শেষ বিকেলের রোদ- ১৭তম পর্ব

0
1457

শেষ বিকেলের রোদ- ১৭তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— মাটিতে পরার ঠিক আগ মুহুর্তে বুঝতে পারলাম কারো হাত প্রচণ্ড রকম শক্ত ভাবে আমার কোমরের উপর অনুভব করলাম। কোন রকমে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম আরমান। চোখের উপর চোখ রেখে প্রশ্ন করলাম আপনি এখানে?

আরমান:- বাড়িটা হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম। কিন্তু আপনি এতো জোড়ে বের হচ্ছিলেন কেন? ভুত দেখে ভয় পেয়েছেন নাকি?

— জ্বি না ভুত দেখবো কেন? আপনারা এসেছেন তাই বের হচ্ছিলাম। আর দয়া করে হাতটা সরিয়ে নিলে খুশি হবো।

আরমান:- উফ সরি কিছু মনে করবেন না, খেয়াল করিনি।

— ইটস ওকে। আচ্ছা আপনি ঘুরে দেখুন আমি ওদিকে দেখি কি অবস্থা নাস্তা হলো কিনা, রান্না বান্নায় ফুপু আর আপুকে সাহায্য করতে হবে।

আরমান:- দেখা যেহেতু হয়ে গেলো চলুন না বাড়িটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবেন।

— সরি এখন পারছি না পরে এক সময় দেখবেন।

আরমান:- ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই, চলুন আমিও যাই একা একা ঘুরতে ভালো লাগবে না।

— কেন আকাশ ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতেন। আর চাইলে পুকুরের ঐদিকটায় যেয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভালো লাগবে।

আরমান:- আকাশ শ্বশুড় বাড়িতে এসেছে সকলের সাথে গল্প করছে, ঐখান থেকে ডেকে নিয়ে আসাটা ভালো দেখাবে না তাই আর ডাক দেইনি। একা একা কোন জায়গায় ভালো লাগবে না। চলুন আমিও ওদের সাথে যেয়ে আড্ডায় যোগ দেই।

— বেশতো চলুন।

আরমান:- হ্যাঁ চলুন।

— দু’জনে হাঁটা শুরু করলাম পাশাপাশি, আরমান বসার রুমে চলে গেলো আর আমি চলে আসলাম রান্না ঘরে ফুপু রান্না করছে, নাস্তা রেডি হয়ে গেছে আমি আর আপু নাস্তা নিয়ে সকলের সামনে এগিয়ে দিতে শুরু করলাম। নাস্তা দেয়া শেষ করে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ফুপুকে রান্নায় সাহায্য করছি একটু পরেই আপুও চলে আসলো রান্না ঘরে।

ফুপু:- ছেলেটা এখনো আসলো না ইকরা ফোন দে না একবার। তোর ফুপাও একা একা কথা বলছে এতো গুলো মানুষের সাথে।

— চলে আসবে কিছুক্ষণের ভিতর কল দিয়েছিলামতো একবার।

আফরিন:- আচ্ছা আমি কল দিচ্ছি তোমরা বসো আমি ফোনটা নিয়ে আসতেছি।

— ফুপুর সাথে গল্প করছি আর রান্নায় সাহায্য করছি এর ভিতর আপু ফোন নিয়ে আবার রান্না ঘরে ফিরে আসলো। সোহানকে ফোন দিলো সোহান জানালো বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে দশ মিনিটের মত লাগবে।

ফুপু:- এক কাজ কর তোরা যেহেতু সোহান আসতেছে ওর জন্য নাস্তাটা নিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়। সারা দিন কি খেয়েছে না খেয়েছে, এখন যদি এসে ওদের সাথে কথাবার্তা বলতে বসে তাহলে হয়তো আর খাবার সময়ই পাবে না।

আফরিন:- হ্যাঁ ঠিকই বলছো তুমি দাওতো নাস্তার বাটিটা আমার হাতে দাও আমি যেয়ে দিয়ে আসি ভাইয়ার রুমে আর চা টা গরম করে ওর কাছে দাও ও যেয়ে দিয়ে আসবে। আমি নাস্তাটা রেখে যেয়ে দেখি ওনাদের কি অবস্থা।

— আপু নাস্তার প্লেট নিয়ে চলে গেলো, কিছু সময়ের ভিতরে ফুপু চা গরম করে মগে করে আমাকে দিয়ে বললো যা যেয়ে সোহানের রুমে রেখে আয়। চায়ের মগ নিয়ে সোহানের রুমে যেয়ে রেখে ঘুরতেই সোহান রুমের ভিতর ঢুকলো। কিছুটা চমকে উঠলাম।

সোহান:- কিরে তুই আমার ঘরে কি করছিস?

