শেষ বিকলেরর রোদ-১২তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— নিঃশ্বাস জেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। সোহানের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট ছাড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করলাম। সোহান তখনো সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা হাত চেঁপে ধরে রেখেছে। আর মিটমিট করে হাসছে। সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই সোহান এক সাইডে পরে গেলো। অমনি উঠে যেয়ে সোহানের বুকের উপর বসলাম।
সোহান:- এই কি করছিস? ব্যথা পাবোতো।
— একটা হাত সোহানের গালের উপর রেখে ও তাই আর এতো সময় আমি ব্যথা পাইনি?
সোহান:- আমি তোকে কোন রকম ব্যথা দেইনি।
— ঠোটটা সোহানের মুখের খুব কাছাকাছি নিয়ে এসে আমিও তোমাকে কোন ব্যথা দিচ্ছি না। সোহানের মুখে কোন কথা নেই, ওর হার্টবিট খুব দ্রুত উঠা নামা করছে আমি স্পষ্ট সে শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে সোহানের কপালে। আমি ঠোট দু’টো ওর মুখের খুব কাছে নিতেই ও চোখ বন্ধ করে নিলো। আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে দিলাম একটা কামড় ওমনি সোহান আহ করে চিৎকার করে উঠলো। আমি হাসতে হাসতে ওর বুক থেকে নামতে যাবো অমনি দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।
— ছেড়ে দাও না হলে চিৎকার করবো।
সোহান:- তোর সে সাহস আছে?
— কিছু বলতে পারলাম না, নিরবে ওর বুকের মাঝে শুয়ে রইলাম। ঠিক কতটা সময় শুয়ে আছি বলতে পারবো না। বাহিরে কারো হাঁটার শব্দে দ্রুত উঠে বসলাম। সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চোখ বন্ধ করে আছে। আমি বললাম ছাড়ো আমাকে রুমে যাবো।
সোহান:- ছেড়ে দিয়ে উঠে বেড় হয়ে দেখ যেয়ে সকলে এতো সময়ে উঠে গেছে।
— নিচে নেমে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে উঠুক তুমিও উঠো হাঁটতে যাবো দু’জন মিলে।
সোহান:- তুই যা আমি পরে আসবো।
— কাছে থাকতে চাইয়া থাকতে পারি না, দূরে যেতে চেয়েও যেতে পারি না। ভালোবাসি বলতে চেয়েও পারিনা বলতে ভালোবাসি। চোখের সামনে নদী অথচ আমি তৃষ্ণার্থ পথিক। মনে মনে বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকতেই আফরিন আপু তাকিয়ে হাসতে শুরু করলো।
— এমন করে হাসতেছো কেন কি হইছে?
আফরিন:- ভাগিস কারো সামনে পরিসনি তা না হলে বুঝতি কি হয়েছে।
— মানে কি?
আফরিন:- সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে আয়না দেখি ঠোঁটের লিপস্টিক ঠিক করে নে তাড়াতাড়ি।
— আপুর কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা পরার অবস্থা তার মানে আপু বুঝে ফেলেছে এতো সময় কি হয়েছ, আপুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আপু মিটমিট করে হাসছে। আমি দৌঁড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম। আয়নায় তাকিয়ে দেখে ভীষণ রকম লজ্জা লাগছিল, দ্রুত মুখ ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।
আফরিন:- এ জন্যই বলি আমার বোন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোথায় হারিয়ে গেলো।
— আপু কি যে বলো না তুমি, আমিতো উনারে ঘুম থেকে উঠাতে গিয়েছিলাম।
আফরিন:- তো আমি কখন বললাম তুই কিস করতে কিংবা গোসল করতে গিয়েছিলি?
— তোমার মুখে কিছুই আটকায় না দেখতাছি।
আফরিন:- হাসতে হাসতে সত্যি বললেও দেখি দোষ। আচ্ছা এটা বল বলতে পেরেছিস?
