শেষ বিকেলের রোদ- শেষ পর্ব [হ্যাপি ইন্ডিং]
©শাহরিয়ার
গাড়িতে উঠে বসে সোহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওর ছলছল চোখ জোড়া। গাড়ির চলতে শুরু করলো পার্লারের উদ্দেশ্যে, আজ আমার মন ভালো নেই, মন ভালো নেই আকাশের আমি মন খুলে কাঁদতে না পারলেও বৃষ্টিরা থেমে নেই। সেইই রাত থেকে শুরু হয়ে এখনো থামার কোন নাম গন্ধও নেই। খুব ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মন খুলে একটু কাঁদার জন্য।
খালা মনি:- কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
— কই নাতো, সবাইকে ছেড়ে নতুন ঠিকানায় যেতে হবে এটাই ভাবছি।
খালামনি:- শোন মন খারাপ করার কিছু নেই, বড় হয়েছিস বিয়েতো হবেই। আর এটাই নিয়ম।
— অদ্ভুত নিয়ম, কেন এমন নিয়ম থাকতে হবে? বিয়ে করতেই হবে এমন কোন কথা নেই, আর বাবা মায়ের পছন্দেই বা কেন বিয়ে করতে হবে। ভাবতে ভাবতে এক সময় পার্লারে চলে আসলাম। আগে থেকেই খালামনি বলে রেখেছিলো। তাই তেমন কোন সমস্যা হয়নি, পার্লারের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর হয়ে আসলো। নিজেকে একবার ভালো করে আয়নায় দেখে নিলাম অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন গল্পের মায়াবতী। আচ্ছা এই মন খারাপের সময়ে এমন সাঁজ সাঁজতে হবে কেন? লাল বেনারসী বিশাল ঘোমটা কেনই দিতে হবে? বরং পুরনো ছেড়া একটা জামা পরে বিয়ের আসরে বসা উচিৎ যেন সকলে দেখলে বুঝতে পারে হৃদয়টা ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে এই বিয়েটা।
খালা মনি:- ইস এতো বৃষ্টি কেন হতে হবে? চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি মনে হচ্ছে বৃষ্টি আরও বেড়ে যাবে।
— খালা মনির সাথে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, গাড়ির এক কোনে বসে আছি, ভাবছি বাবা মায়ের কথা ছোট বেলা থেকে এতোটা স্বাধীনতা দিয়ে কি করে পারলো এভাবে সব কেড়ে নিতে। কি করে পারলো সরাসরি বলে দিতে মনের মাঝে কেউ থাকলে তা মুছে ফেলতে। সরাসরি কি করে বলে দিলো ভুল করেও যেন কোন রকম উল্টাপাল্টা কথা কলর বিয়ে ভেঙে না দেই। তাহলে তারা সব চেয়ে খারাপ হবে। সবচেয়ে বড় কথা যে মানুষটাকে এতোটা ভালোবাসি সেই মানুষটাই কি করে পারলো বলতে বিয়ে করে সুখি হতে। এতোটা ভিতু মানুষকে আমি ভালোবেসেছি ভাবতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে শুরু করলো। গাড়ি বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো। দরজায় কলিং বেল দিতেই মা এসে দরজা খুলে দিলো, কিন্তু মায়ের মন খারাপ। পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ। কারো মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ এমন হবার কারণ কি এটাই বুঝতে পারছি না। মা খালামনিকে বললো আমাকে ঘরে রেখে আসতে। খালামনি আমাকে নিয়ে ঘরে চলে আসলো। আমাকে রেখে বের হবে এমন সময় বললাম, খালামনি সবার মন খারাপ কেন?
খালামনি:- কি জানি বুঝতে পারছি না, তুই বস আমি জেনে আছি কি হচ্ছে।
— খালামনি চলে যেতে আমি বারান্দার জানালা খুলে বাহিরের বৃষ্টি দেখছি। খুব ইচ্ছে থাকার পরেও আজ বৃষ্টি স্পর্শ করতে পারছি না। দুম করে দরজা খোলার শব্দে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি মা। কিছু বলবে?
মা:- ইতস্তত করতে করতে বললো একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
— অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে কি সমস্যা?