— কিছু না চা আর নাস্তা দিয়ে যেতে বললো ফুপু তাই নিয়ে আসছিলাম। তা নাহলে তোমার রুমে আসার আমার কি কোন প্রয়োজন আছে নাকি?

সোহান:- হ্যাঁ তাইতো আমিতো অপ্রয়োজনীও মানুষ হয়ে গেছি।

— তুমি সব সময় বেশী বুঝ, আমি কি এভাবে বলছি নাকি?

সোহান:- তো কিভাবে বলছিস?

— তুমি কখনোই কোন কিছু বুঝবে না।

সোহান:- বুঝিয়ে বললেই মানুষ সব বুঝেতে পারে, তুই কি বলিস তুই নিজেই বুঝিস না আর আমি কি বুঝবো?

— এখন তোমাকে বুঝানোর মত সময় আমার হাতে নেই, বাড়ি ভর্তি মেহমান তাড়াতাড়ি খেয়ে তাদের সাথে দেখা করো। ফুপা একা সেই কখন থেকে বসে তাদের সাথে কথা বলছে। বলেই রুম থেকে বের হতে যাবো এমন সময় বললো দাঁড়া, আমি ঘুরে আবার কি হলো?

সোহান:- পেছন থেকে হাত সামনে এনে বেলী ফুলের মালা এগিয়ে দিতে দিতে এটা তোর জন্য খোঁপায় বেশ মানাবে তোর।

— বাহ দারুণতো এটা আমার পছন্দ হইছে এই উপলক্ষে তোমাকে মাফ করা যায়। তারপরেও আপাতত মাফ করছি না। চুলের খোঁপায় ফুল গুঁজতে গুঁজতে বাড়ি ভর্তি মেহমান তাদের আগে বিদায় কর। এরপর বুঝবো তোমাকে ক্ষমা করবো নাকি শাস্তি দিবো।

সোহান:- ওহ তাই বুঝি আচ্ছা ঠিক আছে, দু’টো নতুন বই এনেছিলাম ভেবেছিলাম ফুলটুসিকে দিবো। থাক আর দিতে হবে না ভালোই হলো আমিই পড়বো।

— এই না না দাও এখুনি।

সোহান:- উহু এখন না সবাইকে বিদায় কর তারপর দিবো কিনা ভেবে দেখবো।

— আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাক কি হয়। বলে রুম।থেকে বের হলাম। সোহানকে দেখলেই এক অন্য রকম ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। এই ভালো লাগাটাই যে আমার সারা জীবন চাই। ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে চলে আসলাম।

ফুপু:- সোহান এসেছে কি?

— হ্যাঁ ফুপু এসেছে।

ফুপু:- যাক ভালো হলো, নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি মেহমানদের সাথে দেখা করতে বলছিস তো?

— হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি উফ সারা দিন খালি সোহান সোহান আর সোহান, এই যে আমি একজন আছি আমার দিকেওতো একটু তাকাও।

আফরিন:- আহ্রে বেচারি, চিন্তা করিস না তোর দিকে তাকানোর জন্য কতজন আছে তারাই তাকাবে তোর দিকে।

— মানে কি? কি সব বলো না তুমি।

আফরিন:- মানে খুব সহজ, আমার এতো সুন্দরি মিষ্টি বোনটার দিকে কত ছেলে যে তাকাবে তার কি কোন হিসেব আছে?

— উফ আপু তুমিও না, আচ্ছা তোমরা থাকো আমি রুমে যাচ্ছি রান্না শেষ হলে আমাকে ডাক দিও আমি চলে আসবো।

ফুপু:- আচ্ছা যা আর যাবার আগে একবার সোহানের রুম হয়ে যাস, ওর আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করিস।

— আচ্ছা ঠিক আছে বলে রান্না ঘর থেকে বের হলাম। সোহানের রুমে সামনে যেতেই ও রুম থেকে বের হলো।

সোহান:- কিরে আবার কেন আসলি কোন কিছু লাগবে?

