#শেষের_পঙক্তি,পর্ব_৯,১০
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
মিহাল যাকে ফোন করে সেই ব্যাক্তিটা মিহালের মা। মিহালের মা ফোন রিসিভ করলে মিহাল সালাম দিয়ে তারপর বলে,
–আম্মু, তানজিনাকে একটু বলতে পারবে যাতে সে আমাকে একটু ফোন করে। আসলে আমার কাছে তানজিনার নাম্বার নেই। আগের সিম কার্ড সিলেট যাওয়ার আগে ফেলে দিয়েছিলাম। তুমি তাকে বলো যেনো আমাকে ফোন করে। তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে তানজিনাকে আমার নাম্বার দিয়েছোই!
মিহালের মা বলে,
–তোমাকে আমি নাম্বার বলছি, তুমি নাহয় ফোন করো।
মিহাল বলে,
–প্রয়োজনটা তানজিনার তাই তাকেই বলো। রাখি।
মিহাল ফোন রাখার পর উপস্থিত তিনজনের উদ্দেশ্যে হেসে বলে,
–ভাবছেন নিশ্চয়ই যেই তানজিনার কথা বললাম সেটা অন্যকেউও হতে পারে! হ্যাঁ, হতেই পারে। পৃথিবীতে এই নামটা তো তানজিনার একার না! তবে কিছুক্ষণ পর তানজিনা ফোন করলে ভয়েস শুনে নাহয় নিশ্চিত হবেন।
এবার তানজিনার ভার্সিটির প্রফেসর আরিফ আহমেদ মৌনতা ভঙ্গ করে বলেন,
–আপনি একজেক্টলি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? ক্লিয়ার করে বলেন।
মিহাল প্রতিউত্তর করলো না। তানজিনার ফোনের অপেক্ষা করলো। কয়েকমিনিটের পর তানজিনা ফোন করলো। মিহাল লাউডে ফোন রিসিভ করে রাখলো। তানজিনা প্রথমেই বলে,
–কি এমন জরুরী কথা যে এত তলব? নাকি আমাকে মিস করছো? করতেই পারো। হবু বউ যদি সুন্দরী হয় তবে বারবার মনে পরবেই!
কথাটা বলে তানজিনা জোড়ালো হাসলো। হাসির শব্দ কিছুটা হলেও ফোনের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। মিহাল বাদে বাকি তিনজন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তানজিনা যেখানে সবসময় নিজেকে কোনো কমিটমেন্টে নেই বলে দাবি করে সেখানে সে একজনের হবু স্ত্রী!
মিহাল তানজিনাকে ভাবশূন্য ভঙ্গিমায় বলে,
–তুমি সত্যি খুব সুন্দর। তাই তো তোমার পেছোনে মৌচাকের মৌমাছিরা ঘোরাফেরা করে যেনো তারা মধুর অন্বেষণে এসেছে! এখন তুমিই বলো, ভবিষ্যতে পারিবারিক ভাবে বাধ্য হয়ে এই মধুকে আমায় গলায় ঝুলাতে হবে তো আমি কেনো সেই মধুকে উন্মুক্ত রাখবো? মানে যদি মধু বিষাক্ত হয়ে যায়! তাই আজ কিছু ব্যাবস্থা করতে তোমাকে এতো জরুরী তলব।
তানজিনা ফোনের অপরপাশে দমে যায়। মিহাল কি তাকে কম্পলিমেন্ট দিচ্ছে না-কি ইনসাল্ট করছে তা তার বুঝে আসছে না। আর কি ব্যাবস্থা করছে তাও বুঝতে পারছে না। তানজিনা সন্দিহান হয়ে বলে,
–হোয়াট ডু ইউ মিন?
মিহাল রম্যতার স্বরে বলে,
–ভিডিও কলে আসো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। তুমি খুব খুশি হবে সারপ্রাইজ দেখে বিলিভ মি!
