#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_৭,৮
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
নাম না জানা পাখির কলরবে মুখরিত চারিপাশ। শ্রীমঙ্গলে ঘোরাঘুরি শুরু করবে সবাই। সকালের নাস্তার পর শ্রীমঙ্গলে টুকটাক ঘোরাফেরা করে রাতারগুলের উদ্দেশ্যে বের হয় বাংলোটা ছেড়ে দিয়ে। সাড়ে তিন ঘন্টা পর রাতারগুল পৌঁছে। রাতারগুল পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দেড়টার বেশি বেজে গেছে। ওরা প্যাকেট বিরিয়ানি ও পানি কিনে নিয়েছিল সেটা খেয়ে নিয়েছে। রাতারগুল যাওয়ার পর নাদিয়া বলে,
–এখানে থেকে যাবো না আমি। এখানেই থাকবো। আহা! বন-জঙ্গলে ঘুরে বেরাবো। নৌকাতে ঘুরবো।
শাফকাত অসহায়ের মতো বলে,
–না মানে, আমি তো আর স’রকারি জমি কিনতে পারবো না। তো তুমি কী ব’নমা’নুষের মতো যা’যাবর জীবন যাপন করতে চাও? তিন বেলা কী ফল-মূল খেতে হবে?
সবাই হেসে উঠে। নাদিয়ে শাফকাতকে ঠে’লা দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে।
ওরা সবে মাত্র নৌকাতে উঠেছে। নৌকা গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে এগুচ্ছে। গাছের লতা গুলো পানি ছুঁয়ে আছে। সময়টা বসন্ত কাল তাই পানি লেভেলে আছে। বর্ষা কালের দিকে হলে গাছের অর্ধেকের মতো পানির নিচে থাকতো। তখন সা’পের উপদ্রব বেশি হতো।
স্বচ্ছ পানি হাত ও পা দিয়ে অনবরত নাড়ছে তূর। পা নৌকাতে উঠাতে বলছে সবাই কিন্তু তূর তো উঠাবে না। মিহাল অন্য নৌকা থেকে তূরের ছবি তুলে কিছু।
তূর স্নিগ্ধ হেসে বলে,
–স্বচ্ছ জলরাশির বিন্দু মাত্র কণাও মানুষের মনের বিষাদ কমাতে পারে। আচ্ছা এর গভীরতা কতটুকু?
আসফি জবাব দেয়,
–কেন তোর কি ডুব দিতে মন চাচ্ছে?
তূর মুখ ভেঙচি দিয়ে নিজের কাজে মত্ত হলো। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে রাতারগুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই। ওয়াচ টাওয়ারের আশেপাশের এরিয়াতে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে ছবি তোলা শেষ হলে ওরা জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জাফলং যেতে আরো দেড় ঘন্টা লাগে। সন্ধ্যার আগে জাফলং থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিকেল সাড়ে চারটায় জাফলং পৌঁছে ওরা পিয়াইন নদীর কাছে যায়। জাফলং সীমান্ত ইন্ডিয়ার ডাওকি অঞ্চলের পাশে। ডাওকি অঞ্চলের পাহার থেকে ডাওকি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত আলাদা করা। জাফলং পাথরের জন্য বিখ্যাত পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি।
জাফলংয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই ওরা জাফলংয়ে মাত্র এক ঘন্টা ঘোরাফেরা করে ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে। এখন ওরা মালনীছড়া চা বাগানের কাছে একটা হোটেলে রুম বুকড করেছে। সেখানে পৌঁছাতে রাত ১১ টা তো বাজবে। হোটেলের মালিককে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। রাতে হোটেলে থেকে সকালে মালনীছড়াতে ঘুরবে তারপর রেস্ট নিয়ে গ্রিনলাইন বাসে করে ফিরবে। গ্রিনলাইনের ডাবল ডেকারে করে যাবে। সিট শুয়ে থাকার জন্য উপযোগী।