মা:- আরমানদের বাড়ি থেকে ফোন আসছিলো, তারা নাকি আসতে পারবে না। কোন এক কারণে আরমান এ বিয়ে করতে চাচ্ছে না। তারা ক্ষমা চাচ্ছে। এদিকে মেহমানরা আসতে শুরু করে দিয়েছে। এখন কি করবো এই চিন্তায় সকলে প্রচণ্ড টেনশনে আছি। মান ইজ্জত মনে হচ্ছে সব যাবে। তোর বড় চাচা আর বাবা বেশ কয়েকবার তাদের ফোন দিয়েও কোন কাজ হয়নি।
— মনে মনে এতো আনন্দিত হলাম যা বলে বুঝানোর মত না। নিজেকে একদম শান্ত রেখে তাহলে এখন কি হবে? আমি কি সব খুলে ফেলবো?
মা:- পাগল নাকি তুই? কিছু একটা ব্যবস্থা ঠিকই হবে তুই থাক, আমি নিচে যাচ্ছি মেহমানদেরকে সামাল দিতে হবে কিছু একটা করে।
— মা চলে যেতেই আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে আনন্দে নাচতে শুরু করলাম। কিন্তু আমি নাচছি কেন? যদি বাবা মা কোন ভাবে অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করে ফেলে? আর সব চেয়ে বড় কথা সোহানের সাথেতো আর কোন রকম সম্পর্ক রাখবোই না স্বার্থপর একটা। বিকেল হয়ে এসেছে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই রোদের একটা ঝিলিক এসে মুখে লাগলো। আমার সাথে সাথে শেষ বিকেলে রোদও হাসতে শুরু করছে। এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ ভিতু সোহান একটি বারের জন্যও আমার রুমে আসলো না। দীর্ঘ সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে রুমে এসে বসলাম। দরজায় টোকা পরতে যেয়ে খুলে দিতেই ছোট খালামনি ঘরে ঢুকে পরলো।
ছোট খালা:- যাক অবশেষে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
— খালামনির মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম তবে কি আরমানদের বাড়ি থেকে ওরা আসবে? কি হয়েছে খালা মনি?
খালামনি:- তোর বিয়েটা অবশেষে হচ্ছে।
— মনটা এতো সময় যতটা ভালো ছিলো তার দিগুন খারাপ হয়ে গেলো। খালা মনির দিকে তাকাতেই
খালা মনি:- বললো ভাগিস নীলা আর সোহানের বিয়েটা আমরা আগে দেইনি।
— মানে কি বলতে চাচ্ছো একটু বুঝিয়ে বলো।
খালা মনি:- সবাই মিলে ঠিক করা হয়েছে তোর আর সোহানের বিয়ে দিবে।
— তোমরা কি মনে করো হ্যাঁ যখন খুশি যার সাথে খুশি আমার বিয়ে দিয়ে দিবে? আমার কোন কথা বলার অধিকার নেই নাকি? তোমাদের কথা মত আমাকে সব করতে হবে? এমন সময় সকলে ঘরে ঢুকে পরলো।
বড় চাচা:- আমাদের ভুল হয়েছে, আমরাতো তোর ভালোই চেয়েছিলাম। কিন্তু এমনটা হবে কখনো আশা করিনি। সন্তানরা অন্যায় করলে বাবা যেমন ক্ষমা করে দেয়। বাবা মা যদি অন্যায় করে তবে কি সন্তানদের উচিৎ নয় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া। আর যদি না পারিস তাহলে আমাদের সকলকে এক সাথে আত্মহত্যা করে মরতে হবে। সমাজের মানুষের নানান কথা শুনে রোজ রোজ মরার চেয়ে এক বারে মরে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
— এভাবে কেন বলছো তোমরা?
বড় চাচা:- ভালো পাত্র থাকলে অবশ্যই তোকে তার সাথেই বিয়ে দিতাম কিন্তু এতো অল্প সময়ে ভালো পাত্র পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমার অপদার্থ ছেলের সাথেই তোকে বিয়েটা দিতে হচ্ছে আর কোন উপায় না পেয়ে।
— কিন্তু তোমার ছেলে কি রাজী আছে এই বিয়েতে?