তানজিনার কপালে ভাঁজ পরলো। হুট করে কারও এতো বদল! ঠিক হজম হচ্ছে না। তানজিনা সন্দেহের বশে কথা ঘোরাতে বলে,
–আমি ব্যাস্ত আছি। পরে কথা বলি।
মিহাল দ্রুত বলে,
–আ আ না। কয়েকদিন পর যেখানে তুমি আমার স্ত্রী হবে, সেখানে তুমি আমাকে বিশ্বাসই করো না! তাহলে সারাজীবন কিভাবে বিশ্বাস করবে? আমি তো আমাদের ভালোর জন্যই সব করছি। সরি। তোমার হয়তো আমাকে পছন্দ না! কি আর করা!
তানজিনা দোটানায় পরে গেলো। মিহালকে কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। হুট করে ব্যাবহার এতো বদলে যাওয়া অবিশ্বাসেরই। তানজিনা সম্মতি দিয়ে হোয়াটসএপে ভিডিও কল দেয়। মিহাল রিসিভ করে হাসি দিয়ে বলে,
–ইউ লুকিং বিউটিফুল! আমি ভাবতেও পারছি না কতোটা সুন্দর লাগছে তোমাকে! আমার দেওয়া সারপ্রাইজটা তোমার রূপ আরও বাড়িয়ে দিবেে। তো রেডি তুমি? সারপ্রাইজের জন্য?
তানজিনা মেকি হাসে। মিহাল এবার নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলফি নেওয়ার মতো করে ফোন উপরে তুলে বাকি তিনজনকে ক্যামেরাতে ক্যাপচার করে উচ্ছাসের সাথে বলে,
–সারপ্রাইজ! মিট উইথ দেম। এটা প্রফেসর আরিফ। এটা নাহিদ ভাই (তানজিনার সিনিয়র যে তানজিনাকে পছন্দ করে)। এটা রাকিব (তানজিনার ব্যাচমেট)। আর গাইজ, মিট উইথ মাই ফিয়ন্সে মিস তানজিনা মেহবিন। কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?
তানজিনা শ’কড হয়ে পাথরের মত স্টিল হয়ে বসে আছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আর মিহালের সাথে উপস্থিত তিনজনও এবার মিহালের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। হুঁশ হবার পর তানজিনা ভিডিও কল ডিসকানেক্ট করে দেয়। তা দেখে মিহাল হাসতে হাসতে কোনোমতে সিটে বসে। তারপরেও তার হাসি থামছে না। পানি খেয়ে তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–লজ্জা পেয়েছে মনে হয়। একটু লাজুক তো! কিছু মনে করবেন না। আমাদের বিয়ের সময় তানজিনাকে ভালো করে দেখবেন নাহয়!
তিন জনের মুখে কথা নেই। একটা মেয়ে এতোদিন ধরে ওদের ইমোশনের সাথে খেলেছে। যদিও তানজিনা ওদের কারও সাথে রিলেশনে ছিলো না কিন্তু কাউকে ফিল করানো যে পছন্দ করে আর মিথ্যে আশা দেওয়া আর নিজের এনগেইজড হওয়ার সত্য লুকিয়ে দিনের পর দিন কারও ইমোশনকে ফ্লা’র্টিং ভেবে সেটার সাথে সাথে নিজেও ফ্লা’র্ট করা ও ইঙ্গিত করাটাও এক ধরনের হ্যা’রা’সমেন্ট। কেউ পছন্দ করে জেনেও তার ইমোশনকে স্বিকৃতি না দেও তো সেটার ফায়দা লুটাও উচিত নয়।
রাকিব লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
–তানজিনা যে এমন টাইপ ফ্লা’র্টি তা আপনি আমাদের জানালেন। তার কারণ কি?
