জন্য অপেক্ষারত সে আরো কিছু সময় নিজের ধৈর্য ধরে রাখতে পারে তবে নিশ্চয়ই তাকে আমি রাণীর মতো রাখবো।”

মিহাল এখন তাইজুল, রিজভীর সাথে শপিংমলে এসে মিট করবে। কিছু শপিং করবে। আজ রাত ১০ টার বাসে করে তারা সবাই সিলেট যাবে। সবাই বলতে তূররাও। কালকে বিকেলে ফেরার আগে ওদের সবার এই পরিকল্পনা হয়েছিল। ফ্রেন্ডস ট্যুর মানেই আড্ডা। সবাই এখন দুই-একদিন ফ্রি আছে তাই এর মধ্যে একটু ঘুরাঘুরি করলে ভালো সময় কাটবে। তারপর জবে ঢুকে গেলে বা মাস্টার্সের ক্লাস পুরোদমে শুরু হলে সবাই একসাথে সময় মিলাতে পারবে না।

মিহালরা শপিংমলে এসে নিজেদের প্রয়োজন মতো শপিং করে বের হবার সময় লেডিস কর্ণারের দুইটা শাড়ির দিকে মিহালের নজর যায়। শাড়ি দুটো অসম্ভব সুন্দর। সিম্পলের ভিতর কিন্তু চোখ ধাঁধানো। মিহাল প্রোমোদ হাসে। তার তো মায়ের জন্য ও বোনের জন্য ব্যাতিত কারো জন্য শাড়ি কেনার নেই। আর এই দুইটা শাড়ি তার মা কিংবা বোনের জন্য পছন্দ হচ্ছে না চোখে। এগুলো তো মানাবে তার প্রেয়সীর রূপে। কিন্তু প্রেয়সী এখনো অনিশ্চয়তায়। সে নিজেই তো দুঃখ দিয়েছে বড্ড। সরল ও লাজুকলতাকে জটিল ও তিক্ত বিষাদের সাথে পরিচয় করিয়েছে নিজেই। তার কিছু করার ছিল না। যদি এই বিষাদের ছায়া নিজ থেকে বিদেয় নেয় সেটার প্রতিক্ষা মাত্র।
মিহাল গাড়ো লাল ও গাড়ো নীল রঙের মসলিন সিল্ক শাড়ি দুটি কিনে নেয়। রিজভী ও তাইজুল মিহালের কর্মাকান্ডে মুচকি হাসে। তারা দুজনেই জানে এই শাড়ি দুটির মালকিন কে হবে! কার অঙ্গে শোভা পাবে এই শাড়ি দুটো!
মিহাল শাড়ি দুটো কিনে ব্যাগ নিয়ে রিজভী ও তাইজুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–জানি না অভিমানিনী হবে কিনা আমার! তবে তার উপহার তাকে আমি দিবো। হোক সেটা অচেনা আগুন্তক হয়ে।

তাইজুল মিহালের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–তানজিনার গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে ইরাকে বলেছি। ইনায়া, তানজিনা ও ইরা তো একই সাথে পড়ে। ইনায়া তানজিনার কোনো খবর দিবে না এটা জানি। তাই ইরাকে বলেছি। ইরা এটুকু বলেছে, তানজিনার সাথে নাকি ওদের নতুন আসা এক টিচারের ভাব হয়েছে। ভাবের কারণ, তানজিনা ওই টিচারের জিটিএ (গ্র্যাজুয়েট টিচার এসিস্টেন্ট)। ওই টিচার নাকি বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসেছে সাথে মাত্র আড়াই বছরে পিএইচডি করেছে। অনেক ব্রিলিয়ান্ট। আরেকটা সিনিয়র মানে মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টারে পড়ে একজন তানজিনাকে চার বছর ধরে পছন্দ করে। তানজিনার সাথে তার ভালোই সম্পর্ক মানে হেল্প-টেল্প লাগলে নেয় আরকি। তানজিনা কিন্তু জানে ওই ছেলে ওকে পছন্দ করে তাও ছেলের সাথে চলাফেরা সে বেশি করে। কোনো কিছু লাগলে সেই ছেলেকেই আগে বলে। ছেলেটাও মনে হয় ধরে নিয়েছে, তানজিনা তাকে পছন্দ করে! কিন্তু তানজিনা নাকি ইনায়া ও ইরার সাথে ওই ছেলেটার বোকামি নিয়ে হাসাহাসি করে। বেচারা ছেলেটা!

রিজভী তাইজুলকে বলে,
–কারো ফিলিংস জেনে বুঝে কেনো তার সাথে ক্লোজ হয় যখন সে নিজে সেই মানুষটার প্রতি ইন্টারেস্টেড না! এরকম ছেলে বা মেয়ে কাউকেই আমার পছন্দ না। এই একটা মেয়ের জন্য কতোজন একসাথে কস্ট পাচ্ছে।

মিহাল ভাবলেশহীন ভাবে ওদের কথোপকথন শুনছে। তাইজুল এবার কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিমায় হড়বড়িয়ে বলে,

–ওহ হ্যাঁ! তানজিনার এক ব্যাচমেটও নাকি তানজিনাকে পছন্দ করে। তানজিনাকে ওই ছেলেটা প্রায়ই তানজিনাসহ ওদেরকে ট্রিট দেয়। তানজিনাকে মাঝে মাঝে কিছু গিফট করে। তানজিনা কিন্তু এটা জানে যে ওই ছেলেও তাকে পছন্দ করে।

মিহাল এবার তাইজুলের মাথায় চা’টা মেরে বলে,
–এগুলো তো কমন। কেন কলেজে দেখিস নি? বিউটি কুইন তানজিনার জন্য অজ্ঞাত নামে কতো চিঠি ও গিফট আসতো। আমাদের কলেজ তো অনার্স পর্যায়েও আছে। তানজিনা কি করতো তখন? সেগুলো নিয়ে সে শোঅফ করতো আবার হাসি-তামাশা করতো আবার চিঠি গুলো ক্লাস টাইমের আগে পুরো ক্লাসের সামনে জোরে জোরে পড়তো। আমার এসব বিরক্তই লাগতো। একজনের অনুভূতি তোমার ভালো নাই লাগতে পারে কিন্তু তাই বলে সেটাকে পাবলিকলি হিউমিলিটেড করতে পারো না। ইন্টারের পর যখন তানজিনার সাথে বিয়ের কথা জেনেছি তখন আমি ভাঙচুর পর্যন্ত করেছি বাসায়। আমার বাবা কিন্তু তানজিনার প্রতি ওরকম কেয়ারিং না। উনি নিউট্রাল কিন্তু মায়ের তানজিনাকে নিয়ে বাড়াবাড়িতে বাবা ও আপু দুজনেই বিরক্ত। আমি মাকে ভাঙচুর শেষে বলেছিলাম, “যেদিন তানজিনার আসল রূপ জানতে পারবে সেদিন নিজের ভিতরে আফসোসের শেষ থাকবে না তোমার।”

রিজভী দেখছে মিহালের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শান্ত ও গম্ভীর স্বভাবের মানুষ যদি রাগ বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করে তবে সেটা ভয়ংকর হয়। খুব ভয়ংকর।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here