বড় চাচা:- ওর মত অপদার্থের রাজী থাকা না থাকায় কিছু আসে যায় না।
— এটা মোটেও ঠিক না, একেতো আমার মতামতের বিরুদ্ধে তোমরা বিয়ে ঠিক করেছিলে এখন আবার উনার মত না নিয়ে আবার বিয়ে দিবে। তাছাড়া নীলার সাথে উনার বিয়ে দেবার কথা ছিলো। উনি যদি তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে থাকে কোন রকম।
বড় চাচা:- তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আকাশ আর আফরিনের সাথে কথা হয়েছে ওর কোন অমত নেই। আর তোর ফুপু ফোপা, আফরিন আকাশ সকলেই কিছুক্ষণের ভিতর চলে আসবে।
— আসছে মানে কখন রওনা হয়েছেন উনারা?
মা:- ওরা সকালেই রওনা হয়েছে, ওরা আলাদা আসছে। আচ্ছা তুই রেস্ট কর আমরা নিচে যেয়ে দেখি কি অবস্থা।
— সকলে চলে যেতেই ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে রইলাম। আমার অনেক খুশি হবার কথা থাকলেও খুশি হতে পারলাম না। কারণ যে মানুষ ভালোবাসার মানুষের কথা পরিবারকে বলতে পারে না তাকে কি করে মেনে নিবো এটাই ভাবছি এখন। দরজায় দুমদাম ধাক্কা পরছে তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে যেয়ে দরজা খুলতেই আফরিন আপু ভিতরে ঢুকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করলো
আফরিন:- তোর প্রেম তাহলে সফল হলো,
— সফল না ছাঁই আমারতো এখন ইচ্ছে করছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু বাবা মায়ের সম্মানের জন্য তা পারছি না।
আফরিন:- মানে কি? এভাবে কেন বলছিস?
— কারণ তোমার ভাইকে আমার এখন সহ্য হয় না, যে ছেলে তার প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে জেনেও চুপ করে থাকে তাকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না।
আকাশ:- ঘরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিতে দিতে কোথাও ভুল হচ্ছে বুঝলে শালিকা।
— কোথাও ভুল হচ্ছে না, আপনাদের সোহান ভাইয়া একজন স্বার্থপর মানুষ, যে শুধু নিজের সুখটাই খোঁজে বা বুঝে।
আকাশ:- সে যদি শুধু নিজের স্বার্থই বুঝতো তাহলে হয়তো এখন সত্যি সত্যি বর বেশে এখানে আরমান থাকতো।
— আরমান কেন থাকবে তারাতো নিজেরাই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
আকাশ:- তারা বিয়ে ভেঙে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তুমি জানো না কেন ভেঙে দিয়েছে।
— মানে কি ভাইয়া বুঝিয়ে বলেন।
আকাশ:- তোমার আপুর সাথে বিয়ের পরেই, তোমার আর ভাইয়ার বিষয়ে আমি সব জেনে যাই। এরপর যখন আরমানের পরিবার তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখনি আমি ভাইয়াকে ফোন দেই। ভাইয়া আমার কাছ থেকে আরমানের নাম্বার নিয়ে কথা বলে। তখন আরমান আমার কাছে আসে আমিও আরমানকে বুঝিয়ে বলি আরমান সব শুনে আগেই বিয়েটা ভেঙে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাইয়া বললো এই বেকার অবস্থায় সে কি করে বাড়িতে সব জানাবে, তার চেয়ে বরং একটা নাটক সাজাই আমরা তিনজন মিলে। যে বিয়ের দিন দুপুরের দিকে আরমান ওর বাবাকে দিয়ে জানিয়ে দিবে আরমান কোন কারণে বিয়েটা করছে না। আর তখন বাড়ির লোকজন কোন উপায় না পেয়ে তোমার আর ভাইয়ার বিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
— এতোক্ষণে আমার সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমি আপু আর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম আমিও একটু নাটক করবো ওর সাথে। তোমরা যে আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছো তা বলবে না।
আকাশ:- হাসতে হাসতে যা খুশি করো তবে বিয়েটা ভেঙে দিও না
— হাসতে হাসতে উহু বিয়ে ভেঙে দিবো না। তবে সেই রকম একটা মজা দেখাবো সোহানকে।