এতো পথ ঘোরাফেরা ও জার্নি করে সবাই ভীষণ ক্লান্ত। হোটেল ম্যানেজারের কাছে থেকে রুমের চাবি নিয়ে যে যার যার রুমে গিয়ে ব্যাগে থাকা কিছু বিস্কিট ও কেক খেয়ে পানি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়েছে। রুম ৭টা বুক করা হয়েছে যাতে আরাম করে ঘুমাতে পারে।
সকাল বেলা তূরের রুমের বাহিরে একটা পার্সেল পায় জারিন। জারিন তূরের আগে ঘুম থেকে উঠেছে। জারিন পার্সেলটা দেখে এদিক সেদিক তাকায়। ওরা যে সাতটা রুম ভাড়া করেছে তা সবগুলো একই ফ্লোরে না। আর এই ফ্লোরের রুম গুলো কয়েকটা বাহির থেকে তালা দেওয়া মানে অন্য দর্শনার্থীরা চা-বাগান ঘুরতে বেরিয়ে গেছে। জারিন পার্সেলটা হাতে নিয়ে দেখে তাতে তূরের নাম লেখা। তূরের নাম দেখে পার্সেলটা ভিতরে নিয়ে গিয়ে তূরকে ডাক দেয়। তূর অনেকটা গাড়ো ঘুমে আচ্ছন্ন। জারিন ডাকলে সে আরো নড়েচড়ে ঘুমাচ্ছে। জারিন এবার গ্লাসের পানি তূরের উপর ছিটাতে থাকে। তূর ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে। তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে পানির উৎস খুঁজতে থাকে তারপর জারিনের হাতে পানির গ্লাস দেখে উঠে জারিনকে এলোপাথাড়ি মা*রতে থাকে আর বলতে থাকে,
–আমার ঘুমটা এভাবে নষ্ট করলি কেন? ডাকার জন্য তো তোর গ’লা আছে, মুখ আছে তো পানির প্রয়োগ করলি কেন?
জারিন তূরকে সাথে করে দুয়েক ঘা দিয়ে বলে,
–তোর নামে পার্সেল এসেছে। তাই তো ডাকলাম। আর তুই তো উঠিছিলি না।
তূর পার্সেলের কথা শুনে ভ্রঁ কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–পার্সেল কে পাঠাবে? আর সিলেটে আমার পরিচিত কেউ নেই।
জারিন পার্সেলটা এগিয়ে দিলো। পার্সেলের ভিতর দুইটা ব্যাগের সাথে একটা চিরকুট। চিরকুটটাও ইউনিক শেইপে। বাটারফ্লাই শেইপে চিরকুট এর সাথে জোড়া লাভ শেইপ দিয়ে ডাবল পার্ট করা। মানে বাটারফ্লাই ও লাভের মাঝ বরাবর গ্লু দিয়ে লাগানো। বাটারফ্লাই অংশটা নীল রঙের। সেখানে লেখা,
“এই যে আমার অনেক শখের খুঁজে পাওয়া প্রজাপতি! ভালোবাসি! আমার হৃদয় অন্তরিক্ষের শুভ্রতায় তুমি এক একচ্ছত্র প্রজাপতি। যার রঙ নীল! কারণ ভালোবাসা ও বেদনা দুইটাই নীল রঙে। তুমি কিন্তু মেঘের মতোও! কখনো শুভ্র মেঘের মতো প্রাণোচ্ছল আবার কখনো কৃষ্ণ মেঘের মতো বিষাদে পরিপূর্ণ। তোমার সুখ ও কষ্টের উভয়ের কারণ একান্ত আমি। হয়তো এখন আমি তোমার মনে ঘৃণাতে! হোক ঘৃণা। তোমার মনেই তো বিরাজমান।”
তূর চিরকুটের লেখাগুলো পড়ে স্তব্ধ। এতো প্রগাঢ় অনুভূতির আশ্রয়ে চিরকুটটা কি তবে তার আকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির থেকে? কিন্তু কেনো? আর এতোই যদি তূর সেই আকাঙ্ক্ষিত পুরুষের জীবনে আকাঙ্ক্ষিতা হয়, তবে কেনো এতো অবহেলা?
তূর এবার লাভ শেইপের চিরকুটটা পড়তে থাকে,
“হৃদয়হরণীর হৃদয়ের র’ক্তক্ষরণের কারণ যদি আমি হই তবে এর ঔষুধও হবো সয়ং আমি! হৃদয়হরণীকে নিয়ে আমি খুবই ঈর্ষান্বিত। তার মুখের হাসি অন্যকোনো পুরুষ হোক সেটা যে আমার সহ্যশক্তির এক অতীব রূঢ় যন্ত্রণা!”