— উহু পারিনি,
আফরিন:- মানে কি? এতো সময় এক সাথে এতো কিছু হচ্ছে আর তুই ভালোবাসি বলতে পারিস না।
— আমি কেন জানি ওর কাছে গেলে সব ভুলে যাই।
আফরিন:- ভুলে যাসনা তুই একজন নারী, অপরাধী বলিস আর কলংকিনী বলিস না কেন। যে যা বলবে তোকে বলবে। আর ছেলে মানুষ হলো ভ্রমর ফুলে মধু থাকা পর্যন্ত উড়ে আসবে, বনবন করবে মধু খাওয়া শেষে আবার উড়ে অন্য ফুলে চলে যাবে। তাই সাবধানে থাকবি আর নিজেকে সেফ রাখবি।
— হুম বুঝলাম বলেই আফরিনকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু সবাইতো আর এক রকম না বুঝলে। আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বলার সাহস পায়না।
আফরিন:- সেজন্যইতো বললাম তুই বল ওকে তোর মনের কথা।
— হুম আপু বলবো, এখন তুমি থাকো আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি বাহির থেকে।
আফরিন:- তাড়িতাড়ি আসিস, নাস্তা রেডি করবে কিন্তু মা।
— আচ্ছা চিন্তা করো না বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। সোহানের রুমের দিকে যাচ্ছি এমন সময় ফুপুর সাথে দেখা।
ফুপু:- কোথায় যাচ্ছিস?
— ভাইয়াকে ডেকে তুলতে, হাঁটতে বের হবো দু’জন।
ফুপু:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।
— আচ্ছা ফুপু বলে আবার হাঁটা শুরু করলাম, সোহানের দরজার সামনে যেয়ে ডাক দিতেই সোহান দরজা খুলে দিলো। কফি কালারের একটা বডি ফিটিংস টিশার্ট পরে বের হয়েছে। সুন্দর মানুষ দারুণ মানিয়েছে শরীরেরর সাথে টিশার্ট। টুকটাক কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির ভিতর থেকে বের হলাম। কোথায় যাবো ঠিক জানা নেই, গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। গ্রামের মানুষজন এখনো ঠিক মত ঘুম থেকে উঠেনি।
সোহান:- কোথায় যাবি?
— যেদিকে তোমার দু’চোখ যায় নিয়ে চলো আমাকে।
সোহান:- মানে কি?
— সব কিছুর কি মানে হয়?
সোহান:- তোর কথার কোন মানে খুঁজে পাইনা।
— আচ্ছা তাই না?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো, বললি হাঁটতে বের হবি, নিয়ে বের হলাম, এখন কোথায় যাবি সেটাই জানিস না।
— তাহলে কি বলবো? আমি কি গ্রামে এসে পরে থাকি নাকি যে এই জায়গা ঐজায়গা আমার চেনা আছে। হাঁটতে যেহেতু বের হইছি যতদূর হাঁটা যায় হাঁটবো।
সোহান:- বেশী দূর হাঁটা যাবে না।
— কেন?
সোহান:- ফুপু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলছে।
— বেশী দূর আর হাঁটতেও হবে না তোমাকে ঐযে নদী দেখা যাচ্ছে ঐখানে যেয়েই বসবো। হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশে ঘাসের উপর বসলাম দু’জন। আমি অপলক সোহানের দিকে তাকিয়ে আছি।
সোহান:- কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
— তো কি করবো ইচ্ছেতো করছে তোমার চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে।
সোহান:- কেন আমি আবার কি করলাম?
— কি করোনি তুমি? সকাল বেলা যা করলে তার পরেও বলবে কিছু করোনি? তারপরে আমার মুখের যে অবস্থা ছিলো মানুষতো বলে যে একটু ঠিকঠাক হয়ে রুম থেকে বের হতে। ভাগিস কেও দেখেনি, ঠোঁটের যা অবস্থা হয়েছিলো দেখলে আর রক্ষা ছিলো না।
সোহান:- আমি কি করে বলবো? আমিতো অন্ধকারে কিছু দেখি নাই। দেখলেতো বলতাম।
— তা দেখবে কেন? কত সুন্দরি সুন্দরি গার্লফ্রেন্ড আছে তোমার তুমিতো তাদেরকে দেখো।
সোহান:- হাসতে হাসতে তোর মাথাটা গেছে।
— সোহানের কাঁধে মাথা রাখতে রাখতে কোথায় গেলো খুঁজে এনে দাওতো।
সোহান:- তোমাকে আমার প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন। তোমাকে আমার প্রয়োজন সারা রাত জেগে গল্প করার জন্য প্রয়োজন, তোমাকে আমার প্রয়োজন নির্জন রাস্তায় এক সাথে পথ চলার জন্য প্রয়োজন।
— বাহ বাহ কাকে এতো করে প্রয়োজন?