আফরিন:- তোদের যা ইচ্ছে হয় কর আমরা আমাদের যা দায়িত্ব ছিলো তা পালন করেছি। বলতে বলতে দু’জন রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
— আমি ভাবতাছি কি ভাবে সোহানকে শায়েস্তা করা যায়। আমাকে এভাবে বোকা বানিয়েছে সবাই মিলে ইস আমি কেন আপু বা আকাশ ভাইয়াকে ফোন দিলাম না, আসলেই আমি একটা মাথা মোটা ফুলটুসি আজ বুঝতে পারছি। রাত নয়টার দিকে কাজী এসেছে, আমার পাশে আফরিন আপু আর বান্ধবীরা বসে আছে। কিছু সময়ের ভিতরেই আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। আমাকে আপু আর বান্ধবীরা মিলে সোহানের ঘরে নিয়ে আসলো। পুরো খাট ফুল দিয়ে সাজানো। খাটের উপর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। আমাকে খাটে বসাতে বসাতে আপু বলতে শুরু করলো।
আফরিন:- ভাইয়ার ভালো গুন আছে বুঝলি ইকরা নিজের বাসর ঘর নিজেই কত সুন্দর করে সাঁজিয়েছে। আহা ফুলসজ্জা কি না কি হবে।
— আপুর কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিলো। এদিকে আপুর সাথে বান্ধবিরাও বলতে শুরু করলো। আপু দেখেন দেখেন আপনার বোন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
আফরিন:- ঘোমটা টেনে দিতে দিতে এভাবে বলোনাতো আমার বোনটা এমনিতেই লজ্জাবতী।
— উফ তোমরা যাওতো আমার এসব শুনতে সত্যিই লজ্জা লাগছে।
বান্ধবিরা:- লজ্জা না ছাঁই আমরা বুঝতে পারছি তোর আর তর সইছে না। বলেই আপুর হাত ধরে বের হচ্ছে আর হাসছে।
— সেই যে সোহানের সাথে দেখা হয়েছে সকালে এরপর আর দেখা হয়নি। কি করছে এখনো আসছে না কেন? রাত বেড়েই চলেছে একা একা ঘোমটা টেনে বসে আছি মেজাজটা কি পরিমাণ খারাপ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে করছে রুম থেকে বের হয়ে যেতে, কিন্তু আজ রাতে তা সম্ভব নয়, অন্য কোন দিন হলে এভাবে কেউ বসিয়ে রাখতে পারতো না। নানান রকম কল্পনায় যখন আমি ডুবে আছি ঠিক তখনি আকাশ ভাইয়া আর সোহানের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি ঘোমটাটা টেনে চুপ করে বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান ধরলাম। সোহান দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে আমার গায়ে হাত দিয়ে ডাক দিতেই লাফিয়ে উঠে খবরদার আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি।
সোহান:- অবাক চোখে তাকিয়ে কেন করবো না তুইতো আমার বউ এখন।
— বউ বললেই হয়ে গেলো? যে প্রেমিক তার প্রেমিকার কথা বাড়িতে বলতে পারে না তার বউ হওয়ার চেয়ে পুকুরে ডুব দিয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো। শুধু বাবা চাচার সম্মানের কথা ভেবে করতে পারিনি।
সোহান:- দেখ তুই জানিস না অনেক কিছুই, আমি তোকে সব বলছি।
— আমার সাথে কোন রকম কথা বলতে আসবে না যদি ভালো চাও। ইস কোথায় বিয়ের পর হানিমুনে বার্লিন শহরে যেতাম আর কোথায় তুমি একজন বেকার মানুষ। বার্লিনের রাস্তার পাশে কোন এক কফিশপে বসে কফি খেতে খেতে সদ্য বিয়ে করা বরের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভালোবাসায় হারিয়ে যেতাম, কত স্বপ্ন দেখেছি সব মুহুর্তে শেষ হয়ে গেলো। শেষে বিয়ে করতে হলো একজন প্রতারক প্রেমিককে যে কিনা বিয়ের সময় প্রেমিকার দায়িত্ব নিতে চাইনি।
সোহান:- দেখ বার্লিনে না নিয়ে যেতে পারলেও কক্সবাজারেতো নিতে পারি। সেখানের কোন এক বড় হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’জন সমুদ্রের গর্জনের সাথে সাথে কফির মগে চুমুক দিতেই পারি। হঠাৎ গর্জে উঠা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার স্পর্শ করতেই পারি।
— তোমার লজ্জা করে না এসব বলতে?