তূর এবার চিরকুটটা পাশে রেখে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। তার এখন যন্ত্রণাদায়ক মা’থাব্যথা হচ্ছে। হুট করে মাথাব্যথা তার চার বছর আগে শুরু হওয়া বিষাদময় অসুখের লক্ষণ। এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে সে আবহাওয়া বদল করে ভিনদেশে চলে গিয়েছিল। যেই বিষাদময় অসুখ তাকে আ*ত্মহ’ননের চিন্তা করিয়েছিল। ডিপ্রেশনের এমন অবস্থায় গিয়েছিল যে শারিরিক কোনো আঘাত ছাড়াও তূর নিজেকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। যেকোনো ঔষুধের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতো।
জারিন তূরের এভাবে বসে থাকতে দেখে প্রথমে না বুঝে চেয়ে থাকে পরে কিছু মনে হতেই আঁতকে উঠে। তূরের সেসময়ের অবস্থা সম্পর্কে তার জানা। তূর তো ফার্মেসিতে পড়াশোনা করেছে। তূরের বাবা চেয়েছিল তূরকে ডিপার্টমেন্ট বদল করাবে কিন্তু সাইক্রিয়াটিস্টের কথায় আর বদল করে নি। ঔষুধের প্রতি তীব্র আকর্ষণ থেকে সে এটার সম্পর্কে জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হবে এবং তারপর আস্তে আস্তে এই ভীতি কেটে যাবে। আর ঔষুধ খেতে ইচ্ছে হলে অক্ষতিকারক ঔষুধ খাবে নিজে জেনে বুঝেই। তারপর আবহাওয়া বদলের কথা বলেন। তূর তারপর চলে গিয়েছিল আমেরিকা।
জারিন তূরকে পানি খাওয়ায়। তূর পানি খেয়ে জারিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–ও ও আমাকে কি সত্যি ভালোবাসে? তাহলে সেদিন কেনো আমাকে..? আর এগুলো কি ও দিয়েছে? বল না জারিন?
জারিন এবার শিউর পার্সেল মিহাল দিয়েছে। কিন্তু তূরকে কি বলবে? তূরকে সব বললে যদি হীতের বিপরিত হয়? জারিন কথা কাটানোর জন্য বলে,
–আমার মনে হয় কি, তুই মিহালকে পর্যবেক্ষণ করতে থাক। বুঝতে চেষ্টা কর নিজ থেকে। এভাবে কাঁদলে হবে না। তোকে শক্ত হতে হবে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
–কি করবো আমি? চার বছর আগে যখন আমার ম’রণদশা হয়েছিল তখন কোথায় ছিল তার এতো ভালোবাসা! তখন তো একটাবারের জন্যও যোগাযোগ করে নি। অর্করা মিহালকে কতোবার ফোন করেছিল কিন্তু একটাবারও সে ধরে নি। এখন কী আবার সে আমার মানসিক স্থিতি নষ্ট করতে এসেছে?
জারিন তূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–নিজে জানার চেষ্টা কর। একদম নিজ থেকে। মিহালকেও জিজ্ঞেসা করবি না। তবে কারণটা আমার থেকে তোর ভালো জানার কথা।
তূরকে রেখে জারিন ওয়াশরুমে চলে যায় বাহিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে। তূর চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবে,
“কারণটা আমার জানা! কিন্তু কিভাবে? কি সেই কারণ?”