— না তোমার কিছু লাগবে কিনা জানার জন্য এসেছিলাম।

সোহান:- না লাগবে না, যা তুই যেয়ে ঐদিকটা দেখ ফুপুকে সাহায্য কর।

— লাগবে না ঐ দিকে আমি রুমে যাচ্ছি।

সোহান:- আচ্ছা শোনতো ওদের সাথে কি কোন মেয়ে আসছে নাকি অল্প বয়সী?

— হ্যাঁ আসছেতো আরমানের ছোট বোন আসছে, আকাশের চাচাতো বোন আসছে। কেন বলতো?

সোহান:- এমনি জানতে চাইলাম আর কি, আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?

— খারাপ ও না ভালোও না একদম মদন মদন।

সোহান:- কি?

— হাসতে হাসতে তোমাকে সব পোষাকেই অনেক সুন্দর লাগে। তাড়াতাড়ি যাওতো তুমি বলেই হাঁটা শুরু করলাম নিজের রুমের দিকে। সোহান পেছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে রয়েছে। এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি, কিছুটা দূরে এসে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করলাম কি?

সোহান:- মাথা নেড়ে বুঝালো কিছুনা।

— হাসতে হাসতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম। রান্না হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। তাই একটু সেঁজে নিলে মন্দ হয়না, আর এখনতো সোহান ও এসেছে ভাবতে ভাবতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই খোঁপায় গেঁথে রাখা বেলী ফুলের মালাটা চোখে পরলো। হাতে নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরতেই এর মিষ্টি ঘ্রাণে যেন মাতোয়ারা হবার অবস্থা। মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও সোহানের স্পর্শ লুকিয়ে আছে এই ফুলের মাঝে। হঠাৎ করেই মনে পরলো সত্যি সত্যিই তো আরমান আর আকাশের বোন এসেছে সোহান যদি তাদের সাথে, না না তা করতে দেয়া যাবে না। অবশ্য ছেলেদের কোন ভরসা নেই। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আবারও চুলের খোঁপায় ফুলের মালাটা গুঁজে দ্রুত রওনা হলাম ঐ রুমের দিকে। ভিতরটায় কেমন জানি ছটফট করছে কি যেন নেই কি যেন নেই, এমন মনে হচ্ছে নিজের কাছে। রুমের ভিতর ঢুকতেই সবার দৃষ্টি আমার দিকে পরলো। সকলে কথায় বিরতি টেনে এক নজর দেখে নিয়ে আবার গল্পে মনোযোগী হলো। এদিকে আরমান আর চোখে চেয়েই রয়েছে। আমি যেয়ে ফুপার পাশে বসে, ফুপাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু লাগবে কিনা।

ফুপা:- সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলো কারো কিছু লাগবে কিনা, চা বা নাস্তা।

— কারো কিছুই লাগবে না জানালো। হঠাৎ করে আরমান বলে উঠলো পানি খাবে। আমি সেখান থেকে উঠতে উঠতে সোহানের দিকে তাকালাম সোহান এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে থাকা আগের জিনিস গুলো ট্রেতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে মনে আরমানকে গালি দিতে দিতে ট্রে নিয়ে রান্না ঘরের সামনে রেখে আবার ফিরে আসলাম ডাইনিং এ। পানি নিয়ে ঘুরতেই পেছনে সোহান দাঁড়িয়ে আছে। একি তুমি এখানে কেন?

সোহান:- মুখের উপর আঙ্গুল দিয়ে চেঁপে ধরে, তোকে আজ নজরকাড়া সুন্দরি লাগছে, তাই কারো নজর যেনো না লাগে তাই কপালে কালি লাগিয়ে দিতে আসছি।

— উহু মোটেও এমনটা করবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

সোহান:- হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো কেন কি করবি তাহলে শুনি?

— চিৎকার করবো পুরো বাড়ি চিৎকার করে মাথায় তুলে নিবো।

সোহান:- আরেকটু কাছে এসে একটা হাত চেঁপে ধরে আচ্ছা চিৎকার করবি? তাহলে আমি কি করবো বলেই হ্যাঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

— কি করছো ছাড়ো বলছি কেউ চলে আসবে বলেই সোহানের দিকে তাকালাম।

সোহান:- তোর চিৎকার শুনবো চিৎকার কর।

— সোহানের বুকে মাথা রেখে পারবো না এখন চিৎকার করতে যেতে দাও পরে কথা বলবো।সোহান নিজের মুখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসতেই দুচোখ বন্ধ করে নিলাম।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here