শেষ গোধূলি
পর্ব:০১
নাহিয়ান
‘আপনি আবারও বিয়ে করুন।’
হঠাৎই রাতের খাবার খেতে বসে নিজের স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে যান মিঃ রহমান। বিয়ের ৩৮ বছর পর তার ভরা সংসারে কি এমন কমতি দেখলো যে, ওনার স্ত্রী, রোজিনা রহমান এমন কথা বলছেন! ৮ ছেলেমেয়ে আর ১৫ জন নাতি নাতনিকে নিয়ে উনি তো বেশ সুখেই আছেন। সারাজীবন ডাক্তারি করে উনি কম অর্থ উপার্জন করেননি। অনেক পুরোনো ডাক্তার। এলাকায় একমাত্র ডাক্তার ছিলেন একসময়। তাই সম্পদটাও একটু বেশি। ওনার পর আরো দুই পুরুষ শুয়ে বসে আরামসে খেতে পারবে এই সম্পদ। যদিও সব সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিলে বিষয়টা ভিন্ন। উনি এরপরও এখনো ডাক্তারি করে যাচ্ছেন। নামকরা ডাক্তার। রোগির ঘাটতি পড়ে না। ৬ জন ছেলেমেয়ে বিয়ে করেছে। তিনজন এখনো বাকি আছে।
মিঃ রহমান ভ্রু কুঁচকে ওনার স্ত্রীর দিকে তাকালেন কিছু সময়। রোজিনা রহমানের কোনো পরিবর্তন না দেখে উনি বিষয়টা ঘোরাতে বললেন,
-সবাই ডিনার করেছে?
-হু। শুয়েও পড়েছে সবাই।
-আচ্ছা।
-আপনি আমার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলেন না যে।
-কি বলবো আমি। এই ৬০ বছরের বুড়োকে তুমি বিয়ে করতে বলছো কিভাবে?
-কিভাবে মানে? মানুষ কি এই বয়সে বিয়ে করে না নাকি?
-কে বিয়ে করবে আমাকে?
-কে আবার! গ্রামে এমন অনেক মেয়ে পাবেন।
-কেন করবো?
-দেখুন আমারও বয়স হচ্ছে। আপনারও বয়স বাড়ছে। সেদিন আবার আপনার একটা মিনি স্ট্রোক হলো। আপনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আপনার সেবা করতে বাইরে থেকে কোনো লোক আপনি এলাউ করেন না। আমাকেই বলেন। আমার বয়সের বিষয়টা ও তো মাথায় রাখবেন। আমি পারিনা আপনার মন মতো আপনার সেবা করতে। তাই বলছি আরেকটা বিয়ে করুন। আশা করি আপনার নতুন স্ত্রী, আপনাকে সেবা দিতে সক্ষম হবে।
মিঃ রহমান, রোজিনা রহমানের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলেন। রোজিনা রহমান শান্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলেন। মিঃ রহমান নিশ্চিত হলেন, ওনার স্ত্রী এই বিষয়ে একদমই মজা করছেন না। উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-তুমি সত্যিই চাও আমি আবারও বিয়ে করি?
রোজিনা রহমান দৃঢ়কণ্ঠেই বললেন,
-অবশ্যই। আমাকে ডিভোর্স দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। আপনি অবশ্যই আরেকটা বিয়ে করতে পারেন। সমাজে এসব হয়েই থাকে। তাই সমাজের কথা ভেবে পিছিয়ে আসার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু আমার পাওনা আর আমার সন্তানদের পাওনা নিশ্চিত চাই। এটুকুই।
মিঃ রহমান শান্ত চোখে একবার রোজিনা রহমানকে দেখে নিলেন। ওনার ৫৩ বছর বয়সী স্ত্রীর রূপে লাবণ্যে একদমই ভাটা পড়েনি। দুধে আলতার গায়ের রং যেন বয়স বাড়ার সাথে নিজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। সেই বাসর রাতে প্রথম দেখেছিলেন। সেই রঙই আছে। পাতলা ঠোঁটজোড়া আজও গোলাপি। সে চা খুব পছন্দ করে। আর তা পানও করে দিনে কয়েকবার। মিঃ রহমান লিপস্টিকের সাজটা একটু পছন্দ করেন। রোজিনা রহমান প্রায়ই রাতে তার উদ্দেশ্যে লিপস্টিক পড়তেন। ওনার চেম্বার থেকে আসতে রাত হতো অনেক। এতো মনে হয় সেদিনের কথা। ছেলেমেয়েগুলোও কতো ছোট ছিলো। মিঃ রহমান নিজের ব্যস্ততায় এটুকুও বুঝতে পারেননি, যে ওনার সাথে ওনার স্ত্রীর দূরত্ব এতোটা বেড়ে গিয়েছে। মিঃ রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের খাওয়া দাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে বেডরুমে চলে আসলেন।
কিছু সময় পর রোজিনা রহমানও আসলেন। দরজার খিলটা তুলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। মিঃ রহমান বই পড়ছিলেন। রোজিনা রহমান ওনার সাথে কথা না বলে পিঠ দেখিয়ে শুয়ে আছেন। বিষয়টা লক্ষ্য করে, ওনার আর বই পড়ার মুড নেই। বইটা বন্ধ করে লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পড়লেন। ওনার ঘুম আসছে না ঠিক। উনি মাঝে মাঝে পিছনে ঘুরে রোজিনা রহমানকে দেখলেন। কিন্তু রোজিনা রহমান বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। উনিও ঘুমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একসময় সফল হলেন।
চলবে