মালনীছড়া চা-বাগানে ঘোরাফেরা শেষে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসে উঠলো। তূর চা বাগানে ঘোরার পুরোটা সময় মিহালকে নজরবন্দি করে রেখেছিল। এতে করে দুই জোড়া চোখের দৃষ্টির মিলন ঘটেছে বারংবার।
ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দশটা বেজে গেছে। বাসস্টপে নামার পর ছেলেরা মেয়েদের পৌঁছে দিবে তারপর নিজেরা ফিরবে। মিহাল ও তূরের বাড়ি যেহেতু একই দিকে তাই মিহাল তূরের সাথে যাবে। পাশাপাশি বসে দুজনেই চুপ করে আছে। কারও মুখে রাও নেই। নিস্তব্ধ নীরবতায় পথের সমাপ্তি ঘটে। যার যার গন্তব্যে সে সে চলে যায়।
পরেরদিন,,
সকালের নাস্তার পর তূরের বাবা তূরকে ডাক দেয়। তূর গিয়ে ওর বাবার কাছে বসে। তূরের বাবা সিরিয়াস হয়ে বলে,
–তোমার সিদ্ধান্ত জানাও আমাদের। আমেরিকা থেকে মাস্টার্সের আগে কেনো আসলে? তাছাড়া তোমার বাকি জীবন ওখানেই কাটবে।
তূর ওর বাবার কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে,
–তোমার শেষের কথাটা বুঝলাম না। আমি এখানে এসেছি এরপর মাস ছয়েক পর চলে যাবো তারপর দুই-তিন বছর পর চলে আসবো।
তূরের বাবা বলেন,
–তোমার জাহিন ভাইয়ার বন্ধুর তোমাকে পছন্দ হয়েছে আর তাছাড়া তুমি জাহিনের বন্ধু রাফসানকে চেনো। তোমার তিন ব্যাচ সিনিয়র সে। জাহিনদের বাড়িতে তার আনাগোনা রয়েছে। রাফসানের বাবা-মাও তোমাকে পছন্দ করেছে। আমরা আমেরিকা যেতাম সেটার জন্যই।
তূর অতোটা অবাক হলো না। তূর এই সন্দেহের কারণেই দেশে চলে এসেছে। তূরের খালা-খালুর সাথে একদিন তূরের খালোতো ভাই জাহিনকে ও তার স্ত্রীকে তূর রাফসান ও তার ব্যাপারে কথা বলতে খানিকটা শুনেছিল। তারপর থেকেই তূর দেশে আসার তোড়জোড় জোড়ালো ভাবে করতে থাকে। রাফসান ছেলেটা ভালো কিন্তু তূরের মন তাকে চায় না। তূর তাকে ভাইয়ের ও বন্ধুর নজরে দেখে। দেশে ফেরার আগে তূরের সাথে রাফসান অনেক যোগাযোগ করতো। খালার কথা শুনে খানিকটা সন্দেহ ছিল তা আরও গাড়ো হয় রাফসানের অপ্রয়োজনে যোগাযোগে। তূর স্বভাবত খুব কাছের বন্ধুদের ছাড়া কারও সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলতে যায় না আর না অপ্রয়োজনে যোগাযোগ করে। রাফসানকে তূর বন্ধু ও ভাইয়ের নজরে দেখলেও নিজের জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ স্মৃতি গুলো জানায় নি। যাকে নিজের অতীত বলতে ইচ্ছে হয় নি তার সাথে বিনা সম্পর্কে অযথা যোগাযোগ অর্থহীন।
তূর ওর বাবাকে শান্ত স্বরে বলে,
–বিয়েতে যেহেতু আমি একটা লিড ক্যারেক্টার তাহলে এতে আমার মতামতের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাকে ছাড়াই শুধুমাত্র রাফসান ভাইয়ার পছন্দের উপর ভিত্তি করে বিয়ে ঠিক করলেই কি হলো নাকি! রাফসান ভাইয়া ভালো ছেলে তবে আমার পছন্দ না। ঠিক এই কারণে আমি দেশে ফিরে এসেছি। তার প্রতিদিনকার অহেতুক যোগাযোগ আমাকে বিরক্তিতে তিক্ত করতো। আমি তাকে খানিকটাও পছন্দ করি না। হতে পারে সে সুদর্শন! কিন্তু আমার কাছে তাকে ভালো লাগে না। এরপর আশা করি এই ব্যাপারে তোমরা আর কথা বাড়াবে না। এই বিয়ের কথা এখানেই সমাপ্ত হোক। তুমি পারলে খালামনিদের ও রাফসান ভাইয়াদের ফ্যামিলিকে জানিয়ে দাও আমার মত নেই বিয়েতে। আমি নিজের মনের বাহিরে এতো যন্ত্রনা পাওয়ার পরেও চলতে পারি না। আমার মতে,
নিজে ভুল করে শাস্তি পেলে সেটা আমার একান্ত ব্যার্থতা কিন্তু অন্যের ভুলের মাশুল দিতে রাজি না। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় কিন্তু অন্যের ভুল গুলো কাঁটার মতো বিঁধে।
তূর চলে যায় নিজের রুমে। তূরের বাবা গম্ভীর হয়ে সেখানে বসে আছেন। কিয়ৎক্ষণ পর তিনি তূরের মাকে ডাক দিয়ে বলেন,
–আমাদের মেয়ে নিজের অতীত ছাড়তে পারে নি। হাজার মাইল দূরে গেলেও সে যদি নিজ থেকে ভুলতে না চায় তাহলে আল্লাহ্ ব্যাতিত কারও সাধ্য নেই অতীত ভুলানোর। সে নিজেকে সংযত করেছে ঠিক কিন্তু এখনও সেই আগের স্থানেই আছে।
তূরের মা তূরের বাবার হাত ধরে আশঙ্কিত হয়ে বলে,
–ওর কি আবার ওরকম খারাপ অবস্থা হবে? খুব ভয় হচ্ছে আমার।
তূরের বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
–আমাদের মেয়ে অতীত মেনে নিয়েছে কিন্তু অতীতকে বদলানোর আশা রাখে অন্তহীন। ওর ভীতি কেটে গেছে তবে ভবিষ্যতে কি হবে দেখার বিষয়। তার রাগ যে বড্ড ভয়ংকর!