নাহিদ রাকিবের কথার সাথে বলে,
–হয়তো উনি তানজিনাকে খুব ভালোবাসেন তাই তানজিনাকে এসব করতে ইরডাইরেক্টলি নিষেধ করছেন।
মিহাল ওদের দুজনের প্রশ্ন ও জবাবে তাচ্ছিল্য হাসে। প্রফেসর আরিফ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে এতক্ষণ মিহালকে পর্যবেক্ষণ করছিল। এবার সে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–আপনি তানজিনাকে ঘৃণা করেন তাই না? এক প্রকার সহ্য হয় না তানজিনাকে?
মিহাল এবার হেসে জবাব দেয়,
–ঘৃণা না। কারণ ঘৃণার ব্যাক্তিকেও একসময় প্রিয়র জায়গায় রাখতে হয় অতীতে। কিন্তু তানজিনা কখনো প্রিয়র জায়গায় ছিলই না আর না আছে। তবে প্রচণ্ড তিক্ত ওর প্রতি কারণ ওর স্বভাব ও চালচলন সবটা আমাকে অসহ্য পরিমান বিরক্ত করে। আজ থেকে ওর মেন্টাল ট*র্চা’র শুরু। যাতে আমাকে সয়ং নিজে সে বন্ধনমুক্ত করতে বাধ্য হয়। আর যদি বন্ধনমুক্ত না করে তবে আমি সারাজীবন এমনটাই করে যাবো। আর তানজিনা যেখানে সামান্যতে অভিযোগ করে বসে আমার মায়ের কাছে সেখানে সে আমার করা কাজগুলোতে অতিষ্ঠ হতে বাধ্য হবে। আর হ্যাঁ, তানজিনার আপনাদের তিনজনের যার সাথেই রিলেশন থাকুক বা না থাকুক তাতে আমার বিন্দুমাত্র কিছু যায় আসে না। টোপ হিসেবে ব্যাবহার করা মাত্র। চলি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
মিহাল ওদের তিনজনকে রেখেই চলে যায়। ওরাও নিজেদের মতো চলে যায়।
________
এদিকে তূর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে অসহনীয় মা’থা ব্যাথা, ঘার ও পিঠ ব্যাথাতে বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। সকাল ও দুপুর মিলিয়ে চারটা ৫০০ মিগ্রা এর না’পা খেয়েছে তাও ব্যাথা না কমাতে বিকেলে ই’বু’প্র’ফেন পে’ইনকি’লা’র একটা খেয়েছে তারপর আসরের ওয়াক্ত হতেই নামাজ পড়ে ঘুম দিয়েছে। সন্ধ্যার আজান হবার কিছুক্ষণ পর মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে তূরের। তূরের মা বলে,
–সব ধ’কল একসাথে নিতে হবে তার। এখন ভুগো। কার কস্ট হচ্ছে এখন? আমার না তোমার? একটুও কথা শুনে না। লং জার্নির পরেরদিনই তার ঘুরতে যেতে হবে দূরের পথে। এক-দুই দিন পর গেলে কি ম’হা’ভা’র’ত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? এই উঠ। মাগরিবের নামাজের সময় থাকে অল্প আর সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। উঠ নামাজ পড়।
তূর কপাল কুঁচকে কপালে হাত রেখে উঠে বসলো। ব্যাথা কমেছে তবে কপালের ডান পাশে হালকা ব্যাথা আছে। সচরাচর পে’ই’নকি’লা’র তূরের খাওয়া পছন্দ না কারণ এটা হ্যাবিট হয়ে গেলে মারাত্নক ক্ষ’তি’ক’র। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, অলসতা, চুলকানি ও র্যাশ, ঝিমুনি সহ সাধারন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে আর আসক্তি হয়ে গেলে পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কম মাত্রা ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কম মাত্রা হয়। আরও অনেক এমনকি কিডনিতেও সমস্যা দেখা দেয়।
তূর ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে আবার ঘুম দেয়। সে সাথে একটা কম পাওয়ারের ঘুমের ঔষুধও খেয়েছিল। এরপর রাত ১১ টার দিকে ওর মা আবার এসে চিল্লিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলে রাতের খাবার খাইয়ে ও নামাজ পড়ে ঘুমাতে বলেন। তূর তাই করে। আগামিকাল তানজিনার ইউনিভার্সিটিতে যাব ঠিক করে যদি সুস্থ হয়ে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
“ধরো, সোনালি রঙা প্রজাপতির ডানায়,
আজ তোমার নাম উৎসর্গ করলাম।
রাগ করবে কি? বলো না?