সোহান:- না কেন লজ্জা করবে আমি একজন সফল প্রেমিক যে কিনা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করেছি।
— কপাল জোড়ে করেছো বুঝলে, আরমান বিয়ে করেনি তাই করতে পেরেছো।
সোহান:- উহু আমরা প্লান করেছি তাই করতে পেরেছি। তোকে বলিনি কারণ এটা তোর জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম। তোর যদি বিশ্বাস না হয় আকাশ আর আফরিনকে জিজ্ঞাসা করতে পারিস।
— আমার কোন ইচ্ছে নেই তোমার সাজানো নাটক শোনার।
সোহান:- বিশ্বাস কর আমি কোন নাটক করছি না, তুই থাক আমি ডেকে নিয়ে আসছি বলেই হাঁটার জন্য উঠে দাঁড়াতেই।
— হাত ধরে টান দিতেই বুকের উপর গেল। খবরদার যদি রুম থেকে বের হইছো।
সোহান:- জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি খুব।
— মিথ্যা কথা যদি ভালোবাসতে তাহলে এতো কষ্ট দিতে পারতে না।
সোহান:- বিশ্বাস কর বাবা চাচারা কখনোই আমাদের সম্পর্ক এতো সহজে মেনে নিতো না। তুইতো জানিস তারা দু’জন কেমন?
— হুম জানিতো, তাই বলে একবারও আমাকে বলবে না তুমি এমন প্লান করছো।
সোহান:- বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু একটু ভয় ও পেয়েছিলাম। কথায় আছে না মেয়েদের পেটে কথা থাকে না। সেই ভয়ে তোকে আর বলা হয়নি।
— সোহানের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে শয়তান বান্দর কবে নিয়ে যাবে কক্সবাজার,
সোহান:- যাবোতো আমাদের জন্য আকাশ আর আফরিন ও যায়নি চারজন এক সাথেই যাবো বলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
— এই ছাড়ো না নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
সোহান:- লাইটেরর সুইজ অফ করতে করতে কি করে নিঃশ্বাস বন্ধ হবে আমিতো আছি এখানে।
— এই অন্ধকারে আমার ভয় লাগে।
সোহান:- একটা কথা বলি তারপর লাইট অন করে দিবো।
— হুম বলো।
সোহান:- ইয়ে মানে ভালোবাসি তোমাকে।
— অনেক অনেক ভালোবাসি বলেই জড়িয়ে ধরলাম সোহানকে।
সমাপ্ত।
বি:দ্র:- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, চাইলেই আরও দু’একটা পর্ব বড় করতে পারতাম কিন্তু নতুন একটা গল্প মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাই গল্পটাকে আর বড় করলাম না। কিছুটা নিচে তুলে ধরলাম।
সিঁড়িতে উপরে উঠতে যেয়ে পায়ের সাথে শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে পরে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে কেউ একজন কোমর জড়িয়ে ধরতেই পেছনে ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলো ইকরা। আরে এতো সেই ছেলেটা যাকে সেদিন সিগন্যালে ছোট মেয়েটির কাছ থেকে ফুল কিনতে দেখেছিলো। প্রথম দেখায় যাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো, তারপর কতদিন কত জায়গায় খুঁজেও আর পায়নি ইকরা, কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ইকরা সোহানের বুকের মাঝে চলে এসেছে তা খেয়ালই করা হয়নি। এটাকেই হয়তো বলে নিয়তি ভাগ্যে থাকলে যে কোন মুহুর্তে যেকোন জায়গায় দেখা হয়ে যেতেই পারে।
গল্প :- নিয়তি, পুরো গল্পটি কাল থেকেই পাবেন ইনশা আল্লাহ।