________
“তার চোখের পূর্ণিমাতে,
কাটে এক আঁধার অমানিশা।”
_____তিথী
দিনশেষে যখন পশ্চিম আকাশে লালাভ রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিবাকর যখন অস্তমিত হয় তখন চন্দ্রমা তার মহিমাতে ফিরে আসে আঁধার অম্বরে। সূর্যের উপস্থিতি চাঁদের মূল্য পৃথিবীর আকাশে মূল্যহীন করে। আকাশের লক্ষ কোটি তারার মাঝে গোল থালার মতো চাঁদ তার বিশেষত্ব ছড়াচ্ছে। তূর মিহালের ব্যাপারটাতে ভাবছে। তূর কাল একবার তানজিনার সামনা সামনি হবে। অনেক কিছু কৌশলে ক্লিয়ার হতে হবে। ধোঁয়াশার মধ্যে থেকে নিজের মানসিক স্থিতির ক্ষ’তি করবে না।
হঠাৎ নাফিহা এসে তূরকে বলে,
–আপু চলো। আমরা আজকে ফুচকা কম্পিটিশন করবো। কাকা অনেকগুলা ফুচকা এনেছে। ২০ টা করে ফুচকা প্রতিজনকে দেওয়া হবে। আমি, তুমি ও নীরাপু। কে আগে শেষ করে জেতে সেটা দেখবো।
তূর দেখলো নাফিহার চোখে উচ্ছাস। তূর হাসি মুখে যায় নাফিহার সাথে। ফুচকা গুলো বড্ড লোভনীয়। টপাটপ মুখে পু’ড়েও প্রথম হতে পারে নি তূর। হয়েছে তৃতীয়! প্রথম তো নাফিহা।
মিহাল এদিকে কালকে তানজিনার ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের সাথে দেখা করবে। তাইজুল ইরার মাধ্যমে তানজিনার প্রফেসরের নাম্বার যোগাড় করেছে। কাল বিকেলে অফিস শেষ হবার পর মিহাল দেখা করতে যাবে একটা কফিশপে। সাথে তানজিনাকে পছন্দ করে ওই দুইটা ছেলেকেও।
_____
অরুন আলোয় বিভাসিত নভোলোক। বিকেলের প্রথম প্রহর এখন। বিকেল ৪ টা বাজে প্রায়। কফিশপে মুখোমুখি চারজন। কারও কারও মুখে বিরক্তির ছাঁপ। তা দেখা স্বত্বেও মিহাল গলা ঝেড়ে বলে,
–আমি মিহাল। মোঃ মিহাল মুনতাসির। আপনাদের কাছে আরেকটা পরিচয় হলো, আমি তানজিনার উডবি হাসবেন্ড!
উপস্থিত সকলে শেষের বাক্যটায় যেনো বজ্রাহত হলো। অবিশ্বাস ও সন্দেহের দৃষ্টি তাদের। তানজিনার ব্যাচমেটটা বলে,
–আমাদের এসব মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করার মানে কি? আর আমাদের তিনজনকে একত্রে ডাকার মানে কি?
মিহাল চেয়ারের সাথে গা এলিয়ে দেয় তারপর শার্টের কলার এলিয়ে বলে,
–সব কেনোর জবাব তো পাবেন। একটু অপেক্ষা করুন।
এই বলে মিহাল কাউকে ফোন করে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,