ওই যে! নীল রঙা শখের প্রজাপতি পাই নি বলে?”
[তিথী]
ধরণীর বুকে যখন আঁধারকে ছাঁপিয়ে অস্ফুট আলো সবে আবছা ফুটতে শুরু করেছে সাথে আছে কিছু নাম অজানা বিহঙ্গের কলরব তখন তূর তার একান্ত ডায়েরীটিতে কিছু ছন্দ লিপিবদ্ধ করে। দীর্ঘসময় ঘুমিয়ে কাটানোর ফলশ্রুতিতে ফজরের আজানের আগেই ঘুম ভেঙে গেছে তার। ঘুম থেকে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে আজান হলে তূর নামাজ পড়ে তার ডেস্কে পড়ে থাকা ধূলো পরে যাওয়া ডাইরীটি নিয়ে ব্যালকনিতে বসে। ডায়েরীটিতে মাত্র কয়েকটা পাতায় কিছু ছন্দ লেখা। সবটাই একজনকে উৎসর্গ করে। এখন সদ্য পরিস্ফুটিত আলোতে নিজের কিয়ৎক্ষণ আগের লেখা ছন্দটা কয়েকবার আউরালো। তারপর কি যেনো ভেবে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। তূরের বাবা-মায়ের রুম খোলা। উনারা নামাজ পড়ছেন। তূর রান্নাঘরে গিয়ে নিজে চায়ের পানি বসালো। চার বছর আগে যেমন করে চা বানাতো তেমন করার প্রচেষ্টা মাত্র। পানিতে আদা, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নেওয়ার পর যখন সবগুলো মশলার কারণে পানিতে একটা রঙ চলে আসলো তখন হালকা চা-পাতি দিলো। ৩০ সেকেন্ড হওয়ার সাথে সাথে নামিয়ে নিয়ে কাপে ছেঁকে ঢেলে পরিমান মতো লেবু ও চিনি মিক্স করলো। বাবা-মা এর ডায়েবেটিস বলে তাদের চা-তে মধু দিয়েছে চিনির পরিবর্তে। চাচা-চাচি ও ছোট দুই বোনের জন্য চা নিয়ে ওদের ঘরে টোকা দিয়ে দিয়ে আসলো। নাফিহা উঠে নি আর নীরার পরীক্ষা বলে উঠে পড়তেছিল। তারপর নিজের জন্য নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। বহুদিন পর নিজের হাতে চা বানানো নিয়ে ভয়ে ছিল যে তিতা না হয়! কিন্তু না। সব ঠিকই আছে।
_________
মিহাল আছে চিল মুডে। সকাল সকাল ফুরফুরে মেজাজে নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। কাল রাতে তাইজুল ফোন করে বলেছিল যে তানজিনার ফোন নাম্বার বন্ধ ও ফেসবুক ডিএক্টিভ।
তূর আজকেও যেতে পারে নি তানজিনার ভার্সিটিতে কারণ তূরের মামারা আজকে সবাই তূরদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত। গতকালকেই নাকি তূরের মা তাদের নিমন্ত্রণ করেছিল। তূরকে বেরোতে দিলো না। মামাতো ভাই-বোনদের সাথে কেটে গেলো সারাদিন আড্ডাতে। এদিকে তানজিনার খবর তো তূর জানে না। বরং আজকে গেলে ফিরে আসতে হতো। রাতের বেলা তূরের আমেরিকার এক প্রফেসর তূরকে মেইল করেছে যে তূর মাস্টার্সে কবে ভর্তি হবে? আর তূরের জন্য রিসার্চের একটা ভালো পার্টটাইম রিসার্চ করার ওয়ে পেয়েছে যা অনেকটা জবের মতোই কারণ স্যালারি থাকবে। মাস্টার্সের পর সেটা ভালো ভাবে কন্টিনিউ করতে পারবে।
তূর উনার কাছ থেকে দুই-তিন মাসের সময় নিয়েছে। এই প্রফেসর তূরকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করেন। ধর্মে খ্রিষ্টান হলেও তিনি তূরকে মুসলিম বলে হে’য় করে নি। তূরের বলাতে প্রফেসর বুঝতে পারে যে এতো বছর পর পরিবারের কাছে গেছে তাই একটু দেরি তো হবেই।
পরেরদিন,,
তূর বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য তৈরি হলে ওর মা এসে বাধ সাধেন। তিনি বলেন,
–দেশে এসেছিস সবে সপ্তাহ পেরোলো কিন্তু তোর বাড়িতে থাকা যেনো দায়! আজকে আবার কই যাচ্ছিস? বন্ধুদের সাথে কি প্রতিদিন দেখা করা লাগে?