সোহান:- হা হা হা কবিতা বললাম কবিতা। চল বাড়ি ফিরি সূর্যের তাপ বেড়ে যাচ্ছে।
— হুম চলো। কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই সোহানের ফোন বেজে উঠলো। আকাশ ফোন করেছে, দু’জনের কথোপকথনে যা বুঝলাম তা হলো আজ দুপুরে আমাদের কোথাও লাঞ্চের জন্য যেতে বলেছে।
সোহান:- ফোন কেটে দিয়ে আকাশ লাঞ্চের দাওয়াত দিলো। অমুক জায়গায় যেতে বললো।
আফরিন:- বাহ ভালোইতো হয়েছে। তাহলে তোমরা আজ বাহিরে লাঞ্চ করতে যাবে।
সোহান:- তোমরা মানে কি তুইও আমাদের সাথে যাচ্ছিস।
আফরিন:- আমাকে যেতে হবে কেন? তোমরা দু’জন গেলেই পারো।
সোহান:- পাগলের সুখ মনে মনে ঢং না করে নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে দু’বোন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
— টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তার পর্ব শেষ করে আমি আর আপু রুমে চলে আসলাম। দু’জনে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে শাওয়ার দিলাম। বারান্দায় রোদে বসে চুল শুকাচ্ছি এমন সময় সোহান ফুপুকে বলতে শুরু করলো।
সোহান:- ফুপু দেখছো ফুলটুসি বড় না হলেও ওর চুল গুলো কিন্তু বেশ লম্বা হয়েছে।
ফুপু:- কেন ও বড় হয়নি?
সোহান:- কি জানি আমার কাছেতো সেই পিচ্ছিই মনে হচ্ছে।
ফুপু:- কি যে বলিস না, মেয়ে মানুষ দেখতে দেখতে বড় হয়ে যায়। আর বড় হবার পর আরেক জ্বালা বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়।
সোহান:- এটা অবশ্যই তুমি ঠিক বলছো ফুপু, আর কয়দিন পর ফুলটুসিকেও বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।
— কথাটা শুনে রাগে মনে চাচ্ছিলো সোহানের মাথার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম তোমার বিয়ের সখ তুমি করো গিয়ে।
সোহান:- তোকে আগে বিদায় করে নেই।
— হয়েছে থাক, আর আগে যেতে হবে না আপনাকে। আমার চুলেরর পেছনে এমনিতেই অনেক ছেলে ঘুরে, তখন বাড়ি পর্যন্ত ছুটে আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
সোহান:- ভালোতো এক সাথে তোদের দু’জনকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবো।
— মেজাজ গরম কইরো না। বলে সেখান থেকে উঠে রুমের ভিতর চলে আসলাম। বারোটার দিকে সোহান এসে বলে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হবার জন্য। আমি আর আপু দু’জনে রেডি হয়ে নিলাম। চুল হালকা ভেজা থাকার কারণে আর বাধলাম না। চোখে বেশ গাঢ় করে কাজল টেনে নিলাম। যদিও এতোটা গাঢ় করে আমি কাজল টানি না আজ কেন জানি ইচ্ছে হলো তাই এভাবে গাঢ় করে কাজল দিলাম। ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম সাদা রঙের একটা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান। দু’জন যেয়ে সামনে দাঁড়াতেই আপাতমস্তক দেখা শুরু করলো সোহান।
— এভাবে কি দেখো গিলে খাবে নাকি?
সোহান:- কিছু না চল।
— তিনজন হাঁটা শুরু করলাম। অনেকখানি হাঁটার পর একটা অটো রিক্সা পেলাম তিনজন তাতে উঠলাম সোহান উপরে আর আমরা দু’জন নিচে বসলাম। বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো উড়তে শুরু করলো। মাঝে মাঝেই চুল গুলো সোহানের মুখ স্পর্শ করছে তা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
চলবে..