তূর ওর মাকে তো বলতেও পারছে না যে তানজিনার সাথে দেখা করতে যাবে। তূর বলে,
–একটু যাবো মা। জলদি চলে আসবো।
তূরের মা নাকচ স্বরে বলেন,
–না। আজ বৃহঃপতিবার। কাল শুক্রবার। কাল তো বের হবি এটা শিউর। তাই আজ বের হবি না। না মানে না। সারাদিন বাইরে টইটই করলে অসুস্থ তো হবিই।
তূর বোঝালো ওর মাকে কিন্তু তিনি নারাজ। তূর ভাবলো, তানজিনার তো শুক্রবার ও শনিবার ভার্সিটি বন্ধ তাই আবার রবিবারেই যেতে হবে। হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। তূর ফেসবুকে তানজিনাকে সার্চ করে না পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকালো। হঠাৎ করে কি ফেসবুক থেকে উধাও হবে নাকি! তাছাড়া তানজিনা ফেসবুক ছেড়ে দেওয়ার পাত্রি না। ওর প্রতিদিন স্টোরিতে বা পোস্টে অনেকগুলা ছবি দিতেই হয় নিজের। তাহলে কি ব্লক করলো? তূর আপনমনে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে ইরাকে ফেসবুকে নক করলো। ইনায়াকে করতে তার ইচ্ছে হয় নি। ইরার থেকে জানতে পারে তানজিনা পরশু থেকে মোবাইল ও ফেসবুক বন্ধ করে রেখেছে আর ভার্সিটিতেও নাকি কাল থেকে আসে না।
তূর এবার ওর মায়ের কাজে খুশিই হলো। নাহলে যে তাকে গিয়ে ফিরে আসতে হতো। ইরাকে তূর বলেছে যেনো তানজিনা ভার্সিটিতে আসলে ওকে চুপিসারে জানায় আর এটা তানজিনা যেনো না জানতে পারে। ইরা রাজি হয়।
তূরও এদিকে লক্ষ্য করছে তানজিনা ফেসবুক এক্টিভ করে কি-না। তাহলে সে একটা সুন্দর পোস্ট দিবে যা তানজিনাকে খোঁচানোর মতো।
_________
রবিবার,,
তানজিনা আজ ভার্সিটিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। তার ওই ব্যাপারটা তো ভার্সিটিতে তিনজন ছাড়া কেউ জানে না তাই সে এবার ফেসবুকও ওপেন করেছে। তূর সকালে তানজিনার ফেসবুক খোলা দেখে সাথে সাথে পোস্ট করে,
“যদি কখনো জানতে পারো? তোমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষটা তোমাকে মনে মনে খুব করে চায় কিন্তু কিছু কারণবশত সে তোমাকে কস্ট দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। তখন কি করবে? সেই মানুষটা যদি এখনো অন্যকারও নামে স্বাক্ষরিত না? চেষ্টা করবে না-কি? তার শেষ পঙক্তি হওয়ার?”
পোস্টে অনেক রিয়াক্ট কমেন্ট আসছে। তূরের বিদেশি বন্ধুরাও পোস্টের ইংলিশ ট্রান্সলেট পড়ে কমেন্ট করছে কিন্তু তূর তো তানজিনার রি’য়াকশনের অপেক্ষাতে আছে। তানজিনা কি দেখবে না? হুট করে মেসেঞ্জারে রাফসানের মেসেজ আসে। রাফসান যেহেতু বাঙ্গালি বংশোদ্ভূত তাই বাংলা তার জানা। রাফসান লিখেছে,
“তুমি কি তোমার অতীতে ফিরে যাচ্ছো? জাহিন তো বলেছিল তুমি ভালোবাসার ধোঁ’কা’র স্বিকার হয়ে সব পেছোনে ফেলে আমেরিকায় এসেছিলে আর সেই মানুষটাকে দেখতেও চাও না আর নামও শুনতে চাও না।”
তূর মেসেজটা দেখে ভ্রঁ কুঁচকালো। তূর মেসেজটা দেখে নিজে নিজেই বলে,
–লাইক সিরিয়াসলি! জাহিন ভাইয়া রাফসান ভাইয়াকে এসব বলেছে? কিন্তু খালামনিরা কেউই তো আসল ঘটনা জানে না। বাবা ওদের শুধু ভালোবেসে কস্ট পেয়ে মিহালের সামনে পরতে চাই না বলে দেশ ছাড়ছি এমনটাই বলেছে যাতে কথা না বাড়ে। বাবা মিথ্যে বলে নি কিন্তু ওরা কথার অন্য মানে বের করে নিয়েছে। মানুষকে একটা বললে যে তারা দুইটা বুঝে তার প্রমান আমার রিলেটিভরা। এজন্যই বাবা ওদের সবটা বলতে চায় নি। সব বললে হয় তো আমার ক্যারেক্টার নিয়েও কথা উঠতো!
তূর রিপ্লাই করে,
“নো। নট এট অল। সে আমাকে ধোঁ’কা দেয় নি। সে শুধু তার ফিলিংস লুকিয়ে গেছিলো আমার থেকে কোনো কারণে। এখন সেটার একটু একটু করে আমার সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। আর তুমি ভুল ভাবছো ভাইয়া।”
তূর রাফসানকে তুমি করে বলে এটার কারণও রাফসান। রাফসান তূরকে রিকুয়েস্ট করেছে যাতে ফ্রেন্ড মনে করে “তুমি” বলে ডাকে। রাফসান তূরের রিপ্লাই দেখে আবার মেসেজ করে,
“তুমি কি তাকে চাও? এজন্যই কি বাংলাদেশে ফিরে গেছো?”
তূর সরাসরি ভাবে মেসেজ করে,
“হ্যাঁ। তাকে মন থেকে মুছতে চাই নি কিন্তু তার সামনে পরতে চাই নি বলে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। আমি তখন তাকে সামনে দেখলে কস্ট সহ্য করতে পারতাম না কিন্তু এখন আমি অনেকটা স্টেবল তাই তার জন্য শেষ আশা নিয়ে ফিরে এসেছি।”
রাফসান মেসেজে লাইক রিয়াক্ট দিয়ে আর কোনো মেসেজ করে না। তূর এবার ভাবলো ইরাকে মেসেজ করে জানবে। করলোও। ইরা ক্লাসে থাকায় এক ঘন্টা পর সিন করে রিপ্লাই করে,
“তানজিনা ও আমরা দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভার্সিটিতে থাকবো। আর তারপর বের হবো।”
তূর জানে আইডিকার্ড পাস ছাড়া সে ঢুকতে পারবে না তাই তিনটার সময় সে ইরাকে এসে ভিতরে নিয়ে যেতে বললো। আর তানজিনার সাথে, ইনায়া ও ইরার সাথে দেখাও হয়ে যাবে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,